স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
০১.১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর ইয়াহিয়া খান | ঘোষণা করেন যে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত | প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে উক্ত নির্বাচনের ‘আইনগত কাঠামো আদেশ’ এর মূলধারাগুলো ঘোষণা করেন, যা নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল : নিম্নে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্লেখ করা হলোঃ
১. জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল : জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৭টি আসন লাভ করে। বাকি ২টি আসনের ১টি পায় পিডিপি নেতা নূরুল আমীন, অপরটি পায় নির্দলীয় প্রার্থী ত্রিদিব রায়।
উল্লেখ্য জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ন্যাপ (ভাসানী) জাতীয় লীগ, গণমুখী দল, পাকিস্তান ন্যাশনাল কংগ্রেস ও ইসলামি গণতন্ত্রী দলের ৪৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও কোনো আসন পায়নি । অপরদিকে, পিপিপি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮৮টি আসন লাভ করে ২য় স্থানে থাকে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭৫.১০% ভোট পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি । আবার পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আসন পায়নি।
২. প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল : পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। | আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে এবং অবশিষ্ট ১২টি পায় অন্যান্য দল ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে তোলে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্বাঞ্চলে শাসন করার বৈধতা হারায়। আওয়ামী লীগের এ বিজয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সুদৃঢ় করে। মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি।
০২. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণসমূহ লেখ ।
অথবা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ কী ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সাফল্যের পিছনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল ৬ দফার দাবিগুলো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের আরও নানাবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণসমূহ : নিম্নে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. ৬ দফাভিত্তিক নির্বাচনি ইশতাহার প্রণয়ন : আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ে ৬ দফাভিত্তিক নির্বাচনি ইশতাহার অবদান রেখেছিল। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ইশতাহারে ৬ দফাভিত্তিক দাবি পূর্ববাংলার জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছিল।
মূলত এসব * দাবি ছিল এ অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের প্রাণের দাবি এবং নির্বাচনের পূর্বেই এসব দাবি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ফলে নির্বাচনে জনসাধারণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে মূলত তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
২. শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ : পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিমাঞ্চলের শাসকবর্গ নানা উপায়ে পূর্বাঞ্চলকে শোষণ করতে থাকে। তাই নির্বাচনে পশ্চিমা দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে এ অঞ্চলের মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ তুলে ধরে। আর এ শোষণের ন প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
৩. বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্ব : বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্ব ‘৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় লাভে ভূমিকা রাখে। নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় এবং বক্তা হিসেবে সবার ঊর্ধ্বে। তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষকে সহজে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছিল ।
৪. মুসলিম লীগের জনবিচ্ছিন্নতা : মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও দলের কার্যক্রম ছিল জনবিরোধী। পূর্ব পাকিস্তানে এ দলটি ছিল সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন। এ কারণে নির্বাচনে মুসলিম লীগের ব্যাপক ভরাডুবি হয় এবং আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় সূচিত হয়।
৫. জাতীয়তাবোধের প্রভাব : অঞ্চলভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রভাব পড়েছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ববাংলায় যে স্বাতন্ত্র্যবাদ ও পৃথক জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল ‘৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তা আওয়ামী লীগের পক্ষেই ভূমিকা রেখেছিল । যে কারণে পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে তোলে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্বাঞ্চলে শাসন করার বৈধতা হারায়। আওয়ামী লীগের এ বিজয় বাঙালি নে জাতীয়তাবাদকে সুদৃঢ় করে। মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি।
০৩. অসহযোগ আন্দোলন কী?
অথবা, অসহযোগ আন্দোলন বলতে কী বুঝ ?
উত্তর : ভূমিকা : অসহযোগ আন্দোলন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালিরা যে স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তান শাসকদের চক্রান্তের ফলে সে স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত্ব ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ হতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সূচনা পর্ব ।
অসহযোগ আন্দোলন : ১৯৭০ নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলমান অসহযোগ আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম পর্ব।
নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের টালবাহানা ও ষড়যন্ত্র ছিল এ অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান কারণ।
এর প্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতামূলক কর্মসূচির ঘোষণা দেন যা অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। আর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরদিন থেকে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।
তার নির্দেশ অনুযায়ী দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। খাজনা, ট্যাক্স আদায় বন্ধ হয়ে যায়। ইয়াহিয়া খান পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ৭ মার্চ জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর করে পাঠান।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
১০ মার্চ সরকার এক সামরিক আদেশ জারির মাধ্যমে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৩ মার্চ সরকার পুনরায় সামরিক আইন জারি করলে ১৪ মার্চ শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে ৩৫ দফাভিত্তিক এক নির্দেশনা দেন। এতে বলা হয়ঃ
১. সরকারি বিভাগসমূহ, হাইকোর্ট, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ পূর্বের মতোই বন্ধ থাকবে।
২. বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৩. জেলা প্রশাসক ও মহকুমা প্রশাসকগণের অফিস বন্ধ থাকবে।
8. পুলিশ বিভাগ অনুরূপ কাজ পরিচালনা করবে ৫. কর, খাজনা বন্ধ থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রের পাশাপাশি বেসামরিক কর্মপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত এ অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি চলমান ছিল ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বাঙালিরা যে স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্তের ফলে সে স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ হতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন ছিল মূলত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সূচনা পর্ব।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৪ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ (১৯৭১) ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে টীকা লেখ ।
অথবা, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রধান প্রধান দিক কী ছিল?
উত্তরঃ ভূমিকা : পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির জাতীয়তাবোধের ইতিহাসে কোনো কোনো নেতার ভাষণ জাতির ইতিহাস পাল্টে দেয়। যেমন আব্রাহাম লিংকনের ‘গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস’, মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ উল্লেখযোগ্য ভাষণ।
তেমনি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর অন্যতম ধরা হয় ।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রধান প্রধান দিক : নিম্নে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রধান প্রধান দিক উল্লেখ করা হলো :
১. স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা : এটি ছিল এ ভাষণের অন্যতম দিক। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তার দীপ্ত কণ্ঠে এই ঘোষণা বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতার ডাক হিসেবে কাজ করেছিল।
২. মুক্তির আহ্বান : ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাক দেননি; বরং তিনি বাঙালিদের মধ্যে মুক্তির বাণীও প্রচার করেন। কেননা বাঙালি ছিল পাকিস্তানি সামরিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
তাই বাঙালি জনগণকে এ শৃঙ্খলের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ়কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো । তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। …রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
৩. প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তথা পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান । তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন যে, “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।
প্রত্যেক গ্রাম প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।”
৪. সামরিক সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সামরিক সরকারকে অগ্রাহ্য করেন। এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ১০ মার্চ ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠানের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি কতকগুলো শর্তারোপ করেন।
যেমন— ক. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। খ. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। গ. সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ ও নিরস্ত্র লোককে হত্যার তদন্ত করতে হবে। ঘ. নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৫. অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা নামা জারি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত ৭ মার্চের ভাষণের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনামা জারি করা। তিনি জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং দেশবাসীর প্রতি কতকগুলো নির্দেশ জারি করেন ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিরূপণকারী দিকনির্দেশনামূলক ঘোষণা। যে ঘোষণার মধ্যে বাঙালি জাতি মুক্তির বাণী খুঁজে পেয়েছিল। যে ভাষণে বাঙালি স্বাধীনতার সবুজ সংকেত পেয়েছিল।
পেয়েছিল চলমান অসহযোগ আন্দোলনের জন্য করণীয় দিকনির্দেশনা। এগুলোই ছিল ৭ মার্চের ভাষণের অন্যতম প্রধান দিক।
০৫ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব লেখ।
অথবা, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের গুরুত্ব লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ জনগণের তীব্র স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে এবং ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করে। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরোক্ষ বাণী জনগণের কাছে তুলে ধরেন।
যার দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে স্বাধীনতাকামী জনগণ মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব নিম্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. সচেতনতার উন্মেষ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতে বাঙালির প্রতি বৈষম্যের চিত্রটি তুলে ধরে বাঙালিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তা পূর্ববাংলার মানুষকে স্বাধিকার আদায়ে অনুপ্রাণিত করেছিল ।
২. অসহযোগ আন্দোলনের ডাক : ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়ার জন্য এদেশের মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
এ অসহযোগ আন্দোলনকে আস্তে আস্তে সংগ্রামে পরিণত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান । তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাছারি, আদালত ফৌজদারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
এভাবে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতার প্রতি উৎসাহিত করেন।
৩. মুক্তির আহ্বান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। তিনি তার ভাষণে বলেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। …রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেই, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।”
৪. দেশরক্ষার আহ্বান : ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে দেশরক্ষার আহ্বান জানান। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ দেশরক্ষার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশরক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মনে রাখবেন, বাঙালি, অনবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই।
তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়। কেননা শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। তাই এসব শত্রুবাহিনীর কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি।
৫. স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা : বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা ছিল। এখানে দেশকে মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। তিনি এ ভাষণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘোষণা না দিলেও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ ঘোষণার নির্দেশ দেন যা মুক্তিকামী জনগণের জন্য ছিল এক ধরনের সবুজ সংকেত।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
তিনি ভাষণে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি আরও বলেন, “তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো ।”
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
কেননা এ ভাষণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি দেশকে রক্ষার জন্য মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।
০৬. অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বুঝ?
অথবা, অপারেশন সার্চলাইট কী?
উত্তরঃ ভূমিকা : খ্রিস্টীয় বিংশ শতাব্দীর এক কলঙ্কজনক সামরিক অভিযান হলো অপারেশন সার্চলাইট। পাকিস্তান সরকার ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে কূটকৌশল অনুসরণ করে। ফলে বাঙালি জাতি স্বায়ত্তশাসন থেকে ক্রমশ স্বাধীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এরূপ পরিস্থিতিতে সরকার গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালি হত্যার এক নীলনকশা প্রণয়ন করে।
অপারেশন সার্চলাইট : বাংলাদেশি ভূখণ্ডে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন কায়েম করার জন্য পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক সরকারের নির্দেশে যে ঘৃণ্য ও বর্বরভাবে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করেছিল সেই সামরিক অভিযানকে পাকিস্তানি সেনাদের ভাষায় অপারেশন সার্চলাইট বলে।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. অভিযানের প্রস্তুতি : অপারেশন সার্চলাইটের প্রস্তুতি বহুদিন ধরে চলতে থাকে। একদিকে ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর বৈঠক শুরু হয়। অন্যদিকে, জেনারেল টিক্কা খান, মে. জে. খাদিম হোসেন এবং রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইটের নকশা চূড়ান্ত করে।
১৯ মার্চ থেকে পূর্ববাংলার ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করা শুরু হয় একই দিনে জয়দেবপুরে বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। ২০ মার্চ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয় এবং জেনারেল হামিদ ক্যান্টনমেন্ট হতে ক্যান্টনমেন্টে যোগাযোগ শুরু করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে এম. ভি. সোয়াত থেকে অস্ত্র ও রসদ খালাস শুরু হয়। সব প্রস্তুতি শেষে ২৫ মার্চ গণহত্যার জন্য বেছে নেওয়া হয়। মেজর জেনারেল রাও ফরমানকে ঢাকা শহরের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২. অভিযান পরিচালনা : পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাত ১০টায় শুরু হয় ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড। সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস এই ঘটনাকে বিশ শতকের ঘৃণ্যতম প্রবঞ্চনা বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
ঐদিন পাক সেনাবাহিনীর ব্যাটেলিয়ান সৈন্য ট্যাংক, মেশিনগান, মর্টার নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অসংখ্য নরনারী, শিশু-যুবক হত্যা করে। উদ্দেশ্য ছিল দেশের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র যুবক নির্মূল করা আর বাঙালি জাতিকে ক্রীতদাসে পরিণত করা শুধু ঢাকাতেই সে রাতে প্রায় ৫০ হাজার নরনারী নিহত হয় ।
পাকবাহিনীর প্রথম লক্ষ্যবস্তু ছিল জহিরুল হক হল, জগন্নাথ হল ও পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর ব্যারাক, রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্রভৃতি স্থান। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দি হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
আর ১৯৭১ সালের সেই কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে গণহত্যা বা অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা বিশ্বের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সংযোগ করে। বিশ্ব স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনতাকে এরূপ হত্যার নজির খুব কমই দেখেছে।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকার আলোচনায় ব্যর্থ হয়ে বাঙালিকে দমন করার নিমিত্তে সামরিক অভিযানের নামে যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ঢাকা শহরকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছিল।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৭. অপারেশন সার্চ লাইটের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বর্বরোচিত আক্রমণগুলোর মধ্যে অপারেশন সার্চ লাইট অন্যতম এ অপারেশনই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের বাঙালির ওপর চালানো প্রথম আক্রমণ।
অমানবিক আক্রমণের মাধ্যমেই তারা বাঙালি জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস পায় ।
অপারেশন সার্চ লাইটের উদ্দেশ্য : অপারেশন সার্চ লাইট পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক চক্রের পূর্ব পাকিস্তানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি সুস্পষ্ট অপচেষ্টা। নিম্নে অপারেশন সার্চ লাইটের উদ্দেশ্যসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন : ১৯৬৬ সালে ৬ দফা পেশ করার পর থেকেই বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে । ১৯৭০ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর তা আরো প্রবল আকার ধারণ করে এবং ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত ভাষণে তা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলে ওঠে।
এ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দমন করার উদ্দেশ্যে অপারেশন সার্চ লাইট পরিচালনা করে।
২. বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ : পাকিস্তান সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ক্ষেত্রে বিশেষ বৈষম্য বিদ্যমান ছিল ।
সামরিক এ বৈষম্য বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যৎসামান্য বাঙালি সৈন্যদেরকে তাদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় বিবেচনা করে তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণের উদ্দেশ্যে অপারেশন সার্চ লাইট পরিচালনা করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
৩. বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে নির্মূল : বুদ্ধিজীবী শ্রেণি যেকোনো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কেননা বুদ্ধিজীবী ছাড়া জাতি অন্তঃসার শূন্য তথা মেধাশূন্য হয়ে পড়ে। তাই বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার মানসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল করার লক্ষ্যে অপারেশন সার্চ লাইট চালায়।
৪. বড় বড় শহর দখল : বড় বড় শহরগুলো সাধারণত যেকোনো আন্দোলনের কেন্দবিন্দু হয়ে থাকে। বাঙালিদের পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এজন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বড় বড় শহরগুলো দখল করার উদ্দেশ্যে অপারেশন সার্চ লাইট পরিচালনা করে ।
৫. পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন কায়েম : সর্বোপরি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্যই ছিল পূর্ব পাকিস্তানে তাদের একতরফা শাসন কায়েম করা। এ লক্ষ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানি নরপিশাচরা বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের জন্ম দেয় ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের .অপারেশন সার্চ লাইট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের অসৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আক্রমণ।
অপারেশনের মাধ্যমে তারা পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ, বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা, বড় বড় শহর দখল ও পাকিস্তানি শাসন কায়েমের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় ।
০৮. বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা লেখ ।
অথবা, ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা কী ছিল?
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ২৫ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড শুরু করে বঙ্গবন্ধু তখনই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বিষয়টি জনগণকে অবহিত করেন।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২-২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা : নিম্নে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হলো :
“ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন । আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।”
শেখ মুজিবুর রহমান
২৬ মার্চ, ১৯৭১
চট্টগ্রাম ওয়ারলেস বিভাগ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ সভাপতি জহুর আহমেদ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত স্বাধীনতার বার্তাটি সে রাতেই পৌঁছে দেয়। তিনি এবং চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনাব এম. এ. হান্নান এ স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তার বঙ্গানুবাদ করেন। সে রাতেই তা সাইক্লোস্টাইল করে মাইকযোগে প্রচার করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের বেলাল মোহাম্মদ, সুলতান আলী ও অন্যদের সাথে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আলোচনার পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২৬ মার্চ দুপুর প্রায় ২টা ৩০ মিনিটের সময় জনাব এম. এ. হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ।
২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট থেকে চট্টগ্রাম বেতারের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন সেন্টার থেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের’ কর্মতৎপরতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলে আবুল কাশেম সন্দ্বীপ স্বাধীনতা সম্পর্কিত ঘোষণার বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
এরপর মূল ইংরেজি ভাষণ পাঠ করেন ওয়াপদার তৎকালীন প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম। এরপর জনাব এম. এ. হান্নান পুনরায় বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা সম্পর্কিত তার ভাষণ প্রচার করেন।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যাবেলা এ অঞ্চলের সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে পদমর্যাদার দিক থেকে সিনিয়র মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল সময়ের দাবি। তাই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন ।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৯. বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও গ্রেফতার সম্পর্কে
অথবা, ২৬ মার্চে কোন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়?
উত্তরঃ ভূমিকা : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে না পারলেও ৭ মার্চ পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এতে বাঙালি জাতি মানসিকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
এমতাবস্থায় পাকবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে অতর্কিত নিরীহ বাঙালির ওপর হামলা শুরু করলে ২৫ মার্চের গভীর রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । অতঃপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও গ্রেফতার বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পশ্চাতে যেসব প্রেক্ষাপট রয়েছে তা উল্লেখপূর্বক নিম্নে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও গ্রেফতার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : ১. অসহযোগ আন্দোলন : বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১ মার্চ হতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারি-বেসরকারি, সচিবালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক, বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে। ৭ মার্চের ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলনের গতি তীব্র আকার ধারণ করে।
২. ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ১৯৭০ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।
৩. মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর ব্যর্থ বৈঠক : ভয়াবহ পরিস্থিতি উপলব্ধি করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা শুরু করেন। তখনো অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার হয়নি ১৯ মার্চ ভুট্টো আলোচনায় যোগ দেন। ঐকমত্যে ব্যর্থ হয়ে ইয়াহিয়া ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন।
তারপরই শুরু হয় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ‘অপারেশন সার্চলাইট’। অতর্কিত ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্মম গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী।
৪. স্বাধীনতা ঘোষণা : ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি হত্যায় মেতে ওঠে তখন প্রায় রাত দেড়টা অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।” তার একথা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৫. বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার : ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই বঙ্গবন্ধুকে তার ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নেওয়া হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ পরোক্ষভাবে ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেসময় থেকেই বাঙালি জাতি সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে।
যার অগ্রনায়ক ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান।
১০. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার গুরুত্ব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : পৃথিবীর দুটি দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ হয়েছে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং অন্যটি বাংলাদেশে। এদেশের মুক্তিসংগ্রামের মাইলফলক ও প্রেরণার উৎস হিসেবে দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা। বিভিন্ন সময়ে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক স্বাধীনতার বাণী প্রচার হলেও বিষয়বস্তু নির্দেশনা ছিল একই।
তাই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষণার গুরুত্ব অপরিসীম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার গুরুত্ব : প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে স্বাধীনতা ঘোষণার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সংগঠিত প্রতিরোধ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পর পরই বিভিন্ন স্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। প্রথম প্রতিরোধের সূচনা হয় চট্টগ্রামে। এতে অংশগ্রহণ করেছিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, যুব সম্প্রদায় ও হাজার হাজার সাধারণ জনতা।
২৬ ও ২৭ মার্চ সারাদিনই রাজধানী ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি ছাত্র ও সৈনিকদের মধ্যে প্রকাশ্যে খণ্ডযুদ্ধ চলতে থাকে।
২. প্রত্যক্ষ যুদ্ধের সূচনা : বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা অনুরূপ যুদ্ধ সূচনার ক্ষেত্রে তোপধ্বনির ন্যায় কাজ করেছিল কেননা দেশবাসী এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বুঝাতে পারে দেশ হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত তাই আমাদের যুদ্ধ করে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার পর পরই দেশে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের সূচনা হয় এবং বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ।
৩. বিশ্ববাসীয় দৃষ্টি আকর্ষণ : বিশ্ববাসীয় দৃষ্টি আকর্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম বিশ্ববাসী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টি অবগত হতে পারে। ফলে বিশ্ববাসী বাংলাদেশ নামক দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
বিবিসি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করে। এছাড়া দি টাইমস এবং দি গার্ডিয়ান নামক বিখ্যাত পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়।
৪. সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা : বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল দেশের মানুষের মধ্যে টনিকের মতো কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। যে কারণে দেশের সর্বত্র বাঙালিরা দলমত নির্বিশেষে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৮ম-সংক্ষিপ্ত) *
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী নয় মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রত্যক্ষ সংগ্রাম যা সর্বাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয় ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে দেশের সর্বত্র সশস্ত্র যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল।
স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমেই জনগণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।