HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১১-২২ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব দিনলিপি লিখন গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু দিনলিপি লিখন নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
উচ্চ মাধ্যমিক ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
১১. নবান্ন উৎসব উদযাপনের দিনলিপি
২৫ জুলাই, ২০২২
নবান্ন শব্দটি অনেক শুনেছি। শুনেছি এটি একটি শস্যভিত্তিক লোকউৎসব। কিন্তু এ উৎসব কখনো দেখিনি। তাও বগুড়ার একটি গ্রামে আমার বন্ধুর বাড়িতে এসেছি। দেখছি ঢেঁকিতে নতুন চাল ‘গুড়ি’ করা হচ্ছে। রোদে শুকানো হলো সেই চালের গুঁড়ো। ৮-১০টা বড় নারকেল কোরানো হলো। ওদিকে একটি বড় পাতিলে দুধ জ্বাল দেওয়া হলো, আর একটি পাতিলে সুজি। ঘন দুধ, সুজি, কোরানো নারকেল আর খেজুরের গুড় একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা হলো পাটিসাপটা পিঠা।
একে একে তৈরি হলো ভাপা পিঠা, চিতই, পুলি, রসের পিঠা, ক্ষীর, পায়েস ইত্যাদি। পৌষের সকালে সেগুলো পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে বিতরণ করা হলো এ বাড়িতেও এলো নবান্নের নানা রান্নার সামগ্রী। মাদুর বিছিয়ে আমাদের বসতে দেওয়া হলো। থালায় সাজিয়ে দেওয়া হলো নানা রকম পিঠা, ক্ষীর, পায়েস। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ কী আনন্দে মেতে আছে! নানা গল্প-গুজবে, গানে গানে মুখর গ্রামের মানুষ। তাদের মুখে মুখে সব বাড়ির রান্নার প্রশংসা।
বিকেলে শুরুর হলো জারিগান, তারপর পালাগানের আসর। আনন্দ আর ঐতিহ্যের গর্বে আমার মন ভরে গেল। সত্যিই নবান্ন উৎসবের তুলনা হয় না। প্রাণের ভেতর থেকে বেরয়ে এলো- যুগ যুগ বেঁচে থাকো বাংলার নবান্ন উৎসব।
১২. বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের দিনলিপি লেখ।
২৮ জুন, ২০২২
আজ আমরা সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আকস্মিক বর্ষণে এখানে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকা অবস্থিত। সেখানে বর্ষণের ফলে ঢলের আকারে পানি প্রবাহিত হয় নিচের দিকে। ফলে সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা দেখা যায়। এ অঞ্চলে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উঠতি ফসলের। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ডুবে গেছে, কোথাও স্রোতের টানে পাকা ফসল ভেসে গেছে। বন্যার ফলে বহু লোক গৃহহীন হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। সরকার পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সমগ্র এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হলো- বন্যার পরিণতি হিসেবে দুর্ভিক্ষ আর মহামারী সৃষ্টি হয়ে জনজীবনকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। আমরা যে ত্রাণসামগ্রী নিয়েছিলাম তা বিতরণ করলাম। প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অতি সামান্য।
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’- এ বাণী সামনে রেখে দেশের স্বচ্ছল ও হৃদয়বান মানুষরা এগিয়ে এলে এ ধরনের সমস্যা সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আমরা সেখান থেকে ঢাকায় ফিরলাম রাত ১২টায়।
১৩. বইমেলা সম্পর্কে দিনলিপি লেখ।
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
গত বছর বইমেলার স্মৃতি আমি কখনই ভুলতে পারব না। সকালের পড়ার টেবিল ছেড়ে কলেজে গেলাম। আমাদেত বাংলা শিক্ষকের কাছে কয়েকটি বইয়ের নাম চাইলাম, বইমেলা থেকে যেগুলো কিনতে পারি। তিনি আনন্দচিত্তে লিখে দিলেন। সেগুলোর সঙ্গে আমার তালিকায় রাখা বইয়ের নাম স্যারকে দেখালাম। তিনি কোনো কোনোটির নেই বললেন। আমি তা মেনে নিলাম। বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে মেলায় যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। মাকে বললাম বই কেনার কথা।
মা টাকা দিলেন, বললেন রাত ৮টার আগে বাসায় ফিরতে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে। ভিড় ছিল না, লাইনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হলো না; ভিতরে ঢুকে গেলাম। প্রথমেই কিনলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের চিঠি’। মেলায় তালিকার সব বই পেলাম না। এরপর আমার প্রিয় লেখক জাফর ইকবালের কিছু বই কিনলাম।
হঠাৎ দেখলাম জাফর ইকবাল স্যার একটি স্টলে বসে পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। আমি তাকে সরাসরি দেখে সত্যি অবাক হলাম। যার বই সে ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি তাকে আজ বাস্তবে দেখে, কথা বলে, অটোগ্রাফ নিয়ে সত্যি অবাক হলাম। আর এ কারণেই এই বইমেলা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
১৪. ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন সম্পর্কে দিনলিপি লেখ।
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে আজ আমি, নয়ন, অপূর্ব ঢাকা চিড়িয়াখানা (মিরপুর) পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সকাল নয়টায় বাসা থেকে বের হয়ে আমরা মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়ামের গেটে মিলিত হলাম। সেখান থেকে রিকশা কর চিড়িয়াখানা গেট। যথারীতি টিকেট করে ভিতরে ঢুকলাম। এখানে বহুবার এসেছি। সেসব আসার পেছনে আনন্দের বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আজকে আসার মূল কারণ বিভিন্ন প্রাণীর নাম, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের আহার ও পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
শুক্রবার বলেই কিনা জানি না, লোকজনের প্রচুর ভিড়। এত মানুষের ভিড়ের মধ্যে নোটবুকে প্রাণীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এখানে বাগজ, সিংহ প্রভৃতি প্রাণীকে যথেষ্ট সতেজ মনে হয় নি, কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় খাবার, পরিবেশ ও যতেœর অভাবেই হয়তো তা হয়েছে। হাতির অবস্থাও তাই। ময়ূর, জেব্রা, জিরাফ দেখে মুগ্ধ হলাম।
দুর্গন্ধের জন্য বাঁনরের খাঁচার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারিনি। অজগর সাপ, কুমির প্রভৃতি থাকার পরিবেশ আরও যথার্থ হওয়া দরকার। ঘুরে ঘুরে নানা রকম দেশি বিদেশি জীবজন্ত দেখে দুপুরের খাবার খেলাম দুপুরের অনেক পরে। বিকেলে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। নয়ন ফোন করে জানাল সন্ধ্যায় আর বের হবে না। আমি অপূর্বকে খবরটা জানিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
১৫. উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হিসেবে একদিনের দিনলিপি লেখ।
২০ মার্চ, ২০২২
সকালে উঠে যথারীতি কাজকর্ম শেষ করে কলেজে গেলাম। আজ ছিল আমার কলেজের শেষ দিন। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হলো। সব বিদায়ই বেদনার। আমার কলেজের আনন্দ বেদনার অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে আজ। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে বই, কলম এবং রজনীগন্ধার স্টিক তুলে দিল আমাদের জুনিয়ররা।
সবশেষে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে, আমাদের চলার পথের যথার্থ পাথেয় অর্জন সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ সাহেব। কলেজের শেষ দিনটিতেও যে আমাদের জন্য শিক্ষার ও জানার অনেক কিছু ছিল তা তাঁর বক্তব্য থেকে বুঝতে পারলাম। ঘরে ফিরলাম আনন্দ বেদনার স্মৃতি নিয়ে। শিক্ষার মধ্য দিয়ে নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব অর্জন করার প্রতিজ্ঞা করলাম। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার বাসনা নিয়ে পড়তে বসলাম। রাত ১১টা পর্যন্ত পড়ে ঘুমাতে গেলাম।
১৬. বর্ষণমুখর দিন/সন্ধ্যা সম্পর্কে দিনলিপি লেখ।
২০ মার্চ, ২০২২
আজ সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হলো। বিকালে মাঠে যাওয়া হলো না। কী করে যাব, অবিরাম বৃষ্টি। শ্রাবণের বর্ষণের মধ্যেই দিনের সূর্য হারিয়ে সন্ধ্যা মেনে এলো। একইভাবে অশান্ত বর্ষণ। মেঘের কালো ছায়ায়, বৃষ্টিতে, ঝড়ো হাওয়ায়, ঘন ঘন মেঘের গুরু গুরু ডাকে অদ্ভুত একটা মায়াবী পরিবেশ লক্ষ করলাম আজ সন্ধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতা মনে পড়ল, গান মনে পড়ল এসবের মধ্যেও মনে পড়ল হাঘরে হাভাতে মানুষের কথা।
বর্ষণমুখর সন্ধ্যার রূপ কবির কাছে যেভাবে ধরা পড়ে ক্ষুধার্তের কাছে সেভাবে ধরা পড়ে না। অতিবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়। শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। “ওগো, আর তোরা যাসবে ঘরের বাহিরে”, আর যাদের ঘর নেই, তারা কোথায় যাবে? মানুষ যদি মানবিক হয় তবেই এদের রক্ষা, কবির কথার সার্থকতা; নচেৎ তা নয়। সারাদিন কালিদাসের ‘মেঘদূত’ পড়েও আমার মন থেকে অসহায় মানুষের করুণ মুখ মুছে ফেলতে পারলাম না।
১৭. জন্মদিন উদযাপন সম্পর্কে দিনলিপি লেখ।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
আজ ছিল পৃথিবীর আলো দেখার প্রথম দিন, আমার জন্মদিন। আজ থেকে দেড় যুগ আগে আমি এ দিনে এই ভোরের সূর্যালোক দেখেছিলাম। জন্মদিন পালনে আমার আগ্রহ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে; কিন্তু মায়ের আগ্রহে আগের মতোই। তার কাছে আমি এখনও সেই ছোট্ট অংকুর। জন্মদিন উপলক্ষে কেনাকাটা, আত্মীয়স্বজনকে নিয়ন্ত্রণ, আমার সহপাঠী, খেলার সাথী, বন্ধুদের, তাদের বাবা মাদের ফোন করে নিমন্ত্রন, বাবাকে নানা কাজে ব্যস্ত করে তোলা তাঁর কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
ঈদ উৎসব কেউ না এলেও মায়ের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু আমার জন্মদিনে সবাইকে আসতেই হবে। যথারীতি ১২টা ১মিনিটে কেক কাটা, খাবার খাওয়া, গান শোনা, গল্প করা ইত্যাদি চলে। এক কথায় আমার জন্মদিনকে ঘিরে পারিবারিক মিলন উৎসব হয় প্রতি বছর এই দিনে। আমিও মা বাবার মুখ দেখে মুগ্ধ হই। সবাই যখন ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, অংকুর’ কোরাস করে তখন আমি কেক কাটি। প্রথমে মাকে, তারপর বাবাকে এবং পরে একে একে সবাইকে কেক তুলে দিই।
আজকের জন্মদিনের উৎসবে ব্যাতিক্রম ছিল আমার কলেজে অধ্যক্ষ মহোদয়ের উপস্থিতি। তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন একজন বাউল সাধককে। তাঁর কন্ঠে লালন সাঁইয়ের মরমি গান আমাদের অভিভূত করে। আমরা সবাই করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করলাম।
১৮. শিক্ষাসফরে একদিনের দিনলিপি লেখ।
২৬ ডিসেম্বর, ২০২২
সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠলাম। দু’দিনের শিক্ষাসফরে আজ দ্বিতীয় দিন। পুঁথিগত বিদ্যাকে অর্থবহ করতে আমাদের কলেজ প্রতি বছরই শিক্ষাসফরের আয়োজন করে থাকে। ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষ আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছরই দেশের বিখ্যাত জায়গাগুলো ঘুরে আসার আয়োজন প্রশংসনীয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পঞ্চাশজন শিক্ষার্থীর একটি দল গতকাল এসেছি কুমিল্লার ময়নামতিতে।
গত বছর একদল গিয়েছিল বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘরে সোনারগাঁওয়ে। আজ সকালে আমরা ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখলাম। এখানকার অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা এখানকার ছবি তুলেছি। এরপর গেলাম বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে। এলাকার মূল্যবান প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। এখানকার বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করলাম।
সেগুলো কলেজ বার্ষিকীতে প্রকাশ করব বলে স্যারকে জানালাম। আমাদের সুশৃঙ্খল ঘোরাফেরা, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে শিক্ষকরাও আনন্দিত। এখানে দেখে শেখার আনন্দ আমরা নতুন করে উপলব্ধি করলাম। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্যের এই অভিজ্ঞতা আমাদের মনের সীমানাকে আরও প্রসারিত করবে। এখানকার ঐতিহাসিক চিহ্ন ও নির্দশনসমূহ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শসহ তাঁরা স্বাগত জানালেন। সারাদিন আনন্দে কাটল।
১৯. কলেজ জীবনে প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে একটি দিনলিপি লিখ।
৪ আগস্ট, ২০২২
কলেজ জীবনের প্রথম দিন
স্কুলজীবনে স্বপ্ন ছিল কবে কলেজ ভর্তি হবো, কবে কলেজে ক্লাস করবো। সেই সুযোগ এলো আজকে। কিন্তু তখনকার মতো কৌতুহল অনুভব করছি না। বরং এক ধরনের আনন্দে শিহরিত হচ্ছি। এ অনুভূতির রং, রূপ, আকার কেমন বোঝাতে পারব না। তবে তার অস্তিত্ব বেশ জোরালো। কলেজ ড্রেস পড়ে কাঁদে ব্যাগ ঝুলিয়ে তৈরি আমি। মা খাইয়ে দিলেন লুচি মাংস। বাবা বাইকে করে নামিয়ে দিলেন কলেজ গেইটে। ভেতরে ঢুকতে কেমন সংকোচ হচ্ছে।
এক বন্ধু এসে টেনে নিয়ে গেল ক্লাসে। নাম পরিচয় বলে আমিও সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম। প্রথমে ক্লাসে এলেন ইংরেজি স্যার। আমাদের রোল নোট করে তিনি সবার সাথে পরিচয় হলেন। তারপর প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিলেন। আমরা অডিটোরিয়ামে গিয়ে বসলাম। প্রিন্সিপাল স্যার নিজের পরিচয় দিয়ে টিচারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুজন অধ্যাপক কলেজের পরিচিতিমূলক বক্তব্য রাখলেন। সবশেষে প্রিন্সিপাল স্যার উপদেশ ও নির্দেশনা বক্তব্য দিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলেন। আমাদের হাতে তুলে দেয়া হলো ক্লাস রুটিন, বুকলিস্ট ও কলেজ ম্যাগাজিন। হৃস্ট মনে চলে এলাম বাসায়।
২০. ‘বিজয়ের দিনলিপি’ এই শিরোনামে একটি দিনলিপি বর্ণনা কর।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
বিজয়ের দিনলিপি
ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে গেল। বেশ ঝরঝরে লাগছে। মনে পড়ল আজ বিজয় দিবস। আজকের দিনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে যৌথবাহিনীর কাছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয়। আজকের দিন আনন্দের, একই সঙ্গে বেদনার। কেননা ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ বিজয়। আজ অশ্রæ ঝরানোর দিন- আনন্দাশ্রু এবং বেদনাশ্রু। এ অনুভূতি অকৃত্রিম, অনাস্বাদিত। মোবাইলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে দ্রæত তৈরি হয়ে নিলাম। জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাব।
রাস্তায় বেড়িয়ে দেখলাম ওরা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেশাত্মবোধক গান গাইতে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে গাড়ি থেকে নেমে মিছিলের সঙ্গে স্লোগান দিচ্ছি ‘জয় বাংলা’ গাড়ি খালার বাড়িতে রেখে একটা মিছিলের সঙ্গে মিশে গেলাম। ওদের কাছ থেকে ফুল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে অর্পণ করলান শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আর মনে মনে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করলাম। সারাদিন বিজয়ের স্মৃতিচারণ শুনে, গান গেয়ে, মজার খাবার খেয়ে, আনন্দে কাটিয়ে রাতে ফিরে এলাম ঢাকায়।
২১. সুন্দরবন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি লেখ।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
সুন্দরবন ভ্রমণ।
সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাসে সুন্দরবনের সৌন্দর্য রহস্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন ‘জাদুময়, অপরিমেয়, অননুমেয়।’ পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে অনন্য সুন্দর সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গিয়ে আমারও সেই অনুভূতি হয়েছে। পরিবারের সবার সঙ্গে বন বিভাগের লঞ্চে করে হিরণ পয়েন্ট এলাকায় গেলাম। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঘ-হরিণের চারণভূমিতে ধীরে ধীরে নতুন ডালপালা পাতাসমৃদ্ধ বন গড়ে উঠেছে দেখে ভালো লাগল। নানা রঙের অনেক পাখি চোখে পড়ল, কিন্তু বানর বা হরিণ দেখা গেল না। একটা খালের ভেতর বেশ কিছু দূর ঢুকল লঞ্চটি। কাঁকড়া, বেজি চোখে পড়ল।
বানরের শব্দ শুনে উপরে গাছের দিকে তাকাতেই কয়েকটা বানর দেখলাম। কেউ ফল খাচ্ছে, কেউ লাফাচ্ছে বা ডাল ঝঁকাচ্ছে। জেলে বা বাওয়ালি কাউকে দেখলাম না। কাদার উপর বাঘের পায়ের ছাপ দেখালেন একজন খালাসি। লঞ্চ দ্রæত ফিরে এলো বন বিভাগের বাংলোয়। নদীর তাজা মাছ রান্না হয়েছে। মজা করে খাওয়া দাওয়া সেরে রওযানা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।
২২. বাংলা নব্বর্ষ উদযাপনের উপর একটি দিনলিপি লেখ।
১৪ই এপ্রিল, ২০২২
মানিকগঞ্জ।
এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে এসেছি গ্রামে। ঠিক গ্রাম নয়, ছোট শহর বলা যায়। সঙ্গে এসেছেন আব্বা, আম্মা, ভাই-বোন, মামা সবাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুরফুরে বাতাসে কিছুক্ষণ সবুজ প্রকৃতিতে মিশে গেলাম। তারপর পুকুরে গোসল সেরে নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরে বেরিয়ে পড়লাম। এখানকার স্কুল মাঠের পাশে বিশাল বটগাছের নিচে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সবুজ ঘাসের উপর বসে কখনো নবীনদের সম্মিলিত কন্ঠে, কখনো একক কন্ঠে গান শুনে ভালো লাগল। তিন রাস্তার মোড়ে গেরুয়া পোশাক পরা বাউলরা মন মাতানো গান গাইছেন, শুনলাম কিছুক্ষণ।
এর মধ্যেই চাচাত ভাই টেনে নিয়ে চলল নদীর পাড়ে। নৌকাবাইচ হবে। দশ বারোটা নৌকা চমৎকারভাবে সাজানো, ঢোল খঞ্জনি বাজিয়ে গান হচ্ছে। স্থানীয় এমপি সাহেব এসে গেছেন। শুরু হলো বাইচ। নৌকার দু’দিকে বসা রঙিন পোশাক পরা লোকেরা বৈঠা ফেলছে একতালে আর তর তর করে নৌকার ছুটে চলছে। কারা জিতল জানা হলো না, আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। আলোচকরা খুব চমৎকার বললেন। নতুন কিছু বিষয় জানলাম।
লাঞ্চ প্যাকেট দেওয়া হলো, খেয়ে নিলাম। তারপর ভাই বোনেরা মিলে আব্বা আম্মার সাথে ছুটলাম মেলায়। হাটের মাঠে মেলা। অনেক লোকের সমাগম, হরেক রকম দোকান, নানা রকম আওয়াজ। এর মধ্যে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে নানা জিনিস কিনতে এবং দেখতে খুব ভালো লাগছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সুতারাং সারাদিনের মিষ্টি আনন্দ নিয়ে এবার বাড়ি ফেরা।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।