Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ|বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ৪ : উন্নয়ন প্রশাসন | PDF: লোকপ্রশাসন পরিচিতি বিষয়টি হতে যেকোনো ধরনের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য রসায়ন বিষয়টি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ৪ : উন্নয়ন প্রশাসন
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. উন্নয়নের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, উন্নয়ন বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য হলো উন্নয়ন। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর জীবনধারা নানাভাবে পরিবর্তন হয়ে উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে এবং আর্থসামাজিক পুনর্গঠনের মতো জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়। এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য পরবর্তীতে উন্নয়ন ধারণাটির উদ্ভব করা হয় ।
উন্নয়নের সংজ্ঞা : ইংরেজি ‘Development’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ উন্নয়ন। বর্তমানে এটি ব্যাপক প্রচলিত একটি ধারণা। কারণ উন্নয়নকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বিচার করা যায় না।
একটি দেশের জন্য যা উন্নয়নমূলক অন্য আরেকটি দেশের জন্য তা উন্নয়নমূলক নাও হতে পারে। অর্থাৎ এটি অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়।
উন্নয়নের কতিপয় লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য থাকে। তবে সাধারণত উন্নয়ন বলতে বুঝায় পরিবর্তন, অগ্রগতি বা আধুনিকায়ন। অন্যভাবে বলা যায়, আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে ধাবমান গতিশীল পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে উন্নয়ন বলে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর মতে, “Development is ever increasing rationality in the affairs of human life and social relationship.” অর্থাৎ, মানুষের জীবনের ঘটনাবলি ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিকে উন্নয়ন বলা হয় ।
গুনার (Gunner Myrdal) বলেন, “উন্নয়ন বলতে বুঝায় ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য থেকে সৃষ্ট অনুন্নয়ন থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া। উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভবত এ অবস্থাকে অর্জনের চেষ্টা করা হয় এবং সম্ভবত তা বাস্তবেও রূপান্তর করা যায়।”
ডাডলি সিয়ার্স (Dudly Seers) এর মতে, “Development means improvement in country’s economic and social condition.” অর্থাৎ, উন্নয়ন বলতে বুঝায় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন।
এডওয়ার্ড ডব্লিউ. উইডনার (Edward W. Weidner) এর মতে, “একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হওয়ার পরিবর্তে, উন্নয়ন হলো একটি মানসিক অবস্থা, একটি প্রবণতা বা একটি নির্দেশনা। এটি হলো একটি সুনির্দিষ্ট পথ পরিবর্তনের পদ্ধতি।”
জন ডি. মন্টগোমারি (John D. Montgomery) এর মতে, “একটি দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পিত, সামঞ্জস্যশীল এবং যুগোপযোগী পরিবর্তনই হচ্ছে উন্নয়ন।
Merriam Webster Dictionary, “Development is the act, process, or result of developing.” অর্থাৎ, উন্নয়ন বলতে বুঝায় এমন কাজ, পন্থা ও ফলাফল অবলম্বন করা যার মাধ্যমে উন্নয়ন সুনিশ্চিত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন ধারণাটি বর্তমান পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বস্তুত সনাতন সমাজব্যবস্থা থেকে বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রূপান্তর হওয়াই হলো উন্নয়ন।
রাষ্ট্র তার কার্যাবলি ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। জনগণের কল্যাণের জন্য একটি দেশর প্রশাসন সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে।
০২. উন্নয়ন প্রশাসন কী?
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসন কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসনের মধ্যে উন্নয়ন প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ঔপনিবেশিক কলোনিগুলো স্বাধীন হতে শুরু করে।
নব গঠিত এসব রাষ্ট্রগুলোকে আর্থসামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরবর্তীতে এসব সমস্যার সমাধান ও প্রশাসনকে আরও গতিশীল করার জন্য উন্নয়ন প্রশাসন’ ধারণাটির উদ্ভব হয়।
উন্নয়ন প্রশাসন : ইংরেজি ‘Development’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ উন্নয়ন এবং ‘Administration’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। প্রশাসন। এটি একটি যৌগিক শব্দ। ভারতীয় প্রশাসন পণ্ডিত গোস্বামী সর্বপ্রথম ১৯৫৫ সালে এ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে মার্কিন গবেষকরা এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে এই অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
শাব্দিক অর্থে সাধারণত যে প্রশাসন ব্যবস্থা উন্নয়নমূলক কার্যাদি সম্পাদন করে তাকে উন্নয়ন প্রশাসন বলা হ প্রশাসনের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করাই হলো উন্নয়ন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। প্রশাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন, অগ্রগতি, সম্প্রসারণ, ক্রমবিকাশ ও আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।। প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
জন ডি. মন্টগোমারি (John D. Montgomery) এর মতে, অর্থনীতিতে (কৃষি অথবা শিল্পে অথবা এগুলোর যেকোনো একটির অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে) পরিকল্পিত পরিবর্তনের সূচনা করা অথবা সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিক্ষা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে বিশিষ্ট উন্নয়নমূখী প্রশাসন।
মার্চে ফেইনসড (Merle Fainsod) এর মতে, উন্নয়নমুখী প্রশাসন হচ্ছে নতুন মূল্যবোধের বাহক। এর লক্ষ্য হলো জাতীয় আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জাতীয় সম্পদের বৃদ্ধিকরণ।
এডওয়ার্ড ডব্লিউ, উইডনার (Edward W. Weldner) এর মতে, উন্নয়নমুখী প্রশাসন হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত উন্নয়নমূলt রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনেতিক লক্ষ্যসমূহের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রশাসনিক সংগঠনকে পরিচালনা করার পদ্ধতি।
তুর্থেইম (Durkheim ) এর মতে, “Developing administration is an instrumental means for defining, consolidating, and implementing national goals in developing countries” অর্থাৎ উন্নয়ন প্রশাসন হচ্ছে রাষ্ট্রগুলোকে সংজ্ঞায়িত করা, দৃঢ় করা ও জাতীয় লক্ষাগুলোকে বাস্তবায়ন করার একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি।
উইলিয়াম জে. সিফিন (William J. Siffin) এর মতে, “উন্নয়ন প্রশাসনের লক্ষ্য যা আছে তা কেবল সংরক্ষণ নয়, বরং অগ্রগতি অর্জনক্ষম প্রশাসন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন প্রশাসনের ধারণা আধুনিক হলেও কর্মপরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। আধুনিক উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যতই জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে উন্নয়ন প্রশাসনের
কর্মপরিধিও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে উন্নয়ন প্রশাসন জানগণের স্বার্থে বাস্তবমুখী ও কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা। এবং জনগণের প্রতি সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এ প্রশাসন ব্যবস্থা প্রাচীন ধ্যানধারণা লালন করে না। এটি সর্বদা পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়।
০৩. উন্নয়নমুখী প্রশাসনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসনের প্রশাসনিক ধরন সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা বর্তমান পৃথিবীতে উন্নয়ন প্রশাসন একটি ব্যাপক ধারণা। লোকপ্রশাসনের যে কয়েকটি শাখা রয়েছে তার। মধ্যে উন্নয়ন প্রশাসন অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বাধীন হতে শুরু করে। স্বাধীনতার পর দেশগুলোতে আর্থসামাজিক পুনর্গঠনের মতো জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পরবর্তীতে উন্নয়ন প্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
উন্নয়নমুখী প্রশাসনের প্রকৃতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলোতে প্রশাসনিক গতিশীলতা আনানের জন্য উন্নয়ন প্রশাসনের উদ্ভব হয়েছে। এটি প্রকৃতিগতভাবেই উদ্ভাবনী ও প্রগতিশীল। নিম্নে উন্নয়নমুখী প্রশাসনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. জনগণের কল্যাণসাধন : প্রশাসন সমাজের সব স্ত কল্যাণসাধন করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের নিম্ন পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত মানুষের কল্যালসাধনে উন্নয়ন প্রশাসন নিয়োজিত থাকে। এ প্রশাসন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং জনগণের প্রতি সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করে।
২. গতিশীলতা : স্বাভাবিক প্রশাসনের মধ্যে সাধারণত গতিশীলতা দেখা যায় না। কিন্তু উন্নয়ন প্রশাসনকে স্বভাবতই গতিশীল হতে হয় গতিশীলতা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নতুন কিছু তৈরি নিয়ে নিয়োজিত থাকায় উন্নয়ন প্রশাসন গতিশীল ও পরিবর্তনশীল । এটি পরিবর্তনীয় পরিবেশের সাথে সহজেই নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে পারে। জনগণের উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৩. জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা : উন্নয়ন প্রশাসন সমাজের সব স্তরের মানুষদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। কারণ উন্নয়ন প্রশাসন হলো মাঠ প্রশাসন, যা সরাসরি জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যাগুলো শনাক্ত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। এ কারণেই উন্নয়ন প্রশাসনের সাথে জনগণের সুসম্পর্ক বজায় থাকে।
৪. সেবামূলক মনোভাব : উন্নয়ন প্রশাসন ব্যবস্থায় কর্মকর্তা- কর্মচারীরা সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করে। সাধারণ প্রশাসনে অনেক ক্ষেত্রে এটি অনুপস্থিত থাকে। আমলারা জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণসাধন করার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে।
৫. সময়োপযোগিতা উন্নয়ন প্রশাসন নমনীয় ও সময়োপযোগী। ফলে এটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখেয়ে চলতে পারে। এ প্রশাসন ব্যবস্থা জনগণের ও পরিবেশ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে উন্নয়ন প্রশাসন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৬. রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা : রাজনীতি ও প্রশাসন যদিও একটি অপরটির সাথে মিলে কাজ করে, তবুও উন্নয়ন প্রশাসনকে যথাসম্ভব দলীয় রাজনীতি মুক্ত থাকতে হয়। কেননা রাজনীতির অশুভ ছায়া প্রশাসনকে দুর্বল করে দেয়। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হয় ।
৭. পৃষ্ঠপোষকতা : উন্নয়ন প্রশাসন মূলত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার পৃষ্ঠপোষকতা করে। এক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে এমন সব লোকদেরকে নিয়োগ দিতে হয় যারা প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন প্রশাসন সীমিত গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নতির একটি ব্যাপক কর্মকাণ্ড। উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি পরিচালনা ও জনগণের প্রতি সেবামূলক মনোভাব পোষণ করে। এটি জনস্বার্থ অনুসারে পরিবর্তনীয়। কেননা উন্নয়ন প্রশাসন পুরাতন ব্যবস্থাকে লালন করে না এটি নতুনত্বকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে।
০৪. উন্নয়নমুখী প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : উন্নয়ন প্রশাসন লোকপ্রশাসনের একটি অংশ। সাম্প্রতিককালে এটি লোকপ্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলো স্বাধীন হতে থাকে । ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা আর্থসামাজিক পুনর্গঠনের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। আর তখন থেকেই উন্নয়ন ধারণাটির উদ্ভব হয়।
উন্নয়নমুখী প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : উন্নয়নমুখী প্রশাসন
সমাজের সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তনসাধন করতে সদা তৎপর থাকে।
এটি একটি লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থা। তাই এর কার্যাবলি অনেক ব্যাপক ।
নিম্নে উন্নয়ন প্রশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো-
১. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ : প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রশাসন লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যায়। এজন্য প্রশাসনের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
আধুনিক বিশ্বে উন্নয়ন প্রশাসনের একটি বড় অংশ জনগণের প্রতিনিধি তাই এতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কাজেই উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
২. উন্নয়নমুখী লক্ষ্য নির্ধারণ উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা। কেননা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ছাড়া কোনো সংগঠন সফলতা অর্জন করতে পারে না। এজন্য উন্নয়ন প্রশাসনকে লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে হয় ।
৩. কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করতে হলে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ও তার সঠিক বাস্তবায়ন একান্ত জরুরি। তাই উন্নয়নমূলক প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা।
৪. অর্থনৈতিক অগ্রগতিসাধন : অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। উন্নয়নমুখী প্রশাসন সর্বদা অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের দিকেই লক্ষ রাখে। এজন্য দেশীয় সম্পদ ব্যবহারের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য উন্নয়ন প্রশাসন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৩. কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করতে হলে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ও তার সঠিক বাস্তবায়ন একান্ত জরুরি। তাই উন্নয়নমূলক প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা।
৪. অর্থনৈতিক অগ্রগতিসাধন : অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। উন্নয়নমুখী প্রশাসন সর্বদা অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের দিকেই লক্ষ রাখে। এজন্য দেশীয় সম্পদ ব্যবহারের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য উন্নয়ন প্রশাসন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৫. প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ : প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব। এতে প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে সেখান থেকে স্বেচ্ছাচারিতা জন্ম নেয় । কাজেই উন্নয়ন প্রশাসনের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ আবশ্যক ।
৬. সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন : রাষ্ট্রীয় সম্পদ যথানিয়মে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হলে তা দ্বারা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবে। তাই কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসনে উন্নয়ন প্রশাসন একটি সাম্প্রতিক ধারণা। এটি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাও। তাই সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে ভিন্নতর পন্থায় উন্নয়ন প্রশাসন জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আদিম প্রশাসনকে পরিবর্তন করে আধুনিক প্রশাসনে রূপান্তর করা হয়েছে। যা প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রশাসনের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যায়।
০৫. উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য কী কী?
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে উন্নয়ন প্রশাসন ধারণাটি বেশ আলোচিত বিষয়। এটি লোকপ্রশাসনের একটি অংশ। গত শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আর্থসামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আর তখন থেকেই উন্নয়ন প্রশাসন ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে। উন্নয়ন প্রশাসন হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা। এটি তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ।
উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য : উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের মধ্যে অবস্থান করে তাদের কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকে । এটি উন্নয়নমূলক ও জনকল্যাণমূলক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। নিম্নে উন্নয়ন প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. জনগণের অংশগ্রহণ : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের অংশগ্রহণ। এটি মাঠ পর্যায়ে যেয়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। উন্নয়ন প্রশাসন মূলত জনগণের দ্বারাই পরিচালিত হয়। একে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে হলে প্রশাসনের সব পর্যায়ে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা : রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকা উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। যদিও রাজনীতি ও প্রশাসন একসাথে কাজ করে, তবুও উন্নয়ন প্রশাসনকে যথাসম্ভব রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। কেননা রাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রশাসনে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি তৈরি হয়, যা উন্নয়ন প্রশাসনের জন্য খুব ক্ষতিকর।
৩. উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ : একটি দেশের শাসনব্যবস্থায় সার্বিক উন্নয়নসাধন করার জন্য উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। দেশের সীমিত সম্পদ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করে কীভাবে আরও দ্রুত উন্নয়নসাধন করা যায় সেজন্য এটি পরিকল্পনা মতে অগ্রগামী হয়। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
৪. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যসম্পাদন : বর্তমান সময়ে আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে সম্পদ সীমিত। কিন্তু নানাবিধ জটিল সমস্যা নিয়ে সেগুলো পরিচালিত হচ্ছে। স্বল্প সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে উন্নয়নসাধন করা যায় সেজন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হবে । যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উপযোগ লাভে প্রত্যাশী উন্নয়ন প্রশাসন। ফলে এটি সমস্যাগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করে।
৫. সময়োপযোগিতা : উন্নয়ন প্রশাসন সনাতন প্রশাসন পদ্ধতি থেকে অনেক আলাদা। এটি নমনীয় ও সময়োপযোগী প্রকৃতির। ফলে সমাজের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে এটি সহজে খাপখেয়ে চলতে পারে। প্রশাসকরাও সময়োপযোগী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নতিসাধন করে থাকেন।
৬. নেতৃত্ব প্রদান : উন্নয়ন প্রশাসনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো নেতৃত্ব প্রদান । কেননা নেতৃত্বহীন প্রশাসন ব্যবস্থা গতিহীন হয়ে পড়ে। উন্নয়ন প্রশাসনে নিয়োগকৃত জনবল থেকে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। সুযোগ্য নেতৃত্ব থাকতে হবে এবং তা হতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থাই হলো উন্নয়ন প্রশাসন। সীমিত শক্তি ও সম্পদের মাধ্যমে জনগণের সর্বাধিক কল্যাণসাধন করাই হলো এ প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়ন প্রশাসন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মূলত এটি সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে অনেকটাই ভিন্ন ।
অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
০৬. উন্নয়নমুখী প্রশাসনের উপাদান আলোচনা কর।
অথবা, উন্নয়ন প্রশাসনের উপাদান কী কী?
উত্তর : ভূমিকা : উন্নয়ন প্রশাসন হচ্ছে লোকপ্রশাসনের শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি শাখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের অনেক দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বেশ কিছু আর্থসামাজিক সমস্যায় পতিত হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য পরবর্তীতে তারা উন্নয়ন প্রশাসনকে বেছে নেয়। তবে এর ব্যবহার একেক দেশে একেক রকম হতে পারে।
উন্নয়নমুখী প্রশাসনের উপাদান : সরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ, নীতি বাস্তবায়নের জন্য সম্পদের বরাদ্দকরণ ও কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি হচ্ছে উন্নয়ন প্রশাসনের উপাদান। Milton Esman উন্নয়নমুখী প্রশাসনের চারটি উপাদানের কথা বলেছেন। যথা :
১. মৌলিক উপাদান : নীতিনির্ধারণ, বাস্তবায়ন, কর্মসূচি প্রণয়ন ইত্যাদি উন্নয়নমুখী প্রশাসনের মৌলিক উপাদান। প্রশাসনের অভিজাত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত এলিটরাই মূলত এ কাজগুলো করে থাকে। তাই তাদের বিশেষ দক্ষতা অর্জন করা একান্ত আবশ্যক। মৌলিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
ক. আনুমানিক আয়, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, জনসংখ্যা ও শ্রমশক্তির ওপর ভিত্তি করে জনশক্তি ও অন্যান্য জাতীয় সম্পদের নিরীক্ষা ও জরিপ কাজ পরিচালনা করা।
খ. কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যজনের জন্য অর্থনৈতিক খাতসমূহে এসব সম্পদের বিনিয়োগ যাতে সর্বাধিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
- গ. পরিকল্পিত লক্ষ্যর্জনের জন্য উন্নয়ন নীতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।
- ঘ. পরিকল্পনার কোন ক্ষেত্রে কেমন ফলাফল আসছে তার বিবরণী প্রকাশ ও মূল্যায়ন করা।
- ঙ. লক্ষ্যজনের জন্য প্রয়োজনে অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
২. পরিচালনামূলক উপাদান : এ উপাদানের মূল লক্ষ্য হলো পরিচালনা পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ, প্রশাসনিক বিভাগগুলোকে গতিশীল রাখা এবং শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা। এজন্য নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত।
ক. উন্নয়নমুখী প্রশাসনের জন্য প্রয়োজন প্রচুর সংখ্যক প্রশাসক এবং তাদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়সাধন। এর জন্য অধিক প্রয়োজন বিশেষজ্ঞদের। কেননা উন্নয়নমূলক কাজগুলো তারাই করে থাকেন।
- খ. প্রশাসনকে কাঠামোগত দিক থেকে এমনভাবে কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।
- গ. প্রশাসন ব্যবস্থায় যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে অধীনস্থ কর্মচারীদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।
- ঘ. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অধিক সংখ্যক মধ্যম পর্যায়ের পরিচালক বিশেষভাবে প্রয়োজন।
- ঙ. কর্মচারীদের বেতন, পদোন্নতি, উৎসাহ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থায় ঐক্য অর্জন করতে হবে। এতে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা নতুনভাবে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবেন।
৩. সামাজিক পরিবর্তনগত উপাদান : প্রশাসনের গৃহীত লক্ষ্যের সাথে সংহতি রক্ষা করে মানুষের মানসিক অবস্থা ও আচারব্যবহারে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে সামাজিক পরিবর্তনগত উপাদান বলে। গতিশীল উন্নয়নের জন্য সামাজিক পরিবর্তন একান্ত আবশ্যক। এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। যথা-
- ক. প্রশাসক ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা যোগসূত্র স্থাপন করা ও
- খ. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
৪. রাজনৈতিক উপাদান : উন্নয়নমুখী প্রশাসনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি একান্ত প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক উপাদানটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থাই হলো রাজনৈতিক উপাদান। এজন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসকদের সাধারণ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যেকোনো দেশের সরকারি নীতি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন, কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি হলো উন্নয়ন প্রশাসনের মৌলিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা। সনাতন প্রশাসন ও উন্নয়নমুখী প্রশাসনের মধ্যে যে পার্থক্য তা মূলত এদের উপাদানের কারণেই। এ উপাদানগুলো উন্নয়নমুখী প্রশাসনকে গতানুগতিক ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করে গতিশীল ব্যবস্থায় রূপদান করেছে।
০৭. সনাতন প্রশাসন কাকে বলে?
অথবা, সনাতন প্রশাসনের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : যতগুলো ধারণা বর্তমানে প্রচলিত আছে তার মধ্যে সনাতন প্রশাসনিক ধারণা অন্যতম। সনাতন প্রশাসনিক ধারণা অনেক আগেই প্রাচীন মিসর, চীন ও ভারতবর্ষে শুরু হয়। প্রশাসনের এটি এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যাতে কতিপয় সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি ও নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এ প্রশাসনের মূল কথা হলো ব্যক্তি ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে প্রশাসনিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা।
সনাতন প্রশাসন : সনাতন প্রশাসন হলো খুব স্বাভাবিক ধরনের প্রশাসন ব্যবস্থা । এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব উপর হতে নিচের দিকে নেমে আসে । প্রশাসনের মধ্যে পিরামিড আকারে স্তরবিন্যাস থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন না ঘটিয়ে লক্ষ্যার্জনে প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থা।
শাব্দিক অর্থ : ইংরেজি Traditional শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ প্রথাগত বা সনাতন সনাতন বলতে বুঝায় শাশ্বত বা চিরন্তন আর Administration শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ প্রশাসন অর্থাৎ যে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সর্বদা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় তাকেই সনাতন প্রশাসন বলে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
এডউইন ও স্টেইন (Edwin and Stene) বলেন, “সনাতন প্রশাসন হচ্ছে এমন কতক ব্যক্তি বর্গের সমষ্টি যারা সুসংগঠিত এবং সচেতনভাবে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা একটি সাধারণ কর্মসম্পাদনে সংঘবদ্ধ হয়।”
মার্লে ফেইনসড (Merle fainsod) বলেন, “সনাতন প্রশাসন *ব্যবস্থা এমন একটি সাদা-সিধে ধরনের প্রশাসন ব্যবস্থা যাতে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা উপর হতে নিচের দিকে আসে এবং প্রশাসকরা নিয়মবহির্ভূত কাজ করতে থাকে।”
এডওয়ার্ড ডব্লিই. উইডনার (Edward W. Weidner ) বলেন, “সনাতন প্রশাসন হচ্ছে এমন এক প্রশাসন ব্যবস্থা যাতে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধিত হয়। না। শুধু লক্ষ্যার্জনের দিকেই মনোনিবেশ করা হয় ।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সনাতন প্রশাসন প্রাচীন ধারণা নির্ভর একটি ব্যবস্থা পদ্ধতি। যুগের সাথে তালমিলিয়ে এ প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয় না। এমনকি সনাতন প্রশাসন সামাজিক পরিবর্তনকে অনুধাবন না করেই গতানুগতিকভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে চায়। ফলে প্রশাসকদের দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহা হ্রাস পায়। তাই সমাজ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এর সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।
০৮. উন্নয়ন ও সনাতন প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, উন্নয়ন ও সনাতন প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসনের মধ্যে উন্নয়ন প্রশাসন ও সনাতন প্রশাসন উভয়টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে প্রশাসনসংক্রান্ত ধারণায় অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু করে। ফলে উভয় প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে উন্নয়ন প্রশাসন সর্বত্র স্থান দখল করে নেয়।
উন্নয়ন প্রশাসন : উন্নয়ন প্রশাসন হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত উন্নয়নমূলক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যসমূহের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংগঠনকে পরিচালিত করার পদ্ধতি ।
সনাতন প্রশাসন : বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ধরে রাখার চেষ্টাকে সনাতন প্রশাসন বলে। এর অর্থ শাশ্বত বা চিরন্তন। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে প্রশাসনিক পরিবর্তন না ঘটিয়ে লক্ষ্যার্জনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সনাতন প্রশাসন। এডউইন ও স্টেইনের মতে, “সনাতন প্রশাসন হচ্ছে এমন কতক ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যারা সচেতন ও সুসংগঠিতভাবে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা একটি সাধারণ কর্ম সম্পাদনে সংঘবদ্ধ হয়।”
PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
উন্নয়ন ও সনাতন প্রশাসনের মধ্যেকার পার্থক্য : উভয় ব্যবস্থাই লোকপ্রশাসনের অংশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য, পরিধি প্রভৃতি দৃষ্টিকোণ থেকে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় নিম্নে কতিপয় পার্থক্য আলোচনা করা হলো-
১. পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে : উন্নয়ন প্রশাসন আর্থসামাজিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। অপরদিকে, সনাতন প্রশাসন বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তন না করেই গতানুগতিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কামনা করে।
২. পরিধিগত ক্ষেত্রে : আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উন্নয়ন প্রশাসনের পরিধি বেড়ে গেছে। অপরদিকে, সনাতন প্রশাসনের কর্মপরিধি অত্যন্ত সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
৩. জনগণের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে : উন্নয়ন প্রশাসনের কাজ হলো প্রশাসক ও সাধারণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা। সেই সাথে জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা। অপরপক্ষে, সনাতন প্রশাসনে প্রশাসকরা জনগণের তুলনায় নিজেদেরকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এ কারণে এ ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় না
৪. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে : দক্ষ ও প্রশিক্ষিত প্রশাসকরাই উন্নয়ন প্রশাসনের মূল চালিকাশক্তি। এটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দক্ষ প্রশাসক তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। পক্ষান্তরে, সনাতন প্রশাসনে এ সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই দক্ষ প্রশাসকের অভাবে গতিশীলতা বজায় থাকে না ।
৫. জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে : উন্নয়ন প্রশাসন সাধারণ জনগণের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জবাবদিহি করে। ফলে প্রশাসকরা নিজেদেরকে জনগণের সেবক হিসেবে মনে করে। অপরদিকে, সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থায় প্রশাসকরা জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকে না। তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত বড় মনে করে এবং জনমতকে উপেক্ষা করে ।
৬. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে : জনকল্যাণসাধন উন্নয়ন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। অপরদিকে, সনাতন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো জনগণকে শাসন ও শোষণ করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসনের উদ্দেশ্য, পরিধি, বিষয়বস্তু প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিরাজমান। তবে উন্নয়ন প্রশাসন ও সনাতন প্রশাসনের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য থাকলেও উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্কও বিদ্যমান। তাই সনাতন প্রশাসনকে উন্নয়ন প্রশাসনের পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে।
০৯. বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রকৃতি কেমন? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রশাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
উত্তর : ভূমিকা উন্নয়ন প্রশাসন এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো অগ্রগতিসাধন করে। এটি একটি দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে সাধারণ জনগণ ও প্রশাসকদের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তবে বাংলাদেশের প্রশাসন বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়নমুখী প্রশাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়নমুখী প্রশাসন গঠনে সর্বদা সচেষ্ট। কেননা বর্তমান আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রশাসানের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. অভিজাত নির্ভর প্রশাসন : বাংলাদেশের প্রশাসন মূলত অভিজাত শ্রেণি নির্ভর। ফলে সাধারণ জনগণ প্রশাসনে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। ফলে প্রশাসকরা যে সিদ্ধান্ত দেয় তাই সাধারণ জনগণকে মেনে নিতে হয়। প্রশাসকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর এ সুযোগে অভিজাত প্রশাসকরা পুরো প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
২. সনাতন প্রশাসনিক কাঠামো : স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাংলাদেশের প্রশাসকরা ঔপনিবেশিক যুগের প্রশাসনিক কাঠামোকে আঁকড়ে ধরে আছেন। সময় গড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশের প্রশাসনের তেমন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ফলে বর্তমান যুগ ও সমাজের চাহিদা মিটাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে।
৩. প্রশাসকদের দক্ষতার অভাব : প্রশাসন ব্যবস্থাকে উন্নয়নমুখী ও সচল করতে প্রশাসনে দক্ষ প্রশাসক একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। তাই অদক্ষ প্রশাসকদের প্রশাসনে সর্বত্র বিচরণের কারণে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা এখনো উন্নয়নমুখী হতে পারেনি।
৪. অর্থনৈতিক সংকট : বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট একটি বড় সমস্যা। প্রশাসনিক উন্নয়নের পথে এটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসনকে সচল রাখতে যে অর্থের প্রয়োজন হয় তার সবটুকুর যোগান সরকার দিতে পারে না। তাছাড়া যথাযথ অর্থনৈতিক বণ্টন না হওয়ার কারণে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রশাসনের স্বাভাবিক অবস্থা ব্যাহত।
৫. সমন্বয়হীনতা : বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এর ফলে সুশৃঙ্খলভাবে প্রশাসন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমন্বয়হীন প্রশাসন ব্যবস্থার ওপর সাধারণ জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলে।
৬. উন্নয়নবিমুখ সামাজিক অবস্থা : বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা সর্বদা উন্নয়ন প্রশাসনের বিপরীতে অবস্থান করে। এখনো দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। তারা কৃষি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হলেও তা সনাতন পদ্ধতির কৃষি ব্যবস্থা। দক্ষতার অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা, মূলধনের অভাব ইত্যাদি সমস্যার কারণে জনগণের সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নয়ন প্রশাসন হচ্ছে আধুনিক সমাজব্যবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ। জনগণের সার্বিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য এ প্রশাসন কাজ করে থাকে। কিন্তু . বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উন্নয়ন প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
১০. বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার সমস্যা বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার সমস্যা আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করা। কিন্তু ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে এদেশে সামরিক শাসন ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। যা প্রশাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে যদিও এখন সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার সমস্যা : একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যেমন- প্রশাসনিক অগ্রগতি সাধিত হওয়ার কথা ছিল, বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা হয়ে উঠেনি। নিম্নে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার সমস্যা আলোচনা করা হলো-
১. প্রশাসনিক দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রশাসনের অন্যতম একটি সমস্যা হলো প্রশাসনিক দুর্নীতি। এর ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এটি বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। শাসকরা অতি মাত্রায় দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও শাসকরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে।
২. জবাবদিহিতার অভাব : বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রচলিত থাকায় বাংলাদেশের শাসন বিভাগ আইন বিভাগের কাছে জবাবদিহি করবে। কিন্তু বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হয় না। শাসনব্যবস্থাকে গতিশীল ও কার্যকর করতে হলে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা একান্ত দরকার। জবাবদিহিতার অভাবে প্রশাসকরা দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়ছে।
৩. বিত্তশালী নির্ভর শাসনব্যবস্থা : বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষিত জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক কম। তাই প্রশাসকরা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজেদেরকে বিত্তশালী ও উন্নত শ্রেণির মনে করে। সাধারণ জনগণের সাথেও তাদের সম্পৃক্ততার পরিমাণ খুব কম। তাই এ ধরনের প্রশাসকদের দ্বারা দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনেক কম হয়ে থাকে ।
৪. বিকেন্দ্রীকরণের অভাব : বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় প্রশাসকরা সব ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করে রাখে। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর হয় এবং কেন্দ্রের চাপ কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে প্রশাসন ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে প্রশাসনিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে না ।
৫. উচ্চাভিলাষী মনোভাব : আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থায় প্রশাসকরা অনেক উচ্চাভিলাষী মনোভাব পোষণ করে। এটি এদেশের শাসনব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শুধু উচ্চাভিলাষী মনোভাব পোষণ করার মাধ্যমে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায় না।
ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
৬. সমন্বয়হীনতা : বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার অন্যতম দিক হলো সমন্বয়হীনতা। প্রশাসনে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জিত হচ্ছে না। এর ফলে সুশৃঙ্খলভাবে প্রশাসন পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন দিন প্রশাসনের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও এদেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সমস্যাগুলো হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনিয়ন্ত্রিত সরকার ব্যবস্থা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি।
এসব কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত শাসনব্যবস্থার পরিচালনার ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়নি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কোন্নয়ন একান্ত আবশ্যক।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।