স্বাগত মাহে রমজান> এইচ বি ফিরোজ ।। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আসমান, যমীন ও তার মধ্যকার সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। রাতের অন্ধকারে ক্ষুদ্র পীপিলিকার বেয়ে উঠাও যার দৃষ্টি বহির্ভূত নয় এবং আসমান ও যমীনের বিন্দু-বিসর্গও যার জ্ঞানের বাইরে নয়।
আল্লাহ তায়ালার বরকত ও করুনা ধারায় আমাদের জীবনগুলোকে সিক্ত করতে পবিত্র মাহে রমজান ফিরে এলো আরেকবার।সাওম শব্দটি আরবী। সাওম পালনকারীকে ‘সায়েম’ বলা হয়।
ফার্সিতে বলা হয় রোযা এবং রোযা পালনকারীকে বলা হয় রোযাদার। এর শাব্দিক অর্থ হলো, পানাহার ও নির্জনবাস থেকে বিরত থাকা। “খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ -এ তিনটি কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো সাওম।
” শরী‘আতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার,যৌন সম্ভোগ ও শরী‘আত নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকাকে সাওম বলে। শরী‘আতে ঈমান,সালাত ও যাকাতের পরেই সাওমের স্থান। যা ইসলামের চতুর্থ রুকন।
রমজানুল মুবারক মাস সেসব নিয়ামতসমূহের মধ্যে একটি নিয়ামত যা আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে দান করেছেন। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তের মধ্যে এত বেশি বরকত লুকিয়ে আছে যে, এই মাসে করা নফল কাজগুলো ফরজ কাজের মর্যাদা পায়, আর ফরজ কাজগুলো সত্তর গুন অধিক মর্যাদা পায় (বায়হাকি)।
রমজান মাস এলে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, সৎ পথে চলার পথ সহজ হয়ে যায়, শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যখন রমযান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়” (মুসলিম)
উর্বর ভূমির মতো আপনার মন নরম, চক্ষু অবনত করুন, অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করুন, নিজের যোগ্যতা ও ধারনক্ষমতা থাকলে বীজ অংকুরিত হবে, সম্পূর্ন বৃক্ষ হবে। আর বৃক্ষ সৎকাজের ফুল-ফল ও পত্ররাজিতে সুশোভিত হয়ে উঠবে। অতপর আপনি সাফল্যের ফসল কেটে ঘরে উঠাবেন।
কৃষকের মতো আপনি শ্রম দেবেন, কাজ করবেন, প্রতিদানে জান্নাতের পুরষ্কার সমূহের ফসল আপনার জন্য প্রস্তুত হতে থাকবে। মনে রাখবেন যত বেশি শ্রম দেবেন, ততবেশি ফসল পাবেন।
পক্ষান্তরে যদি আপনার মন পাথরের মতো শক্ত হয় এবং আপনি অসতর্ক কৃষকের মতো শুয়ে বসে দিন কাটান, তাহলে আপনার সাওম (রোযা) তারাবীহ্ , রহমত ও বরকতের সমস্ত পানি বয়ে চলে যাবে এবং আপনার তহবিলে কিছুই আসবে না। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
প্রকৃত অর্থে আল্লাহর দেয়া সুযোগ ছাড়া সত্যিই কিছু পাওয়া যায় না। আর আল্লাহর দেয়া এই সুযোগ শুধু তাদেরই হস্তগত হয়, যারা চেষ্টা-সাধনা এবং পরিশ্রম করে। রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে বাৎসরিক প্রশিক্ষণের মাস।এই প্রশিক্ষণ আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতিটি নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পনের। প্রত্যেক প্রশিক্ষণেরই বিভিন্ন ইভেন্ট থাকে।
মাস ব্যাপী এ প্রশিক্ষণেও অনেকগুলো ইভেন্ট সাজানো।
মহান আল্লাহ বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়মাকে ফরজ করা হলো যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার। (২-১৮৩) এই রোযার সবচেয়ে বড় লক্ষ হলো তাকওয়া, পরহেজগারি তথা আল্লাহভীরুতা অর্জন।
আর আল্লাহভীরুতা মানুষের চরিত্র ও কর্মকে সুন্দর করার জন্য মৌলিক ভ‚মিকা পালন করে থাকে। আর সাজানো সেই ইভেন্ট গুলো হলো- ১) সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটানা না খেয়ে থাকা ও যৌন সম্ভোগ না করা। ২) সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা ও অপরকে করানোর চেষ্টা করা।
৩) সালাতুত তারাবীহ বা কিয়ামুল লাইল ও বেশী বেশী নফল সালাত আদায় করা। ৪) শেষ রাতে সাহরী খাওয়া। ৫) ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করা। ৬) লাইতুল কদরে বেশি বেশি ইবাদত করা।
৭) ফিতরা আদায় করা ইত্যাদি। এ সবই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পনের প্রশিক্ষণ। যিনি যত বেশী ইভেন্ট সেরা নৈপূন্য অর্জন করতে পারবেন তিনি ততবেশি আল্লাহর অধিকতর প্রিয় বান্দাহ হয়ে সেরা মুত্তাকী হবার মাধ্যমে আপনিও আল্লাহর নিকট সেরা পুরষ্কার পেতে পারেন।
চলবে…..
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব।