স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সা থেকে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
অধ্যায় : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ১৯৭২-১৯৭৫
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
০১. বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে কী জান?
অথবা, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টীকা লেখ ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন জীবন-মৃত্যুর ভয়ংকর অধ্যায় পার হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা নিজস্ব সিদ্ধান্ত যে কারণেই হোক পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে অন্তরীণ করে এবং ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর সম্ভাব্য মুক্তিদানের সংবাদ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মনে এক পরম স্বস্তি নিয়ে আসে। অতঃপর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি প্রদান করে এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য পিআইএ এর একটি জেট বিমানে করে পাকিস্তান ত্যাগ করার ব্যবস্থা করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
বঙ্গবন্ধু ঐদিনই বিকেলে লন্ডন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। একদিন পর অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রাজকীয় বিমানযোগে তার প্রাণপ্রিয় স্বদেশের উদ্দেশে রওনা হন । ফেরার পথে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দিল্লিতে আয়োজিত সংবর্ধনা উপলক্ষে সকাল ৮.৩০ মিনিটে পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
এ বিমানবন্দরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও প্রেসিডেন্ট ভি. ভি. গিরি তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের জনগণের প্রতি তার আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মতবিনিময়ের পর ১০ জানুয়ারি দুপুরে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানযোগেই বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নামে পরিচিত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বিশ্বজনমত বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য। চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এমনকি জাতিসংঘ ও মার্কিন সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর ফলশ্রুতিতে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি প্রদান করা হয় এবং তিনি ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন করেন।
০২. সংবিধানের সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, সংবিধান বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা : রাষ্ট্রের কাঠামো এবং ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে সংবিধান। মূলত সংবিধান হলো রাষ্ট্রের দর্পণস্বরূপ। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের রূপ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় লিখিত বা অলিখিত যাই হোক সংবিধান একটি রাষ্ট্রের শাসননীতি ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার দিক নির্দেশ করে।
এককথায়, সংবিধান হলো বিশ্বের সব স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল ।
সংবিধান : সংবিধান বলতে সাধারণত এমন কতগুলো লিখিত ও অলিখিত নিয়মনীতি বা বিধিবিধানকে বুঝায় যা রাষ্ট্রপরিচালনার মূলসূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থা এসব নিয়মকানুনকে অনুসরণ করেই তার কার্য পরিচালনা করে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) সংবিধানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, “A constitution is the way of life that the state has chosen for itself.” কে. সি. হুইয়ার (K. C. Wheare) তার ‘The English Constitution’ গ্রন্থে সংবিধানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “সংবিধান হলো সেসব নিয়মের সমষ্টি, যা কী উদ্দেশ্য এবং কোন বিভাগের সরকার কর্তৃক পরিচালিত হবে তা নির্দেশ করে।”
সি. এফ. স্ট্রং (C. F. Strong) এর মতে, “সংবিধান হচ্ছে সেসব নিয়মকানুনের সমষ্টি, যা দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে।” লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) এর মতে, “যেসব আইন প্রথার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন প্রভাবিত হয় তার সমষ্টিকে সংবিধান বলে।”
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) এর মতে, “রাষ্ট্রের ধরন নির্ধারণের মৌলিক নিয়মাবলিই সংবিধান। এগুলো রাষ্ট্র সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সার্বভৌম ক্ষমতার বণ্টন এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের নিয়মাবলি বর্ণনা করে ।” অধ্যাপক এইচ. ফাইনার (Prof. H. Finer) এর মতে, “রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধই হচ্ছে সংবিধান ।”
আর. এন. গিলক্রিস্ট (R. N. Gilchrist) এর মতে, “সংবিধান হলো কতকগুলো লিখিত ও অলিখিত আইন বা নীতিমালার সমষ্টি, যা দ্বারা সরকারের সংগঠন, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন এবং যেসব সাধারণ মূলনীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে যার মাধ্যমে এসব ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়।”
আধুনিক মার্কিন সংবিধান বিশারদ ডাইসি (Diecy) এর মতে, “সকল প্রকার নিয়মকানুন বা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অনুশীলন, যা ক্ষমতার বণ্টনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে তাকে সংবিধান বলে।”
লেসলি লিপসন (Lesley Lipson) তার ”Democratic Civilization’ গ্রন্থে বলেন, “সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রশাসনগত নিয়মপ্রণালি ও তার মধ্যে নাগরিকদের সম্পর্ক সংবলিত একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। বলাবাহুল্য, এ প্রকল্পের মূল কাঠামো হলো লিখিত সংবিধান।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান হলো যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম আইন । জনগণ এ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবার জন্য এ আইন প্রযোজ্য । সুতরাং সংবিধান বলতে সেসব বিধিবিধানকে বুঝায় যা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য, রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রভৃতিকে নিরূপণ করে ।
০৩ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ বলতে কী বুঝ?
অথবা, অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। তাছাড়াও এদেশের গণমানুষ সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের ইচ্ছা পোষণ করেন।
ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে এ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেছেন, যা বেশকিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল ।
অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এ উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে প্রদত্ত সকল ক্ষমতাবলে সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। এ আদেশে বলা হয়—
ক. এই আদেশ বাংলাদেশ ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২’ নামে অভিহিত হবে।
খ. এই আদেশটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে ।
গ. এই আদেশটি অবিলম্বে বলবৎ হবে।
ঘ. এই আদেশে বর্ণিত ‘গণপরিষদ’ বলতে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে বিজয়ী গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
ঙ. প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকবে।
চ. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল কাজ করবেন।
ছ. রাষ্ট্রপতি গণপরিষদে এমন একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করবেন, যিনি গণপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হবেন। অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন ।
জ. গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণীত হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক যেকোনো আদর্শ বাংলাদেশি নাগরিক রাষ্ট্রপতির পদে অস্থায়ীভাবে আসীন হবেন। গণপরিষদের প্রণীত সংবিধান অনুসারে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উক্ত পদে বহাল থাকবেন।
ঝ. বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে একজন প্রধান বিচারপতি ও সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে।
ঞ. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির শপথ বাক্য পাঠ করাবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। শপথ বাক্যের ফরম মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ী সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এ সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে নামমাত্র প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ সংবিধান অনুযায়ী গণপরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয় ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে গণপরিষদে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর এটি কার্যকর হলে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ বাতিল হয়।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৪. বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ সম্পর্কে কী জান?
অথবা, বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ কী?
উত্তরঃ ভূমিকা : সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্রুত তা প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠতে থাকে। এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ (The Constituent Assembly Order of Bangladesh) করেন।
এ কমিটি সংবিধানের খসড়া রচনা করে তা অনুমোদন করে এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তা কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ : নিম্নে বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. পরিচিতি : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক সদস্যদের নিয়ে অস্থায়ী সংবিধান আদেশবলে যে পরামর্শক পরিষদ গঠিত হয় তা বাংলাদেশ গণপরিষদ নামে পরিচিত আর রাষ্ট্রপতির যে আদেশবলে এ পরিষদ গঠিত হয় তাকে বলা হয় বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ।
২. গঠন : গণপরিষদ আদেশ অনুসারে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চের মধ্যবর্তী বিভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব জনপ্রতিনিধি সাবেক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন তাদের নিয়ে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত মোট সদস্য সংখ্যা ছিল (১৬৯ + ৩০০ ৪৬৯) ৪৬৯ জন।
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন – ১২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু, ২ জনের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ, ৫ জন দালাল আইনে আটক, আওয়ামী লীগ থেকে ৪৬ জনের বহিষ্কার ও ১ জনের বৈদেশিক সার্ভিসে যোগদানের কারণে ৬৬ জন সদস্য বাদ পড়েন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
ফলে বাকি ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়। এদের মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় ১ জন ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) ও ২ জন স্বতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় গণপরিষদের দলীয় নেতা নির্বাচিত হন।
কার্যক্রম : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। এ অধিবেশনে শাহ আব্দুল হামিদ স্পিকার ও মোহাম্মদউল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল গণপরিষদ তার কার্যপ্রণালী বিধি প্রণয়ন করে।
১২ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্যই গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। এ কমিটিতে ৪ জন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীসহ ৩৩ জন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ছিলেন। কমিটির একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য ছিলেন ন্যাপ (মোজাফ্ফর) এর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
একজন মহিলা সদস্যও এ কমিটিতে স্থান পান। তিনি হলেন ড. রাজিয়া বানু। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উপস্থাপন করেন। ১৯ অক্টোবর সংবিধানের ওপর প্রথম পাঠ শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে । অতঃপর ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলে ।
৪ নভেম্বর সংবিধানের তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত সাধারণ বিতর্কে মোট ৪৮ জন সদস্য অংশ নেন। শেষ দিন মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে এ বিতর্ক শেষ হয় এবং বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে এটি কার্যকর হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধান একটি দেশ পরিচালনার মূল মানদণ্ড। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গণপরিষদ আদেশ জারি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ। গণপরিষদকে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা না হলেও গণপরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকেই সংবিধান রচনা কমিটি গঠিত হয়।
এ কমিটি নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয় ।
০৫. সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর যৌক্তিকতা তুলে ধর ৷
অথবা, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী কি যৌক্তিক ছিল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭২ সালে যে মূল সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল তা ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীতে অনেক পরিবর্তন করা হয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ছিল চতুর্থ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন সাধন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর যৌক্তিকতা : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর যৌক্তিকতাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. নৈরাজ্যের অবসান ঘটানো : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে চলমান গুপ্ত হত্যা, অর্থনীতির ব্যাপক ধ্বংস সাধন, ধ্বংসমূলক তৎপরতা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দালালদের ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনগুলোর বিধ্বংসী তৎপরতা, আগ্নেয়াস্ত্রের প্রদর্শন ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড, চোরাচালান, অবৈধ মজুতদারি ও কালোবাজারির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা প্রভৃতি সমাজ ও রাজনীতিতে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছিল।
তাই সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একক কর্তৃত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল । সেদিক থেকে এটি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক।
২. জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা : তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাই জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে চতুর্থ সংশোধনী আনয়ন করা হয়। বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য একদল করা হয়েছে।
যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, ৪টি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, সৎপথে চলে, তারা সবাই এ দলের সদস্য হতে পারবে।” অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যই এ সংশোধনী করা হয়।
৩. শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা : জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গ্রহণের প্রাক্কালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, শোষণহীন সমাজব্যবস্থা এবং শোষিতের সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহৎ লক্ষ্যে সংবিধানে সংশোধনী আনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল ।
” কাজেই বলা যায়, রাষ্ট্রের সামগ্রিক শোষণ, নির্যাতন দূরীকরণে চতুর্থ সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা ছিল ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
৪. অর্থনৈতিক সংকট : যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ দুর্যোগময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশে দুর্ভিক্ষের মরণাঘাত, খাদ্যাভাব এবং বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা প্রভৃতি অর্থনীতিকে গ্রাস করে ফেলেছিল। দেশের শিল্প ও কৃষিখাতে উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছিল।
তাই কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব দূরীকরণ, বেকারত্ব হ্রাস প্রভৃতির মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে চতুর্থ সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছিল ।
৫. দুর্নীতি : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ব্যাপক আকারে আমলাতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রকট আকার ধারণ করে। যে কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছিল। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৫০% ছিল দুর্নীতির ধারক ও বাহক। প্রশাসনে নিয়োজিত আমলারা ছিল ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির সাথে যুক্ত।
এ অবস্থা সমাজব্যবস্থায় ব্যাধির ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই এ অবস্থার নিরসনকল্পে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের বুকে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক নৈরাজ্য, জাতীয় ঐক্যের অভাব, বেকারত্ব, সমাজবিরোধীদের তৎপরতা প্রভৃতি দুষ্টক্ষতরূপে দেখা দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু এসব দুষ্টক্ষত নিরসনের জন্য প্রশাসনিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অতএব বলা যায়, সময়ের বিচারে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী যুক্তিযুক্ত ছিল।
০৬ মৌলিক অধিকার কী?
অথবা, মৌলিক অধিকার কাকে বলে?
উত্তরঃ ভূমিকা : মৌলিক অধিকার হলো সেসব সুযোগ সুবিধা যেগুলো ছাড়া নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় না। বিশ্বের অপরাপর দেশের সংবিধানের ন্যায় বাংলাদেশ সংবিধানেও নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংযোজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৭ নং অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মৌলিক অধিকার সাধারণত অধিকার বলতে বুঝায় আইন দ্বারা সীমিত একজন ব্যক্তির কোনোকিছু করার স্বাধীনতা অথবা কোনোকিছু নিজের অধীনে রাখা বা অন্যের কাছ থেকে কোনোকিছু গ্রহণ করা।
এসব সুবিধা ছাড়া নাগরিক জীবন জটিল হয়ে যায়। অধিকারের ধারণার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মৌলিক অধিকার হলো সেসব প্রাকৃতিক অধিকার এবং নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত।
গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তিই হলো এ মৌলিক অধিকার। সুতরাং বলা যায়, “মৌলিক অধিকার হলো নাগরিক জীবনের বিকাশ ও ব্যাপ্তির জন্য সেসব অপরিহার্য শর্ত বা সার্বভৌম সংবিধান হতে প্রাপ্ত এবং সরকারের পক্ষে লঙ্ঘনীয়।” মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য বজায় রাখে। কেননা অধিকার ছাড়া কর্তব্য পালিত হয় না।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
অর্থাৎ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করলে তারা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালন করবে না। সরকার সাধারণ আইনের মাধ্যমে সংবিধানের সংশোধন অথবা জরুরি অবস্থা ব্যতীত মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যায় না। সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ঘোষণা সরকারের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, মৌলিক অধিকারের ওপর সরকারের অযথা হস্তক্ষেপের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকারগুলো অত্যন্ত যুগোপযোগী ছিল। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।
কিন্তু এ মৌলিক অধিকারগুলো শুধু কাগজে-কলমে উল্লেখ করলেই হবে না বরং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্যে দেশের নির্বাহী বিভাগকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৭. ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ কী?
অথবা, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণগুলো উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭ মার্চের নির্বাচনে মোট ১৪টি দল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ৩১৫ আসনের মধ্যে ৩০৮টি আসন পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে ।
আওয়ামী লীগের বিজয়ের পিছনে বেশকিছু কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ : ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব : ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনে, যা ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে সহায়তা করে।
২. বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা : ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সদ্য সমাপ্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এবং এর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মাথায় জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দেয়। আর এ সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে তার এ জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷
৩. শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব : ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলো তখনও সংগঠিত হতে পারেনি। যার কারণে নির্বাচনে তাদের প্রভাব কম ছিল।
তাছাড়া বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচনা করলেও কোনো বিকল্প সাংবিধানিক পরিকল্পনা কিংবা আর্থসামাজিক কর্মসূচি উত্থাপনে ব্যর্থ হয়। যার কারণে সাধারণ ভোটারগণ বিরোধী দলগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়নি।
৪. ৬ দফার প্রভাব : ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের আরেকটি কারণ ছিল ৬ দফার প্রভাব । বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের প্রতীক হিসেবে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন । স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ ৬ দফা দাবি ভিত্তি হিসেবে ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
মুক্তির সনদ বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচি জনগণকে এ দলের প্রতি আকৃষ্ট হতে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে। যার প্রভাব ১৯৭৩ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শেখ মুজিবের তুমুল জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্ব, সর্বোপরি অগ্রণী নেতৃত্ব, বিরোধী দলের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ প্রভৃতি অনুঘটকগুলো আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণকে আকৃষ্ট করেছিল। যার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে।
০৮. বাকশাল কী?
অথবা, বাকশাল বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) আওয়ামী লীগের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা এবং বহুদলীয় শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
আর এ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দলের নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) ।
বাকশাল : বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) নামে একটি জাতীয় দল গঠন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দলের চেয়ারম্যান হন এবং বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও সকল মন্ত্রী এর সদস্য বলে গণ্য হন।
ক্যাপ্টেন (অব.) এম. মনসুর আলী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় দল হিসেবে গঠিত হয়। যার ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৭৫ সালের ৭ জুন রাষ্ট্রপতি জাতীয় দল বাকশালের গঠনতন্ত্র জারি করেন এবং বিভিন্ন কমিটি নিয়োগ করেন।
সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় দলের সংগঠন, তার নামকরণ, নিয়মশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, সদস্যভুক্তি সংগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল এ এক অভিনব ব্যবস্থা, সাংগঠনিক দিক দিয়ে বাকশাল অনেকটাই কমিউনিস্ট পার্টির মতো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাকশাল কর্মসূচি জনসচেতনতায় বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ধারার সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল না; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে এটা ছিল একটি পরীক্ষামূলক বিষয়।
দেশের সংকট নিরসনের জন্য তিনি এটি সাময়িকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন মাত্র বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু জনগণকে এর গুরুত্ব বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ।
০৯. বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাকশাল গঠনের উল্লেখ কর।
অথবা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনীতে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে জাতীয় দল গঠন করতে পারবেন।
এ সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ বলে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ বা বাকশাল নামে একটিমাত্র জাতীয় দল গঠন করেন ।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাকশাল গঠনের কারণ : নিম্নে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাকশাল গঠনের কারণগুলো তুলে ধরা হলো :
১. জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল গঠনের প্রধান কারণ ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। যারা বাংলাকে ভালোবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, সৎপথে চলে তারা এ দলের সদস্য হতে পারত। এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও এ দলের সদস্য হতে পারত।
এভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ছিল বাকশাল গঠনের প্রধান কারণ ।
২. দুর্নীতির মূলোৎপাটন : বাকশাল গঠনের একটি অন্যতম কারণ হলো দেশে বিদ্যমান দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা। দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন “জনগণের সমর্থন ছাড়া সরকারি আইন করে কোনোদিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে আমি আপনাদের সাহায্য চাই।” আর এ লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল ।
৩. সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন : বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন করা ছিল বাকশাল গঠনের আরেকটি কারণ। কেননা পুরোনো পদ্ধতি একপ্রকার ফ্রি স্টাইল গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। এবং এ পদ্ধতি দেশের উদ্ভূত সমস্যাদির সমাধান করতে সক্ষম ছিল না।
৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য তিনি এ নতুন পদ্ধতির প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, পদ্ধতিগত পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা দেশে বিরাজমান উদ্বেগজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গুপ্ত হত্যা রোধ করতে পারত না। বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তিত এ পদ্ধতিকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।
৪. বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন এটি ছিল বাকশাল গঠনের অন্যতম কারণ। বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন করার উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব বাকশাল গঠনে অগ্রগামী হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে নতুন করে গড়তে হবে। থানায় ট্রাইব্যুনাল করার চেষ্টা করছি।
সেখানে যাতে মানুষ এক বছর, দেড় বছরের মধ্যে বিচার পায়, তার বন্দোবস্ত করছি।” আর এ উদ্দেশ্যেই তিনি বাকশাল গঠন করেন।
৫. কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি : বাকশাল গঠনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ ছিল কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। যুদ্ধোত্তর দেশে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন না ঘটায় এবং একই শিল্পের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ না করায় দেশের কৃষি উৎপাদন ও শিল্প উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধিত হয়নি।
তাই কৃষক ও কৃষির উৎপাদন, শিল্প ও শ্রমিকের মান উন্নয়ন প্রভৃতি পূর্ণোদ্যমে সম্পাদন করার জন্য বাকশাল নামে একটিমাত্র জাতীয় দল গঠন করা হয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছিল।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটিমাত্র জাতীয় দলের ছত্রছায়ায় আসার জন্য ‘বাকশাল’ নামে একটি জাতীয় দল গঠন করেন এর উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতির মুলোৎপাটন করা, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রোধ করা সর্বোপরি জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা।
১০. বাকশালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
অথবা, বাকশালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) আওয়ামী লীগের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা এবং বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় আর এ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দলের নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) ।
বাকশালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : বাকশালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে নানামুখী বক্তব্য রয়েছে। বাকশাল গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র এ ৪টি মূলনীতি বাস্তবায়ন করাই ছিল বাকশালের অন্যতম লক্ষ্য।
২. মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের স্বীকৃতি দান করা ।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপসাধন করা।
৪. বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি বিধান করা।
৫. নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা ।
৬. কৃষক-শ্রমিকসহ মেহনতি ও অনগ্রসর জনগণের ওপর শোষণ অবসানের জন্য পূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শোষণমুক্ত ও সুসম সাম্য ভিত্তিক এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
৭. মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করা।
৮. মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বেকারত্ববদূরীকরণ ও অধিকতর কর্মসংস্থান বিপ্লবোত্তর সমাজের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণমুখী সর্বজনীন সুলভ গঠনাত্মক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০ম-সংক্ষিপ্ত) *
৯. সর্বাঙ্গীণ-গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও পর্যায়ক্রমিক যান্ত্রিকীকরণ এবং সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ পদ্ধতির প্রচলন করা।
১০. বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টায় সাহায্য ও সহযোগিতা করা এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বা বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত মুক্তির সংগ্রামকে সমর্থন করা।
১১. ব্যক্তিগত সম্পত্তির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা ।
১২. কৃষি ও শিল্পের প্রসার, উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন বণ্টন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কৃষক শ্রমিকের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা ।
১৩. অন্ন-বস্ত্র, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যরক্ষাসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারণের মৌলিক সমস্যাবলির সমাধান, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বয়ম্ভর অর্থনীতির সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করা।
১৪. বিচারব্যবস্থার কাযোপযোগী জনকল্যাণকর পরিবর্তনসাধন এবং গণজীবনের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতির মুলোৎপাটন করা ছিল যার অন্যতম উদ্দেশ্য ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাকশালের উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতির মুলোৎপাটন করা, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা, সর্বোপরি জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা । এসব মহৎ উদ্দেশ্যে বাকশাল গঠিত হলেও জনগণ একে গ্রহণ করেনি। ফলে এটি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের একটি ব্যর্থতার দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।