লালসালু | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১২-১৬ | PDF : বাংলা প্রথম পত্রের লালসালু উপন্যাস হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা প্রথম পত্রের লালসালু উপন্যাস এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশ্ন\ ১২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তওবা, তওবা, কহেন কি মাস্টার সাব। খোদাভক্ত পীর, আলার ওলি মানুষ। দশ গাঁয়ে যারে মানে, তার নামে এত বড় কুৎসা! ভালো কাজ করলা না মাস্টার, ভালা কাজ করলা না। ঘন ঘন মাথা নাড়লেন জমির ব্যাপারী। পীরের বদ দোয়ায় ছাই অইয়া যাইবা! কথা শুনে সশব্দে হেসে উঠল মতি মাস্টার। কি যে কও চাচা, তোমাগো কথা শুনলে হাসি পায়। হাসি পাইবো না, লেখাপড়া শিখা তো এহন বড় মানুষ অইয়া গেছ। মুখ ভেংচিয়ে বললেন জমির ব্যাপারী। চাঁদা দিলে দিবা না দিলে নাই, এত বহাত্তরী কথা ক্যান?
ক. খালেক ব্যাপারী মসজিদের কত আনা খরচ বহন করতে চায়?
খ. ‘সভায় সকলে প্রথমে বিস্ময় হয়’ কেন?
গ. উদ্দীপকের মতি মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মাত্র একটি ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি বিচার কর।
১২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. খালেক ব্যাপারী মসজিদের বারআনা খরচ বহন করতে চায়।
খ. গ্রামে স্কুল স্থাপন করতে চাওয়া নব্যশিক্ষিত ছেলে আক্কাসের বিচার হবে ভেবে সভায় উপস্থিত হলেও যখন তেমন কোনো শাস্তি বিধান হলো না দেখে সবাই প্রথমে বিস্মিত হয়।
গ্রামের মানুষকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্যে মহব্বতনগর গ্রামে একটি স্কুল স্থাপন করতে চেষ্টা করে। মজিদের কাছে ব্যাপারটি মোটেও ভালো লাগে না। সে এটাকে অমুসলিম কাজ বলে আক্কাসের বিচারের ব্যবস্থা করে।
গ্রামের খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সভা বসে। সকলে তার শাস্তিবিধানের আশায় বসে থাকে। কিন্তু মজিদ যখন তাদের প্রত্যাশানুযায়ী শাস্তি ঘোষণা করে না তখন সভার সকলে প্রথমে বিস্মিত হয়।
গ. উদ্দীপকের মতি মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের নব্যশিক্ষিত প্রগতিশীল চেতনার আক্কাস চরিত্রের প্রতিনিধি।
শিক্ষার আলো যেখানে পৌঁছায়নি সেখান কোনো সুস্থ জীবন আশা করা যায় না। অথচ বাংলাদেশে এই অভিশাপটা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এজন্যে আমাদের দেশ এতটা পিছিয়ে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের ঔপন্যাসিক এই বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবমুখী করে উপস্থাপন করেছেন।
উদ্দীপকে দেখা যায় নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি গ্রামের মতি মাস্টার আপ্রাণ চেষ্টা করে মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে দূরীভুত করতে। সে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে তারা যে চেতনা নিয়ে এতদিন বেঁচে আছে সেটা ঠিক নয়।
ভন্ডপীর খাদেমদের চেতনার বলয় থেকে সহজ সরল মানুষদের বের করার প্রয়াস পেয়েছে। এমনই একটা চরিত্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাস চরিত্র। সেও গ্রামের সাধারণ মানুষদের নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্ত করার জন্যে একটি স্কুল স্থাপন করতে চায়।
কিন্তু ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ স্বার্থহানির আশায় তার সেই মহতি চেষ্টাকে সফল হতে দেয় না। উদ্দীপকের মতি মাস্টার এবং উপন্যাসের আক্কাসের সাদৃশ্য এক্ষেত্রেই দেখা যায়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মাত্র একটি ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থই হয়েছে।
শিক্ষা মানুষের অমূল্য সম্পদ। শিক্ষা ছাড়া জীবনের কোনো সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সত্যকে মনের মধ্যে ধারণ করে উপন্যাসের আক্কাস গ্রামে একটা স্কুল স্থাপন করে মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে একটু আলোর পরশ দিতে চিয়েছিল কিন্তু এ ধর্মান্ধ সমাজ সেটা হতে দিল না।
‘লালসালু’ উপন্যাসের এই দিকদিই উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে দেখা যায় পীর বা আলাহর অলিদের বিশ্বাস না করার জন্যে মতি মাস্টারকে তিরস্কার করে। জমির ব্যাপারী পীরের বদ দোয়ায় ছাই হয়ে যাবে এই কথাও তাকে শুনতে হয়। কিন্তু প্রগতিশীল চেতনার যুবক মতি মাস্টার সে কথা শুনে হাসে। মানুষের এই অন্ধবিশ্বাস দেখে তাদের প্রতি করুণা হয়। এদিকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের বহুমুখী ঘটনার মাত্র একটিমাত্র দিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক জীবনাশ্রয়ী, বাস্তবমুখী অস্তিত্বের উন্মীলন ও পরাভব অঙ্কনের মধ্য দিয়ে এটিকে বাংলাদেশের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ চেতনাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
এখানে অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, সামাজিক বৈষম্য, ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণা, সহজ সরল মানুষের জীবনধারা অসামান্য শৈল্পীক নৈপুণ্যে উপস্থাপিত হয়েছে। যা উদ্দীপকে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসেনি, শুধু শিক্ষার আলো বঞ্চিত গ্রামে আক্কাস যুবকের শিক্ষার আলো ছড়ানোর চেষ্টা করার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর- অতি আশ্চর্য; কিন্তু উহা সত্য। ব্যাপারটা হইতেছে এই; গত জুম্মা রাতে তাহেরা বিবি নামে একটি বালিকার সঙ্গে আমার শাদি মোবারক সম্পন্ন হয়। তিনি আমার এক পেয়ারা মুরিদের কন্যা। অত্যন্ত হাউস করিয়া তিনি আমার সহিত তাঁহার কন্যার শাদি দিয়াছিলেন। তিনিই কথা পাড়িয়াছেন। আমি ভাবিয়া দেখিলাম, নেক পরহেজগার মানুষ; বিষয়-আশয় তেমন না থাকিলেও বংশ খান্দানি। আমারও বয়স হইয়াছে, দেখভাল করিবার জন্য আর খেদমতের জন্য একটি আপন লোকের প্রয়োজন আছে। আমার প্রথম স্ত্রীর এন্তেকাল হয় চৌদ্দ বৎসর আগে। আমি পুনর্বার শাদি না করিয়া খোদার এবাদত আর মানুষের খেদমতই করিয়াছি। আমার সন্তান-সন্ততিও নাই, দেখাশুনা করিবার জন্য এক হকিকুলাহ্ আছে। কিন্তু সে আর কত করিতে পারে। দেখিলাম, বিবাহ করাটাই সমীচীন হইবে।
ক. তাহাদের নৌকা কোন সড়কটার কাছে এসে পড়ে?
খ. ‘উনি একদিন স্বপ্নে ডাকি বললেন’- মজিদ এ উক্তিটি কেন করে?
গ. উদ্দীপকের বহিপীর ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাবার্থের।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।
১৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. তাহেরদের নৌকা মতিগঞ্জের সড়কটার কাছে এসে পড়ে।
খ. মজিদ জীবিকার তাগিদে প্রবেশ করে মহব্বতনগর গ্রামে। যেখানে অশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ গ্রামবাসীর সামনে তার সেখানে আসার উদ্দেশ্যের কথা বলতে গিয়ে উক্ত কথাটি বলে।
মজিদ বলে, সে ছিল গারো পাহাড়ে। সেখানে সে সুখে শান্তিতেই ছিল। গেলো ভরা ধান গোয়াল ভারা গরু-ছাগল। সেখানকার মানুষের মাঝে ধর্ম-প্রচার করে তার জীবন ভালোই চলছিল কিন্তু হঠাৎ একদিন সে স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নই তাকে এত দূরে নিয়ে এসেছে। খোদা-রসুলের নির্দেশেই মজিদ এই গ্রামে পদার্পণ করেছে, এই কথা সবাইকে বোঝাতেই মজিদ উক্ত কথাটা বলে।
গ. উদ্দীপকের বহিপীর ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ একটি প্রতিকী চরিত্র। কুসংস্কার, শঠতা, প্রতারণা এবং অবিশ্বাসের প্রতীক সে। নিজের স্বার্থের জন্য, জীবিকার তাগিদে প্রচলিত বিশ্বাসের কাঠামো ও প্রথাবদ্ধ জীবন ধারাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়।
উদ্দীপকের বহিপীর এই মজিদ চরিত্রেররই প্রতিরূপ। তাকে দেখি কন্যার বয়সী তাহেরাকে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তাহেরা তার মুরিদ কন্যা। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পরে নারীলোলুপ বহিপীর আবার বিয়ে করে। তার এই বৈশিষ্ট্যে একজন পুরুষের নারীর প্রতি হীনম্মন্যতা ও নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করার মনোভাবটি ওঠে এসেছে। যেমনটি দেখা যায় ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রে।
মজিদও ঘরে স্ত্রী থাকা সত্তে¡ও কন্যার বয়সী জমিলাকে বিয়ে করে। তার এই আচরণে স্বার্থপরতা ও শোষণের দিকটি প্রকাশিত হয়। ধর্মীয় অনুশাসনে সকলকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখলেও সে নিজের জৈবিক চাহিদা ও অর্থনৈতিক চাহিদা যে কোনো ভাবে পূরণ করে। যা দেখা যায় উদ্দীপকের বহিপীরের চরিত্রে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি আমার মতে যৌক্তিক নয়।
‘লালসালু’ একটি সামাজিক উপন্যাস। এখানে ঔপন্যাসিক বহুমুখী ভাবের অবতারণা ঘটিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাক্সক্ষার দ্ব›দ্ব এ উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
উদ্দীপকে একজন ভন্ড পীরের জৈবিক চাহিদা চরিতার্থ করতে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে একজন কিশোরী কিভাবে বলি হয় সে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও অশিক্ষার বোকামির সুযোগ গ্রহণ করে সমাজের ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে সে দৃশ্য দেখানো হয়েছে বহিপীরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে। এটা ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত একটি মাত্র দিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক এই বাংলাদেশের সমাজ জীবনের যুগ যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও ভীতির সাথে সুস্থ জীবনের দ্ব›দ্ব, গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ তার প্রতারণার জাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই অনুপুঙ্খ বিবরণে সমুদ্ধ উপন্যাসটি। এখানকার একটা খন্ডাংশ মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা। এ সমাজের মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে নিজেরে স্বার্থ হালিল করে সে চিত্রটি উপস্থাপন ব্যতীত উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্য কোনো বিষয় উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমার কাছে প্রশ্নের মন্তব্যটি অযৌক্তিক।
প্রশ্ন\ ১৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর – (একটু রেখে) আপনি মত না দিলেও আপনার বাপজান দিয়াছেন। তাহা ছাড়া সাক্ষী সাবদ সমেত কাবিননামাও হইয়া গিয়াছে। এখন সেকথা বলিলে চলিবে কেন। (সুর বদলিয়ে) দেখুন, মন দিয়া আমার কথা শুনুন।
তাহেরা – (আবার বাধা দিয়ে) আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমার বাপজান আর সৎমা আপনাকে খুশি করবার জন্য আপনার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। আমি যেন কোরবানীর বকরি। আপনি পুলিশে খবর দিতে পারেন, আপনি আমার বাপজানকে ডেকে পাঠাতে পারেন, আমার ওপর জুলুম করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনার সঙ্গে যাবো না। আপনি আমাকে দেখেননি, আমিও আপনাকে দেখিনি। আর আপনাকে আমি দেখতেও চাই না।
খোদেজা – খোদা খোদা, কোথায় যাব আমি। পীরসাহেবের মুখের ওপর এসব কী কথা বলে মেয়েটা! শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কাঁপে।
বহিপীর – আমার কথা শোনেন।
তাহেরা – না না, আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।
ক. মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী?
খ. ‘আমি ভাবলাম তানি বুঝি দুলার বাপ’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের তাহেরার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার চরিত্রের সাদৃশ্য কোথায়? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের তাহেরা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা একই সামাজিক বৈসম্যের শিকার।” মন্তব্যটি বিচার কর।
১৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম জমিলা।
খ. ‘আমি ভাবলাম তানি বুঝি দুলার বাপ’ কথাটি বলেছে মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা।
মজিদ তার ভবিষ্যৎ বংশধরের আশায় এবং নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যে দ্বিতীয় বিয়ে করে মেয়ের বয়সী জামিলাকে। সে দরিদ্র ঘরের কন্যা এজন্যে সে খুব সহজেই জমিলাকে বিয়ে করতে পারে। ঠিক যেন বিড়ালের ছানা।
তার বিয়ের সময় মজিদকে দেখে তার মনে হয়েছিল মজিদ বুঝি দুলার অর্থাৎ বরের পিতা। বিয়ের পর রহিমার কাছে জমিলা বলে আমি ভেবেছিলাম তানি বুঝি দুলার বাপ। আর তোমাকে মনে করেছিলাম শাশুড়ি। জমিলার উক্ত কথার মাধ্যমে নারীর অবমূল্যায়নের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গ. উদ্দীপকের তাহেরার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের জামিলা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে প্রতিবাদী চেতনায়।
‘লালসালু’ উপন্যাসে নায়ক মজিদ কিন্তু নায়িকা কে? উপন্যাসের একটা বড় অংশ জুড়ে রহিমার উপস্থিতি থাকলেও একটু গভীরভাবে বিচার করলে দেখা যাবে তার চেয়ে জমিলার গুরুত্ব অনেক বেশি।
ঔপন্যাসিক তাকে প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। এই জমিলা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে উদ্দীপকের তাহেরা চরিত্রের সাথে।
উদ্দীপকের তাহেরা একজন প্রতিবাদী নারী। জনৈক বাহিপীর তাকে কলমা পড়িয়ে বিয়ে করে সৎ মা ও বৃদ্ধ পিতার ইচ্ছানুসারে। কিন্তু তাহেরা সেটাকে মেনে নিতে পারে না। বহিপীর তাকে নিতে এলে তার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।
সে জানায় তার মতে এ বিয়ে হয়নি এবং তার বাপ-মা পীরকে খুশি করার জন্যে তার সাথে বিয়ে দিয়েছে যা সে মেনে নিতে পারবে না। এমনই একটা প্রতিবাদী চরিত্র উপন্যাসের জমিলা। মাজারের খাদেম মজিদের বৌ হওয়া সত্তে¡ও তার মনে খোদাভীতি জাগাতে পারে না মজিদ।
তার কোনো নিষেধ সে শোনে না। ঔপন্যাসিক তাকে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের প্রতিবাদী চেতনার নারী হিসেবে তুলে ধরেছেন যা উদ্দীপকের তাহেরার সাথে সাদৃশ্য বিধান করেছেন।
ঘ. “উদ্দীপকের তাহেরা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জামিলা একই সামাজিক বৈষম্যের শিকার।” মন্তব্যটি সঠিক।
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত রয়েছে। এখানে নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। এই পুরুষ শাসিত সমাজ নারীকে ভোগের সামগ্রী ভাবে, পুরুষের সেবাদাসী ভাবে। তাদের চাওয়া-পাওয়ার, পছন্দ-অপছন্দের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। তাহেরা এবং উপন্যাসের জমিলা একই সামাজিক বৈষম্যের শিকার।
উদ্দীপকের তাহেরা দরিদ্র ঘরের মেয়ে। ধর্মান্ধ পিতা স্বার্থানেষী নারীলোলুপ পীর সাহেবকে খুশি করার জন্য মেয়ের মতামতের তোয়াক্কা না করে তার সাথে বিয়ে দেয়। এখানে মেয়ের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্যের কারণে তাহেরা এই জুলুমের শিকার হয়েছে। এমনই বৈষম্যের শিকার হতে দেখি ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে। সেও দরিদ্র ঘরের মেয়ে। তাকেও বলি হতে হয় ভন্ড এক ধর্মব্যবসায়ীর লালসার কাছে।
জমিলাকে বিয়ে করে মজিদ তার বংশ রক্ষার জন্যে কিন্তু সে কখনোই ভাবে নি এ বিয়েতে জমিলার কতটুকু সম্মতি রয়েছে। কারণ বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে অভ্যস্ত পুরুষ মজিদ কাপুরুষের মতো মেয়ের বয়সী জমিলাকে বিয়ে করে। জমিলাও কোরবানীর পশুর মতো এই পুরুষ শাসিত সমাজের বধ্যভূমিতে জীবন উৎসর্গ করে। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা য়ায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পাঁচুকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান শিকদারের শ্বশুর কাসেম হালদার। দেখতে শুনতে বোকা কিসিমের মনে হলেও বদের একশেষ। মেয়েকেই শুধু হাসান শিকদারের ঘাড়ে গছিয়ে দেয়নি, নিজেও জামাইবাড়ির আজীবন ভোগদখল সদস্য বনে গেছে। হাসান চেয়ারম্যানও শ্বশুরের যাবতীয় সম্মান নাশ করে তার যাবতীয় অকামের দোসর শ্বশুরকে করে নিয়েছে। একদিন শেষরাতে শ্বশুরকে তারাকান্দি বাজার থেকে কয়েক প্যাকেট নিষিদ্ধ দ্রব্য খুব গোপনে আনতে বলে। অমাবস্যার রাতে পলাশপুরের শ্যাওড়া গাছতলা দিয়ে ‘তেনাদের’ এড়িয়ে ঝামার বাজার যাওয়ার ব্যপারে কাশেম হালদার খুব ভয় পেতে থাকে। সে নিজে না গিয়ে অন্যকে দিয়ে কাজটি সমাধাণ করার বুদ্ধি আটতে থাকে।
ক. মজিদের ঘর কিসের তৈরি?
খ. মজিদ ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেন?
গ. উদ্দীপকের কাসেম হালদার ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের অনুরূপ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের চেয়ারম্যান হাসান শিকদার আর ‘লালসালু’র খালেক ব্যাপারীর সমস্যা সমধর্মী না হলেও ঘটনা ফাঁস হলে উভয়ের পরিণতি সমরূপ হতে বাধ্য।” বক্তব্য বিষয়ে তোমার মতামত তুলে ধর।
১৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মজিদের ঘর ইটের তৈরি।
খ. মজিদ সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেই ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
মজিদের ধারণা খালেক ব্যাপারী ও তার স্ত্রী আমেনা বিবি মজিদকে মানলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ালপুরের পীরের প্রতি তাদের বিশ্বাস অর্জিত হচ্ছে। এজন্য সে রেগে যায়। বিশ্বাসের ভিত তৈরি হওয়ার আগেই মূলসহ তা ওপড়ে ফেলতে চায়। তাই সে ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
গ. উদ্দীপকের কাসেম হালদার ‘লালসালু’ উপন্যাসের ধলা মিঞা চরিত্রের অনুরূপ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রভাবশালী চরিত্র খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বড় ভাই ধলা মিঞা। খালেক ব্যাপারী খুব সুন্দর করে তার প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবির ইচ্ছার কথা বলে ধলা মিঞাকে রাতের আঁধারে খুব গোপনে আওয়ালপুরে গিয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে পীরের পানি পড়া আনতে বলে।
