HSC | বাংলা ২য় পত্র | আলোচ্য বিষয়ঃ খুদে গল্প ১-৫ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব খুদে গল্প গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু খুদে গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
উচ্চ মাধ্যমিক ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতিঃ
নির্মিতি অংশ : খুদে গল্প
খুদে গল্প কী?
গল্প একটি সৃজনশীল সাহিত্য মাধ্যম। জীবন অভিজ্ঞতার বর্তমান ও শিল্পময় অনুভূতির প্রকাশই হল গল্প। গল্প বলতে গিয়ে অথবা লিখতে গিয়ে পারিপার্শ্বিক জগতের বিভিন্ন ঘটনাকে অবলম্বন করতে হয়। মানব জীবনের নানা ঘটনা বা কাহিনী যখন আমাদের মননে বা মস্তিষ্কে নানা রকম অনুরণন সৃষ্টি করে তখন তা ভাষায় প্রকাশিত হয়ে গল্পের রূপ নেয়।
গল্পের সাধারণত জীবনের কোন না কোন ঘটনা বা কাহিনীর পরিস্ফুটন হয়ে থাকে। ইংরেজিতে খুদে গল্প বা অনুগল্পকে গরহর ংযড়ৎঃ ংঃড়ৎু বলা যেতে পারে। এই জাতীয় গল্প লেখা মোটেও সহজ কাজ নয়। কল্পনাশক্তি, ভাষার উপর অসামান্য দখল এবং চমৎকারিত্ব সৃষ্টির কৌশল ক্ষুদে গল্প লেখার জন্য গল্পকারের আয়ত্তে থাকতে হবে। ক্ষুদে গল্প এক ধরনের ক্ষুদ্র গল্প। ক্ষুদ্র শব্দের আভিধানিক অর্থ ছোট। সেই অর্ধেক ক্ষুদে গল্পটি ছোট গল্প বলা যাবে না। কারণ ছোট গল্পের আকৃতি ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের যে সমাবেশ তা খুদে গল্পে স্পষ্ট হয়ে ওঠে না।
ছোটগল্পে যেমন বিষয়বস্তুর বৈচিত্রের প্রকাশভঙ্গি স্বতন্ত্র চরিত্র ঘটনা গঠনশৈলী ইত্যাদি বিষয় পাওয়া যায়। কিন্তু খুদে গল্পে তা অনেক কিছুই পাওয়া যায় না। ক্ষুদে গল্প ছোটগল্পের চেয়ে আরো ছোট। খুদে গল্প আকৃতিতেই নয় অপরাপর বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও ছোট। কথক বা উত্তম পুরুষের জবানীতে গল্পের বিষয়ে বর্ণনা বা উপ¯’াপন খুদে গল্পের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
কারো সাথে দেখা হলে অল্প কথায় তাকে কোন গল্প শোনানো বা তার কাছ থেকে কোন গল্প শোনার গল্পই হচ্ছে খুদে গল্প। খুদে গল্পের ভাষা যথাসম্ভব সহজ সহজ সরল সাবলীল হওয়া দরকার। মূলত কাহিনী বর্ণনার ভাষা ও সংলাপের ভাষার মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখতে হবে।
ক্ষুদে গল্প লেখার নিয়ম:
ক্ষুদে গল্প লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চললে ভালো মানের খুদে গল্প লেখা যায়। যেমন.
১. ক্ষুদে গল্প লেখার আগে যে বিষয়ে কাহিনী সূত্র বা সংকেত অবলম্বন করে লিখতে হবে সে বিষয়ে মনের মধ্যে কাহিনীর একটি খসড়া তৈরি করে নিতে হবে।
২. যদি গল্প লেখার অভ্যাস করতে হয় তাহলে সবার আগে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে হবে।
৩. ক্ষুদে গল্প লেখার সময় কাহিনীটিকে জটিল না করাই ভালো। এ ধরনের গল্পে কোন চরিত্র যাতে ভিড় না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. ক্ষুদে গল্পের শুরু থেকেই পাঠকের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করে রাখতে হবে। যাতে করে গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের পড়ার আগ্রহ থাকে।
৫. খুঁজে গল্পের পরিবেশ রচনার জন্য ঘটনা ঘটার জায়গা, সময়, আবহাওয়া ও পরিবেশ ইত্যাদি উল্লেখ করা প্রয়োজন।
৬. ক্ষুদে গল্পের চরিত্র অনুযায়ী ভাষা প্রয়োগ করতে হবে।
৭. সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্ষুদে গল্প লিখনের ক্ষেত্রে তিন ধরনের বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেগুলো হলো- ১. বিষয়সূত্র অবলম্বনে, ২. সংকেত সূত্র অবলম্বনে, ও ৩. কোন নীতিবাক্য অবলম্বনে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উপযোগি গুরুত্বপূর্ণ খুদে গল্প:
১. ‘স্মৃতির মণিকোঠায়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
২. ‘হায়েনার আনাগোনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৩. ‘কোনো এক হরিপদ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৪. ‘একজন বিপ্লবীর মা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৫. ‘লাল চুড়ি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৬. ‘হঠাৎ মেঘে ঢাকা সূর্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৭. ‘মৌনতা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৮. ‘ধরাতলে নরাধম’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
৯. ‘মাদকের ছোবল’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১০. ‘সন্তানস্নেহ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১১. ‘বিজয়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১২. ‘পরিবেশ দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৩. ‘গ্রামে ফেরা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৪. ‘যানজট’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৫. ‘মিথ্যাবাদীর শাস্তি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৬. ‘দুর্ঘটনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৭. ‘রক্তঝরা ফাগুন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৮. ‘শব্দদূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
১৯. ‘পানি দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
২০. ‘আমার শৈশব স্মৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
২১. ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
২২. ‘শিশু নির্যাতন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।
২৩. ‘রক্তদানের পুণ্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
অনুশীলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নমুনা খুদে গল্প:
১. ‘স্মৃতির মণিকোঠায়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
স্মৃতির মণিকোঠায়
’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মরক্ষার জন্য একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছি। কোথাও মিলছে না। যেখানে যাই সেখান থেকেই লোকজন অন্য কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পঁচিশজন মানুষ। পাঁচজন সমর্থ পুরুষ ছাড়া বাকি সবাই নারী-শিশু। শেষ পর্যন্ত আমরা ভারতের পথে পা বাড়ালাম। ছোট্ট একটা নৌকাতে আমরা সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। কখন পাকিস্তানি বর্বরদের শিকারে পরিণত হই।
কিংবা তাদের দোসর, দালাল – রাজাকারদের হাতে লাঞ্চিত হই, ভাবনার শেষ নেই। মা আমাদের ভাই বোনদের ডেকে বললেন, আমরা নৌকা থেকে নেমে হেটে ভারতে যাবো। যদি পথে কোনো বিপদ হয়, যদি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যাই, তাহলে তোমরা আমাদের জন্য দাঁড়াবে না। যেদিকে পারও পালাবে। আমরা নৌকা থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখন একজন লোক এসে খবর দিল এই চরে নামা ঠিক হবে না।
এখানে ডাকাতের বসবাস। তারা প্রচন্ড হিংস্র, আগে মানুষ হত্যা করে, পরে তাদের শরীর থেকে হাতড়িয়ে টাকা, গয়না জিনিসপত্র তুলে নেয়। তবু আব্বা সবাইকে নিয়ে নামলেন। আমাদের সবার কাছেই কমবেশি টাকা পয়সা ছিল। মহিলাদের কাছে অল্পস্বল্প গহনাও ছিল। চরে নামার পর এক বৃদ্ধের সঙ্গে আব্বার আলাপ হলো। সেই বৃদ্ধ আমাদেরকে ভারতে যেতে সাহায্য করবেন বলে আব্বাকে জানালেন।
কিন্তু নৌকা থেকে সবাই খালি হাতে প্রথমে ঐ বৃদ্ধের বাড়িতে যেতে হবে। সেখান থেকে তিনি তার লোকের মাধ্যমে আমাদের ভারতে পাঠিয়ে দিবেন। আমরা ভয়ে জড়সড়। কিন্তু আব্বা তার শর্ত মেনে নিয়ে রাজি হলেন। এর মধ্যে ঐ লোকটি এসে জানিয়ে গেল- ঐ বৃদ্ধ লোকটি এখানকার ডাকাত দলের সর্দার। চাইলে ভালোও করতে পারেন, আবার মন্দও করতে পারেন। চরে নেমে আমরা বৃদ্ধের বাড়ির উদ্দেশ্য চললাম।
আমাদের বুকের কাঁপন থামেনি, ঘনঘন পানির পিপাসা হচ্ছে। সঙ্গে যা ছিল তা ফুরিয়ে গেছে। বৃদ্ধের কাছে পানি চাইলাম। বৃদ্ধ পাশের বাড়িতে ঢুকতেই সর্দার, সর্দার বলে সবাই তাকে আদাব / নমস্কার করল, সে শুধু বলল- এরা আমার মেহমান, দূর থেকে এসেছে। তৃষ্ণা পেয়েছে। জি সর্দার বলে ছুটে গিয়ে কলসিসহ পানি নিয়ে এলো তিনজন। তখন ভয় আরও বেড়ে গেল। তবু পানি খেলাম। অনেকটা পথ আসার পর বাড়িতে এলাম।
রাস্তা থেক উঠে একটা ঘর, একটা উঠোন। তারপর একটা বড় ঘর। এর বেশি কিছু আজ মনে নেই। আমরা সবাই সেই বড় ঘরটায় চৌকিতে বসলাম। বৃদ্ধ লোকটি আমাদের নির্ভয়ে থাকতে বললেন। একটু পর আমাদের খাবার দেয়া হলো। ক্ষুধার্ত অব¯’ায় ভালো ভালো খাবার পেয়ে ভয় গেলাম ভুলে। সবাই পেট পুরে খেলাম। বৃদ্ধ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার লোকদের হুকুম দিলেন আমাদের ভালোভাবে খাওয়ানোর জন্য।
তিনি আব্বাকে অনুরোধ করলো অন্তত একদিন তার বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে তারপর ভারতে যেতে। কিন্তু আব্বার রাজি হলেন না। তার আপ্যায়নের জন্য আব্বা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ প্রকাশ করলেন। ডাকাত সর্দার নিজেও আবেগে কেঁদে ফেললেন। তারপর চোখ মুছে বললেন, শেখ সাহেব সেদিন বলেছিলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকো। সে থেকেই আমরা এই চরে প্রস্তুত হয়ে আছি ঐ পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের নিশ্চহ্ন করতে।
