HSC | এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে | জীবনানন্দ দাশ | PDF: বাংলা ১ম পত্রের এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
পাঠ-পরিচিতি
অনুপম সুন্দর এই দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ছড়িয়ে আছে এদেশের জনপদে-অরণ্যে। মধুকূপী, কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল তাদেরই কোনো-কোনোটির নাম।
এদেশের পূর্বাকাশে যখন সূর্য ওঠে মেঘের আড়াল থেকে তার রং হয় করঞ্জা রঙিন। আর এদেশের প্রতিটি নদ-নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সেই জল ফুরায় না কখনই। জলের দেবতা অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে স্রোতস্বিনী রাখে এদেশের অসংখ্য নদীকে।
প্রকৃতি আর প্রাণিকুলের বন্ধনে গড়ে উঠেছে চির অবিচ্ছেদ্য এক সংহতি। তাই হাওয়া যখন পানের বনে চঞ্চলতা জাগায় তখন দূর আকাশের শঙ্খচিল যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট ল²ীপেঁচাও মিশে থাকে প্রকৃতির গভীরে, অন্ধকারের বিচিত্ররূপ এই দেশে।
অন্ধকার ঘাসের ওপর নুয়ে থাকে লেবুর শাখা কিংবা অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায়। জন্ম দেয় শঙ্খমালা নামের রূপসী নারীর হলুদ শাড়ির বর্ণশোভা। কবির বিশ্বাস, পৃথিবীর অন্য কোথাও শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে না। কেননা, বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই নীল-সবুজে মেশা বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে এই অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।
কবি পরিচিতি
নাম জীবনানন্দ দাশ
জন্ম ও পরিচয় জন্ম : ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : বরিশাল।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : সত্যানন্দ দাশ
মাতার নাম : কুসুমকুমারী দাশ
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯১৫), ব্রজমোহন স্কুল, বরিশাল।
উচ্চ মাধ্যমিক : আই এ (১৯১৭), ব্রজমোহন কলেজ।
উচ্চতর ডিগ্রি : বিএ অনার্স (১৯১৯), কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ; এমএ ইংরেজি (১৯২১), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা ও কর্মজীবন অধ্যাপনা : কলকাতা সিটি কলেজ (১৯২২-১৯২৮); বাগেরহাট কলেজ (১৯২৯); দিলির রামযশ কলেজ (১৯২৯-১৯৩০); ব্রজমোহন কলেজ (১৯৩৫-১৯৪৬); খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২); বড়িষা কলেজ (১৯৫২); হাওড়া গার্লস কলেজ (১৯৫৩-১৯৫৪)।
সম্পাদনা : দৈনিক স্বরাজ।
সাহিত্য কর্ম কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, ‘ বেলা অবেলা, কালবেলা’ ইত্যাদি।
উপন্যাস : মাল্যবান, সতীর্থ।
প্রবন্ধগ্রন্থ : ‘কবিতার কথা’।
মৃত্যু মৃত্যু তারিখ : ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে।
বস্তুসংক্ষেপ
বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, তথা বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ। ‘রূপসী বাংলা’ কবির অন্যতম জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যের অন্তর্গত, ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিকে কবি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য ও নিসর্গের সাবলীল ছন্দকে অনন্যসাধারণ ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন।
এ কবিতায় বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যকে কবি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও করুণ বলে অভিহিত করেছেন। এখানের কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল গাছের স্নিগ্ধ ছায়া তৈরি করেছে মায়াময় পরিবেশ। সাগরের অবারিত জলরাশি, কর্ণফুলী-ধলেশ্বরী-পদ্মার স্রোতধারা বাংলার ঐশ্বর্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণে।
যেখানে গাঙচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় ডানা মেলে। ধানের স্বপ্ন জাগানিয়া গন্ধে ল²ীপেঁচা নতুনত্বের স্বপ্ন বোনে। কবি সারা পৃথিবীতে বাংলা প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের তুলনা খুঁজে পান না।
বাংলার সবুজ-শ্যামল বন-বনান্তরের বিচিত্রতায় কবি অনুপম আনন্দ উপলদ্ধি করেন। কবি দেখেছেন পলিবাংলার ঘাসের বুকে নুয়ে থাকে লেবুর শাখা, সুদর্শন ওড়ে সন্ধ্যার বাতাসে, শঙ্খমালা নাম্নী তাঁর কাল্পনিক রূপসী প্রিয়ার শরীরে যেন লেগে থাকে হলুদ শাড়ি, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না এই পৃথিবীতে: যাকে বিশালাক্ষী দেবী বর দিয়েছিলেন।
কবির অনুভবে তাঁর প্রিয়া তাই জন্ম নেয় এই নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বাংলা প্রকৃতির অপরূপ রূপময়তা এবং কবির গভীর মমতামাখা আবেগ প্রকাশিত হয়েছে শৈল্পিক মহিমায়।
নামকরণের সার্থকতা যাচাই
নামকরণ : বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’। কবির দৃষ্টিতে তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ এবং অনন্য। বাংলার অপরূপ প্রকৃতি তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের আবহে কবিকে মোহমুগ্ধ করে রাখে। কবি চোখ ফেরাতে পারেন না, স্বদেশের ক্ষুদ্র ও অবহেলিত জীবও তাঁর চোখে পরম সুন্দর, স্নিগ্ধ ও মনোরম। কবিকে প্রতি মুহূর্তে আকর্ষণ করে, আনন্দে উদ্বেল করে তোলে বাংলার প্রকৃতির মোহময় রূপ ও সৌন্দর্য।
কবির কাছে তার প্রিয় বাংলাদেশ ব্যর্থতার কান্নার মতো সবচেয়ে করুণ, করুণের মতো সবচেয়ে সুন্দর। তাঁর স্বদেশের স্থলভাগ সবুজ মধুকপি ঘামে ঢেকে আছে নরোম স্নিগ্ধতায়, সেখানে আছে কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজলের শ্যামল ছায়া, সেখানে ছড়িয়ে আছে ভোরের মেঘে ঢাকা সুর্যের নাটা রঙ অপার মুগ্ধতায়।
পৃথিবীর এই এক স্থান বাংলার গঙ্গাসাগরে জমে জলের দেবী বারুণীর মেলা আর জলের দেবতা বরুণ অবিরত জলের প্রবাহ হানে কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা, জলাঙ্গীতে। সেখানে পানের বনে চঞ্চল হাওয়ায় ওড়ে শঙ্খচিল, ধানের সোঁদা গন্ধের মতো মাতাল করে দেয় ল²ীপেঁচার অস্ফুট সুর।
সন্ধ্যার অন্ধকারে ঘাসের ওপর নুয়ে থাকা লেবুর শাখা, সন্ধ্যার বাতাসে ঘরের দিকে উড়ে যাওয়া সুদর্শনও যেন বাংলার অপরূপ রূপের নিদর্শন। কবির স্বপ্নের প্রেমিকা, প্রেমিকা রূপসী শঙ্খমালার শরীরের ওপর সন্ধ্যার অস্তায়মান সূর্যের শেষ হলদে রঙ খেলা করে। কিন্তু এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে তার উপস্থিতি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা, পরমা সুন্দরী বনদেবী বিশালাক্ষীর বরে সে জন্ম নিয়েছে ‘নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর।’
কবিতার শরীর জুড়ে চরণে চরণে রূপসী বাংলার অপরূপ রূপ চিত্রায়িত, যা কেবল এই পৃথিবীতে এক ও একক এবং অন্যন্য। তাই কবিতার নামকরণ ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ যথার্থ ও সুন্দর হয়েছে।
সার্থকতা : ‘আমি বাংলার রূপ দেখিয়াছি। তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’: এই রূপমুগ্ধ প্রত্যয়ের মধ্যে লীন হয়ে আছে ‘এই পৃথিবী এক’ রূপসী বাংলা। তাই এর প্রতিটি জীবন ও বস্তুর সাথে কবির নিবিড় সখ্যতা, এ সবের রূপ ও সৌন্দর্যের মধ্যে তার অন্তর্লীন মুগ্ধতা।
তাই মধুক‚পী ঘাস, কাঁঠাল-অশ্বত্থ বট, শঙ্খচিল, ল²ীপেঁচা, সুদর্শন, কর্ণফুলি:ধলেশ্বরী-জলাঙ্গী, ধানের গন্ধ ঘুরে ঘুরে আসে তার মনের পর্দায়। যা কিছু চোখে পড়ে তা-ই তাকে আকর্ষণ করে। বাংলার বুকে অনন্যরূপে ঝলকিত প্রতিটি উপাদান কবির কাছে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে;: বাংলায়।
শব্দার্থ ও টীকা
এই পৃথিবীতে…সুন্দর করুণ : কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, মমতারসে সিক্ত, সহানুভূতিতে আর্দ্র ও বিষণœ দেশ বাংলাদেশ।
নাটা : লতাকরঞ্চ; গোলাকার ক্ষুদ্র ফল বা তার বীজ।
সেখানে ভোরের…জাগিছে অরুণ : বাংলার প্রভাতের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা আঁকতে গিয়ে ভোরে মেঘের আড়াল থেকে গাঢ় লাল সূর্যের আলো বিচ্ছুরণ যেন ধারণ করেছে করমচা বা করমচা ফুলের রং।
বারুণী : বরুণানী, বরুণের স্ত্রী, জলের দেবী।
সেখানে বারুণী থাকে…অবিরল জল : জলে পরিপূর্ণ এদেশের অসংখ্য নদী-নালার স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্যের রূপ আঁকা হয়েছে এই পঙ্ক্তি দুটির মধ্যে।
সেইখানে শঙ্খচিল … অস্ফুট, তরুণ : জীবন আর প্রকৃতির ঐক্য ও সংহতিতে বাংলাদেশ একাকার। পানের বনে হাওয়ায় যে চঞ্চলতা জেগে ওঠে সেই চঞ্চলতা সম্প্রসারিত হয় দূর আকাশের শঙ্খচিলে। আর মিষ্টি ও ম্রিয়মাণ তরুণ ধানের গন্ধের মতো ল²ীপেঁচাও মিলেমিশে থাকে প্রকৃতির পরিবেষ্টনীতে।
বিশালাক্ষী : যে রমণীর চোখ আয়ত বা টানাটানা। আয়তলোচনা সুন্দরী নারী।
সুদর্শন : এক ধরনের পোকা।
বর : এখানে আশীর্বাদ অর্থে ব্যবহৃত।
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | আনিসুজ্জামান | বাংলা ১ম পত্র | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-৯| বাংলা ১ম | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | PDF
বানান সতর্কতা
মধুক‚পী, অশ্বত্থ, ল²ীপেঁচা, জলাঙ্গী, বারুণী, শঙ্খচিল, কর্ণফুলী, অরুণ, বিশালাক্ষী, রূপসী, সন্ধ্যা, ধলেশ্বরী, গঙ্গাসাগর।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।