অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF) ও অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF) সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. এরিস্টটলের পরিচয় দাও।
অথবা, এরিস্টটলের জীবন বৃত্তান্ত সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : মানব সভ্যতার বিকাশ সাধনে যাদের অবদান অবিস্মরণীয় সেসব মনীষীদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল অন্যতম রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তায় এরিস্টটলের অবদান অপরিসীম রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রতত্ত্বের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী দার্শনিক হিসেবে এরিস্টটল সর্বাধিক পরিচিত। নীতিশাস্ত্র থেকে আলাদা করে এরিস্টটলই প্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পৃথক মর্যাদায় উন্নীত করেন।
এরিস্টটলের পরিচয় : এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় । নিম্নে এরিস্টটলের পরিচয় তুলে ধরা হলো-
১. জন্ম : খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে ম্যাসিডনের উপকূলবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম নিকোম্যাকাস আর মায়ের নাম ছিল ফেসটিস। তার পিতা ছিলেন মেসিডনিয়ার রাজা আমিন্তাসের গৃহচিকিৎসক। তাই তার পিতা চেয়েছিলেন এরিস্টটল বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হবেন।
২. শৈশবকাল : শিশুকাল থেকেই রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত থাকার ফলে এরিস্টটল অনেকাংশে বিজ্ঞানমনষ্ক ও অভিজাততন্ত্র মনষ্ক হয়ে পড়েন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, বাল্যকালে তিনি অনেকটা ভবঘুরে ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন ।
৩. শিক্ষাজীবন : খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৬ অব্দে এরিস্টটলের পিতার মৃত্যু হলে ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্সে আসেন ও প্লেটোর স্বনামধন্য বিদ্যালয় একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত করেন এবং এই সময়ে তিনি একাডেমিতে প্লেটোর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেন। এই শিক্ষালাভ পরবর্তী জীবনে তাকে ইতিহাসে জায়গা করে দেয়।
৪. কর্মজীবন : একাডেমিতে সুদীর্ঘ ২৪ বছর শিক্ষালাভ করার পর এরিস্টটল নিরাশ ও দুঃখিত হয়ে এথেন্স ত্যাগ করে এশিয়া মাইনরের অন্তর্ভুক্ত এটার্নিয়াস ( Atarneas) এর স্বৈরাচারী শাসক হার্মিয়াসের (Harmias) চিকিৎসক ও তার উপদেষ্টা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২ অব্দে মেসিডোনের রাজা ফিলিপস তার পুত্র আলেকজান্ডারের জন্য এরিস্টটলকে গৃহশিক্ষক হিসেবে রাখেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৪ অব্দে আলেকজান্ডার এশিয়া অভিযানে বের হলে এরিস্টটল মেসিডোন ত্যাগ করে এথেন্সে ফিরে আসেন। এথেন্সে ফিরে আসার কিছুদিন পরে তিনি তার গুরু প্লেটোর একাডেমির অনুরূপ একটি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। এটি ‘লাইসিয়াম’ নামে সুপ্রসিদ্ধ।
৫. রচনাবলি : জ্ঞানের সব শাখায় অবতারণা তার লেখনীতে দেখা যায় । রাজনীতি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এরিস্টটলের অবদান ছিল অপরিসীম। ‘দ্যা পলিটিক্স’ তার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ। এছাড়াও তিনি ‘দ্যা ইথিকস’, ‘দ্যা লজিক’, ‘দ্যা রেটোরিক’, ‘দ্যা কনসটিটিউশন অব এথেন্স’ নামের বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন।
৬. মৃত্যু : খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল ইউবিয়ার অন্তর্গত চ্যালসিস (Chalsis) শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গুরু প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটল মূলত প্রাচীন নগররাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে তার রাষ্ট্রচিন্তা গড়ে তুলেছেন। তিনিই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার জ্ঞানদর্শন রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে এনে দেয় এক ঈর্ষণীয় সফলতা।
অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
০২. এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, এরিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্ব সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ম্যাসিডনের উপকূলবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করা এরিস্টটল ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটোর শিষ্য। এরিস্টটল গ্রিক দর্শনে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
তিনি ছিলেন একজন বাস্তবধর্মী দার্শনিক। বহুমাত্রিক জ্ঞানের অধিকারী এরিস্টটলের রাষ্ট্র সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অপরিসীম মর্যাদা দান করেছে।
এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তা : সর্বপ্রথম গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে/ দর্শনকে অন্যান্য সব দর্শন থেকে পৃথক করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। নিম্নে এরিস্টটলের রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রদর্শন : এরিস্টটলই প্রথম দার্শনিক যিনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রদর্শন বা রাষ্ট্রতত্ত্বকে নীতিশাস্ত্র থেকে পৃথক করে বিশেষ বিজ্ঞানের মর্যাদা দেন। এরিস্টটল রাজনীতির অধ্যয়নের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আরোপ করেন এবং তাকে বিজ্ঞানের সাথে তুলনা করার প্রয়াস পান। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে মাস্টার অব সাইন্স বা সর্বশ্রেষ্ট বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেন। তাই বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান সুচিন্তিত ও বৈজ্ঞানিক মতামত থেকে উৎপত্তি ।
২. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : এরিস্টটলই সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবর্তন করেন। শাসন ক্ষমতা একজনের হাতে ন্যস্ত থাকলে স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের উৎপত্তি ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করতেন। তাই একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র রোধের জন্য তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রচলন করেন ।
৩. রাষ্ট্র ও সরকার অত্যন্ত: যৌক্তিকতার সাথে সরকার ও রাষ্ট্রের কার্যকলাপের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করেছেন এরিস্টটল । তার মতে, “রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান কিন্তু সরকার সবসময় পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে”। আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হলো তার এই সরকার ও রাষ্ট্রের পার্থক্য ধারণাটি।
৪. রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে এরিস্টটল অত্যধিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তার মতানুসারে, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা, নাগরিকদের মহত্বর জীবনের, উন্নত ও কল্যাণকর জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করা। জ্ঞানের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করা ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধন করা। বর্তমানের রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে তার কথার মিল পাওয়া যায় ।
৫. নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন: আইনের শাসন ও মতে, শাসনতান্ত্রিক আইনের প্রতি তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । তিনি বলেন, “নাগরিকদের প্রণীত শাসনতন্ত্রের ওপর রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা উচিত।” তার “জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন জনগণের শাসন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব। কারণ আইনের শাসন সেখানে নেই, সেখানে কোনো শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকে না।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিখ্যাত রাষ্ট্র দার্শনিক এরিস্টটল রাষ্ট্র সম্পর্কিত চিন্তাধারা ও মতবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমৃদ্ধির জন্য ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদর্শ জনক। সরদার ফজলুল করিমের মতে, “জীবন ও জগতের এমন কোনো দিক ছিল না যে দিকে এরিস্টটল তার গবেষণার দৃষ্টিকে প্রসারিত করেননি।”
০৩] এরিস্টটলের আলোচনা পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, এরিস্টটলের আলোচনা পদ্ধতি সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রখ্যাত দার্শনিক ও রাষ্ট্র দর্শনের জনক এরিস্টটল ছিলেন প্লেটোর শিষ্য। এরিস্টটল প্লেটোর নিকট দীর্ঘকাল যাবৎ শিক্ষালাভ করেন। এরিস্টটল প্লেটোর ভাবাদর্শে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু অনেক বিষয়ে তিনি স্বীয় গুরু প্লেটোর মতামত থেকে ভিন্নমত পোষণ করতেন। যেমন- প্লেটোর আলোচনা পদ্ধতির চেয়ে তার শিষ্য এরিস্টটলের আলোচনা পদ্ধতি ভিন্ন।
এরিস্টটলের আলোচনা পদ্ধতি : এরিস্টটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক, প্রতিটি বিষয় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিশ্লেষণ করার জন্য তার বিশেষ ঝোঁক ছিল। এরিস্টটলের আলোচনা পদ্ধতি ছিল পর্যবেক্ষণমূলক। তিনি তার গুরু প্লেটোর পদ্ধতি অনুসরণ না করে গবেষণামূলক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমস্ত জিনিস পরীক্ষা করে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন।
একে পণ্ডিতেরা আরোহ পদ্ধতি (Inductive Method বলেন। এ পদ্ধতির মূলকথা হলো প্রকল্প বা অনুমান গ্রহণ করা এবং পরে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের তথ্যসংগ্রহ করা। তিনি বিভিন্ন বিষয় আলোচনার জন্য এ পদ্ধতি গ্রহণ করতেন এবং শেষ পর্যায়ে তথ্যাদির শ্রেণিবিন্যাসের পর সিদ্ধান্ত নিতেন।
এরিস্টটলের ”The Politics’ গ্রন্থটি পড়লেই আরোহ পদ্ধতির প্রতি তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কোনো তথ্য বা সিদ্ধান্তকে পরীক্ষা না করে তিনি গ্রহণ করতেন না। বাস্তব ঘটনা বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। তার এ আরোহ পদ্ধতিকে বিভিন্ন সমালোচকগণ বৈজ্ঞানিক বলে অভিহিত করেছেন।
আরোহ পদ্ধতির ভালো দিকে পরিচয় পাওয়া যায় অতীতের ও সমকালীন রাষ্ট্রনীতির ও শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক ও খুটিনাটি বিশ্লেষণের মধ্যে। তিনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ করেন। জানা যায়, এরিস্টটল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পলিটিক্স’ রচনার সময় প্রায় শতাধিক নগররাষ্ট্রের সংবিধান সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।
তিনি বলেছেন, “পর্যবেক্ষণই আমাদিগকে সর্বপ্রথম জ্ঞান দান করে।” তাই রাজনৈতিক সমস্যা অনুধাবনের জন্য তিনি তুলনামূলক পঠনপাঠনের রীতি প্রচলিত করেন। তিনি উপলব্ধি করেন বিভিন্ন রাষ্ট্র অতীতে যে রূপ বা আকারে ছিল, তার জ্ঞান ছাড়া সেসব রাষ্ট্রের পরিণতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া অসম্ভব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটলের পদ্ধতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলিকে ব্যবহার করে ‘সাধারণ নীতি’ (Generalization) আবিষ্কার করা। এ নীতির প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পলিটিক্স’-এর মাধ্যমে। এরিস্টটল সবসময় তার গুরু প্লেটোর পদ্ধতির ঘোর বিরোধী ছিলেন।
০৪. এরিস্টটল বর্ণিত সম্ভাব্য সর্বোত্তম সরকার বা রাষ্ট্র আলোচনা কর ।
অথবা, এরিস্টটলের সর্বোত্তম রাষ্ট্রের ধারণা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : এরিস্টটল রাষ্ট্র ও সংবিধানের তুলনামূলক আলোচনার পাশাপাশি সর্বোত্তম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্র সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ মতামত উপস্থাপন করেছেন। তার সর্বাপেক্ষা বাস্তবসম্মত রাষ্ট্র হচ্ছে ‘পলিটি’।
তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ”The Politics’ এ যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সর্বাপেক্ষা বাস্তবধর্মী রাষ্ট্র। বাস্তবসম্মত ধারণা প্রদানের জন্য এরিস্টটল বাস্তববাদী দার্শনিক হিসেবে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
এরিস্টটল বর্ণিত সম্ভাব্য সর্বোত্তম সরকার বা রাষ্ট্র : এরিস্টটল তার ”The Politics’ এর তৃতীয় পুস্তকে মধ্যপন্থি গণতন্ত্রের উল্লেখ করেন। কোন বাস্তব ব্যবস্থায় কী ধরনের শাসনব্যবস্থা কার্যকর হবে তা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেছেন, যেকোনো শাসনব্যবস্থার সাফল্য তার বাস্তব ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বাস্তবভিত্তিক এবং যার মাধ্যমে অধিকাংশ জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত ও কার্যকর করা সম্ভব তাকেই এরিস্টটল সর্বাপেক্ষা বাস্তবসম্মত রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন ।
এরিস্টটল রাষ্ট্র ও সংবিধানের তুলনামূলক আলোচনার পাশাপাশি সর্বোত্তম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্র সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ মতামত উপস্থাপন করেছেন । মিশ্র সংবিধান নীতির ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্রই এরিস্টটলের সর্বোত্তম বাস্তবসম্মত রাষ্ট্র। মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রকে বাস্তবধর্মী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন। তার মতানুসারে, সর্বাপেক্ষা বাস্তবধর্মী রাষ্ট্র হচ্ছে ‘পলিটি’ ।
পলিটি বা মধ্যতন্ত্র : সাধারণ অর্থে জনসাধারণের জন্য জনসাধারণের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থাকেই সাধারণ ভাষায় ‘পলিটি’ বা মধ্যতন্ত্র বলে। বিশেষ অর্থে ‘পলিটি’ বলতে সেই ধরনের রাষ্ট্রনীতির কথা বুঝানো হয়েছে, যেখানে চরম ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের গুণাবলির মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। র পলিটিতে মিশ্র সংবিধান নীতি প্রযোজ্য হয়।
এরিস্টটলের মতে, সর্বোত্তম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো এখানে গণতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রের বিভিন্ন গুণকে ন্যায্যভাবে সন্নিবেশিত করে একটি মিশ্র সংবিধান গ্রহণ করা যায়।
যে সামাজিক সংগঠনের ওপর এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত তা হলো বিরাট এক মধ্যবিত্ত শ্রেণি যা অত্যন্ত ধনীও নয় আবার অত্যধিক দরিদ্রও নয়। এরূপ একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি যেখানে রয়েছে সেখানে তারা রাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় ভিত্তি গড়ে ওঠে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটলের সর্বোত্তম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রের ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় এরিস্টটল যে মিশ্র সংবিধানের ধারণা দিয়েছেন, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ ভিত্তি বলে গ্রহণ করা সম্ভব। এখানে উল্লেখ্য যে, এরিস্টটলের মিশ্র শাসনব্যবস্থার ধারণা জন্ম হয়েছে প্লেটোর আইন বিষয়ক গ্রন্থ থেকে ।
অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
০৫. পলিটি কী?
অথবা, এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্র বা পলিটি তত্ত্বটি সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : বাস্তববাদী দার্শনিক নামে পরিচিত এরিস্টটল ম্যাসিডনের উপকূলবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের ১৫৮টি দেশের সংবিধান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছিলেন । যেকোনো ব্যাপারে তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বন করার পক্ষপাতি ছিলেন । আর সে জন্য শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য মধ্যপন্থা বা ‘চড়ষরঃু’ এর প্রতি সমর্থন দিয়েছেন।
পলিটি : ‘পলিটি’ বা মধ্যতন্ত্র বলতে বুঝায় সমাজের সাধারণ স্বার্থে সাধারণ নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। চরম প্রকৃতির ধার্মিকতন্ত্রকে যদি কতিপয় বিত্তবানের শাসন বলে ধরা যায় আর চরম প্রকৃতির নবতন্ত্রকে যদি দরিদ্র জনসাধারণের শাসন বলে ধরা যায় তাহলে পলিটিকে বলতে হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থা।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা খুব ধনীও না আবার খুব গরিবও না। তাদের সম্পদের পরিমাণ মাঝারি । তাই এ শ্রেণির শাসনব্যবস্থাই পলিটি বা মধ্যতন্ত্র বলে পরিচিত।
এরিস্টটল তার ”The Politics’ ‘ গ্রন্থে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে পলিটি বা মধ্যতন্ত্র সর্বাপেক্ষা বাস্তববাদী ও উত্তম সরকার ব্যবস্থা । এরিস্টলের মতে, “মধ্যতন্ত্র এমন এক ধরনের বাস্তবভিত্তিক রাষ্ট্র যা ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উগ্রতাকে বাদ দিয়ে উভয়ের সংমিশ্রণে এক নতুন শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে।
আর আধুনিক – রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক সেবাইন পলিটিকে এমন এক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেছেন যেখানে, “শুধু ধনীরা নয় কিংবা এককভাবে শুধু দরিদ্ররা নয় বরং ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপাদানসমূহের সুসমন্বিত অংশের প্রাধান্য বিরাজ করে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় পলিটি বা মধ্যতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। এ ব্যবস্থায় ধনীগরিব এর মাঝামাঝি এক শ্রেণি অর্থাৎ মধ্যবিত্তের হাতে শাসনব্যবস্থা অর্পণের পক্ষে এরিস্টটল তার সুচিন্তিত মতবাদ ব্যক্ত করেন।
০৬. মধ্যতন্ত্রকে সর্বোত্তম সরকার কারণসমূহ কী কী?
অথবা, এরিস্টটলের মতে পলিটি কেন সর্বোৎকৃষ্ট রাষ্ট্র?
উত্তর : ভূমিকা : বাস্তববাদী দার্শনিক হিসেবে খ্যাত এরিস্টটল ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসিডনের উপকূলবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বের ১৫৮টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। তার মধ্যে মধ্যতন্ত্র বা পলিটি অন্যতম। শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মধ্যতন্ত্রকে সর্বোত্তম সরকার বলার কারণসমূহ : এরিস্টটল সরকারের শ্রেণিবিভাগ করে তাদের মধ্যে মধ্যতন্ত্রকে সর্বোত্তম সরকার ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন। তিনি তার উক্তির পিছনে যেসব যুক্তি দেখিয়েছেন তা নিম্নরূপ :
১. মধ্যবিত্তের শাসন : রাষ্ট্রের ধনিকশ্রেণি স্বেচ্ছাচারী আর দরিদ্র শ্রেণি অনেক নিচু মনের হয়। তাই এরিস্টটল মধ্যবিত্তকে বেছে নিয়েছেন রাষ্ট্রব্যবস্থা শাসনের জন্য। আর তাই এই শাসনকে সর্বোত্তম সরকার বলে অভিহিত করেছেন।
২. সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার : একটি রাষ্ট্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যাই বেশি থাকে। এরিস্টটল বলেন সংখ্যার মধ্যে আমরা নিরাপত্তা লক্ষ করি। যেহেতু মধ্যবিত্ত শ্রেণিই সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই এ শ্রেণির শাসনব্যবস্থাই সর্বোত্তম সরকার ব্যবস্থা।
৩. দক্ষতা: ধনিক শ্রেণির মানুসের মধ্যে উগ্র স্বভাব এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে নিচু মনোভাব বিরাজ করে। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিক দক্ষতার পরিচয় দেয়। আর সে জন্য এরিস্টটল মধ্যতন্ত্রকে সেেবচয় উত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
৪. বিপ্লব নিবারণ : ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র উভয়ই এক প্রকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে । তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থা এখানে বিপ্লব নিবারণে সহায়তা করে।
৫. মানবিক গুণাবলির বিকাশ : পলিটি এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এই ব্যবস্থায় ধনিকশ্রেণির শোষণ বা দরিদ্র শ্রেণির নিচু প্রবণতা নেই। তাই এটি একটি উত্তম সরকার ব্যবস্থা।
৬. রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষা : এরিস্টটল বলেন মধ্যতন্ত্র অবলম্বনকারী মধ্যবিত্ত সরকারই অধিকতর নিরাপদ এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য রক্ষিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যতন্ত্র সম্পর্কে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক থাকা সত্ত্বেও এর বাস্তবায়ন আজও কোথাও ঘটেনি। তাই সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন সমালোচক তার এ তত্ত্বের বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা করেছেন।
অধ্যাপক স্যাবাইনের (Sabine) ভাষায় “In short if not actually a middle class government, the state must be as like middle class government as it can, always of course allowing for any special circumstances which may be decisive in a given case.”
০৭. দাসপ্রথা সম্পর্কে এরিস্টটলের অভিমত আলোচনা কর।
অথবা, এরিস্টটলের তত্ত্ব অনুযায়ী দাসের পরিচয় দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : সংসার, পারিবারিক ও সমাজ জীবন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এরিস্টটল যে বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তা হলো দাসপ্রথা। এরিস্টটল আইন ও নৈতিক দিক থেকে দাসপ্রথা সমর্থন করেছেন।
তৎকালীন সমাজে প্রভু যাতে তাদের রাষ্ট্রীয় কার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে সে উদ্দেশ্যে দাসদের নিয়োজিত করা হতো। এরিস্টটল তাই মনে করেন দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি ।
দাসপ্রথা সম্পর্কে এরিস্টটলের অভিমত : এরিস্টটল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ”The Politics’ ‘ এর প্রথম পুস্তকের ৫ম অধ্যায়ে দাসের পরিচয় ও প্রকৃতি আলোচনা করেছেন। এরিস্টটল মনে করেন, প্রাকৃতিকভাবেই কিছু সংখ্যক লোক প্রজ্ঞার অধিকারী এবং তারা আদেশ প্রদানে সক্ষম।
অপরদিকে, কিছু লোক কেবল দৈহিক বলে বলীয়ান এবং এ কারণে তারা কায়িক পরিশ্রমে সক্ষম। তাদের মধ্যে প্রজ্ঞার অভাব রয়েছে যে কারণে তারা আদেশ দিতে পারে না। তাই তারা প্রজ্ঞাবানদের আদেশ মান্য করতে বাধ্য। এখানে প্রথম শ্রেণির মানুষ হচ্ছেন প্রভু (Master) এবং দ্বিতীয় শ্রেণির লোকেরা দাস (Slave)।
তাই দাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এরিস্টটল বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদে পরিণত হতে পারে এবং নিজে বিচারবুদ্ধির অধিকারী না হয়েও অন্যের বিচারবুদ্ধিকে বুঝতে পারে সেই দাস।” তিনি আরও বলেন, “A slave is a living possession of his master and an instrument of action.
