HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | PDF Download: বাংলা ১ম পত্রের ঐকতান কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের ঐকতান কবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবইনির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।
শিখন ফল
বই পড়ে পৃথিবীর নানা দেশের স্থান, নগর, রাজধানী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।
পৃথিবীর অনন্ত সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত মানবজীবন সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
বিশাল বিশ্বের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচয় লাভে মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানবে।
সাহিত্য সৃষ্টি এবং নিম্নশ্রেণির মানুষের সাথে কবির মিশতে না পারার দীনতা সম্পর্কে জানতে পারবে।
মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের জীবনবোধ সম্পর্কে অবগত হবে।
মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনে জ্ঞানের দীনতা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
প্রকৃতির ঐকতান সুরের সাথে মানুষের জীবনের সুরের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে।
ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সব মানুষ যে এক ও অভিন্ন এ সত্য অনুধাবন করতে পারবে।
কবির জীবনের নানা অসংগতি ও অতৃপ্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
মানুষকে বোঝার এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য অন্তরে অন্তর মেশানোর বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করবে।
চাষি, তাঁতি, জেলে ইত্যাদি নিম্নশ্রেণির মানুষের শ্রমে-চেষ্টায় কীভাবে সভ্যতা এগিয়ে চলছে তা অনুধাবন করতে পারবে।
পাঠ পরিচিতি
“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। কবির মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে কবিতাটি ‘ঐকতান’-নামে প্রথম প্রকাশিত হয়। “ঐকতান” অশীতিপর স্থিতপ্রজ্ঞ কবির আত্ম-সমালোচনা ; কবি হিসেবে নিজের অপূর্ণতার স্বতঃস্ফ‚র্ত স্বীকারোক্তি।
দীর্ঘ জীবন-পরিক্রমণের শেষ প্রান্তে পৌঁছে স্থিতপ্রজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ পেছন ফিরে তাকিয়ে সমগ্র জীবনের সাহিত্য সাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব খুঁজেছেন “ঐকতান” কবিতায়। এখানে তিনি অকপটে নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতার কথা ব্যক্ত করেছেন ।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কবি অনুভব করেছেন নিজের অকিঞ্চিৎকরতা ও ব্যর্থতার স্বরূপ। কবি বুঝতে পেরেছেন, এই পৃথিবীর অনেক কিছুই তাঁর অজানা ও অদেখা রয়ে গেছে। বিশ্বের বিশাল আয়োজনে তাঁর মন জুড়ে ছিল কেবল ছোট একটি কোণে। জ্ঞানের দীনতার কারণেই নানা দেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন গ্রন্থের চিত্রময় বর্ণনার বাণী কবি ভিক্ষালব্ধ ধনের মতো সযতেœ আহরণ করে নিজের কাব্যভাণ্ডার পূর্ণ করেছেন।
তবু বিপুলা এ পৃথিবীর সর্বত্র তিনি প্রবেশের দ্বার খুঁজে পান নি। চাষি ক্ষেতে হাল চষে, তাঁতি তাঁত বোনে, জেলে জাল ফেলে এসব শ্রমজীবী মানুষের ওপর ভর করেই জীবনসংসার এগিয়ে চলে। কিন্তু কবি এসব হতদরিদ্র অপাঙ্ক্তেয় মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সমাজের উচ্চ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছিলেন। সেখানকার সংকীর্ণ জানালা দিয়ে যে জীবন ও জগৎকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তা ছিল খণ্ডিত তথা অপূর্ণ।
ক্ষুদ্র জীবনের সঙ্গে বৃহত্তর মানব-জীবনধারার ঐকতান সৃষ্টি না করতে পারলে শিল্পীর গানের পসরা তথা সৃষ্টিসম্ভার যে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত হয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়, কবিতায় এই আত্মোপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে কবির। তিনি বলেছেন, তাঁর কবিতা বিচিত্র পথে অগ্রসর হলেও জীবনের সকল স্তরে পৌঁছাতে পারে নি।
ফলে, জীবন-সায়াহ্নে কবি অনাগত ভবিষ্যতের সেই মৃত্তিকা-সংলগ্ন মহৎ কবিরই আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন, যিনি শ্রমজীবী মানুষের অংশীদার হয়ে সত্য ও কর্মের মধ্যে সৃষ্টি করবেন আত্মীয়তার বন্ধন।
“ঐকতান” কবিতায় যুগপৎ কবির নিজের এবং তাঁর সমকালীন বাংলা কবিতার বিষয়গত সীমাবদ্ধতার দিক উন্মোচিত হয়েছে।
কবিতাটি সমিল প্রবহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। কবিতাটিতে ৮+৬ এবং ৮+১০ মাত্রার পর্বই অধিক। তবে এতে কখনো-কখনো ৯ মাত্রার অসমপর্ব এবং ৩ ও ৪ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব ব্যবহৃত হয়েছে।
কবি পরিচিতি
নাম ও পরিচয় প্রকৃত নাম : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ছদ্মনাম : ভানুসিংহ ঠাকুর।
জন্ম তারিখ জন্ম তারিখ : ৭ মে, ১৮৬১ খ্রি. (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)।
জন্মস্থান : জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবার, কলকাতা, ভারত।
বংশ পরিচয় পিতার নাম : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মাতার নাম : সারদা দেবী।
পিতামহের নাম : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
শিক্ষাজীবন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যকালে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেও স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেন নি। ১৭ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড গেলেও কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নি। তবে গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জনে কোনো ত্র“টি হয় নি।
পেশা ও কর্মজীবন ১৮৮৪ খ্রি. থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার আদেশে বিষয়কর্ম পরিদর্শনে নিযুক্ত হন এবং ১৮৯০ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি দেখাশুনা করেন। এ সূত্রে তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।
সাহিত্য সাধনা কাব্য : মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, গীতাঞ্জলি, বলাকা, পূরবী, পুনশ্চ, বিচিত্রা, সেঁজুতি, জন্মদিনে, শেষলেখা বিশেষ উলেখযোগ্য।
উপন্যাস : গোরা, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, চোখের বালি, নৌকাডুবি, যোগাযোগ, রাজর্ষি, শেষের কবিতা প্রভৃতি।
কাব্যনাট্য : কাহিনী, চিত্রাঙ্গদা, বসন্ত, বিদায় অভিশাপ, বিসর্জন, রাজা ও রাণী প্রভৃতি।
নাটক : অচলায়তন, চিরকুমার সভা, ডাকঘর, মুকুট, মুক্তির উপায়, রক্তকরবী, রাজা প্রভৃতি।
গল্পগ্রন্থ : গল্পগুচ্ছ, গল্পস্বল্প, তিনসঙ্গী, লিপিকা, সে, কৈশোরক প্রভৃতি।
ভ্রমণ কাহিনী : জাপানযাত্রী, পথের সঞ্চয়, পারস্য, রাশিয়ার চিঠি, য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরী, য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা নোবেল পুরস্কার (১৯১৩), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯১৩), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯৪০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯৩৬)।
মৃত্যু মৃত্যু তারিখ : ৭ আগস্ট, ১৯৪১ খ্রি. (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)।
উৎস পরিচিতি
“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। কবির মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে কবিতাটি ‘ঐকতান’ নামে প্রথম প্রকাশিত হয়।
বস্তুসংক্ষেপ
‘ঐকতান’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ পর্যায়ের লেখা কবিতা। ঐকতান শব্দের অর্থ হচ্ছে বহু সুন্দরের সমন্বয়ে এক সুরঝংকার বা সম্মিলিত সুর। কবিতায় সেই সুর ও সুন্দরের সমন্বয় ঘটেছে। এ কবিতায় জগৎ ও জীবন সম্পর্কে কবির গভীর উপলব্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।
‘ঐকতান’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবন-দর্শন, ভাব-ভাবনা, বোধ-বিশ্বাস, অজ্ঞতা-অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। জগতের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। সেই চলার পথে জীবনের নানা রং, হাসি, আনন্দ-বেদনা তাকে ছুঁয়ে যায়।
কবি সেই মানুষদেরই একজন। তিনিও তাদের মতো জীবন প্রত্যাশা করেন, তাদের সাথে মিশে গিয়ে তাদের অন্তরের মানুষ হয়ে উঠতে চান। কিন্তু সমাজ, সংস্কার, বিশ্বাস, আভিজাত্যের দেয়াল তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জাত-ধর্মের, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের কারণে চাষা, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি নিচু শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মিশতে না পারায় তিনি বেদনাহত।
এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে কবি মাটি-মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে যারা বাণী রচনা করবেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কবি নিজের জ্ঞানের দীনতার কথা স্বীকার করে ভিক্ষালব্ধ ধনে তা পূর্ণ করার কথা বলেন। অপরিচিত বিশাল বিশ্বের আয়োজনের সামান্য অংশই তাঁর দৃষ্টি ধারণ করেছে। বহুমূল্য সুন্দর জগতের অনেক কিছুই তাঁর অদেখা, অজানা রয়ে গেছে।
অজ্ঞতা, অক্ষমতার জন্য জগতের কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণে তাঁর যে দীনতা, তা যেন জগতের কবি-সাহিত্যিকদের স্পর্শ না করে। খ্যাতির মোহে পড়ে তাঁরা যেন অন্ধ হয়ে না যায়। মানব কল্যাণে তারা যেন নির্মোহ থাকেন। ‘ঐকতান’ কবিতায় কবি মূলত বিশাল বিশ্বের আয়োজনের সাথে নিজের ক্ষুদ্র আয়োজনকে একক করে দেখতে চেয়েছেন। জগতের বিচিত্র সুর ও সুন্দরের সমন্বয় ও ঐক্য সাধন করতে চেয়েছেন। সেখানে মানবতার কল্যাণচিন্তা নিহিত।
তিনি নিজের অজ্ঞতা দূর করতে জ্ঞানের সাধনায় যেখানে যে অমূল্য ধন পান তাই সংগ্রহ করেন। তিনি মিথ্যা বা মেকি দিয়ে, শুধু বাইরের আয়োজন দিয়ে তাঁর ভিতরের শূন্যতাকে আড়াল করতে চান না। কবির হৃদয় মানবতাবোধে উন্নীত।
তিনি চাষা, জেলে, তাঁতিদের প্রতি গভীর মমতা অনুভব করেন। তাদের সাথে অন্য সবার মতো মিশতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে সাহিত্যের সংগীত সভায় একতারা হাতে দীনহীন বাউলের মর্যাদা দাবি করেন। আর যাঁরা সেই মর্যাদা দিবেন, তাদের তিনি শ্রদ্ধাভরে নমস্কার জানান।
নামকরণ
নামকরণ হলো যেকোনো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তাই অন্তর্নিহিত ভাব বা সুরের ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘ঐকতান’। এ ঐকতান প্রকৃতির অন্তঃসুরের, সব স্তরের মানুষের সৌহার্দ্যরে, সাহিত্য ও সংগীতের কল্যাণ বীণার।
প্রকৃতির সবকিছুর সাথে রয়েছে পরস্পর অন্তসম্পর্ক, রয়েছে সুরের মিল। কিন্তু মানুষের মধ্যে রয়েছে গুণগত, পেশাগত, স্তরগত নানা বৈচিত্র্য। কবি তাই বলেছেনÑ “বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।” যেখানে যা পান কুড়িয়ে এনে তাঁর জ্ঞানের দীনতা পূরণ করেন।
পৃথিবীর কবি হয়েও তাঁর ‘এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক, রয়ে গেছে ফাঁক।’ অথচ ‘প্রকৃতির ঐকতান স্রোতে। নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে।’ কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন ‘আমার কবিতা’ আমি জানি/গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সর্বত্রগামী।’ কেননা, শ্রমজীবী মানুষের কাছে,
অন্তজ শ্রেণির অসহায় মানুষের কাছে তিনি যেতে পারেন নি। এমনকি ‘একতারা যাহাদের……..মূক যারা দুঃখে সুখে নতশির’ তাদেরকেও তুলে আনতে পারেন নি তার গানে-সাহিত্যে। কারণ ‘অন্তর মিশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়’, যা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয় নি।
এ ব্যর্থতা স্বীকার করে কবি বলেনÑ ‘নিজে যা পারি না দিতে, নিত্য আমি থাকি তাঁর খোঁজে।’ কবি তাই পথ চেয়ে থাকেনÑ ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি/সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।’ সে উদ্দেশ্য পূরণের জন্যে নির্বাক মনের মর্মের বেদনা উদ্ধার করে, প্রাণহীন, গানহীন এদেশের অবজ্ঞার তাপে নিরানন্দ জীবনরসে পূর্ণ করে দিতে চান। যাতে সাহিত্যের ঐকতান সংগীত সভায় সবার কণ্ঠেই ঐকতান ধ্বনিত হয় একই কথায়, একই গানে, একই সুরে।
যাতে কাছে থেকে দূরে যারা, তারা তাদের নিজেদের খ্যাতিতেই মর্যাদাবান হয়ে ওঠে। তাহলেই সবার আনন্দের সাথে আনন্দ ভোগ করে কবিও হয়ে উঠবেন প্রাণবন্ত ও প্রাণস্ফূর্ত।
প্রকৃতি আর মানুষের অন্তর্লীন সুর একাকার হয়ে যে ঐকতান সৃষ্টি করে, তা সব মানুষের কণ্ঠের সাথে একাত্ম হলেই সে ঐকতান সার্থক হয়। সে ঐকতানের প্রত্যাশায় কবি অধীর উদ্বেল হয়ে আছেন। কাজেই বিষয়ের অন্তর্নিহিত ভাবের আলোকে কবিতার নামকরণ ‘ঐকতান’ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
