অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: পাকিস্তান : রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বৈষম্য
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
৩. ০১. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো কেমন?
অথবা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো উল্লেখ কর ।
উত্তর : ভূমিকা : দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান, কেন্দ্র এবং পূর্ববাংলা প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান রচিত হয় ১৯৫৬ সালে। এ সংবিধানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার কাঠামোর প্রকৃত রূপরেখা তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের সংবিধানেও কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হয় ।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো ছিল বিচিত্র ও বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। নিম্নে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. গণপরিষদ : পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধান রচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইনানুসারে গণপরিষদ মূল দায়িত্ব পালন করে।
২. রাজধানী : পাকিস্তানের প্রথম কেন্দ্রীয় রাজধানী করা হয় করাচিতে, পরবর্তীতে ইসলামাবাদে স্থানান্তরিত করা হয় ।
৩. মন্ত্রিপরিষদ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হতেন জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মধ্যে থেকে।
৪. রাষ্ট্রপতি নিয়োগ ১৯৫৬ সালের সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একটি নির্বাচনি সংস্থার মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। তবে দুই বারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারত না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মতামত অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতেন ।
৫. বিচারপতি নিয়োগ : সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ দান করবেন প্রেসিডেন্ট।
৬. প্রশাসনিক সংস্থার হেডকোয়ার্টার্স : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রশাসকের সব কার্যালয়ের সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরসহ সব অফিস ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামো বলতে মূলত পশ্চিম পাকিস্তানকেই বুঝানো হতো, সেখানে পূর্ব পাকিস্তান বরাবরই অবহেলিত আর বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশকে শাসন ও শোষণ করার মতো গঠন কাঠামো নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিল
০২. পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর ভূমিকা : পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের পর এটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল ছিল। ১২০০ মাইলের ব্যবধানে দুই অঞ্চলকে ঘিরে গড়ে ওঠা পাকিস্তান গণতন্ত্রের পথে তাদের পদক্ষেপগুলোকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়নি তাই গণতন্ত্র এখানে হোঁচট খেয়েছে এবং সামরিকতন্ত্র ক্ষমতা দখল করেছে।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ : গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৫ সালে এক অধ্যাদেশ বলে পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন করেন। দ্বিতীয় গণপরিষদ মোট ৮০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। তাদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ জন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইনসভা কর্তৃক নির্বাচিত হন। বাকি ৪০ জন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের আইনসভা দ্বারা নির্বাচিত হন।
পূর্ব পাকিস্তানের ওপর সংখ্যাসাম্য নীতি চাপিয়ে দেওয়া হয় । অথচ প্রদেশের জনসংখ্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি ।
দ্বিতীয় গণপরিষদের দলীয় ভিত্তিতে প্রাপ্ত আসন বিন্যাস ছিল নিম্নরূপ আসন সংখ্যাঃ
রাজনৈতিক দল আসন সংখ্যা
মুসলিম লীগ ২৬
যুুক্তফ্রন্ট ১৬
আওয়ামী লীগ ১৩
কংগ্রেস ৪
তফসিলি ফেডারেশন ৩
ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টি ২
অন্যান্য ১৬
মোট= ৮০টি
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চিন্তাচেতনা এবং পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষায় ঐকমত্য না থাকার কারণে তারা ব্যর্থ হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পথ সুগম হয়।
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
৩.০৩ মারি চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে লেখ । অথবা, মারি চুক্তির দফাসমূহ লেখ।
উত্তর ভূমিকা : স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে মারি চুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর প্রথম গণপরিষদ ভেঙে দেন এবং দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন করেন। তবে পাঁচ দফাভিত্তিক মারি চুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
মারি চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো : নিম্নে ১৯৫৫ সালের মারি চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. প্রদেশ গঠন : মারি চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় কাঠামোর দুটি প্রদেশ থাকবে। পশ্চিম পাকিস্তানের সব প্রদেশকে এক ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করে একটি প্রদেশ গঠন করা হবে ।
২. পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান : উভয় প্রদেশকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে ।
৩. সংখ্যাসাম্য নীতির অনুসরণ : দুটি প্রদেশের মধ্যে সব বিষয়ে সংখ্য লোম্য নীতি অনুসরণ করা হবে।
৪. যুক্ত নির্বাচনের বিধান : যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হবে । ৫. দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রভাষা : বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মারি চুক্তির আলোকে ১৯৫৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশকে একত্রিত করে একটি প্রদেশ গঠন করা হয়।
