HSC | বাংলা ২য় পত্র | গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা ৩৬-৪০ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবন্ধ রচনা গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
৩৬. বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন
[য. বো. ১৫, সি. বো. ১৩, কু. বো. ১১, ঢা. বো. ১১]
ভূমিকা : জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেসব অগ্রগতি ও অবদানে আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভ‚মিকা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের। সব বাধা ও প্রতিক‚লতাকে তুচ্ছ করে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করে চলেছে; তা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের কল্যাণেই।
আর সেই বিজ্ঞানের সোনার কাঠি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিজ্ঞান ও সভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছে উত্তরাধুনিক যুগে এবং জৈব প্রযুক্তির অসীম সম্ভাবনাময় যুগের দ্বারপ্রান্তে। বিদ্যুৎকে ছাড়া সভ্যতার সমস্ত গতি ও প্রযুক্তি নিমেষে থমকে যায়। আর সেই জন্যই বিদ্যুৎকে বলা হয় আধুনিক প্রযুক্তির ধাত্রী।
সভ্যতার অগ্রগতিতে বিদ্যুৎ : আজকের এ সভ্যতার গৌরবদীপ্ত মহিমা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সভ্যতা আজ চরম সীমায় পৌঁছেছে। এ মহিমাদীপ্ত সভ্যতা বিজ্ঞানের দান। আর বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় উপকরণ বিদ্যুৎ হলো বর্তমান সভ্যতার চালিকাশক্তি।
বলতে গেলে বর্তমান সভ্যতা বিদ্যুৎশক্তির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎশক্তিকে বাদ দিয়ে আজকের দিনে মানুষের পক্ষে এক পা-ও চলা সম্ভব নয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রতিটি ক্ষেত্রে কলকারখানার উৎপাদনের জন্য, ঘরে আলো জ্বালানোর জন্য, গরম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য নিত্যদিনের প্রায় সকল কাজই বিদ্যুতের সাহায্যে হয়ে থাকে।
আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ও বিদ্যুৎ : আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের মূলে বিদ্যুতের ভ‚মিকা অনন্য। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুতের অপরিহার্য ব্যবহার। সুইচ টিপলেই জ্বলে ওঠে আলো। সে আলোর এমনই শক্তি যে স্টেডিয়ামে রাতের বেলায় ফুটবল-ক্রিকেট খেলা যায়। প্রচণ্ড গরমে স্বাচ্ছন্দ্য আনে বৈদ্যুতিক পাখা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়িতে, গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় টেলিফোন, টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা করেছে বিদ্যুৎ। তারই সর্বাধুনিক উদ্ভাবন ই-মেইল, যা মুহূর্তেই পৃথিবীর অপর বিভিন্ন সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের সাহায্যে মানুষ খাবার সংরক্ষণ করতে পারছে ফ্রিজে। শুনতে পারছে বেতার অনুষ্ঠান।
মানুষের বিনোদন চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে বিদ্যুৎ। রিমোট টিপেই মানুষ ঘরে বসে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারছে। বিশ্ব চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এভাবে আধুনিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ রাখছে অসামান্য অবদান।
শিল্পোৎপাদনে বিদ্যুৎ : দেশে দেশে আজ স্বল্প খরচে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কাজে লাগানো হচ্ছে শিল্পোৎপাদনে। বিশাল বিশাল সব যন্ত্রদানব আজ বিদ্যুৎশক্তির বলে পরিণত হয়েছে মানুষের ক্রীতদাসে। বৈদ্যুতিক তথা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সারা বিশ্বের উৎপাদন-ব্যবস্থা। এর ফলে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বহু গুণে বেড়েছে। বিদ্যুতের সাহায্যেই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বিমান ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
বিশালাকৃতি যেসব জাহাজ সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে, যেসব ডুবোজাহাজ সমুদ্রতলে বিচরণ করছে সেগুলো চলছে বিদ্যুৎশক্তিতে। সভ্যতার পুরোভাগে যন্ত্রশিল্প যত বিকশিত হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহারও ততই বাড়ছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিদ্যুতের অবদান : আজ মানুষের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে তা সম্ভবপর হয়েছে বিদ্যুতের সাহায্যেই। দেহাভ্যন্তরে কোনো স্থান ব্যধিগ্রস্ত হলে যখন কোনো কিছুতেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না তখন অনুমাননির্ভর চিকিৎসা না চালিয়ে এক্স-রে বা রঞ্জনরশ্মির সাহায্যে দেহাভ্যন্তরের ছবি তুলে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।
এছাড়া, বৈদ্যুতিক-রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সারের মতো নানা দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসাও করা হচ্ছে। তাছাড়াও রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে ইসিজি, কার্ডিওগ্রাফ ইত্যাদি। এগুলো চিকিৎসা জগতে বিপ্লব এনেছে। পঙ্গু, অসমর্থ ও মুমূর্ষু মানুষের জীবনে এনেছে আশার আলো।
মহাকাশ অভিযানে বিদ্যুৎ : মহাকাশ অভিযান ও মহাকাশ বিজয়ে মানুষের সমস্ত সাফল্যের মূলে বিদ্যুতের অবদান বিস্ময়কর। সূ²াতিসূ² গণনা, নির্ভুল দিকস্থিতি নির্ণয়, পরিমিত তাপমাত্রা সংরক্ষণ এবং মহাকাশ অভিযানের হুবহু ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ ইত্যাদির মতো অকল্পনীয় কাজ এখন বাস্তবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে বিদ্যুৎ।
গ্রহে-উপগ্রহে বিভিন্ন নভোযান ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণও চলছে বিদ্যুতের সাহায্যে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা (ঘঅঝঅ) সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্র্রো-ম্যাগনেটিক প্রযুক্তিনির্ভর। বিদ্যুতের বিস্ময়কে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত তারা আবিষ্কার করছে মহাকাশের অজানা দিগন্তকে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ : এতকাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দুটি অসামান্য অবদান ছিল টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ। এখন তাকেও ছাড়িয়ে গেছে বিদ্যুৎনির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি। বর্তমানে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেইল, মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স ইত্যাদি বিদ্যুৎনির্ভর তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে পরস্পরের এত কাছে নিয়ে এসেছে যে পৃথিবী পরিণত হয়েছে বিশ্বগ্রামে।
যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ : যাতায়াত ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করছে বিদ্যুৎ। বৈদ্যুতিক ট্রেন ও পাতাল রেল দিনকে দিন আয়ত্ত করেছে অভাবনীয় গতি। বুলেট ট্রেন, বিলাসবহুল আরামপ্রদ এয়ারবাস ও সুপারসনিক বিমান পৃথিবীর এপ্রান্ত এবং ওপ্রান্তের দূরত্ব কমিয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বিপ্লব।
বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ : বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রæতই এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এই ধারাকে বহমান রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু অধিক জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতাপীড়িত বাংলাদেশের বিদ্যুতের ঘাটতি একটা বড় সমস্যা।
এ ঘাটতি সমাধানে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বিদ্যুৎ ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে এবং চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে অনুৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুতের অপচয়ও একটা বড় সমস্যা। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকছি।
উপসংহার : সভ্যতা ও বিদ্যুৎ একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিলে তাই অপরটি হয় অর্থহীন ও নিষ্ফল। বিপদসংকুল এ পৃথিবীতে বিদ্যুতের সাহায্যেই মানুষ হয়ে উঠেছে বিপুল শক্তির অধিকারী; জল, স্থল ও অন্তরীক্ষের অধিপতি। বিদ্যুতের সাহায্যেই মানুষ এগিয়ে চলেছে কল্পনাতীত বাস্তবে। কিন্তু বিদ্যুতের আশীর্বাদ পৃথিবীর সব শ্রেণির লোক সমানভাবে লাভ করতে পারছে না। এ কথা স্মরণে রাখতে হবে যে, বিজ্ঞানের রাজ্যে সবারই এতে সমান অধিকার। তাই বিদ্যুতের সহজলভ্য এবং এর অপরিমেয় শক্তিকে সর্বসাধারণের সেবায় উৎসর্গ করতে হবে।
৩৭. মানবকল্যাণে বিজ্ঞান/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান/বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও আধুনিক সভ্যতা
[রা. বো. ১৫, দি. বো. ১৫, ব. বো. ১৫, সি. বো. ১৪, ঢা. বো. ১৩, য. বো. ১৩, চ. বো. ১৩]
ভূমিকা : মানুষের জীবনে বিজ্ঞান চেতনার দীপশিখা প্রথম জ্বলে উঠেছিল প্রায় দশ হাজার বছর আগে। সে সময় সভ্য মানুষ শুধু প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনে নয়, নিছক জানার বা বোঝার আগ্রহেই নানা বিষয় সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান আহরণ করতে শুরু করে।
তারই ধারাবাহিকতায় জীবন আমাদের অসংখ্য বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ধন্য। আলো ঝলমল একটা আধুনিক সভ্যতা বিজ্ঞানের অবদান। বলা বাহুল্য, বিজ্ঞানের এ সর্বজয়ী স্বরূপটি মানুষই নিরন্তর সাধনায় গড়ে তুলেছে।
আদিমকালে জীবনকে আয়েসপূর্ণ, সুখময় ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে মানুষ যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিল, আজকের দিনের বিজ্ঞান তারই সুনিয়ন্ত্রিত এবং বিকাশমান প্রয়াস। তাই বিজ্ঞান আজ শত ধারায় ও শত শাখায় বিস্তৃত।
বিজ্ঞান কী? : বিজ্ঞান অর্থ হলো বিশেষ জ্ঞান। ভৌত বিশ্বে যা কিছু পরীক্ষাযোগ্য ও যাচাইযোগ্য তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। হারবার্ট স্পেন্সারের মতে, ‘বিজ্ঞান হলো সংঘবদ্ধ জ্ঞানের সমষ্টি।’ বিজ্ঞানী মাদাম কুরী বলেছেন, ‘আমার চোখে বিজ্ঞান হলো অনিন্দ্য সুন্দর।’
বিজ্ঞান চেতনার প্রসার : আদিম যুগে গোষ্ঠীবদ্ধ যাযাবর মানুষের জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল আগুনের আবিষ্কার এবং কৃষিকাজের প্রচলন।
