HSC | সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | চরিত্র আলোচনা ২| PDF : বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্যবাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
চরিত্র আলোচনা ২
মোহনলাল
ভূমিকা : কাশ্মীরি মোহনলাল সাহসী যোদ্ধা ও বিশ্বস্ততার মূর্ত প্রতীক। নিজের জীবন দিয়ে মোহনলাল দেশের কল্যাণ চেয়েছিলেন, বিদেশি ক্ষমতালোভী আর স্বদেশি দেশদ্রোহীদের গতিরোধ করতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিয়ে ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।
সিপাহসালার আর গণ্যমান্য সভাসদেরা যখন ঘসেটি বেগমকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের ছুরি শাণাচ্ছেন তখন এ বিশ্বাসী সেনাপতির অধীনে ফৌজ পাঠিয়ে নবাব শওকতজঙ্গের বিদ্রোহ দমন করেন। নবাবের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঘসেটি বেগমকে তার মতিঝিলের প্রাসাদ থেকে নিয়ে এসে নবাবের নিজের প্রাসাদে রাখার দায়িত্বও পেয়েছিলেন মোহনলাল।
নবাব যখন মিরজাফরের মত প্রমুখ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রকাশ্য দরবারে শপথ করান তখনও বিশ্বাসী মোহনলাল ছিলেন নবাবের পাশে। একমাত্র মিরমর্দান ছাড়া ভাগ্যবিড়ম্বিত নবাবের এতোবড়ো বিশ্বস্ত অনুচর মোহনলাল ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
নবাবপ্রীতি : বাংলার স্বাধীনতা, নবাবের নিরাপত্তার চিন্তায় মোহনলালের চোখে ঘুম ছিল না। মিরনের আবাসে ষড়য়ন্ত্রকারীরা গোপন সভায় সম্মিলিত হয়েছে- গুপ্তচরের মুখে এ সংবাদ পেয়ে মোহনলাল সেখানে হানা দিয়েছিলেন।
দেশপ্রীতি : পলাশির যুদ্ধের পূর্বরাত্রে নবাব যখন নিজের শিবিরে বিশ্বাসঘাতক সেনাপতিদের কথা ভেবে ক্ষণে ক্ষণে বিভ্রান্ত ও ব্যাকুল হয়ে পড়ছিলেন, তখনো সবশেষ খবর জানতে এসেছেন মোহনলাল। তিনি নবাবকে আশ্বাস দিয়েছেন, নবাবের শক্তি ইংরেজদের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি।
ইংরেজের তিন হাজার সৈন্যের মোকাবেলায় নবাবের রয়েছে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য, ইংরেজদের দশটি কামানের তুলনায় নবাবের রয়েছে পঞ্চাশটিরও বেশি। মোহনলাল ছিলেন নবাবের দুর্দিনের বন্ধু, অন্ধকারের আলো। দেশহিতব্রতী এ বিশ্বস্ত সৈনিকের ছিল একটি নির্ভরযোগ্য গুপ্তচর বাহিনী।
তাদের মাধ্যমে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের সব সংবাদ রাখতেন। মিরজাফর আর ক্লাইভের মধ্যে যে সব গোপনীয় পত্র বিনিময় হতো তার বেশ কয়েকটি তার গুপ্তচরদের হাতে ধরা পড়ে। তিনি নিজেদের জয় সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন। পলাশিতে যুদ্ধের প্রহসন না হয়ে সত্যিকার যুদ্ধ হলে নবাবের জয় ছিল অবধারিত।
বিশ্বস্ত : তিনি নবাবকে শ্রদ্ধা করতেন, ভয়ও করতেন। যুদ্ধের পূর্বরাত্রে মিরজাফরের গুপ্তচর কমর বেগ ধরা পড়লে সে নবাবকে জানায় মোহনলালের হুকুমে তার ভাই উমর বেগ জমাদারকে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজ তাঁর প্রতি অসন্তোষের দৃষ্টিতে তাকান। তখন মোহনলাল নবাবকে কৈফিয়তের সুরে জানান, মিরজাফরের গুপ্তচর উমর বেগ জমাদার ক্লাইভের চিঠিসহ ধরা পড়ে। সে পালাবার চেষ্টা করলে প্রহরীদের তরবারির আঘাতে তার মৃত্যু হয়।
সাহসী যোদ্ধা : মোহনলাল ছিলেন দুর্দান্ত সাহসী যোদ্ধা। প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যেও পলাশির যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে ইংরেজ বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। ইংরেজ বাহিনী লক্ষবাগের দিকে হটে যেতে থাকে। বিশ্বাসঘাতক মিরজাফর বৃষ্টিতে নবাবের বারুদ ভিজে অকেজো হয়ে গেছে অজুহাতে যুদ্ধ বন্ধ করার হুকুম জারি করেন, কিন্তু দুঃসাহসী যোদ্ধা মোহনলাল সে হুকুম মানতে চান নি।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
সিপাহ্সালার, রায়দুর্লভ প্রমুখের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধের অবস্থা যখন মারাত্মক পরিণতির দিকে যাচ্ছিল, তখনো তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবেননি। তিনি নবাবকে শিবিরে গিয়ে জানিয়েছেন, যুদ্ধে তাঁদের পরাজয় হয়েছে। তখন আর আত্মভিমানের সময় নেই।
নবাব যেন এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট না করে মুর্শিদাবাদে গিয়ে রাজধানী রক্ষার চেষ্টা করেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনেও মোহনলাল নবাবের সাথে রাজধানীতে ফিরে যান নি। তিনি বলেছেন, পলাশিতে তাঁর যুদ্ধ তখনো শেষ হয় নি। তিনি ফরাসি বীর সাঁফ্রের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যান জীবনের শেষ যুদ্ধ লড়তে।
উপসংহার : সিরাজ অনেক ভরসা রাখতেন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলালের ওপর। পরাজিত হয়ে রাজধানীতে ফিরে তিনি জনগণকে জানিয়েছিলেন, তখনো মোহনলাল জীবিত আছেন। তিনি বন্দি হননি। তিনি শত্র“র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে জনগণকে পরিচালিত করবেন। এমন সময় বার্তাবাহক এসে জানায় সেনাপতি মোহনলাল বন্দি হয়েছেন। খবরটা নবাবের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। মোহনলালের স্মৃতি সিরাজের নামের সাথে অমর হয়ে আছে।
মিরমর্দান
ভূমিকা : ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অন্যতম ঐতিহাসিক চরিত্র মিরমর্দান। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণে সিরাজের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন মিরমর্দান। তিনিই দুর্গে প্রবেশ করে হলওয়েলকে জিজ্ঞেস করেন, তারা আত্মসমর্পণ করছে কিনা। তিনিই ইংরেজদেরকে হাত তুলে দাঁড়াতে হুকুম দেন। দুর্গ জয়ের পর সিরাজ তাঁর এ বিশ্বস্ত সেনাপতির ওপর দায়িত্ব দেন রাজবলভের পুত্র কৃষ্ণবলভকে ছেড়ে দেবার।
বিশ্বস্ত যোদ্ধা : যুদ্ধের পূর্বরাত্রে পলাশির নবাব শিবিরে নিজেদের সৈন্য বিন্যাস ও প্রস্তুতির নকশা নবাবকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। নবাব মিরমর্দানকে বলেছিলেন, কেমন যেন অঙ্কের হিসাবে শত্র“র সুবিধের পালা ভারি হয়ে উঠেছে। তিনি বিশ্বাসঘাতক সেনাপতিদের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন। দুঃসাহসী বীর মিরমর্দান বুক উঁচিয়ে নবাবকে বলেছিলেন, ইংরেজদের ঘায়েল করতে সেনাপতি মোহনলাল, সাঁফ্রে আর তাঁর বাহিনীই যথেষ্ট।
সিরাজ তাঁকে বলেছিলেন, মিরমর্দান হারতে থাকলে মিরজাফরদের বাহিনী দু’কদম এগিয়ে ক্লাইভের সাথে হাত মেলাবে বিনা বাধায়। মিরমর্দান বলেছিলেন, তাঁদের হারবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মিরমর্দান চিন্তিত নবাবকে বুকভরা ভরসা দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর চিন্তিত হবার কারণ নেই, তাঁদের প্রাণ থাকতে নবাবের কোনো ক্ষতি হবে না। নবাবকে চিন্তিত দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। কারণ আত্মশক্তিতে তিনি ছিলেন পরম বিশ্বাসী।
সাহসী : মিরমর্দান শত্র“পক্ষের গুপ্তচরদের ভালো করেই চিনতেন। যুদ্ধের পূর্বরাত্রে গুপ্তচর কমর বেগ জমাদার ধরা পড়লে তিনিই তাকে শনাক্ত করেন। যুদ্ধের সময় বৃষ্টিতে নবাবের বারুদ ভিজে অকেজো হয়ে গেলেও দুর্দান্ত সাহসী সেনাপতি মিরমর্দান কামানের অপেক্ষা না করে হাতাহাতি লড়বার জন্য দ্রুত এগিয়ে যান। শত্র“কে কামান ছুঁড়বার সময় না দিয়ে তিনি তলোয়ার নিয়েই সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
উপসংহার : শত্র“র গোলার আঘাতে মীরমর্দানের পতন সংবাদ শুনে নবাবের বুক ভেঙে গিয়েছিল। আচ্ছন্নভাবে তিনি শুধু প্রশ্ন করতে পেরেছিলেন মিরমর্দান শহিদ হয়েছেন কিনা। ফরাসি সাঁফ্রে বলেছেন, ‘ঞযব নৎধাবংঃ ংড়ষফরবৎ রং ফবধফ.’ মিরমর্দান সত্যিই ছিলেন পলাশি যুদ্ধের সর্বাধিক সাহসী সৈনিক।
মিরমর্দানের মৃত্যুতে সিরাজ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে নবাব প্রহরীকে বলে যান, সে যেন মোহনলালকে খবর দেয়, তিনি যেন কয়েকজন ঘোড়সওয়ারের হেফাজতে মিরমর্দানের মৃতদেহ তক্ষুণি রাজধানীতে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। উপযুক্ত মর্যাদার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন মিরমর্দান।
ক্লাইভ
ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসের বড় কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করেন বিদেশি বণিকের অন্যতম কর্মকর্তা রবার্ট ক্লাইভ। বাংলার পতনের দিনে এ ভাগ্যান্বেষী ইংরেজ কর্মচারী বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, বাংলার জনজীবনে সূচনা করেছেন অপরিসীম দুর্গতি। তিনি ছিলেন বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান চক্রান্তকারী। তারই ক‚ট-কৌশলে বণিকের মানদণ্ড দেখা দিয়েছিল রাজদণ্ডরূপে।
জোচ্চোর ও ষড়যন্ত্রকারী : যে কোনো রকম ছলনা, জোচ্চুরি এবং ঘৃণ্য কাজের পাণ্ডা ছিলেন কর্নেল ক্লাইভ। মিরনের বাড়িতে ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন সভায় ক্লাইভ আসেন ওয়াটসনকে সাথে নিয়ে রমণীর ছদ্মবেশে। ক্লাইভ ছিলেন বেপরোয়া দুঃসাহসী। জুয়া খেলায় অভ্যস্ত ক্লাইভ নিজের জীবন বিপন্ন করেও সে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
সুচতুর ক্লাইভ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার নবাবের সত্যিকারের কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি ঠিকই জানতেন যে, নবাবের সেনাপতি বিশ্বাসঘাতক। যার খাজাঞ্চি, দেওয়ান, আমির-ওমরাহ্ প্রত্যেকেই প্রতারক, তার কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে না। চতুর ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী আমির-ওমরাহদের বিশ্বাস করতেন না। তাদের সাথে চলতে তিনি প্রতি পদক্ষেপে সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
তিনি গোপন বৈঠকে রাজবলভকে খোলাখুলি বলেছেন, তারা ইচ্ছে করলে ইংরেজের ক্ষতি করতে পারেন। বিশ্বাসহন্তারা সবই পারে। তারা নবাবকে ডোবাচ্ছেন, কাল যে ইংরেজকে ডোবাবেন না তা বিশ্বাস করা কঠিন। তিনি বরং নবাবকে বিশ্বাস করতে পারেন। স্বচ্ছ দৃষ্টির অধিকারীর পক্ষেই এ মূল্যায়ন করা সম্ভব।
নীতিহীন : ক্লাইভ উমিচাঁদের চেয়েও নীতিহীন বুদ্ধিমান ছিলেন। জাল-জুয়োচুরিতে পাকা ছিল তার হাত। তিনি মানুষ চিনতেন। তিনি নবাবের বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক কর্মচারীদের যেমন চিনতেন, তেমনি চিনতেন প্রতারক উমিচাঁদকে। তার মতে, উমিচাঁদ ছিল সে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক। ক্লাইভ এ ধূর্ত-বিশ্বাসঘাতককেও বিশ্বাসঘাতকতায় হার মানিয়ে পাগল বানিয়েছিলেন।
দেশ ও জাতির প্রতি বিশ্বস্ত : নবাবের কর্মচারীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, নিজেদের স্বার্থের জন্য। কিন্তু ক্লাইভের জালিয়াতি ও ক‚ট-কৌশলের পিছনে লুকানো ছিল তার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ স্বার্থ। সেদিক থেকে তার স্থান এদের অনেক ওপরে। পলাশির যুদ্ধের আগে মিরজাফরদের সাথে ক্লাইভের যে চুক্তি হয় তার মুসাবিদা করেন ক্লাইভ। সে চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সিরাজের পতনের পরে মিরজাফর নামেমাত্র নবাব হবেন।
কিন্তু রাজ্যশাসনের দায়িত্ব থাকবে কোম্পানির হাতে। ধরা পড়ে ধূর্ত ক্লাইভ সাফাই গেয়েছেন, তারা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ঢ়ৎরারষবমব-টুকু ংবপঁৎবফ করে নিচ্ছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতেই ক্লাইভ দলিল দুটো ফেরত নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেন। তখন বাংলার প্রতারকরা নরম হয়ে পড়েন।
দূরদৃষ্টি : মিরজাফর দলিলে সই করতে ইতস্তত করছেন দেখে ক্লাইভ তাকে ডড়সবহ- দের চেয়েও ঈড়ধিৎফ বলে কাজ হাসিল করেন। ঈড়ধিৎফ- দের ওপর কোনো কাজের জন্যই ভরসা করা যায় না। তাই দলিল সই করাতে তিনি নিজেই এসেছেন। মিরজাফর দলিলে স্বাক্ষর দেবার পর এ ধূর্ত ইংরেজ প্রসন্ন মুখে বলেছিলেন, “আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।” তার সে ভবিষ্যদ্বাণী নিদারুণ ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হয়েছে।
সতর্ক : অতিমাত্রায় সতর্ক ছিলেন এ ইংরেজ। পলাশির যুদ্ধের শেষে তিনি সিরাজের শিবিরে প্রবেশ করে তাঁর প্রধান গুপ্তচর নারান সিংকে হত্যা করেন। নবাব পলায়ন করেছেন শোনামাত্র তিনি মিরজাফরকে রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করতে নির্দেশ দেন।
তিনি জানতেন সময় পেলে নবাব প্রস্তুতি গ্রহণ করে রুখে দাঁড়াবেন। তিনি মিরজাফরকে অপদার্থ বলেই জানতেন। মিরজাফর যখন কৃতজ্ঞতায় বিগলিত হয়ে বলেন, ক্লাইভের হাত ধরে বসতে না পারলে তিনি বাংলার মসনদে বসবেন না, ক্লাইভ তখন মিরজাফরকে সেরা ঈষড়হি বলেই অভিহিত করেন।
তবে এ ধূর্ত ইংরেজ অনুগত প্রজার মতো নতুন নবাবকে নজরানা দেন। দরবারের লোকজনকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে আবার শান্তি ফিরে এসেছে। নিজের ব্যক্তিগত লাভের প্রতিও তার ছিল প্রখর দৃষ্টি।
ষড়যন্ত্রের নায়ক হিসেবে তিনি পেলেন নগদ একুশ লাখ টাকা আর বার্ষিক চার লাখ টাকা আদায়ের জমিদারি চব্বিশ পরগণার স্থায়ী মালিকানা। এরপর শঠের চূড়ামণি রূপে তিনি উমিচাঁদকে তীর্থে গিয়ে ঈশ্বরের নাম জপ করার পরামর্শ দেন।
বুদ্ধিমান : বুদ্ধিমান ক্লাইভ তার হাতের পুতুল নবাব মিরজাফরকে মসনদে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন, এ লোভী ও অপদার্থ লোকটাকে কলের পুতুল হিসেবে সামনে রেখে বাণিজ্যের নামে এ দেশের রাজদণ্ড হস্তগত করা ইংরেজের পক্ষে খুবই সহজসাধ্য হবে। তাই তিনি মিরজাফরকে শক্ত হতে বলেছেন।
উপসংহার : সিরাজকে হত্যা করতে বাংলার কোনো কর্মকর্তাই চান নি। কিন্তু ক্লাইভ তার জনপ্রিয়তার কথা জানতেন, ভবিষ্যতে বাংলার মানুষ যে-কোনো সময় সিরাজের বন্ধন মুক্তি ঘটিয়ে ক্লাইভের কবল থেকে বাংলার শাসনব্যবস্থা আবার ছিনিয়ে নিতে পারে, তার এমন আশঙ্কা ছিল।
তাই তিনি মিরজাফরের অপদার্থ পুত্র মিরনকে প্ররোচিত করেন সিরাজকে হত্যা করতে; সে মোহাম্মদি বেগকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করায়। এভাবে ক্লাইভের কৌশলে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের জীবনাবসান হয়।
লুৎফুন্নেসা
ভূমিকা : নবাব সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ছিলেন পতিগতপ্রাণা মহিয়সী রমণী। তিনি ছিলেন রমণীসুলভ সরলতার মূর্তপ্রতীক, শত্র“-মিত্র চেনার মতো প্রখর দৃষ্টি তাঁর ছিল না। নবাবের অফুরন্ত ভালোবাসার অমৃত সরোবরে নিশ্চিত হৃদয়া স্বচ্ছন্দ বিহারিণী ছিলেন বেগম লুৎফুন্নেসা।
আভিজাত্যের ঔদ্ধত্য বা ক‚টনীতির বক্রতা তার চরিত্রে কখনও ছায়াপাত করে নি। মুর্শিদাবাদের বিশিষ্ট অভিজাত মির্জা ইরাজ খাঁর কন্যা লুৎফুন্নেসা বাংলার পতন যুগের ইতিহাসে সরলতা, পবিত্রতা ও পতিপ্রেমের জন্য স্মরণীয়া হয়ে আছেন।
শ্রদ্ধাবোধ : প্রাসাদে নিজের কক্ষে তিনি খালা শাশুড়ি ঘসেটি বেগমকে প্রবেশ করতে দেখে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সালাম করে বলেন, তিনি তাকে মায়ের মতো ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন। এ সরলা নবাব-পতœী ঘসেটিকে এ কথাগুলো বলেন তাঁর নিজের কক্ষে তাঁর ও আমিনা বেগমের সামনে সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটির প্রচণ্ড বিষোদগারের পরের মুহূর্তে। রাজনীতির কুটিল আবর্তের বাইরে সাধ্বী রমণীর এসব উক্তির মধ্যে বিন্দুমাত্র কপটতা ছিল না।
বিশ্বস্ত : ঘসেটি বেগম সিরাজ সম্পর্কে অনেক অশ্রাব্য কটূক্তি করার পরও লুৎফুন্নেসার স্বাভাবিক চরিত্র মাধুর্যের ওপর বিন্দুমাত্র ছায়াপাত ফেলে নি। পতিগতপ্রাণা লুৎফুন্নেসা ধীর প্রশান্ত বাক্যে খালা শাশুড়ি ঘসেটিকে নিশ্চিত আশ্বাস দিয়েছেন যে, নবাব তার কাছ থেকে যে-টাকা নিয়েছেন তা অবশ্যই ফেরত দেবেন।
চিরন্তন বাঙালি নারী : সিরাজের সাথে ঘসেটি বেগমের যে-কথা কাটাকাটি হয় ঘসেটি বেগম তাতে নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। কথাটা তিনি সরলভাবে স্বামীকে অবহিত করেছেন। সিরাজ তখন তাকে ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্রের কথা বুঝিয়ে বলেন। লুুৎফুন্নেসা তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বামীর কাছে ক্ষমা চান। নবাবের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি লুৎফুন্নেসার হৃদয় স্পর্শ করে।
তিনি প্রস্তাব করেছেন, নবাব সমস্ত দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে তার কাছে দুএকদিন যেন বিশ্রাম করেন। লুৎফুন্নেসা স্বামীর বিশ্রাম কামনা করেছেন, ব্যাকুলভাবে চেয়েছেন স্বামীকে নিজের কাছে একান্তভাবে পেতে। কিন্তু সেনাপতি মোহনলালের কাছ থেকে জরুরি খবর পেয়ে নবাব দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলেন লুৎফুন্নেসার কামরা থেকে। দুফোঁটা অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে লুৎফুন্নেসার দুগাল বেয়ে। লুৎফুন্নেসার এ চিরন্তনী নারী-মূর্তি সত্যিকার প্রশংসার দাবিদার।
প্রেরণাদাত্রী : পলাশির যুদ্ধ থেকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে নবাব দরবারে সমবেত জনগণকে শত্র“র আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তাঁর পাশে দাঁড়াবার জন্য ব্যাকুল আবেদন জানান। কিন্তু তার সে-আবেদনে কেউ সাড়া দেয় নি। সেনাপতি মোহনলালের বন্দি হওয়ার সংবাদ শুনে নবাব যখন মর্মাহত, তখন সবাই দরবার থেকে একে একে বেরিয়ে যায়। তখন হাতাশাপীড়িত অসহায় নিঃসঙ্গ নবাবের পাশে এসে দাঁড়ান বেগম লুৎফুন্নেসা। তিনি স্বামীকে বলেন, ফাঁকা দরবারে বসে থেকে কোনো লাভ নেই।
প্রকৃত জীবনসঙ্গিনী : লুৎফুন্নেসা ছিলেন নবাবের সত্যিকার জীবনসঙ্গিনী। দুর্দিনের ঘনীভূত অন্ধকারেও তিনি স্বামীকে উৎসাহ দিয়েছেন, বলেছেন- ভেঙে পড়া চলবে না। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে দূরে নির্ভরযোগ্য বন্ধুদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেবার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন নবাবকে, সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে বিদ্রোহীদের শাস্তি বিধানের কথাও তিনি বলেছেন।
স্বামীর নিরাপত্তার জন্য এ সাধ্বী রমণী অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাই দেরি না করে প্রাসাদ ত্যাগ করতে তিনি স্বামীকে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও প্রাসাদে থাকতে রাজি হননি। নবাব তাকে বলেছিলেন, মানুষের দৃষ্টি থেকে চোরের মতো পালিয়ে পালিয়ে তাকে পথ চলতে হবে পাটনার পথে।
লুৎফুন্নেসা সে কষ্ট সইতে পারবেন না। প্রত্যুত্তরে পতিগতপ্রাণা রাজমহিষী লুৎফুন্নেসা বলেছিলেন, তিনি সে কষ্ট সহ্য করতে পারবেন, তাকে পারতেই হবে এবং তিনি নবাবের সহগামিনী হয়েছিলেন।
উপসংহার : লুৎফুন্নেসা রমণী-রতœ। বাংলার পতনের যুগে নারীত্ব যখন ধূলায় লুণ্ঠিত, মানবতা ও মনুষ্যত্বের শেষ চিহ্ন পর্যন্ত যখন বিলুপ্ত, তখন লুৎফুন্নেসা নারীত্বের জয় ঘোষণা করেছেন। তিনি চিরন্তন নারীত্বের অম্লান প্রতীক।
ঘসেটি বেগম
ভূমিকা : ঘসেটি বেগম নবাব আলিবর্দীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। তার স্বামী ছিলেন ঢাকার দেওয়ান। কিন্তু বিলাসী নবাব-জামাতা মুর্শিদাবাদ ছেড়ে আসতেন না। তার অবর্তমানে ঢাকায় শাসনকার্য চালাতেন রাজা রাজবলভ। স্বামীর মৃত্যুর পর ঘসেটি বেগম বাস করছিলেন মতিঝিলে নিজের প্রাসাদে।
নিঃসন্তান ঘসেটি বেগম নিজের পালিত পুত্র শওকতজঙ্গকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, অপুত্রক নবাব আলিবর্দীর মৃত্যুর পরে অপদার্থ ভাংখোর শওকতকে নামেমাত্র বাংলার মসনদে বসিয়ে নিজেই দেশ শাসন করবেন।
তখন তার অনুগ্রহভাজন রাজা রাজবলভ বাংলার শাসনকার্য চালাবেন তার হয়ে। কিন্তু নবাব আলিবর্দী মৃত্যুর আগে সিংহাসন দিয়ে যান তাঁর যোগ্যতম দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে। ফলে ঘসেটির লালিত স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যায়। তিনি সিংহাসন লাভেব্যর্থ হয়ে হিংস্র হয়ে ওঠেন সিরাজের বিরুদ্ধে।
অজস্র অর্থ ব্যয় করে ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলেন নবাবের বিরুদ্ধে। মিরজাফর, রাজবলভ, জগৎশেঠ প্রমুখ প্রভাবশালী আমির-ওমরাহদের নিজের বাড়িতে ডেকে এনে তিনি ষড়যন্ত্র করছিলেন শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসাবার জন্য।
সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করতে শওকতকে যে-যুদ্ধ করতে হবে তা পরিচালনা করবেন পরোক্ষে থেকে তিনি; তিনিই তাঁর ব্যয়ভার বহন করবেন; অর্থ দিয়ে, সৈন্য দিয়ে, মৌখিক অনুমোদন দিয়ে শওকতের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন আমির-ওমরাহরা।
ষড়যন্ত্রকারী : এ ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য নাচ-গানের জলসার আড়ালে গোপন বৈঠক হয় ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদে। দেউড়িতে কড়া পাহারা দেয় সশস্ত্র প্রহরী। ঘসেটি বেগম সমবেত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শওকতকে নবাব করার জন্য কে কী পুরস্কার চান তা জানতে চান।
জগৎশেঠ বলেন, সিরাজের বিরুদ্ধে শওকতজঙ্গকে তারা তো ইতোমধ্যে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েই দিয়েছেন। তবে শওকত নবাব হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কী পাবেন তা তিনি স্পষ্টভাবে জানতে চান।
তিনি বলেন, শওকতজঙ্গ নবাবী পেলে বেগম সাহেবা ও রাজা রাজবলভের স্বার্থ যেমন নির্বিঘœ হবে, অন্যদের তেমন কোনো আশা নেই। তাই তাদের পক্ষে নগদ কারবারই তিনি ভালো মনে করেন।
তিনি নগদ টাকা চান না, যুদ্ধের খরচ বাবদ টাকা তিনি সাধ্য মতো দেবেন; কিন্তু আসল আর লাভ মিলিয়ে তাকে একটা কর্জনামা লিখে দিলেই তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন। এভাবে যখন আলোচনা অগ্রসর হচ্ছিল, তখন হঠাৎ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে তার গোপন বৈঠকের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখে অসাধারণ বুদ্ধিমতী ঘসেটি বেগম মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
হীনবুদ্ধি নারী : ঘসেটির বুকে কঠিন আঘাত হেনে নবাব তাঁর খালাআম্মা ও উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে দেন, তিনি শওকতজঙ্গকে বিদ্রোহী ঘোষণা করে তাকে শায়েস্তা করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন।
তিনি নিজে এসেছেন তাঁর শ্রদ্ধেয়া খালাআম্মাকে নিজের প্রাসাদে নিয়ে যেতে। বুদ্ধিমতী নারী বুদ্ধির খেলায় নিজের কোলে-পিঠে মানুষ করা বোনপোর কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে গিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েন।
ক্ষোভে-দুঃখে তিনি পাগলিনী হয়ে যান। তিনি মুখের খোলস ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে প্রকাশ্যে উপস্থিত ওমরাহদের সাহায্য কামনা করেন। তিনি একজন অসহায় বিধবা। তার ওপর সিরাজ ওভাবে অত্যাচার করছে জানিয়ে তিনি রাজবলভ, জগৎশেঠ প্রমুখ ব্যক্তিদের সাহায্য কামনা করেন।
দুঃখে, হতাশায়, আশা ভঙ্গের বেদনায় রমণী সিরাজকে অভিশাপ দেন। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এ উচ্চাভিলাষী রমণীর সকল আশার সমাধি রচনা করে নবাবের আদেশে মোহনলাল তাকে সসম্মানে নিয়ে যান নবাবের প্রাসাদে, নবাব-জননী তার ছোটবোন আমেনা বেগম আর নবাব মহিষী লুৎফুন্নেসার কাছে।
উচ্চাভিলাষী : ঘসেটি বেগম ছিলেন উচ্চাভিলাষী, বাংলার শাসনকার্যে কর্তৃত্ব লাভের জন্য অতিমাত্রায় উৎসাহিনী। তার উচ্চাভিলাষ পূরণের পথে একমাত্র অন্তরায় সিরাজের উচ্ছেদ সাধনে তিনি বদ্ধপরিকর। লুৎফুন্নেসার সশ্রদ্ধ সালামের প্রত্যুত্তরে এই ঈর্ষাপরায়ণা রমণী তাঁকে প্রাণ খুলে আশীর্বাদ করতে পারেন নি। বলেছেন, তাকে সুখী ও সৌভাগ্যবতী হবার দোয়া করলে তা তার নিজের পক্ষে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি সিরাজের সর্বনাশ কামনা করেন, বাংলার সিংহাসন থেকে তাঁকে বিতাড়িত করবার জন্য তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেন। অথচ- ছেলেবেলায় সিরাজকে তিনিই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিলেন, সিরাজ জননী সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি তাঁকে বলেন, “অদৃষ্টের পরিহাস তাই ভুল করেছিলাম।
যদি জানতাম বড় হয়ে সে একদিন আমার সৌভাগ্যের অন্তরায় হবে, যদি জানতাম অহরহ সে আমার দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে, জীবনের সমস্ত সুখ শান্তি সে গ্রাস করবে রাহুর মতো, তাহলে দুধের শিশু সিরাজকে প্রাসাদ চত্বরে আছড়ে মেরে ফেলতে কিছুমাত্র দ্বিধা করতাম না।”
উপসংহার : ঘসেটি বেগম ঈর্ষা করতেন সিরাজকে এবং সে কারণে তার ঈর্ষার আগুনে তিনি দগ্ধ করেছেন আমিনা বেগমকে, নবাব মহিষী লুৎফুন্নেসাকে। সিরাজ বাংলার নবাব আর তিনি তাঁর প্রজা এ ধারণাটা তার কাছে ছিল একান্ত অসহ্য। নবাব তাকে নিজের প্রাসাদে এনে আবদ্ধ করে রেখেছেন, দেশের অশান্তি দূর না হওয়া পর্যন্ত বাইরের কারও সাথে যাতে তিনি যোগাযোগ করতে না পারেন সে ব্যবস্থা করেছেন।
নবাবের এ ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ সময়োপযোগী, কিন্তু ঘসেটি বেগম তাতে ভীষণ ক্ষুব্ধ। নিজের ঈর্ষার আগুনে তিনি জ্বলে-পুড়ে মরেছেন, নবাব আর তার স্নেহময়ী জননী আর প্রেমময়ী পতœীকে পুড়িয়ে মেরেছেন, বাংলার ভাগ্যও সে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। বাংলার সমকালীন ইতিহাসে ঘসেটি বেগম ছিলেন মূর্তিমতী অভিশাপ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।