এরপর ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় গণপরিষদে ‘পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ বিল উত্থাপন করা হয়। ২ মার্চ ১৯৫৬ সালে গভর্নর জেনারেল বিলে সম্মতি প্রদানের মাধ্যমে বিলটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। তাই পাকিস্তানের সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে মারি চুক্তি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ।
৩.০৪. ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধান কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
অথবা, ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধানের ব্যর্থতার কারণ লেখ।
উত্তর ভূমিকা : পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর শাসকবর্গের একগুঁয়েমি, অসহযোগিতা ও নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে দীর্ঘ নয় বছর কোনো সংবিধান বা শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান দ্বিতীয় গণপরিষদ ১৯৫৬ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে। কিন্তু নানা কারণে মাত্র আড়াই বছরে এ সংবিধান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।
১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণ : নিম্নে ১৯৫৬ সালের সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব : সুষ্ঠু ও সময়োচিত নির্বাচনের ওপর সংসদীয় সরকারের সাফল্য নির্ভর করে। কিন্তু ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে যতদিন সংসদীয় শাসন চালু ছিল, ততদিন পর্যন্ত সেখানে কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পাকিস্তানে প্রথম ও দ্বিতীয় পরিষদ গঠিত হয়েছিল পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার ওপর অহেতুক হস্তক্ষেপ করতো। যার ফলে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বাধার সম্মুখীন হয়। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ এ শুভসূচনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন*
৩. আঞ্চলিক বিরোধ : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই নানা কারণে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানিদের চরম অবজ্ঞা ও উপেক্ষার চোখে দেখত। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদেরও কোনো মর্যাদা তারা দিত না। সুতরাং দেখা যায়, আঞ্চলিক .. বিরোধই সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ ।
৪. সাংবিধানিক ত্রুটি : পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতা বণ্টন এবং ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছিল। ফলে এ সংবিধান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
৫. রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা লিপ্সা : তৎকালীন সময়ে রাজনীতিবিদরা প্রায়ই ক্ষমতার লোভে রাতারাতি দল পরিবর্তন করতেন এবং নতুন নতুন দল সৃষ্টি ও উপদলীয় কোন্দলের জন্ম দিতেন। ফলে সংসদীয় পদ্ধতি ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হয়।
৬. ইস্কান্দার মির্জার ক্ষমতা লিপ্সা : রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ইস্কান্দার মির্জার ষড়যন্ত্রও ১৯৫৬ সালের সংবিধানের এবং সংসদীয় শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার জন্য কোনো অংশে কম দায়ী নয়। সংসদীয় ব্যবস্থা তার জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে মনে করে তিনি সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ১৯৫৬ সালের সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থা অকার্যকর করে দেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতার দীর্ঘ নয় বছর পরে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল তা স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাতিল হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে উক্ত সংবিধানের অধীনে কোনো নির্বাচন হওয়ার পূর্বেই এ সংবিধানকে বাতিল করে দেন।
ফলে পাকিস্তানের সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যর্থতায় পতিত হয় ।
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
৩.০৫. আমলাতন্ত্র বলতে কী বুঝায়?
অথবা, আমলাতন্ত্র কাকে বলে?
উত্তরঃ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে ‘আমলাতন্ত্র’ একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বজনীন ধারণা। সাধারণভাবে আমলাতন্ত্র বলতে বুঝায় আমলাদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা ।
কিন্তু ব্যাপকভাবে বলা যায়, সরকার বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য যে কর্তৃত্ব ব্যবস্থা, মানবশক্তি, কার্যালয় ও বিভিন্ন সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীদের নিচে শাসন বিভাগের সব রাষ্ট্রকৃত্যগণ আমলা নামে পরিচিত। আমলাতন্ত্রকে প্রশাসনের হৃদযন্ত্র বলা হয় ।
আমলাতন্ত্র : সাধারণভাবে রাষ্ট্রে সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেই আমলাতন্ত্র বলা হয় শাব্দিক অর্থে আমলাতন্ত্র : আমলাতন্ত্র হলো ‘ইঁৎবধঁপৎধপু’ শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ হলো আমলাতন্ত্র । এটি ফরাসি শব্দ ‘ইঁৎবধঁ’ এবং গ্রিক শব্দ ‘কৎধঃবরহ’ থেকে এসেছে। যার অর্থ লেখার টেবিল বা ডেস্ক বা দপ্তর। তাই শাব্দিক অর্থে আমলাতন্ত্র বলতে দপ্তরভিত্তিক সরকারকে বুঝায় প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক গার্নার (চৎড়ভ. এধৎহবৎ) এর মতে, “যথাযথভাবে আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে সরকার মূলত সরকারি দপ্তরের সহকারীবৃন্দ কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং যেখানে এসব দপ্তরের বিভাগীয় প্রধানদের দ্বারা সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ স্থিরীকৃত এবং মূলনীতিসমূহ নির্ধারিত হয়।”
জন এ. ভেইগ (ঔড়যহ অ. ঠবরম) এর মতে, “কোনো সংগঠন তার কার্যক্রম পরিচালনা ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যে কর্মচারীবৃন্দ, কাঠামো ও পদ্ধতিকে অনুসরণ করে, এর সার্বিক বিষয়ই হচ্ছে আমলাতন্ত্র।” অধ্যাপক ফাইনার (চৎড়ভ. ঋরহবৎ) এর মতে, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি স্থায়ী বেতনভুক ও দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আমলাতন্ত্র হচ্ছে সংগঠন এবং প্রশাসনের একটি বিশেষ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় যেমন কার্যদায়িত্ব এবং ব্যক্তিবর্গের পদ্ধতিভিত্তিক সংগঠন যা সর্বাধিক কার্যকরভাবে সমষ্টিগত প্রয়াসে লক্ষ্যার্জন করতে পারে, তেমনি আবার এ ব্যবস্থা সরকারি কর্মচারীদেরকে অতিরিক্ত ক্ষমতা অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্ষমতার চরম অপব্যবহারও করতে সক্ষম হয়।
৩.০৬. সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব ব্যাখ্যা কর । অথবা, সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তরঃ ভূমিকা : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অধিকাংশ সময় জুড়ে সামরিক বাহিনী তথা সামরিক আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। প্রত্যক্ষ সামরিক আইন জারি বা অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় সামরিক বাহিনী আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ভারত বিভাগের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জনবল, সরঞ্জাম এবং সুযোগ সুবিধার হিস্যা নিয়েই নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে ।
সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব : ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান রাষ্ট্রে সামরিক আইন জারি হলে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রপরিচালনার এক নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। প্রথম পর্যায়ে দেশের সেনাপ্রধান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হন। প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ব্যাপকহারে নিযুক্ত করা হয়।
সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রদেশগুলোর মুখ্য সচিবদের উপসামরিক শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় । পাশাপাশি অন্যান্য পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার সহ-সামরিক শাসনকর্তারূপে নিযুক্ত করা হয়। ফলে শুরুতেই সামরিক আমলাতন্ত্র দেশের সাধারণ প্রশাসনসহ আর্থসামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন*
প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ম্যাজিস্ট্রেটদের সরাসরি বিচারের জন্য সামরিক আদালত গঠনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। আইয়ুব খানের কথিত ‘বিপ্লবী সরকারের’ ১২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৩ জন জেনারেল ও ২৭২ জন সামরিক কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রথমার্ধেই প্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য বহুসংখ্যক আমলাকে পদচ্যুত করে তদস্থলে সামরিক কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হয় যাদের প্রভাব ছিল সীমাহীন। সামরিক শাসনামলে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুল গঠন করা হয়। এর ফলে অর্থ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সিএসপি কর্মকর্তাদের একচেটিয়া অধিকার কিছুটা হ্রাস পায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫৮–৭১ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায়ই পাকিস্তানের দুই প্রদেশের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক এবং সিভিল মিলিটারি সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন ও জটিলতা বেড়ে যায়। বস্তুত পাকিস্তানের ভাঙনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী ও সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
৩.০৭ বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব উল্লেখ কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : নবগঠিত পাকিস্তান ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে এক সুশৃঙ্খল ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আমলাগোষ্ঠী লাভ করে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে আমলাগোষ্ঠীই যেমন ছিল প্রশাসনের সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তেমনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ব্যাপক প্রভাব ছিল ।
বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব : পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রথম থেকেই এদেশে বেসামরিক আমলাদের প্রভাব দেশটির রাষ্ট্রীয় জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় আমলাদের ভূমিকাই মুখ্য হয়ে ওঠে ।
ফলে সুসংহত পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস অধিকতর প্রভাবশালী হয়ে ওঠে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে তা এক শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হয়। কেননা পাকিস্তানের সার্বিক প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বস্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এলিট সার্ভিস অব পাকিস্তানের অফিসারদের যতজনই পাওয়া গেছে যতটা সম্ভব ততজন দিয়েই পূরণ করা হয়েছিল।
ফলে প্রশাসনে অবাঙালি মুসলমানদের একচেটিয়া আধিপত্য, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নে তাদেরকেই মুখ্য ভূমিকা পালনকারীতে পরিণত করে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য তাদের স্বার্থচিন্তা ছিল বিধায় পূর্ব পাকিস্তানিদের ন্যায্য অধিকার লাভ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয় আমলাদের একমুখী নীতির কারণে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন*
এবং পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষা তারা সর্বদা সেবাদাসের ভূমিকা পালন করায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি শোষণ ও বৈষম্য দিন দিন চরম আকার ধারণ করে। যার অনিবার্য পরিণতিতে পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ ১৯৪৭ সালে যে ৯৪ জন অবাঙালি মুসলমান আইসিএস অফিসার পাকিস্তানে এসেছিলেন ১৯৬৫ সালে তাদের মধ্যে ৪৭ জন কর্মরত ছিলেন। তারা তখন ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ অফিসার এবং দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ তাদের একক দখলে ছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম পরবর্তী চব্বিশ বছর সময়ে দেশটির এলিট শ্রেণি শাসনক্ষেত্রে মূলত সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। ফলে সামাজিক পদমর্যাদার ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকারে, প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় আমলারা সীমাহীন প্রভাব বিস্তার করে।
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
প্রশ্ন ৩.০৮ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য আলোচনা কর ।
অথবা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিবরণ দাও ।
অথবা, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে পাকিস্তা নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু শুরুতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে।
পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানিদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে শোষণ ৩ নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। এর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল প্রকট ।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য : পাকিস্তানের ছিল দুটি অঞ্চল । এই দুই অঞ্চলের জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে, এ চুক্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে তার প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে সব সময় বঞ্চিত করে। ফলে অবহেলিত, দরিদ্র, পশ্চাৎপদ এ অঞ্চলের মানুষেরা অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে ।
কেননা আর্থসামাজিক মুক্তির প্রত্যাশায় পূর্ববাংলার মানুষ পাকিস্তান আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ বাস্তব ও কার্যকর অর্থনৈতিক কর্মসূচি প্রদানে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদের হিংস্র থাবায় আবদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিক শোষণ স থেকে ১৯ কায়েম করে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন*
যেমন— ১৯৫৫-৫৬ সাল ১৯৫৯-৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তান লাভ করেছিল ১১৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তান পায় ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ১৯৬০-৬১ সাল থেকে ১৯৬৪-৬৫ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান পায় ৬,৪৮০ মিলিয়ন টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তান পায় ২২,২৩০ মিলিয়ন টাকা।
প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা ছিল না। কেন্দ্র সরাসরি এসব নিয়ন্ত্রণ করতো বলে পূর্ব পাকিস্তানের সমুদয় আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। স্টেট ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংক, বিমা, বাণিজ্য, সরকারি বেসরকারি প্রধান এবং বিদেশি মিশনসমূহের হেড অফিস ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে।
ফলে অবাধে অর্থ পাচার সহজ হয়। পূর্বাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের ব্যাপারটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের মৌখিক দয়ার ওপর। অন্যদিকে, উদ্বৃত্ত আর্থিক সঞ্জয় পশ্চিম পাকিস্তানে জমা থাকত, যে কারণে পূর্ব পাকিস্তানে কখনও মূলধন গড়ে উঠতে পারেনি; যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার লাভ করেনি।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের জন্য বিভিন্ন পন্থা অনুসরণ করে। তন্মধ্যে জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য, রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের বৈষম্য, বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ তর বণ্টনে বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ঋণ বরাদ্দে বৈষম্য, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শোষণ, অবকাঠামোগত বৈষম্য ও সম্পদ পাচারের মাধ্যমে শোষণ ইত্যাদি ছিল অন্যতম উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলাকে সব দিক ন দিয়েই শাসন, শোষণ ও দমন করেছে। যার ফলে পূর্ববাংলার জনগণ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
৩.০৯. পাকিস্তানি শাসনামলে রাজনৈতিক বৈষম্য তুলে ধর ।
অথবা, পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা : পাকিস্তানি শাসনামলে যেসব বৈষম্য বিদ্যমান ছিল তার মধ্যে রাজনৈতিক বৈষম্য ছিল অন্যতম। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে চরম বৈষম্য বিরাজমান ছিল।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান অপেক্ষা বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রাখে। ফলে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয় ।
পাকিস্তানি শাসনামলে রাজনৈতিক বৈষম্য : পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৪৭–’৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের মাত্র ১ জন ছিলেন পূর্ববাংলার এবং তিনি ছিলেন উর্দুভাষী ।
এসময় ৭ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন ছিলেন পূর্ববাংলার এবং তাদের মধ্যে ১ জন ছিলেন উর্দুভাষী এবং ১৯৪৭–’৫৫ সালে পূর্ববাংলার ৪ জন গভর্নরের মধ্যে মাত্র ১ জন ছিলেন বাঙালি ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন*
এছাড়া জনসংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতার বণ্টন পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূল হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তান ‘এক ইউনিট তত্ত্ব’ নামে এক অভিনব ধারণার সূত্রপাত ঘটায়, যেখানে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ভোটের ভারসাম্য রক্ষা করা।
তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাঞ্জাব প্রদেশ প্রস্তাব করে পাকিস্তানে সরাসরি জনসংখ্যার বণ্টনের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হোক, কারণ পাঞ্জাবিরা ছিল সিন্ধি, পশতু, বালুচ যা পাকিস্তানের অন্য যেকোনো গোত্রের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনীতি, রাজনীতি ও প্রশাসনে বাঙালিদের মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের অধিকার হতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে। দিন দিন তা প্রকট হয়ে উঠলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দেয় ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।