HSC | বাংলা ২য় পত্র | সারাংশ ও সারমর্ম ১৬-৩৪ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সারাংশ ও সারমর্ম গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু সারাংশ ও সারমর্ম নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
১. সারাংশ ও সারমর্ম সমুহঃ
১৬. জাতি শুধু বাইরের ঐশ্বর্যসম্ভার, দালান-কোঠার সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা সামরিক শক্তির অপরাজেয়তায় বড় হয় না, বড় হয় অন্তরের শক্তিতে, নৈতিক চেতনায় আর জীবন পণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতায়। জীবনের মূল্যবোধ ছাড়া জাতীয় সত্তার ভিত কখনো শক্ত আর দুর্মূল্য হতে পারে না।
মূল্যবোধ জীবনাশ্রয়ী হয়ে জাতির সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লেই তবে জাতির অর্জন করে মহত্ত¡ আর মহৎ কর্মের যোগ্যতা। সব রকম মূল্যবোধের বৃহত্তম বাহন ভাষা তথা মাতৃভাষা, আর তা ছড়িয়ে দেবার দায়িত্ব লেখক আর সাহিত্যিকদের। [য. বো. ১৫, ব. বো. ১৫, সি. বো. ১৪]
সারাংশ : বাইরের শক্তিতে নয় জাতি বড় হয় মনের ঐশ্বর্যে। মনের এই ঐশ্বর্য গড়ে ওঠে জীবনাশ্রয়ী মূল্যবোধে- যার মূলে রয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা ও নৈতিক চেতনা। জাতিসত্তার ভিত্তিকে দৃঢ় করতে হলে এই মূল্যবোধের প্রসার দরকার। মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বত্র তা সঞ্চারিত করার দায়িত্ব লেখক সমাজের।
১৭. সমাজের কাজ কেবল টিকে থাকার সুবিধা দেওয়া নয়, মানুষকে বড় করে তোলা। বিকশিত জীবনের জন্য মানুষের জীবনে আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়া। স্বল্প প্রাণ স্থূল বুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে সংসার পরিপূর্ণ। তাদের কাজ নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলা নয়, অপরের সার্থকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা।
প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করেনি বলে এরা নিষ্ঠুর, বিকৃত বুদ্ধি। এদের একমাত্র দেবতা অহঙ্কার। তারই চরণে তারা নিবেদিতপ্রাণ। ব্যক্তিগত অহংকার, পারিবারিক অহংকার, জাতিগত অহংকার-এ সবের নিশান উড়ানোই এদের কাজ।
মাঝে মাঝে মানবপ্রেমের কথাও তারা বলে। কিন্তু তাতে নেশা ধরে না, মনে হয় আন্তরিকতা উপলব্ধিহীন বুলি।
সারাংশ : মানুষকে বড় করে তোলার পাশাপাশি তাকে বিকশিত করাও সমাজের কাজ। কিন্তু স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু লোক সংসার পূর্ণ করে রেখেছে যারা অপরের সার্থকতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ পায়নি, বরং অহংকার রূপ দেবতার হাতের পুতুল। এ অহংকার ব্যক্তিগত থেকে জাতিগত পর্যায়ে প্রসারিত। তাদের মুখে মানবপ্রেমের কথা ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়।
১৮. কোনো সভ্য জাতিকে অসভ্য করবার ইচ্ছা যদি তোমার থাকে তাহলে সব বই ধ্বংস কর এবং সকল পণ্ডিতকে হত্যা কর, তোমার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। লেখক, সাহিত্যিক ও পণ্ডিতেরাই জাতির আত্মা। এই আত্মাকে যারা অবহেলা করে তারা বাঁচে না।
দেশকে বা জাতিকে উন্নতি করতে ইচ্ছা করলে সাহিত্যের সাহায্যেই তা করতে হবে। মানব মঙ্গলের জন্য যত অনুষ্ঠান আছে, তার মধ্যে এটাই প্রধান ও সম্পূর্ণ। জাতির ভিতর সাহিত্যের ধারা সৃষ্ট কর, আর কিছুর আবশ্যক নাই। [রা. বো. ১৪]
সারাংশ : মানব-কল্যাণের উৎস হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতি আর লেখক ও সাহিত্যিকরা জাতির আত্মা। একটি সভ্য জাতিকে অসভ্য বা ধ্বংস করতে চাইলে সব বই ধ্বংস এবং সাহিত্যিক ও পণ্ডিতদের হত্যা করলেই হলো। এ সাহিত্যিক-সমাজকে ধ্বংস করলেই উন্নত শীর্ষ জাতি ধ্বংস হয়ে পড়েব।
১৯. জাতিকে শক্তিশালী, শ্রেষ্ঠ, ধনসম্পদশালী, উন্নত ও সুখী করতে হলে শিক্ষা ও জ্ঞান বর্ষার বারিপাতের মত সর্বসাধারণের মধ্যে সমভাবে বিতরণ করতে হবে। দেশে সরল ও সহজ ভাষায় নানা প্রকারের পুস্তক প্রচার করলে এই কাজ সিদ্ধ হয়। শক্তিশালী দৃষ্টিসম্পন্ন মহাপুরুষদের লেখনীর প্রভাবে একটি জাতির মানসিক ও পার্থিব অবস্থার পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে সংসাধিত হয়ে থাকে।
দেশের প্রত্যেক মানুষ তার ভুল ও কুসংস্কার, অন্ধতা ও জড়তা, হীনতা ও সংকীর্ণতাকে পরিহার করে একটা বিনয়-মহিমোজ্জ্বল উচ্চ জীবনের ধারণা করতে শেখে, মনুষ্যত্ব ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করাই ধর্ম মনে করে, আত্মমর্যাদাজ্ঞানসম্পন্ন হয় এবং গভীর দৃষ্টি লাভ করে। তারপর বিরাট জাতির বিরাট দেহে বিরাট শক্তি জেগে ওঠে। [কু. বো. ১৫, ব. বো. ১১]
সারাংশ : সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েই কেবল জাতির সঠিক উন্নয়ন সম্ভব। সহজ ও সরল ভাষায় বই লেখা হলে তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথকে সুগম করতে পারে। এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহৎ লেখকদের ভ‚মিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের লেখনী জাতিকে কুসংস্কার থেকে মহৎ জীবনে ব্রতী করে। এভাবেই জাতির মধ্যে আত্মশক্তির জাগরণ ঘটে এবং আলোকিত সমাজ গঠিত হয়।
২০. প্রকৃত জ্ঞানের স্পৃহা না থাকলে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তখন পরীক্ষা পাসটাই বড় হয় এবং পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠায় জ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকে। এই কারণেই পরীক্ষায় পাস করা লোকের অভাব নেই আমাদের দেশে, কিন্তু অভাব আছে জ্ঞানীর।
যেখানেই পরীক্ষা পাসের মোহ তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের উৎকণ্ঠিত রাখে সেখানেই জ্ঞান নির্বাসিত জীবনযাপন করে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জগতের বুকে অক্ষয় আসন লাভ করতে হলে জ্ঞানের প্রতি তরুণ সমাজকে উন্মুখ করতে হবে।
সহজ লাভ আপাতত সুখের হলেও পরিণামে কল্যাণ বহন করে না। পরীক্ষা পাসের মোহ থেকে মুক্ত না হলে তরুণ সমাজের সামনে কখনই জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হবে না। [রা. বো. ০৯, ব. বো. ০৯]
সারাংশ : জ্ঞানার্জনের দ্বারাই কেবল একটি জাতি উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা যদি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে না হয় পরীক্ষা পাসের উদ্দেশ্য হয় তবে দেশের প্রকৃত কল্যাণ হতে পারে না। আমাদের তরুণ সমাজ পরীক্ষা পাসের জন্য মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, প্রকৃত জ্ঞানচর্চার প্রতি তাদের অনুরাগ নেই। স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
২১. নিন্দা না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের গৌরব কি থাকিত? একটা ভালো কাজে হাত দিলাম, তাহার নিন্দা কেহ করে না,Ñ সে ভালো কাজের দাম কী? একটা ভালো কিছু লিখিলাম, তাহার নিন্দুক কেহ নাইÑ ভালো গ্রন্থের পক্ষে এমন মর্মান্তিক অনাদর কী হইতে পারে? জীবনকে ধর্মচর্চায় উৎসর্গ করিলাম, যদি কোন মন্দ লোক তাহার মধ্যে মন্দ অভিপ্রায় না দেখিল, তবে সাধুতা যে নিতান্তই সহজ হইয়া পড়িল।
মহত্ত¡কে পদে পদে নিন্দার কাঁটা মাড়াইয়া চলিতে চায়। ইহাতে যে হার মানে, বীরের সঙ্গতি সে লাভ করে না। পৃথিবীতে নিন্দ দোষীকে সংশোধন করিবার জন্য আছে তাহা নহে, মহত্ত¡কে গৌরব দেওয়া তাহার একটা মস্ত কাজ। [ঢা. বো. ১২]
সারাংশ : নিন্দা আছে বলেই পৃথিবীতে জীবন ও কর্মের গৌরব আছে। নিন্দুকেরা যেকোনো কাজের খুঁত ধরে বেড়ায়। এই নিন্দার কাছে যে হার মানে, গৌরবের জয়মাল্য তার জন্য নয়। তাই নিন্দার কাঁটা মাড়িয়েই মহত্ত¡কে গৌরব অর্জন করতে হয়।
২২. সত্য ওজন দরে বা গজের মাপে বিক্রয় করা হয় না, তাহা ছোট হইলেও বড়। পর্বত পরিমাণ খড়-বিচালি স্ফুলিঙ্গ পরিমাণ আগুনের চেয়ে দেখিতেই বড়, কিন্তু আসলে বড় নহে। সমস্ত সেজের মধ্যে যেখানে সলিতার সূচাগ্র পরিমাণ মুখটিতে আলো জ্বলিতেছে সেখানেই সমস্ত সেজটার সার্থকতা।
তেলের নিম্নভাগে অনেকখানি জল আছে, তাহার পরিমাণ যতই হইক সেটাকে আসল জিনিস বলিবার কোনো হেতু নাই। সকল সমাজে সমাজ-প্রদীপের আলোটুকু যাঁহারা জ্বালাইয়াছেন, তাঁহারা সংখ্যার হিসাবে নগণ্য, সভ্য হিসাবে তাঁহার সমাজে অগ্রগণ্য। তাঁহারা দগ্ধ হইতেছেন।
আপনাকে তাঁহারা নিমিষে ত্যাগ করিতেছেন, তবু তাঁহাদের শিক্ষা সমাজের সকলের চেয়ে উচ্চÑ সমাজে তাঁহারাই সজীব, তাঁহারাই দীপ্যমান। [সি. বো. ১২]
সারাংশ : পরিমাণ দিয়ে সত্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় না। সত্য যতই ছোট হোক কিংবা পরিমাণে যতই কম হোক তা আপন মহিমায় ভাস্বর। সমাজজীবনে যাঁরা সত্যের আলো জ্বালেন তাঁরা সংখ্যায় হয়তো খুব বেশি নন। কিন্তু তাঁদের আত্মত্যাগের কারণেই সমাজ এগিয়ে চলেছে।
২৩. সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করিয়া, একঘরে হইয়া দুই বেলা দুই মুঠো ভাত বেশি করিয়া খাইয়া নিদ্রা দিলেই তো চলিবে না। সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে দেনা-পাওনা করিয়া তবে আমরা মানুষ হইতে পারিব। যে জাতি তাহা না করিবে, বর্তমান কালে সে টিকিতে পারিবে না।
তাই, আমাদের দেশের চাষের ক্ষেতের উপর সমস্ত পৃথিবীর জ্ঞানের আলো ফেলিবার দিন আসিয়াছে। আজ শুধু একলা চাষির চাষ করিবার দিন নাই। আজ হাতার সঙ্গে বিদ্বানকে, বৈজ্ঞানিককে যোগ দিতে হইবে।
আজ শুধু চাষির লাঙলের ফলার সঙ্গে আমাদের দেশের মাটির সংযোগ যথেষ্ট নয়, সমস্ত দেশের বুদ্ধির সঙ্গে, বিদ্যার সঙ্গে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাহার সংযোগ হওয়া চাই।
সারাংশ : আধুনিক বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানে ক্রমবিকাশমান। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে যথার্থ জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব নয়। আমাদের প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতিতেও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে কার্যকর অগ্রগতি এলেই আমাদের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।
২৪. একজন মানুষ ভালো কি মন্দ আমরা তা বুঝতে পারি তার ব্যবহার দিয়ে। সে ভদ্র কি অভদ্র তাও বুঝতে পারি তার ব্যবহার দিয়ে। ব্যবহার ভালো হলে লোকে তাকে ভালো বলে। তাকে পছন্দ করে।
ব্যবহার খারাপ হলে লোকে তাকে খারাপ বলে। তাকে অপছন্দ করে। তার সঙ্গে মিশতে চায় না। তার সঙ্গে কাজ করতে চায় না। তাকে কাছে ডাকতে চায় না। তোমার ব্যবহার দিয়েই তোমার মনুষ্যত্বের পরিচয়।
সারাংশ : সুন্দর ব্যবহারের মধ্যেই মনুষ্যত্বের পরিচয় নিহিত। মানুষের কথাবার্তা, মনোভাব ও আদব-কায়দার মধ্য দিয়েই সুন্দর ব্যবহারের প্রকাশ ঘটে। ভালো ব্যবহার দিয়ে সহজেই অপরের ভালোবাসা পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ সব সারাংশ সুমুহ:
২৫. সূর্যের আলোতে রাতের অন্ধকার কেটে যায়। শিক্ষার আলো আমাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে। আমাদের দৃষ্টিতে চারপাশের জগৎ আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। আমরা জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাই; শিক্ষার আলো পেয়ে আমাদের ভেতরের মানুষটি জেগে ওঠে। আমরা বড় হতে চাই, বড় হওয়ার জন্য চেষ্টা করি।
আমরা সুন্দর করে বাঁচতে চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। আর সুন্দর করে বাঁচতে হলে চাই জ্ঞান। সেই জ্ঞানকে কাজেও লাগানো চাই। শিক্ষার ফলে আমাদের ভেতর যে শক্তি লুকানো থাকে তা ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। আমরা মানুষ হয়ে উঠি।
সারাংশ : সূর্যের আলো যেমন অন্ধকার দূর করে, তেমনি শিক্ষার আলো মনের অন্ধকার দূর করে। শিক্ষা আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে লুক্কায়িত শক্তির বিকাশে সাহায্য করে। শিক্ষার ফলে আমরা জ্ঞান ও দক্ষতা লাভ করে নিজের শক্তিকে কাজে লাগাই। যথার্থ মানুষ হয়ে উঠি।
২৬. সময় ও স্রোত কাহারও অপেক্ষায় বসিয়া থাকে না, চিরকাল চলিতে থাকে। সময়ের নিকট অনুনয় করো, ইহাকে ভয় দেখাও, ভ্রæক্ষেপও করিবে না। সময় চলিয়া যাইবে, আর ফিরিবে না। নষ্ট স্বাস্থ্য ও হারানো ধন পুনঃপ্রাপ্ত হওয়া যায়, কিন্তু সময় একবার গত হইয়া গেলে আর ফিরিয়া আসে না। গত সময়ের জন্য অনুশোচনা করা নিষ্ফল। যতই কাঁদ না কেন গত সময় আর ফিরিয়া আসিবে না। [ব. বো. ০৮]
সারাংশ : সময় চিরবহমান। শত চেষ্টা করলেও সময়ের গতিকে কেউ রুদ্ধ করতে পারে না। চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে লুপ্ত-স্বাস্থ্য বা ধ্বংস হওয়া ধন-সম্পদ পুনরায় উদ্ধার করা যেতে পারে। কিন্তু যে সময় একবার চলে যায় শত চেষ্টায়ও তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না।
২৭. ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে, ভবিষ্যৎ জীবনে সে সেরূপ ফল ভোগ করবে। এ সময় যদি আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে জ্ঞানের অনুশীলন করে যাই, তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় হবে।
আর যদি হেলায় সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে শিক্ষা জীবন ও জীবিকার পথে কল্যাণকর, যে শিক্ষা মানুষকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে, তা-ই সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা। ছাত্রদের জীবন গঠনে শিক্ষকসমাজ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁদের সুষ্ঠু পরিচালনার মধ্য দিয়ে ছাত্রদের জীবন গঠিত হয় এবং উন্মুক্ত হয় মহত্তর সম্ভাবনার পথ। [রা. বো. ১০]
সারাংশ : ছাত্রজীবন মানবজীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য এ সময়ের কর্মকাণ্ডের ওপরই নির্ভর করে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সুন্দর জীবন গঠনের চর্চা শুরু করতে হবে। ছাত্রদের জ্ঞানার্জন ও চরিত্র গঠনে শিক্ষকের ভ‚মিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের সঠিক নির্দেশনা পেলে শিক্ষার্থীর জীবন বিকশিত হয়।
২৮. অভাব আছে বলিয়াই জগৎ বৈচিত্র্যময়। অভাব না থাকিলে জীব সৃষ্টি বৃথা হইতো। অভাব আছে বলিয়াই অভাব পূরণের জন্য এতো উদ্যম, এতো উদ্যোগ। আমাদের সংসার অভাবক্ষেত্র বলিয়াই কর্মক্ষেত্র। অভাব না থাকিলে সকলকেই স্থাণু, স্থবির হইতে হইতো, মনুষ্যজীবন বিড়ম্বনাময় হইতো। মহাজ্ঞানীরা জগৎ হইতে দুঃখ দূর করিবার জন্য ব্যগ্র।
কিন্তু জগতে দুঃখ আছে বলিয়াই সে সেবার পাত্র যত্রতত্র সদাকাল ছড়াইয়া রহিয়াছে। যিনি অন্নদান, বস্ত্রদান, জ্ঞানদান, বিদ্যাদান করেন তিনি যেমন জগতের বন্ধু, তেমনি যিনি দুঃখে আমাদের সেবার পাত্রে অজস্র দান করিতেছেন, তিনিও মানবের পরম বন্ধু। দুঃখকে শত্রæ মনে করিও না, দুঃখ আমাদের বন্ধু।
সারাংশ : অভাব বা প্রয়োজনের কারণেই মানুষ নানা কিছু সৃষ্টি করে। আর সৃষ্টির প্রেরণাই মানুষের কাজের উৎস। অভাব না থাকলে মানুষ অলস ও উদ্যমহীন হয়ে যেত। দুঃখ আছে বলেই মহামানবগণ সেবার হাত প্রসারিত করেন। দুঃখে যিনি এগিয়ে আসেন, তিনি মানবের পরম বন্ধু। দুঃখের আগুনে পুড়েই মানুষ খাঁটি সোনা হয়। তাই দুঃখকে শত্রæ ভাবা ঠিক নয়।
২৯, বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তদপেক্ষাও অধিকতর মূল্যবান। অতএব কেবল বিদ্বান বলেই কোনো লোক সমাদর লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। চরিত্রহীন ব্যক্তি যদি নানা বিদ্যায় আপনার জ্ঞান-ভাণ্ডার পূর্ণ করেও থাকে তথাপি তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে যে, কোনো কোনো বিষধর সাপের মস্তকে মণি থাকে।
মণি মূল্যবান বটে কিন্তু তাই বলে যেমন মণি লাভের নিমিত্ত বিষধর সাপের সাহচর্য বুদ্ধিমানের কাজ নয়, সেরূপ বিদ্যা আদরণীয় বিষয় হলেও বিদ্যা লাভের নিমিত্তে দুর্জন বিদ্বানের নিকট গমন করা বিধেয় নয়। কেননা, দুর্জনের সাহচর্যে আপনার নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে এবং এরূপে মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ নষ্ট হতে পারে। [রা. বো. ১২]
সারাংশ : চরিত্র মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। এটি বিদ্যার চেয়েও মূল্যবান। মাথায় মণি থাকলেও সাপ যেমন ভয়ংকর তেমনি চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সাহচর্য বর্জনীয়। এতে নিজের চরিত্র কলঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩০. খুব ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যেমন সূর্যকে দেখা যায়, তেমনি ছোট ছোট কাজের ভেতর দিয়েও কোনো ব্যক্তির চরিত্রের পরিচয় ফুটে ওঠে। বস্তুত মর্যাদাপূর্ণভাবে ও সুচারুরূপে সম্পন্ন ছোট কাজেই চরিত্রের পরিচয়।
অন্যের প্রতি আমাদের ব্যবহার কীরূপ তা-ই হচ্ছে আমাদের চরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরীক্ষা। বড়, ছোট ও সমতুল্যের প্রতি সুশোভন ব্যবহার আনন্দের নিরবচ্ছিন্ন উৎস।
[কু. বো. ১৩, ১০; সি. বো.১০]
সারাংশ : চরিত্রের মধ্য দিয়েই মানুষের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশিত হয়। ছোট ছোট সৎকাজের ভেতর দিয়ে মানুষের মনের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। ছোট-বড় সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার আমাদের জীবনকে সুন্দর করে।
৩১. অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও, আমি তা বলতে চাইনে। অপরের ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করো। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বলো।
পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুণ চাহনি নিক্ষেপ করো, তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান, মানবতাসম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরববোধ করেন।
[রা. বো. ১৩, চ. বো. ১৩]
সারাংশ : মানুষের জন্য অনেক বড় কিছু করতে না পারলেও ছোট ছোট কাজের দ্বারাও আমরা মানুষের উপকারে আসতে পারি। সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে অন্যের মনে আশার সঞ্চার করতে পারি। মানবিক আচরণ দিয়ে অসহায় মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারি। এভাবেই মহৎ মানুষেরা তাঁদের মহত্তে¡র পরিচয় দেন।
৩২. মুখে অনেকেই টাকা অতি তুচ্ছ, অর্থ অনর্থের মূল বলে থাকেন। কিন্তু জগৎ এমনি ভয়ানক স্থান যে, টাকা না থাকলে তার স্থান কোথাও নেই- সমাজে নেই, স্বজাতির নিকট নেই, ভ্রাতা-ভগিনীর নিকট নেই, স্ত্রীর নিকট নেই। স্ত্রীর ন্যায় ভালোবাসে-বলো তো জগতে কে আর আছে?
