HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অভিজ্ঞতা বর্ণনা ১১-২০ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব অভিজ্ঞতা বর্ণনা গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
উচ্চ মাধ্যমিক ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
১১. একটি দুঃখের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : স্কুলে ডানপিটে বাঁদর হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলাম। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে নিয়ে বিব্রত থাকতো। ভয় তেমন কাউকে পেতাম না। শুধু বসির স্যারকে ছাড়া, তিনি আমাদের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। তার রাশভারী এবং গম্ভীর কণ্ঠই মনে হয় ভয়ের প্রধান কারণ ছিল।
অথচ তিনি কোন ছাত্রকে শাস্তি হিসেবে বেত মারেননি কোনদিন। শুধু সবার মধ্যে দাঁড় করিয়ে কয়েকটা নীতি কথা শুনিয়ে বলতেন, বিকালে আমার সঙ্গে দেখা করিস। অর্থাৎ ইংরেজি গ্রামারে একটি অংশ বা রচনা সেদিন মুখস্ত করিয়ে হোক আর বুঝিয়েই হোক তবে ছাড়তেন, যা আমার জন্য ছিলো সবচেয়ে ভয়ের।
এসব নব্বইয়ের দশকের কথা। বাবার চাকরির জন্য তারপর থেকে এলাকা ছেড়ে বাইরে বের হওয়া। প্রায় দশ বারো বছর পর বেড়াতে গেলাম নিজের গ্রামে। স্টেশনে গাড়ি থেকে নেমে বেবিট্যাক্সিতে উঠতে যাব, হঠাৎ পেছনদিকে একটা লোক বলে উঠলো, ‘বাবু ৫টা টাকা দিবেন চাকরি পেলে দিয়ে দেব!’ পিছনে তাকিয়ে দেখি বেশ বলিষ্ঠ চেহারার একটা অপ্রকৃতস্থ লোক, মুখে অপরিচ্ছন্ন দাড়ি, লম্বা চুল, ময়লা জামা-প্যান্ট পরা। আমি দশ টাকার একটা নোট নিয়ে চলা শুরু করলে তিনি বলে উঠলেন, “এক্সকিউজ মি, ৫ টাকা নিয়ে যান।
” এবার তাকে চিনতে পারলাম, আমাদের বশির স্যার। ৫ টাকা আমাকে ফেরত নিতেই হলো এবং শুনলাম, এর কম বা বেশি তিনি না। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-পুত্র মারা গেলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং চাকরি হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরে ওই কথাটি বলে ভিক্ষা করেন- “পাঁচ টাকা হবে? চাকরি পেলে দিয়ে দেব!”
১২. ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে তোমার সঞ্চিত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।
উত্তর : ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। ছিনতায়ের গল্প আমি অনেক শুনেছি। কিন্তু নিজে কখনো ছিনতাইকারীর কবলে পড়িনি। নিজে কখনো কারো জিনিস ছিনতাই হতে দেখিনি। তাদের চেহারা আকৃতি কেমন তাও জানতাম না।
এবার প্রথম ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে অভিজ্ঞতা হল।
রিক্সায় যাচ্ছিলাম আদাবর। বড় আপা ওখানে নতুন বাসা ভাড়া নিয়েছে। আমাকে বিশেষভাবে যেতে বলেছে, তাই যাচ্ছি। শ্যামলী দিয়ে আদাবরের দিকে রিকশা ঢুকেছে। কিছুদূর যেতেই দুজনে এগিয়ে সে রিক্সার গতিরোধ করল।
রিক্সাওয়ালা প্রতিবাদ করতেই একজন বড় একটা ধারালো ছুরি বের করে রাগত স্বরে বলল- “শব্দ করলে একদম পেটের মধ্যে হান্দাইয়া দিমু।” আর একজন আমার রিক্সায় কাছে এসে এমন ভাবে কথা বলতে শুরু করল যে, মনে হল আমার সাথে তার বহুদিনের পরিচয়। সে আমাকে বলল, ‘ভাইয়া, তুমি ভালো আছো?’ এদিকে কোথায় যাবে? আমি ধরে জবাব দিচ্ছি তার প্রশ্নের।
আবার প্রশ্ন-তুমি কি কলেজ পাশ করে গেছ? রেজাল্ট কেমন হলো? আমি ‘না’ সূচক শব্দ করলাম। এবারে আমার আপত্তি সত্তে¡ও আমার পাশে বসলো। বল্টুর হাতে কি আছে তা দেখেছো তো? এবার এখানে হাতটা দাও (আমার হাত ধরে তার কোমরের রাখা পিস্তলের বাঁটে ছোঁয়াল) কিছু বুঝলে? হ্যাঁ, মনে হলো পিস্তল। এখন ল²ী ছেলের মত পকেটের যা আছে দিয়ে দাও, তাড়াতাড়ি করো, আমাদের হাতে একদম সময় নেই। একজন রিকশাওয়ালা কে রিক্সাটা সাইড করতে বলল।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। কান্না পাচ্ছে। আমাকে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে কষে একটা চড় দিলো। তারপর পকেটে হাত দিয়ে ৩০০ টাকা আর মোবাইলটা নিয়ে নিল। আমি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম। ওরা আমার মুখ চেপে ধরে রিকশা উঠিয়ে দিলো। বলল চিৎকার করলে একদম ভুড়ি বের করে দেব। তারপর গলির মধ্যে ঢুকে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেল।
আমি কাঁদছিলাম। রিক্সাওয়ালা দরদী গলায় বলল- ‘কাইন্দেন না, কোন দিকে যাবেন কন, আমি পৌঁছাইয়া দিমু।’ আপার নির্দেশমতো গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রিকশা ভাড়া দিলাম। তারপর আপার কাছে সব খুলে বললাম। আপা ভয় পেয়ে কাঁদতে লাগল। আমরা দুজনেই কিছুক্ষণ কাঁদলাম।
১৩. অসুস্থ বন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : হাসিখুশি প্রাণবন্ত কেউ যদি হঠাৎ করে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। কেননা তা অভাবনীয় কষ্টদায়ক হয়। এমন ঐ আকস্মিক কষ্টের বুক জুড়ে আলোড়ন তুলেছে আমার প্রিয় বন্ধু অসুস্থতার কথা শুনে। আর তাকে দেখতে গিয়ে যে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা যেমন বেদনাদায়ক তেমন মর্মান্তিক।
পরি কি মরি করে আমরা তিন বন্ধু একটা সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক লাগলো। হাসপাতালে ঢুকেই শুনলাম আইসিইউ থেকে অর্ণবকে কেবিনে আনা হয়েছে। ডাক্তার নার্স ছাড়া অন্য কেউ কেবিনে ঢুকতে পারছে না। শুনে একইসাথে অবাক ও হতাশ হলাম। ভিজিটররা সবাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। এমনকি তার বাবা মাও কেবিনের দরজার পাশে চেয়ারে বসে আছেন। কেউ কেউ বলাবলি করছেন, তাহলে কেবিনে আনা হলো কেন? আইসিওতে রাখলেই তো হতো।
অবশ্য এ বিষয়টা ডাক্তাররাই ভালো জানেন। কিন্তু তারা কেউ মুখ খুলছে না। লোকজনের পারস্পরিক আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, অর্ণব বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর উপর ভর দিতে পারছিল না। প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছিল। অর্থাৎ দাঁড়ানো বা হাঁটাচলা করা প্রায় বন্ধ ছিল। দুজনে উঁচু করে ধরে তাকে টয়লেটে বসাতে হতো। হাত দিয়ে সব কাজই করতে পারত। কিন্তু ইদানিং হাতের আঙ্গুলগুলোতেও ব্যথা হচ্ছিল।
হাত দিয়ে তুলে খেতে, এমন কি লিখতেও কষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসা বেশ কিছুটা সেড়ে উঠছিল। ধীরে ধীরে হাঁটতে পারত, ব্যথাও কমে গিয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ দাঁড়াতে গিয়ে ও পরে যায়। তারপরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এসব শুনে হৈচৈ করা অর্নবের জন্য আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল।
বয়স্কা একজন ডাক্তারের কেবিনের ঢোকার সময় একটু দাঁড়ালেন। আমরা দুজন এগিয়ে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে ওকে দেখলাম। চেনা যায় না। শুকনো পান্ডুর মুখ, চুল উঠে গেছে অনেক, চোখ দুটো কোঠরে ঢোকা, শরীরে শুধু হাড়গুলিই আছে। এই অর্ণবকে আগের অর্ণবের সাথে মিলাতে গিয়ে দুজনেই কেঁদে উঠলাম। ডাক্তার ইশারায় বারণ করেছেন। অর্নবের চোখ দুটো একটু খুলে গেল। নিস্পৃহ সে দৃষ্টি। মনে হয় চিনতে পারল না। আমরা নাম বললাম।
অর্নবের ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক হল, অস্পষ্ট আওয়াজ হলো, কিছু বোঝা গেল না কি বলতে চাইলো ও। আমরা ডুকরে ডুকরে কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, ও যেন বেঁচে ওঠে, সুস্থ হয়ে ওঠে।
১৪. পূর্ণিমা রাতে মেঘনা নদীতে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : আমরা কজন বন্ধু মেঘনা নদীতে নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করলাম। বেশ বড় নৌকা। মাঝখানে নৌকার উপর অর্ধবৃত্তাকার এর ছাদ। ভেতরে পাটি বিছানো। পেছনের দিকে রান্নার ব্যবস্থা। দুজন মাঝি। একজন হাল ধরে থাকবেন, অন্য জন তাকে সহযোগিতা করবেন।
রান্না করার জন্য যা কিছু দরকার সবকিছু আনা হয়েছে। আমরা নিজেরাই রান্না করবো। নৌকায় যন্ত্র আছে, কিন্তু তা বন্ধ রাখা হয়েছে আমাদের অনুরোধে। পাল আছে আর পাল খাটানোর ব্যবস্থাও আছে। উজান পাড়ি দেওয়ার সময় আমরা সবাই বৈঠা ধরবো। আর ভাটির সময় পাল খাটানো হবে।
আমরা সবাই নৌকায় বসেছি। বড় একটা লাল গোলাপ আর বৃত্তের মত চাঁদ উঠল, তারপর চারদিকে ছড়িয়ে দিল রুপালি জ্যোৎস্না। মেঘমুক্ত নীল আকাশ। মাঝে মাঝে সাদা মেঘের ভেলা। মেঘনায় ছোট ছোট ঢেউ উঠছে নামছে। সবচেয়ে পানির উপর জ্যোৎস্নার কি অপূর্ব লুকোচুরি খেলা! চিকচিক করছে পানি।
মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল। কিছুদুর যাওয়ার পরই স্রোত আর ঢেউ একটু বেড়ে গেল। মাঝি বললেন, ভয় পাবেন না জোয়ার এসেছে। বৈঠা ধরতে হবে না। সহযোগী ছেলেটার সাথে আমাদের জুডো বৈঠা বাইছে। ওর কন্ঠে ভাটিয়ালি গান-
‘‘ও নদীর কূল নাই… কিনারা নাই রে…।’’
আমি তাকিয়ে আছি দূরের দিকে। আবছা কালো গ্রাম দেখা যাচ্ছে। যতদূর দৃষ্টি যায় ঢেউয়ের পর কেবল জ্যোৎস্নার চিকচিক চুম্বন। ছোট ছোট নৌকা দুলছে, ভেতরের হারিকেনের আলোও দুলছে। মাঝে মাঝে লঞ্চে উঠে এসে লাগছে আমাদের নৌকা। জুডোর সাথে আমরাও মাঝে মাঝে গান ধরছি। এরমধ্যেই জ্যোৎস্না রাতের গল্প শুরু করলো সাগর। এই শুরু আছে, শেষ নেই। মজার জায়গাগুলোতে আমরা হেসে উঠছি। মাঝি সতর্ক করে দিলেন, নৌকা এখন মাঝ নদীতে। রান্না শুরু করেন। ছাদের উপর থেকে নেমে আমি আর মান্না রান্না শুরু করলাম।
প্রথমে ইলিশ মাছ ভাজবো, তারপর আলু বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল রান্না করবো। সবশেষে ভাত। বিপত্তি বাধল স্টোভ ধরাতে গিয়ে। আমি কিছুতেই স্টোভ ধরাতে পারছি না। মাঝি এসে দেখলেন তেল নেই। মাটির চুলা আর লাকড়ি বের করে চুলা ধরিয়ে দিলেন। মাছের পট খুলে দেখা গেল, মাছের পিসগুলো না ভেজে দিয়েছেন। কড়া ভাজা মাছ গুলো রেখে বাকিগুলো রান্না শুরু করলাম।
তরকারি কাটা আছে, মসলা গুলো একসাথে মেশানো আছে। সুতরাং রান্না করতে কোন কষ্ট নেই। মাঝে মাঝে শুধু চোখে ধোয়া লাগছে। ওরা চারজন বৈঠা ধরেছে আর গলা ছেড়ে গান গাইছে। রান্না প্রায় শেষ, মান্না ভাত বসিয়েছে।
আমি তাকিয়ে আছি নদীর দিকে। সাদা ফকফকে জোসনা দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রথম সকাল বেলা। অপূর্ব দৃশ্য! আমার হৃদয় জুড়ে অপূর্ব অনুভূতি। হঠাৎই পোড়া গন্ধ নাকে এলো। নিশ্চয়ই ভাত পুড়ছে। দ্রæত এসে চুলার আগুন নিভিয়ে ভাত নামালাম। তারপর মান্নাকে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো সে নৌকার দড়ি কোমরের সাথে বেঁধে সাঁতার কাটছে। আমার কাছে মনে হল সে পানিতে নয়, জ্যোৎস্নায় সাঁতরাচ্ছে।
বুড়ো মাঝি তাগিদ দিলেন, “অহন খাওয়া-দাওয়া সারেন আবার ফিরতে অইবো।” খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই একটু গড়িয়ে নিলাম। চরের বালির উপর চাঁদের আলো পড়ে মনে হচ্ছে তারার মেলা বসেছে। মনে পড়ে গেল-
‘‘এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো
সে মরণ স্বর্গ সমান।’’
জ্যোৎস্নার ঝর্ণাধারায় স্নাত হয়ে পূত পবিত্র হয়ে উঠেছে সারা প্রকৃতি, চারপাশের পরিবেশ। পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার এমন অভূতপূর্ব রূপ আমি কখনো দেখিনি। আজ মনে হলো এমন ভরা পূর্ণিমার রাতে যেন এমন জোৎস্না স্নাত হয়ে পূত-পবিত্র হতে পারি। জ্যোৎস্নার মতোই যেন সমান ভাবে ভালোবাসতে পারি সবাইকে।
১৫. তোমার হোস্টেল জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : হোস্টেল জীবন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। মনে মনে বড় ভয় ছিল, নিরাপত্তার অভাবের কথাও মনে হতো। কিন্তু হোস্টেলে না এসেও আমার কোনো উপায় ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। আশেপাশে কোন কলেজ নেই। বাধ্য হয়েই আমাকে থানা বা জেলা সদরের কলেজে ভর্তি হতে হবে। তাছাড়া ভালো একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে আমার। কাছে দূরে যেতে হবে।
বাবা খুব আপত্তি করলেও বুঝিয়ে বলার পর রাজি হয়েছেন। আপাতত আর কোন বাধা নেই। তবে ভর্তি হলেও থাকবো কোথায়? শহরে তো আমাদের তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। হোস্টেলেই একমাত্র ভরসা। মা-বাবা আমাকে ছেড়ে কখনো থাকেননি। তাছাড়া আমি তাদের একমাত্র সন্তান। শুনেছি হোস্টেলে মাঝে মাঝেই মারামারি হয়। মা-বাবার ভয় সেখানেই। কবির ভাষায়-
‘‘তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’’
আমি থানা ও জেলা সদরে সরকারি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করলাম। কিন্তু কোথাও হলো না। অগত্যা করোটিয়া সা’দত কলেজের সুযোগ পেয়ে ভর্তি হলাম। অনেক দূরে হলেও এটি বহু পুরনো একটি স্বনামধন্য কলেজ। হোস্টেল সিটের জন্য আবেদন করলাম। সিটও পেয়ে গেলাম। কলেজটা ঘুরে ফিরে দেখলাম। হোস্টেল ঘুরে দেখলাম, সিটও খুঁজে নিলাম। আমার রুমমেট এর সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। সে আমাকে সাথে নিয়ে বড় ভাইয়াদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারা আমাকে সাহস আর উৎসাহ দিলেন। চারদিকে গাছপালা, সামনে ফুলের বাগান।
পাশে বড় একটি পুকুর, দু’পাশের শান বাঁধানো ঘাট। আর পুকুরের চারদিকে নারকেল ও অন্যান্য গাছ। খুব ভালো লাগলো। এক সপ্তাহ পরে এসে সিটে উঠলাম। শুরু হলো হোস্টেল জীবন। রাত সাড়ে এগারোটায় ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে এক গøাস পানি খাই।
রুমমেট ভাইয়ের সাথে হালকা ব্যায়াম করি। তারপর গোসল সেরে নাস্তা করি। ক্লাসে চলে যাই। দুপুরে ফিরে খাবার খাই। প্রতিবেলায় থাকে শাক সবজি, মাছ মাংস ডাল। রান্না মন্দ নয়। বিকেলে ক্লাস থাকলে করি অথবা লাইব্রেরী ওয়ার্ক করি। ফিরে এসে নামাজ ছেড়ে পড়তে বসি। কখনো কখনো পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে টিভি রুমে যাই।
