চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | প্রবন্ধ রচনা ১-৫ | PDF Download: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা লিখন অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবন্ধ রচনা গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রবন্ধ রচনা
প্রবন্ধ কী :
কোনো একটি বিষয়কে ভাব ও চিন্তার মধ্য দিয়ে ভাষায় প্রাণবন্ত করে প্রকাশ করাই হচ্ছে প্রবন্ধ।
প্রবন্ধের প্রকারভেদ :
বিষয়ভেদে প্রবন্ধকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা ১. বর্ণনামূলক; ২. ঘটনামূলক; ও ৩. চিন্তামূলক।
প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন :
প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে
১. প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
২. চিন্তাপ্রসূত ভাবগুলো অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে।
৩. প্রত্যেকটি ভাব উপস্থাপন করতে হবে পৃথক অনুচ্ছেদে।
৪. একই ভাব, তথ্য বা বক্তব্য বারবার উল্লেখ করা যাবে না।
৫. রচনার ভাষা হতে হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
৬. উপস্থাপিত তথ্যাবলি অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।
৭. বড় ও জটিল বাক্য যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
৮. নির্ভুল বানানে লিখতে হবে।
৯. সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না।
১০. উপসংহারে সুচিন্তিত নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করতে হবে।
১. গরু
সূচনা : বাংল্রাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে গরু সন্তানের মতোই লালিত-পালিত হয়। শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির এই প্রাণীটি খুব সহজেই পোষ মানে।
দৈহিক গড়ন : গরু আড়াই থেকে তিন হাত উঁচু এবং তিন থেকে পাঁচ হাত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় দুটি শিং, দুটি কান, দুটি চোখ, চারটি পা ও একটি লম্বা লেজ আছে। লেজের আগায় এক গোছা চুল থাকে। এই লেজ দিয়ে গরু মশা-মাছি তাড়ায়। এর সারা শরীর ছোট ছোট লোমে ঢাকা। পায়ের খুর দুভাগে বিভক্ত। গরুর মুখের উপরের পাটিতে দাঁত নেই।
বর্ণ : সাদা, কালো, লাল, ধূসর, মিশ্র প্রভৃতি রঙের গরু দেখতে পাওয়া যায়।
খাদ্য : গরুর প্রধান খাদ্য ঘাস। এছাড়া এরা লতাপাতা, ভুসি, খড়, ভাতের মাড় ইত্যাদিও খায়।
উপকারিতা : আমরা গরুর মাংস খাই। গরু আমাদের দুধ দেয়। দুধ দিয়ে ঘি, মাখন, ক্ষীর, ছানা ইত্যাদি মজাদার খাবার তৈরি হয়। এর চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ এবং শিং দিয়ে বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি হয়। ক্ষেতে লাঙল দেওয়া ও গাড়ি টানার কাজে গরুকে ব্যবহার করা হয়। গরুর গোবর অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের সার।
উপসংহার : গরু অত্যন্ত উপকারী জন্তু। তাই এর যতœ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
২. ধান
সূচনা : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো ধান। এটি আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য।
চাষের অঞ্চল : আমাদের দেশে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান চাষ করা হয়। হাওর, খাল, বিল এবং নদীর চরেও ধানের চাষ হয়।
বৈশিষ্ট্য : ধান গাছ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা চিকন ও দীর্ঘ। কাঁচা ধান গাছ সবুজ থাকে। ধান পাকলে ধানসহ গাছের রং সোনালি হয়।
উৎপাদন : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধান জন্মায়। তবে এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ধানের জন্যে বিখ্যাত। বাংলাদেশের বরিশাল ও দিনাজপুর জেলায় বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের ধান উৎপন্ন হয়। যথা আউশ, আমন, বোরো ও ইরি।
চাষের সময় : আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখ মাসে বুনতে হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। আমন ধান আষাঢ়শ্রাবণ মাসে বুনতে হয় এবং কার্তিকঅগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং চৈত্রবৈশাখ মাসে কাটা হয়। ইরি ধানের চাষ বছরের বিভিন্ন সময়ে করা হয়।
ধানজাত দ্রব্য : ধান থেকে চাল হয়। চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়। এছাড়া চাল থেকে চিড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি খাবার তৈরি হয়। ধানের খড় গরু-মহিষের খাদ্য।
উপসংহার : আমাদের দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ধানের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তা করা সম্ভব।
৩. আমাদের গ্রাম
সূচনা : ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।’
আমাদের গ্রামের নাম ঘোপাল। গ্রামটি ফেনী জেলায় অবস্থিত। গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী।
সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। আম, কাঁঠাল, বটসহ নানা রকম গাছ গাছালিতে গ্রামটি ঘেরা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। বিভিন্ন মৌসুমে ফোটে নানারকম ফুল। গ্রামের মেঠো পথ, সোনালি ধানক্ষেত, ছায়া ঢাকা বাঁশঝাড় দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
গ্রামের মানুষ : আমাদের গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের বাস। এখানে আছে নানা পেশার, নানা ধর্মের মানুষ। গ্রামের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। কেউ ঝগড়াবিবাদ করে না।
গ্রামের স্থাপনা : আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি লাইব্রেরি, একটি খেলার মাঠ, একটি বাজার, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির ও একটি ডাকঘর আছে।
গ্রামের আর্থিক অবস্থা : আমাদের গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। গ্রামের মাঠে মাঠে ফলে প্রচুর ধান, পাট, গম, মসুর, সরিষা, আখ ইত্যাদি। বড় বড় পুকুরগুলোতে নানা রকম মাছের চাষ হয়।
উপসংহার : আমাদের গ্রামকে আমরা সবাই মায়ের মতো ভালোবাসি। গ্রামের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করি।
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাঠান মুলুকে | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | কাজলা দিদি | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাখির জগৎ | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
৪. আমাদের বিদ্যালয়
সূচনা : “বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়,
এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।”
বিদ্যালয় হচ্ছে ভালো মানুষ গড়ার কারখানা। আমি যে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি তার নাম চাঁদগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
অবস্থান : আমাদের বিদ্যালয়টি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার চাঁদগাজী গ্রামে অবস্থিত।
বিদ্যালয় ভবন : আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি পাকা। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এতে ১০টি কক্ষ আছে। এগুলোর ভেতর একটি প্রধান শিক্ষক সাহেবের কক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ এবং একটি লাইব্রেরি কক্ষ। অন্য কক্ষগুলোতে ক্লাস হয়ে থাকে।
ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমণ্ডলী : আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২০০। শিক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছেন ১০ জন সুযোগ্য শিক্ষক। শিক্ষকগণ আমাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পড়ান।
লাইব্রেরি : আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে নানা ধরনের বই রাখা আছে। লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে বাড়িতে নিয়েও পড়া যায়।
খেলাধুলা : আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে আছে বড় একটি খেলার মাঠ। এখানে আমরা নানা রকম খেলাধুলা করি। বিদ্যালয়ে একজন ক্রীড়া শিক্ষক আছেন। তিনি নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা পরিচালনা করে থাকেন।
অনুষ্ঠান : আমাদের বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রæয়ারি মাসে আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা রকম আয়োজন থাকে।
ফলাফল : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রতি বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ আট-দশজন ছাত্র-ছাত্রী অ+ পায়।
উপসংহার : আমাদের বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরূপ একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।
৫. বাংলাদেশের ষড়ঋতু
সূচনা : ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভ‚মি।’
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের প্রকৃতি। ঋতুতে ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে নানা বৈচিত্র্যময় রূপে। আর তার গুণেই এদেশ সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সকল দেশের রানি।
ঋতুর পরিচয় : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতু বদল হয়। ঋতুগুলো হচ্ছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
গ্রীষ্ম : গ্রীষ্ম আমাদের দেশের প্রথম ঋতু। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস মিলে গ্রীষ্ম ঋতু। এ সময় প্রচণ্ড গরম পড়ে। রৌদ্রের তাপ তখন অসহ্য লাগে। নদী-নালা, খাল-বিলের জল শুকিয়ে খা খা করে। কখনো কখনো এ ঋতুতে কালবৈশাখী ঝড় হয়।
বর্ষা : আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। তখন অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পড়ে। কখনো হুড়মুড় করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। কখনো বা হয় ঝিরিঝিরি ইলশেগুঁড়ি। খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে যায়।
শরৎ : বর্ষার পর আসে শরৎ। ভাদ্র ও আশ্বিন এ দুই মাস মিলে শরৎ ঋতু। আকাশ তখন হয় ঘন নীল। তার গায়ে তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। তখন চারপাশে শিউলি ও কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ দেখা যায়।
হেমন্ত : শরতের পরই চুপি চুপি আসে লাজুক ঋতু হেমন্ত। সাথে করে আনে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরবেলায় তখন শীত শীত লাগে। সোনালি পাকা ধানে গ্রামের মাঠগুলো ভরে ওঠে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুই মাস মিলে হেমন্তকাল।
শীত : পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস মিলে শীতকাল। এ সময় হাড়কাঁপানো শীত অনুভ‚ত হয়। রাতের বেলা লেপ কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়। দিনের বেলাতেও গায়ে গরম কাপড় পরতে হয়। এ সময় ঘরে ঘরে পিঠাপায়েস ও খেজুরের রস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
বসন্ত : শীতের শেষে আসে বছরের শেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে এ ঋতু। এ সময় ফুরফুরে দখিনা বাতাস বয়। মন প্রাণ খুশিতে নেচে ওঠে। সবুজ পত্রপল্লব আর নানা রঙের ফুলে প্রকৃতি সতেজ রূপ ধারণ করে।
উপসংহার : বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। ঋতুর এ বৈচিত্র্যই আমাদের প্রকৃতিকে করেছে অসামান্য সুন্দর।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।