স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও স্বাধিকার আন্দোলন
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৬.০৫ ৬ দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, ৬ দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের বিবরণ দাও ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন, শোষণ ও হিন্দুবাদীদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় তা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালিদের জন্য সুখকর হয়নি।
কেননা এর মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলেও নতুনভাবে পাকিস্তানি শাসনের কবলে পড়েন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন ও শোষণের মাত্রা এতই তীব্রতর ছিল যে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণকেও হার মানায়।
পূর্ববাংলার জনগণকে এ শোষণ থেকে মুক্তি দিতেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ৬ দফা । ৬ দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিব ৬ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
৬ দফা কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা : আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবির প্রথম মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ।
লাহোর প্রস্তাবে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে এ সহায়তা কখনোই দেয়নি। তাই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অধ্যয়ন করার লক্ষ্য নিয়েই ৬ দফা দাবি প্রণয়ন করা হয় ।
কেননা আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ছাড়া জনগণের মুক্তি কখনোই সম্ভবপর ছিল না।
২. বৈষম্যহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা : আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচির আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
কেননা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। মূলত ক্ষমতাবান পশ্চিমা এলিট শ্রেণিরাই পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো।
ইতিহাসের দিক তাকালে দেখা যায় যে, ১৯৪৭-৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ।
তাও আবার তিনিও ছিলেন উর্দুভাষী এবং ৭ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের যার মধ্যে ১ জন ছিলেন উর্দুভাষী। তাই এ রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করাই ছিল ৬ দফা দাবির অন্যতম উদ্দেশ্য।
৩. সংসদীয় গণতন্ত্র সুসংহতকরণ : সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ৬ দফার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কারণ একমাত্র পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হলেই পূর্ব পাকিস্তান তার ন্যায্য অধিকার লাভ করবে ।
তাই ৬ দফার প্রথম দফাতেই বলা হয় যে, পাকিস্তানের সরকার ব্যবস্থা হবে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির।
তাছাড়া এতে আরও বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক যে আইনসভাগুলো গঠিত হবে তা হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এবং এ সকল আইন পরিষদের সদস্যরা প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন।
৪. সম্পদের ওপর নিজস্ব কর্তৃত্ব কায়েম : ৬ দফা দাবির । কেননা পূর্ব অন্যতম লক্ষ্য ছিল পূর্ববাংলার যেসব সম্পদ ও সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোর ওপর নিজস্ব কর্তৃত্ব অর্জন করা পাকিস্তানের যেসব সম্পদ ছিল সেখানে বাঙালি জনগণের কোনোরূপ কর্তৃত্ব ছিল না।
তাই পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতো অন্যদিকে, নিজস্ব যথেষ্ট সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর ওপর নিজের কর্তৃত্ব না থাকায় পূর্ব পাকিস্তান অনুন্নতই থেকে যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
পূর্ব পাকিস্তানের এসব নিজস্ব সম্পদের ওপর নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল অন্যতম লক্ষ্য ।
৫. বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা : বাণিজ্য ও মুদ্রার ওপর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের একক আধিপত্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে ক্রমান্বয়ে মুদ্রা পাচার ও সকল শিল্প দ্রব্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কোনোরূপ শিল্প উন্নয়ন ঘটেনি।
অন্যদিকে, সকল শিল্পকারখানা পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসা বাণিজ্যের করুণ দশা পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া পাকিস্তানের জন্য প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের পুরোটাই পশ্চিম পাকিস্তান ভোগ করতো।
সকল বৈদেশিক কার্যক্রম ও লেনদেন সম্পন্ন হতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। এতে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসা বাণিজ্যের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। তাই বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ৬ দফা দাবির অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য ।
৬. অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ৬ দফা দাবির আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ ও সম্পদ পাচার হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনেকাংশেই ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল বেশ উন্নত।
তাই এ অর্থনীতি কাঠামোর অধীনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাহাড় গড়ে উঠেছিল তা দূর করা সম্ভব ছিল না ।
৭. সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : ৬ দফা কর্মসূচির আরেকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরক্ষা খাতে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা । কেননা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল একেবারেই নাজুক।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
বিশেষ করে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল পুরোপুরি অরক্ষিত। এসময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ছিল উদাসীন।
তাই ৬ দফায় প্রতিরক্ষা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করার কথা বলা হয়।
৮. প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্র গঠন : সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য। কেননা সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলেই কেবল পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
এজন্য ৬ দফায় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র গড়ে তোলার কথা বলা হয়। এমনকি কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা কেন্দ্রকে না দিয়ে কেবল আঞ্চলিক সরকারকে দেওয়ার মাধ্যমে একটি অতি শিথিল যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ৬ দফায় উল্লেখ করা হয়েছিল ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পূর্ববাংলার তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার ও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবিতে ৬ দফা উত্থাপন করা হয়।
এতে কোথাও পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলা হয়নি। কিন্তু ৬ দফার দাবি একসময় গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয় এবং এরই ভিত্তিতে একসময় আমরা অর্জন করতে পারি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
৬.০৬. ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে লেখ।
অথবা, শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পুনরায় পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিণত করে। শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের ওপর শাসন শোষণ আর তীব্র অত্যাচার।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। ঠিক সেসময়ে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও অত্যাচার থেকে বাংলার জনগণকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব : নিম্নে ৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি : ১৯৬৬ সালের ৬ দফা উত্থাপনের পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।
বাঙালি জনগণের অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা হচ্ছে ৬ দফা নিম্নে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক কারণ : শেখ মুজিবের ৬ দফা ঘোষণা করার পিছনে যৌক্তিক কারণ ছিল। পাকিস্তানের রাজনীতিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সর্বদাই উপেক্ষিত থাকত এবং পশ্চিম পাকিস্তানের এলিট শ্রেণিই তা নিয়ন্ত্রণ করতো।
১৯৪৭-৫৮ সালের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এসময়ে ৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে মাত্র ১ জন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। কিন্তু তিনিও ছিলেন মূলত উর্দুভাষী। এছাড়া নিছক অজুহাতে প্রাদেশিক সরকার ভেঙে দেওয়া হয় এবং সামরিক শাসন জারি করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
আইয়ুব খান জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেন। শেখ মুজিবসহ বাংলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ রাজনৈতিক র অনাচার থেকে বাঁচার জন্য ৬ দফা দাবি প্রণয়ন করেন।
২. অর্থনৈতিক কারণ : পাকিস্তানি শাসকদের অর্থনৈতিক শোষণই ৬ দফা দাবি উত্থাপনে বাধ্য করে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা থেকে শুরু করে যাবতীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং এসব প্রতিষ্ঠান পশ্চিম পাকিস্তানিরাই নিয়ন্ত্রণ করতো।
এতে পূর্ব পাকিস্তানিদের কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত এবং ব্যাপকভাবে মুদ্রা পাচার হতো এতে করে দুই অঞ্চলের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
এগুলো ছাড়াই রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে ব্যয় করা হতো তা পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে সকল জনগণকে জাগিয়ে তুলে যার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি উত্থাপন ।
৩. প্রশাসনিক কারণ : ৬ দফা উত্থাপনে প্রশাসনিক কারণ ছিল অন্যতম প্রধান। পাকিস্তান শাসনামলে প্রশাসনিক থেকে শুরু করে সকল উচ্চ পদগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানিদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
বেসামরিক প্রশাসনের অফিসার পর্যায়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মাত্র ৫% কোটা রাখা হয় তাও আবার কখন পূরণ করা হতো না । এমনকি বিদেশি মিশনগুলোতে ৮৫% কর্মচারী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি।
৪. সামরিক কারণ : সামরিক বৈষম্য ৬ দফা আন্দোলনের পিছনে অন্যতম কারণ। কেননা পাকিস্তানের সামরিক তিনটি বাহিনী সদর দফতর ও অস্ত্র কারখানাগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল।
শুধু তাই নয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকরি পশ্চিম পাকিস্তানিদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অফিসার পদে বাঙালিদের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৫%, ১০% ও ১৬% তাই এ সামরিক প্রেক্ষাপটে বাংলার অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা উত্থাপন করেন।
৫. বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের অপচেষ্টা : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান রবীন্দ্রসংগীতকে বেতারে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
তাছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাকে বিকৃত করা হয় এবং বাংলার পরিবর্তে আরবি ও রোমান হরফ ব্যবহার শুরু হয় । পাকিস্তান সরকারের এরকম হীন ষড়যন্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানিরা সোচ্চার হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ৬ দফা প্রণীত হয়।
৬. পাক-ভারত যুদ্ধ : ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। কেননা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল একেবারেই দুর্বল।
যাতে করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পাকিস্তান সরকারের উদাসীনতা চরমভাবে ফুটে ওঠে। তাই ১৯৬৫ সালে যুদ্ধের পর প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব আধাসামরিক বাহিনী গঠনের দাবি জোরালো হয়।
যার ওপর ভিত্তি করেই ৬ দফার দফাগুলো সাজানো হয়। তাই ৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বললে তা অত্যুক্তি হবে না ।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের গুরুত্ব : বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি পরবর্তীতে ৬ দফা আন্দোলনে পরিণত হয় সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। নিম্নে এ আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
১. বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ়করণ : ৬ দফা আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ় হয় এবং ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগ্রামিক ঐক্য আরও বেগবান হয়। সুতরাং বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে ৬ দফা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
২. স্বৈরশাসকের পতন : ৬ দফা ছিল বাঙালির ন্যায্য দাবি। স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এ কর্মসূচি নিরাশার আঁধার নিক্ষিপ্ত বাঙালি জাতিকে জুগিয়েছে শক্তি, জুগিয়েছে প্রেরণা। ৬ দফার মাধ্যমে বাঙালি জাতি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুনে।
৩. বাঙালির মুক্তিসনদ : ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন যে, “৬ দফা বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালির মুক্তিসনদ এবং বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত পদক্ষেপ
” অতএব বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে এর গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
৪. উনসত্তরের গণআন্দোলনে প্রেরণা : ৬ দফা কর্মসূচি গণআন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এ কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করেই উনসত্তরের গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
উনসত্তরের গণআন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ৬ দফা বিশেষ অবদান রাখে ।
৫. সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ : ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ৬ দফা কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে দাঁড় করায়। আর এ ৬ দফার ভিত্তিতেই গণরায় লাভ করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয় ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
৬. মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন : ৬ দফা আন্দোলনের সর্বশেষ পর্যায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন।
৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে ৬ দফা ছিল ম্যাগনাকার্টা
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পাকিস্তানিদের নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে ৬ দফা ঘোষিত হয়। ইংল্যান্ডের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা যেমন উজ্জ্বল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ৬ দফা তেমনই উজ্জ্বল ।
৬ দফাভিত্তিক আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল ৬ দফার প্রতিটি দফার মধ্যে লুকিয়ে ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুপ্ত বীজ।
৬.০৭ ৬ দফা কর্মসূচি কী? ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে লেখ।
অথবা, ছয়দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়?
উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচির ভূমিকা অনন্য সাধারণ। এ কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা লাভ করে। ৬ দফা ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ।
৬ দফাতে পাকিস্তানকে ভাঙতে চাওয়া হয়নি, চাওয়া হয়েছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ।
৬ দফা কর্মসূচি : বাংলার অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। ৬ দফার দফাগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
প্রথম দফা—সাংবিধানিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নপূর্বক পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে— সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হবে সংসদীয় প্রকৃতির এবং সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । আইনসভাগুলোর সার্বভৌমত্ব থাকবে।
দ্বিতীয় দফা—ক্ষমতা বণ্টন : ফেডারেল (কেন্দ্রীয়) সরকারের হাতে কেবল দুটি বিষয়ের ক্ষমতা থাকবে। যথা— দেশরক্ষা ও বিষয়ের ক্ষমতা পররাষ্ট্রসংক্রান্ত, অবশিষ্ট বিষয়ের অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে থাকবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
তৃতীয় দফা—মুদ্রা ব্যবস্থা : মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে দুটি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করে যেকোনো একটিকে গ্রহণের দাবি করা হয়। বলা হয় (ক) পাকিস্তানের দুঅঞ্চলের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি মুদ্রা চালু থাকবে।
দুঅঞ্চলের দুটি স্বতন্ত্র স্টেট ব্যাংক থাকবে। অথবা, (খ) দুঅঞ্চলের জন্য অভিন্ন মুদ্রা থাকবে তবে সংবিধানে এমন সুনির্দিষ্ট বিধান থাকতে হবে যাতে পূর্ব পাকিস্তান হতে মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে না পারে।
পাকিস্তানে একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে এবং দুঅঞ্চলের জন্য দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে।
চতুর্থ দফা—রাজস্ব কর ও শুল্কসংক্রান্ত ক্ষমতা : সকল প্রকার কর, খাজনা ধার্য এবং আদায় করার ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ পাবে।
পঞ্চম দফা—বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক ক্ষমতা : এ দফায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে নিম্নোক্ত সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়—
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
ক. দুঅঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের পৃথক পৃথক হিসাব থাকবে।
খ. পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তানের এখতিয়ারে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের এখতিয়ারে থাকবে।
গ. ফেডারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমানভাবে অথবা সংবিধানে নির্ধারিত হারে আদায় হবে।
ঘ. দেশজ দ্রব্যদি বিনা শুল্কে দুঅঞ্চলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি করা চলবে।
ঙ. ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে বিদেশের সাথে চুক্তি সম্পাদন, বিদেশে ট্রেড মিশন স্থাপন ও আমদানি-রপ্তানি করার অধিকার আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকবে।
ষষ্ঠ দফা—আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন : এ দফায় উল্লেখ করা হয় যে, অঙ্গরাজ্যগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ দান এবং আঞ্চলিক সংহতি ও সংবিধান রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে ।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের গুরুত্ব : বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি পরবর্তীতে ৬ দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এ আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
১. স্বাধিকার আন্দোলন : ৬ দফা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন। এ আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করেই জনগণ স্বাধিকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ছিল বাঙালির.. প্রাণের আন্দোলন ।
২. আপামর বাঙালির অংশগ্রহণ : তৎকালীন সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ৬ দফার সপক্ষে মিছিল, সভা ও শোভাযাত্রা করে। ইতিপূর্বে এদেশের কোনো আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এত লোক অংশগ্রহণ করেনি।
৩. বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ়করণ : ৬ দফা আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ় হয় এবং ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগ্রামিক ঐক্য আরও বেগবান হয় সুতরাং বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে ৬ দফা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
৪. স্বৈরশাসকের পতন : ৬ দফা ছিল বাঙালির ন্যায্য দাবি। স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এ কর্মসূচি নিরাশার আঁধার নিক্ষিপ্ত বাঙালি জাতিকে জুগিয়েছে শক্তি, জুগিয়েছে প্রেরণা। ৬ দফার মাধ্যমে বাঙালি জাতি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুনে।
৫. বাঙালির মুক্তিসনদ : ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তিসনদ। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন যে, “৬ দফা বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালির মুক্তিসনদ এবং বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত পদক্ষেপ।” অতএব বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে এর গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
৬. উনসত্তরের গণআন্দোলনে প্রেরণা : ৬ দফা কর্মসূচি গণআন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এ কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করেই উনসত্তরের গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উনসত্তরের গণআন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দফা বিশেষ অবদান রাখে।
৭. সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ৬ দফা কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতাহার হিসেবে দাঁড় করায়। আর এ ৬ দফার ভিত্তিতেই গণরায় লাভ করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয় ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
৮. মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন : ৬ দফা আন্দোলনের সর্বশেষ পর্যায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন। ৬ দফা আদায়ের লক্ষ্যে ঔ বাঙালি জাতি চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে ৬ দফা ছিল ম্যাগনাকার্টা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ম্যাগনাকার্টা যেমন উজ্জ্বল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ৬ দফা তেমনই উজ্জ্বল ।
৬ দফাভিত্তিক আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। ৬ দফার প্রতিটি দফার মধ্যে লুকিয়ে ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুপ্ত বীজ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।