উদ্ভাবিত হয়েছিল আদি কৃষি যন্ত্র লাঙল। পরবর্তীকালে মানুষ শস্য সংরক্ষণ, ফসল থেকে আরও নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বানাতে শিখল, চাকা ঘুরিয়ে মানুষ বানাতে শুরু করল নানা ধরনের মাটির পাত্র। ইরাকের লোকেরা প্রথম চাকাযুক্ত গাড়ি বানিয়ে পরিবহন ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন আনল।
পানি তোলার উপযোগী বিশেষ ধরনের পাম্প এবং যন্ত্রচালিত ঘড়ি প্রথম আবিষ্কৃত হয় চীনদেশে। গ্রিসের লোকেরা প্রথম পৃথিবী ও মহাকাশের মানচিত্র বানায়। এভাবেই মানুষের অদম্য কৌত‚হল ও উদ্ভাবনী শক্তি বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়েছে যুগে যুগে।
আধুনিক বিজ্ঞান : সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে অগ্রসর হয়ে বিজ্ঞান বর্তমানে পূর্ণরূপে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বিজ্ঞানের অসীম শক্তিতে মানুষ আজ প্রকৃতিকে যেন হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে। শিল্প জগতে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করল বিজ্ঞান। দ্রæত উৎপাদনের তাগিদে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় নামে বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানের মহিমায় এখন সব কাজকর্মই হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। বিজ্ঞানের ঐন্দ্রজালিক শক্তিবলে মানুষ উদ্দাম, উচ্ছৃঙ্খল নদীর স্রোতকে বশীভূত করেছে। উষর মরু-প্রান্তরকে করেছে জলসিক্ত। ভূগর্ভের সঞ্চিত শস্য সম্ভাবনাকে করেছে উজ্জ্বল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার বলেই মানুষ এখন সমগ্র পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান : বিজ্ঞান পৃথিবীকে শুধু ছোট করেই দেয়নি, একটি বৃহত্তর গেøাবাল ভিলেজে পরিণত করেছে। যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ জীবনে হাজারো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। নিচে এর কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কার ও উপকরণ নিয়ে আমাদেরকে চলতে হয়। সকালে ঘড়ি দেখে ঘুম থেকে উঠে যে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করি, তা বিজ্ঞানেরই অবদান।
তারপর রান্নার চুলায় ভূগর্ভের গ্যাস, খাবারের টেবিলে পুষ্টি নির্দেশক খাদ্য, অফিস গমনে যান্ত্রিক যান, হিসাব করার জন্য ক্যালকুলেটর, দাপ্তরিক কাজে কম্পিউটার, অবসর বিনোদনে বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদি ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল। মোট কথা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
পরিবহন ও যোগাযোগে বিজ্ঞান : আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দিয়েছে অভাবনীয় সুবিধা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে মানুষের সমান পদচারণ। স্থলপথে দ্রæতগামী গাড়ি, বুলেট ট্রেন, জলপথে জাহাজ, আকাশপথে শব্দের চেয়েও দ্রতগামী সুপারসনিক বিমান মানুষ আবিষ্কার করছে। রকেটে চড়ে পাড়ি দিচ্ছে ভিন গ্রহে। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়ন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থারই ফল।
চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান : চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান এনেছে এক যুগান্তকারী সাফল্য। চিকিৎসাক্ষেত্রে একদিকে প্রতিষেধকের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ হচ্ছে, অন্যদিকে ওষুধ ও শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাইরাস তথা রোগ-জীবাণু শনাক্তকরণ দ্বারা তা নির্মূলে কার্যকর উপায় বের করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসাসেবার ফলে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের গড় আয়ু।
কম্পিউটারকেন্দ্রিক টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো ব্যক্তি উন্নত দেশের ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। এক্সরে, ই.সি.জি, আলট্রাসনোগ্রাম, ইটিটি, এন্ডোস্কপিসহ সূ² রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে মানবদেহের জটিলতম রোগগুলো নির্ণয় করে সহজেই নিরাময় করা হচ্ছে। ব্রেইন সার্জারি ও ওপেন হার্ট সার্জারির মতো জটিল শল্য চিকিৎসায় সাফল্যের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবিষ্কৃত হয়েছে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান : মানুষের জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনে শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। শিল্প কারখানায় কোনো একসময় সমস্ত কাজই হাতে করা হতো। ফলে মানুষের কাজে সময় ও শ্রম লেগেছে বেশি, কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ন্যূনতম।
বিজ্ঞানের বলে আজ সেসব কাজ যন্ত্র দ্বারা করানো হচ্ছে। ফলে খরচ ও সময় কম ব্যয় হচ্ছে এবং উৎপাদন হচ্ছে অধিক। বিজ্ঞানের বদৌলতে শিল্পবিপ্লবের ফলে আজ বৃহদায়তনের শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে এবং পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : কাগজ ও মুদ্রণযন্ত্র শিক্ষাক্ষেত্রে এনে দিয়েছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। জ্ঞান ও শিক্ষণীয় কথাবার্তা মুদ্রণ যন্ত্রের কল্যাণে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও প্রচারিত হওয়ায় জ্ঞানের আদান-প্রদান সহজতর হয়েছে।
দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসেই উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল তৈরি ও প্রচার সর্বক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : আধুনিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে অশেষ কল্যাণ সাধন করে আসছে। প্রাচীন ভোঁতা লাঙলের পরিবর্তে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কলের লাঙল ও ট্রাক্টর। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবিত হয়েছে। গবাদি পশু, মৎস্য, হাঁস, মুরগি পালনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ সুফল দিয়েছে। খাদ্যশস্য ও ফলমূল পরিবহন এবং সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগ হচ্ছে। এককথায় কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান মহাবিপ্লব এনে দিয়েছে।
তথ্যপ্রবাহে বিজ্ঞান : বর্তমান যুগ তথ্যবিপ্লবের যুগ। কম্পিউটার, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট সারা পৃথিবীকে একটি অভিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আবদ্ধ করেছে। মুহূর্তে মুহূর্তে যেকোনো মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে অন্য কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
কম্পিউটারকেন্দ্রিক তথ্যপ্রযুক্তি (ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঞবপযহড়ষড়মু-ওঞ) জটিল গণনা থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে নির্ভুল গতি। স্যাটেলাইট যোগাযোগের কল্যাণে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ঘটনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।
মহাশূন্যের গবেষণায় বিজ্ঞান : মানুষের কৌত‚হলী মন আজ বিজ্ঞানের বলে মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যাপৃত হয়েছে। মানুষ চাঁদে, মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালিয়েছে। মানুষ বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে জ্ঞান আরোহণের জন্য মহাশূন্যে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে। মহাকাশে পাঠিয়েছে বিভিন্ন উপগ্রহ যান, রোবট ও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম।
আবহাওয়ায় বিজ্ঞান : আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রেরণ করছে কৃত্রিম উপগ্রহ। যার ফলে আবহাওয়ার খবরাখবর মুহূর্তের মধ্যেই নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ এবং অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি কম হচ্ছে। তাছাড়া ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে খনিজ ও জলজ সম্পদের এ উৎস সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।
বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : মানুষকে মানসিক প্রফুল্লতা দানের জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে রকমারি উপকরণ। বিজ্ঞান আজ মানুষের বিনোদন সঙ্গী। বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ভিসিডি, ক্যামেরা, স্যাটেলাইট চ্যানেল, বৈদ্যুতিক বাদ্যযন্ত্র বিনোদন জগতে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন।
আজকের দিনে বিজ্ঞানের কল্যাণে গড়ে উঠছে বিশ্ব সংস্কৃতি। আজকের দিনে চলছে আকাশ সংস্কৃতির জোয়ার। যেকোনো অনুষ্ঠান একই সঙ্গে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারে টেলিভিশনের পর্দায়। মুহূর্তের মধ্যেই জনপ্রিয় গান বা সিনেমা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে ইন্টারনেটের কল্যাণে।
অপকারিতা : বিজ্ঞান কেবল আশীর্বাদই বহন করে আনে না, অভিশাপও বহন করে আনে। এটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, ডিনামাইট, বোমারু বিমান, ট্যাংক, বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপেরও কাজ করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা কর্তৃক হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমা ও তার ধ্বংসলীলা এর জলন্ত প্রমাণ।
উপসংহার : মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের দান সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের কাছে মানুষ ঋণী। বিজ্ঞানের দানে মানুষ আজ বিশ্বজয়ী। সভ্যতার ক্রমোন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের তুলনা নেই। কিন্তু কতগুলো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের যুগ-যুগান্তরের কীর্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দুই বিশ্বযুদ্ধে বিজ্ঞানের শক্তির ভয়াবহ ধ্বংসলীলা মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে যদি কল্যাণের কাজে প্রয়োগ করা যায়, তাহলেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
৩৮. কম্পিউটার
অথবা, কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিস্ময়
সূচনা : যুগে যুগে বিজ্ঞানের কল্যাণে অনেক অভাবনীয় প্রযুক্তির সাথে মানুষের পরিচয় ঘটেছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো কম্পিউটার। কম্পিউটারের শাব্দিক অর্থ হিসাবকারী যন্ত্র। তবে কেবল যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতির মধ্যেই এর কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে নিতান্ত সাধারণ মানুষের জীবনে কম্পিউটার আজ একটি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীতে একক আবিষ্কার হিসেবে কম্পিউটার মানবজীবনকে যতটা প্রভাবিত করেছে, তা বোধ হয় অন্য কিছু পারেনি। কম্পিউটারে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্কের অনুকরণ করা হয়েছে। তবে কাজের দ্রæততা, বিশুদ্ধতা এবং নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটার মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত। আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণাধীন। বিচিত্র ও বহুমুখী সব কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার জীবনকে সহজ করে তুলেছে বহুগুণে।
উদ্ভাবন : কম্পিউটার উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে বহু শতাব্দীর সাধনা বিদ্যমান। মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফল এই কম্পিউটার। যোগ-বিয়োগ করতে সক্ষম গণনাযন্ত্র প্রথম তৈরি করেন গণিতবিদ বেøইজ প্যাসকেল ১৬৪২ সালে। ১৬৭১ সালে গটফ্রাইড লেবনিট্জ প্রথম গুণ ও ভাগের ক্ষমতা সম্পন্ন যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন।
আধুনিক কম্পিউটার উদ্ভাবনের সূত্রপাত হয় ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ চালর্স ব্যাবেজের গণকযন্ত্র অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন থেকে। চার্লস ব্যাবেজকে তাই কম্পিউারের জনক বলা হয়। প্রথমদিকের কম্পিউটারগুলো আকার ও আয়তনে ছিল বিশাল। কয়েকটি রুমে রাখতে হতো এর যন্ত্রপাতি। পরবর্তীকালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার হওয়ায় এর আকার ছোট হয়ে আসে। বর্তমানে হাতের তালুর আকারের কম্পিউটারও বাজারে পাওয়া যায়।
গঠন : একটি কম্পিউটারে অনেক ধরনের যন্ত্রাংশ থাকলেও এর গঠনরীতির প্রধান দুটি দিক লক্ষ করা যায়। একটি হলো যান্ত্রিক সরঞ্জাম বা হার্ডওয়্যার অন্যটি পোগ্রাম সম্পর্কিত বা সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যারের মধ্যে পড়ে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি, অভ্যন্তরীণ কার্যের জন্য ব্যবহৃত তাত্তি¡ক দিক, তথ্য সংগ্রহের কাজে ইনপুট অংশ, ফলাফল প্রদর্শনের জন্য আউটপুট অংশ এবং সকল বৈদ্যুতিক বর্তনী। এসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের কাজ হলো পোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটারকে কর্মক্ষম করে তোলা।
প্রকারভেদ : কম্পিউটারের ভিতরের গঠন আকৃতি, কাজের গতি ইত্যাদি বিচারে এটাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো : ১. সুপার কম্পিউটার, ২. মেইন ফ্রেম কম্পিউটার, ৩. মিনি কম্পিউটার ও ৪. মাইক্রো কম্পিউটার। গঠন ও আকৃতিগত পার্থক্য থাকলেও এদের মূলনীতিতে বিশেষ পার্থক্য নেই বললেই চলে।
উপকারিতা : বাস্তবিক অর্থে কম্পিউটার পারে না এমন কোনো কাজ নেই।
ঘরবাড়ি, অফিস, কলকারখানা সব জায়গাতেই অনেক বড় বড় কাজ নিমেষেই কম্পিউটারে করে নেওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক দৈহিক ও মানসিক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটার আশীর্বাদরূপে আবিভর্‚ত হয়েছে। অনেক সূ² অস্ত্রোপচার, রোগ নির্ণয় ইত্যাদিতে এর ব্যবহার করা হচ্ছে। নকশা করা, গণনা করা, ছবি আঁকা, লেখা, পড়া, বিনোদন- এককথায় জীবন যাপনের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি কাজেই কম্পিউটার আমাদের নিত্যসঙ্গী।
কম্পিউটারে ইটারনেট ব্যাবহার করে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছি। এভাবে কম্পিউটার পুরো বিশ্বটাকেই আমাদের হাতের মুঠোয় বন্দি করেছে।
কম্পিউটারের ক্ষতিকর দিক : কম্পিউটারের অসংখ্য উপকারি দিকের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এক কম্পিউটার একই সাথে অনেক মানুষের কাজ করে দেওয়ায় বেকারত্ব বাড়ছে। তাছাড়া অনেকে কম্পিউটারে কাজের বদলে গেমস খেলে বা অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে। এটি শিশুদেরকে শারীরিক পরিশ্রম ও খেলাধুলা থেকে বিমুখ করছে।
কম্পিউটার ও বাংলাদেশ : যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার একটি অগ্রগণ্য খাত। বাংলাদেশেও কম্পিউটারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যে কারণে পাঠ্যসূচিতে কম্পিউটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কম্পিউটার ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সরকার এর যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শুল্ক ধার্য করেছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি স্কুল কলেজে কম্পিউটার শিক্ষা বিভাগ খোলার পরিকল্পনা সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
তাছাড়া কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ খোলাসহ আলাদাভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কম্পিউটারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিপুল কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেনসহ উন্নত দেশসমূহে দক্ষ কম্পিউটার প্রকৌশলীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালিতে প্রচুর বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সাফল্যের সাথে কাজ করছেন। বাংলাদেশে কম্পিউটারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় বিরাট বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সফটওয়্যার শিল্প বিদেশে বাজার দখল করতে শুরু করেছে।