এভাবেই অনেকের সাথে আলাপ হয়ে গেল। বন্ধুত্ব হল কয়েকজনের সাথে। তারা আমাকে নানা বিষয়ে সাহায্য করে। বেশ চমৎকার পরিবেশ। মাকে লিখে জানালাম সব। মা খুশি ও নিশ্চিন্ত হলেন। মাঝে মাঝেই আলোচনা-বিতর্ক, গানের প্রতিযোগিতা হয়। আমিও অংশ নিই। হোস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যারও খুব আন্তরিক। সব মিলিয়ে হোস্টেল জীবন খুবই সহায়ক ও সুন্দর।
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ৫-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১-১০ | PDF Download
১৬. সিলেটের চা বাগান ভ্রমণের অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : সিলেটের চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বহুদিন শুনেছি। কিন্তু দেখতে যাওয়া হয়নি। এবারে সেই সুযোগটা এসেছে। ভাগ্নের বিয়ে। নিজে এসে কার্ড দিয়ে বারবার করে বলে গেছে উপস্থিত থাকতে। ১০ সিটের একটা মাইক্রো ভাড়া করে রওনা হলাম। আমরা চারজন, খালাতো ভাই চারজন, ভাগ্নের বন্ধু দুজন। বন্ধু দুজনের বাড়িমৌলভীবাজার। দুজন গাইড পেয়ে আমাদের সুবিধা হয়ে গেল।
বাস ধীরগতিতে চালাতে বলেছি যাতে দুপাশে দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানে কাঁচপুর ব্রিজের উপর যানজট। নিচে শীতলক্ষ্যার দুরবস্থা দেখে বুড়িগঙ্গার কথা মনে পড়লো। বাস ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।
দু’পাশের সবুজ ফসলের মাঠ ছিল, এখন আর নেই। থাকলে আমাকে একটু পরেই পথ দু দিকে বেঁকে গেল। বাসের গতি এখন বেড়েছে। সবুজ ধান ক্ষেতের ওপারে সবুজ গ্রাম। দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবোনা। এরই মধ্যে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হয়ে গেছি। দু’পাশে হবিগঞ্জে প্রায়ই ন্যাড়া পাহাড়ে চোখে পড়ছে। মৌলভীবাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হল সবুজ গাছপালা ভরা টিলা এখনো আছে। সিলেটের গোপাল ভাগে এসে বাস থামল। তিনটার মতো বাজে। কাছাকাছি চা বাগান থাকলে ঘুরে আসা যায়। এখানের একজন ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে।
সে জানালো, সকালে গেলে চা পাতা তোলাও দেখতে পারবেন। এখন খাওয়া-দাওয়া সেরে রেস্ট নীন। কিন্তু আমাদেরই তো তাড়া। ওকে নিয়ে গাড়ি করে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বড় একটা চা বাগানে এলাম। ছোট ছোট তিনটা টিলা খাদ ঘিরে এ বাগান। গাছগুলো একসাথে ছাটে ছাটা-সমান্তরাল। উপর থেকে ধীরে ধীরে নীচে নেমে এসেছে, যেন সবুজের সিঁড়ি। বেশ কয়েকটি অংশ এর। প্রতিটি পাশ দিয়ে একটি করে চলার পথ। নিজে থেকে দেখতে দেখতে আর ছবি তুলতে তুলতে উপরে উঠছি। প্রতিটি অংশে কয়েকটি করে গাছ যেন কড়া পাহারায় ব্যস্ত।
বাচ্চারা চা-গাছ ধরতে যাচ্ছিল, ওখানকার লোকেরা বাধা দিল। গাছ ছোঁয়া যাবেনা, পাতা ছেঁড়া যাবে না। ভেতরের ছবিও তোলা যাবে না। তবু কিছু ছবি তোলা হলো। খুব পরিচ্ছন্ন, নিরিবিলি শান্ত সবুজের মায়াভরা পরিবেশ। চোখ জুড়িয়ে গেল, মন ভরে গেল। একজন বলে গেলেন ৫ মিনিটের মধ্যে বাগান থেকে বের হতে হবে। কিন্তু বের হতে ইচ্ছে করছে না। তবুও বের হতে হবে, তবু যেতে হবে, এই সবুজ মায়া ছেড়ে অন্য কোথাও অন্য কোন গন্তব্যে।
আমরা হাঁটছি না, কারা যেন আমাদেরকে টেনে নামিয়ে দিচ্ছে। চা বাগানের উপর শেষ বিকেলের রঙিন আভা এসে পড়েছে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! ভুলে যাওয়ার নয়। তাই আবার আসবো, আবার আসতে হবে অপার সবুজের সান্নিধ্য পেতে, হৃদয়কে সতেজ ও স্বতস্ফূর্ত করতে।
১৭. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বেড়ানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : আমাদের বাস এগিয়ে চলছে গাজীপুরের দিকে। ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলিয়ে আমরা ৫০ জন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’ দেখতে যাচ্ছি। দুদিকে শালবন, মাঝে মাঝে বাতিঘর, সবুজ গ্রাম। বাস বাঘের বাজার পৌঁছে বামদিকে টার্ন নিল, আরও তিন কিলোমিটার যেতে হবে। কাছাকাছি পৌঁছতেই পার্কের ফটো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
৪০০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ভিতরে ঢুকেই চোখ জুড়িয়ে গেল সারি সারি নানা বাহারি রঙের ফুলের গাছ দেখে। সামনে এগিয়ে যাওয়া কয়েকজন ভয়ে দৌড় দিয়েছে বাঘ-সিংহ দেখে। স্যারদের একজন ওদের সামলে নিলেন।
বললেন এরপর দেখবে বাজপাখি, ক্যাঙ্গারু, ডায়নাসোর। ওগুলো জীবন্ত নয়, কাজেই ভয় নেই। পার্কের প্রথমে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। এখানে দুই হাজার প্রজাতির মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণীর দেহাবশেষ স্পিসিমেন ও স্টাফিং করে রাখা হয়েছে। আমরা মনোযোগ দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং নতুন অনেক কিছু জানলাম। বন্য পরিবেশে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ দেখতে আমরা গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্কে ঢুকলাম। ধীরে ধীরে গাড়ি চলছে।
দু দিক থেকে এগিয়ে এলো বাঘ আর সিংহ। থাবা মারলো। আমরা প্রথমে ভয় পেলেও পরে মানিয়ে নিয়েছি। একটা চিতা বাঘ গাছে উঠছে। বাঁক ঘুরতে করতে দেখা গেলে হরিনপালের সঙ্গে। একটু পরেই বন্য মোষ তেড়ে এলো আমাদের দিকে, আবার কি মনে করে অন্যদিকে চলে গেল। একদিন জলাধারে দেখা গেল জলহস্তী ডুবে আছে, দুটো মাথা তুলে আমাদের দেখল। গয়াল ও সাম্বার দেখলাম, কিন্তু নীলগাই দেখতে পেলাম না। সাফারি পার্কে দেখা গেল আফ্রিকান জেব্রা আর জিরাফ। জিরাফ গাছের ডাল থেকে পাতা খাচ্ছে। আরো ছোটখাট প্রানী চোখে পড়ল বেশকিছু।
ঘন গাছ আর ঝোপের কারণে বেশি কিছু দেখা গেল না। আমরা আবার ঢুকলাম পাখিশালায়। ছোট-বড় নানা আকারের, নানা রঙের পাখি আর তাদের কিচিরমিচির শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। নাম দেখে দেখে তাদের কতগুলোকে চিনলাম এবং ছেড়ে এলাম বায়োডাইভারসিটি পার্কে। এখানে রয়েছে নাম জানা অজানা বিচিত্র অসংখ্য গাছ। নাম দেখে দেখে কিছু গাছ চিনলাম। বাটারফ্লাই পার্ক এর সময় কাটালাম বেশ কিছুক্ষন।
স্বপ্নে অঞ্জন মাখিয়ে দিল নানা রঙের প্রজাপতি। ভয়ে কেউ স্নেক পার্কে যেতে রাজি হলাম না। ততক্ষণে বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে। বাসে উঠতে তীব্র ক্ষুধা অনুভব করলাম। বাঘের বাজারে এসে হোটেলে কিছু খেয়ে নিলাম। তারপর সাফারি পার্কের অভিজ্ঞতার ডালি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করলাম।
১৮. রায়ের বাজার বধ্যভূমি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : ‘বধ্যভূমি’ শব্দটি শুনতেই আমাদের অনুভূতিতে উঠে আসে অন্যায় জবরদস্তি নির্যাতন হিংস্রতা হত্যা নির্মমতার অমানবিক কিছু শব্দ। স্বাধীনতা-উত্তর আমাদের দেশে অসংখ্য বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষ্য বহন করে। রায়ের বাজার বধ্যভূমি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অন্য পেশাজীবীদের এখানে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল।
এখানকার মাটিতে মিশে আছে তাদের রক্ত, তাদের আর্তচিৎকার, তাদের অশ্রæ, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী চেতনা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শনস্বরূপ এখানে নির্মিত হয়েছে ‘বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ’। বধ্যভূমির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই গভীর আবেগে কথাগুলো আমার উদ্দেশ্যে বললেন আকাশ স্যার। সাভার কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ দেখতে।
প্রধান প্রবেশ পথ পেরিয়েই চত্বরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি বট গাছ দেখতে পেলাম। ওদিকের অফিস থেকে একজন বেরিয়ে এসে আমাদের জানালেন এমন কাজটি শারীরিক শিক্ষা কলেজ প্রাঙ্গণসত আদি বটগাছটির প্রতীক।
আদি বটগাছের নিচে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। চত্বরে লাগানো অন্যান্য গাছের পাতা ডিসেম্বরে ঝরে যায়। গাছগুলোর পত্রহীন অবস্থান শোকনুভূতিকে আরো আবেগময় করে তোলার প্রতীক। স্মৃতিসৌধের মুল স্থাপনার দিকে আমরা এগিয়ে গেলাম।
গাইড আমাদেরকে জানালেন, স্মৃতিসৌধের প্রধান অংশটি ১৭.৬৮ মিটার উঁচু এবং ১১৫.৮২ মিটার দীর্ঘ। এটি ইটের তৈরি একটি বাঁকানো দেয়াল আদি ইটখোলার প্রতীক। এই ইটখোলাতেই বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহগুলো পড়েছিল। আমরা পুরো চত্বরসহ বাঁকানো দেয়ালটি ভালো করে দেখে নিলাম।
দেয়ালের দুদিকে ভাঙ্গা। এ ভাঙ্গা দেয়াল ঘটনার দুঃখ-সুখের গভীরতার প্রতীক। দেয়ালের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে একটি বড় খোলা জানালা। এই জানালা দিয়ে পেছনের খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। বাঁকা দেয়ালের সামনে একটি স্থির জলাধার। এর ভেতর থেকে গ্রানাইট পাথরের একটি স্তম্ভ উঠে এসেছে।
এটি গভীর শোকের প্রতীক। এই স্তম্ভের দিকে তাকিয়ে আমাদের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। মনে হল এ হাহাকার যেন ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ড. ফজলে রাব্বী সহ অনেক বুদ্ধিজীবীর। প্রচন্ড শোক ও বেদনা নিয়ে আমরা রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ থেকে বেরিয়ে এলাম।
১৯. কালবৈশাখীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : আমি তখন বেশ ছোট। ডানপিটে ছিলাম বলে দুরন্তপনায় জুড়ি ছিল না। বাবা কাজের প্রয়োজনে বছরের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতেন। এজন্য আমার ওপর শাসনের মাথাটা একটু কমই ছিল। কাদা পানিতে মাছ ধরা, গাছে চড়া, বিভিন্ন ফল চুরি করে খাওয়া, নদীতে দীর্ঘসময় ধরে সাঁতার কাটা- এসব ছিল নিত্যদিনের কাজ। মানসপটে এখনো জল জল করে এসব অভিজ্ঞতা।
এই দুরন্তপনার একটা ঘটনা আমার জীবনে একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়, যা এখনো আমাকে শিহরিত করে। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। চারদিকে তখন আম কুড়ানোর ধুম লেগে গেছে।
আমিও অভ্যাসমতো সাথীদের সঙ্গে গ্রামের আমতলা চষে বেড়াচ্ছি আর ছড়া কেটে কালবৈশাখীর উপস্থিতি কামনা করছি। কারণ তাতে আম কুড়াতে সুবিধা হবে। অবশেষে তার (ঝড়ের) উপস্থিতি। উত্তর-পশ্চিমের আকাশ কালো করে হাজির হলো কালবৈশাখী। তার তান্ডব লীলায় আমগুলো পালকের মতো ঝরে পড়ছিল। কিন্তু হঠাৎই আমসহ গাছের মোটা একটা ডাল ভেঙে পড়ল আমার উপর। আমি চারদিকে তখন অন্ধকার দেখছি।
তারপরে আর যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি আমার পায়ে ব্যান্ডেজ। সেবার আমাকে তিন মাসের মত বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। এখন আম গাছের দিকে তাকালেই কেমন যেন হাসি পায়।
২০. লালন আখড়া ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : আমরা পাঁচ বন্ধু লালনগীতি পছন্দ করি। রেডিও বা টেলিভিশনে লালন শাহের গান শুনি, নিজেরা কলেজের বা এলাকার অনুষ্ঠানে গায় এবং তাঁর গানের কথা নিয়ে আলোচনা করি। লালন আখড়ায় যাওয়ার সাধ আমার অনেক দিনের। আব্বার এক বন্ধু লালন একাডেমির কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তারও আমন্ত্রণেই আমরা পৌঁছে গেলাম ছেঁউড়িয়ায়-লালন উৎসবে। বাস থেকে নামতেই চাচা আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে তার বাসায় নিয়ে গেলেন।
আমরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে গাইড এর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। নানা বয়সী বাউল সাধক পথের দু’পাশে আস্তানা গেড়েছে। আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন এবং এখানে আখড়া তৈরি করেন। এই আখড়াই তিনি শিশুদের শিক্ষা দিতেন।
১৮৯০ সালের ১৭ ই অক্টোবর ১১৬ বছর বয়সে মৃত্যুর পর তার সমাধিস্থলে মিলনক্ষেত্র (আখড়া) গড়ে ওঠে। গেট দিয়ে ঢুকে দুপাশের সবুজ ঘাসে ছাওয়া সারি সারি গাছের বাগান। বাম পাশে বিশাল গম্বুজে তার সমাধি ঘিরে সারি সারি শিষ্যের কবর। বেদীতে ফুল আর আগরবাতি সুগন্ধে একটি বিশেষ আধ্যাত্বিক পরিবেশ বজায় রয়েছে। মাজারের পাশে লালন মিউজিয়াম একাডেমি। নিচের তলা উন্মুক্ত।
লালন অনুসারীরা সেখানে একের পর এক লালন গীতিতে মুগ্ধ করে রেখেছেন স্রোতমন্ডলীকে। কিছুক্ষণ এক কিশোরীর সুললিত কন্ঠে গান শুনে মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। এখানে রয়েছে লালনের ঘরের একটি দরজা, তার বসার জল চৌকি, ভক্তদের ঘটি-বাটি ও বেশ কিছু দুর্লভ ছবি। ছবিগুলো দেখে লালনের পরিচিতি ও সমৃদ্ধির সম্পর্কে ধারণা পেলাম।
গাইডের কাছে জানলাম, তার মৃত্যুর কদিন পর মীর মশারফ হোসেন সম্পাদিত পাক্ষিক পত্রিকা ‘হিতকারী’ তে লালনকে ‘মহাত্মা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মাজার থেকে বেরিয়ে দেখলাম দু’পাশে বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রের ও দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। দোকান পেরিয়ে দেয়াল ঘেরা বিশাল মাঠ, মাঠের ৩ দিক ঘিরে বাউলদের আধ্যাত্মিক গান চলছে। গেট সোজা লালনের আবক্ষ ভাস্কর্য। বাম দিকে উঁচু সুসজ্জিত স্থায়ী মঞ্চ।
এখানে নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করা হবে লালনের মৃত্যুবার্ষিকী। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কালিগঙ্গা নদী। একাডেমিক ভবনের অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। লালন গবেষকদের বক্তব্যে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। তিন দিনব্যাপী বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হলনা আমাদের। এক রাত থেকে পরদিন লালনের উপর কিছু বই কিনে বাসে উঠে পড়লাম। চাচা আমাদের বিদায় জানালেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।