পঞ্চম শ্রেণি | প্রাথমিক বিজ্ঞান | অধ্যায় ১১ | বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর | PDF: পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়টির ১১ তম অধ্যায়টি হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
অধ্যায় ১১ আবহাওয়া ও জলবায়ু
বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ১ \ বায়ুচাপ কী?
উত্তর : বায়ু তার ওজনের কারণে ভ‚পৃষ্ঠের উপর যে চাপ প্রয়োগ করে তাই বায়ুচাপ। বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। বায়ুচাপ হ্রাস পেলে মেঘ-বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে আর বায়ুচাপ কমলে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
প্রশ্ন \ ২ \ কীভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়?
উত্তর : দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ বাংলাদেশে কেন বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর : বাংলাদেশে বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশের উপর খাজভাবে কিরণ দেয়। তখন স্থলভাগে নিম্নচাপ এবং বঙ্গোপসাগর এরাকায় উচ্চচাপ বিরাজ করে।
আরো দেখুন
ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। এই জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একারণেই বাংলাদেশে বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ কালবৈশাখী ঝড়ের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলেই কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেল বেলায় কালবৈশাখী ঝড় বেশি হয়। বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণেখাজভাবে কিরণ দেয়।
সারা দিনের প্রচণ্ড উত্তাপে বিকেল থেকৈ আর্দ্র বায়ু প্রণ্ড বেগে নিম্নচাপ এলাকার দিকে ধাবিত হয়। এ অঞ্চলের বায়ু হালকা হয়েং উপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় হিমালয়ের উচ্চচাপ এলাকা বিস্তৃত হতে পারে। সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভ‚ত হয়ে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ৫ \ আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়?
উত্তর : আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে মিল ও অমিল উভয়ই রয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যকার মিলগুলো হলো : তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ যেমন আবহাওয়ার উপাদান তেমনি জলবায়ুরও উপাদান।
অমিলগুলো হলো : আবহাওয়া কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থা। বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হয়। কিন্তু কোনো স্থানের জলবায়ু বহু বছর একই থাকে।
প্রশ্ন \ ৬ \ জানুয়ারি এবং জুলাই এর মধ্যে কোন মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত? কেন?
উত্তর : জানুয়ারি মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮ মিলিমিটার এবং মাসিক গড় আর্দ্রতা ৫৪%। অপরদিকে, জুলাই মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২৯ মিলিমিটার এবং মাসিক গড় আর্দ্রতা ৭৯%। দেখা যাচ্ছে জুলাই মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার পরিমাণ জানুয়ারি মাসের তুলনায় বেশি।
অর্থাৎ জুলাই মাসে বনভোজন করলে বৃষ্টিজনিত কারণে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। তাই, জানুয়ারি এবং জুলাই এর মধ্যে জানুয়ারি মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত।
কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও উত্তর
যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ১ \ কালবৈশাখী ঝড় কেন হয় পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার কারণ নিম্নে পাঁচটি বাক্যে দেওয়া হলো :
১. গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়।
২. সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দিলে দূপুরের রোদের তাপে বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে গিয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে এবং কালবৈশাখী হয়।
৩. নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুর স্বল্পতা পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ছুটে আসার কারণে কালবৈশাখী সৃষ্টি হয়।
৪. সঞ্চারনশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয় এবং পরবর্তীতে ঘনীভ‚ত হয়ে ঝড়ো হাওয়া ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে।
৫. দেশের উত্তরে ও হিমালয়ের উচ্চ বায়ুচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়ে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ তোমার জেলা দক্ষিণাঞ্চলে, যেটি টর্নেডো ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ অঞ্চল। তুমি এ দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে কী জান?
উত্তর : টর্নেডো : টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভ‚পৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।
ঘূর্ণিঝড় : ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়। অত্যধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হয়। এর ফলে ঐ সকল স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ বাংলাদেশের জলবায়ুতে স¤পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুর্যোগ দেখতে পাওয়া যায়। একটির কারণ পানির আধিক্য আরেকটির কারণ পানিহীনতা। দুর্যোগ দুটি কী কী? আলোচনা কর।
উত্তর : পানির আধিক্য ও পানিহীনতার কারণে সৃষ্ট দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো যথাক্রমে বন্যা ও খরা। নিচে এদের বর্ণনা দেওয়া হলো :
বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়।
অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই খরার কারণ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।
প্রশ্ন \ ৪ \ সৃজনী সংবাদপত্রে স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পড়ছে। পত্রিকায় ছাপানো ছবি অনুযায়ী, সেটি ছিল সরু ফানেলের মতো ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহ। বায়ুপ্রবাহটি সেখানে কী কী ক্ষতি করতে পারে বলে তুমি মনে কর?
উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া যে দুর্যোগের কথা সৃজনী পড়ছে সেটি হলো টর্নেডো।
টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভ‚পৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।
টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমনÑ ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনাও ভেঙে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন \ ৫ \ তোমার বন্ধু নিলয়ের বাড়ি উপক‚ল এলাকায়। তারা প্রায়ই সামুদ্রিক বজ্রঝড়ের কবলে পড়ে। কখনো কখনো বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। নিলয়ের কাছে এসবের গল্প শুনে তুমি যা যা জেনেছ ৫টি বাক্যে তার বিবরণ দাও।
উত্তর : নিলয়ের কাছে সামুদ্রিক যে বজ্রঝড়ের গল্প আমি শুনেছি তার নাম হলো ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ :
১. ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়, যা ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়।
২. অত্যধিক গরমের ফলে বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হলে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ৩. ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে।
৪. কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে লোকালয় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
৫. মাঝে মাঝে জলোচ্ছ¡াসের ফলে সমুদ্র উপক‚লবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
প্রশ্ন \ ৬ \ তুমি টেলিভিশনের নিউজের মাধ্যমে জানতে পারলে সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হবে। অথচ সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলে। এর কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রশ্নে উল্লিখিত ঘটনাটি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা।
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া।
তাই আবহাওয়াবিদগণ আবহাওয়া সমন্ধে পূর্বাভাস দিলে তা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ সামান্য সময়ের ব্যবধানে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলোর পরিবর্তন হতে পারে। যেমনÑ ভ‚পৃষ্ঠে সূর্যের তাপ খাড়াভাবে পড়লে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন উচ্চচাপবিশিষ্ট স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানে বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল। তাই আমি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পরিবর্তে সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলাম।
প্রশ্ন \ ৭ \ গ্রীষ্মের এক বিকালে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলো। এটাকে তুমি কী বলবে? এর উৎপত্তি সম্বন্ধে তোমার ধারণা উপস্থান কর।
উত্তর : গ্রীষ্মের বিকালে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়কে আমি কালবৈশাখী ঝড় বলব।
কালবৈশাখীর উৎপত্তি : গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো, এসময় স্থলভাগ অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। গ্রীষ্মকালে সূর্য বাংলাদেশের উপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। এতে এ অঞ্চলের বায়ু সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এভাবে বিকেলের দিকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
এ সময় দেশের উত্তরে উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবলবেগে নিম্নচাপের এলাকায় বাহিত হয়। এর সাথে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়। এটিই হলো কালবৈশাখী।
প্রশ্ন \ ৮ \ ইন্দ্রজিতের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। এ জেলায় রয়েছে বিশাল জলভাগ। দিনের বেলায় এ অঞ্চলে কোনদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে? আলোচনা কর।
উত্তর : দিনের বেলায় ইন্দ্রজিতের জেলায় উচ্চচাপ বিশিষ্ট জলভাগ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হবে।
দিনে জলভাগের চেয়ে স্থলভাগ বেশি উষ্ণ থাকে। তাই স্থলভাগের উপরে থাকা বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এতে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয। অন্যদিকে দিনের বেলা জলভাগের উপরস্থ বায়ু শীতল হওয়ার কারণে ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে।
ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় বায়ুর উচ্চচাপ। বায়ু উচ্চচাপের এলাকা থেকে প্রবাহিত হয় নিম্নচাপ বিশিষ্ট এলাকায়। কাজেই ইন্দ্রজিতের জেলায় দিনের বেলায় জলভাগের উপর থেকে শীতল বাতাস নিম্নচাপযুক্ত স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন \ ৯ \ আমাদের প্রতিদিনের পোশাক কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত? তোমার মতামত ব্যক্ত কর।
উত্তর : আমাদের প্রতিদিনের পোশাক আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থাই হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া; যা সবসময় পরিবর্তনশীল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে বৃষ্টি হওয়ার কথা জানা গেলে আমরা সুতি পোশাকের পরিবর্তে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক পরিধান করব, যাতে তা সহজে এবং দ্রæত শুকিয়ে যায়। বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ব্যাগে রাখব রেইনকোট।
অন্যদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অসহনীয় তাপমাত্রার কথা বলা হলে আমরা পবিধান করব ঢিলেঢালা পোশাক। এভাবে প্রতিদিনের পোশাক নির্বাচনে আমাদের সাহায্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
প্রশ্ন \ ১০ \ আমাদের দেশে প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়। এদের মাঝে তুমি কী কী মিল ও অমিল খুঁজে পাও?
উত্তর : কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মাঝে মিল ও অমিলগুলো হলো :
মিল :
কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দুটোই গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট হয় বায়ুর নিম্নচাপের কারণে। দুটোই বজ্রঝড়। দুটোতেই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
অমিল :
কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত বিকালবেলা বেশি হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।
কালবৈশাখী ঝড়ের বিস্তৃতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি ৫০০-৮০০ কিলোমিটার।
কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে ভারী বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি দেখা যায়। পক্ষান্তরে ঘূর্ণিঝড়ে দমকা হাওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ¡াসের।
সাধারণ প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ১১ \ শীতকালে বাংলাদেশে শৈত প্রবাহ হওয়ার কারণ ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শীতকালে শৈত প্রবাহের কারণ :
১. শীতকালে বাংলাদেশের উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং সৃষ্টি হয় শৈত্য প্রবাহের।
২. শীতকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থাকে উত্তপ্ত এবং সেখানে বিরাজ করে বায়ুর নিম্নচাপ।
৩. তখন দেশের উত্তরে বেশি থাকে শীত ও বায়ুচাপ।
৪. শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।
৫. এ বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে কম জলীয় বাষ্প থাকে এবং তা হয় শুষ্ক ও শীতল। এই বায়ুর প্রভাবেই শীতকালে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হয়।
আরো পড়তে পারেনঃ
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ১ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ২ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ৩ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ৫ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন \ ১২ \ রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে কেন?
উত্তর : রাতের বেলা স্থলভাগ দ্রæত ঠাণ্ডা হয়ে যায় কিন্তু জলভাগ অপেক্ষাকৃত উত্তপ্ত থাকে বলে তখন স্থলভাগের উপর বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
পানি অপেক্ষা বালি বা মাটি দ্রæত উত্তপ্ত বা ঠাণ্ডা হয়। দিনের বেলা সূর্যের তাপে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার রাতের বেলা দ্রæত তাপ বিকিরণ করে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি ঠাণ্ডা হয়। এতে রাতে স্থলভাগের উপরের বায়ু শীতল হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং সেখানে বায়ুর উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে পানির তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম বলে রাতের বেলা জলভাগ অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তপ্ত থাকে। ফলে জলভাগের উপরস্থ উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ বায়ুচাপ কীভাবে বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে?
উত্তর : কোথাও বায়ুচাপ কমে গেলে সেখানে পার্শ্ববর্তী উচ্চ বায়ুচাপবিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এভাবে বায়ুচাপ বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
বায়ু তার ওজনের কারণে ভ‚পৃষ্ঠের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এই বায়ুচাপ আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কোনো এলাকায় খাড়াভাবে সূর্যের কিরণ পড়লে সেখানে বায়ু উষ্ণ হয়ে হালকা হয় ও উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় শূন্যস্থানের ও কমে যায় বায়ুচাপ। একে বলে নিম্নচাপ।
আবার কোনো এলাকায় বায়ু ঠাণ্ডা হয়ে নিচের দিকে নেমে এলে বায়ুচাপ বৃদ্ধি পায় যা উচ্চ বায়ুচাপ নামে পরিচিত। কোনো এলাকায় নিম্নচাপ বিরাজ করলে সে এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণ : আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুর আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পায়।
১. বর্ষাকালে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।
২. বর্ষাকালে সে সময় বাংলাদেশের জলভাগ অপেক্ষা বেশি উষ্ণ থাকে স্থলভাগ।
৩. স্থলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ ও জলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে। ৪. তখন বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে অধিক জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় এবং সেখানে সংঘটিত হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সমুদ্রের উপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে।
এর ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠাণ্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ১৬ \ বিরূপ আবহাওয়া কী? তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ সম্বন্ধে যা জান লেখ।
উত্তর : আবহাওয়ার কোনো উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বিরূপ আবহাওয়া বলা হয়।
তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ : অতি গরম আবহাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাই হলো তাপদাহ। অস্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃত্যু হয়।
উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এই অবস্থাই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশে খুব কমই দেখা যায়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ বন্যা ও খরা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্বাভাবিক স্থলভাগ সাময়িকভাবে পানিতে প্লাবিত হয়ে যাওয়াকে বন্যা বলে। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে আবার স্থলভাগ স্বাভাবিক হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত বা বহিরাগত পানির কারণে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হয়। এ এ জলাবদ্ধতাই বন্যা নামে পরিচিত।
দীর্ঘসময় ধরে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাটির সতেজতা হ্রাস পেয়ে মাটি ফেটে যায়। এ অবস্থাকে খরা বলে। দীর্ঘসময় ধরে বৃষ্টিপাতের অনুপস্থিতির কারণে ভ‚মির জলীয়ভাব হ্রাস পায়। এসময় সেচ দেওয়া না গেলে মাটি ফেটে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাছপালা স্বাভাবিক সতেজতা হারায়, পাতা পড়ে যায়। পরিবেশের এই বিরূপ অবস্থাই খরা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।