স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: সামরিক শাসন : আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের শাসনামল (১৯৫৮-১৯৭১)
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৫.০৮ আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কে কী জান? আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সামরিক শাসনব্যবস্থা জারি হওয়ার পর আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র নামক এক অভিনব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সমর্থন লাভ করার লক্ষ্যে আইয়ুব খান মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ ব্যবস্থা সামরিক শাসন ব্যবস্থারই একটি ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি।
মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার সদস্যরা শুধু আইয়ুবের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যেই উক্ত ব্যবস্থায় যোগদান করেছিলেন। আইয়ুব খান নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন।
আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র : আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত সামরিক শাসনব্যবস্থার অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ক্ষমতা দখল করার পর ১৯৫৯ সালে দেশে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা নামক সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
মূলত স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার আওতাভুক্ত ছিল মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা। মৌলিক গণতন্ত্র বলতে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশবলে সৃষ্ট চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থাকে বুঝানো হতো।
মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জনগণের ইচ্ছাকে সরকারের নিকট পৌছে দেওয়া এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরকে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে এসে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে। মূলত এ ব্যবস্থার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সরকার পক্ষের স্বার্থরক্ষা করা।
মৌলিক গণতন্ত্রের চারটি স্তর সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ইউনিয়ন কাউন্সিল : মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন ও গুরুত্বপূর্ণ স্তর ছিল ইউনিয়ন পরিষদ । কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। ১০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ সংখ্যক জনগোষ্ঠী সংবলিত এলাকাকে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সীমানা নির্দিষ্ট করা হয়।
মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার সর্বনিম্ন ধাপ ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিল । কিন্তু এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন কাউন্সিল ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
এই ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জনই অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগ সদস্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল। ১,২০০ থেকে ১,৫০০ জন ভোটদাতাদের জন্য একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছিল।
জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত এই প্রতিনিধিবৃন্দকে মৌলিক গণতন্ত্রী বা ইধংরপ উবসড়পৎধঃং সবসনবৎ বা ইউ সবসনবৎ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৪০,০০০ করে মোট ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিল ।
সমগ্র পাকিস্তানে উক্ত মৌলিক গণতন্ত্রীর সংখ্যা ছিল ৮০,০০০। প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিল নির্বাচিত এই সকল মৌলিক গণতন্ত্রীরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ ভাগের ১ ভাগ সদস্য সরকার কর্তৃক মনোনীত ছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
তবে ১৯৬২ সালে নতুন সংবিধান কার্যকরী হলে উক্ত মনোনয়ন বাতিল বলে ঘোষিত হয়। আবার নিজেদের মধ্যে একজনকে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করতেন নির্বাচিত মৌলিক গণতন্ত্রীগণ ।
মূলত ইউনিয়ন পরিষদের জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল। ইউনিয়নের শান্তি, নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ছাত্র এবং পুলিশের সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছিল।
ইউনিয়ন কাউন্সিলকে ইউনিয়নের ছোটখাটো ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি প্রদান করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। এমনকি নিজস্ব কর্মকাণ্ডের ব্যয়নির্বাহের জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল জনসাধারণের ওপর বিভিন্ন কর আরোপ ও তা আদায়ের ক্ষমতা লাভ করে।
২. থানা কাউন্সিল : মৌলিক গণতন্ত্র কাঠামোতে থানা কাউন্সিল ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিলের পরবর্তী স্তর। থানা কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল থানার অন্তর্গত প্রত্যেক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং থানা পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দদের নিয়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
থানা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে মহকুমা প্রশাসককে নির্বাচিত করা হয়েছিল -৩। মহকুমা প্রশাসককে অনুপস্থিতিতে থানার সার্কেল অফিসারকে থানা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল থানার সার্কেল অফিসার মূলত নিজ ক্ষমতার জোরেই সভাপতিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিল।
থানা কাউন্সিল সাধারণত থানার অন্তর্গত ইউনিয়নসমূহের কার্যাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব পেয়েছিল। এছাড়াও থানার অন্তর্গত ইউনিয়নসমূহের কার্যাবলির সমন্বয় সাধন করাও থানা কাউন্সিলের কাজ ছিল।
৩. জেলা কাউন্সিল : মৌলিক গণতন্ত্রে থানা কাউন্সিলের পরবর্তী স্তর বা ধাপ ছিল জেলা কাউন্সিল ৪০ জন সদস্য নিয়ে জেলা কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। ৪০ জন সদস্যের মধ্যে অর্ধেক সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং বাকি অর্ধেক বেসরকারি সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে জেলা কাউন্সিলের বেসরকারি সদস্যদের অর্ধেক সদস্য নির্বাচন করার নিয়ম চালু হয়েছিল।
জেলা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে ডেপুটি কমিশনারকে মনোনীত করা হয়েছিল তিনি উক্ত কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। জেলা কাউন্সিলের দুই ধরনের দায়িত্ব ছিল।
যথা- ১. বাধ্যতামূলক ও ২. ঐচ্ছিক দায়িত্ব।
প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে সমগ্র জনসাধারণের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং শিক্ষার মূল্য সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা ছিল জেলা কাউন্সিলের বাধ্যতামূলক কাজের একটি অংশ।
এছাড়াও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করাও জেলা কাউন্সিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক কাজ। রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করা এবং সংস্কার করাও জেলা কাউন্সিলের বাধ্যতামূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশের চতুর্থ তফশিলের প্রথম অংশে বাধ্যতামূলক কার্য এবং দ্বিতীয় অংশে ঐচ্ছিক কার্যাবলির বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
৪. বিভাগীয় কাউন্সিল : মৌলিক গণতন্ত্র কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর ছিল বিভাগীয় কাউন্সিল । এটি জেলা কাউন্সিলের পরবর্তী ধাপ বিভাগীয় কাউন্সিল ৪৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। এই ধাপের অধিকাংশ সদস্য সরকারি পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এ সদস্যসমূহের অন্তর্গত সদস্যবৃন্দ ছিলেন বিভাগের অন্তর্গত জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবর্গ। আর বাকি অর্ধেক সদস্যরা ছিলেন বেসরকারি পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
এ বেসরকারি সদস্যবৃন্দের অধিকাংশ সদস্যরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে মনোনীত হয়েছিল। বিভাগীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে বিভাগীয় কমিশনকে মনোনীত করা হয়েছিল। বিভাগীয় কমিশনার তার পদমর্যাদার ক্ষমতায় বিভাগীয় কাউন্সিলের কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিভাগীয় কাউন্সিলের সকল সরকারি এবং বেসরকারি সদস্যবৃন্দ উক্ত সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করেছিল। বিভাগীয় কাউন্সিলের কার্যাবলি অন্যান্য কাউন্সিলের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ বিভাগের অন্তর্গত জেলাসমূহের সকল কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ছিল বিভাগীয় কাউন্সিলের ওপর।
আর জেলাভিত্তিক কাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে জেলার অন্তর্গত থানাসমূহের এবং থানার অন্তর্গত ইউনিয়ন পরিষদসমূহের সকল কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছিল বিভাগীয় কাউন্সিলকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
উক্ত কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ এবং কাউন্সিল চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও জেলা পর্যায়ের সকল কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করা ছিল বিভাগীয় কাউন্সিলের অন্যতম কাজ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা আইয়ুব খানের স্বার্থোদ্ধারের একটি প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র ছিল গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা।
জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একমাত্র মৌলিক গণতন্ত্রীদেরকেই তিনি ভোটাধিকার প্রদান করেছিলেন। ফলে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।
আইয়ুব খান এভাবে দেশের জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণকে গৌণ ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিলেন। যদিও তার শাসনব্যবস্থা পাকিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি
৫.০৯. আইয়ুব খানের পতনের কারণ আলোচনা কর।
অথবা, আইয়ুব খানের পতনের বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে সামরিক আইন ব্যবস্থা চালু হয়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার পর জনগণের ওপর কেবল নিজের মতামত চাপিয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট ছিল না ।
এমনকি জনগণের কাছ থেকে তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দেশে এক স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যার অত্যাচারে পাকিস্তানিরা অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল ।
নিরূপায় হয়ে পাকিস্তানিরা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করেছিল। আর দেশের আপামর জনগণের সংগ্রামের ফলে আইয়ুব খান পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
আইয়ুব খানের পতনের কারণ : আইয়ুব খানের পতনের কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান : পাকিস্তানে আইয়ুব খানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৬৮ সাল থেকে। উক্ত আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয় ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে।
আইয়ুববিরোধী উক্ত আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশের সহায়তা নিলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। আইয়ুববিরোধী মিছিল, সভা, ধর্মঘট, হরতাল সব সমান তালে চলতে থাকে, যা তার পতনকে ত্বরান্বিত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
২. ১৪৪ ধারা জারি ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহিদ হলে আন্দোলন আরও বেগবান হয় । এই গণআন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু উক্ত গণঅভ্যুত্থান দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
আইয়ুববিরোধী ১৯৬৯ সালের এ গণআন্দোলনে ১০০ জন পূর্ব পাকিস্তানি নিহত হয় ।
৩. আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ : গণআন্দোলন শুধুমাত্র শহরে সীমাবদ্ধ ছিল না প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করেছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মৌলিক গণতন্ত্রীদেরকে ত্যাগ করার আহ্বান জানালে প্রায় ৭৫% জনগণ এতে সাড়া দেয় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে মৌলিক গণতন্ত্রীকে পিটিয়ে মেরে ফেলে ।
সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।
৪. ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যু : ‘৬৯ এর গণআন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি পুলিশের বেয়নেট চার্জে শহিদ হন। সেসময় তিনি প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপকভাবে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ।
৫. আগরতলা মামলা প্রত্যাহার : গণআন্দোলন যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন সরকার দিশেহারা হয়ে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার পতন ঘটে। উক্ত মামলা প্রত্যাহারের সাথে সাথে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
৬. আন্দোলনের পক্ষে শেখ মুজিবের আহ্বান : ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মাননা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উদ্যোগে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ।
এ অনুষ্ঠানে এগারো দফা দাবি এবং ছয়দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন ।
৭. গণআন্দোলনে রূপলাভ : শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়ার পর গণআন্দোলন আরও ব্যাপকতা লাভ করে ।
শেখ মুজিবুর রহমান গণআন্দোলনের পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বাঙালিদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
৮. বৈঠক বাতিল : আইয়ুব খান গণআন্দোলনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ডাক (উঅঈ) এর নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু ভাসানী ন্যাপ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি বৈঠকে বসতে অস্বীকার করে ।
৯. বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর দাবি উপস্থাপন : শেখ মুজিবুর রহমান আইয়ুব খানের আহ্বানে গঠিত বৈঠকে যোগদান করেন। তিনি উক্ত বৈঠকে আওয়ামী লীগের ছয়দফা এবং এগারো দফা দাবি উত্থাপন করেন।
উক্ত দাবিসমূহকে বৈঠকে উপস্থিত কিছু আইয়ুবপন্থি নাকচ করে দিলেও বঙ্গবন্ধুর দাবির পক্ষে ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
১০. বৈঠকে ২টি দাবির প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন : বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত দাবিসমূহের মধ্যে দুটি দাবি মেনে নেয়। সেগুলো হলো : ১. ফেডারেল সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং ২. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রদান করা হবে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
১১. বঙ্গবন্ধুর অসন্তোষ প্রকাশ : বৈঠকে উত্থাপিত ছয়দফা এবং এগারো দফা দাবির মধ্যে মাত্র দুটি দাবি মেনে নেওয়ায় বঙ্গবন্ধু অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন দেশের আপামর জনগণ এ বিষয়টি মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন পাকিস্তানবাসী এ সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি, যা আইয়ুববিরোধী মতকে চাঙ্গা করে ।
১২. আইয়ুব খানের পতন : বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা এবং ১১ দফা দাবির খসড়া ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ আইয়ুব খানের হাতে এলে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় তিনি সেনাবাহিনীর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণমানুষের ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তার পতন হয়। দ্বিতীয়বারও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হয়।
কিন্তু ইয়াহিয়া খান প্রতিশ্রুতি দেন যে, প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে খুব শীঘ্রই প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে উক্ত প্রদেশ থেকে সামরিক শাসনব্যবস্থা অপসারিত হবে।
কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইয়াহিয়া খান নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন।
৫.১০. আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, আইনগত কাঠামো আদেশের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদ এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।
এ ভাষণে তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি রূপরেখা প্রদান করেন, যা আইনগত কাঠামো আদেশ নামে পরিচিত এবং যা সংক্ষেপে খঋঙ নামে পরিচিত। খঋঙ পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা হয় ১৯৭০ সালের ৩০ অক্টোবর।
এতে একটি প্রস্তাবনা, ২৭টি অনুচ্ছেদ, ৩টি তফসিল, পরিষদের কার্যবিবরণীসহ ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণনের জন্য সব রকমের নিয়মবিধি, শর্ত ও বিধিনিষেধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য : ১৯৭০ সালের ৩০ অক্টোবর ইয়াহিয়া একতরফাভাবে একটি আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন, যার বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ফেডারেশনের ঘোষণা : ফেডারেশনের ঘোষণা আইনগত কাঠামো আদেশের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এ আদেশ প্রদেশ অঞ্চলসমূহের সমন্বয়ে একটি ফেডারেশন ধারণা দেয় এবং নিশ্চয়তা দেয় যে ফেডারেশনের ঐক্য কোনোভাবেই বিনষ্ট হবে না ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : আইনগত কাঠামো আদেশে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপ্তি নির্দেশ না করলেও এ কথা বলা হয় যে, প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন থাকবে, যা ছিল একটি অস্পট শব্দ এবং এ আদেশে ছয়দফা এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ দাবি বিষয়ে কোনো সূক্ষ্ম দিকনির্দেশনা উল্লেখ ছিল না।
৩. সংবিধান প্রণয়নের ইঙ্গিত : এ আদেশ অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান প্রণয়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ।
১ এপ্রিল (১৯৭০) ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি বৈঠকে জনগণের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়া ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষাকল্পে আইনগত কাঠামোকে যথাযথভাবে সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আইনগত কাঠামোর ২৫ ও ২৭ নং ধারার তীব্র সমালোচনা করে, কারণ তা ছিল গণতান্ত্রিক ধারা বিবর্জিত ।
৪. ধর্মনিরপেক্ষতাহীন : আইনগত কাঠামো আদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সুযোগ রাখা হয়নি। এতে বলা হয় যে, পাকিস্তান হবে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র: যে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে তা সংরক্ষণ করা হবে এবং একজন মুসলিম হবে রাষ্ট্রের প্রধান ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
৫. সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ক্ষমতা লাভ : এ দলিলে সাংবিধানিক বিলের ওপর ভোটাধিকার পদ্ধতির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে অস্পষ্টতা থাকায় সাংবিধানিক বিলটি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হবে নাকি সকল ফেডারেলের এককের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।
৬. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার : আইনগত কাঠামো আদেশে সাধারণ নির্বাচনের পদ্ধতিগত নীতিমালা প্রদান করা হয়। এ আদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ফেডারেল ও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনের ব্যবস্থা করার গণতন্ত্রের নীতিমালাকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়।
৭. বৈষম্য হ্রাস : আইনগত কাঠামো আদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধিগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রদেশসমূহ এবং আদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য হ্রাস করার অঙ্গীকার।
৮. সংবিধান ইসলামি আদর্শের ভিত্তি : আইনগত কাঠামো আদেশে বলা হয় যে, পাকিস্তানের সংবিধান ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে রচিত হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
৯. আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা : আইনগত কাঠামো আদেশের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল সংবিধানে অবশ্যই পাকিস্তানের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হবে।
১০. গণতন্ত্রের মৌল উপাদান : আইনগত কাঠামো আদেশের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর গণতন্ত্রের মৌল উপাদানের অন্তর্ভুক্তি।
সংবিধানকে অবশ্য গণতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং তাতে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে স্বাধীন ও সামরিক নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের মৌল উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৫ম – রচনামূলক) -৩
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আইনগত কাঠামো আদেশের মূল বিষয়ের মধ্যে ছিল জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের গঠনের বিধিবিধান, নির্বাচন পরিচালনা ও মূলনীতি, প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, জাতীয় পরিষদ ও তার সদস্যবর্গের সুযোগ সুবিধা।
তবে এটি ছিল পুরোপুরিভাবে একটি অগণতান্ত্রিক প্রস্তাব । কেননা ২৭ নং ধারায় অনুরূপ অগণতান্ত্রিক বিধান সংযোজন করে বলা যায় যে, আদেশের কোনো ব্যাখ্যা নিয়ে সন্দেহ বা প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন এবং সে সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।