HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ১-৫ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষণ ও বক্তব্য গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু ভাষণ ও বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
উচ্চ মাধ্যমিক ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
নির্মিতি অংশ : ভাষণ/বক্তব্য
ভাষণের সংজ্ঞার্থ ও প্রকৃতি
ভাষণ শব্দটির প্রচলিত অর্থ বক্তৃতা। বিশেষ কোন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসমাবেশে বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনগণকে সম্বোধন করতে বক্তা যে বক্তব্য প্রকাশ করেন, তাই বক্তৃতা। ভাষণ সাধারণ পূর্ব নির্ধারিত হয়। তাই এর সুচিহ্নিত খসড়া আগে থেকে রচনা করা যায়। তবে ভাষণ যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল হলেই হয় না, বক্তার উপস্থাপনা কৌশলে বক্তব্য/ভাষণ প্রাণবন্ত ও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
ভাষণের বিভিন্ন অংশ
ভাষণকে বিশ্লেষণ করলে এর ৫টি অংশ লক্ষ্য করা যায়। নিচে এগুলো আলোচনা করা হল।
১. সম্ভাষণ বা সম্বোধন: ভাষণের সূচনায় বা আরম্ভে সভার সভাপতি, প্রধান অতিথি এবং সভায় উপস্থিত সকলকে সম্ভাষণ বা সম্বোধন জানাতে হয়। সাধারনত মাননীয় সভাপতি বা সম্মানিত সভাপতি, শ্রদ্ধেয় বা শ্রদ্ধাভাজন প্রধান অতিথি, উপস্থিত ভদ্রমন্ডলী বা ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহিলাগণ ইত্যাদি সম্বোধন করতে হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা হলে, মাননীয় প্রধান শিক্ষক বা মাননীয় অধ্যক্ষ, মাননীয় শিক্ষকবৃন্দ ও আমার সতীর্থ ভাই ও বোনেরা বা সতীর্থ ছাত্রছাত্রীরা ইত্যাদি সম্বোধন করা যায়। সভায় উপস্থিতজনকে আকৃষ্ট করার জন্য বক্তা আন্তরিক সম্ভাষণ করে থাকেন।
২. প্রস্তাবনা বা বিষয় পরিচিতি : সভা বা অধিবেশনের প্রসঙ্গকথা যদিও পূর্বেই ঘোষিত থাকে তবুও বক্তার বিশেষ বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি জানা থাকে না। তাই সম্ভাষণের পরেই বক্তা তাঁর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি মূলকথা বলার প্রস্ততি হিসেবে প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবনা করেন। কোন কোন বক্তা এ সময় বক্তব্য রাখার সুযোগ দেবার জন্য সভায় আয়োজনকারীদের ধন্যবাদও জানান।
৩. মূলবক্তব্য : বিষয় প্রস্তাবনার পরেই আসে মূল বিষয়। মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় একটির পর একটি পয়েন্ট এভাবে আসে যাতে সহজেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। দীর্ঘ ভাষণ কোন শ্রোতারই পছন্দ হয় না। বক্তব্য অহেতুক দীর্ঘ না করা ও একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলা বাঞ্ছনীয়। অনেকের কথা বলার সময় মুদ্রাদোষ লক্ষ্য করা যায়। মুদ্রাদোষ পরিহার করতে হবে।
৪. সারাংশ: মূল বক্তব্য শেষ হয়ে গেলে বক্তা প্রাঞ্জল একটি সারাংশ বলবেন। এতে শ্রোতাবর্গের কাছে মূল বক্তব্য বুঝতে সহজ হয়। সারাংশ অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হবে।
৫. উপসংহার : উপসংহারে বক্তা কিছু আবেদন রাখতে পারেন অথবা যে বিষয়টি আলোচিত হল সে প্রসঙ্গে করণীয় কাজের কথা বলতে পারেন। সুন্দর কথা যেমন মানুষকে আকৃষ্ট করে তেমনি সুন্দর বক্তৃতা ও ভাষণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। কথা ও ভাষণের বিষয়কে যেমন সুন্দর করে তোলা যায় তেমনি উপস্থাপনার কৌশল বক্তৃতার ভঙ্গি, চমৎকার উচ্চারন, ভাষণদানকারীর ব্যক্তিত্ব সব কিছু মিলিযে ভাষণকে একটি শিল্পে পরিণত করতে পারে। চমৎকার ভাষণ প্রদান তাই অনুশীলনের যোগ্য।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উপযোগি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ/বক্তব্য:
১. তোমার কলেজে ‘১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে প্রধান অতিথির একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি কর।
২. ‘মে দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপতির ভাষণ প্রস্তুত কর।
৩. মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
৪. তোমার কলেজে ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
৫. আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
৬. ফেসবুক ব্যবহারের ভালো ও মন্দ দিকগুলো নির্দেশপূর্বক একটি ভাষণ তৈরি করো।
৭. ২২ শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে একটি ভাষণ প্রস্তুত করো।
৮. বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির জন্য একটি ভাষণ রচনা করো।
৯. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
১০. “শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা” বিষয়ে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
১১. ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।
১২. ‘নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।
১৩. ‘সা¤প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
১৪. “ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, “ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে একটি মঞ্চভাষণ প্রস্তুত কর।
১৫. ‘মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপন করার জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে” যুবসমাজের উদ্দেশে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, “মাদকের অপর নাম মৃত্যু” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, ‘মাদকাসক্তির কুফল’ সম্পর্কে আয়োজিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের জন্য প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, কোনো সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য ‘মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, মাদকদ্রব্য সেবনের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি কর।
১৬. ‘নারী নির্যাতন ও পণপ্রথা বিরোধী’ সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য একটি লিখিত বক্তব্য/ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, পণপ্রথা’র কুফল আলোচনা শীর্ষক সেমিনারে তোমার বক্তব্য পেশ করার জন্য লিখিত ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, ‘যৌতুকের অভিশাপ’ বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর।
১৭. সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর।
১৮. “খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
১৯. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি মঞ্চ ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসাবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন মূল্যবোধের পরিবর্তন” শীর্ষক সেমিনারের উদ্দেশ্যে একখানি মঞ্চ ভাষণ প্রস্তুত কর।
২০. শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয় বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি করো।
অনুশীলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নমুনা ভাষণ/বক্তব্য:
১. তোমার কলেজে ‘১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে প্রধান অতিথির একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি কর।
আসসালামু আলাইকুম,
আমি সবার আগে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রতি- যাঁরা আমাকে এখানে প্রধান অতিথি হবার দুর্লভ সুযোগ করে দিয়েছেন।
আজকে আমরা এ মহতী অনুষ্ঠানে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সমবেত হয়েছি জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে এক দল বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-পরিজনসহ নির্মমভাবে হত্যা করে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ ঘটিয়েছিল। সেই নির্মম হত্যাকাÐের দিনটিকেই জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই দিবসটি বাঙালী জাতি তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধায় অভিভূত হয়, শোকাভিভূত হৃদয়ে শ্রদ্ধার অশ্রæ নিবেদন করে।
সুধীবৃন্দ,
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর হত্যাকাÐ। বাঙালি জাতীর জন্য এক চরম কলঙ্কজনক অধ্যায়। আপনারা জানেন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পশ্চিমা হানাদারদের বিরুদ্বে জীবনপণ সংগ্রাম করে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সগৌরব উত্তরণ ঘটিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রমের যে আহব্বান জানানো হয়েছিল তাতে সাড়া দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বীর জাতি হিসেবে বাঙালি বিশ্বের বুকে অনন্য ইতিহাসের সৃষ্টি করেছে। এর জন্য ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে আত্মহুতি দিতে হয়েছে।
এই সংগ্রাম ও স্বাধীনতার পিছনে বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন প্রেরণা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পড়েই কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্যের উচ্চাকাঙ্খার জন্য তাঁকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হলো। শোকসাগরে ভাসল সারা দেশবাসী। এতে সারা বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হলো। স্বাধীন দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেছিলেন তা এভাবেই মর্মান্তিক পরিণতি লাভ করে।
সুধীবৃন্দ,
আজকে শোক দিবস পালনের অর্থ বঙ্গবন্ধুর জন্য বেদনার অশ্রæপাত নয়। তিনি সোনার বাংলা গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সফল করে তুলতে পারলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সার্থক হবে। দীর্ঘ দিন পড়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এবার জাতির শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে জাতিকে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেয়ার সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যেমন পরম গৌরবের, তেমনি স্বাধীনতার মর্যাদা বৃদ্বির জন্য আত্মত্যাগের সাধনাও পরম আকাঙ্কিত। শিক্ষার অভাব ও দারিদ্র্য জন-জীবনকে বিপর্যস্ত করেছিল।
স্বাধীন দেশে সা¤প্রতিককালে শিক্ষায় যেমন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তেমনি খাদ্যেৎপাদনেও স্বয়ংম্পূর্ণতা এসেছে। স্বাধীন দেশের মর্যদা সমুন্নত করে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁর মহান আদর্শকে প্রতিটি বাঙালরি জীবন প্রতিফলিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিবেদিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে যদি সর্বশক্তি নিয়ে আত্মনিয়োগ করা যায় তাহলেই জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সার্থক হবে।
সুধীবৃন্দ,
জাতীয় শোক দিবসকে শোক প্রকাশের দিন বলে বিবেচনা না করে অঙ্গীকারের দিন বলে বিবেচনা করতে হবে। সে অঙ্গীকার হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার। আসুন আমরা সেই মহৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের নিবেদিত করি।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। খোদা হাফেজ।
২. ‘মে দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপতির ভাষণ প্রস্তুত কর।
মান্যবর প্রধান অতিথি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
আজ ১ মে, মে দিবস। এ দিবসটি একদিনে আন্তর্জাতিক চেহারা পায়নি। এর পিছনে যে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে অনেক রক্তঝরার কাহিনি- তা আমাদের কমবেশি সবারই জানা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার ব্রত। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবসের অর্থ শ্রমজীবি মানুষের উৎসবের দিন, জাগরণের গান, সংগ্রামের ঐক্য ও গভীর প্রেরণা। মে দিবস শোষণ মুক্তির অঙ্গিকার, সমাজতন্ত্র গড়ার শপথ।
আপনারা জানেন যে, ১৮৮৬ সালের ১ মে। পাঁচ লাখ শ্রমিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দিলেন। শাসকদল ও ঐক্যবদ্ধ সুবিশাল শ্রমিকের সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে পিছিয়ে গেল। ৩ মে। ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় চলল নির্মম পুলিশী আক্রমণ। প্রাণ হারালেন ছ’জন নিরস্ত্র শ্রমিক।
আর পরের দিন ৪ মে, হে মার্কেট স্কোয়ার, সুবিশাল প্রতিবাদ সভায় পুলিশ গুলি চালাল। শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো হাতের নিসান। গ্রেপ্তার করা হলো চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে চললো নির্মম প্রহসন। জারি হলো ফাঁসির আদেশ। এঁরা হলেন আগস্ট স্পাইজ, পার্সনস ফিসার ও এঞ্জের।
প্রতিবাদের ঝড় উঠল। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই, ফরাসি বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল প্যারিস। বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী। এ দিনেই প্যারিসেদ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মেলন, প্রথমদিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব। ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণির আর্ন্তজাতিক সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন বলে ঘোষিত হলো। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রূপান্তরিত হয় আর্ন্তজাতিক মে দিবস হিসেবে।
দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংকল্প গ্রহণের দিন। সেই সংকল্প হলো সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণি-বৈষম্যের পুঁজিবাদী দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণির চিন্তাচেতনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্যময় দিন।