দাসের শ্রেণি বিভাগ : এরিস্টটল দাস শ্রেণিকে ২ ভাগে ভাগ করেছেন । যথা ১. প্রাকৃতিক দাস ও ২. আইনগত দাস ।
১. প্রাকৃতিক দাস : যেসব মানুষ জন্মগতভাবে দাসত্ববরণ করে তাদের প্রাকৃতিক দাস বলা হয়। প্রাচীন গ্রিসে প্রাকৃতিক দাসরা প্রভুদের একান্ত ভক্ত ছিল । তারা নির্দ্বিধায় সব আদেশ মেনে চলত ।
২. আইনগত দাস : আইনগত প্রথার কারণে যেসব ব্যক্তি দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতো তারাই আইনগত দাস। উদাহরণস্বরূপ যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক ব্যক্তিরা দাসত্ববরণ করতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দাস হলো এমন শ্রেণির মানুষ যাদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না। মানুষ হয়েও তারা মানবিক ও মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল। এরিস্টটল একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি হয়েও দাসপ্রথা হতে বের হতে পারেননি তবে একথাও সত্য যে, এরিস্টটল তার জীবদ্দশায় কয়েকজন দাসকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
০৮. দাসপ্রথার পক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিগুলো কী কী?
অথবা, দাসপ্রথার পক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিগুলো তুলে ধর।
উত্তর : ভূমিকা : এরিস্টটলের চিন্তাধারায় দাসপ্রথা এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কেবল আইনগত দিকই নয় নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তিনি দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন। তার দাসতত্ত্বে ঘোষণা করেন যে, দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি। আর এই দাসপ্রথা প্রতিষ্ঠার জন্য এর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।
দাসপ্রথার পক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিগুলো : এরিস্টটল যে দাসপ্রথার কথা বলেছেন তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তিনি তা প্রতিষ্ঠা করারও চেষ্টা করেছেন। দাসপ্রথার সমর্থন করতে গিয়ে এরিস্টটল নিম্নোক্ত যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন :
১. প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ : এরিস্টটলের মতে, সমাজে দুটি শ্রেণির লোকের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এক শ্রেণির লোক প্রজ্ঞার অধিকারী, তারা সমাজের লোকদের আদেশ প্রদানে সক্ষম অন্য শ্রেণির লোকেরা কেবল দৈহিক দিক হতে বলীয়ান এবং তারা প্রজ্ঞাবানদের আদেশ মেনে চলতে সক্ষম।
২. আইন ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ : প্রাচীন গ্রিসে ব্যাপক পরিসরে দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল সাধারণত যুদ্ধে পরাজিত সৈনদের বন্দি করে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এরিস্টটল যুদ্ধবন্দিদের দাস হিসেবে ব্যবহারে পক্ষপাতি ছিলেন ।
৩. রাষ্ট্রের কল্যাণার্থে : রাষ্ট্রের প্রকৃতি একটি স্বাভাবিক নিয়ম হলেও এরিস্টটলের মতে একে গড়ে নেওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্র গঠনে প্রজ্ঞার পাশাপাশি শ্রমেরও আবশ্যকতা রয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যই দাসপ্রথা অপরিহার্য ।
৪. রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সাধনে : এরিস্টটল মনে করেন দাসরা হলো রাষ্ট্রের জীবন্ত সম্পদ ও রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনের হাতিয়ার। তাই তিনি বলেন, “A slave is possession of his master and an instrument of action.”
৫. রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার প্রয়োজনে : এরিস্টটল বলেন রাষ্ট্রের সব ব্যক্তি যদি সমযোগ্যতা সম্পূর্ণ হয় তবে কেউ কারো কথা, যুক্তি, পরামর্শ গ্রহণ করবে না। যার ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তাই সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা আনার জন্য দাস ও প্রভু শ্রেণি থাকা আবশ্যক।
৬. কাজের সমন্বয়সাধনে : প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দাসদের প্রয়োজন। তারা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে প্রভুদের কাজ করে দিয়ে কাজের সমন্বয়সাধন করে ।
৭. বিনিময়ের মাধ্যম : কাগজের মুদ্রার মতোই প্রাচীন কালে স্বর্ণমুদ্রা ও দাসদের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে দেখিয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দাসপ্রথা সম্পর্কে এরিস্টটল তার সুচিন্তিত বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু মানুষকে দাস হিসেবে বিবেচনা করা মানে মানবজাতির অবমাননা। দাসপ্রথা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে বিপ্লবে রূপ নেয় । কাজেই এরিস্টটলের দাসতত্ত্ব আধুনিক সমাজে অপ্রচলিত ।
০৯. এরিস্টটল যেসব যুক্তিতে দাসপ্রথাকে সমর্থন করেন সেগুলো কি গ্রহণযোগ্য?
অথবা, এরিস্টটলের দাসপ্রথা কতটুকু যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এরিস্টটল এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তার বিখ্যাত গ্রন্থ “The Politics’ এ দাসপ্রথা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তৎকালীন সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে দাসদের নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন যার ফলাফলই হলো দাসতত্ত্ব। এখানে তিনি দাসপ্রথার পক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন।
এরিস্টটলের দাসপ্রথার গ্রহণযোগ্যতা : বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল তার রচিত “ঞযব চড়ষরঃরপং’ এর পঞ্চম পুস্তকে দাসের সংজ্ঞা, প্রকৃতি, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
দাস সম্পর্কে এরিস্টটল বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদে পরিণত হতে পারে এবং নিজে বিচারবুদ্ধির অধিকারী না হয়েও অন্যের বিচারবুদ্ধিকে বুঝতে পারে সেই দাস।”
তার মতে সমাজে ২টি শ্রেণি বিদ্যমান। এক শ্রেণির প্রজ্ঞা রয়েছে যার মাধ্যমে তারা আদেশ প্রদান করতে সক্ষম। আর অন্যদিকে আর এক শ্রেণির মানুষ যাদের দৈহিক বল আছে এবং জ্ঞানীদের কথামতো কাজ করে থাকে।
একশ্রেণি প্রভু এবং অপর শ্রেণি দাস নামে পরিচিত। দাসপ্রথার পক্ষে এরিস্টটল বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু তার দাসতত্ত্ব আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভাবার বিষয় নিম্নে তার বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা হলো-
- ১. সমাজে শ্রেণি বৈষম্য : এরিস্টটল সামাজিক মানুষকে প্রভু এবং দাস এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে সমাজে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন । তাই এটি কিছুতেই যুক্তিসংগত নয় ।
- ২. অবাস্তব ধারণা : একদল লোক শুধু মহৎ কাজ করবে আর অন্যদল তাদের দাসত্ব করবে এ ধারণা অবাস্তব।
- ৩. মানবতাবিরোধী : দাসপ্রথা ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে অন্তরায়। তাই এই প্রথা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য ।
- ৪. শোষণের হাতিয়ার : এরিস্টটল দাসের ওপর প্রভুদের প্রভুত্ব বিস্তারের যেসব দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তা মূলত শোষণেরই হাতিয়ার।
৫. গণতন্ত্র বিরোধী: গণতন্ত্র যেখানে মানুষের সমান অধিকারের কথা বলে সেখানে দাসপ্রথা মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয় যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক । তাই দাসপ্রথা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য নয়।
৬. যন্ত্রের সাথে তুলনা : প্রভুদের যেকোনো দরকারে দাসেরা সর্বদা প্রস্তুত থাকবে এবং প্রভুরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী দাসের ব্যবহার করবে বলে এরিস্টটল যে মতামত পেশ করেন তা দাসদের যন্ত্রে পরিণত করে। তাই এ প্রথা যুক্তিযুক্ত নয়।
৭. বিপ্লবের সম্ভাবনা : বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্ছনার শিকার হয়ে আসা দাসেরা হঠাৎই একত্রিত হয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে যা রাষ্ট্রের বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল মনে করেন, “নৈতিক জীবনকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে পরোক্ষ হলেও দাসদের ভূমিকা অপরিহার্য।” তবে উপরিউক্ত কারণে এরিস্টটলের দাসপ্রথাকে যুক্তিসংগত বলে মনে করা যায় না।
এরিস্টটল একজন বিজ্ঞবান দার্শনিক হয়েও দাসপ্রথা সমর্থন করেছিলেন যা মানবতাবিরোধী। তাই পরবর্তীতে তার দাসতত্ত্ব বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে।
১০ এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্বটি আলোচনা কর ।
অথবা, এরিস্টটল বিপ্লব বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন এথেন্সের নগররাষ্ট্রগুলোতে অস্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকার কারণে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল অশান্ত । মানুষ তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
বিপ্লব ছিল তখনকার দিনের অন্যতম সমস্যা আর এই সমস্যা সমাধানে এরিস্টটল তার বিপ্লব তত্ত্ব প্রদান করেন যেখানে তিনি রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘঠিত বিপ্লবের কারণ, নিবারণের উপায় প্রভৃতি বিষয় উপস্থাপন করেন।
বিপ্লব : সাধারণভাবে বলতে গেলে বিপ্লব হলো সংঘবদ্ধভাবে কোনো কিছুর পরিবর্তন সাধন করা। হঠাৎ একটি স্থির পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলা। কিন্তু এরিস্টটল বিপ্লব শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। এরিস্টটল বলেন, “চলমান ব্যবস্থার অথবা শাসনতন্ত্রের যেকোনো পরিবর্তনই বিপ্লব।”
এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্ব : আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এথেন্সের ছোট ছোট City State গুলো দ্বন্দ্ব কলহে লিপ্ত থাকায় অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি বিরাজমান ছিল। এরিস্টটল এ অবস্থার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং একটি স্থিতিশীল
ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রায় ১৫৮টি দেশের শাসনতন্ত্র পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বিপ্লব সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তার এই মতবাদই বিপ্লব তত্ত্ব নামে পরিচিত। এরিস্টটল বিপ্লব শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন।
এরিস্টটল বলেন, চলমান অবস্থা বা সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন সাধনই বিপ্লব। তিনি যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বিপ্লবের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। গণতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের যেকোনো পরিবর্তন,
সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন বা সংশোধন এবং এক শাসক অন্য শাসককে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদিকে বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন। সব প্রকার বিপ্লবের সম্পর্কে এরিস্টটল বলেন, “Craving for equality is the cause of revolution.” অর্থাৎ সব প্রকার বিপ্লবের মূলেই রয়েছে ক্ষমতার লড়াই।
এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্বটি ২ ভাগে বিভক্ত যথা :
১ম অংশ : প্রথম অংশটি গণতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, রাজতন্ত্র ও স্বৈরাচারতন্ত্রের শাসকদের ক্ষমতায় টিকে থাকার বাস্তব এবং ব্যবহারিক নির্দেশিকা। যার ফলে বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য বুঝা যায় এবং কোনো প্রকার বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকলে তা সমাধানের পথ খুঁজে দেয়।
২য় অংশ : দ্বিতীয় অংশটি ভালো ও স্থিতিশীল সরকারগুলোর দার্শনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি প্রবন্ধ। এখানে কোন সরকার ব্যবস্থায় বিপ্লবের সম্ভাবনা আছে এবং কোনগুলোতে নেই তা ব্যাখ্যা করে ।
বিপ্লব তত্ত্বের কার্যকারিতা : এরিস্টটল তার বিপ্লব তত্ত্বের মধ্যে বিপ্লবের কারণ বিশ্লেষণ ও তা নিবারণের পন্থা নির্দেশ করতে গিয়ে যেসব মতামত ব্যক্ত করেছেন সেগুলো তৎকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রের অবস্থার প্রেক্ষিতে করা হলেও এর উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিপ্লব যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই ক্ষতিকর। কারণ বিপ্লব রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোতে আঘাত হানে, ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তাই এখান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরিস্টটল তার বিপ্লব তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এরিস্টটল তার ”The Politics’ এর প্রথম পুস্তকে বিপ্লবের প্রকৃতি ও কারণসমূহ এবং ষষ্ঠ পুস্তকে বিপ্লব প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)