Hsc বাংলা ২য় পত্র মডেল টেস্ট 2024 উত্তরসহ 2 ।। এইচএসসি-২০২৪ বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট ।। HSC বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বাংলা দ্বিতীয় পত্র (ব্যাকরণ ও নির্মিতি) এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দেওয়া হলো।
এছাড়া আমাদের জাগোরিক এ বিনামূল্যে ব্যকরণিক অংশ হতে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ অধ্যায় হতে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই ওয়েবসাইটে পাবেন। প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির ব্যকরণিক অংশ হতে এইচএসসি-২০২৪ বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট এ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট
এইচএসসি-২০২৪পরীক্ষা প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট-১
বিষয়: বাংলা দ্বিতীয় পত্র (ব্যাকরণ ও নির্মিতি)
সময়: ৩ ঘণ্টা মিনিটপূর্ণমান: ১০০
আমার দেখা একটি গ্রামীণ মেলা
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলা দেখার জন্য আমরা এসেছি বরিশালের চন্দ্রদ্বীপ। এই গ্রামে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা খুব জমজমাটভাবে আয়োজন করা হয়। চন্দ্রদ্বীপের বটতলা মাঠে অনুষ্ঠিত এ মেলায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। হরেক রকম পণ্যের দোকান বসে। দোকানে উপচে পড়া ক্রেতার ভিড়। বাতাসে বিভিন্ন পিঠা-পায়েস মিষ্টির ঘ্রাণ। চুড়ি, ফিতা, আলতা, বাঁশিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান। রয়েছে শীতলপাটি, পাখা, নকশিকাঁথা, হাঁড়ি-পাতিল, মাটির পুতুলসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পজাত পণ্য।
রয়েছে হা-ডু-ডু, মোরগ লড়াই ও ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন। পাশের নদীতে চলছে বার্ষিক নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। গরম গরম জিলেপি খেতে খেতে ঘুরে দেখতে থাকলাম মেলার সবকিছু। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লাম বটতলার বাউল গানের আসরে। গান শুনতে শুনতে রাত নেমে এলে বাড়ির পথে এগুতে থাকি দলে দলে। এই গ্রামীণ মেলার আনন্দ আমার স্মৃতিপটে আঁকা থাকবে সারা জীবন। গ্রামী মেলা বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য ঐতিহ্য- যা বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছে বৈশ্বিক পরিচিতি।
প্রতিবেদক-
আবিদ আজম।
৯. (ক) মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের ক্ষতিগুলো উল্লেখ করে বন্ধুদের প্রেরণের জন্য একটি ই-মেইল প্রেরণ কর।
উত্তর:
From : shaheen@gmail.com
To : amantika@gmail.com
Cc : ……
Bcc: ……
Subject :মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের ক্ষতির দিক।
Attach file : …..
Sent : 20 June,2323; 9:25PM
প্রিয় বন্ধু,
শুভেচ্ছা নিও। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মোবাইল ফোন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে এর অপব্যবহারে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো :
১. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, হুমকি, অপহরণ ও জঙ্গিবাদসহ নানা অপকর্মে সহায়ক ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন। ২. সংঘবন্ধ দুষ্কৃতকারীরা এর মাধ্যমে অগ্রিম সংবাদ পেয়ে দ্রুত গা ঢাকা দিতে পারে। ৩. মিথ্যা বলার প্রবণতা ও সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৪. সময়ের ও অর্থের অপচয় এবং শ্রেণিকক্ষ, সভা-সমিতি ও উপাসনালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ৫. অশালীন কুরুচিপূর্ণ ছবি ও অসামাজিক কার্যকলাপ এবং ইভটিজিং বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬. সর্বোপরি মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে। উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেনটিউমারের মতো কঠিন রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধিসহ এর রিংটোন হার্টের প্রচ- ক্ষতি করে। সুতরাং মোবাইল ফোনের অপব্যবহার থেকে আমাদের আত্মরক্ষা করতে হবে। আশা করি, বন্ধুরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহ ভাববে। সবাই ভালো থেকো।
তেমার বন্ধু
শাহীন।
অথবা,
(খ) স্টোর কিপার পদে চাকরির জন্য একটি আবেদনপত্র রচনা কর।
উত্তর:
০৪/০৬/২০২৩
বরাবর
ব্যবস্থাপক
মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ
নাজ গ্রুপ অব কোম্পানি
বনানী, ঢাকা।
বিষয়: ‘স্টোর কিপার পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই, দৈনিক আমাদেরসময়’ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি মারফত জানতে পারলাম আপনাদের কোম্পানিতে ‘স্টোর কিপার’ পদে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের জন্য একজন প্রার্থী। আমার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অপনার সদয় বিবেচনার জন্য নিচে উপস্থাপন করা হলো।
১. নাম : শরাফাত আহমেদ
২. পিতার নাম : আফসার আহমেদ
৩. মাতার নাম : সুফিয়া আহমেদ
৪. স্থায়ী ঠিকানা : ২, আলেয়া ভবন, সাতপার চৌরাস্তা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
৫. বর্তমান ঠিকানা : ৩৮১, দক্ষিণ খান, উত্তরা, ঢাকা।
৬. জন্ম তারিখ : ১৭/১১/১৯৯৪
৭. জাতীয়তা : বাংলাদেশি।
৮. ধর্ম : ইসলাম।
৯. অভিজ্ঞতা : ‘জেরিন ফুডস’ -এ ২০১৫ সাল থেকে ‘স্টোর কিপার’ হিসেবে নিয়োজিত আছি।
১০. শিক্ষাগত যোগ্যতা :
পরীক্ষার নাম পাসের বছর পরীক্ষার ফল বিশ্ববিদ্যালয়
এসএসসি ২০০৯ জি.পি.এ- ৪.০০ রাজশাহী
ইচএসসি ২০১১ জি.পি.এ- ৩.৫০ রাজশাহী
বি.এ ২০১৪ সি. জি.পি.এ- ৩.০০ রাজশাহী
অতএব, উল্লিখিত তথ্যাদি বিবেচনায় আমাকে উক্ত পদে নিয়োগ দান করে বাধিত করিবেন।
নিবেদক-
শরাফাত আহমেদ
সংযুক্তি:
ক. সার্টিফিকেটসমূহের সত্যায়িত কপি।
খ. পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি।
গ. চারিত্রিক সনদপত্র।
১০. (ক) সারাংশ লেখ :
সমাজের কাজ কেবল টিকে থাকার সুবিধা দেওয়া নয়, মানুষকে বড় করে তোলা, বিকশিত জীবনের জন্য মানুষের জীবনে আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়া। স্বল্পপ্রাণ, স্থূলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে সংসার পরিপূর্ণ। তাদের কাজ নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলা নয়, অপরের সার্থকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। প্রেম ও সৌন্দরে্যর স্পর্শ লাভ করেনি বলে এরা নিষ্ঠুর ও বিকৃত বুদ্ধি। এদের একমাত্র দেবতা অহংকার। ব্যক্তিগত অহংকার, পারিবারিক অহংকার, জাতিগত অহংকার- এসবের নিশান উড়ানোই এদের কাজ।
উত্তর:মানবিক বিকাশের সুযোগ দিয়ে মানুষকে বড় করে তোলাই সমাজের কাজ। অথচ সমাজের কিছু মানুষ প্রেম ও সৌন্দরে্যর স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়ে অহংকারী, নিষ্ঠুর ও বিকৃত মানসিকতার হয়ে ওঠে। এরা অন্যের সার্থকতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় প্রেম-ভালোবাসা-সৌন্দরে্যর প্রতি আকর্ষিত করে এই বিপথগামী মানুষদের জীবন সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তোলাও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
অথবা,
(খ) ভাব-সম্প্রসারণ কর :
জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
উত্তর:
ভাব-সম্প্রসারণ : জ্ঞান-বিজ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গুণে-মানে পরিপূর্ণ করে তোলা। আর তা সম্ভব হলেই একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর জাতি হিসেবে মানুষ উঠে যায় উন্নতির শিখরে। এর প্রভাবেই নানা ধরনের কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বিশ্বের দরবারে। আর এই জ্ঞান যদি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় পুঁথি-পুস্তক কিংবা সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনায়, তবে বুদ্ধি-বিবেক সেখানে আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এবং সামগ্রিক মুক্তি সেখানে হয় সুদূর পরাহত। এ জন্যই মুক্তবুদ্ধির চর্চার মধ্য দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সীমাবদ্ধ না রেখে যারা উদারভাবে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় তারাই সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করেন।
মুক্ত জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমেই জাতি পেতে পারে সঠিক পথের সোনালি ভবিষ্যৎ। আজকে যে জাতি যত উন্নত, সে জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে অসীম জ্ঞান শিক্ষার তৃষ্ণা। ফলে তারা কৃপনভূক না হয়ে, বৃদ্ধির আড়ষ্টতায় জড়িয়ে না গিয়ে মুক্তির সোপানে পৌছাতে সক্ষম হয়েছেন স্বমহিমায়। আমরা জানি, জ্ঞানশক্তির বিকাশ ঘটিয়েই কোনো ব্যক্তি জাতীয় উন্নতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন উদার শিক্ষানীতি, যা বৃদ্ধি ও বিবেকের আড়ষ্টতা থেকে রক্ষা করবে মানুষকে এবং জাতিকে এনে দেবে কাক্সিক্ষত মুক্তির সোনালি অধ্যায়।
জ্ঞানের সাধনা মূলত আড়ষ্টতাহীন মুক্তিরই সাধনা। তাই সীমাবদ্ধ কিংবা লোক দেখানো জ্ঞান অর্জন না করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনই সকলের কামা হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে অগ্রসর হলে দেশের ভেতর আবির্ভাব ঘটবে মনীষী বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ডাক্তারসহ নামিদামি গুণী মানুষের। যাঁরা দেশ, জাতি ও বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হবে প্রকৃত মুক্তির পথ। আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে উঠতে সক্ষম হবে সমগ্র মানবজাতি। আসলে প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা অর্জনের জন্য উদার জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত বুদ্ধির সাধনাই একমাত্র পথ। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে হলে, প্রকৃত মুক্তি পেতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
১১. (ক) ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা কর।
উত্তর:
সুমন: কী রে বন্ধু কেমন আছিস? ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন কি থেমে গেল নাকি?
সুজন : আছি ভালোই। না রে দোস্ত থামেনি তবে গতি একটু কমে এসেছে আর কি! তোর খবর কী?
সুমন: আমার খবর ভালো। কিন্তু পত্রিকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পড়ে মনটা ভালো নেই।
সুজন: আট জন নিহত! ভাবা যায়? প্রতিদিনই বাড়ছে এই দুর্ঘটনা।
সুমন: হ্যাঁ, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে প্রতিদিন গড়ে তিন জন করে বছরে এক হাজারের বেশি লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং পঙ্গু হয় বছরে ৫ থেকে ১০ হাজার লোক।
সুজন: সড়ক দুর্ঘটনা কী যে হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক তা কল্পনাও করা যায় না।
সুমন: ঠিকই বলেছিস। সেদিন নিজের চোখে দেখেছি এক ভয়াবহ দৃশ্য। আমি আর রাজু তো একজনকে টেনে বের করলাম খাদে পড়া বাস থেকে। দেখলাম লোকটার একটা হাত কেটে আলাদা হয়ে গেছে।
সুজন: এমন ভয়াবহ দৃশ্য প্রতিদিন কাউকে না কাউকে দেখতে হচ্ছে।
সুমন: হ্যাঁ। এর ফলে আমরা হারাচ্ছি আত্মীয়স্বজন, মেধাবী মুখ, প্রিয় মানুষকে। কিন্তু আমরা এই দুর্ঘটনা রোধে সচেষ্ট নই।
সুজন: সড়ক দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যু বড় অস্বাভাবিক এবং খুবই বেদনাদায়ক। অথচ আমরা এ ব্যাপারে উদাসীন বলেই মনে হয়।
সুমন: এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিরুদ্ধে আমাদের গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সুজন: ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন তো সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকসহ সকলকেই সচেতন করে তুলতে হবে।
সুমন: হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও অতিরিক্ত যাত্রী প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
সুমন: শুধু তাই নয়, দক্ষতাহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের লাইসেন্স প্রদানে, শ্রমিক দৌরাত্ম্য কমাতে এবং ট্রাফিক আইন পালনেও তাদের কার্যকর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুজন: প্রশাসন ও জনগণের মিলিত শক্তিই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন সফল করতে পারে।
সুমন: এ জন্য আমাদের সকলেরই উচিত নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকেও সচেতন করা।
সুজন: এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মিডিয়া গণসচেতনতামূলক কর্মকা-, বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি ফিল্ম ইত্যাদি তৈরি করে প্রচারাভিযান চালাতে পারে।
সুমন: আমারও মনে হয় সবাই সচেতনভাবে এগিয়ে এলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
সুজন: তুই ঠিকই বলেছিস। চল সবাই মিলে সচেতনভাবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
অথবা,
(খ) নিম্নোক্ত ইঙ্গিত অবলম্বনে একটি খুদে গল্প রচনা কর। (আশরাফ সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা)
উত্তর:
আশরাফ সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও তিনি মনে করেন দেশের জন্য অনেক কাজ করার বাকি রয়ে গেছে। তাই এই প্রৌঢ় বাসে ও….
আশরাফ সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও তিনি মনে করেন দেশের জন্য অনেক কাজ করার বাকি রয়ে গেছে। তাই এই প্রৌঢ় বয়সেও তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন পরিব-দুঃখী অসহায় বস্তিবাসীর মাঝে। ঢাকার মগবাজারে পেয়ারাবাগের নিজের বাসায় খুলেছেন একটি স্কুল। এখানে রেললাইনের পাশের বস্তির ছেলে-মেয়েদের জন্য এই স্কুলে রয়েছে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারসহ বিনোদনের হরেক আয়োজন। অবৈতনিক এই স্কুলে তিনি বই, খাতা, পেনসিলসহ সব শিক্ষা উপকরণ এবং স্কুল ড্রেস বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন।
নিজের ব্যবসায়ের আয় এবং বাড়িভাড়ার টাকায় তিনি স্কুলের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করেন। সন্ধ্যার পরে চালান একটা সান্ধ্য স্থল। এখানে তিনি বয়স্কদের শিক্ষার সুব্যবস্থা করেছেন। তাদের সুশিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা। আশরাফ সাহেবের এই কাজে তাকে সবসময় সহযোগিতা দেন তার স্ত্রী এবং কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু। দেশের কাজে তিনি এখনও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন আনন্দের সঙ্গে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজন করেন স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। তার মতে যারা ‘৫২ কিংবা ‘৭১ এ দেশের জন্য, ভাষার জন্য কিছু করতে পারেননি তারাও যেন স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের মূমূর্ষু মানুষকে বাঁচিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন।
দেশ, জাতি ও সমাজ উন্নয়নে আশরাফ সাহেব আজীবন কাজ করে যেতে চান আনন্দচিত্তে। তিনি মনে করেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন ও মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছি। আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়ে স্বাধীন জাতি হিসেবে গর্বিত। কিন্তু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা- শিল্পের উন্নয়ন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। তাই এখনও আমাদেরকে দেশের কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাঁর বন্ধুরাও তাঁর এই মতামতের পক্ষে। ফলে তাঁরা সবাই মিলে এখনও দেশের কাজ করে যাচ্ছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন দেশের জন্য কাজ করে যাবেন আশরাফ সাহেব।
১২. যেকোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ লেখ :
(ক) স্বদেশপ্রেম,
(খ) শ্রমের মর্যাদা,
(গ) মহান একুশে ফেব্রুয়ারি,
(ঘ) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১.
(ক) স্বদেশপ্রেম:
ভূমিকা : জননী যেমন সন্তানের কাছে আজীবন পূজনীয়, দেশও তেমনি মানুষের কাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মোহনীয়। তাই জন্মলগ্ন থেকে মায়ের মতো দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। স্বদেশ যত ক্ষুদ্র, দুর্বল বা সমস্যাপীড়িত হোক না কেন, প্রত্যেক মানুষের কাছে তার দেশ সকল দেশের সেরা। স্বদেশের মানুষ, তার প্রকৃতি, প্রাণিকূল, প্রতিটি ধূলিকনা দেশপ্রেমিকের কাছে পরম পবিত্র।
দেশমাতৃকার মৃন্ময়ী মূর্তি শুধু কাদা-মাটি-জলে নির্মিত প্রতিমামাত্রই নয়, হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসায় এবং গভীর মমত্ববোধে সে অন্তরের অন্তস্তলে পরিগ্রহ করে চির আরাধ্য চিন্ময়ী মূর্তি। দেশপ্রেমিক মানুষ তাঁর ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি অর্জনে স্বীকার করেন দেশের অবদান। স্বদেশের স্বার্থ রক্ষায় তাঁরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। এমনকি দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতেও তাঁরা পিছপা হন না।
দেশপ্রেমের স্বরূপ : যে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং বেড়ে ওঠে সেটিই স্বদেশ। স্বদেশের প্রতি মানুষের একটি স্বাভাবিক আন্তঃআকর্ষণ গড়ে ওঠে। এ থেকেই স্বদেশপ্রেমের শুরু। স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি সহজাত গুণ। জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ দেশের মাটি, পানি, আলো, বাতাস, পরিবেশ, সংস্কৃতি ইত্যাদির সংস্পর্শ লাভ করে। তার দেহ, মন, আদর্শ সবকিছুই দেশের নানা উপাদান দ্বারা পৃষ্ট। তাই মানুষ স্বদেশের মানুষ, প্রকৃতি, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছুকে ভালোবাসে। স্বদেশের প্রতি এ ভালোবাসাই হলো স্বদেশপ্রেম।
বস্তুত দেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্ভ্রমবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্ভ্রমবোধ যত প্রখর, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত প্রবল। নিঃস্বার্থ, অহিংস দেশপ্রেমই স্বদেশপ্রেম। ক্ষুদ্র স্বার্থের গ-ি অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে যখন মন পরিচালিত হয়, যখন আত্মকল্যানের চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখনই জ্বলে ওঠে স্বদেশপ্রেমের নিষ্কলুষ প্রদীপশিখা। পরদেশি শাসকের রক্তচক্ষু, উদ্যত অস্ত্র কিংবা পথের কোনো বাধা তাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে নিবৃত্ত করতে পারে না। তারা মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে এগিয়ে যায় দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার টানে।
স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও দৃষ্টান্ত : দেশপ্রেমিক মাত্রই দেশকে ভালোবাসেন। স্বদেশপ্রেম মানবচিত্তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তা জেগে ওঠে। দেশাত্মবোধ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভেদ ভুলে একই ভাব-চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করে। আবার দেশ যখন পরাধীনতার নাগপাশে বন্দী হন, ভিনদেশি শাসক-শোষকের নির্যাতনে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয় তখন স্বদেশপ্রেম জাতীয় জীবনে জাগ্রত হয়। দেশপ্রেমিক দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেন।
যুগে যুগে অনেক মনীষী দেশের কলাপে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। উপমহাদেশের তিতুমীর, রানা প্রতাপ, শিবাজী, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলেনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমুখ দেশপ্রেমের অম্লান স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে দেশপ্রেমিক হিসেবে অমর হয়ে আছেন। এছাড়া শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমান, ইতালির পারিবালডি, রাশিয়ার লেনিন ও স্টালিন, চীনের মাও সেতুং, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা প্রমুখ ব্যক্তিগণ বিশ্বমানে দেশপ্রেমের উৎকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
দেশপ্রেমের উপায় : পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই দেশপ্রেমের কথা বলা হয়েছে। সকল ধর্মেই দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মানুষ যেকোনো স্থান থেকে, যেকোনো অবস্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে, তার স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। দেশের জন্য, জাতির জন্য, দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে দেশের প্রতিটি উপাদানকে ভালোবাসতে হবে। নিজের দুঃখদশাকে ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।
দেশপ্রেমের প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহ: দেশপ্রেম শব্দটি কেবল একটি নির্দিষ্ট ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষের প্রতিটি কাজে-কর্মে, আচার- আসরণে, চলনে-বলনে, পোশাক-পরিচ্ছদে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে এবং দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তোলা যায়। সংস্কৃতি দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নিজ দেশকে ভালোবাসা মানে দেশীয় সংস্কৃতিকে নিজ হৃদয়ে লালন করা।
বিশ্বায়নের প্রভাবে আমরা পরিচিত হচ্ছি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ আজ নিজ সংস্কৃতি ভুলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অন্ধ অনুকরণ করছে। তাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, রুচি প্রভৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা চলতে দেওয়া যাবে না। নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে লালন করে একে আরও যুগোপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
টাকা আছে বলেই বিদেশি পণ্য ব্যবহার করব এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশজ পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হতে হবে। দেশীয় পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশজ শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রেখে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে হবে। প্রবাসে কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে এবং সৎ থাকতে হবে। কারণ এর মাধ্যমেই বিদেশিরা আমাদের দেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে কীভাবে বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার সামনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে আমাদের করণীয় : জন্মের পর থেকেই আমাদের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হতে থাকে। এটি এমন একটি বিষয় যা কখনো শিখিয়ে দিতে হয় না। এটি জন্মসূত্রেই মানুষের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। তারপরও দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়োজন আছে।
HSC | বাংলা ২য় | ব্যকরণিক: সমাস নির্ণয় | PDF Download
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে নিম্নোক্ত উদ্যোগ নিতে হবে.
ক. প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য সততার সাথে পালন করতে হবে।
খ. কোনো অন্যায়, অবিচার বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
গ. দেশের প্রচলিত আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে।
ঘ. দেশের সকল মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
ঙ. দেশ যত ক্ষুদ্র, দুর্বল, দরিদ্র হোক না কেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে।
চ. জাতীয় প্রচার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে উৎসাহব্যঞ্জক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে।
ছ. বিদেশি সংস্কৃতি নয়, নিজস্ব সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করতে হবে।
জ. বাক্তি নয়, দল নয়, দেশই বড়। এই বোধ সাধারণের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে।
ঝ. মা এ দেশকে সমানভাবে ভালোবাসতে হবে।
দেশপ্রেম, রাজনীতি ও সমাজনীতি : রাজনীতির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিবিদরা উৎসর্গ করেছিলেন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য জীবন। ভিনদেশি শাসকের হাতে তাদের নির্যাতিত হতে হয়েছে, কারারুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে রাজনীতির সেই ধারা অব্যাহত নেই। দেশ-জাতি তথা জনগণের কল্যাশ নয়, ক্ষমতাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের ক্ষমতার কাছে, দাপটের কাছে লঙ্ঘিত হয় মানবাধিকার, ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা। রাজনীতির এই পচনের জীবাণু সমাজনীতিকেও আক্রমণ করেছে। আদর্শ নয়, অর্থবিত্ত ও ক্ষমতাই আমাদের বর্তমান সমাজের চালিকাশরি। এখানে ন্যায়, নীতি, সততার স্থান প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ রাজনীতির মতো সমাজনীতিরও লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন মানবকল্যাণ।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : মানুষ বৃহত্তর অর্থে এ পৃথিবীর সন্তান। তাই দেশের প্রতি যেমন প্রত্যেক মানুষের ভালোবাসা রয়েছে, বিশ্বের প্রতিও অনুরূপ। স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। স্বদেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই জাগ্রত হয় বিশ্বপ্রেমের মহান চেতনা। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কখনো অন্য দেশের অকল্যাণের কথা ভাবতে পারে না। তার দেশপ্রেমই তাকে জানিয়ে দেয়- এ বিশ্বের প্রতিটি মানুষই তার আত্মীয়। ‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ এ বোধই বিশ্বপ্রেম সৃষ্টি করে। সংকীর্ণ অন্ধ জাতীয়তাবোধ থেকে মুক্তির উপায় এই বিশ্বপ্রেম।
উপসংহার : স্বদেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই সেই ব্যক্তি পশুর সমান। স্বদেশপ্রেম মানুষের জীবনের অন্যতম মহৎ চেতনা। এটি মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ দেশের কল্যাণে কাজ করে। যথার্থ দেশপ্রেমিক নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশকে স্থাপন করেন। আমাদের সকলকে স্বার্থহীন দেশপ্রেমিক হতে হবে। কেবল কথায় নয়, মেধায়-মননে, চিন্তাচেতনায়, কর্মে দেশপ্রেমকে স্থান দিতে হবে। তবেই আমাদের দেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে, সার্থক হবে শহিদদের আত্মত্যাগ, বিশ্বের দরবারে আমরা বিশ্বপ্রেমিক জাতি হিসেবে পরিচিত হব।
(খ) শ্রমের মর্যাদা
ভূমিকা: পৃথিবীতে সকলকে সাধ্যমত পরিশ্রম করতে হয়, শ্রম দিতে হয়। সভ্যতার এ চরম বিকাশের মূলে আছে যুগ-যুগান্তরের লক্ষ-কোটি মানুষের অফুরন্ত শ্রম। বহু মানুষ তাদের বহুদিনের শ্রম তিলে তিলে দান করে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এই অনবদ্য তিলোত্তমা মূর্তি। তাদের নাম ইতিহাসে লেখা নেই। সকলের পরিশ্রম বা শুমের যৌথ প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে সভ্যতার এ অনবদ্য বিকাশ। সভ্যতা মানুষের শ্রমেরই সম্মিলিত যোগফল।
শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা : মানবজীবনে শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ছোট হোক বড় হোক সকলেরই কাজের প্রয়োজন আছে এবং যার যার দায়িত্ব যথাযথ পালনের মধ্যে জীবনের সুখকর অস্তিত্ব নির্ভরশীল। জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি পরিশ্রমের মধ্যে বিদ্যমান। শ্রমের এই অপরিসীম গুরুত্ব বিবেচনায় শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে। আজকের বিশ্বের বিপুল অগ্রগতির পেছনে যেমন শ্রমজীবী মানুষের অবদান রয়েছে, তেমনি শ্রমজীবী সমাজের অসহযোগিতা জীবনকে বিষময় করে তুলবে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, শ্রমের প্রতি তারা মর্যাদাশীল বলে তাদের উন্নতি এত ব্যাপক হয়েছে। সেসব দেশে ছোট বড় বলে কোনো পার্থক্য নেই। কাজ যাই হোক না কেন তাতে কোনো অমর্যাদা লুকিয়ে থাকে না। কায়িক বা দৈহিক পরিশ্রম সেসব দেশে কখনো কোনো অগৌরব নিয়ে আসে না। তাই সকলেই সব রকম কাজের প্রতি সমান আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। জীবনের সাথে শ্রমের একটা নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
শ্রমের প্রকারভেদ : শ্রম প্রধানত দু প্রকার দৈহিক বা কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। মানবসমাজে দু ধরনের শ্রমেরই মূল্য আছে। যারা দেহ, খাটিয়ে পরিশ্রম করে, তাদের শ্রমকে দৈহিক বা কায়িক শ্রম বলে। আর যে শ্রমে বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগানো হয়, তাকে বলে মানসিক শ্রম। জীবন পথে চলতে গেলে উভয় প্রকার শ্রমেরই প্রয়োজন রয়েছে।
ভাগ্যরচনা ও প্রতিভা বিকাশে শ্রম : মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নিজের ভাগ্যেরও নির্মাতা। নিজের ভাগ্যকে মানুষ নিজেই নির্মাণ করতে পারে। তার ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ার হলো তার পরিশ্রম। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। পৃথিবীতে যে সকল ব্যক্তি প্রতিভাবান বলে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা আজীবন করেছেন কঠোর পরিশ্রম এবং তার ফলে তাঁদের প্রতিভা ফুলের মতো বিকশিত হয়ে পৃথিবীকে বিতরণ করেছে অনাবিল সৌরভ। পরিশ্রমই মানুষের প্রতিভা বিকাশ ও ভাগ্য গঠনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শ্রমের এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই পাশ্চাত্য মনীষী ঠরৎমরষ বলেছেন, “Virgil e‡j‡Qb, “The dignity of labour makes a man self-confident and high ambitious So, the evaluation of labour is essential.”
কারবালা ও প্রতিভা বিকাশে শ্রম: মানুষ একদিকে যেমন সত্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নিজের ভাগ্যেরও নির্মাতা। নিজের ভাগ্যকে মানুষ নিজেই নির্মাণ করতে পারে। তার ভাগ্য নির্মাণের হাতিয়ার হলো তার পরিশ্রম। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। পৃথিবীতে যে সকল ধরে প্রতিভাবান বলে স্বরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা আজীবন করেছেন কঠোর পরিশ্রম এবং তার ফলে তাঁদের প্রতিতা ফুলের মতো বিকশিত হবে।
পৃথিবীকে বিতরণ করেছে অনাবিল সৌরভ। পরিশ্রমই মানুষের প্রতিভা বিকাশ ও ভাগ্য গঠনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। গুনের এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই পাশ্চাত্য নারী ঠরৎমরষ বলেছেন, “The dignity of labour rices a man self-confident and high ambitions Sen, the evaluation of labour is essential.
.