শব্দার্থ ও টীকা
বিপুলা: বিশাল প্রশস্ত। এখানে নারীবাচক শব্দ হিসেবে বিপুলা বলে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে।
‘বিশাল বিশ্বের আয়োজন;: মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র
তারি এক কোণ।’: জীব ও জড়-বৈচিত্র্যের বিশাল সম্ভার নিয়ে এই বিশাল বিশ্বজগৎ। কিন্তু কবির মন জুড়ে রয়েছে তারই ছোট একটি কোণ।
‘যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।’: কবি তাঁর কবিতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সম্পদ কুড়িয়ে আনেন।
‘জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে পূরণ করিয়া লই যত পারি
ভিক্ষালব্ধ ধনে।’: নানা সূত্র থেকে জ্ঞান আহরণ করে কবি নিজের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন।
স্বরসাধনা: এখানে সুর বা সংগীত সাধনা বোঝানো হয়েছে।
‘এই স্বর সাধনায় পৌঁছিল না
বহুতর ডাক রয়ে গেছে ফাঁক।’: কাব্যসংগীতের ক্ষেত্রে কবি যে স্বরসাধনা করেছেন তাতে ঘাটতি রয়ে গেছে।
ঐকতান: বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট সুর, সমস্বর। এখানে বহু সুরের সমন্বয়ে এক সুরে বাঁধা পৃথিবীর সুরকে বোঝানো হয়েছে।
‘অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের / চিরনির্বাসনে সমাজের উচ্চ মঞ্চে
বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।’: সম্মানবঞ্চিত ব্রাত্যজনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজের উচ্চ মঞ্চে কবি আসন গ্রহণ করেছেন। তাই সেখানকার সংকীর্ণ জানালা দিয়ে বৃহত্তর সমাজ ও জীবনকে তিনি দেখতে পারেন নি।
‘মাঝে মাঝে গেছি আমি / ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে, / ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি
ছিল না একেবারে।’: মাঝে মধ্যে কবি ব্রাত্য মানুষের পাড়ায় ক্ষণিকের জন্য উঁকি দিয়েছেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগসূত্র রচনা সম্ভব হয় নি।
‘জীবনে জীবন যোগ করা / না হলে কৃত্রিম পণ্যে
ব্যর্থ হয় গানের পসরা।’: জীবনের সঙ্গে জীবনের সংযোগ ঘটাতে না পারলে শিল্পীর সৃষ্টি কৃত্রিম পণ্যে পরিণত হয়। ব্রাত্য তথা প্রান্তিক মানুষকে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে যোগ্য স্থান দিলেই তবে শিল্প সাধনা পূর্ণতা পায়।
‘এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক্ মনের’: রবীন্দ্রনাথ এখানে সেই অনাগত কবিকে আহŸান করছেন, যিনি অখ্যাত মানুষের, অব্যক্ত মনের জীবনকে আবিষ্কার করতে সমর্থ হবেন।
রস: এখানে সাহিত্যরস বা শিল্পরস বোঝানো হয়েছে। কবিরা রসসৃষ্টির জন্য কবিতা রচনা করেন। সেই রস সৃষ্টি হয় পাঠকের অন্তরে।
‘অবজ্ঞার তাপে শুষ্ক নিরানন্দ / সেই মরুভ‚মি রসে পূর্ণ
করি দাও তুমি।’: জেলে-তাঁতি প্রভৃতি শ্রমজীবী মানুষ সাহিত্যের বিষয়সভায় উপেক্ষার কারণে স্থানলাভে বঞ্চিত হওয়ায় সাহিত্যের ভুবন আনন্দহীন ঊষর মরুভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। মরুভ‚মির সেই উষরতাকে রসে পূর্ণ করে দেয়ার জন্য ভবিষ্যতের কবির প্রতি রবীন্দ্রনাথের আহবান।
উদ্বারি: ওপরে বা ঊর্ধ্বে প্রকাশ করে দাও। অন্তরে যে উৎস (এখানে রসের উৎস) রয়েছে, তা উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
সাহিত্যের ঐকতান / সংগীত সভায়: সাহিত্যে জীবনের সর্বপ্রান্তস্পর্শী সমস্বর বা ঐকতান।
‘একতারা যাহাদের তারাও
সম্মান যেন পায়’: অবজ্ঞাত বা উপেক্ষিত মানুষও যেন সম্মান লাভ করে সে-কথা বলা হয়েছে।
‘মূক যারা দুঃখে সুখে, / নতশির স্তব্ধ যারা
বিশ্বের সম্মুখে’: দুঃখ-সুখ সহ্য করা নির্বাক মানুষ, যারা এগিয়ে চলা পৃথিবীতে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | আনিসুজ্জামান | বাংলা ১ম পত্র | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-৯ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | PDF
বানান সতর্কতা
কীর্তি, সিন্ধু, ভ্রমণবৃত্তান্ত, ভিক্ষালব্ধ, পূরণ, স্রোত, বহুদূর, সংকীর্ণ, প্রাঙ্গণ, স্তব্ধ, গুণী, মূক, শুষ্ক, মরুভ‚মি, আত্মীয়, কৃষাণ, অবজ্ঞা, ব্যর্থ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।