যদি কখনো তারা এই পথে আসে তা হলে একজনকেও জীবিত ছাড়বো না ইন শাহ আল্লাহ। আমরা সবাই নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম জয় বাংলা। তারপর আমরা সবাই হাসিমুখে বিদায় নিলাম । বৃদ্ধ আমাদের জন্য চার পাঁচজন লোক ঠিক করে দিলেন এবং কীভাবে আমাদের ভারতে পৌঁছে দিবেন তা তাদের বুঝিয়ে দিলেন। ভারতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পেলাম। বাবা তার সঙ্গীদের সাথে আবার সেই পথে বাংলাদেশে এসে যুদ্ধ করলেন।
ঐ ডাকাত সর্দারকে আর খুঁজে পাননি। সেখানকার ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই দুরব¯’ার মধ্যে এমন মহানুভবতা, খাবার, আশ্রয়, পথের দিশা দানকারী সেই ব্যক্তির কথা আমরা ভুলতে পারিনা। তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায়।
২. ‘হায়েনার আনাগোনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
হায়েনার আনাগোনা
ধরে নেওয়ার মাসখানের পর জীবিত ফিরে এলো দেলোয়ার। সেদিন স্বামীর জন্য মিলিটারিদের পা জড়িয়ে ধরেছিল অন্তঃসত্ত¡া কমলা। হায়েনারা তার কান্না বন্ধ করেছিল। লাথি দিয়ে ফেলে একটি গুলির শব্দে। দশ বারো বছরের ছেলেটি আড়াল থেকে সব দেখে নিঃশব্দে পালিয়েছিল। অক্ষত অব¯’ায় দেলুকে ঘরে ফিরতে দেখে গ্রামবাসী অবাক হলো। সবার কাছেই ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য মনে হলো। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল দেলুর দিকে।
তার ছেলে রহমত এসে জানতে চায় কী করে বেঁচে এলো বাবা? দেলু ছেলের জোরাজুরিতে বলে, ‘আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে রেখেছিল লম্বা একটা ঘরে। সেখানে অনেক লোক। প্রতিদিন সেখান থেকে দু’জন করে বাইরে নিয়ে গুলি করে মারত। আমরা জানালা দিয়ে দেখতাম। আমার পাশের লোকটিকে আগের দিন মেরে ফেলেছে। ভাবলাম এবার আমার পালা, সেদিন আর কেউ এলো না। পরদিন সকালে দেখলাম ডানদিকের দুজনকে নিয়ে যাচ্ছে।
একজন বয়স্ক, অন্যজনের বয়স কম। হয়তো বাবা ছেলে কিংবা দুই বাবা অথবা কেউ কারও কিছু নয়। তারা ছেলেটিকে চোখ বেঁধে ফেলল। বয়স্ক লোকটি চোখ বাঁধতে দিল না। বাইরে নিয়ে গিয়ে ছেলেটির মুখে নল ঢুকিয়ে গুলি করল। আর বয়স্ক লোকটিকে ব্রাশ ফায়ারে উড়িয়ে দিল। শার্ট ফুটো ফুটো হয়ে উড়ছে।… ছেলে তাড়া দিয়ে বলল- ‘সে ঘটনা নয়, তুমি বাঁচলে কী করে সেটা বলো?’ – দেলু ছেলের কথায় উত্তর দিল না, চুপ থাকল। দুজন খাল পাড়ের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে।
কারও মুখে কথা নেই। ছেলে বাবার হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল- দক্ষিণ পাড়ার আমজাদ চাচার কথা তোমার মনে আছে বাবা? ঐ যে আমার সাথে পড়ে আমির-আসিরের আব্বা। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। সেখানে তাকে গুলি করেছে। সারারাত মসজিদের ভেতর লাশ পড়েছিল, সকালবেলা গ্রামের লোকজন তাকে ওখানেই কবর দিয়েছে।
দেলোয়ার তখনও চুপ করে আছে। ছেলে বাবার হাত ধরে নিজের বাড়ির অভিমুখে এগিয়ে চলছে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কিন্তু কোনো বাড়িতে সাঁঝের বাতি জ্বলছে না। দূর থেকে একটা গন্ধ আসছে, বকুল ফুলের গন্ধ। ছেলেও কিছু বলছে না। আর একটু এগিয়ে সে বকুল ফুলের গাছটা চোখে পড়ল রহমতের। গাছটার কাছে গিয়ে ছেলে বলল- নিশিকান্তকে তোমার মনে আছে বাবা, ঐ যে নিশিকান্ত, সুন্দর, চোখগুলো বড় বড়।
নিশির এক দাদি ছিল দু’চোখে ছানি পড়া, সংসারে আর কেউ ছিল না। সেই নিশিকে এই গাছটাতে গেঁথে মেরেছে। বুড়ি দাদি রোজ গাছের নিচে এসে বসত আর চেঁচাত ‘কী রে নিশি গাছ থেকে নামবি নে…’। তার পর যে কোথায় চলে গেল সে বুড়ি, কেউ জানে না। নিশি গাছটায় বহুদিন গেঁথেছিল। দূর থেকে দেখা যেত দু হাত ছড়ানো, নিশি সমস্ত পাড়াটার দিকে চেয়ে আছে। দেলোয়ার ছেলে রহমতের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না।
গাছটার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগল। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে, দূর থেকে একটা আলো এগিয়ে আসছে তাদের দিকে, গাড়ির হেডলাইট, রহমত বুঝতে পারল- বাবাকে তাড়া দিয়ে বলল, বাবা পালাও মিলিটারি। রহমত দেখল তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। ততক্ষণে গাড়িটা আরো কাছাকাছি এসে পড়েছে। দেলোয়ার শার্টের নিচে কোমরে পেঁচানো পাকিস্তানের চান তারা পতাকা শূন্যে মেলে ধরল।
বাবার বেঁচে থাকা আর ফিরে আসার রহস্য জেনে হাফপ্যান্টের পকেট থেকে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা বের করে বুকের উপর মেলে ধরে রহমত। বলল জয় বাংলা, জয় বাংলা। সাথে সাথে কতগুলো গুলির শব্দ। তারপর সব নিস্তব্ধ।
৩. ‘কোনো এক হরিপদ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
কোনো এক হরিপদ
মানুষ পালাচ্ছে। যেভাবে পারছে ছুটে চলছে; নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। কোথায় মিলবে সে আশ্রয় কেউ জানে না। ঠিকানা জানা নেই, পথ জানা নেই, তবু চলছে তারা। নারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একদিকে শত্রুর অট্টহাসি অন্যদিকে নিষ্পাপ শিশুর চিৎকার, নিরীহ মানুষের আর্তনাদ ছাপিয়ে গুলির শব্দ। আগুন, ধোঁয়া, সাইরেন, লাশ, রক্ত, ধ্বংসযজ্ঞ। মিলিটারির ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে, আশ্রয়ের আশায় পাশের গ্রামের দিকে পা বাড়ায় মন্টু ডাক্তার।
ডাক্তার বাড়ির সবাই তার সাথে। বাচ্চা ছেলেকে কোলে নিয়ে দুর্বল রোগা হরিপদও ছুটছে তাদের সাথে। মন্টু ডাক্তারকে আশেপাশের দুই দশ গ্রামের সবাই চেনে। কত রাতে কতবার কত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়েছে, ভিজিট নেয় নি। এই দুর্দিনে কেউ না কেউ থাকে আশ্রয় দিবেই। কিন্তু আশার গুড়ে বালি তার। যে গ্রামের উদ্দেশ্য তারা যাচ্ছিল, সে গ্রামের পাকিস্তানি সমর্থকরা আগে থেকে মিলিটারিদের খবর দিয়েছিল যে হিন্দুরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
তাঁরা গ্রামের ভিতরে ঢুকতেই কে যেন দেখিয়ে দিল ঐ যে হিন্দুরা পালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেকে কোলে নিয়ে হাটতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছিল ক্ষীণকায় হরিপদ। দু’সপ্তাহ হতে চলল, নদীর ঘাটে জল আনতে গিয়ে হরিপদের বউ আর ফেরেনি। কেউ একজন বলেছিল কেরামত রাজাকারের লোকেরা অলকাকে ধরে নিয়ে গেছে। হরিপদ কলা গাছের ঝোপের আড়াল থেকে দেখল, একে একে সবাইকে গুলি করছে।
মন্টু ডাক্তারের দুই মেয়ে তনুশ্রী আর অনুশ্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলছে। মন্টু ডাক্তার বাধা দিল, কিন্তু একজন মিলিটারি তার বুকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে ঠ্যা ঠ্যা কতগুলো গুলি ছুড়ল। মেয়ে দুটোই চিৎকার করতেই তাদের মুখ চেপে ধরল। তারপর মিলিটারি গাড়ি ঘুরিয়ে গ্রামে ঢুকে গেল। হরিপদ তখন ছেলের মুখ চেপে ধরে কলাগাছের ঝোপের আড়ালে বসে আছে।
রাজাকার দুটো চলে যাওয়ার পর সেখান থেজে বের হয়ে নিজের গ্রামের পথ ধরল হরিপদ। গ্রামের কাছে যেতেই দেখল পুরো গ্রামে আগুন দিয়েছে মিলিটারি, আর যাকে পাচ্ছে গুলি করছে। বটগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখল সেই রাস্তার বিপরীত দিক থেকে মিলিটারি গাড়ি এগিয়ে আসছে। ভয়ে ছেলেকে নিয়ে পাশের খালে নেমে পড়ল সে। গাড়ি কাছাকাছি আসতেই ছেলেকে নিয়ে জলে ডুব দিল হরিপদ।
জল থেকে উঠে খালের পাড়ে শ্যাওড়া গাছের ঝোপের আড়ালে দাঁড়াল হরিপদ। গাড়ি চলে গেছে। কোথাও কেই নেই। তবু চাপা স্বরে ছেলেকে ডাকল – খোকা, খোকা, খোকা উঠ, অ্যাই খোকা, আমার হারাধন, চোখ খোল বাবা, চোখ খোল। হারাধনের চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখে চিৎকার কর উঠল হরিপদ। সেই চিৎকার ছাপিয়ে পর পর দুটি গুলির শব্দ, তারপর সব স্তব্ধ হয়ে গেল।
৪. ‘একজন বিপ্লবীর মা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
একজন বিপ্লবীর মা
মায়ের সাথে দেখা করতে এসে ধরা পড়ল হাশেম। আজিজ দারোগা গত সাত দিন সাত রাত ধরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে ধরে ভেবেছিল পুরো গ্রুপের খবর পেয়ে যাবে। কিন্তু হাশেম মুখ খুলছে না। দারোগা হাশেমকে মৃত্যুর ভয় দেখায়, ছেড়ে দেওয়ার লোভ দেখায়। ব্যাখ্যা করে বলে- গোঁয়ার কোথাকার, বেকুবের হদ্দ। ভাবছে ভারি বীরত্ব হচ্ছে; দলের প্রতি খুব বিশ্বাস দেখানো হচ্ছে।
আরে বোকা তাতে তোর লাভটা কী হলো। বরং খবরটা দিলে কিছু টাকা পয়সাও হয়ত পেতিস।… তারপর গলায় স্বর কোমল করে হাশেমের মাকে উদ্দেশ্য করে বলে- এ কেমন হলো বুড়ি, তোমার ছেলেটা সত্যি ভারি বোকা। কিন্তু সে যাকগে। তোমার কোনো ভয় নেই আজিজ দারোগা লোক খারাপ নয়, সে আজ নিজের চোখেই দেখবে। বলো, তুমিই বলো ওরা সব দলবলসহ কোথায় লুকিয়েছে? কোথায়? হাশেমের মা নির্বিকার, চুপ করে থাকে।
দারোগা আশ্চর্য হয়। বলে আরে, তুমিও চুপ! তোমারও কি মাথা খারাপ হয়ে গেল বুড়ি! ছেলেটার কথা ভাবলে না একবার। পাশের একশো পুলিশ কে উদ্দেশ্য করে বলে- দেখ, দেখ, চাঁদ মিয়া, বুড়ির আক্কেলটা দেখ একবার। এ নাকি আবার মা।… এত্তটুকু বাচ্চা হয়ে ওর কোলে আসছিল সেই কবে, আর আজ শক্ত সমর্থ কেমন জোয়ান ছেলে। বুড়ির একটি কথায় সে ছেলে আজ প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু বুড়ি মুখ খুলবে না।
এর চেয়ে বেকুবের কথা শুনেছ কোনো দিন?… ছেলের ছোটবেলার কথা মনেও পড়ে না বুঝি, বুড়ি? সেই প্রথম যখন মা মা বলে মুখে আধো আধো বুলি ফুটল, তারপর মোটাসোটা শিশু হাঁটতে গিয়ে বারবার পড়ে যেত। আঁধার রাতে তুমি বুঁকের কাছে নিয়ে শুয়ে থাকতে। তারপর একটু বড় হলে মাঠে বাপের জন্য দুপুর বেলা ভাত আর তামাক নিয়ে যেত।… সে ছেলে আজ কেমন জোয়ান হয়েছে। অ্যাঁ? আরেকটু পরে গাছের ডালের তার মরা দেহটা ঝুলবে।
কাক-শকুন এসে ঠুকরে ঠুকরে মাংস খাবে। অ্যাঁ! কী বল, বুড়ি? তোমার ছেলে… হাশেমের মা তখন প্রতিবাদ করে বলে- আমার ছেলে তো কোন দোষ করে নাই। আজিজ দারোগা তখন তাঁর চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে- করেছে, করেছে। সে সাংঘাতিক দোষ করেছে। বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সে। তার চাইতেও বড় দোষ করেছে, কোন দলে যোগ দিলে লাভ হবে সেটা বুঝে না।
অতবড় অপরাধের ক্ষমা নেই বুড়ি। বুড়ি রেগে গিয়ে বলল আমার ছেলের গায়ে একটি আঘাত করেছেন তো আমার অভিশাপে আপনার বংশ ছারখার হয়ে যাবে। দারোগা ধমক দিল- চুপ কর হারামজাদি। শকুনের অভিশাপে গরু মরে না। নিয়ে যাও মা ছেলে দুটোকেই, চোখের সামনে ফাঁসিতে ঝুলাবো। যাও দড়ি দিয়ে সামনের গাছেই ফাঁসি লাগাও। হুকুম পালনকারী একটু ভেবে দেখতে বললেন- আজিজ দারোগা তাকে বললেন না, না, ভাবাভাবির কিছু নেই আর এটা বাড়াবাড়িও না।
বড় সাহেবের হুকুম, যে অব¯’ায় যেমন করে হোক এই বিপ্লবী দলকে ধরতেই হবে। যারা এ কাজে সামান্য বাধা দিবে তাদের শাস্তি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদন্ড… এই তো মাত্র দুটি প্রান। দরকার হলে দশ বিশজন কে আমি পিঁপড়ের মতো পায়ের নিচে পিষে মারবো। এই নাও পিস্তল, শেষবারের মতো প্রশ্ন করবে। যদি না বলে, তাহলে খতম করে দিবে। আগে ছেলেকে, পরে বুড়িকে। ’খতম করে দিবে’ শব্দটা কানে যায় এতোক্ষণ বেহুশ হয়ে পড়ে থাকা সখিনার।
সে ভয় ভুলে কোনোভাবে উঠে দাঁড়ায়। হাশেমকে মেরে ফেলেছে কিনা জানতে চায়। দারোগা জানায় এখনো বেঁচে আছে, তবে আর বেশিক্ষণ থাকবে না। সখিনা বিপ্লবীদের অব¯’ান জানিয়ে তার বিনিময়ে হাশেমকে ছেড়ে দিতে বলে। দারোগা আজিজ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপ্লবীদের অব¯’ান জেনে নেয়। খুশিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে ঘাতক পুলিশ আজিজের।
সখিনা তাকে আল্লাহর কসম দিয়ে প্রতিজ্ঞা করার কথা মনে করিয়ে দেয়। আজিজ ক্রূর হাসিতে মুখ বিকৃত করে বলে- ও ব্যাটার জন্য ফাঁসির দড়ি টানাবার মতো সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই। তাই এক গুলিতে সোজা উপরে পাঠানোর ব্যব¯’া করছি। তারপর একট গুলিত শব্দ, একটি ভারি দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার শব্দ। সখিনা আর্তনাদ করে উঠল। হাশেমের মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে কান্দিস না সখিনা।
কান্দুম ক্যান আমরা? আমার হাশেম মানুষের মতোন মরছে। কোন ছোট কাম তো হে করে নাই। চাষি মান্দারের মুখে হাসি ফুটানোর লাইগা হে জান দিছে। হের মতোন জান কয়জন দিতে পারে, সখিনা? রুস্তম পালোয়ানের মতো হের নামেও মানুষ গান বানাইব। জানের চাইয়াও বড় জিনিস আছেরে সখিনা! সেটা অধিকার, দেশের স্বাধীনতা।
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৬১-১৮৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৪১-১৬০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১২১-১৪০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | বোর্ড ভিত্তিক অনুবাদ ১০১-১২০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অনুবাদ ৬১-৮০ | Onubad | PDF Download
৫. ‘লাল চুড়ি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
লাল চুড়ি
নির্বাচনী প্রচারণায় বেরিয়েছি। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে টের পাইনি। ছোট ভাই ফেরার জন্য তাড়া দিচ্ছে। চোখের সামনে পথের বাঁকে একসারি বাড়ি দেখে এগিয়ে গেলাম। প্রথম বাড়ির পাঁচিলের গায়ে আধ ভেজা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল কৃষকায় এক মহিলা কুলায় চাল বাছছেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
কেমন এক অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে ধরলেন আমার দিকে, আমি তাকে নিরীক্ষণ করছি। তার চোখে কী যেন আবিষ্কার করতে চাইছি। হঠাৎ দরজা দিয়ে ১৪-১৫ বছরের একটি সুন্দরী মেয়েকে ঢুকতে দেখে পঞ্চাশোর্ধ মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার মেয়ে বুঝি? মহিলা না সূচক মাথা নেড়ে আর্তস্বরে কেঁদে উঠলেন। কিছু বুঝতে না পেরে মহিলার অশান্ত কান্নায় বিচলিত হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম।
কিশোরী মেয়েটি আমাকে বলল- ’আপা, খালাম্মার মেয়ের ছবি দেখবেন, আসেন। ওর সঙ্গে ঘরে ঢুকে ঔ মহিলার আদরের মেয়ে সাজুর ছবি দেখলাম। আমার সঙ্গে ফটোর মুখবয়বের সাদৃশ্য কতটুকু জানিনে, কিন্তু কন্যাহারা শোকাতুর ঐ জননীর চোখে নাকি আমি তারই প্রতিচ্ছবি। আমারই মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর হারানো সাজুকে। ঘর থেকে বেরোতেই দেখি মহিলা এক গাছা টুকটুকে লাল কাচের চুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমাকে দেখেই এগিয়ে এসে আমার বাঁ হাতটি তার হাতে নিয়ে বললেন- ’মাগো এ হাতটায় শুধু ঘড়ি না পইরা এই চুড়ি কয়টা পরেন। আমি পরাইয়া দেই। সধবা মানুষ, এরকম হাত ভালো দেখায় না। আমার স্বামীও চুড়ি ছাড়া শুধু ঘড়ি পড়া হাত নিয়া অনেকদিন আপত্তির সুর তুলেছেন। আমি হাসতে হাসতে বলেছি- ঘড়ির সাথে চুড়ি পড়লে তো আনস্মার্ট দেখায়। কিন্তু মহিলার কথায় আপত্তি করতে পারলাম না।
আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম- আপনি আমাকে তুমি করেই বললে খুশি হবো। বিদায় বেলা তিনি আমার দু’হাত ধরে মিনতি করে বললেন – ’মাগো, তুমি আবার আইসো। নিজের জায়গা ফিরা যাইবার আগে এই হতভাগিনীকে একবার দেখা দিয়া যাইও।’আসব বলে মহিলার কাছ থেকে হাত সরিয়ে, উদগত অশ্রæ দমন করে ফেরার পথে পা বাড়ালাম। চলতে চলতে একবার পিছনে ফিরে চেয়ে দেখি মূর্তিমতী বিষাদের মতো মহিলা তখনও দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন।
ছোট ভাইটি আমার হাতের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- কী ব্যাপার আপা? ক্যানভাসিংয়ে এসে এতদিনকার বুলি-টুলি সব ভুলে গেলেন? সলজ্জ চোখ তুলে বললাম- চুড়ি তো? তাও আবার লাল কাচের চুড়ি। খুলে ফেলব। নইলে নেতৃত্বের উপযুক্ত নই বলে বিবেচিত হবে না? লোকে আমাকে ভোট দিবে না। পাড়ওয়ালা সাদা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, সাদাসিধে বেশবাস ছাড়া কি ভোটারদের প্রশংসা পাওয়া যায়? তারপর আমরা রিকশা নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললাম।
চলতে চলতে মনে হলো- সন্তানের জন্য জননীর আকুতি যে কত নিবিড় এই ঘটনার আগে বুঝিনি। আমার সন্তানের কথা মনে পড়ল, মায়ের কথা মনে পড়ল, লাল চুড়ির দিকে তাকিয়ে আমার স্বামীর কথা মনে পড়ল। সবার সব মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই মুখগুলোর মধ্যে আমি সেই মহিলাকেও দেখেছি।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।