টাকা না থাকলে অমন অকৃত্রিম ভালোবাসারও আশা নেই, কারো নিকট সম্মান নেই। টাকা না থাকলে রাজায় চিনে না, সাধারণে মান্য করে না, বিপদে জ্ঞান থাকে না। জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তেও টাকা, জগতে টাকারই খেলা।
সারাংশ : পৃথিবীতে অর্থের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। যার অর্থ নেই সমাজ সংসারে কোথাও তার মূল্য নেই। জন্ম থেকে মুত্যু পর্যন্ত টাকাই মানুষের ভাগ্যের মূল নিয়ন্তা।
৩৩. মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। বস্তুত চরিত্র বলেই মানুষের জীবনে যা-কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছুই নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, সে শুধু চরিত্রের জন্য। অন্য কোনো কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে নত হবার দরকার নেই।
জগতে যে-সকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরব মূলে এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক, এ কথার অর্থ এই নয় যে, তুমি লম্পট নও, তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ কর; তুমি পরদুঃখকাতর, ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয়। চরিত্রবান মানে এই।
সারাংশ : চরিত্রই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। চরিত্রবান ব্যক্তিকে সবাই শ্রদ্ধা করে। জগতের সকল মহাপুরুষের গৌরবের মূলে আছে এই চরিত্রশক্তি। সত্যবাদী, বিনয়ী, ন্যায়নিষ্ঠ, জ্ঞানবান, পরদুঃখকাতর স্বাধীনতাপ্রিয় ব্যক্তিকেই চরিত্রবান বলা যায়।
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১-৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ৬-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১০-১৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১৬-২১ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১-১০ | PDF Download
৩৪. নিষ্ঠুর ও কঠিন মুখ শয়তানের। কখনও নিষ্ঠুর বাক্যে প্রেম ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠা হয় না। কঠিন ব্যবহারে ও রূঢ়তায় মানবাত্মার অধঃপতন হয়। সাফল্য কিছু লাভ হইলেও যে আত্মা দরিদ্র হইতে থাকে, সুযোগ পাইলে সে আপন পশু স্বভাবের পরিচয় দেয়। যে পরিবারে কর্তা ছোটদের সঙ্গে কদর্য ব্যবহার করে, সে পরিবারের প্রত্যেকের স্বভাব অতিশয় মন্দ হইতে থাকে।
শিশুর প্রতি একটি নিষ্ঠুর কথা, এক-একটা মায়াহীন ব্যবহার, তাহার মনুষ্যত্ব অনেকখানি রক্তের মতো শুষিয়া নেয়, পক্ষান্তরে স্নেহ-মমতা শিশুর মনুষ্যত্বকে সঞ্জীবিত করে। পরিবারের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য সকলেরই প্রচেষ্টা করা উচিত। ইহাই পরিবারের প্রতি প্রেম।
সারাংশ : নিষ্ঠুর ও কঠিন আচরণে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যহত হয়। এ ধরনের আচরণ মনুষ্যত্বের অন্তরায়। তাই পারিবারিক প্রেম ও স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য একে অপরের সঙ্গে রূঢ় ও কঠিন ব্যবহার পরিহার করা উচিত।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।