প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF: অধ্যায় ৫.১ : প্লেটো, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.১ : প্লেটো
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. রিপাবলিকে বর্ণিত প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, রিপাবলিক-এ বর্ণিত প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী?
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক নগররাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ক্রান্তিকালে সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্র এথেন্স যখন বিপর্যস্ত প্লেটো তখন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা রিপাবলিক’ রচনা করেন। এ গ্রন্থে প্লেটো গ্রিসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিহার করে একটি উত্তম রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করেন । প্লেটোর মতে, উন্নত জীবন হচ্ছে আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য ।
এক্ষেত্রে তিনি তার শিক্ষা গুরু সক্রেটিসের মূলনীতি ”Virtue is knowledge’ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। তিনি মানুষের মধ্যে ন্যায়ের উপস্থিতিকে বুঝাতে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাকে উপস্থাপন করেছেন ।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. শ্রেণিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্র একটি শ্রেণিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তিনি নগররাষ্ট্রের অধিবাসীদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। যথা : দার্শনিক শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণি এবং উৎপাদক শ্রেণি।
২. শ্রমবিভাজন : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র শ্রমবিভাজন নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার মতে, মানবাত্মার তিনটি বিশেষ উপাদান বা গুণের ভিত্তিতে সমাজে তিনটি স্বতন্ত্র শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে।
যারা যুক্তি, মেধা, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং জনগণের উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করবে তারা অভিভাবক শ্রেণি। যারা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন দিতে সদা প্রস্তত থাকবে তারা যোদ্ধা শ্রেণি । আর যারা দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি পার্থিব প্রয়োজন মিটাবে তারা উৎপাদক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ন্যায়ধর্ম প্লেটোর আদর্শরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
৪. ‘সদগুণই জ্ঞান’ নীতি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হচ্ছে সক্রেটিসের ‘সদগুণই জ্ঞান’ এ নীতিবোধ। এক্ষেত্রে তিনি তার শিক্ষাগুরু সক্রেটিস দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি জ্ঞানের ভিত্তিতে তার আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার কথা উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রের সকল স্তরের কর্মবিভাজনে তিনি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
৫. আইনের অনুপস্থিতি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে আইনের প্রয়োজনীতাকে অস্বীকার করেন। কারণ প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ব্যক্তিভিত্তিক, আইনভিত্তিক নয়। আর দার্শনিক রাজা সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী হন বলেই আদর্শ রাষ্ট্রে আইনের কোনো দরকার নেই। প্লেটোর মতে, শাসক যখন ন্যায়পরায়ণ থাকে, আইন তখন নিষ্প্রয়োজন এবং শাসক যখন দুর্নীতিপরায়ণ তখন আইন অকার্যকর হয়ে পড়ে।
প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
৬. গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। তিনি গণতন্ত্রকে অজ্ঞতা ও অযোগ্যতার শাসন বলে অভিহিত করেছেন। প্লেটোর মতে, রাজনীতিবিদদের অজ্ঞতা ও অযোগ্যতা গণতন্ত্রের জন্য অভিশাপস্বরূপ।
৭. রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত দু স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চতর শিক্ষা।
প্লেটোর মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে ব্যক্তি জ্ঞানের বিকাশ লাভ করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।
৮. দাসপ্রথাকে সমর্থন : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রকে বাস্তবায়িত করার জন্য দাসপ্রথাকে সমর্থন করেন। কেননা শাসক শ্রেণির সুখশান্তি বিধানে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য দাসদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৯. নারী পুরুষ সমানাধিকার : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে নারী পুরুষের সমানাধিকার ও সমদায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার অধিকার ও সুযোগের কথা বলেন। তিনি মনে করেন জনসংখ্যার অর্ধেক (নারী) পিছিয়ে থাকলে সামাজিক অগ্রগতি অসম্ভব।
১০. বিমূর্ত ধারণা : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা মাত্র প্রায়োগিক দিকের চেয়ে তত্ত্বের দিকেই প্লেটোর দৃষ্টি বেশি। নিবন্ধ ছিল। অনেকেই মন্তব্য করেন, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র হচ্ছে কিছু নিছক আদর্শবাদী জটিল এবং অস্পষ্ট ধারণা বা মতবাদ।
১১. সম্পত্তিতে সাম্যবাদ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের অভিভাবক শ্রেণি ও যোদ্ধা শ্রেণির সম্পত্তির বিলোপ সাধনের মাধ্যমে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি ছিলেন। এ উভয় শ্রেণির ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। সমাজে যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারী হবেন উৎপাদক শ্রেণি ।
১২. পরিবার প্রথার অনুপস্থিতি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রচলিত পরিবার প্রথার বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি মনে করেন, শাসক শ্রেণির যদি পরিবার পরিজন থাকে তাহলে শাসক তাদের প্রতি মায়ামমতার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। ফলে তিনি সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্লেটোর মতবাদ বর্তমান কালের রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র মতবাদ অনেকের মতে, কল্পনাপ্রসূত বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা বর্তমান কালে অত্যাচার, অবিচার ও স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
০২. আধুনিককালে প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিককালে প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ কর।
প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে প্লেটো ছিলেন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের সুযোগ্য শিষ্য। প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শন তৎকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চিরন্তন সমস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষার যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তার জন্য তিনি আজও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্লেটো একজন কল্পনাবিলাসী দার্শনিক হিসেবে তার তত্ত্ব প্রচার করলেও তার দর্শনে আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল আধুনিক ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে প্লেটো এরিস্টটলের মতো এতোটা বাস্তববাদী না হলেও বাস্তবতাকে স্বীকার করে তিনি যে দর্শন দিয়েছেন তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে
আধুনিককালে প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব : আধুনিককালে প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. আদর্শ রাষ্ট্র : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্বের রূপরেখা যদিও কল্পনাবিলাসী ছিল তথাপি তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বৰ্তমান প্রেক্ষাপটেও অনুসরণযোগ্য। তিনি আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোয় দার্শনিক রাজা, যোদ্ধা শ্রেণি ও উৎপাদক শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে অশিক্ষিত ও অযোগ্য শাসকের কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এর ফলে এসব দেশের সামরিক বাহিনীতে জনগণ যোগদান করতে অনীহা প্রকাশ করছে এবং উৎপাদক শ্রেণি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। যার কারণে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তাই বর্তমানে আমরা যদি প্লেটো প্রদত্ত আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব অনুসরণ করি তাহলে সকল ক্ষেত্রে যোগ্য শাসকের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালিত হবে এবং যথাযথ যোদ্ধা ও উৎপাদক শ্রেণি গড়ে উঠবে।
২. দার্শনিক রাজা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে দার্শনিক রাজার কথা উল্লেখ করেন সে মেধা ও উৎকর্ষের প্রতীকমাত্র। বর্তমান পৃথিবীতে সর্বত্রই আমলারা শাসনকার্যে নিযুক্ত, যেখানে সাধারণ মানুষের কোনো স্থান নেই। প্লেটোর সময়কালে প্রশাসন এতটা জটিল ও বিস্তৃত ছিল না বলে একজনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ছিল।
আধুনিককালে প্রশাসন ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করার ফলে একজনের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভবপর নয়। তাই প্লেটোর সময়কালের দার্শনিক রাজাকে বর্তমান সময়ের আমলাদের সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ প্লেটোর সময়ে যারা দার্শনিক রাজা হিসেবে পরিচিত ছিল বর্তমান সময়ে তা আমলা সম্প্রদায় হিসেবে পরিগণিত।
৩. শিক্ষা : প্লেটো আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে যে শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখ করেন তা আজও চিরস্মরণীয়। তার মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মনের সুষম বিকাশ সাধন।
তিনি মনে করেন মানুষের মন উন্নত ও বিকশিত না হলে সমাজজীবন উন্নত হতে পারে না। ইউনেস্কোর সংবিধানে বলা আছে, পৃথিবী থেকে যুদ্ধের আশঙ্কা দূর করতে হলে মনকে উন্নত করতে হবে।
সর্বপ্রথম প্লেটোই একথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই নয়, গণতান্ত্রিক ও উদারনৈতিক রাষ্ট্রগুলোতেও প্লেটো বর্ণিত শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করছে। এককথায়, প্লেটো রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছেন তা আজও আমরা সমগ্র বিশ্বে দেখতে পাই এবং সাম্প্রতিককালে এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. রাজনৈতিক পরিকল্পনা : রাজনীতির অঙ্গন যে পরিকল্পনা বর্জিত নয় তা আমরা প্লেটোর ‘ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’ গ্রন্থ থেকে বুঝতে পারি। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসেও আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করি যে, রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ যে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন সে অনুযায়ীই শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
বর্তমানে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনার মতো বহু রাষ্ট্রকে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে । রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা বাদ যায়নি।
৫. মিশ্র সংবিধান : প্লেটো মিশ্র সংবিধানের নীতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। প্লেটো মনে করেন মিশ্র সংবিধান ছাড়া অন্য সকল সংবিধান মানুষের যথার্থ স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রকে সুনিশ্চিত করার পরিবর্তে তাদেরকে এক বা একাধিক দাসত্বে পরিণত করে । বর্তমান সময়ে প্লেটোর মিশ্র সংবিধানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
৬. ন্যায়ধর্ম : প্লেটো প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে ন্যায়ধর্মকে সঠিক স্থান দেওয়ার জন্য যে ন্যায়ভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহী ছিলেন বর্তমান যুগের আধুনিক রাষ্ট্রগুলো প্লেটোর পথ অনুসরণ করে আইনের মাধ্যমে ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছে। বর্তমানে আইন বিভাগ,
শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের যে স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতা আমরা দেখতে পাই তা প্লেটোর ন্যায়ধর্মের অনুসারেই প্রবর্তিত। যাকে আমরা ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হিসেবে অভিহিত করি।
৭. শরীর চর্চা : প্লেটো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনের জন্য ব্যায়ামের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন সুন্দর ও সুগঠিত দেহ নির্মল মনের আবাসভূমি। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করার জন্য তিনি শরীরচর্চাকে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, যা আধুনিক কালে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ।
৮. সংগীত শিক্ষা : মানসিক উৎকর্ষের জন্য সংগীতের গুরুত্ব অপরিসীম। প্লেটো বিখ্যাত কবিতা ও কাব্যসমূহকে ব্যাখ্যা এবং বীণা বাজানোকে সংগীতের অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্তমানকালেও মানুষের মানসিক বিকাশ ও সংস্কৃতির বিকাশে সংগীত শিক্ষা প্রচলিত রয়েছে। তাই কোনোমতেই তার চিন্তাধারার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটোর রাজনৈতিক দর্শন আপাতদৃষ্টিতে কল্পনা ও অবাস্তব বলে মনে হলেও, সেগুলো অমূলক ও ভিত্তিহীন নয়।
তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা এবং সমসাময়িক কালের বাস্তববতার ওপর ভিত্তি করে প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শনের ধারণা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত । জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি । রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে তার অবদান আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ।
০৩. প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক পার্থক্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, প্লেটো ও এরিস্টটলের রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো এবং এরিস্টটল ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের দুইজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তাদের দুজনের মধ্যে গুরু শিষ্যের সম্পর্ক বিদ্যমান। মাত্র সতের বছর বয়সে এরিস্টটল প্লেটোর শিক্ষা একাডেমিতে যোগদান করেন এবং সেখানে কুড়ি বছর যাবৎ শিক্ষা লাভ করেন।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্লেটোর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কাজেই উভয়ের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে সাদৃশ্য থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় উভয় চিন্তাবিদের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান ।
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৪:রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা অতিসংক্ষিপ্তত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:(ফ্রি PDF) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্লেটো ও এরিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক পার্থক্যসমূহ : প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো—
১. দৃষ্টিভঙ্গি : প্লেটোর দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির সঙ্গে এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। প্লেটো ছিলেন একজন গণিত শাস্ত্রের অনুরাগী।
তার একাডেমির নামফলকে খোদিত ছিল, “গণিত শাস্ত্রে যার কোনো অনুরাগ নেই সে যেন এখানে প্রবেশ না করে।” পক্ষান্তরে চিকিৎসকের সন্তান হিসেবে বাল্যকাল থেকেই এরিস্টটলের জীবন বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং সে অনুযায়ী তার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
২. পদ্ধতিগত: পদ্ধতিগত দিক থেকে প্লেটো ছিলেন একজন ভাববাদী দার্শনিক। তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তা বিশ্লেষণে অবরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। কিন্তু এরিস্টটল তার রাষ্ট্রদর্শনে যুক্তিভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক আরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি রাষ্ট্র সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তা বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করতেন ।
৩. রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি : প্লেটোর মতে, ঐক্য ও সংহতির মাঝেই রাষ্ট্রের কল্যাণ নিহিত তাই তিনি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির ওপর অত্যধিক জোর দেন । পক্ষান্তরে, এ সম্পর্কে এরিস্টটলের মতামত হলো, অনৈক্যের মধ্যেও রাষ্ট্রের মঙ্গল নিহিত।
৪. ব্যক্তিগত সম্পত্তি : প্লেটো তার সাম্যবাদের ধারণা উপস্থাপন করতে গিয়ে অভিভাবক শ্রেণির জীবন থেকে পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা অস্বীকার করেন।
তার মতে, অভিভাবক শ্রেণির জীবনে পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা রাষ্ট্রের প্রতি হুমকিস্বরূপ। পক্ষান্তরে, এরিস্টটল প্লেটোর এ ধারণাকে কাল্পনিক বলে মনে করেন। তিনি সমাজের সকলের ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির পক্ষে মতামত প্রদান করেন ।
৫. দাসপ্রথা : এরিস্টটল তার রাষ্ট্রদর্শনে দাসপ্রথাকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন এবং সমাজে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু দাস প্রথা সম্পর্কে প্লেটো সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলেননি।
৬. সাহিত্যকর্ম: প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ ”The Republic’ সাহিত্যিক মূল্য, রচনাশৈলী ও প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সাহিত্য কর্ম হিসেবে এরিস্টটলের “‘The Republic’ এর স্থান এতটা উচ্চে নয়।
৭. উপমা প্রয়োগ: প্লেটো তার রচনাশৈলীকে উপমা ব্যবহারের পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে যুক্তিকে প্রকাশ করতেন পক্ষান্তরে, এরিস্টটল তার রচনায় উপমার চেয়ে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করতেন।
৮. শাসক : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রীয় শাসনভার দার্শনিক রাজার হাতে অর্পণ করেন। তার মতে, প্রকৃত দার্শনিকের সদগুণ অন্য সকলের সদগুণ অপেক্ষা শ্রেয় এবং অভিজ্ঞতা অপেক্ষা প্রজ্ঞা শ্রেয়।
পক্ষান্তরে, এরিস্টটল ব্যক্তির হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত না করে তা আইনের হাতে ন্যস্ত করেন। তার মতে, আইনের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শাসক স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।
৯. নীতিশাস্ত্র : প্লেটো নীতিশাস্ত্রকে রাষ্ট্রনীতির অন্তর্গত বিষয় হিসেবে কল্পনা করেন। কিন্তু এরিস্টটল নীতিশাস্ত্র থেকে রাজনীতিকে পৃথক করেন। যার ফলে এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১০. আদর্শ রাষ্ট্র : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো রোমন্টিকতা। কিন্তু এরিস্টটলের আদর্শ রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো বাস্তবতাভিত্তিক; রোমান্টিকতা নয়।
১১. নারীর অধিকার : প্লেটো তার শিক্ষাব্যবস্থায় নারীদের সমানাধিকারের কথা বলেন। বস্তুত তিনি নারী পুরুষের সম অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু এরিস্টটল এর রাষ্ট্রদর্শনে নারী মুক্তির ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি। তিনি নারীদের কর্মক্ষেত্র গৃহস্থালির কাজের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন।
১২. সর্বোত্তম রাষ্ট্র : প্লেটো তার সরকারের শ্রেণিবিন্যাসে অভিজাততন্ত্রকে সমর্থন করেন। তার শাসনব্যবস্থায় উৎপাদক শ্রেণির কোনো স্থান নেই। পক্ষান্তরে এরিস্টটলের মতে, পলিটি বা মধ্যতন্ত্র হলো সর্বোত্তম সরকার ব্যবস্থা। তিনি আদর্শ রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করেন ।
১৩. ব্যক্তিগত জীবন : ব্যক্তিগত জীবনে প্লেটো ছিলেন একজন অতীন্দ্রিয়, সংযমী, সদাচারী এবং সংসারত্যাগী লোক। পক্ষান্তরে, এরিস্টটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী, যুক্তিবাদী ও সাংসারিক ব্যক্তি।
১৪. চিন্তাধারা : প্লেটো ছিলেন একজন কল্পনাপ্রবণ, সংশ্লেষণবাদী ও সর্বাত্মকবাদী দার্শনিক। যার কারণে তার রচনার মধ্যে ন্যায়বিচার, সদগুণ, সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রাধান্য লাভ করে। অপরদিকে, এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তায় বাস্তবতাকে গুরুত্বারোপ করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো ও এরিস্টটলের চিন্তাধারা পার্থক্য এতই তীব্র যে তারা রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে দুই জন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। একজন ভাববাদী দার্শনিক হিসেবে প্লেটো তার রাষ্ট্রদর্শনে শিক্ষা সাম্যবাদ দার্শনিক রাজা, আদর্শ রাষ্ট্র প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্যদিকে এরিস্টটল প্লেটোর প্রতিরূপ তত্ত্ব প্রদান করেন। এ সম্পর্কে ভি. রাও (V. Rao) বলেন, “”To turn from Plato to Aristotle is like coming down from the mountain tops to a well fenced and carefully cultivated land of fields and gardens.”
০৪. গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা আলোচনা কর ।
অথবা, গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ছিলেন গণতন্ত্র বিরোধী একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তার মতে, “আদর্শ রাষ্ট্রের বিচ্যুতির তৃতীয় পর্যায়ে যে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় তাকে বলা হয় গণতন্ত্র। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কোনোক্রমেই উৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা হতে পারে না। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্তে প্লেটোর শিক্ষাগুরু সক্রেটিসকে হত্যা করা হলে তিনি গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধী হয়ে ওঠেন।
গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা : গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. আদর্শ বিচ্যুতির ফল : প্লেটো গণতন্ত্রকে আদর্শ রাষ্ট্রের বিচ্যুতির ফল বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, ধনিকতন্ত্রের বিত্তশালীরা অধিকতর সুবিধা ভোগের আশায় সাধারণ জনগণের ওপর শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে জনগণ তা থেকে মুক্তির জন্য বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ধনীদেরকে সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় আসীন হয় ।
ফলে উদ্ভূত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। কিন্তু এ ব্যবস্থায় অচিরেই রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এজন্য প্লেটো গণতন্ত্রকে আদর্শ বিচ্যুতির ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ।
২. অদ্ভুত শাসনব্যবস্থা : প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে গণতন্ত্রকে এক অদ্ভুত রকমের শাসনব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে কারো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যার শাসন করার গুণ আছে সে শাসক হতে বাধ্য নয়। যার আনুগত্য পোষণ করার আবশ্যকতা আছে সে অনুগত হতে বাধ্য নয়।
যে অপরাধী সে দণ্ডিত নয়, যে দণ্ডিত সে অপরাধী নয়। এটা হচ্ছে অদ্ভুত ও অরাজক রকমের এক শাসনব্যবস্থা যেখানে সমান অসমান সকলেই সমান।”
৩. মূর্খের শাসন : প্লেটো গণতন্ত্রের যেসব ত্রুটি কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন তন্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজনীতিদিদের অযোগ্যতা ও অজ্ঞতা এজন্যই তিনি গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলে অভিহিত করেন তিনি শাসক শ্রেণির অজ্ঞতা ও অযোগ্যতাকে গণতন্ত্রের অভিশাপ মনে করেন।
৪. অস্বাভাবিক শাসনব্যবস্থা : স্বভাবতই প্রতিটি সমাজের মানুষের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য পরিলক্ষিত হয় । তাই সমাজের সকল মানুষে ভেদাভেদ ঈশ্বর প্রদত্ত। তাই সমাজের সকল মানুষ যোগ্যতা ও মেধার দিক দিয়ে সমান নয় । কিন্তু গণতন্ত্রে সকলের সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা বলা হয়। তাই প্লেটো একে অস্বাভাবিক শাসন ব্যবস্থা বলে মনে করেন ।
৫. নিকৃষ্টতর শাসনব্যবস্থা : গণতন্ত্রে ধনী-দরিদ্র সকলেই সমান বিধায় এখানে যোগ্যতার কোনো মূল্য নেই। প্লেটোর মতে, “এ ব্যবস্থায় ভালো কিছু আশা করা যায় না।” এজন্য তিনি গণতন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টতর শাসনব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন।
৬. দুর্বল ভিত্তি : গণতন্ত্রের মনস্তাত্বিক ভিত্তি হচ্ছে আশা- আকাঙ্ক্ষা এবং এর ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা পর্যুদস্ত হয়। গণতান্ত্রিক নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের ফলে গণতান্ত্রিক এমনকি ব্যবস্থা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে। প্লেটো বলেন, “স্বার্থপর মানুষের নিয়ন্ত্রণে এসে গণতন্ত্র ধনিকতন্ত্রের রূপ লাভ করে।”
৭. সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণ: রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণে একটি উৎকৃষ্ট শাসনের প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকে প্লেটো ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দার্শনিক রাজার শাসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। কিন্তু গণতন্ত্র সর্বদা গোষ্ঠী তথা সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে তৎপর ।
৮. নীতিহীন শাসনব্যবস্থা: প্লেটোর গণতন্ত্রকে এক নীতিহীন শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন। তার মতে, অন্যান্য শাসনে একটি নীতি থাকে, কিন্তু গণতন্ত্রে কোনো নীতিই নেই। বিশেষ করে রাজনীতিবিদের নীতিহীনতার প্লেটো কঠোর সমালোচনা করেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো ছিলেন দার্শনিক রাজার শাসনে বিশ্বাসী একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। এজন্য তিনি গণতন্ত্রের চরম বিরোধিতা করেন এবং গণতন্ত্রকে অজ্ঞতা,
অযোগ্যতা ও মূর্খের দ্বারা পরিচালিত এক অরাজক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন। যদিও বর্তমান কালে গণতন্ত্র হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা এবং জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের একমাত্র উপায়। এজন্যই গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর মতামত বর্তমান কালে বিভিন্নভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF