HSC | বাংলা ২য় পত্র | আলোচ্য বিষয়ঃ খুদে গল্প ৬-১০| PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব খুদে গল্প গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু খুদে গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
৬. ‘হঠাৎ মেঘে ঢাকা সূর্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
হঠাৎ মেঘে ঢাকা সূর্য
ঘরে ফিরে দেখল স্ত্রীর মুখ ভার। ছেলের গাল ফোলা। ফোলা গালের ওপর চোখের জলের রেখা। ফরসা গায়ের উপর হাতের আঙুলের ছাপ। কালি লেগে আছে। হাঁড়ি পাতিল উপুড় করে রোদে ছড়ানো। স্ত্রী সন্তানের হাসি মুখ দেখা ছাড়া যাদের দিন কাটে মজনু মাস্টার তাদের একজন। তবু সে আশা ছাড়ে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে গায়ের জামা খুলতে খুলতে এক দমে বলে- জানো খোকার মা, খবর নিয়ে এলাম।
সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের বিলটা পাবো। কথা শেষ হতে না হতে মুখ খুলল দুই সন্তানের জননী লায়লা বেগম। তুমি থাক তোমার ঐ বিল নিয়ে- কতবার বললাম, আমার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে একটা মুদির দোকান দাও। সেই কথায় কান নেই। উনি আছেন উনার পাঠশালা নিয়ে! কী হবে শুনি বনের মোষ তাড়িয়ে। ওদের তো পড়িয়ে পড়িয়ে এক একজনে জজ ব্যারিস্টার বানাও অথচ নিজের ছেলে মেয়ের ভাগ্যে খাবার জোটে না।
বেদনার্ত হয়ে চৌকির কোণে বসে পড়ল মজনু মাস্টার। হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কাছে টানল। ঠিকই বলেছ খোকার মা। শিক্ষকের কাজই তো তা-ই। বনের বাঁশ কেটে বাঁশের বাঁশিতে সুর তোলা। আমাদের সমাজের লোকজন শুধু শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষাটাই আশা করে; কিন্তু তারও জীবন আছে,সংসার আছে, ছেলে মেয়ে আছে, সেটা তারা ভাবে না।… আমরাই সমাজে আলো জ্বালি অথচ আমাদের ঘরেই আলো জ্বলে না।
আমরা মানুষ তৈরি করি, অথচ আমরাই মানুষের মর্যাদা পাই না।… এসব বলে আর কী হবে! এদ্দিন যা করবার তা করেছ। এখন ওসব ছেড়ে শহরে গিয়ে দেখ কোনো একটা কাজ জোগাড় করতে পারো কি না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মজনু মাস্টার বলল – কোথায় গিয়ে কী কাজ করব বল? বিদ্যা বিতরণ ছাড়া তেমন কোন কাজ জানা নেই। ছোটবেলায় পাদটীকা গল্পে পন্ডিত মশাইয়ের কথা পড়েছিলাম। রাজ্জাক স্যার তালেভ মাস্টার কবিতা পড়িয়েছিলেন। তাদের সেই জীবন যে আমিও লাভ করব ভাবিনি কখনও।
কি সাধ ছিলো, কত রং ছিলো,
কত ছবি ছিলো আঁকা;
দুঃস্বপ্নের অতল তলে
সবি পড়িয়াছে ঢাকা।
ছেলেটি বাবার হাতের বেষ্টনী ছেড়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গেল। মা পরম আদরে আঁচলে মুখ মুছে দিল। তারপর বলল- যাও বাবা, মধুদের আমতলে খেল গিয়ে। না মা, আমি যাব না, খেলতে ভাল্লাগে না, খিদা লাগছে, ভাত দাও। ছেঁড়া পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হলো মজনু মাস্টার। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। কিন্তু রোদের তেজ কমেনি।
রোদের তেজের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ক্ষুধার তেজ। বড় রাস্তা পার হয়ে মিনিট পাঁচের পথ পেরুরে বয়াতির বাড়ি। বিপদের দিনে বহুবার গিয়ে সেখানে কখনো খালি হাতে ফেরেনি। বড় রাস্তার কাছাকাছি চলে এসেছে মজনু মাস্টার। ডানে বামে দৃষ্টি নেই। দৃষ্টি কেবল রাস্তার ঐপাড়ে পরান বয়াতির বাড়ির দিকে। পেছন থেকে একজন চিৎকার করে ডাকল – থামো মাস্টার থামো… সেই ডাক মাস্টারের কানে পৌঁছল না, পৌঁছল না গাড়ির হর্নের শব্দও।
তার কানে ক্রমাগত বেজে চলছে- না মা, আমি যাব না, খেলতে ভাল্লাগে না, খিদা লাগছে। ভাত দাও, মা ভাত…। লোকটি দৌড়ে এসে দেখল চশমার গøাস দুটো নেই, ফ্রেমটা খোলা ভাঙা পড়ে আছে। ততক্ষণে কোথা থেকে এক খন্ড মেঘ এসে ঢেকে দিন বৈশাখ সূর্যের মুখ।
৭. ‘মৌনতা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মৌনতা
২মার্চ আবিরের জন্মদিন। আর মাত্র একদিন বাকি। গেস্ট লিস্ট করা শেষ। আবিরের সহপাঠী বন্ধুদের সবাইকে আসতে বলেছেন আবিরের মা। বাবা প্রথমে আপত্তি করেছিলেন খরচের কথা ভেবে। আবিরের দাদা সে দায়িত্ব নেয়াতে সলভ হয়ে গেছে।
এদিকে আবিরের দশ বছর পূর্তিতে আবিরের নানী দশ পাউন্ডের একটি কেক গিফ্ট করবেন। নানা দিবেন প্রিন্স স্যুট। আবির আনন্দে আত্মহারা। ছেলের আনন্দ দেখে আবিরের মা খুব আনন্দিত। সমাজেও তাঁর পরিবারের সম্মান বাড়বে।
আবিরের স্কুল টিচারদেরও বলা হয়েছে। আবিরের মা নিজে গিয়ে তাদের দাওয়াত করে এসেছেন। ড্রিইংরুমে পার্টির ব্যব¯’া করার কথা ছিল। কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি বলে বাড়ির ছাদে শামিয়ানা টাঙিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ডেকোরেটরের লোকজন ছাদ সাজানো শুরু করেছে। আবিরের বাবা ১লা মার্চ পে ডে বলে অফিসে গিয়েছেন। তাড়াতাড়ি ফিরবেন বলে গেছেন। বাসায় আবিরের মা আর কাজের লোকজন।
ঘর সাজানোর টুকিটাকি এখনো অনেক কাজ বাকি সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত আবিরের মা। বাসার কয়েকটি বিল্ডিংয়ের পরেই আবিরেএ স্কুল। স্কুল ছুটি হলে ধুপধাপ পা ফেলে বাড়ি এলো আবির।
এসেই খালামণিকে ফোন করল- খালামণি আরো কিছু গিফ্ট আর র্যাপিং পেপার কিনতে হবে, বুঝলে। তুমি তৈরি থেকো। আমি সন্ধ্যা এসে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। ওকে, বাই। ফোন রেখে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল- মামণি, আমার খুব ক্ষিধে লেগেছে। তুমি টেবিলে খাবার দাও, আমি গোসল করে আসি।
বাথরুমে গরম পানিটা ঠান্ডা করতে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ব্যাটম্যান খেলায় মেতে উঠলো আবির। মা টেবিলে খাবার দিয়ে দুবার ডেকে এসেছে। আবির দরজা খোলেনি। বাইরে থেকে ভেতরে পানি পড়ার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় নি। তারপর বিশ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছেলেকে বের হতে না দেখে চাবি দিয়ে দরজা খুলল আবিরের মা। আবির স্কুল থেকে আসার আগেই ছুটা কাজের লোকেরা বিদায় নিয়েছে। বাড়িতে আবিরের মা একা।
দরজা খুলেই সে দেখল টাওয়াল র্যাকের সাথে তোয়ালে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবীর। শুধু মাথাটা একদিকে একটু কাত হয়ে আছে। মাথাটা ঘুরে উঠায় সবকিছু অন্ধকার দেখল সে। কিন্তু বিপদে ধৈর্য হারাতে নেই, অজ্ঞান হলে চলবে না। মনের জোরে সাহস সঞ্চয় করে, তোয়ালে কেটে আবিরকে কোলে নিয়ে ছুটে গেল প্বার্শবর্তী ক্লিনিকে। সেখান থেকে বড় হাসপাতালে। তারপর সিএমএইচ, ডাক্তার, ইনজেকশন।
পরদিন আবিরের নিষ্পাপ, নিষ্প্রাণ দেহটাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। তাকে ঘিরে রেখেছে আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, শিক্ষক, প্রতিবেশী, অফিসের লোকজন। হ্যাপি বার্থডে লিখা বেলুন গুলো দুলছে। অথচ কারো মুখে কোন শব্দ নেই, কেউ বলছে না- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আবির।
৮. ‘ধরাতলে নরাধম’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
ধরাতলে নরাধম
আমার ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে, যৌথ পরিবারের সঙ্গে। বাড়িভর্তি, মাঠভর্তি ছেলে-মেয়ের হৈ হুল্লোড়, খেলা-ধুলা, ঘুড়ি ওড়ানো, মাছ ধরা, গ্রামের পুকুরে ডুব সাঁতার, পাখির বাচ্চা চুরি, স্কুল পালানো, বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজা, মোচার খোলার তরি ভাসানো, গুলতি দিয়ে কাক তাড়ানো, শিমুল ফুল দিয়ে মালা গাঁথা, কলার খোল কেটে রুটি বিস্কুট বানানো, কাঁঠাল পাতা দিয়ে টাকা বানিয়ে সেসব কেনা, বাঁশের চোঙা কাঠি দিয়ে বরই চটকে খাওয়া- কতরকম কাজের মধ্য দিয়ে, আনন্দের মধ্য দিয়ে কেটেছে ছেলেবেলার সেসব দিন।
ছেলেবেলার কত ঘটনা মনে পড়ে। আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি। বই পড়ে মনে রাখার চেয়ে শুনে শুনেই তখন বেশি মনে থাকত। দাদার কাছে গল্প শুনতে শুনতে সে অভ্যাস গড়ে ওঠেছিল। তারপর বড় হয়ে জেনেছি দাদার বলা সেই গল্পগুলো কোনটি বনফুলের, কোনটি বিদ্যাসাগরের অনুবাদ। যাক সে কথা, তো আমি তখন ক্লাস টু’র ছাত্র। ঘরে আমার মা, আমার শিক্ষক, বাইরে দাদা। দাদা আর মা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। দাদার সঙ্গে বাড়ির কাছে হাটে যেতাম।
আমাদের স্কুলের প্বার্শে বাজার। সপ্তাতে দু দিন, শনি ও মঙ্গলবার হাট বসত। ল²ীপুরের হাট ল²ীর বাজারের এক পাশে ঈদগাহ মাঠ, এক পাশে পাকা রাস্তা, অন্য দুদিকের একদিকে ধানখেত অন্যদিকে বিশাল পুকুর। এই এলাকায় তিনটি গাছ ছিল- পাকা রাস্তার পাশে ’৭১ এর গুলির চিহ্ন বুকে নিয়ে বিশাল রেইনট্রি গাছ। আমরা তখন বলতাম এরাইচ গাছ। ঈদগাহের মাঠের কোনে ঐরকম এক ক্ষত চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রকান্ড বট গাছ।
ক্ষত বলতে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গাছ দুটির গায়ে এতো গুলি লেগেছিল ছিল যে, তা কাঠ পুড়ে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন ¯’ানে যেসব অপারেশন হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে একটি গণকবর আছে। আর পুকুরের পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল বড় একটি নিমগাছ। নিমগাছ এতো বড় হয়! কল্পনাও করা যায় না। বহুদূর থেকে দেখা যেত এ গাছ।
এই গাছের একটু দূরে পশ্চিম দিকে মুখ করে একজন ডাক্তার বসতেন। তার নাম দুদু ডাক্তার। ফরসা গোলগাল চেহারা, চোখে চশমা। তিনি চটের পর সাদা চাঁদর বিছিয়ে খোলা জায়গায় ঔষধপত্র নিয়ে বসতেন। এক পাশে তিনি আসন নিতেন আর তিন পাশে ঔষধের শিশি থাকত, মাঝখানে থাকত নানারকম ট্যাবলেট। খোলা ট্যাবলেট থাকত কৌটার মধ্যের। কৌটার উপর লেবেল লাগানো থাকত।
প্রেশার মাপার যন্ত্রপাতি থাকত একপাশে। আমি দাদার সাথে হাটে গেলে সেখানে যেতাম। দাদার সাথে তার বেশ খাতির ছিল। আমাকে তিনি লজেন্স খাওয়াতেন। দুটো দিলে একটা ভাইয়ের জন্য নিয়ে যেতাম। বড় ভাই খেয়ে বলত খুব মজা। অন্যদিনের মতো সেদিনও তিনি দোকান সাজিয়ে বসেছেন। এমি একটু দূরে দাদার হাত ধরে দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ একটা লোক এসে ঐ বিছানার ওষুধপত্র সব ছুড়ে ফেলে দিল।
ওষুধের কতগুলো শিশি ভেঙে গেল। ডাক্তার সাহেব থামাতে পারলেন না। তিনি শুধু প্রেসার মাপার যন্ত্রগুলো হাতে নিয়ে সরে দাঁড়ালেন। এর মধ্যে কেউ একজন বলল লোকটা কসাই। কেউ একজন তাকে এখানে বসার জায়গা দিয়েছে। সে জন্যই তারা তাকে বসতে দিবে না। তাঁর জিনিসপত্র এরকম পড়ে যেতে দেখে আমার খুব কান্না পেল। আমি কাঁদছি দেখে ডাক্তার সাহেব এগিয়ে এসে আমাকে কাছে টানলেন। আমার হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে কান্না থামাতে বললেন।
বললেন- ছিঃ ছিঃ কাঁদে না, কাঁদে তো ছোট মানুষরা, তুমি তো অনেক বড় মানুষ, তুমি কাঁদছ কেন? তারপর আমার নাম, স্কুলের নাম, কোন ক্লাসে পড়ি সব জিজ্ঞাসা করল। ঐ দিকে দাদা চলে গেছেন ভিড়ের মধ্যে। লোকজন জড়ো হয়েছে কেন ডাকাত তার জিনিসপত্র তছনছ করলো তা জানতে। ডাক্তার সাহেব আমার শরীর ধরে ঝাঁকি দিলেন। আমার মনোযোগ আকর্ষন করলেন, আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আজকে ঘটনা উদ্দেশ্য করে একটি ছড়া শুনালেন-
উই আর ইঁদুরের দ্যাখো ব্যবহার,
যাহা পায়, তাহা কেটে করে ছারখার;
কার্ড কাটে, কাষ্ঠ কাটে, কাটে সমুদয়,
ধরাতলে নরাধম খল আছে যতো
ঠিক তারা উই আর ইঁদুরের মতো।
৯. মাদকের ছোবল’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মাদকের ছোবল
শরীরে সুপরিচিত একটা অ¯ি’রতা অনুভব করতেই টাকার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে সেলিম। গতরাতেই তার কাছে থাকা নেশা দ্রব্যগুলো শেষ হয়ে গেছে। আবার সে কালই মায়ের কাছ থেকে জোর করে মাস খরচের শেষ টাকাটাও কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু সেলিমের ভেতরের অস্থিরতা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে আর নিশ্বাস নিতে পারছে না। শরীরে বিভিন্ন অংশে খিচুনি হচ্ছে।
যে করে হোক একটা ব্যব¯’া তাকে করতেই হবে নেশার টাকা জোগাতে। মাত্র বছর দু আগের কথা, তখনও পর্যন্ত সেলিম এমনটা ছিল না। খুবই দুষ্টু আর প্রাণোচ্ছল ছেলে ছিল সে। যেকারো মনে আদর জমাতে তার জুড়ি মেলা ভার।
তাই অনেক বন্ধুবান্ধব সেলিমের। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সে প্রথমবার বাবা মাকে ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যায় সাতদিনের জন্য। সেই পিকনিক ট্যুরে ছিল কিছু মাদকাসক্ত বন্ধু। তারাও সেলিমের আজকের অব¯’ার জন্য দায়ী।
ট্যুরের দ্বিতীয় রাতে সমুদ্র সৈকত থেকে ফিরে হোটেলে সেলিমরা। সেলিমের তখন খুব ক্লান্তি লাগছিল। সে বন্ধুদের বলে,”আমি আর জেগে থাকতে পারছি না, সবার সঙ্গে কাল সকালে দেখা হবে।” কিছুক্ষণ পর সেলিমের রুমের দরজাতে কড়া নাড়ে তার দুই বন্ধু। রুমের ভিতরে ঢুকে তারা তাকে লাল রঙের কয়েকটা ট্যাবলেট দিয়ে খেতে বলে। তারা বলে, এটা খেলে কখনো ক্লান্তি লাগে না, কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি পায়, আবার পড়াশুনায় মনোযোগও বৃদ্ধি পায়।
এখনকার যুগে সব স্মার্ট ছেলে তো এগুলো খেয়ে আরো স্মার্ট হচ্ছে।” ওদের কথা না বুঝেই সেলিম সেদিন ওই লাল রঙের ট্যাবলেট খেয়ে নেয়। আর তখন থেকেই শুরু। বাড়ি ফেরার পর থেকে সে অভাব অনুভব করে ট্যাবলেট গুলোর। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার অস্বাভাবিক জীবন যাপন আর টাকার জন্য বাড়ির মানুষের উপর অত্যাচার। পড়াশুনা, গানবাজনা, গল্পের আসর কোনকিছুই তাকে আর টানে না অভিশপ্ত ট্যাবলেট গুলো বাদে।
টাকার জন্য প্রথমেই সে যায় মায়ের কাছে। মা টাকা নেই বললে তার অ¯ি’রতা আরও বাড়তে থাকে। মাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তখন বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়ে বাসা থেকে। তার শরীরের অসহ্য যন্ত্রনাটা বাড়তে থাকে। রাস্তার পাশেই একটা ঘড়ির দোকান।
সেখানে চুপ করে দাঁড়য়ে থাকে আর ভাবে, সুযোগ পেলেই ঘড়ি চুরি করবে। আর চুরি করা ঘড়ি বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করবে।
কিন্তু ঘড়ি চুরি করতে গিয়ে সে ধরা পড়ে যায়। দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা তাকে বেদম মারপিট করে। মার খেয়ে তার মুখ থেকে রক্ত পড়তে থাকে। সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সে শুধুভাবে কীভাবে টাকা পাবে। সে ঘুরে আবার বাসায় যায়।
বাসায় গিয়ে মায়ের ফোন চুরি করে বিক্রি করার জন্য। মা বুঝতে পেরে সেলিমকে বাধা দেয়। তার কাছে অনুরোধ করে ফোনটা ফেরত দেয়ার জন্য। কিন্তু সেলিম হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়।
কারণ তার মধ্যে কোনো মানবিকতাবোধ আর কাজ করে না। তার চাই শুধু নেশাদ্রব্য। মা তাকে যতই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন সেলিম ততই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রান্না ঘর থেকে বটি এনে চালিয়ে দেয় মায়ের গলায়। তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে।
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৬১-১৮৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৪১-১৬০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১২১-১৪০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | বোর্ড ভিত্তিক অনুবাদ ১০১-১২০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অনুবাদ ৬১-৮০ | Onubad | PDF Download
১০. ‘সন্তানস্নেহ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
সন্তানস্নেহ
রাহেলা অন্যের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে। দশ এগারো বছর বয়স তার। খুব ছোটবেলায় বাবা মারা গেছে। মায়ের আবার বিয়ে হয়েছে অন্য কোথাও। অন্যখানে বিয়ে করার আগে মা তাকে খুব আদর করত। ভালো ভালো খাবার, জামা কাপড় না দিতে পারলেও বুকের মধ্যে আগলে রাখত।
কিন্তু এখন তার কেউই নেই, এতিম সে। তাই যে বাড়িতে সে কাজ করে সেই বাড়িটাকেই শেষ আশ্রয় মনে করে। বাড়ির সদস্য সংখ্যা সে সহ চারজন। তিনজন মানুষ হলে কী হবে, কাজ কম না। সে কাক-ডাকা ভোরে তাকে বিছানা ছেড়ে উঠতে হয়।
বিছানা বলতে অবশ্য একটা ছেঁড়া কাঁথা আর একটা আধাআধি বালিশ। যাই হোক, তারপর থেকে শুরু হয় তার কাজের বহর। সাহেবের জন্য রুটি-সবজি, ম্যাডামের জন্য সালাদ স্যুপ আর তাদের সাত বছরের মেয়েটার জন্য দুধ হরলিক্স, সেমাই, নুডলস, ডিম যেটা খেতে পছন্দ করবে সেটা। এত কাজে কোনো উনিশ বিশ হওয়া যাবে না। রান্না করা, ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা সব করতে হয় রাহেলাকেই।
মায়ের কথা খুব মনে পড়ে তার, যদি মা থাকত তাহলে এতো সব কঠিন কাজ তাকে করতে হতো না। বাবার ওপর ভীষণ অভিমান হয় তার। কিন্তু এসব কথা মুখ ফুটে কখনো বলে না সে। খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয় তাকে।
কারণ কোনো ভুল হলেই মারধর। মাঝে মাঝে সাত বছরের ছোট মেয়েটার সাথে নিজের তুলনা করে। ভাবে, তার ভাগ্যটা যদি এই মেয়েটার মতো হতো! তবে সেও স্কুলে যেতে পারত, ভালো খাবার খেতে পেত, প্রত্যেক ঈদে বাহারি পোশাক আনা হতো তার জন্য।
আরও আছে, বাবা মায়ের কাছে কত আদর পেত সে। এভাবেই রাহেলার দিন চলতে থাকে। একদিন সাহেব আর ম্যাডাম বাড়ি ফেরে কাঁদতে কাঁদতে। বলে এখুনি তাদের হাসপাতালে যেতে হবে, তাদের মেয়ে স্কুলের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। তার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে।
রক্ত কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এরপর দুদিন রাহেলা বাড়ির মধ্যে একাই থাকে। জানতে পারে না কিছুই, কী হলো ছোট্ট মেয়েটার। দুদিন পর সাহেব আর ম্যাডাম ফিরে আসে তাদের মৃত মেয়েকে কোলে নিয়ে। সন্তানের শোকে তারা পাগলের মতো হয়ে যায়। সেই সময় গুলোতে রাহেলাই তাদের দেখাশুনা করতে থাকে।
এক রাতে রাহেলা কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু ঘরের লাইট বন্ধ করার কথা তার মনে নেই। তখন মহিলাটি রাহেলার ঘরে আসে লাইট বন্ধ করতে। লাইট বন্ধ করতে গিয়ে তার চোখ পড়ে রাহেলার দিকে। হঠাৎ তার বুকের মধ্যে হারানো মেয়ের কষ্টটা মোচড় দিয়ে ওঠে। রাহেলার মুখটাকে অবিকল তার মেয়ের মুখ বলে মনে হয়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।