ধলা মিঞাকে সহজ সরল মনে হলেও সে ধুরন্ধর প্রকৃতির। খালেক ব্যাপারী তাকে আমেনা বিবির জন্যে আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছ থেকে পানি পড়া আনতে বললে সে ভিন্নতর মতলব আঁটে। সে মজিদের কাছ থেকে পানি পড়া নিয়ে আওয়ালপুরের পীর সাহেবের পানি পড়ার কথা বলার ফন্দি করে।
সেজন্যে মজিদকে পানি পড়া আনা বাবদ খালেকব্যাপারীর দেওয়া টাকার অর্ধেক টাকা ঘুষ দেওয়ার চিন্তাও করে যাতে মজিদ পরে বিষয়টি ফাঁস না করে দেয়। ধলা মিঞার কুমতলবেই আমেনা বিবির কপাল ভাঙে, নিরীহ চরিত্রমতি আমেনা বিবিকে তালাক নিয়ে স্বামীর সংসার ছাড়তে হয়।
ঘ. “উদ্দীপকের চেয়ারম্যান হাসান শিকদার আর ‘লালসালু’র খালেক ব্যাপারীর সমস্যা সমধর্মী না হলেও ঘটনা ফাঁস হলে উভয়ের পরিণতি সমরূপ হতে বাধ্য।”- উক্তিটি যথার্থ সঠিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রভাবশালী চরিত্র খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রীর বড় ভাই ধলা মিঞাকে আমেনা বিবির জন্য রাতের আঁধারে, খুব গোপনে আওয়ালপুরে গিয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে পানি পড়া আনতে বলে। আরও বলে যে, সে যেন তার গ্রামের কথা গোপন করে করিমগঞ্জের কথা বলে এবং বলবে তার এক নিকটতম নিঃসন্তান আত্মীয়ার একটা ছেলের জন্য বড় শখ হয়েছে। শখের চেয়েও যেটা বড়া কথা, তাহলো শেষ পর্যন্ত কোনো ছেলেপুলে যদি না-ই হয় তবে বংশের বাতি জ্বালাবার আর কেউ থাকবে না।
মোট কথা ব্যাপারটা এমন করুণভাবে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, শুনে পীর সাহেবের মন গলে যেন পানি হয়ে যায়। কিন্তু ধলা মিঞা আওয়ালপুরে যেতে চায় না, কারণ পানি পড়া নিতে তাকে আওয়ালপুরে যেতে যাত্রা শুরু করতে হবে শেষ রাতে, যাতে ভোর হওয়ার আগেই ধলা মিঞা মহব্বতনগরে ফিরে আসতে পারে এবং এ ব্যাপারে কেউ যেন টের না পায়।
অন্যদিকে আওয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথের তেঁতুল গাছের তলা দিয়ে রাতের বেলা আসতে সে ভীষণ ভয় পায়। কারণ, তেঁতুল গাছটি ‘দেবংশি’ অর্থাৎ এ গাছে ভূত প্রেতের আড্ডা। তাছাড়া পীর সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ও তার ছিল। এসব কারণেই সে আওয়ালপুরে যেতে চায় না।
পরিশেষে বলা যায়, ধলা মিঞার কুমতলব ও গোপনীয়তা ফাঁসের কারণে যেমন আমেনা বিবির কপাল ভাঙে, খালেক ব্যাপারীর নিরীহ চরিত্রমতি আমেনা বিবিকে তালাক দিয়ে সংসারে বিপর্যয় আনতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকের কাসেম হালদারের অনুরূপ কর্মকান্ডে চেয়ারম্যান হাসান শিকদারের জীবনেও খালেক ব্যাপারীর অনুরূপ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ হাসান শিকদার থানা পুলিশে সোপর্দ করলে নানা দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন।
প্রশ্ন\ ১৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় ‘মুসলিম সহিত্য-সমাজ’ গঠিত হয়। এ সংগঠনের লেখকের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীর দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ ইসলাম বিদ্বেষী।
ক. কখন বৈঠক ডাকা হলো?
খ. মসজিদের ব্যাপারে খালেক ব্যাপারী কেন বারো আনা খরচ বহন করতে চায়?
গ. ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র কোনটি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আর ‘লালসালু’র দাড়ি না থাকা একই রকম হামলার একই অস্ত্রবিশেষ।” মূল্যায়ন কর।
১৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সন্ধ্যার পরে বৈঠক ডাকা হলো।
খ. মজিদের তৈরি করা ফাঁদে পা দেওয়া খালেক ব্যাপারী গ্রামের মাতব্বর এবং সবচাইতে পয়সাওয়ালা লোক। আগেও সে মাজারের জন্যে অনেক পয়সা খরচ করেছে, গিলাফ বদলে দিয়েছে। এখন সে মসজিদের জন্যেও টাকা দেবে।
কিন্তু বেশির ভাগ খরচ সে একাই বহন করতে চায় কারণ তার মনটা বড় অশান্তিতে আছে, সংসারেও তার বিরাগ এসেছে। আগের মতো দুনিয়ার কাজে সে শান্তি পায় না। সে জন্যে সে পরকালের চিন্তা করে এবং আলাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়।
গ. ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি হলো মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে আক্কাস মোদাব্বের মিঞার ছেলে। সে ইংরেজি স্কুলে পড়েছে। তারপর বিদেশে গিয়ে বহুদনি থেকেছে। সেখানে চাকরি করে পয়সা জমিয়ে সে আবার গ্রামে ফিরে এসেছে। আক্কাস গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
উদ্দীপকের ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের আদর্শ ও তাদের বিরোধী শক্তির কথা বলা হয়েছে। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীয় দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। পক্ষান্তরে নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন।
তারা অভিযোগ করেন ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকরা ইসলাম বিদ্বেষী। উদ্দীপকের ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকদের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের এ ধারণা হয়েছে যে স্কুলে না পড়লে মুসলমানের ছেলেদের উন্নতি হবে না।
গ্রামে মক্তব আছে বটে, কিন্তু মক্তবে পড়–য়ারা আধুনিক চেতনা থেকে পিছিয়ে থাকে। সে জন্যে আক্কাস মনে করে গ্রামে একটি স্কুল থাকা উচিত। মূলত আক্কাস একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রামে আসে। কিন্তু অবশেষে ধর্মের কারবারী মজিদের কারণে আক্কাস স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
ঘ. উদ্দীপকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আর ‘লালসালু’র দাড়ি না থাকা একই রকম হামলার একই অস্ত্রবিশেষ। প্রতিক্রিয়াশীল ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ দাড়ি না থাকার কথাটি বলেছে মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাসকে।
আক্কাস গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আধুনিক শিক্ষা গ্রামে চালু হলে মক্তবের লেখাপড়ায় পড়–য়াদের আগ্রহ কমে যাবে। তখন মজিদের মতো ধর্মের কারবারীদের অসুবিধা হবে। সে জন্যে মজিদ গ্রামে স্কুল হতে দিতে চায় না। মজিদের সুবিধা হলো এই যে, গ্রামের অজ্ঞ লোকেরা তাকে ভয় করে এবং তার কথায় ওঠে বসে।
উদ্দীপকে ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকয় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের আদর্শ ও তাদের বিরোধী শক্তির কথা বলা হয়েছে। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর লেখকদের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীর দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। পক্ষান্তরে নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন। তারা অভিযোগ করেন ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকরা ইসলাম বিদ্বেষী।
উদ্দীপকের ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকদের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাস একজন প্রগতিপন্থী আধুনিক ছেলে। আক্কাসকে থামিয়ে দিতে মজিদ তৎপর হয়। মুসলমানের ছেলে দাড়ি রাখে না এ কথাটি বললে গ্রামের লোকেরা আক্কাসের বিরুদ্ধে যাবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। মজিদ লোকজনদের সামনে এটি প্রমাণ করলো যে আক্কাস ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি মানে না।
মূলত উদ্দীপকের রক্ষণশীলেরা এবং ‘লালসালু’র মজিদ নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে ইসলামের নামে এসব কথা বলে সমাজের প্রগতিপন্থীদের হামলা করে থামিয়ে দিতে চায়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।