অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড ও অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.৬ : হবস, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড|
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৬ : হবস
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
০৩. টমাস হবসকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক বলার কারণ আলোচনা কর।
অথবা, “টমাস হবস একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক” বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় টমাস হবস একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ইউরোপীয় রাজনৈতিক চিন্তাজগতের শ্রেষ্ঠ মনীষী হলেন টমাস হবস। ইংল্যান্ডের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার যুগে তার আবির্ভাব ঘটে। ইংল্যান্ডের এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হবস তার সুচিন্তিত দার্শনিক অভিমত ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তিনি একজন সর্বাত্মকবাদী দার্শনিক হিসেবে পরিচিত। তিনি বস্তুবাদী দার্শনিকও বটে। এই দুটি বিষয়বস্তুর পাশাপাশি তার দর্শনের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের কিছু উপাদান লক্ষ করা যায়।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী হিসেবে টমাস হবস : হবস ছিলেন একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক। মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবস যে ধারণা দেন তা তাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী করে তোলে। হবসের মতে, ব্যক্তি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষাই হলো ব্যক্তিস্বার্থ।
হবস যদিও রাজার চরমাধিকারে সবচেয়ে বড় প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত, তবুও ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি তার অনুরাগ একেবারে অপ্রতুল ছিল না। প্রকৃতির রাজ্যের বিশৃঙ্খল পরিবেশ হতে ব্যক্তিকে উদ্ধার করাই ছিল হবসের রাষ্ট্রচিন্তার মূল উদ্দেশ্য, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যই তিনি শাসকের হাতকে শক্তিশালী করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন।
বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করেছেন ব্যক্তি দিয়ে। এ সম্পর্কে ম্যাকগভার্ন বলেন, “হবস সর্বোপরি ব্যক্তি, ব্যক্তির অধিকার ও সম্মানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু তার ব্যক্তিবাদই তাকে সরাসরি পরিপূর্ণ রাষ্ট্রবাদ অর্থাৎ রাষ্ট্রই ব্যক্তির যাবতীয় কাজকর্মের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রক, এ বিশ্বাস নিয়ে গিয়ে হাজির করেছে।”
টমাস হবসকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক বলার কারণ : নিম্নে হবসকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক হিসেবে আখ্যায়িত করার কারণগুলো আলোচনা করা হলো-
১. ব্যক্তিস্বাধীনতা : হবস বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যময় ও রাজনৈতিক অবস্থার মধ্য হতে ব্যক্তিকে স্বাধীন করে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ করেছেন। ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিল তার রাষ্ট্রদর্শনের মূল উৎস।
হবসের সমসাময়িক কালের সমগ্র ইংল্যান্ডব্যাপী চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। যাকে হবস প্রকৃতির রাজ্যের সাথে তুলনা করেছেন। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য তিনি সার্বভৌম শক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন । কেননা তার লক্ষ্যই ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতা।
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স: সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট অগাস্টিন: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
২. ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র : স্টুয়ার্ট রাজতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারী শাসনের সমর্থক হবস তার মতবাদ সৃষ্টি করলেও তাঁকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী হিসেবে গণ্য করা যায়। হবস বিশ্বাস করেন, জনগণের সুখ ও কল্যাণে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।
সে কারণেই রাজার অবাধ ক্ষমতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, হবসের মতানুযায়ী ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয় তাই বলা যায়, হবস পরোক্ষভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদকেই সমর্থন করেছেন ।
৩. ব্যক্তির কল্যাণ নিশ্চিতকরণ : হবসকে কর্তৃত্ববাদী দার্শনিক হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তিনি ব্যক্তিস্বান্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি যা কিছু করেছেন তা জনগণের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যেই করেছেন।
রাজার হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্পণের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির জানমালের নিরাপত্তা ও সুখশান্তির নিশ্চয়তা বিধানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
৪. জনগণের সম্মতি: হবস সামাজিক চুক্তি মতবাদে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অধিকার বা ক্ষমতা নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে পরিত্যাগ করে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হবেন। তার এ মতবাদের দ্বারা পরোক্ষভাবে জনসম্মতির কথা প্রকাশ পায়। জনগণের দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে আবার জনগণের সম্মতির মাধ্যমে শাসক গঠন করা হয়েছে। অতএব ক্ষমতার মূল উৎস জনগণের সম্মতি
৫. রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মাঝে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন : দার্শনিক হবস তার দর্শনচিন্তায় রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপনের কথা বলেছেন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তিনি অন্য কোনো সংঘ, সমিতি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের কোনো পরামর্শ দেননি। এজন্য হবস ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক হিসেবে পরিচিত।
৬. সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠান : ক্ষমতার সকল প্রকার মালিক জনগণ আধুনিক বিশ্বে এটি সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু টমাস হবস জনগণের সম্মতির প্রেক্ষিতেই শাসককে সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন করে তোলেন।
তার মতে, জনগণ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে শাসককে রাষ্ট্রশাসনের দায়িত্ব দেন। সুতরাং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জনগণ। জনগণ যেরূপ ইচ্ছা করেন, শাসন কর্তৃপক্ষের চরিত্র সেরূপই হয়।
সর্বাত্মবাদে জনগণের এ ধরনের অধিকার কল্পনার বস্তুতে কিছুই নয় । গণসার্বভৌমত্বের ধারণা নিশ্চিতভাবে তাকে একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীতে পরিণত করেছে।
৭. ব্যক্তির মুক্তি : হবসের মতে, প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের জীবন ছিল দরিদ্র, হীন, ঘৃণ্য ও সংক্ষিপ্ত। এই বর্বর পরিবেশ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই তিনি সামাজিক চুক্তিবাদের অবতারণা করেন। এর মাধ্যমে তার মাঝে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের পরিচয় পাওয়া যায় ।
৮. আত্মকেন্দ্রিক : হবসের আত্মকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্ব থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের লক্ষ্যই হলো ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণ করা।
রাষ্ট্র কোনো উদ্দেশ্য নয়, উপরন্তু এটি উদ্দেশ্যসাধনের উপায় মাত্র । ব্যক্তির কল্যাণ ও নিশ্চিত নিরাপত্তা বিধানের একটি উপায় হলো রাষ্ট্র। সুতরাং যথাযথ উপযোগিতার মধ্যেই রাষ্ট্রের সার্থকতা নিহিত।
৯. জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান : হবসের মতে, জনগণ চুক্তির মাধ্যমে শাসক সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, সার্বভৌম শক্তি যদি চুক্তি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে তাকে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় না।
সার্বভৌম শাসক যাই করুক না কেন তার কাজের ফসল হবে জনগণের নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি সুনিশ্চিত করা। অর্থাৎ শাসক এ দুয়ের বাইরে অন্য কিছুই করতে পারে না। হবস এই পূর্বশর্ত আরোপ করার ফলে সার্বভৌম শাসকের সমালোচনা করা না গেলেও তিনি কোনো প্রকার অন্যায় কাজ করতে পারেন না।
১০. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ : টমাস হবস রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জনগণের অংশগ্রহণের দৃঢ় সমর্থক ছিলেন। তার মতে, প্রকৃতির রাজ্যের নৈরাজ্যকর অবস্থাতে ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগ, আগ্রহ এবং সক্রিয় ভূমিকার কারণে রাষ্ট্রগঠন সম্ভব হয়েছে। শুধু রাষ্ট্রকে নয়, তিনি জনগণকে তার জীবন রক্ষার চরম অধিকার প্রদান করেছেন ।
১১. ব্যক্তি প্রাধান্য : হবসের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের আর একটি প্রমাণ হলো তিনি সমষ্টি অপেক্ষা ব্যক্তির প্রতি গুরুত্ব প্রদান বড় করেছেন। সমষ্টির মধ্যে ব্যক্তি যাতে নিরুদ্দেশ হয়ে না যায় সেজন্য সমষ্টিকে কেন্দ্র করে দর্শনচিন্তা শুরু করেননি, শুরু করেছেন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে।
১২. বিরোধিতা করার অধিকার : হবস সরকারের বিরোধিতা করার অধিকার জনগণকে দেননি। কিন্তু জীবন রক্ষার খাতিরে শাসকের বিরোধিতা করার অধিকার জনগণকে প্রদান করা হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তৎকালীন ইংল্যান্ডের চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা হতে মুক্তি লাভের জন্য হবস চরম ক্ষমতাসম্পন্ন ও স্থায়ী শাসনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন।
এর প্রেক্ষিতে তিনি ‘খবারধঃযধহ’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি মানুষের আচরণ, স্বভাব, প্রকৃতি সম্পর্কে যেসব তত্ত্ব প্রদান করেছেন তা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। হবসের সর্বাত্মকবাদ ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এককথায় হবসকে একাধারে সর্বাত্মকবাদী ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দার্শনিক বলা যায় ।
০৪. মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে টমাস হবসের ধারণা মূল্যায়ন কর।
অথবা, মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে টমাস হবসের ধারণা সমালোচনাসহ লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : টমাস হবস সামাজিক চুক্তিবাদী দার্শনিক হিসেবে পরিচিত। সতেরো শতকের এই ইংরেজ দার্শনিক তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা, মানব চরিত্র ও মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতে রচনা করেন।
হবস তৎকালীন ইংল্যান্ডের বিশৃঙ্খল ও অরাজক রাজনৈতিক অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আশায় একজন অসীম শক্তিশালী শাসকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। টমাস হবস তার ‘লেভিয়াথান’ গ্রন্থে মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ।
মানব প্রকৃতি সম্পর্কে হবসের ধারণা : মানব প্রকৃতি সম্পর্কে হবস অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ধারণা পোষণ করেছেন। হবসের মানব প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. মানুষ জড় পদার্থ : মানুষ মূলত একটি জড় পদার্থ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জড়বস্তুর ন্যায় সে কার্যকারণ সম্পর্ক রীতির নিয়মাধীন। মন বলে যে জিনিসের কথা বলা হয় তা একটি ‘ক্ষয়িষ্ণু বস্তু’ ইচ্ছার স্বাধীনতা বা উদ্দেশ্যবাদ বলে কোনোকিছু নেই। এগুলো সবই নিছক মায়া বা ভ্রম। বস্তুত ‘অমূর্ত ব্যক্তি’ হিসেবে মানুষ সম্পর্কে এটিই হলো হবসের যথার্থ ধারণা।
২. আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা : মানুষের সব কর্ম প্রচেষ্টা, আবেগ অনুভূতি, আকর্ষণ ও অভিকর্ষণসঞ্জাত আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা দুটি মূল অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি। হবস বিশ্বাস করতেন যে, মনোবিজ্ঞানে ‘অনুভব করা’ (Feeling) ও ‘ইচ্ছা করা’
(Willing) বলতে যা বুঝায় তার সমন্বয়ে ‘উদ্যম (Endeavour)’ সৃষ্টি হয়। আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা এ উদ্যমেরই বিপরীতমুখী দুটি অভিব্যক্তি মাত্র
৩. আকাঙ্ক্ষার উদ্দেশ্য : হবস মনে করতেন, আকাঙ্ক্ষার মূল লক্ষ্য হলো ক্ষমতা। আকাঙ্ক্ষা দ্বারা যে সুখ হয় মানুষ তা প্রতিনিয়ত ধরে রাখতে চায় এবং এ কারণেই ক্ষমতার প্রতি তার লোভ বা মোহ জন্ম নেয়।
ক্ষমতার জন্য তাই সে আজীবন লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং অব্যাহতভাবে এ লড়াই অক্ষুণ্ণ রাখে। হবস মানুষের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলেন, “A perpetual and restless desire of power that cease only in death”
৪. মানুষের ক্ষমতা : হবস মনে করতেন, মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য নেই। মানুষ মোটামুটিভাবে সবাই সমান। যে ব্যক্তি দৈহিক দিক থেকে শক্তিশালী সে মনের দিক থেকে দুর্বল।
আবার যে হয়তো মনের দিক থেকে সবল সে হয়তো দৈহিক দিক থেকে দুর্বল। সুতরাং হবসের মতে, বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, মানুষে মানুষে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
মানব প্রকৃতি সম্পর্কে হবস অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে স্বার্থপর, তার কার্যাবলি শুধু তার আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। শুধু তাই নয়, মানুষ ক্ষমতালিপ্সা প্রকৃতির ও লোভীও বটে।
৫. মানুষ স্বার্থপর : হবস বিশ্বাস করেন যে, মানুষ মাত্রই স্বার্থান্বেষী । তাদের সমস্ত আবেগ অনুভূতি স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত হয়। স্বার্থহানি ঘটলে মানুষ ব্যথিত হয়। স্বার্থ ব্যতীত মানুষ কোনো কাজ করতে এমনকি চিন্তা পর্যন্ত করতে উজ্জীবিত হয় না। সমালোচনা : হবস মানব প্রকৃতি সম্পর্কে যে মতবাদ প্রদান করেছেন তা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
- প্রথমত, হবস মানুষকে জড় পদার্থ বলে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করেছেন কারণ অন্যান্য জড় এবং জীব বস্তুর মধ্যে মানুষের পার্থক্য হচ্ছে মানুষ জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন, অন্যরা তার ব্যতিক্রম।
- দ্বিতীয়ত, ইচ্ছার স্বাধীনতা অস্বীকার করে তিনি ব্যক্তির সুপ্ত বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন।
- তৃতীয়ত, হবস মানুষকে কলহপরায়ণ, স্বার্থান্বেষী জীব হিসেবে অবমূল্যায়ন করেছেন মানুষকে তিনি নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীব হিসেবে স্বীকার করেননি।
- চতুর্থত, মানুষ যে জিনিসের প্রতি আকর্ষণবোধ করে তা মানুষের জন্য কল্যাণকর— হবসের এ ধারণা সত্য নয়। কারণ মানুষ অনেক সময় অকল্যাণকর জিনিসের প্রতি আকর্ষণবোধ করে ।
