স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৮.০৫. ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের বর্ণনা দাও।
অথবা, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭০ সালে নির্বাচনে ইয়াহি গান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিতে টালবাহানা শুরু করে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রথমে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে।
নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের গড়িমসি ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর অসহযোগিতা ছিল এ অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ।
১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন : নিম্নে ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা : অসহযোগ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা । আইয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৫ মার্চ এক বেতার ভাষণে পরবর্তী নির্বাচন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সামরিক সরকার পূর্ব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে যায় এবং নির্বাচনে ফলাফলের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে।
ফলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সামরিক সরকারের এ ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করে আলোচনার পাশাপাশি আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখে এবং মার্চের প্রথম থেকে অসহযোগ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত ঘটে। ফলে দেশব্যাপী প্রচণ্ড অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা হয়।
২. পিপলস পার্টির ষড়যন্ত্র : ১৯৭০ এর নির্বাচনে পরাজিত দল পিপলস পার্টির ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের আরেকটি কারণ ছিল। নির্বাচনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর যোগসাজশে সামরিক চক্র সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনোক্রমেই শেখ মুজিব তথা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না ।
এরূপ পরিস্থিতিতে শুধু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করা শেখ মুজিবের কাছে সুদূরপরাহত মনে হচ্ছিল। যে কারণে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেন ।
৩. স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাখ্যান : স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার ছিল অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে অটল থাকেন। কিন্তু ভুট্টো স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করেন।
এভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলসমূহ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে দুই মেরুতে অবস্থান করেন । আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি অক্ষুণ্ণ রাখে। অপরদিকে, পিপিপিসহ অন্যান্য ডানপন্থি দলসমূহ শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করতে থাকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এভাবে স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাখ্যাত হলে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পান।
৪. ৬ দফা দাবি অস্বীকার : বাঙালির প্রাণের দাবি ৬ দফা দাবি অস্বীকার অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ ছিল । ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা করেন তিনি আওয়ামী লীগের ৬ দফা মানতে রাজি নন এবং আওয়ামী লীগ তাদের দাবি সংশোধন না করলে তিনি জাতীয় পরিষদ বর্জন করবেন।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্ট করে ঘোষণা করেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার যদি পশ্চিম পাকিস্তান তার দলের ৬ দফা কর্মসূচি পুরোপুরি মেনে না নেয়, তাহলে তিনি একাই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবেন ।
কিন্তু ইয়াহিয়া ভুট্টোর দাবির নিকট মাথা নত করেন ফলে বঙ্গবন্ধু বাধ্য হয়ে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের পথ বেছে নেন ।
৫. অধিবেশন স্থগিতকরণ : জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতকরণ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় সংসদের অধিবেশন ঢাকায় বসবে ৩ মার্চ, ১৯৭১; কিন্তু ভুট্টোর চক্রান্তে তিনি ১৯৭১ সালের ১ মার্চ এক ঘোষণা জারির মাধ্যমে ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান দলটি এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানে আগ্রহী নয়।
সেজন্য আমি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারের এরূপ আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে বাংলাদেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফলে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৬. প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন : অসহযোগ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ইয়াহিয়া খানের হঠাৎ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করা। ৭ মার্চ ইয়াহিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি কঠোর প্রকৃতির সামরিক অফিসার জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করেন ।
শুধু তাই নয়, আলোচনার অন্তরালে শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা শুরু করে। হঠাৎ এ ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তন বঙ্গবন্ধুসহ সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করে তোলে । ফলে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলে এ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে ।
৭. পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ছিল ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত ৫ হওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংস্থা পিআইও-তে করে বেসামরিক পোশাকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য নিয়ে আসা হয় ।
সিনিয়র আর্মি অফিসার ও বড় বড় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পরিবারবর্গকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। নগদ টাকাও ব্যাপকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা হচ্ছিল। ইয়াহিয়া খানের এরূপ কার্যকলাপের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
৮. সামরিক সরকারের অসহযোগিতা : পাকিস্তানি সামরিক সরকারের অসহযোগিতা অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। সামরিক সরকার নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা করেছিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
কিন্তু দিন যত যেতে থাকে সামরিক সরকার ততই তার পূর্ব প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। তাছাড়া সামরিক সরকার পশ্চিম পাকিস্তানি দলগুলোর সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বার বার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন পিছাতে থাকে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
সামরিক সরকারের এরূপ আচরণ বাঙালি জনগণকে সামরিক সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে । এর ফলে জনগণ অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি উদ্বুদ্ধ হতে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর তীব্র বিরোধিতা এবং ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জনগণকে ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে।
তাছাড়া সামরিক সরকার বাঙালি স্বায়ত্তশাসন ও ছয় দফাভিত্তিক চলমান আন্দোলনকে অস্বীকার করতে শুরু করে, যা অসহযোগ আন্দোলন সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সর্বোপরি নির্বাচনি ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল।
সেটি ছিল অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ ।
৮.০৬. অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হন্তান্তর না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে ।
ফলে বাঙালি জাতি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রথমে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন চলমান ছিল।
অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব : নিম্নে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো :
১. মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব : যেকোনো যুদ্ধ বা সংগ্রাম যেমন একদিনে বা হঠাৎ করে সংঘটিত হয় না এর জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘ প্রস্তুতির। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তেমনি একদিনে বা হঠাৎ করে সংঘটিত হয়নি এর জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি চলেছিল । আর ‘৬৯ এর অসহযোগ আন্দোলন ছিল এরূপ প্রস্তুতির একটি উজ্জ্বল মঞ।
সেখানে আসন্ন মুক্তিসংগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। আর এক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল ব্যাপক।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট মার্কসবাদী, লেনিনবাদী, ভাসানীর ন্যাপ প্রভৃতি ভিন্ন আদর্শভিত্তিক দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের আদর্শে ঐকমত্য পোষণ করেছিল।
যা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করেছিল। আর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।
৩. স্বৈরশাসনের দুর্বলতা প্রকাশ : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক স্বৈর সরকারের দুর্বলতা ক্রমশ জনগণের সামনে প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে জনগণ অসহযোগ আন্দোলনকে । ভিত্তি করে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
জনগণ বুঝতে পারে বৃহত্তর আন্দোলন করতে পারলে যেকোনো সামরিক সরকারের মতো পাকিস্তানি সামরিক শাসনের পতন ঘটানো সম্ভব। ১০ মার্চ সরকার এক সামরিক আদেশ জারি করে সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে।
ফলে সামরিক শাসনের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। আর এক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম
৪. বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্ব বৃদ্ধি : অসহযোগ আন্দোলন সামরিক শাসনের ভিত দুর্বল করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্ব বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল মূলত ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের প্রশাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তান পরিচালিত হতে থাকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
তিনিই হয়ে ওঠেন সরকার প্রধান এবং তার ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন পরিণত হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের অনুরূপ। জনগণ শেখ মুজিবকে তাদের জাতীয় নেতা হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে এবং তার ঘোষণা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ফলে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য এবং তার কর্তৃত্ব বৃদ্ধিতে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
৫. বঙ্গবন্ধুর পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা : অসহযোগ আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা বাঙালি জনগণকে মুক্তিসংগ্রামের প্রতি প্রবল আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের শোষণ, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি, কর্মসূচি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে তাদের মোকাবিলার নির্দেশ দেন।
যা অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করে এবং এ অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি পরবর্তীতে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৬. প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা : অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তুলতে থাকে মুক্তিবাহিনী, যারা ২৫ মার্চের আক্রমণের পর পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
৭ মার্চের পর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন দলের সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, থানা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিরোধ প্রস্তুতি গড়ে উঠতে থাকে যা ২৬ মার্চের পর পরিপূর্ণতা পায় ।
৭. বাঙালি জাতীয়তাবোধের জাগরণ অসহযোগ আন্দোলন বাঙালি জনগণের মধ্যে দলমত নির্বিশেষে জাতীয়তাবোধের জাগরণ সৃষ্টি করে। এ আন্দোলনের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। জনগণ ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে।
এভাবে অসহযোগ আন্দোলন জাতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগরিত করার সাথে সাথে সাধারণ জনগণের মধ্যেও জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৮. মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান : জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। যার দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতাহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি বীরদর্পে ঘোষণা করেন “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক। স্বাধীন কর স্বাধীন কর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, গ্রামে গ্রামে দুর্গ কর মুক্তিবাহিনী গঠন কর, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর, মুক্তি যদি পেতে চাও, বাঙালিরা এক হও। “
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এভাবে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ঘোষণা ও ইশতাহারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানানো হয়। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের গড়িমসির প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এ আন্দোলনে উদীপ্ত হয়ে জনগণ স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা করেছিল।
যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
৮.০৭. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশ ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব আলোচনা কর
উত্তরঃ ভূমিকাঃ দীর্ঘ চব্বিশ বছর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন করে। এ অবস্থার অবসানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণ নামে পরিচিত ।
তিনি এ ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন । ১৮ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তথ্যবহুল এবং স্বাধিকার মন্ত্রে উজ্জীবিত ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব : নিম্নে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা : ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি তার ভাষণের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের পরোক্ষ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেছিলেন।
এ ভাষণে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তার এই স্বাধীনতার বাণী লাখো লাখো বাঙালির কাছে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে উৎসাহ জুগিয়েছিল।
২. অসহযোগ আন্দোলনের গতিশীলতা বৃদ্ধি : অসহযোগ আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব। আর এ অসহযোগ আন্দোলন গতিশীল রূপলাভ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর যখন শেখ মুজিব তাঁর ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ৩৫ দফাভিত্তিক নির্দেশনামা জারি করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এ নির্দেশনামা প্রকাশিত হওয়ার পর অসহযোগ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। জনগণ সামরিক সরকারকেই অসহযোগিতা করতে শুরু করে। সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে ওঠে।
এভাবে অসহযোগ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রস্তুতিক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। তাই বলা যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ পাকিস্তানি সামরিক সরকার ৭ মার্চের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা না দেখালেও ৭ মার্চের ভাষণের পর তারা নড়েচড়ে বসে।
কেননা বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী প্রচার করেন এবং প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের যে বাণী উচ্চারণ করেন তাতে পাক সামরিক সরকার বাঙালি জনগণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। তারা বাংলাদেশের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করতে শুরু করে ।
৪. অনুপ্রেরণা সৃষ্টি : বাংলার স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম কেননা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশ বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, দেশাত্মবোধক গান, নাটক, কথিকা ও উদ্দীপণামূলক বক্তব্য প্রচার করা হতো, যা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে ভূমিকা রাখে।
ফলে মুক্তিযোদ্ধারা ভাষণ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিপুল উদ্যমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে জয়লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।
৫. প্রতিরোধ কমিটি গঠন : ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাড়া, মহল্লায়, ইউনিয়ন, গ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। যার ফলশ্রুতিতে দেশব্যাপী প্রতিরোধ কমিটি গড়ে ওঠে। ৭ মার্চের পর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন দলের সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
প্রত্যেক জেলা, মহকুমা, থানা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিরোধ প্রস্তুতি গড়ে উঠতে থাকে যা ২৬ মার্চের পর পরিপূর্ণতা পায়। তাই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনে ৭ মার্চের ভাষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬. সম্মিলিত আন্দোলনের সূচনা : ৭ মার্চের ভাষণের পর শুধু আপামর জনসাধারণই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।
ভাসানীর ন্যাপ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতি রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে সহমত পোষণ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করে।
যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।
৭. যুদ্ধের প্রস্তুতি : বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, তোমাদের যা যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।
রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।” এভাবে তিনি মুক্তিসংগ্রামের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আদেশ দেন এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানান।
এর ফলশ্রুতিতে দেশের সর্বত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় এবং ২৬ মার্চের পর পূর্ণদ্যোমে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তাই যুদ্ধের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ছিল বর্ণনাতীত।
৮. মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি : রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে স্বীকৃত হলেও বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ তারিখের ঘোষণার পর পরই দেশে বাঙালি ও সরকার উভয়পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
সামরিক সরকার বাঙালি দমনে মরিয়া হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, বাঙালি জনগণ মুক্তিসংগ্রামের প্রতি আরও বেশি ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৯. যুদ্ধের নির্দেশ প্রদান : বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। কেননা শেখ মুজিব এ ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জনগণ, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।
যার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে প্রয়াসী হয়। তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান তার ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধে এ ভাষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো।”
শুধু ছাত্র-শ্রমিক নয় সামরিকবাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও ভাষণের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। মূলত বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের যুদ্ধের দিকনির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিকামী মানুষ তাদের গতিপথ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিল ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
জনগণ এ ভাষণের পর থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করেছিল। সর্বোপরি ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণার বাণী প্রচারিত হয়েছিল যা বাঙালি ও সামরিক সরকারের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।