মে দিবসকে ব্যবহার করে ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণির বৈপ্লবিক অভ্যুন্থনের বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে। তারই সার্থক পরিণতি ১৯১৭ সালে ঐতিহাসিক মে দিবসের শতবর্ষ শেষ হয়েছে। মে দিবসের এ দীর্ঘ শতবর্ষের আলোয় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে। সংগ্রামী শ্রেণির সামনে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। দৃঢ় হয়েছে শ্রমিক সংহতি।
বিশ্বের একÑতৃতীয়াংশ মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়; কিন্তু এখন জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ পুঁজিবাদি দাসত্ব থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজ প্রবল পরাক্রান্ত। এখন তাদের নির্লজ্জ হুঙ্কার থামেনি।
তাই দুনিয়াজুড়ে মে দিবসের মে বিজয় অভিজান সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজতন্ত্রের সপক্ষে পুঁজিবাদ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির বৈপ্লবিক সংগ্রাম। এ সংগ্রামি চেতনা ও চরিত্রই শ্রমজীবির ভূষণ।
মে দিবস আজ আর শমিকের কাজের ঘন্টা কমানো দাবির আন্দোলন নয়। মে দিবস আজ দুনিয়ার মেহেনতি মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন শ্রমিকশ্রেণির সামনে নতুন ঊষার স্বর্ণদুয়ার। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দুর্লভ এক সম্পদ। সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
৩. মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
মাননীয় সভাপতি ও উপস্থির সুধীবৃন্দ,
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির জন্যে এক বিশেষ দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে রচিত হয়েছিল এক গৌরবময় ইতিহাস। এ ইতিহাস আমাদের ঐক্য ও সংহতির। এ ইতিহাস আমাদের দুর্বার চেতনার। ১৯৭১ সালের এ দিনে বাঙালি জাতি ছুড়ে ফেলেছিল প্রায় দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণের শৃঙ্খল, নিজেদের ঘোষণাকরেছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে। সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল আমরা দেশের আয়তনের বিচারে ছোট হতে পারি, কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা মোটেও ছোট নই।
পাকিস্তানি শাসকচক্রের অব্যাহত অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১- এর ২৬ মার্চ তারিখ থেকে সূচনা হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সে ছিল সত্যিকার অর্থে এক অসম লড়াই, সমরাস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ লড়াইয়ে বাঙালির মন্ত্র ছিল তাদের চেতনা এবং দৃঢ় সংহতি।
মাননীয় সভাপতি,
নতুন প্রজন্মের একজন হওয়ায় আমি ৭১-এর স্বাধীনতা দিবস দেখিনি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস আমাকে আলোড়িত করে, নবচেতনায় করে উব্দুদ্ধ। তারপরও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে মনে প্রশ্ন জাগে, স্বাধনিতা অর্জন করলেও স্বাধনিতা দিবসের তাৎপর্যকে সমুন্নত রাখতে কি আমরা সক্ষম হয়েছি?
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, বাঙালি জাতির ক্ষেত্রে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে’ স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’ প্রবাদটি বহুলাংশেই সত্যি। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় তার প্রমাণ দেখা যায়। আমাদের জীবনে জাল পেতে আছে রাজনৈতিক অনৈক্য, সন্ত্রাস, কালো টাকার দৌরাত্ম্য ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতি। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সবখানে এর প্রভাব কমবেশি দেখা যায়।
শিক্ষাঙ্গানগুলো হয়ে গেছে বিভিন্ন রাজনেতিক দলের মদদপুষ্ট মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীর কুক্ষিগত। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি লক্ষ করা যাচ্ছে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বেকারত্বের জালে আবদ্ধ যুবক বেছে নিচ্ছে সন্ত্রাস আর ড্রাগের মরণনেশা।
স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছর পর এখনও অসঙখ্য লোক অশিক্ষা ও দারিদ্র কবলিত। বিপুল সংখ্যক দেশবাসী বাধ্য হয় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে, বেছে নেয় নানারকম অসৎ জীবিকা। এককথায় এখনো আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, কিন্তু আর তাৎপর্যকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ঘটাতে পারিনি। তাই স্বাধীনতাকে তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিতকরার লক্ষে এখনই আমাদের দল-মত নির্বিশেষে একত্রিত হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের মধ্যকার ভেদাভেদ-কোন্দল ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার দায়িত্ব তুলে নিতে হবে।
দেশের তারুণ্যকে দেশব্রতীবিপুল কর্মসূচিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। কেননা তারাই পারে, দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে। তাদের দিকনির্দেশনাই সমগ্র জনসাধারণকে পরিচালিত করবে।
নতুন করে দেশ গড়ার লক্ষ্যে তাই আসুন, এ বিশেষ দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করি- আজ থেকেই শুরু হবে আমাদের দেশ গড়ার কাজ। সবাই মিলে একসাথে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে দেশকে আমরা গড়ে তুলব।
সকল কালো শক্তির হাত থেকে থেকে দেশকে রক্ষা করব এবং দারিদ্র্যের অবসান ঘটাব। তাহলেই আমাদের স্বাধীনতা তার প্রকৃত তাৎপর্য লাভ করবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।
৪. তোমার কলেজে ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ প্রস্তুত কর।
মান্যবর প্রধান অতিথি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালে এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে মহান বিজয় দিবস অর্জিত হয়েছে তা চির অ¤øান। যুগ যুগ ধরে তা আমাদের জীবনে প্রেরণা দান করতে থাকবে।
প্রিয় সুধীবৃন্দ
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সৃষ্টি হয়েছিল তার গৌরবজনক সমাপ্তি ঘটে সেই বছরেই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে। আজ সেই মহান বিজয় দিবস।
এ দেশের জাতীয় জীবনে এ দিবসটি সবচেয়ে গৌরবময় ও পবিত্রতম দিন। বিজয় দিবসের আনন্দোজ্জল এ মুহূর্তে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে তা হলো, এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহিদের কথা।
১৯৭১ সালে এ দিনে বাংলার মানুষ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক স্বৈরশাসনের ২৪ বছরের গøানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিল। তাঁরা তাঁদের অমূল্য জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন দেশ, আমরা এ স্বাধীন দেশর নাগারক। তাই জাতীয় অগ্রগতি ও চেতনার মূলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ৫-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১-১০ | PDF Download
ভাইয়েরা আমার,
‘বিজয়’ শব্দটির সাথে যে স্বপ্ন একদা এদেশবাসী দেখেছিলেন আজও তা বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয়নি। আপনারা লক্ষ করেছের, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, পরমত অসহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক উগ্র উন্মাদনা, সামাজিক অবক্ষয়, সন্ত্রাস ও সংঘাতের সশস্ত্র বিক্ষোপ আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন উপসর্গরূপে দেখা দিয়েছে। এসব অপশক্তি দেশে এনেছে অশান্তি, বিশৃক্সক্ষলা, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, নিরাপত্তাহীন, সন্ত্রাস।
স্বভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এ স্বাধীন দেশের জন্য স্বপ্ন দেখেছিলাম? এই কি আমাদের ইতিহাস ও সভ্যতার মূলমন্ত্র? এভাবে কি আমরা শক্তিধর মহান জাতির অস্তিত্বকে তুলে ধরতে পারব? এভাবে কী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা হবে?
স্বধীনতা অর্জনের প্রায় চার যুগ পর এখন অসংখ্য লোকঅশিক্ষা ও দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে। এক কথায় আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি। আমরা বিজয় অর্জন করেছি। স্বাধীন দেশ পেয়েছি, কিন্তু তার তাৎপর্যের সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ঘটাতে পরেনি বলে এ দেশের জনগনের এখনও মুক্তি মেলেনি।
তাই আসুন, আমরা আমাদের সকল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মধ্য দিয়ে দেশকে গড়ে তুলি। কেননা আমরা সমাজের কাছে আমরা প্রতিটি মানুষ দায়বদ্ধ। ঋণ পরিশোধের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে- আমাদের অন্নহীনকে অন্ন এবং নিরক্ষরকে জ্ঞানের আলো দিয়ে এ স্বাধীনতা কে সার্থক করে তুলতে হবে। তাই সব রকম বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি সংঘাত দূর করে, সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ গড়ার কাজেব্রতী হই।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।