Honours 1st: উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর> Honours 1st: উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর। Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ|বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ৪ : উন্নয়ন প্রশাসন | PDF: লোকপ্রশাসন পরিচিতি বিষয়টি হতে যেকোনো ধরনের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য রসায়ন বিষয়টি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ৪ : উন্নয়ন প্রশাসন
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসন কাকে বলে? উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : কোনো রাষ্ট্রের বিশেষ করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক, কৌশল, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতির উন্নতিসাধন করার অর্থই হচ্ছে উন্নয়ন প্রশাসন। লোকপ্রশাসনের মধ্যে উন্নয়ন প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলো স্বাধীন হতে শুরু করে। ফলে তারা আর্থসামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে এসব সমস্যার সমাধান ও প্রশাসনকে আরও গতিশীল করার প্রেক্ষিতে ‘উন্নয়ন প্রশাসন’ ধারণাটি উদ্ভাবিত হয় ।
Honours 1st | উন্নয়ন প্রশাসন‘র অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য : উন্নয়ন প্রশাসনের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় প্রশাসনের উদ্দেশ্য দৃষ্টিভঙ্গি ও আনুগত্যের মধ্যে। নিম্নে উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন : একটি দেশের সীমিত সম্পদ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করে কীভাবে দ্রুত উন্নয়ন সাধন করা যায় সেজন্য এটি বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রয়োজনে এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাই একে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণকারী প্রশাসন বলা হয়।
২. পরিবর্তন সাধন : উন্নয়ন প্রশাসনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো উন্নয়নশীল দেশের নানাবিধ সমস্যা সমাধান করার জন্য সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক পরিবর্তন সাধন করা। এ ধরনের প্রশাসন সনাতন প্রশাসন থেকে একদম ভিন্ন।
৩. ফলাফলভিত্তিক প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন হলো ফলাফলভিত্তিক প্রশাসন। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গৃহীত কাজের ফলাফল আশা অনুযায়ী না হলে তা পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এ প্রশাসনের কর্ম পরিকল্পনা অর্থনৈতিক, সামাজিক – ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত ।
৪. অগ্রাধিকার নির্বাচন : বর্তমানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে সম্পদের পরিমাণ অনেক সীমিত। কিন্তু তারা নানাবিধ সমস্যায় জড়িত হয়ে আছে। তাই এ সামান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন প্রশাসনে প্রয়োজনীয় কর্মসূচির অগ্রাধিকার নির্বাচন করতে হয়। সামান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রশাসন সর্বাধিক উপযোগ লাভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য এটি সমস্যাগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে এবং তা সমাধানে নিয়োজিত হয় ।
৫. দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকারবদ্ধতা : উন্নয়ন প্রশাসন প্রশাসনিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দায়বদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। আর্থসামাজিক অগ্রগতি সাধন করতে হলে এটিকে দায়বদ্ধ আচরণ করতে হয়। প্রশাসকরা জনগণের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত না হলেও রাষ্ট্র ও সাধারণ জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে দায়বদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হয়।
৬. সময়নিষ্ঠতা ও সময়সীমা নির্ধারণ : উন্নয়ন প্রশাসন সর্বদা নির্ধারিত সময়সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা না হলে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কার্যসম্পাদন করতে হয়। সময়নিষ্ঠ প্রশাসকও উন্নয়ন প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসকরা যাতে সময়নিষ্ঠ হয়ে কার্যসম্পাদন করে সেদিকেও উন্নয়ন প্রশাসনের নজর থাকে ।
৭. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা : যদিও রাজনীতি ও প্রশাসন একত্রে কাজ করে, তথাপি প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। কোনো প্রশাসক যাতে সরাসরি রাজনীতির সাথে, যুক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কাজ হলো সব রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সংগতি রেখে প্রশাসনিক লক্ষ্যে উপনীত হওয়া।
Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
৮. জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উন্নয়ন প্রশাসনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কেননা উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের দ্বারা ও তাদের কল্যাণে পরিচালিত হয়। এ প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে হলে উন্নয়ন প্রশাসনের সব স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. উন্মুক্ত প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন উন্মুক্ত প্রকৃতির। প্রশাসনিক কার্যাবলি গোপনে পরিচালনা না করে এর নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন জনগণের সামনে তুলে ধরে তারা প্রশাসনিক কর্মকান্ডের ভালো-খারাপ দিক বিবেচনা করতে পারে। উন্মুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
১০. পৃষ্ঠপোষকতা : উন্নয়ন প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যোগ্যতার পৃষ্ঠপোষকতা করে কেননা প্রশাসনে যোগ্যতা অনুসারে প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হয় যাতে তারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এটি উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য।
১১. নেতৃত্ব : কোনো প্রশাসন ব্যবস্থাই নেতৃত্ব ছাড়া চলতে পারে না। তাই যেকোনো প্রশাসন ব্যবস্থায় যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানকারী লোকবলের মাধ্যমে প্রশাসনকে উন্নয়ন প্রশাসনে রূপান্তর করা যায়। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব হলে তা প্রশাসনের জন্য অধিক কল্যাণকর।
১২. স্বচ্ছতা : প্রশাসনকে উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। উন্নয়ন প্রশাসন যাতে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার না হয় সেদিকে তৎপর থাকে। যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নজরদারি একান্ত আবশ্যক।
১৩. বিশেষ দৃষ্টি প্রদান : উন্নয়ন প্রশাসন প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখে। কেননা জনগণ ও প্রশাসকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনই উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যারা জনগণের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকে তাদের প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি রাখা একান্ত আবশ্যক।
১৪. সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন উন্নয়ন প্রশাসন কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে। তাই সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন করাও উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য এটি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো প্রশাসন ব্যবস্থায় এসব বৈশিষ্ট্যের সন্নিবেশ ঘটলে তাকে আমরা উন্নয়ন প্রশাসন বলতে পারি। সাধারণ জনগণের সর্বাধিক কল্যাণসাধন করাই হলো এর মূল লক্ষ্য। বর্তমান উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের সহায়ক শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন । বর্তমান যেকোনো রাষ্ট্রে উন্নয়ন প্রশাসন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
০২. উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি আলোচনা কর।
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কার্যক্রম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে লোকপ্রশাসন ধারণাটি থেকে উন্নয়ন প্রশাসনের আবির্ভাব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলো স্বাধীন হতে শুরু করে। ফলে তারা প্রথমাবস্থায় আর্থসামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে এসব সমস্যার সামাধান ও প্রশাসনকে আরও গতিশীল করার প্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রশাসন’ ধারণাটির উদ্ভব হয়।
উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি : উন্নয়ন প্রশাসন ব্যাপক পরিধি নিয়ে কাজ করে থাকে। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজ হয়। নিম্নে উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি আলোচনা করা হলো-
১. কাঠামো পরিবর্তন : উন্নয়ন প্রশাসনে প্রশাসনিক কাঠামোর পরিধি তুলনামূলকভাবে ছোট করা একান্ত আবশ্যক। প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে এনে পদক্রম নীতিকে যথাসম্ভব সীমিত অবস্থায় রাখতে হবে। অধস্তন কর্মকর্তাদেরকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। আর তাই উন্নয়ন প্রশাসনে কাঠামো নির্ধারণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রশাসকরা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
২. দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি পরিধি হলো প্রশাসনে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ করা। দক্ষ প্রশাসকরা তাদের কর্মের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারে। তাই উন্নয়ন প্রশাসনের সফলতার জন্য দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া একান্ত আবশ্যক।
৩. মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি দিক। পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রত্যেক কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন একান্ত আবশ্যক।
৪. সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ : উন্নয়ন প্রশাসনের মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন অন্যায় ও কুপ্রথাকে আইনের সাহায্যে দূর করা সম্ভব। উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম কাজ হলো সামাজিক কুসংস্কার দূর করে জনমুখী উদ্দেশ্যকে মানবিক শক্তি ও সম্পদে রূপান্তরিত করা।
৫. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বৃদ্ধিকরণ : উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারি সংগঠনগুলো সবক্ষেত্রে জনকল্যাণসাধন করতে সক্ষম হয় না। তাই এর জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হয়। এজন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
৬. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদ একটি দেশের সবচেয়ে কার্যকরী সম্পদ। তাই প্রাকৃতিক সম্পদকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাজে ব্যবহার করলে প্রশাসন আরও উন্নয়নমুখী হবে। এজন্য মানব সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. সংশ্লিষ্ট উপাদানের উন্নয়ন : বিভিন্ন উপাদান যেমন- সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা উন্নয়ন প্রশাসনের সাথে সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন জড়িত। সামাজিক ও রাজনৈতিক অবকাঠামো ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন না ঘটলে প্রশাসনে উন্নয়ন সম্ভব নয় ।
৮. কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : উন্নয়ন প্রশাসনের মূলকথা হলো প্রশাসন ও জনগণের প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা । কেননা উন্নয়ন প্রশাসন ব্যবস্থা কর্ম বা লক্ষ্যকেন্দ্রিক। তাই কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম বিষয়বস্তু।
৯. উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও তার বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণ উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম বিষয়বস্তু। উন্নয়ন প্রশাসন সর্বদা উন্নয়নমুখী কার্যক্রমে বিশ্বাসী। আর এর ওপর ভিত্তি করেই উন্নয়ন প্রশাসনের সৃষ্টি। এক্ষেত্রে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যা বাস্তব ও উন্নয়নমুখী।
১০. জনগণের অংশগ্রহণ : প্রশাসনের উন্নতির জন্য জনগণের অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক। এজন্য জনগণকে বিভিন্নভাবে প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তবেই কেবল উন্নয়ন প্রশাসন গঠন করা সম্ভব। এ অংশগ্রহণ প্রশাসনকে গতিশীল ও কার্যকর হিসেবে গড়ে তোলে।
১১. বাজেট প্রণয়ন : উন্নয়ন প্রশাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজেটে একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকলে তা উন্নয়ন প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। সাধারণত প্রশাসনের বার্ষিক আয়ব্যয়ের ওপর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে।
১২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা : উন্নয়ন প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিধি অনেক ব্যাপক। এটি নিশ্চিত করা প্রশাসনিক উন্নয়নের অন্যতম একটি শর্ত। তাই প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকে লক্ষ রাখতে হয়। এর মাধ্যমে প্রশাসনিক প্রচেষ্টা সফল হবে এবং গতিশীলতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
১৩. প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব নিরসন : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার বিষয়টি উন্নয়ন প্রশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই প্রশাসনের কর্মবিভাগের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান তা নিরসন করা উন্নয়ন প্রশাসনের কাজ।
১৪. জনকল্যাণমুখী প্রশাসন সৃষ্টি : উন্নয়ন প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রশাসনকে জনকল্যাণমুখী হিসেবে গড়ে তোলা। কেননা জনকল্যাণমুখী কর্মসম্পাদন করা উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য। এর পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সম্পদের সুসম বণ্টন, বৈষম্য হ্রাস ইত্যাদি।
১৫. সুসম বণ্টন : প্রশাসনিক উন্নয়নের অন্যতম বিষয়বস্তু হলো সুসম বণ্টন ব্যবস্থা। এটি নিরপেক্ষ হলে প্রশাসনিক অগ্রগতি বৃদ্ধি পায়। উন্নয়ন প্রশাসনে কেবল সুসম বণ্টন ব্যবস্থা নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা যায়। এর দ্বারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক কমে আসে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাম্প্রতিককালে উন্নয়ন প্রশাসন ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থায় রূপান্তর করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ। উন্নয়ন প্রশাসন তার বিস্তৃত কার্যাবলির মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বিক কল্যাণসাধন করে থাকে ।
০৩. উন্নয়নমুখী প্রশাসনের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
অথবা, উন্নয়নমুখী প্রশাসনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসনের মধ্যে উন্নয়ন প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলো স্বাধীন হতে শুরু করে। ফলে তারা আর্থসামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে এসব সমস্যার সমাধান ও প্রশাসনকে আরও গতিশীল করার প্রেক্ষিতে ‘উন্নয়ন প্রশাসন’ ধারণাটি উদ্ভাবিত হয়।
উন্নয়নমুখী প্রশাসনের গুরুত্ব : লোকপ্রশাসনে উন্নয়নমুখী প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-
১. গতিশীলতা : মন্থর সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রশাসন বিশ্বজুড়ে বিকশিত হয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থসামাজিক অগ্রগতি সাধন করা। কাজেই গতিশীলতা এর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে প্রশাসকরা গতিশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ।
২. দায়িত্বশীলতা : উন্নয়ন প্রশাসন ব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য প্রশাসকরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। কেননা এটি দক্ষতাসম্পন্ন ও ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা। এখানে কর্মকর্তারা নিজেদেরকে জনগণের সেবক মনে করেন।
৩. বিকেন্দ্রীকরণ : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম আরেকটি লক্ষ্য হলো এটি বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া। প্রশাসনের উন্নতির জন্য বিকেন্দ্রীকরণ অন্যতম একটি পূর্বশর্ত। ক্ষমতাকে জনগণের একদম নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিকেন্দ্রীকরণ একান্ত আবশ্যক ।
৪. দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটে। প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভূমিকা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হয়। আর এভাবেই তারা স্বীয় কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
৫. জনকল্যাণমূলক প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসনের মূল কথা হলো জনসেবায় নিয়োজিত থাকা। এর প্রতিটি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জনকল্যাণের জন্যই হয়ে থাকে। সুতরাং উন্নয়ন প্রশাসন জনকল্যাণসাধনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৬. বিস্তৃত পরিধি উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি অনেক বিস্তৃত। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রের কার্যাবলি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়ন প্রশাসনের কার্যক্রমও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই রাষ্ট্রের পরিধি যত বৃদ্ধি পাবে, উন্নয়ন প্রশাসনের কাজের পরিধিও তত বৃদ্ধি পাবে।
৭. পরিকল্পনাভিত্তিক প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনাভিত্তিক ব্যবস্থা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এটির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের কল্যাণসাধন ও তাদের অধিকার পূরণ করা। তাই জনকল্যাণসাধনের জন্য প্রশাসকরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নির্ধারণ করে থাকে।
৮. ফলাফল নির্ভর প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন মূলত ফলাফল নির্ভর হয়ে থাকে। এর কার্যক্রম সরাসরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক অগ্রগতির সাথে সম্পর্কিত। এটিকে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা যায়। প্রথমত, এটি উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। দ্বিতীয়ত, এটি পরোক্ষভাবে প্রশাসন ব্যবস্থার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৯. পরিবর্তন সাধন : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হলো উন্নয়নশীল দেশের বহুবিধ সমস্যা সমাধান করার জন্য সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক পরিবর্তন সাধন করা। এ ধরনের প্রশাসন ব্যবস্থা সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে একদম ভিন্ন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করতে উন্নয়ন প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. সময়সীমা নির্ধারণ : উন্নয়ন প্রশাসন সর্বদা নির্ধারিত সময়সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা না হলে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কার্যসম্পাদন করতে হয়। প্রশাসকরা যাতে সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পাদন করে সেজন্য সরকারি নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
১১. জনগণের অংশগ্রহণ : যে প্রশাসন ব্যবস্থায় জনগণ সম্পৃক্ত থাকে তাকে উন্নয়ন প্রশাসন বলে। এটি উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। কেননা এটি জনগণের দ্বারা ও তাদের কল্যাণে পরিচালিত হয়। এটিকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে হলে উন্নয়ন প্রশাসনের সব স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রশাসন ব্যবস্থার সংস্কার করতে পারে।
১২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা : প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। এটি উন্নয়ন প্রশাসনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রশাসন যাতে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি নজরদারি একান্ত প্রয়োজন।
১৩. সুষ্ঠু ব্যবহার ও বণ্টন ব্যবস্থা : উন্নয়ন প্রশাসন কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও বণ্টন নিশ্চিত করে। তাই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও বণ্টন করাও উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এটি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
১৪. পৃষ্ঠপোষকতা : উন্নয়ন প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দক্ষতার পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেননা প্রশাসনে যোগ্যতা অনুসারে প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হয় যাতে তারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর হিসেবে গড়ে তুলতে পারে । এটি উন্নয়ন প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাধারণ জনগণের সর্বাধিক কল্যাণসাধন করাই হলো এর মূল লক্ষ্য। বর্তমান উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়নমুখী প্রশাসন জনগণের সহায়ক শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।
মূলত এটি সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে একদম ভিন্ন। মূলত উন্নয়নশীল প্রশাসন হচ্ছে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যভিত্তিক এবং কর্মচঞল প্রশাসন ব্যবস্থা।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।