উপসংহার : কিছু নেতিবাচক দিক থাকলেও আধুনিক জীবনে কম্পিউটারের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের দিকে বিশেষভাবে মনযোগী হতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কম্পিউটার শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তথ্য প্রযুক্তিকে উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করলে খুব দ্রæতই আমরা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারব।
৩৯. কৃষিকাজে বিজ্ঞান
[রা. বো. ১৪, দি. বো. ১৪, সি. বো. ১১]
সূচনা : মানুষের সবচেয়ে আদি পেশা হলো কৃষি। মানবসভ্যতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে কৃষির ক্রমবিবর্তন ধারা। এই পেশায় নিয়োজিতদের কৃষক বলা হয়। কৃষকরা মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা খাদ্যের সরাসরি জোগানদাতা। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে কৃষিতে যোগ হয়েছে নতুন নতুন পদ্ধতি।
এ কথা কারো অজানা নয় সভ্যতার অগ্রগতি আর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ‘বিশেষ জ্ঞান’। কৃষিতে এই বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োগ না হলে এত দিনে মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেত। কারণ প্রতিদিন মানুষ বাড়ছে, কিন্তু আবাদযোগ্য জমি বাড়ছে না। সময়ের এই দাবি পূরণ বৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতি ছাড়া সম্ভব নয়।
অধিক ফলনের মূলমন্ত্র : অধিক ফলন, উন্নত জাত উদ্ভাবন, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া চাহিদা পূরণ করতে কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ২০০১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ১৯৬১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চল্লিশ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
এই বাড়তি সংখ্যার খাদ্যসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়েছে বৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতির কারণেই। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি অধিক ফলনের মূলমন্ত্র।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের পরিধি : বীজ বাছাই, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, রোপণ থেকে শুরু করে মাঝের পরিচর্যা বীজতলা তৈরি এবং ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ই হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক। উন্নত বিশ্বে কৃষি এখন আর অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কৃষকের হাতের নিয়তির ভাগ্যচক্র কিংবা প্রকৃতির জুয়াখেলার ওপর নির্ভরশীল নয়।
কৃষির প্রতিটি পর্যায়েই রয়েছে জ্ঞান, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির স্পর্শ। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণেও তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেয়। এতে দ্রæত ফসল ভোক্তার কাছে পৌঁছে এবং অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা নিচের উপশিরোনামগুলোতে তুলে ধরা হলো।
মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা : ফসল রোপণের আগে অবশ্যই মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা অপরিহার্য। মাটির বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন খনিজ লবণ, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রজেন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পরিমাণমতো আছে কি না, তা জানা থাকলে সার প্রয়োগ ও ফসলের জাত নির্ণয়ে সুবিধা হয়। মাটির গুণাগুণ এবং অঞ্চল ভেদে অনুপাতের তারতম্য নির্ণয়ে এখন কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
চাষের জমি তৈরি : ফসল রোপণের আগে হাল-চাষের মাধ্যমে জমি তৈরি করতে হয়। সনাতন পদ্ধতিতে এ কাজে গরু ও কাঠের লাঙল ব্যবহার করা হতো। আধুনিক বিজ্ঞান জমির হাল-চাষের জন্য তৈরি করেছে ট্রাক্টর বা কলের লাঙল। এর মাধ্যমে দিয়ে কম সময়ে বেশি জমি গভীরভাবে কর্ষণ করা যায়। ফলে এতে কৃষকের শ্রম, সময় ও অর্থ যেমন বাঁচে উৎপাদনও বেশি হয়।
সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যা : আধুনিক কৃষি আজ আর প্রকৃতির বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে সেচ দিয়ে ফসলকে খরার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা হয়। বীজ রোপণ, বীজতলা তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও সার-কীটনাশক ছিটানোসহ অন্যান্য পরিচর্যাও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে করলে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস : কৃষিকাজের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়া অনুকূল হলে অধিক ফসল কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে। এক্ষেত্রে বর্তমানে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।