সব ধর্মে শ্রমের মর্যাদা : ইসলাম ধর্মে শ্রদের গুরুত্ব ও শ্রমিককে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমাদের মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) নিজেও শ্রমিকের মতো বহু পরিশ্রমের কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাঠে মেষ চরিয়েছেন। শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার আগে তার পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে ইসলামে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট ও অন্যান্য ধর্মেও শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা দে প্রমের মূল্যায়ন করা হয়েছে যথাযথ সম্মানের সাথে। কেননা বিশ্ব সভ্যতার শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রমের জার শ্রমিক সমাজ আজ বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানবিক প্রনকে তার যোগ্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কালের যাত্রার একমাত্র তারাই আজ সমাজেনর রথকে গতি দিতে পারে, একমাত্র তারাই পারে সমাজে কর্মমুখরতার ঢেউ আনতে। তাই আজ শ্রমের জয়া বিঘোষিত হচ্ছে দিকে দিকে।
শ্রমিক দুনিয়ার প্রতি সকলের দৃষ্টি আজ আকৃষ্ট হয়েছে। দেশে দেশে আজ শ্রমিক সংঘ এবং শ্রমিক কল্যাণ স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমাজ কাব্যে উপেক্ষিত এই শ্রমকে তার যোগ্য সম্মান না দিলে যে সমাজের উত্থান নেই, অগ্রগতি নেই-এ কথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু শ্রমিক সমাজকেও মনে রাখতে হবে যে, শ্রেণিস্বার্থ নয়, সমবণ্টনই কাম্য।
সমাজের সম্পদ, তার যাবতীয় সুযোগসুবিধা সকল মানুষের জন্য সমভাবে বণ্টিত হওয়া উচিত। বিল, বাহুবল, অর্থবল এবং প্রবল সমাজের সবই প্রয়োজন। সমাজের বেদিমূলে সবাই যে যার সামর্থ অনুযায়ী প্রমদান করবে। তার বিন্যা প্রত্যেকে তার ন্যায়সংগত মূল্য পাবে। এটাই বর্তমান যুগের আদর্শ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে শ্রমের স্থান : বাংলাদেশে শ্রমবিভাগ ছিল প্রধানত বর্ণগত। যারা উঁচু বর্ণের তারা কোনো কাজ করত না। নিচু বর্ণের লোকেরা দৈহিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করত। তাতে সমাজে একটা ধারণা জন্মেছিল যে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তারা সমাজে সম্মানের পার নয়। এভাবে কায়িক পরিশ্রম আমাদের দেশে অবজ্ঞা পায় এবং আমরা কর্মবিমুখ হয়ে পড়ি। এটাই আমাদের অবনতির মূল কারণ।
শ্রমের সুফল: পরিশ্রম ছাড়া সমাজের কোনো কাজই সম্পাদিত হতে পারে না। সমস্ত কাজই পৃথিবীর কাজ। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি ও দেশ তত উন্নত। পৃথিবীর মানুষ হিসেবে সকল কাজই মানুষের করণীয়। তাতে যেমন কাজের কোনো জাতিভেদ নেই, যারা সেই কাজ করে তাদেরও কোনো জাতিভেদ নেই। সুতরাং পরিশ্রম করা মোটেই সম্মান হানিকর নয়। এতে ব্যক্তির আত্মোন্নয়ন যেমন হয়, তেমনি হয় দেশের কল্যাণ। কায়িক ও মানসিক উভয় প্রকার শ্রমের মাধ্যমেই ব্যক্তি এবং জাতি মাথা উঁচু করে চলতে পারে।
জাতীয় উন্নয়নে। শুমের গুরুত্ব অনেক। শ্রমবিমুখ জাতির পতন অনিবার্য। জগতের মহামনীষীরা সবাই পরিশ্রম করেছেন এবং শ্রমের মর্যাদা দিয়ে গেছেন। এত যেসব কীর্তি স্থাপিত হয়েছে সেগুলোর মূলে রয়েছে মানুষের চিন্তা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। শ্রমকে ঘৃণার চোখে বিচার করলে দেশে উৎপাদনের জোয়ার আনা যায় না, জাতীয় সমৃদ্ধির স্বপ্ন রচনা করা যায় না। শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলেই পরিশ্রমের প্রকৃত সুফল পাওয়া সম্ভব। তাই সব শ্রমেরই মর্যাদা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে যারা শুম দেয় তারা আর শ্রমবিমুখ থাকবে না এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
Hsc বাংলা ২য় পত্র মডেল টেস্ট 2024 উত্তরসহ 2
HSC | বাংলা ২য় | ব্যকরণিক: প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ | PDF Download
উপসংহার : জীবনের সর্বক্ষেত্রে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রমিক দুনিয়াকে অভুক্ত রেখে কিংবা তাদের ঘৃণায় অপমানে সমাজের দুর্বলতম শ্রেণিতে পরিণত করে দেশে উৎপাদনের জোয়ার আনা যায় না, জাতীয় সমৃদ্ধির স্বপ্ন রচনা করা যায় না। অথচ মানুষের পরিশ্রমকে কোনো সমাজ কোনো কালেই তার যোগ্য মর্যাদা দেয়নি। যারা সত্যিকার অর্থেই জীবনে সম্মান পেয়েছেন তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, পরিশ্রমেই জীবনের প্রকৃত আনন্দ। পরিশ্রমই জীবনের অশেষ দুঃখ-কষ্ট থেকে মানুষকে মুক্তির সন্ধান দেয়। তাই সব শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বাকি অংশ এখানে
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।