স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা আন্দোলন
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৭.০৩. উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের গঠন ও কর্মসূচি আলোচনা কর ।
অথবা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের গঠন ও এর কার্যাবলি বা কর্মসূচিসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্রদের ১১ দফা দাবি বা কর্মসূচি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১১ দফা ছিল ছাত্রসমাজের গৃহীত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি।
এ কর্মসূচি ১৯৬৮-৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীকালে তা ছয় দফা কর্মসূচির সাথে মিলিতভাবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনকে উৎসাহিত করে ।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন : ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান কর্তৃক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করার পর বাঙালি মাত্রই কারো বুঝতে বাকি থাকে না যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে জাতি হিসেবে চিরদিন নিজেদের পদানত করে রাখতে চায়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৬ দফাপন্থি অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ১৯৬৬ সাল থেকে বন্দি অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে থাকায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বভার সচেতন ছাত্রসমাজের ওপর চলে আসে।
১৯৬৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করতে ছাত্রদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
ছাত্রদের মধ্যে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মেনন ও মতিয়া উভয় গ্রুপের মধ্যে তখন কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক সমর্থক ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই ঢাকায় ৬ দফাপন্থি আওয়ামী লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
এ কাউন্সিল সভায় আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রকে পার্টির আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে বলে আশ্বস্ত করে। পার্টি ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে জাতীয়করণের এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের নীতি গ্রহণ করে।
উক্ত কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টোতে অনেক প্রগতিশীল পরিবর্তন আনয়ন করতে যাচ্ছে।
কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠানের পর পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন ও মতিয়া উভয় গ্রুপ) সহ কতিপয় ছাত্র সংগঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুববিরোধী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (Students Action Committee) গঠন করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
ডাকসুর তৎকালীন সহ সভাপতি ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এর সভাপতি নির্বাচিত হন দেশে যখন নেতৃত্বের অভাব ঠিক সেই সময়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ১১ দফা দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। নিম্নে কর্মসূচিগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো :
১. সচ্ছল কলেজসমূহকে প্রাদেশিকীকরণের নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে সর্বত্র বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজ স্থাপন করতে হবে এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজসমূহকে দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে।
ছাত্রদের বেতন শতকরা ৫০ ভাগ হ্রাস করতে হবে। হল, হোস্টেলের ডাইনিং হল ও ক্যান্টিন খরচের শতকরা ৫০ ভাগ সরকার কর্তৃক সহায়তা হিসেবে প্রদান করতে হবে। নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
ট্রেন, স্টিমার ও লঞ্চে ছাত্রদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে হাফ পাস টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। অনুপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।
২. পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো হবে ফেডারেশন শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্রসংঘ এবং আইন পরিষদের ক্ষমতা অবশ্যই সার্বভৌম হবে।
ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা, দেশ রক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও মুদ্রা এই কয়টি বিষয় নির্ধারিত থাকবে। অন্যান্য সব বিষয়ে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা হবে নিরঙ্কুশ। দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে।
এই ব্যবস্থায় মুদ্রা কেন্দ্রের হাতে থাকবে কিন্তু শাসনতন্ত্রে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়ে না যায়। এ প্রস্তাবনা অনুসারে পাকিস্তানের একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। দুই অঞ্চলে দুটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক অর্থনীতি প্রবর্তন করতে হবে।
সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, কর ধার্য ও আদায়ে ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ফেডারেশনের প্রতিটি রাষ্ট্র বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে এবং বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত মুদ্রা অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর অধীনে থাকবে।
পূর্ব পাকিস্তানকে মিলিশিয়া বা প্যারামিলিটারি রক্ষীবাহিনী গঠনের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৩. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাকস্বাধীনতা হতে, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হতে এবং দৈনিক ইত্তেফাকের ওপর হতে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. ব্যাংক, বিমা, পাট ব্যবসা ও বৃহৎ শিল্পকারখানাগুলোর জাতীয়করণ নিশ্চিত করতে হবে ।
৫. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিল করে ‘সাব-ফেডারেশন’ গঠন এবং বেলুচিস্তান সীমান্ত প্রদেশ ও সিন্ধুসহ সকল প্রদেশকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।
৭. কৃষকদের ওপর হতে খাজনা ও ট্যাক্সের হার কমাতে হবে এবং বকেয়া খাজনা ও তহশিলদারদের অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। পাটের সর্বনিম্ন মূল্য মণ প্রতি ৪০ টাকা নির্ধারণ এবং আখের ন্যায্যমূল্য প্রদান করতে হবে।
৮. সব শ্রেণির শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, বোনাস দিতে হবে এবং শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে । শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কালাকানুন প্রত্যাহার করতে হবে এবং ধর্মঘটের অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৯. জরুরি আইন প্রত্যাহার, নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
১০. সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করে জোট বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম।
১১. বিভিন্ন কারাগারে আটক সকল ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি, গ্রেফতার পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন একটি অন্যতম মাইলফলক হিসেবে দেখা দেয়।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যে ১১ দফা কর্মসূচি পেশ করা হয় তা বাঙালির স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রধান ভিত্তি হিসেবে অভিহিত।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এ আন্দোলনের ফলেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন জোরদার করতে সহায়তা করে।
সুতরাং এ কথা নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে, ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এর গঠন ও কর্মসূচি ঘোষণা ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
৭.০৪. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি উল্লেখপূর্বক এর গুরুত্ব/তাৎপর্য আলোচনা কর ।
অথবা, ৬৯ সালের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর । এর প্রভাব/ভূমিকা বর্ণনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিরীহ বাঙালির ওপর নির্যাতন, শাসন, শোষণ, অত্যাচার চালায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি জাতি মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬ দফা কর্মসূচি ও ১১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে।
যখন ৬ দফা দাবি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনকে বেগবান করে। ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচি : আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যখন ছাত্রনেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল তখন ছাত্রসমাজের ওপর গুলি চালানো হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এতে ছাত্রসমাজ আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে এজন্য ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা দাবি জানায়। নিম্নে ১১ দফা কর্মসূচির নীতিমালা বর্ণনা করা হলো :
১. জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কালাকানুন বাতিল ঘোষণা এবং বেতন ও অন্যান্য ফি কমিয়ে শিক্ষার ব্যয়সংকোচের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং একই ব্যবস্থায় দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রাসংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাখা।
৪. পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ প্রত্যেক প্রদেশের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে দেশের পশ্চিম অংশে একটি সাব-ফেডারেশন গঠন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৫. ব্যাংক, বিমা, ইন্স্যুরেন্স ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে।
৬. কৃষকের ওপর থেকে খাজনা ও ট্যাক্সের বোঝা হ্রাস করা, বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওফুক করা, সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল করা, পাট, আখের ন্যায্যমূল্য প্রদান করতে হবে।
৭. ক. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বোনাস প্রদান করতে হবে।
খ. শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুবিধা প্রদান করতে হবে।
গ. শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী সকল ধরনের নিয়মকানুন বাতিল করতে হবে ।
ঘ. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার প্রদান করতে হবে ।
৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং পানি সম্পদের সার্বিক সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
৯. সকল প্রকার নিরাপত্তামূলক আইন, জরুরি অবস্থা আইন, নির্যাতনমূলক আইন ও অন্যান নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
১০. সিয়াটো (ঝঊঅঞঙ), সেন্টো (ঈঊঘঞঙ), পাকিস্তান ও মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করা এবং জোট বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা ।
১১. তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক সকল রাজবন্দির গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল ও নিঃশর্ত মুক্তির ঘোষণা করতে হবে।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির গুরুত্ব/তাৎপর্য : ১১ দফা দাবির মধ্যে ৬ দফাভিত্তিক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথাই ছিল না, এর সাথে সর্বজনীন ভোটাধিকার, প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি ৮টি বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ঐক্যজোট গঠন করে নিম্নে ১১ দফার দাবির গুরুত্ব/তাৎপর্য আলোচনা করা হলো :
১. জাতীয় স্বার্থ প্রতিষ্ঠা : ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচি একটি ছাত্র। আন্দোলন হলেও এটি ছিল মূলত পূর্ববাংলার আপামর জনগণের স্বার্থরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। এতে জনগণের স্বার্থের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. আন্দোলনের গতিধারা নির্দিষ্টকরণ : শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক করা হলে পূর্বপাকিস্তানের জনসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এসময় সচেতন ছাত্রসমাজের বিখ্যাত ১১ দফা বিক্ষুব্ধ জনসমাজকে সুসংগঠিত করে গণআন্দোলনের সঠিক গতিধারা নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে
৩. নিম্নমধ্যবিত্তের স্বার্থ সংরক্ষণ : ছাত্রসমাজের ১১ দফা ছিল পূর্বপাকিস্তানের কৃষক-শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণজনিত কর্মসূচি। তাই ১১ দফা রাজনৈতিক অঙ্গনে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ উদ্ধারের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
৪. দলগত ঐক্য গঠন : ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলনের তীব্রতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যসূত্র গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা জোগায়। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে ৮টি রাজনৈতিক দল ‘DAC’ (Democratic Action Committee) গঠন করে।
৫. ঝঅঈ গঠন : পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ মিলিত হয়ে SAC (Student Action Committee) গঠন মূলত ১১ দফারই অন্যতম ফসল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
মূলত উক্ত ছাত্র সংগ্রাম কমিটিই গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।
৬. স্বাধীনতা আন্দোলন : গণআন্দোলনে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। বিখ্যাত ৬ দফা এবং ছাত্রসমাজের ১১ দফাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয় এবং এ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
তাই ১১ দফা ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১১ দফা দাবি ছিল তৎকালীন ছাত্রসমাজের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি।
আইয়ুব সরকারের সামরিক শাসন, মনগড়া সংবিধান প্রণয়ন, জনগণের অধিকার খর্ব, নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার ও মামলা হামলার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের ১১টি দাবি ছিল ব্যাপক প্রতিবাদ। এতে আইয়ুব সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।
ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবিই ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও পূর্ববাংলার মানুষের সকল দাবি ফিরিয়ে জোরালো পদক্ষেপ ।
৭.০৫. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য পর্যালোচনা কর।
অথবা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও ফলাফল আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাংলার সাহসী পুরুষদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
এ অভ্যুত্থান স্বৈরাচারী আইয়ুবের পতন ঘটিয়ে তার সকল স্বপ্নসাধকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এজন্য বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। এ অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ নিম্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ আলোচনা করা হলো :
১. সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির স্বার্থরক্ষা : পূর্ববাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থকে সংরক্ষণ করার জন্য ৬ দফা কর্মসূচি রচিত হয়েছিল। কিন্তু এগারো দফা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পূর্ববাংলার ছাত্রছাত্রীসহ কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা।
মূলত দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীর লক্ষ্যার্জনের জন্যই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. স্বায়ত্তশাসনের দাবি : স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনেক পূর্ব থেকেই করে আসছিল।
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যদিও তারা উক্ত আন্দোলনে স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
আবার তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে।
পাকিস্তানিদের তেইশ বছরের শাসনামল ছিল কলঙ্কময় তাই স্বায়ত্তশাসনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাঙালি জাতিকে আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে এবং বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে।
৩. দমননীতি গ্রহণ : আইয়ুব সরকারের দমননীতি গ্রহণ ছিল ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য কারণ।
সমগ্র পাকিস্তানের গণতন্ত্রমনা জনগণ যখন আইয়ুব শাসনের একনায়কসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে, সরকার তখন অসহিষ্ণু হয়ে নির্যাতন ও নিপীড়নের পন্থা অবলম্বন করে ফলে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৪. জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ : পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে জাতীয়তাবোধের জন্ম হয়েছিল।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার পুনর্জাগরণ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এত বেশি প্রভাব ফেলে যার ফলে পরবর্তীতে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে।
৫. আজীবন ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আজীবন ক্ষমতার টিকে থাকার ষড়যন্ত্র।
১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্ষমতায় থেকে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করলে তা স্বায়ত্তশাসনের আশায় ‘৬৬ সালে প্রণীত ৬ দফ রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ‘৬৮-‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে সুপ্রশস্ত হয় ।
এরই ধারাবাহিকতায় সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে আনে স্বপ্নের স্বাধীনতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো :
১. আগরতলা মামলা প্রত্যাহার : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব মোনায়েম চক্র আগরতলা মামলা দায়ের করে।
কিন্তু বাংলার মুক্তি পাগল জনতা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় ও অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে ও মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ।
২. গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান : গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতা প্রশমনের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করে। এ বৈঠকে ৬ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
ফলে গণআন্দোলন আবারও তীব্ররূপ ধারণ করে এবং পাকিস্তানের প্রশাসন যন্ত্র অচল হয়ে পড়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি : সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অবশেষে ২০ মার্চ আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে তীব্র আন্দোলনের মুখে রাওয়ালপিন্ডিতে পুনরায় গোলটেবিল বৈঠক বসে ।
এই বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যথা :
র. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে,
রর. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে ও
ররর. সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
৪. বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গোলটেবিল বৈঠক বর্জন রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেন কিন্তু ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় বঙ্গবন্ধু গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
৫. আইয়ুব সরকারের পতন : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করে লৌহমানব খ্যাত ‘আইয়ুব খান পদত্যাগে বাধ্য হন।
৬. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার অর্জনের চেতনায় জাগ্রত করে তোলে।
এদিকে পূর্ব পাকিস্তানে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটতে থাকে তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৭. শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
তাছাড়া তিনি বাংলার জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৮ সালের ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি এক গণ সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৮. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : এ গণআন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। আর জাতীয়তাবোধ চেতনা থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করে।
৯. স্বাধীনতা অর্জন : পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এ গণআন্দোলনকে স্তব্ধ করার শত চেষ্টা করেও সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৭ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে পূর্ববাংলা ব্যাপক লাভবান হয়।
কেননা এ অভ্যুত্থানের কারণেই স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের আন্দোলন বাংলা বা বাঙালিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।