- পঞ্চমত, মানুষ সবসময় আকাঙ্ক্ষার দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় না। প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবসের ধারণা : টমাস হবস মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির ভিত্তিতে প্রকৃতির রাজ্যের চিত্র অঙ্কন করেন। প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে হবসের ধারণা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববিহীন বিশৃঙ্খল অবস্থা : হবস বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্য ছিল রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববিহীন। ফলে সেখানে এক চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ অসহনীয় পরিবেশ বিরাজমান ছিল।
কোনো সার্বভৌম শক্তির অস্তিত্ব না থাকায় “জোর যার মুলুক তারা (Might is right) এই নীতিই সর্বত্র প্রচলিত ছিল। সবলের অত্যাচারের ভয়ে দুর্বলরা সর্বদা পালিয়ে বেড়াত। স্বার্থোদ্ধারের জন্য বিশ্বস্ত ছিল । অবিরাম ভয়ভীতি, জীবন ও সম্পত্তি হারানোর ভয় মানুষকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াত । অজানা এক ভয়ে তারা সর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত থাকত ।
২. ন্যায়-অন্যায় বোধের অনুপস্থিতি : প্রকৃতির রাজ্যে ন্যায়- অন্যায়ের কোনো স্থান ছিল না। এখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের শত্রু ছিল। তারা পরস্পরের দ্বন্দ্ব কলহ ও খুনখারাবিতে লিপ্ত ছিল।
যেখানে মানুষের বিবেক ও যুক্তিকে কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ ছিল না। যার দৈহিক শক্তি ও কূটকৌশল যত বেশি ছিল, সে তত বেশি প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্পত্তি ভোগ করতো। প্রকৃতির রাজ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকায় এক অসহনীয় পরিবেশ বিদ্যমান ছিল।
৩. সমাজবিহীন অসভ্য ব্যবস্থা : হবসের মতে, রাষ্ট্রের উৎপত্তির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো। প্রকৃতির রাজ্যে কোনো সমাজব্যবস্থা বা প্রকৃতির রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কারো পক্ষে শান্তিতে বসবাস করা সম্ভব ছিল না ।
৪. দুর্বিষহ জীবনযাপন : প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতো। তারা কখনও ভালোভাবে বসবাস করতে পারেনি । প্রত্যেকে শক্তির লড়াই করতো। মানুষ ছিল স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। তারা সর্বদা অসুখী জীবনযাপন করতো। এককথায় প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ ছিল অসহায়, নিঃস্ব, নোংরা, পাশবিক, কলহপ্রিয় প্রকৃতির ।
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
৫. অবিরাম সংগ্রামে রত : হবস বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে সমাজ, সরকার ও শাসন কোনোকিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। মানুষের মধ্যে ছিল অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সংঘাত আর অবিরাম সংগ্রাম। হবসের মতে, যেহেতু সবাই নিজেকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান, শক্তিশালী
ও সমযোগ্যতাসম্পন্ন মনে করতো; ফলে সবাই একই ধরনের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান অর্জনের চেষ্টা করতো । মানুষে মানুষে যে তিক্ত সম্পর্ক চলত সে অবস্থাকে তিনি যুদ্ধাবস্থার সাথে তুলনা করেছেন|
সমালোচনা : টমাস হবসের প্রকৃতির রাজ্যের সাথে সকল দার্শনিক একমত হতে পারেননি। তার প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কিত মতবাদটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
- প্রথমত, হবস মানুষকে স্বার্থপর, লোভী বলে মানুষের মানবীয় বা মানবিক গুণাবলিকে অস্বীকার করেছেন।
- দ্বিতীয়ত, মানুষ রাষ্ট্রের উৎপত্তির পূর্বে ‘প্রকৃতির রাজ্যে’ বসবাস করতো বলে হবস যে কল্পনা করেছেন তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
- তৃতীয়ত, হবসের প্রকৃতির রাজ্য ছিল কাল্পনিক ফসল। আর তার এ কল্পনা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে ।
- চতুর্থত, হবস ‘প্রকৃতির রাজ্যে’ মানুষকে জঙ্গলের পশুদের সাথে তুলনা করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে অপমান করেছেন।
- পঞ্চমত, হবস মানুষের জীবনকে সঙ্গীহীন, অসহায়, নোংরা, পাশবিক ও ক্ষণস্থায়ী বলে যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তারও কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হবসের মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কিত মতবাদসমূহ সমালোচকদের দ্বারা সমালোচিত হলেও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এটি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী মতবাদ।
মানব প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক রাজ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে হবস যৌক্তিক মতবাদ প্রদান করেন। তিনি বাস্তবতার নিরিখে তার চিন্তাধারা উপস্থাপন করেন। তার বাস্তববাদী না গেলেও সম্পূর্ণরূপে মতবাদসমূহকে বাস্তববাদী বলা না কাল্পনিকও বলা যায় না। সামাজিক চুক্তির প্রেক্ষাপটে হবসের প্রকৃতির রাজ্য ও মানব প্রকৃতি যথার্থ ছিল ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড