HSC | বাংলা ২য় পত্র | গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা ২১-২৫ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবন্ধ রচনা গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
২১. ছাত্রজীবন
অথবা, ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
[ঢা. বো. ১১, রা. বো. ১১, য. বো. ১১]
সূচনা : বিদ্যাশিক্ষার জন্য শিশুকাল থেকে শুরু করে যে সময়টুকু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করি তাকেই ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতার জন্য এ সময় থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। তা না হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। জীবনে প্রকৃত সফলতা লাভ করতে হলে ছাত্রজীবনকে গুরুত্ব প্রদান করা জরুরি।
ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির বীজ ছাত্রজীবনেই বপন করতে হয়। ছাত্রজীবনের সুশিক্ষাই ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়। আমাদের জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা ছাত্রজীবনের সাধনার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।
ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য : সকল ক্ষেত্রেই মানুষ একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তেমনি ছাত্রজীবনেরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। শুধুমাত্র পাস করে সনদ অর্জনই যেমন ছাত্রজীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তেমনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞানার্জন। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের সকল বন্ধ দুয়ার খুলে যায়।
চিত্তের সংকীর্ণতা দূর হয়ে এক উদারনৈতিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয় সে। আর তখনই সে নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। নিজেকে ভদ্র, সেবাপরায়ণ, সেবাব্রতী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সাধনাও ছাত্রজীবনের দায়িত্বকর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য : অধ্যয়ন করাই ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান তপস্যা। ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এজন্য ছাত্রদের অন্যতম কাজ হলো শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গঠন করা। ছাত্রসমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এবং শারীরিক শক্তিতে ও মানসিক দক্ষতায় বলীয়ান হতে হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন ও চরিত্রবান ছাত্রদের জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ : লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন জাহাজের মতো। ছাত্রজীবনেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যায়। তাই ছাত্রজীবনেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
চরিত্র গঠন : চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময়। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সৎ পথে চলা, সত্য কথা বলা, লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা, খারাপ কাজ ও কুসঙ্গ থেকে দূরে থাকা, ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি ভালো গুণগুলো ছাত্রজীবনেই চর্চা করতে হবে।
খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য গঠন : পড়াশোনার পাশাপাশি শরীর গঠনের প্রতিও ছাত্রদের মনোযোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের বাস। তাই ছাত্রজীবনে নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাস্থ্য গঠনে সচেষ্ট হতে হবে।
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য : পিতামাতা ও গুরুজনদের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা ছাত্রসমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মনোভাব তাদের নৈতিক দিক থেকে আদর্শবান করে তোলে। গুরুজন যা নিষেধ করেন তা না করাও তাদের কর্তব্য। বড়দের মনে কষ্ট হয় এমন কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। কেননা বড়দের আশীর্বাদ তাদের চলার পথের পাথেয়।
পিতামাতা যেন তাদের কোনো কাজে কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিতামাতার আশীর্বাদই একজন সন্তানের সবচেয়ে বড় সম্পদ। পিতামাতার আশীর্বাদ সন্তানকে উৎকর্ষের শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তাই তাদের এ সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের মানসিক বিকাশে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে যার যে কাজ ভালো লাগে সে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। বিতর্কচর্চা, আবৃত্তিচর্চা, বই পড়া, ভ্রমণ, ছবি তোলা, বিজ্ঞানচর্চা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে আরও তীক্ষè করে তোলা সম্ভব।
সামাজিক দায়িত্ব : সমাজের সবচেয়ে তরুণ ও সচেতন অংশ হচ্ছে ছাত্রসমাজ। পুরাতনকে, মিথ্যাকে, জরা-জীর্ণতাকে মুছে ফেলে, প্রাচীন সংস্কার ও গোঁড়ামিকে ঝেড়ে ফেলে একটি শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব আজকের ছাত্রসমাজের। ছাত্ররা তাদের সুন্দর মন এবং সুকুমার বৃত্তির অভিনব প্রকাশের সাহায্যে সমাজের পঙ্কিলতা দূর করতে পারে।
বিশ্বমানবতা এবং মানবিকতার বিজয় পতাকা ছাত্রদেরই হাতে। তারা তা সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। চির বঞ্চিত, বুভুক্ষু অনাহার ক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা শোনাতে পারে সান্ত¡নার বাণী। আশাহীন বুকে জাগাতে পারে আশা। ভাষাহীন বুকে দান করতে পারে প্রাণের স্পন্দন। সভা-সমিতি, সংঘ, স্কাউটিং এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক ফোরামের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা এ দায়িত্ব পালন করে থাকে।
উপসংহার : ছাত্রজীবনই জীবনের সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় থেকেই ছাত্রদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। তাই নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেই দেশ ও জাতির জন্য তারা গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবে।
২২. বই পড়ার আনন্দ
অথবা, পুস্তক পাঠের আনন্দ
[রা. বো. ১৪, দি. বো. ১৪, কু. বো. ১৩]
সূচনা : পৃথিবীতে নির্মল আনন্দের যে কয়েকটি উৎস রয়েছে তার মধ্যে বই অন্যতম। বই পড়লে জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটে। বই পাঠের মাধ্যমে মানুষ অনাবিল শান্তি খুঁজে পায়। অনুসন্ধিৎসু মানুষের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যায় বই পাঠ করে। সুসময় হোক কিংবা দুঃসময়, বই কখনো মানুষকে ছেড়ে যায় না। তাই আবহমানকাল ধরে মানুষ বইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে আসছে। তাই তো বিশ্বকে জানতে কবিগুরু লিখেছেন
“বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণ বৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে …………..।”
মানবজীবনে বইয়ের অবদান : মানবজীবনে বইয়ের অবদান অপরিসীম। বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে। যে ব্যক্তি যত বেশি বই পড়বে তার জ্ঞানের ভাণ্ডার তত বেশি সমৃদ্ধ হবে। প্রখ্যাত দার্শনিক টলস্টয়ের উক্তিটি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, “জীবনে তিনটি বস্তুই বিশেষভাবে প্রয়োজন, তা হচ্ছে বই, বই এবং বই।”
বই মানুষের মন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে উদার করে। জীবনের আসল রহস্য উন্মোচনে এবং নিজেকে বৃহত্তর জগতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে বইকেই বেছে নিতে হবে। মানুষের রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-বিষাদ সবকিছুই পুস্তক পাঠের মাধ্যমে দূরীভ‚ত করা যায়।
বিশ্বের মহামূল্যবান গ্রন্থগুলো পৃথিবীরে বিচিত্র জ্ঞানের ভাণ্ডার। মানবজীবনকে সার্থক করে তুলতে চাইলে জ্ঞান আহরণ করা জরুরি। আর এক্ষেত্রে সহায়তাকারী বন্ধু হিসেবে ভ‚মিকা রাখতে পারে বই। তাই মানবজীবনে বইয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
জ্ঞানের আধার হিসেবে বই : মানুষের অর্জিত বিভিন্ন জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের পাতায়। আমাদের চারপাশে জ্ঞানের বিভিন্ন উৎস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নানা বিষয়ের সকল জ্ঞানকে আমরা পুস্তক পাঠের মাধ্যমেই আত্মস্থ করতে পারি। অতীত কিংবা ভবিষ্যতের জ্ঞান, সাহিত্য, ভ‚গোল, আইন, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ের অজানা তথ্য আমরা জানতে পারি বই পড়ার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য।
তিনি বলেছেন, “মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।” “মানুষ বই পড়ার মাধ্যমে সকল কালের সকল মনীষীর সংস্পর্শে আসতে পারে। তাঁরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁদের রচিত নানা ধরনের বই পাঠ করে আমরা জীবনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হই।
চিত্ত প্রসারণে ও বুদ্ধির বিকাশ সাধনে বই : বই পড়ার উপকারিতার কথা বলাই বাহুল্য। বই কেবল নির্মল আনন্দের খোরাকই জোগায় না, মনের সংকীর্ণতাকে দূর করে বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতেও সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে। আনাতোল্ ফ্রাঁস বই পড়ার আনন্দে অভিভ‚ত হয়ে বলেছিলেন
“নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি,
ততই একটা একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।”
বই পড়লে আমাদের মনের দিগন্ত উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়। আমাদের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করে দেয়। প্রকৃত মানুষ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো যথার্থ জ্ঞানী হওয়া। আর প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী হতে হলে চিত্তের প্রসারণ এবং বুদ্ধির বিকাশ উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে বই-ই মানুষের চিত্ত ও বুদ্ধির বিকাশের জন্য যথেষ্ট। রাশিয়ার বিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির মতে, “আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছেই ঋণী।” তাই আমাদের চিত্তের প্রসারণ এবং বুদ্ধির স্বাধীনতার জন্য বই পাঠ করা জরুরি।
বহির্বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপনে বইয়ের ভ‚মিকা : ভ্রমণের মাধমে নানা দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, মানুষ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু কথায় আছে, ‘সাধ থাকলেও সাধ্য নেই’। মানুষের ক্ষেত্রে এ সত্যটি বেশ স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে। সে ইচ্ছে করলেই তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে না। তাই তার পৃথিবী ভ্রমণের ইচ্ছা অধরাই থেকে যায়।
তবে জ্ঞানপিপাসু লোকদেরকে অর্থের সীমাবদ্ধতা আটকে রাখতে পারে না। যারা ভ্রমণের ইচ্ছাকে হৃদয়ে লালন করে তাদের কাছে বই হতে পারে সকল সুখের চাবিকাঠি। একটি উত্তম বই বহির্বিশ্বের সাথে মানুষের যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। ঘরে বসেই সে জানতে পারে নিজের দেশকে এবং বহির্বিশ্বকে।
এর মাধ্যমে সে আনন্দ লাভ করে এবং জ্ঞানতৃষ্ণাকে তৃপ্ত করে। এ কারণেই ভিনসেন্ট স্টারেন্ট বলেছেনÑ “ডযবহ বি নুঁ ধ নড়ড়শ বি নুঁ ঢ়ষবধংঁৎব.” বহির্বিশ্বকে মানুষ তার হাতের মুঠোয় আনতে পারে বই পড়ার মাধ্যমে। তাই বহির্বিশ্বের সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনে বইয়ের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য।
বই পড়ার আনন্দ : মানুষ মাত্রই জগতের অফুরন্ত আনন্দের অংশীদার হতে চায়। কিন্তু জীবনে চলার পথে মানুষকে ঘিরে ধরে নানা দুঃখ-কষ্ট, হতাশা ও বিষাদ। এসব থেকে মুক্তি দিতে বই মানুষের জীবনে পথ্যের মতো কাজ করে। মনীষী বারট্রান্ড রাসেল বলেছেনÑ “সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভেতর আপন ভুবন তৈরি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া।
যে যত বেশি ভুবন তৈরি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়ানোর ক্ষমতা তার তত বেশি হয়।” এই ভুবন সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা রাখতে পারে বই। বই পড়ার আনন্দ নির্মল ও নিষ্কলুষ। মানুষকে সকল সংকীর্ণতা, অজ্ঞানতা এবং সংশয়ের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় বই। বই পড়লে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি জেগে ওঠে এবং মানুষ অনাবিল আনন্দের সংস্পর্শে আসতে পারে।
এ কারণেই কবি ওমর খৈয়াম বইকে ভাবতেন নিঃসঙ্গ জীবনের সহচর রূপে। নির্মল আনন্দ পাওয়ার যে কয়েকটি উৎস রয়েছে তা অনুসন্ধান করা মানুষের পক্ষে খুব সহজ নয়। কিন্তু বই সবসময় হাতের কাছেই পাওয়া যায়। তাই বই পড়ে আনন্দ লাভ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। বই পড়ে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আনন্দ অনুসন্ধান করা বুদ্ধিমান ব্যক্তিরই কাজ।
পাঠ উপযোগী বইয়ের স্বরূূপ : বই নির্মল আনন্দ ও নিষ্কলুষ জ্ঞানের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেও সব বইয়ের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। কেবল উৎকৃষ্ট মানের বই-ই মানুষের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী হওয়ার দাবিদার। পাঠককে তাই সঠিক বই নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যদি তার পছন্দ সঠিক হয় তবেই সে বই পাঠের প্রকৃত উপকার লাভ করতে পারবে।
কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল বই আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় এবং তাদের জ্ঞানকে করে আড়ষ্ট। যেসব বই বাস্তব জ্ঞান, নৈতিকতা, সামাজিকতা, জীবনাচার, সংস্কৃতি, দেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয় সেগুলোই পাঠ উপযোগী বই। এর পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, ভ্রমণকাহিনিমূলক বই, গোয়েন্দা কাহিনিনির্ভর বই, ইতিহাস, আইন ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত বইও পাঠ করা যায়।
সাধারণত বই পড়ার অভ্যাস যদি ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা যায় তবে তা ভবিষ্যতে কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুর পিতা-মাতাকে সঠিক ভ‚মিকা পালন করতে হবে। তাদের বই নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন শিশুতোষমূলক গ্রন্থ পাঠ করানোর মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটানো যায়। বই নির্বাচন যদি সঠিক হয় তবে জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্য সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়।
উপসংহার : একটি বই আবহমানকাল ধরে মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে। আনন্দপ্রাপ্তি এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য বই মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে ভ‚মিকা রাখতে পারে। একটি উত্তম বই মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখে। তাই পরিপূর্ণ আত্মিক তৃপ্তি লাভে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
২৩. চরিত্র
ভ‚মিকা : চরিত্রের ওপর নির্ভর করে মানুষের ব্যক্তিত্ব। ভালো চরিত্রের মাধ্যমে মানুষ সব গুণের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। ফলে চরিত্র ভালো হলে সেই ব্যক্তি সকলের কাছে আদরণীয় হয়ে ওঠে। কোনো ব্যক্তির আচরণ ও আদর্শের উৎকর্ষবাচক গুণ বোঝাতে চরিত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
উত্তম চরিত্র মানুষকে ন্যায়পথে, সৎপথে পরিচালিত করে। এই চরিত্রের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নিহিত। চরিত্র ভালো হলে মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে। আবার চরিত্র খারাপ হলে মানুষ তাকে ঘৃণা করে। চরিত্র অনুযায়ীই গঠিত হয় ব্যক্তিজীবন, যার প্রভাব পড়ে পরিবেশ ও সমাজের ওপর।
চরিত্রের ধারণা : মানুষের সামগ্রিক জীবনের কাজ-কর্মে, চিন্তা-ভাবনায়, ওঠা-বসা, আচার-আচরণে প্রকাশিত ভাবকেই চরিত্র বলে। গুরুজনের প্রতি ভক্তি, ন্যায়পরায়ণতা, আত্মসংযম ইত্যাদি নানা উৎকর্ষবাচক গুণের মাধ্যমে সচ্চরিত্রের প্রকাশ পায়। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে লুক্কায়িত অপকর্ম বা পশুত্ব চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলে তার মধ্যে দুশ্চরিত্রের ভাব প্রকাশ পায়।
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১-৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ৬-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১০-১৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১৬-২১ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১-১০ | PDF Download
চরিত্র গঠনের উপায় : সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সূত্র ধরেই শিশুর চরিত্র গঠিত হয়। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীর পরিবেশের মধ্য দিয়েও চরিত্র গঠিত হয়। শিশু যখন বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে এবং সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে তখনই তার চরিত্রের রূপ বিকশিত হতে থাকে।
সেজন্য এ অবস্থায় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বিশেষভাবে লক্ষ রাখা উচিত, এছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থা মানব চরিত্রের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সে যেরূপ পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে বাস করে, সাধারণত তার চরিত্র সেভাবেই গঠিত হয়।
চরিত্র গঠনে পারিবারিক পরিবেশ : চরিত্র গঠনে পারিবারিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। শিশুকাল ও শৈশবকালই হচ্ছে চরিত্র গঠনের উৎকৃষ্ট সময়। তাই বাসগৃহকে চরিত্র গঠনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করা হয়। শিশুকে সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহিত করা হলে তাতে সৃজনী প্রতিভা বিকশিত হয়। শিশুরা স্বভাবতই অনুকরণপ্রিয়।
তাই শৈশবে শিশুর কোমল হৃদয়ে যা প্রবিষ্ট হয় তা চিরস্থায়ী রূপ পরিগ্রহ করে। এজন্য শিশুর পরিবার যদি সৎ ও আদর্শবান হয় তাবে শিশুও সৎ ও আদর্শবান হতে বাধ্য। শিশুর জীবনে মহৎ গুণের সমাবেশ ঘটাতে হলে চাই সৎ সঙ্গ। আজকাল শিশুর ভালো-মন্দ চরিত্র গঠনে সুদূরপ্রসারী ভ‚মিকা রাখছে টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের মতো গণমাধ্যমে।
স্যাটেলাইটের বিভিন্ন চ্যানেলে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তার মধ্যে এমন অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে যা শিশুদের জন্য অনুপযোগী। তাই অভিভাবককে এদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এভাবে পারিবারিক পরিবেশ শিশুর চরিত্র গঠনে প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা রাখে।
চরিত্র গঠনে নিজের ভ‚মিকা : চরিত্র গঠনে ব্যক্তির নিজস্ব সাধনা ভ‚মিকা রাখতে পারে। বহুদিনের সাধনার ফলে মানুষ সচ্চরিত্রবান হয়ে উঠতে পারে। সাধনার মাধ্যমে সচ্চরিত্রবান হতে নিজেকে প্রত্যয়ী হতে হবে। বাস্তবজীবনে মানুষ নানা প্রয়োজনে তাড়িত হয়।
কিন্তু প্রলোভনে পড়লে মানুষ তার অমূল্য সম্পদ চরিত্রকে হারাতে পারে। তাই চরিত্রকে মজবুত করতে হলে নিজেকে সকল প্রলোভনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। দৃঢ় মনোবল নিয়ে তাকে সকল লোভ মোহ ত্যাগ করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে সে সচ্চরিত্র গঠনে সফল হবে বলে আশা করা যায়।
চরিত্র গঠনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সঙ্গীদের প্রভাব : মানবচরিত্র গঠনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি যেরূপ পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে বাস করে, সাধারণত তার চরিত্র সেভাবেই গঠিত হয়। সেজন্য সে যাতে পরিবারের বাইরে কুসংসর্গে মিশতে না পারে অথবা কুকার্যে লিপ্ত হতে না পারে, সেদিকেও অভিভাবকদের লক্ষ রাখা উচিত।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তাকে অন্যের সান্নিধ্য গ্রহণ করতে হয়, বন্ধু নির্বাচন করতে হয়। সৎ চরিত্রের প্রভাবে মানুষের পশুপ্রবৃত্তি ঘুচে যায়, জন্ম নেয় সৎ, সুন্দর ও মহৎ জীবনের আকাক্সক্ষা। আবার সঙ্গদোষে মানুষ কুসংসর্গে পড়ে নিজের অজ্ঞাতে পাপের পথে পরিচালিত হয়। তাই সঙ্গ নির্বাচনে আমাদের সতর্ক হতে হবে।
মহৎ চরিত্রের দৃষ্টান্ত : পৃথিবীতে যারা স্বীয় কর্মবলে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁরা সবাই ছিলেন চরিত্রবান ও আদর্শ মানব। আদর্শ মহাপুরুষ হযরত মুহম্মদ (সা.), মহামানব হযরত ঈসা (আ.) বা আধুনিককালের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হাজী মুহম্মদ মুহসীন, জগদীশ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ মহাপুরুষ চরিত্রবলেই জগতে অসাধ্য কর্মকে সহজতর করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভবপর করেছেন। তাই প্রত্যেক চরিত্রবান ব্যক্তির চরিত্রে একটা বিশেষ ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। তাঁদের অনমনীয় সেই ব্যক্তিত্ব দিয়ে তারা চারপাশের বিপন্ন পরিবেশকে সুস্থ করেছেন।
সমাজে চরিত্রবান ব্যক্তির অবস্থান : চরিত্রহীন লোক পশুর চেয়েও অধম। স্বাস্থ্য, অর্থ এবং বিদ্যাকে আমরা মানবজীবনের অপরিহার্য উপাদান বিবেচনা করি। কিন্তু জীবনক্ষেত্রে এগুলোর যতই অবদান থাকুক না কেন, এককভাবে এগুলোর কোনোটিই মানুষকে সর্বোত্তম মানুষে পরিণত করতে সক্ষম নয়। কারণ, সমৃদ্ধিময় জীবনের জন্য চরিত্র প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ব্যক্তি চরিত্রবান না হলে সকলে তাকে অত্যন্ত নীচু মানসিকতার লোক মনে করে।
চরিত্র গঠনের গুরুত্ব : প্রকৃত মানুষ হতে হলে অনেক সাধনা করতে হয়। তাই এ সাধনা বা প্রয়াসের প্রথম পদক্ষেপ হলো তার চরিত্র গঠনের সাধনা। চরিত্র গঠনের গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, জীবনের যাবতীয় সফলতার পূর্বশর্ত হিসেবেই একে বিবেচনা করা যায়।
ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, সফল, আত্মপ্রত্যয়ী এবং জয়ী হওয়ার জন্য চরিত্রের প্রয়োজন। সামাজিক জীবনে প্রভাবশালী এবং বরণীয় হওয়ার জন্য ভালো চরিত্রের প্রয়োজন। ভালো চরিত্রের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য।
উপসংহার : সমাজে ভালো চরিত্রের অবস্থান অনেক ওপরে। প্রাচুর্যের বিনিময়ে সেই চরিত্রকে কেনা যায় না। ধনসম্পত্তির অভাবে মানুষ অতৃপ্ত থাকতে পারে, কিন্তু যার চরিত্র প্রকৃত অর্থে সচ্চরিত্রের গুণ লাভ করেছে সে চিরপূর্ণ ও চিরতৃপ্ত মানুষ।
নশ্বর এই পৃথিবীতে বিশ্বস্রষ্টার সৃষ্টির সার্থকতা রয়েছে চরিত্রবান মানুষের ভালো কাজের মধ্যে। চরিত্র মাধুর্য মানুষকে অনন্যতা দান করে। চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজের শ্রেষ্ঠ অলংকার। মানবজীবনে চরিত্রর মতো বড় অলংকার আর নেই। তাই আমাদের সকলকেই চরিত্রবান হওয়ার সাধনা করতে হবে।
২৪. সংবাদপত্র
[চ. বো. ১৩, য. বো. ১২]
ভ‚মিকা : বর্তমানে সংবাদপত্র মানুষের অপরিহার্য সঙ্গী। প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বিরহ-ব্যথার বার্তা বহন করে সংবাদপত্র। প্রতিদিন সারা বিশ্বের বার্তাসহ সংবাদপত্র আমাদের দ্বারে দ্বারে উপনীত হয় বলে, মানবজীবনের সঙ্গে সংবাদপত্রের এত বেশি সম্পৃক্ততা।
সংবাদপত্র হলো সারা বিশ্বের একটা দর্পণস্বরূপ। বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে এক পলকে তা ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে সংবাদপত্রের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক-বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধ।
সংবাদপত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : সংবাদপত্র সর্বপ্রথম কোথায় উৎপত্তি হয়েছিল তার সঠিক তথ্য অজানা। তবে ধারণা করা হয়, চীন দেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে সম্ভবত ইতালি প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করে।
তবে চীনেই প্রথম কাগজ ও মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে মোগল শাসনামলে রাজ্য পরিচালনার সুবিধার্থে হস্তলিখিত সংবাদপত্রের প্রচলন ঘটেছিল। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের ফলে সংবাদপত্র জগতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসে।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের ইতিহাস : বাংলাদেশে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে সর্বপ্রথম সর্বসাধারণের জন্য সংবাদপত্রের প্রচলন করা হয়। জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় শ্রীরামপুর মিশন থেকে বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’ ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়।
বাঙালি পরিচালিত প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক গেজেট’ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ ১৮৩১ সালে সাপ্তাহিক এবং ১৮৩৯ সালে দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদপত্রের প্রকাশিত বিষয়সমূহ : সংবাদপত্রে বিশ্বের খবরাখবরের পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক পরিস্থিতি প্রভৃতি নিয়ে নিয়মিত ফিচার, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। চিঠিপত্র, ব্যবসা-বাণিজ্যের হালচাল, শেয়ারবাজার, নানা বিজ্ঞাপনও সংবাদপত্রে সন্নিবেশিত হয়।
এছাড়া আজকাল বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন, ফটো ফিচার সংবাদপত্রে নতুন মাত্রা এনেছে। নিয়মিত খবরাখবর পরিবেশনের পাশাপাশি বর্তমানে সংবাদপত্রগুলোতে থাকে নানা সাপ্তাহিক আয়োজন।
আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের প্রভাব : আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের গভীর ও ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংবাদপত্র একদিকে যেমন জাতীয় তেমনি আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশন করছে। ফলে এর মাধ্যমে জনগণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা তথ্যের সাথে পরিচিত হয়।
আবার এর সম্পাদকীয় মন্তব্য তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়। এভাবে জনগণ নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয়। ফলে জনমত গঠনের সুযোগ পাওয়া যায়। সুষ্ঠুভাবে গণতন্ত্র পরিচালনায় সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। এর মাধ্যমে জনসাধারণ রাষ্ট্রের নীতি ও কর্মপন্থার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে, আবার সংগঠনমূলক আলোচনা করার সুযোগও পায়।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র : বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮০০-এর বেশি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক, প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল, দৈনিক ইনকিলাব, সংবাদ, জনকণ্ঠ, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, দিনকাল, মানবজমিন, যায়যায়দিন, নয়াদিগন্ত, বাংলাদেশ অবজারভার, মর্নিং নিউজ ইত্যাদি পত্রিকা এবং বেগম, বিচিত্রা, আনন্দভুবন, আনন্দ আলো, সচিত্র বাংলাদেশ, রোববার, সপ্তাহের বাংলাদেশ, অনন্যা, অন্যদিন, আনন্দধারা ইত্যাদি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা বিশেষ উল্লেযোগ্য।
জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব : একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। সংবাদপত্র মানুষকে বিশ্ব-পরিস্থিতি ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে আধুনিক যোগ্য নাগরিকে পরিণত করে। দেশ-দেশান্তরের রাজনীতি-অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়কসংক্রান্ত আলোচনা তার চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করে। অশিক্ষিত, অসচেতন মানুষের দেশে গণতন্ত্র কখনও সফল হতে পারে না।
সংবাদপত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভালোমন্দ দিক বিশ্লেষিত ও আলোচিত হয়, যা দেশের নাগরিককে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বা পছন্দের রাজনৈতিক দল বেছে নিতে সহায়তা করে। সংবাদপত্র দেশে নানা নীতিনির্ধারণী বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করে; সে সম্পর্কে বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের মতামত প্রকাশ করে।
সরকার ও বিরোধী দলের ভালোমন্দ কাজ নিয়ে সমালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা দেখেছি আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংবাদপত্র কি শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন করছে। উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রসমূহ জনমত গড়ে তুলে এ দেশবাসীকে নানা আন্দোলনে সক্রিয় করে তুলেছে।
সংবাদপত্রের ক্ষতিকর দিক : সংবাদপত্রের মধ্যে মহত্তর সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ জনসেবার মহৎ উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে সংবাদপত্রের পরিচালকবৃন্দ ও সাংবাদিকগণ দলগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির মানসে সংবাদপত্রকে কখনো কখনো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। জাতীয় জীবনে এর প্রভাব তখন মারাত্মক হয়ে ওঠে।
আবার দেশের মধ্যে উগ্র সা¤প্রদায়িকতা ও প্রাদেশিকতা, কোন্দল ও বিদ্বেষের ভাব, নানা রূপ কুৎসা ও মিথ্যা রটনার জন্য অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদপত্রই দায়ী। ক্ষুদ্র তুচ্ছ স্বার্থ সাধনের বশবর্তী হয়ে সাংবাদিকগণ যখন বিবেক বিসর্জন দেয়। তখন সংবাদপত্র জনসাধারণের অকল্যাণের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়? স্বার্থবুদ্ধির ফলে সাংবাদিকরা মিথ্যাচার করলে এর পরিণাম কী ভয়াবহ হতে পারে তা অনুমান করা যায় না।
উপসংহার : বর্তমানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আধুনিক যুগে স্যাটেলাইট, টিভি, ইন্টারনেট প্রভৃতি সংবাদপত্রের প্রতি যোগী হয়ে উঠেছে।
আজ যে ঘটনা ঘটছে তা মুহূর্তেই মানুষ জানতে পারছে বিবিসি কিংবা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে, যা খবরের কাগজে পাওয়া যায় পরের দিন। তাই বলে ইলেকট্রনিক মিডিয়া সংবাদপত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ তা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বরং এগুলো প্রায়ই সংবাদপত্রের সহায়করূপে কাজ করে।
তাই আমরা দেখতে পাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোতে সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা বরং তুলনামূলকভাবে বেশি। সংবাদপত্র সচেতন মানুষ গড়ার কাজে একনিষ্ঠ থাকে, সুবিধাবাদী মানুষের হাতিয়ারে পরিণত না হয় তাহলে এর প্রয়োজন কখনও শেষ হবে না।
২৫. দেশ ভ্রমণ
ভ‚মিকা : মানুষ জন্মসূত্রেই স্বাধীনচেতা। মানুষ সীমাবদ্ধ গণ্ডির বাইরে গিয়ে অজানাকে জানতে চায়। এ পৃথিবীতে প্রকৃতির অফুরন্ত সম্ভার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, বন-বনানী সৌন্দর্যের অপরূপ ডালি সাজিয়ে রেখেছে এ পৃথিবীতে।
মানুষ অসীম আগ্রহ আর অনন্ত উৎকণ্ঠা নিয়ে এ নৈসর্গিক দৃশ্যকে অবলোকন করার জন্য দেশ ভ্রমণে ছুটে চলছে। এ যেন এক দুরন্ত নেশা। এর মাঝে যে রোমাঞ্চ রয়েছে তার স্বাদই আলাদা। জীবনের আনন্দকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগের জন্য, জীবন ও জগৎকে জানার জন্য, দেশে দেশে বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ ভ্রমণ অপরিহার্য।
প্রাচীনকালে দেশ ভ্রমণ : ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রাচীনকাল থেকেই দেশভ্রমণের অস্তিত্ব লক্ষণীয়। প্রাচীনকালে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। সমুদ্রপথে তখন পাল তোলা জাহাজ চলত আর স্থলপথে ঘোড়ায় চড়ে অথবা পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণ করতে হতো।
প্রাচীনকালে আকাশপথে চলাচলের কথা মানুষ ভাবতেও পারত না। এ সকল দিক বিবেচনা করলে অনুধাবন করা যায় যে, প্রাচীনকালে দেশ ভ্রমণ অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। একমাত্র দুঃসাহসী ও কষ্টসহিষ্ণু সাহসীরাই দেশ ভ্রমণ করে জ্ঞানার্জন করেছেন।
আধুনিককালে দেশ ভ্রমণ : দেশ ভ্রমণের জন্য আধুনিক যুগ মানুষকে অত্যন্ত সুবিধা এনে দিয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার অভ‚তপূর্ব উন্নয়নের ফলে জল, স্থল ও আকাশপথে মানুষ স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষ পাড়ি দিতে পারে হাজার হাজার মাইল পথ।
তাই দেশ ভ্রমণ এখন আনন্দদায়ক ও আরামদায়ক। ফলে আধুনিককালে দেশ ভ্রমণের গণ্ডি হয়েছে প্রসারিত। প্রতিদিনই মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য ও জ্ঞানার্জনের জন্য ছুটে যাচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শুধু সৌন্দর্য উপভোগের জন্য হাজার হাজার মানুষ সুদূর ইউরোপ থেকে ছুটে আসছে ভারতীয় উপমহাদেশে।
অবলোকন করছে তাজমহল, উপভোগ করছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপার সৌন্দর্য। আবার এশিয়া থেকেও মানুষ ইউরোপ অমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
দেশভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা : পৃথিবীতে অসংখ্য জাতি ও স¤প্রদায়ের বাস। এ জাতিগুলো পৃথিবীর সর্বত্র বিক্ষিপ্তভাবে বাস করছে। এমন বহু জাতি আছে, যাদের সঙ্গে দৈহিক বর্ণ, আচার-অনুষ্ঠান, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি প্রভৃতিতে আমাদের কোনো মিল নেই। দেশ-ভ্রমণ ব্যতিরেকে আমরা তাদের সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞানলাভ করতে পারি না।
শুধু গ্রন্থ পাঠ করেই আমরা যথাযথ ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও সামাজিক জ্ঞান অর্জন করতে পারি না। এ সকল বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞানার্জনের জন্য দেশ ভ্রমণ আবশ্যক। কবি, শিল্পী ও চিত্রকরগণেরও কর্তব্য দেশ ভ্রমণ করে নানা দেশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করা। এতে তাঁরা নিজে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতে পারবেন। দেশ পর্যটনের ফলে ভূগোলতত্ত¡ ও ভ‚বিদ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়।
প্রাচীনকাল হতে বহু পর্যটক, ভ‚তত্ত¡বিদ নানা দেশ ভ্রমণ করে ঐ সকল দেশ সম্বন্ধে নানা কথা লিপিবদ্ধ করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। হিউয়েন সাঙ, ফা-হিয়েন, ইবনে বতুতা প্রভৃতি বিখ্যাত পর্যটক সেকালের ভারত পরিভ্রমণ করে যে সকল মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন, সেগুলো ইতিহাসের প্রধান উপকরণ। ভ‚তত্ত¡বিদ্গণ বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে বিভিন্ন জনপদ, দুস্তর মরুভ‚মি দুরারোহ গিরিশৃঙ্গ, গভীর অরণ্য পর্যটন করেছেন বলে আমরা জগতের বহু তথ্য জানতে পেরেছি।
দেশ ভ্রমণের উপায় : অতীতের তুলনায় বর্তমানে দেশ ভ্রমণ সহজ, তবে ব্যয়সাপেক্ষ। প্রচুর পরিমাণ অর্থ থাকলে পৃথিবীর ঐতিহাসিক স্থানগুলো সহজেই দেখে আসা যায়। কিন্তু এ অর্থ জোগাড় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজসাধ্য নয়। দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বে আর একটি জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। তাহলো বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা।
আগেকার দিনে দেশ ভ্রমণের জন্য কোনো পাসপোর্ট ভিসার দরকার হতো না। বিশ্ব বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাঙ, ফাহিয়েন প্রমুখ ব্যক্তিগণ দেশের পর দেশ মুক্ত বিহঙ্গের মতো চষে বেড়িয়েছেন। যেসব দেশে তাঁরা গিয়েছেন সেসব দেশের মানুষের কাছে তাঁরা প্রচুর সমাদর পেয়েছেন।
আজকের বিশ্বে বেড়ানোর সুবিধা হয়তো আছে, কিন্তু সেকালের মানুষের মতো প্রাণের অমন অফুরন্ত ভাণ্ডার আজ নেই। আজকাল বাইসাইকেলে করেও অনেকে বিশ্বভ্রমণ করছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ইবনে বতুতা কিংবা হিউয়েন সায়ের সুযোগ্য উত্তরসূরিরা বসে নেই।
দেশ ভ্রমণের উপকারিতা : দেশ ভ্রমণ করলে আমাদের অনেক উপকার হয়। দেশ ভ্রমণ করলে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, কার্যদক্ষতা বাড়ে এবং মনের সংকীর্ণতা দূর হয়। যারা ক‚পমণ্ড‚ক, তারা আপনার গৃহ সীমার বাইরে গমন করে না; ফলে তাদের জ্ঞান প্রসারিত হয় না, হৃদয় সংকীর্ণ ও অনুদার থাকে। পক্ষান্তরে, নানা দেশ ভ্রমণ করলে বহুদর্শিতা লাভ করা যায়। বহুদর্শিতা থাকলে সাহস বৃদ্ধি পায় এবং অভিজ্ঞতার সাহায্যে সে কার্যে সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারি।
দেশ পর্যটনের ফলে আমরা ব্যবসায়-বাণিজ্যের কৌশল ও তত্ত¡ সম্যকরূপে অবগত হতে পারি। কোন্ দেশে কোন্ দ্রব্য অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়, কোন্ দেশে কোন্ দ্রব্যের চাহিদা বেশি দেশ ভ্রমণের ফলে তা বিশেষভাবে জানা যায়। দেশ পর্যটনের ফলে এ সকল বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান জন্মে।
দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ : শিক্ষার সত্যিকারের বিষয় জীবন ও প্রকৃতি। প্রকৃতির অফুরন্ত পাঠশালা থেকে পাঠ গ্রহণ করতে হলে মানুষকে অবশ্যই ঘর থেকে বেরোতে হয়। বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ আঙিনা কিংবা নিজস্ব গণ্ডির বাইরেও রয়েছে বিরাট পৃথিবী। বৈচিত্র্যময় এ অনন্ত পৃথিবী সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলে মানুষের জ্ঞান পূর্ণ হয় না।
এ সুন্দর ভুবনের নানা স্থানে রয়েছে যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, অসংখ্য জনপদে ছড়িয়ে আছে যে বিচিত্র পরিবেশ, বহুমাত্রিক জীবন তা নিজের চোখে না দেখলে অভিজ্ঞতার ঝুলি কখনোই পূর্ণ হয় না। মানুষের জ্ঞানইন্দ্রিয় প্রধানত দুটিÑ চোখ এবং কান। চোখ দিয়ে আমরা দেখি আর কান দিয়ে শুনি।
দেখা ও শোনা ছাড়া শিক্ষা বা জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া কখনো সম্পূর্ণ হয় না। একমাত্র ভ্রমণই আমাদের জন্য এ দুর্লভ সুযোগ এনে দিতে পারে। তাই ভ্রমণ শিক্ষার প্রয়োজনীয় অঙ্গ। এজন্য ইউরোপ এবং আমেরিকায় ভ্রমণকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উপসংহার : প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে আধুনিককালে রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীনকালের ন্যায় দেশ পর্যটনে অধিক অর্থ বা সময় ব্যয় হয় না, কষ্টও করতে হয় অনেক কম।
আজকাল আমরা অনায়াসে পৃথিবীর যেকোনো অংশ ভ্রমণ করে এর প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্র্য দর্শন করে অভিজ্ঞতা ও আনন্দ লাভ করতে পারি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দেশভ্রমণের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। তা হলে ছাত্র-ছাত্রীগণ নানা দেশ ভ্রমণ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারবে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।