জিন গবেষণা : জিনের মধ্যে জীবের বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে। জিন গবেষণা কৃষি জগতে এক ধরনের বিপ্লব এনে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন বুঝে একই প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের আদান-প্রদান করছেন। এতে অল্প জায়গায় অধিক ফসলের পাশাপাশি প্রতিকূল পরিবেশেও ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে।
খামার পরিচালনা : খামার ব্যবস্থাপনার বৈজ্ঞানিক মডেল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য খরচ, উৎপাদন, কর্মী নির্বাচন, বিপণন, আবহাওয়া, ফসল বাছাই এগুলোর গাণিতিক সূ হিসাব জানা জরুরি। এজন্য উন্নত বিশ্বে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খামারের প্যারামিটারগুলো হিসাবের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
প্রযুক্তি বিনিময় : উন্নত বিশ্বে কৃষকদের মাঝে কম্পিউটারনির্ভর নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টি করা। এজন্য ইন্টারনেটের পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, ফ্যাক্স, সিডি, পত্রিকা, বুলেটিন, জার্নাল ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবহার দরকার। বাংলাদেশেও কয়েকটি মোবাইল অপারেটর ইতোমধ্যেই কৃষি তথ্যসেবা সার্ভিস চালু করেছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা : আমাদের কৃষি এখনও সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। এর অন্যতম কারণগুলো হলো :
১. কম্পিউটার ও প্রযুক্তি শিক্ষার অভাব,
২. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক, যন্ত্রপাতি এবং সংগঠনের অভাব,
৩. ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা,
৪. তথ্যকেন্দ্রের অভাব,
৫. ভাষাগত সমস্যা। কারণ অধিকাংশ তথ্যই থাকে ইংরেজিতে, যা সাধারণভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জটিল।
আমাদের করণীয় : কৃষিপ্রধান অর্থনীতির এই দেশের অবস্থার পরিবর্তন উল্লিখিত সমস্যাসমূহের সমাধান ছাড়া সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে এ জন্য আমাদের করণীয় হলো :
১. কৃষকদের কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার বিষয়ে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৩. গ্রামে গ্রামে কৃষি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা।
৪. মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে জটিল তথ্য সহজ করে কৃষকের মাঝে উপস্থাপন করা।
৫. কৃষকের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্থানীয়, এনজিও এবং সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া।
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১-৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ৬-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১০-১৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১৬-২১ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১-১০ | PDF Download
উপসংহার : বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করে। কৃষিই তাদের প্রধান জীবিকা। কৃষকরা চাষাবাদের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে। কিন্তু দুঃখের কথা এখনও এ দেশের কৃষক স¤প্রদায় সেই চিরাচরিত প্রাচীন পদ্ধতিতেই কৃষিকাজ করে চলছেন এবং তাদের জীবনযাত্রা এখনও খুব নিম্নমানের।
এর অবসান খুবই জরুরি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই কৃষিতে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। কৃষি বিশ্লেষকদেরকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সাথে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ সার্বিক উন্নতি লাভ করতে পারব।
৪০. বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা
[কু. বো. ১১, ব. বো. ১০]
ভূমিকা : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অভাবনীয় উন্নতি, প্রগতি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। বিজ্ঞানের যেসব আবিষ্কার মানুষকে সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সহায়তা করেছে তার অন্যতম হলো ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত গতিময়তার এক মাইলফলক এই ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির কর্মকাণ্ডকে এটি এমন এক সুতোয় গেঁথেছে যে, সে সুতো ছিঁড়ে গেলে হয়তো সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়বে।
ইন্টারনেট কী : ইন্টারনেট হলো ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী সুবিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হলো কম্পিউটারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যাকে ইংরেজিতে বলা যায়- ডড়ৎষফ ডরফব ঊষবপঃৎড়হরপ ঘবঃড়িৎশ. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের কম্পিউটার অতি দ্রুততার সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেট উদ্ভাবনের ইতিহাস :
ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণ ছিল সামরিক। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তির সমরবিশারদরাই পারমাণবিক বোমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সন্দেহ ছিল ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
এজন্য যোগাযোগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয়। মার্কিন সামরিক সংস্থা ১৯৬৯ সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। এ প্রযুক্তিকে আরও জনকল্যাণমুখী করে তোলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হলে তারা শিক্ষা, গবেষণা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।
তখন শিক্ষাজগতে এর নামকরণ হয় ‘অ্যাপারনেট’। পরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদ : ব্যবহারকারীরা দুভাবে ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারে। প্রথমটি হলো অনলাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারে ইন্টারনেটের অন্য যেকোনো সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত করার পদ্ধতিকে অনলাইন ইন্টারনেট বলা হয়।
তাতে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় অন্য যেকোনো প্রোভাইডারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। এছাড়াও ওচঅঈঈঊঝ পদ্ধতিতে সরাসরি অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। দ্বিতীয় হলো অফলাইন ইন্টারনেট নামে পরিচিত।
এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরা নিকটবর্তী কোনো সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফলাইন ইন্টারনেট বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকরা কম খরচে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি : ইন্টারনেটের ব্যবহার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। যেমন,
ক. ওয়েব : ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে তথ্য রাখা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি।
খ. চ্যাট : চ্যাটের সাহায্যে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলা যায়।
গ. ই-মেইল : এ পদ্ধতি হচ্ছে সংবাদ আদান-প্রদানের এক সহজ ব্যবস্থা। এ পদ্ধতিতে অতিদ্রুত তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব।
ঘ. নেট নিউজ : এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে সংরক্ষিত সংবাদ যেকোনো সময় উন্মুক্ত করা যায়।
ঙ. ই-ক্যাশ : ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলে।
চ. আর্কি : আর্কি হচ্ছে নেটওয়ার্ক তথ্যসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত একটি পদ্ধতি, যা তথ্যগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচি আকারে সমন্বয় করতে সক্ষম।
ইন্টরনেট ব্যবহারের সুফল : ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নানা রকম কাজ অতি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারি। তবে ইন্টারনেটে একেক রকম কাজ করার জন্য একেক রকম সফ্টওয়্যারের প্রয়োজন হয়। যেমন -এর মাধ্যমে আমরা অতি সহজে ও দ্রুততার সাথে বিশ্বের যেকোনো দেশের খবরাখবর জানতে পারি।
ইন্টরনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা অতি দ্রুত দেশ-বিদেশের যেকোনো স্থানে অবস্থানরত আপনজনের সাথে কথা বলতে পারি বা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। ইন্টরনেট ব্যবহার করে আমরা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের ফাইল আদান-প্রদান করতে পারি। ইন্টরনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন স্থানে বসে বিভিন্নজনের সাথে গল্পগুজব করতে পারি, আড্ডা দিতে পারি।
ঊ-সধরষ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ধরনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত, গবেষণা-প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষাসহ সব কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের আশীর্বাদে আমরা ঘরে বসেই এখন বিশ্বের যেকোনো বড় বড় লাইব্রেরির বইপত্র পড়তে পারি, দুষ্প্রাপ্য তথ্যাদি জানতে পারি।
এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায়। ঘরে বসেই আমরা যেকোনো দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি। অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্বে আধুনিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটের অপকারিতা : ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের যেমন অসংখ্য সুবিধা বা ভালো দিক রয়েছে, তেমনই কিছু কিছু অসুবিধা বা খারাপ দিকও রয়েছে। যেমন এর মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, জুয়া খেলা, ব-াকমেলিং করা, ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
এসবের মাধ্যমে মানুষের বিবিধ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটের এই নেতিবাচক ব্যবহারের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। তাই এর খারাপ দিকের চেয়ে ভালো দিকগুলোই অধিক গ্রহণযোগ্য ও বিশেষভাবে বিবেচ্য।
উপসংহার : উন্নত জীবন ও বিশ্বব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বের প্রায় কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অধিকাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে এবং মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।