অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড ও অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.৬ : হবস, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৬ : হবস
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. টমাস হবসের পরিচয় দাও।
অথবা, টমাস হবসের জীবনী সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : টমাস হবস সপ্তদশ শতকের একজন চুক্তিবাদী দার্শনিক। হবস তার রাষ্ট্রদর্শন দ্বারা ব্রিটেনের জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চিন্তাচেতনার আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন।
বিজ্ঞানের উপলব্ধি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও পরীক্ষা নিরীক্ষাকে রাজনীতিতে প্রয়োগ করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। বিজ্ঞানের পন্থা ও পদ্ধতিকে রাজনীতির আঙিনায় অভিষিক্ত করেছেন বলেই হবসকে ”The founder of scientific politics” বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
টমাস হবসের পরিচয় : নিম্নে টমাস হবসের পরিচয় উল্লেখ- করা হলো-
১. জন্ম : ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল টমাস হবস ইংল্যান্ডের মেসবেরী নামক স্থানে এক খ্রিস্টান যাজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । হবস বাইবেল সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানী ছিলেন কিন্তু ধর্মের প্রতি তার কোনো আসক্তি ছিল না ।
২. শিক্ষাজীবন : বস তীক্ষ্ণ জ্ঞান, প্রখর চিন্তাশক্তি ও ক্ষুরধার যুক্তির অধিকারী ছিলেন। তার শিক্ষাজীবনের যাত্রা শুরু হয়. মেসবেরী নামক শহরে । পরবর্তীতে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ।
এরপর তিনি উইলিয়ামস ক্যাভেনডিশের উত্তরাধিকারীর গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন । টমাস হবস ফরাসি ও ইতালীয় ভাষা শিক্ষালাভ করেন। এসব ভাষায় লেখা সাহিত্য ও দর্শনবিষয়ক বইপত্র তার জ্ঞানচক্ষুকে নতুনভাবে উন্মোচিত করে।
৩. রাষ্ট্রদর্শনে হবসের অবদান : রাষ্ট্রদর্শনে টমাস হবসের অবদান অপরিসীম। ইংল্যান্ডের ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে হবস অত্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করেন এবং এর প্রতিফলন ঘটান তার রাজনৈতিক’ চিন্তাধারায়।
হবস তার রাষ্ট্রদর্শনে রাজতন্ত্রকে সমর্থন করেন। তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রে পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে রাজা ও পার্লামেন্টের ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে তীব্র ও তীক্ষ্ণ মতবিরোধ চলছিল।
হবস রাজার চরম কর্তত্বকে সমর্থন করেছিলেন। ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে তখন তিনি বিক্ষুব্ধ হন। এ সময় তিনি রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে সমর্থন করে ‘উব ঈরাব’ গ্রন্থ রচনা করেন।
পার্লামেন্টপন্থিদের আক্রমণের ভয়ে তিনি প্যারিসে পালিয়ে যান এবং রাজতন্ত্রের সপক্ষে লেখা অব্যাহত রাখেন। টমাস হবসের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে- ‘Leviathan’, ‘De Homine’, ‘De Corpore’ ইত্যাদি। দীর্ঘ ১১ বছর নির্বাসিত অবস্থায় প্যারিসে কাটানোর পর ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে অলিভার ক্রমওয়েল তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন ।
৪. মৃত্যু : ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে টমাস হবস ক্রমওয়েবারের নতুন প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। তিনি ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, টমাস হবস ছিলেন ৯ মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তিনি রাষ্ট্রদর্শনের মৌলিক চিন্তার সাথে আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন ।
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স: সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট অগাস্টিন: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
তিনি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে নক্ষত্রসম অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন চুক্তিবাদী, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী, সর্বাত্মকবাদী ও বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদী দার্শনিক
০২. প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে টমাস হবসের ধারণা আলোচনা কর।
অথবা, হবস চিত্রিত প্রকৃতির রাজ্য বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে টমাস হবস একটি অবিস্মরণীয় নাম। সপ্তদশ শতাব্দীর অন্যতম দার্শনিক ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকারী টমাস হবস ছিলেন প্রকৃতির রাজ্য নামক তত্ত্বের অন্যতম পুরোধা। তিনি মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির ভিত্তিতে প্রকৃতির রাজ্যের চিত্র তুলে ধরেন । তার এ মতবাদের মূলনীতি হচ্ছে ব্যক্তিত্ববাদ ও অহংকার ।
টমাস হবসের প্রকৃতির রাজ্য : টমাস হবস মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে প্রকৃতির রাজ্যের চিত্র অঙ্কন করেছেন। হবসের মতে,
রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো । হবসের এই মতবাদের মৌলিক উপাদান হচ্ছে ব্যক্তিত্ববাদ বা অহংকারবাদ। প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবসের ধারণা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. বিরতিহীন সংগ্রামময় সমাজ : হবস বলেন, লোভলালসা, কামনাবাসনা, ক্রোধ প্রভৃতি মানুষের আদিম ও অপরিবর্তনীয় চরিতার্থে মানুষ তার নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত।
যার ক্ষমতা থাকে সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে। যার ক্ষমতা অল্প সে চতুরতা ও বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ করে । ফলে সংগ্রাম বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে ।
২. সমাজহীন বর্বর জীবন : হবসের মতে, রাষ্ট্রের উৎপত্তির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো। প্রকৃতির রাজ্যে কোনো সমাজব্যবস্থা বা রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। নিয়মশৃঙ্খলার অভাবে সেখানে মানুষ অসভ্য ও. বর্বর জীবনযাপন করতো । যুদ্ধবিগ্রহ ছিল তখনকার দৈনন্দিন চিত্র ।
৩. অবিরাম সংগ্রামে লিপ্ত : হবস বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে সমাজ, সরকার ও শাসন কোনোকিছুই ছিল না। মানুষের মধ্যে ছিল অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সংঘাত আর অবিরাম সংগ্রাম ।
৪. মানুষের অসহায়ত্ব : প্রকৃতি রাজ্যে মানুষ সর্বদা ভয়ভীতি ও ভয়াবহ মৃত্যু বিভীষিকার মধ্যে বসবাস করতো। সেখানে মানুষ ছিল নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, বন্য ও স্বল্পায়ু। এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কারো পক্ষে শান্তিতে বসবাস করা সম্ভব ছিল না ।
৫. শান্তি অনুপস্থিত : হবসের প্রকৃতি রাজ্যে কোনো ন্যায়- অন্যায় নিরূপণের মানদণ্ড ছিল না, ছিল না কোনো আইনকানুন যার ফলে মানুষ সবসময় দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত ছিল । চারদিকে শান্তির কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
৬. মর্যাদার লড়াই : হবস বলেন, প্রকৃতির রাজ্যে কেউ নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট ভাবত না, সবকিছু সমানভাবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সবার মনেই জাগে। ফলে একই সাথে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরস্পরের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে।
৭. দায়িত্বহীনতা : দায়িত্বহীনতা হবসের প্রকৃতির রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষের মধ্যে কোনো দায়িত্ব ছিল না। তখন মানুষের মনে কোনো চিন্তাচেতনা ছিল না। তারা সর্বদা ঝগড়াবিবাদে লিপ্ত থাকতে বেশি পছন্দ করতো । একে অপরের প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করতো না ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হবস প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে যে যৌক্তিক মতবাদ প্রদান করেছেন তা যতই সমালোচিত হোক না কেন তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কিত ধারণাটি পুরোপুরি বাস্তবভিত্তিক না হলেও বাস্তব জীবনের সাথে এর কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হবসের প্রকৃতির রাজ্য আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ।
০৩. মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে হবসের ধারণা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, টমাস হবসের মানব প্রকৃতি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন টমাস হবস হবস তার ‘Leviathan গ্রন্থে যে রাষ্ট্রতত্ত্ব নির্মাণ করেছেন তার প্রথম অংশ হলো মানব প্রকৃতি।
জ্যামিতি বিদ্যার উপপাদ্য নীতি অনুসরণ করে নির্মিত এ রাষ্ট্রতত্ত্বে তিনি মানুষকে রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তায় হবসের মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণ তার চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ।
টমাস হবসের মানব প্রকৃতি : মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণে হবস গতিতত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। তার এ বিশ্লেষণে তিনি ‘যুক্তির’ উপাদানকে অস্বীকার করেননি। হবসের মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় :
১. মানুষ মূলত জড় পদার্থ: মানুষ মূলত একটি জড় পদার্থ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জড়বস্তুর ন্যায় কার্যকারণ সম্পর্ক রীতির নিয়মাধীন মন বলে যে জিনিসের কথা বলা হয় তা একটি ক্ষয়িষ্ণু বস্তু, ইচ্ছার স্বাধীনতা বা উদ্দেশ্যবাদ বলে কোনোকিছু নেই ।
২. আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা: মানুষের সব কর্ম প্রচেষ্টা, আবেগ অনুভূতি, আকর্ষণ ও অভিকর্ষণ সঞ্জাত আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা দুটি মূল অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি। হবস বিশ্বাস করতেন যে, মনোবিজ্ঞানে ‘অনুভব করা’ (Feeling) ও ‘ইচ্ছা করা’ (Willing) বলতে যা বুঝায় তার সমন্বয়ে ‘উদ্যম’ (Endeavour) সৃষ্টি হয়। আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা এ উদ্যমেরই বিপরীতমুখী দুই অভিব্যক্তি মাত্র ।
৩. আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য : হবস মনে করতেন, আকাঙ্ক্ষার মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। আকাঙ্ক্ষা দ্বারা যে সুখ হয় মানুষ তা প্রতিনিয়ত ধরে রাখতে চায় এবং এ কারণেই ক্ষমতার প্রতি তার লোভ বা মোহ জন্ম নেয় ।
ক্ষমতার জন্য তাই সে আজীবন লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং অব্যাহতভাবে এ লড়াই অক্ষুণ্ণ রাখে। হবস মানুষের অকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলেন, “A perpetual and restless desire of power, that cease only in death.
৪. মানুষ উপযোগবাদী মনোভাবাপন্ন : হবস বলেন যে, মানুষ সর্বদা আনন্দ উপভোগে আগ্রহী এবং নিরানন্দ বা দুঃখবিমুখী। এজন্য সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা দ্বারা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
৫. মানুষ স্বার্থপর : হবস বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ মাত্রই স্বার্থান্বেষী। তাদের সব আবেগ অনুভূতি স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত হয়। স্বার্থহানি ঘটলে মানুষ ব্যথিত হয়। স্বার্থ ব্যতীত মানুষ কোনো কাজ করতে এমনকি চিন্তা পর্যন্ত করতে উজ্জীবিত হয় না।
৬. স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র : হবস মানুষকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষ আজীবন কর্মব্যস্ত থাকে। একমাত্র মৃত্যু মানুষের কর্মব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে থাকে।
৭. স্বাতন্ত্র্যবাদী মনোভাব : মানব প্রকৃতির ধারণা বর্ণনায় হবস বলেন, মানুষ স্বাতন্ত্র্যবাদী। অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত হওয়াকে মানুষ পছন্দ করে না। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের ধ্যানধারণা দ্বারা পরিচালিত এখানে প্রতিটি ব্যক্তিই একটি স্বতন্ত্র অবস্থান রক্ষা করে চলেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হবসের এই মতবাদ অনুযায়ী মানুষ স্বভাবতই ছিল স্বার্থপর, লোভী, আত্মকেন্দ্রিক ও ক্ষমতাপিপাসু। মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তির বশে এসব কাজে লিপ্ত থাকত।
এসব প্রবৃত্তি দমনের কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতির রাজ্যে বিরাজ করতো এক ভয়াবহ পরিস্থিতি, যা থেকে মুক্তির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মানব প্রকৃতি সম্পর্কিত ধারণাটির ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য নয় ।
০৪. “জীবন বিশ্রী, পাশবিক ও সাময়িক।”- হবসের এই উক্তিটি সংক্ষেপে পর্যালোচনা কর।
অথবা, প্রকৃতির রাজ্যের মানব প্রকৃতি সম্পর্কে হবসের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত দার্শনিক টমাস হবস যেসব তত্ত্ব প্রদান করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তার মধ্যে প্রকৃতির রাজ্য ও মানব প্রকৃতি সম্পর্কিত ধারণাটি অন্যতম।
টমাস হবস মানব প্রকৃতির সাথে সংগতি রেখেই তার প্রকৃতির রাজ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। হবসের মতে, প্রকৃতির রাজ্যে কোনো সমাজব্যবস্থা বা রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
“জীবন বিশ্রী, পাশবিক ও সাময়িক।” উক্তিটির পর্যালোচনা : টমাস হবস তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Leviathan” এ প্রকৃতির রাজ্যের মানব প্রকৃতি সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিটি প্রদান করেন। হবসের মতে, রাষ্ট্রের উৎপত্তির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বর্বর জীবনযাপন করতো।
সেখানে কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রিত হতো না, যা মানুষের বিশৃঙ্খল জীবনে শৃঙ্খলা আনতে পারেনি। এ অবস্থায় মানুষের জীবন ছিল, “Solitary, poor, nasty, brutish and short.” অর্থাৎ, জীবন ছিল অসহায়, নিঃসঙ্গ, বিশ্রী, পাশবিক ও সাময়িক প্রকৃতির রাজ্যে প্রত্যেকে প্রত্যেকেরই শত্রু ছিল। তারা সর্বক্ষণ দ্বন্দ্ব, কলহ, খুনখারাবি প্রভৃতিতে লিপ্ত ছিল।
এরূপ ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থায় মানুষের বুদ্ধি বিবেকের চর্চায় যুক্তিকে কাজে লাগানোর অবকাশ সেখানে মোটেই ছিল না। মানুষ ছিল স্বাধীন এবং যার যার নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ানক ব্যস্ত অন্যের নিরাপত্তার দিকে কারো কোনো দৃষ্টি ছিল না।
হবসের মতে, এরূপ অবস্থায় কোনো প্রশাসনিক আইন ছিল না, ছিল না কোনো নিয়মকানুনও। যেখানে নিয়মকানুন নেই সেখানে ন্যায়ধর্মও অনুপস্থিত। অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ আইনকানুন, ন্যায়-অন্যায়, বিচারবিবেচনাহীন এক বর্বর ও অসভ্য সমাজে বসবাস করতো।
আবার টমাস হবস মনে করতেন যে, প্রকৃতি মানুষকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে, ধন ও মানের কার্যকালের দিক থেকে সব মানুষ মোটামুটি সমান। সব মানুষ সমান ক্ষমতাসম্পন্ন বলে সবাই একই জিনিস পেতে চায়।
এ নিয়ে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয় । মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা, বিশ্বাসহীনতা এবং অহংকারের ফলে অবিরাম সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এ অবস্থায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করতো না। নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধারে মানুষ ছিল ব্যস্ত। প্রকৃতির রাজ্যে ব্যক্তি সম্পত্তির কোনো অধিকার বা মালিকানা ছিল না।
তাছাড়া মানুষের মনে ন্যায় ও অন্যায়ের বিচার করার কোনো সুযোগ ছিল না । জোর যার মুল্লুক তার এ নীতিতে মানুষ ছিল বিশ্বাসী। তাই টমাস হবস যথার্থই বলেছেন যে, প্রকৃতির রাজ্যে মানবজীবন ছিল বিশ্রী, নৃশংস, নিঃসঙ্গ পশুতুল্য, দরিদ্র ও ক্ষণস্থায়ী।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হবস বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের জীবন ছিল পশুতুল্য। তখন শৃঙ্খলার অভাবে মানুষ সেখানে অসভ্য ও বর্বর জীবনযাপন করতো। নিশ্চয়তাবিহীন জীবনে মানুষ একে অপরকে সন্দেহ করতো।
এককথায় প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ সর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত ও মারাত্মক মৃত্যুর বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে বাস করতো, যেখানে মানুষের জীবন ছিল সঙ্গীহীন, অসহায়, নোংরা, পাশবিক ও ক্ষণস্থায়ী।
০৫. টমাস হবসের সার্বভৌম তত্ত্বটি লেখ।
অথবা, টমাস হবসের মতে সার্বভৌম কী?
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মধ্যে টমাস হবস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পার্লামেন্টারিয়ানদের মধ্যে রাজা ও পার্লামেন্টের ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে যে তীব্র ও তিক্ত মতবিরোধ চলছিল
এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তা থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য টমাস হবস নিরঙ্কুশ ক্ষমতাসম্পন্ন পরাক্রমশালী রাজার কথা বলেন এবং সৃষ্টি করেন তার সার্বভৌমত্বের তত্ত্ব ।
টমাস হবসের সার্বভৌম তত্ত্ব : নিম্নে টমাস হবসের সার্বভৌম তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. সংজ্ঞা : সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞায় টমাস হবস বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতা হলো এমন এক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি যার কাছে জনগণ নিজেদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে তাদের যাবতীয় প্রাকৃতিক অধিকার সমর্পণ করে দিয়ে তার যাবতীয় কাজকে নিজেদের কাজ বলে স্বীকার করে নেয়।
জনগণ কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতাকে তার নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে নিয়োজিত করা এ ব্যক্তি বা ব্যক্তিমণ্ডলীর লক্ষ্য। সুতরাং জনগণ সার্বভৌম শাসকের নিকট তাদের ক্ষমতা অর্পণ করে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে।
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
২. রাষ্ট্রদর্শন : হবসের মতে, মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে অসহনীয় ও কদর্যপূর্ণ পরিবেশ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্য নিজেদের মধ্যে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যার মাধ্যমে তারা প্রত্যেকে তাদের নিজেদের অধিকার অপরের নিকট অর্পণ করে এবং পরিশেষে তাদের সম্মিলিত অধিকার রাজার হস্তে সমর্পণ করে ।
৩. উৎপত্তি : হবস বলেন, প্রকৃতির রাজ্যে কোনো শাসক, আইনকানুন বা বিচার সালিশ কিছুই ছিল না। ফলে মানুষ নিঃসঙ্গ, কঠোর ও নির্মম পরিবেশে জীবনযাপন করতো।
প্রকৃতির রাজ্যে এরূপ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে এবং প্রত্যেকেই স্বেচ্ছায় নিজ অধিকার ও ক্ষমতা রাজার হস্তে সমর্পণ করে। এভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংসদই অর্থাৎ শাসকই সার্বভৌম ক্ষমতায় পরিণত হয়।
৪. বৈশিষ্ট্য : টমাস হবস মনে করেন, সার্বভৌম ক্ষমতা চরম ক্ষমতার আধার। রাষ্ট্রে সার্বভৌম শাসকের সমকক্ষ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে না। সার্বভৌম শাসকের ইচ্ছাকে অন্য কোনো ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সার্বভৌম শাসকই সকল ক্ষমতার উৎস ও ব্যাখ্যা প্রদানকারী, তিনি যাবতীয় আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন ।
৫. শাসক মরণশীল : টমাস হবসের মতে, সার্বভৌম শাসক হলো মরণশীল ভগবান। যেহেতু সকল জনগণ স্বেচ্ছায় সার্বভৌম শাসকের হস্তে তাদের সমগ্র ক্ষমতা সমর্পণ করেছে, কাজেই সার্বভৌম শাসক চরম ক্ষমতার অধিকারী।
কেউ সার্বভৌম শাসকের ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে পারে না। জনগণ তার হাতে তরবারি প্রদান করে তার হস্তকে সুদৃঢ় করে তুলেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, টমাস হবসের বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে সার্বভৌম তত্ত্ব অন্যতম। টমাস হবসের সার্বভৌম তত্ত্ব “জোর যার মুল্লুক তার” অন্ধকার বিভিষীকাময় অরাজক পরিস্থিতি থেকে মানুষকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সামাজিক মুক্তির আলোর দিশা দেখিয়েছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড