৮ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের উত্তর ২০২৪ | Class 8 Islam Shikkha | সমাধান : অষ্টম শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা এর অধ্যায়টি হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সমাধানগুলো গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ধরন ৪ কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের উত্তর।
প্রশ্ন ১। আল আসমাউল হুসনা বলতে কী বোঝ? এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : আল-আসমাউল হুসনা শব্দদ্বয়ের অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নামসমূহকে একত্রে আসমাউল হুসনা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলার বহু গুণবাচক নামের উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদিসে আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নামের কথা বলা হয়েছে ।
আল-আসমাউল হুসনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ নামগুলো আল্লাহ তা’আলার পরিচয় ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটায় এর মাধ্যমে আমার মহান আল্লাহর গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যসমূ জানতে পারি ।
ফলে আল্লাহর বিধিবিধান মানা ও আদেশ-নিষে পালন করা সম্ভব হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাকে সে সকল নাম দ্বারাই ডাকো । যারা তার নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো। অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হবে।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত : ১৮০)
প্রশ্ন ২। রিসালাত কী? দুনিয়াতে আগমনকারী নবি-রাসুলের মর্যাদা ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : রিসালাত শব্দের অর্থ সংবাদ বহন, খবর বা চিঠি । ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তা’আলার বাণী, আদেশ-নিষেধ মানুষের নিকট পৌছানোর দায়িত্বকে রিসালাত বলা হয়।
নবি রাসুলগণ রিসালাতের মাধ্যমে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট প্রচার করতেন। দুনিয়াতে আল্লাহর প্রেরিত নবি-রাসুলগণ ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী । নবি-রাসুলদের প্রত্যেকজনকে আল্লাহ তা’আলা বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানদান করেছেন।
তিনি হযরত ইবরাহিম (আ.)-কে ‘খলিল’ বা বন্ধু, হযরত সুলাইমান (আ.) ও হযরত দাউদ (আ.)-কে নবুয়ত ও বাদশাহী এবং হযরত আইয়ুব (আ.)-কে ধৈর্যের মূর্ত. প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এছাড়া তিনি হযরত মুসা (আ.)-কে তুর পাহাড়ে তার সাথে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং পবিত্র মিরাজের রাতে মহানবি (সা.)-কে নিজের দিদার দান করে সম্মানিত করেছিলেন।
প্রশ্ন ৩। কেন নবি-রাসুল প্রেরণ করা হয়েছিল?
উত্তর : নবি-রাসুল যেসব কারণে প্রেরণ করা হয়েছিল- মহান আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ।
- আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য ।
- মানুষকে সরল সঠিক পথ দেখানোর জন্য।
- পরকাল সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য ।
- মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য ।
- আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলার প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ভ্রান্ত পথ ও মতকে দূর করে সত্য দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নবি-রাসুলগণকে প্রেরণ করা হয়েছে ।
প্রশ্ন ৪। নবি-রাসুলগণের গুণাবলি কী ছিল? দুনিয়াতে নবি- রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নবি-রাসুলগণ মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক মনোনীত এবং আল্লাহ তাদের সবধরনের চারিত্রিক ও মানবিক দোষত্রুটি থেকে রক্ষা করেন।
তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন মিষ্টভাষী, বিনয়ী, ধৈর্যশীল এবং সর্বদা আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই তারা ছিলেন আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা সোয়াদ, আয়াত : ৪৭)
মহান আল্লাহ দুনিয়াতে তার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা, মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়া, পরোপকার সম্পর্কে জানানো, বান্দার সাথে সম্পর্ক তৈরি করা, তার বিধিবিধান মেনে চলা ও সত্য দীনের প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে । এ আসার জন্য দুনিয়াতে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছিলেন। টায় ।
এদের মধ্যে দুনিয়াতে আগমনকারী সর্বপ্রথম নবি হলেন হযরত সমূহ আদম (আ.) এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। দুনিয়াতে আগমনকারী নবি-রাসুলের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বাণী প্রচার ও তাঁর বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করা ।
প্রশ্ন ৫। পৃথিবীতে আগমনকারী নবি-রাসুলের সংখ্যা কত ছিল? এদের মু’জিযা ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : মানবজাতিকে হেদায়েত দান ও সঠিক পথপ্রদর্শনের লক্ষ্যে আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তবে কুরআনে মাত্র ২৫ জন রাসুলের কথা উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে নবি-রাসুলের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ চব্বিশ হাজার। এর মধ্যে তিনশত তেরো জন অপর বর্ণনা মতে তিন শত পনেরো জন হলেন রাসুল ।
আল্লাহ তা’আলা নবি-রাসুলগণের নবুওয়াতের পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে অলৌকিক নিদর্শন বা মুজিযা দান করেছেন। নবি-রাসুলগণের এসব মুজিযার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠি সাপে পরিণত হওয়া।
হযরত ঈসা (আ.) ‘কুম বিইযনিল্লাহ’ (আল্লাহর হুকুমে দাঁড়িয়ে যাও) বললে মৃত মানুষ জীবিত হওয়া এবং অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি লাভ করা। আর মহানবি (সা.)-এর সবচেয়ে বড়ো মুজিযা হলো আল-কুরআন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত ও বিদ্যমান থাকবে ।
প্রশ্ন ৬। ফেরেশতা কারা? প্রসিদ্ধ ফেরেশতা হযরত ইসরাফিল (আ.)-এর কাজ বর্ণনা কর।
উত্তর : ফেরেশতাগণ নূরের তৈরি। আল্লাহ তা’আলা তাদের বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারা সদাসর্বদা আল্লাহ তা’আলার জিকির ও তাসবীহ পাঠে রত। তারা আল্লাহ তা’আলার আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। হযরত ইসরাফিল (আ.) হলেন চারজন প্রসিদ্ধ ফেরেশতাদের একজন ।
তিনি শিঙ্গা হাতে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন । মহান আল্লাহ নির্দেশ দিলে তিনি শিঙ্গাতে প্রথম ফুঁক দিবেন। তখন কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে এবং সৃষ্টিজগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার তিনি শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দিলে সবকিছু জীবন ফিরে পাবে ।
প্রশ্ন ৭। খাতামুন নাবিয়্যিন কে? খতমে নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের দলিলটি তুলে ধর।
উত্তর : হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা নবিগণের শেষ জন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি মহানবি (সা.)-কে খাতামুন নাবিয়্যিন বা শেষ নবি বলে অভিহিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি তো আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবি।” (সূরা আল-আযহাব, আয়াত : ৪০) প্রশ্ন ৮। খতমে নবুওয়াত প্রমাণে কয়েকটি হাদিসের দলিল ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : খতমে নবুওয়াত প্রমাণে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন— মহানবি (সা.) বলেন, “আমিই শেষ নবি। আমার পরে আর কোনো নবি নেই।” (তিরমিযি)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “রিসালাত ও নবুওয়াতের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার পর আর কোনো নবি ও রাসুল আসবে না।” (তিরমিযি)
অন্য একটি হাদিসে মহানবি (সা.) উপমার মাধ্যমে খতমে নবুওয়াত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণের দৃষ্টান্ত হলো এমন যে, এক লোক একটি দালান নির্মাণ করল। খুব সুন্দর ও লোভনীয় করে তা সজ্জিত করল। কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান ফাকা ছিল।
লোকজন দালানটির চারদিকে ঘুরে এর সৌন্দর্য দেখছিল আর বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল এ কোণে একটি ইট রাখা হয়নি কেন? বস্তুত আমিই সে ইট এবং আমিই শেষ নবি।” (বুখারি)।
প্রশ্ন ৯। আখেরি যামানায় হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মাহদি (আ.)-এর আগমন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : আখেরি যামানায় হযরত ঈসা (আ.) এবং ইমাম মাহদি (আ.)-এর দুনিয়াতে আগমন সম্পর্কে বিশ্বাস ইসলামি আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কেননা কিয়ামতের ১০টি বড়ো আলামতের মধ্যে অন্যতম হলো ঈসা (আ.) ও ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমন। তারা আমাদের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী হিসেবে দুনিয়াতে আসবেন ।
কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে যখন নির্যাতন, যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্নীতি, হিংসা, হানাহানি বেড়ে যাবে তখন মানুষকে এসব থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইমাম মাহদি দুনিয়াতে আসবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে বছর রমযান মাসের প্রথমদিকে সূর্যগ্রহণ এবং রমযান মাসের শেষের দিকে চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদি’র আবির্ভাব ঘটবে।
আর দাজ্জাল ও তার বাহিনীকে শেষ করার জন্য হযরত ঈসা (আ.) দুজন ফেরেশতার কাঁধে ভর করে দামেস্কের একটি মসজিদে অবতরণ করবেন । মূলত তিনি উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে দুনিয়াতে আসবেন ।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হন। নিয়মিত শিক্ষামূলক ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে।
প্রশ্ন ১০। আখিরাত কাকে বলে? আখিরাতের অন্যতম পর্যায় কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তর : ইসলামি পরিভাষায় মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তাকে আখিরাত বলে ।
কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়। পৃথিবীতে এমন একসময় আসবে যখন মানুষ আল্লাহ তা’আলাকে ভুলে যাবে। দুনিয়াতে আল্লাহ বলার মতো আর কোনো লোক থাকবে না। সে সময় আল্লাহ পাক দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন ।
তার নির্দেশে হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক দিবেন। ফলে কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। আর আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত দুনিয়ার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রশ্ন ১১। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা কী?
প্রশ্ন ১১। পুনরুত্থান সম্পর্কে কী জান লেখ ৷
উত্তর : আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ইমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আখিরাত বা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন না করলে মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য ইমানের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আখিরাত বা পরকালের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পুনরুত্থান অর্থ পুনরায় উত্থান অর্থাৎ কবর হতে মৃতের উত্থান। মৃত্যুর পর সকল মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
অর্থাৎ দুনিয়ায় হযরত আদম (আ.) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ . আসবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা পুনরায় জীবিত করবেন। একেই বলা হয় পুনরুত্থান ।
এজন্য মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন লাভ তথা পুনরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অন্যতম পুনরায়। হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেবার পর পুনরুত্থান ও হাশর বা মহাসম্মিলন অনুষ্ঠিত হবে। আল কুরআনে এ দিকটিকে ইয়াওমুল বাছ’ বা পুনরুত্থান দিবস বা হিসাব গ্রহণের দিবস বা প্রতিদান দিবস ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১২। হাশর বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : হাশর শব্দের অর্থ একত্রিত হওয়া। কিয়ামতের পর মহান আল্লাহর হুকুমে হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুঁ দিলে সকল মানুষ জীবিত হবে। এসময় একজন ফেরেশতা সবাইকে আহ্বান করবেন। ফলে সকলে একটি বিশাল ময়দানে সমবেত হবে। একে বলা হয় হাশর।
আল্লাহ তা’আলা এখানে সকলের পাপপুণ্যের হিসাব নেবেন। সকল মানুষকে সে সময় আল্লাহ তা আলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এদিন আল্লাহই হবেন একমাত্র বিচারক। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দান করবেন এবং পাপীদের মন্দ কাজের শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম দান করবেন।
প্রশ্ন ১৩। তাকদির বলতে কী বোঝ? এর প্রকারভেদসমূহের বর্ণনা দাও।
উত্তর : তাকদির আরবি শব্দ। এর অর্থ নিয়তি, ভাগ্য, নির্ধারণ করা, নির্দিষ্ট করা ইত্যাদি। সৃষ্টিজগতের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহ তা’আলা। এ মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে তা সবই হয় আল্লাহর নির্ধারিত হুকুমে। এই নির্ধারিত হুকুমকে তাকদির বলা হয় ।
এজন্য দুনিয়াতে ভালো কিছু লাভ করলে আনন্দে আত্মহারা হওয়া যাবে না। বরং এটি আল্লাহরই দান। তাই আল্লাহ তা’আলার শুকুর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে।
তাকদির ২ প্রকার। যথা-
১. তাকদিরে মুবরাম বা অপরিবর্তনীয় তাকদির এবং ২. তাকদিরে মুআল্লাক বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির। তাকদিরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তিত হয় না কিন্তু তাকদিরে মুআল্লাক বান্দার নেক আমল, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “দোয়া ভাগ্যকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে । (তিরমিযি)
প্রশ্ন ১৪। শাফাআত বলতে কী বোঝ? এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শাফাআত আরবি শব্দ। এর অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা, মধ্যস্থতা করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় শেষ বিচারের দিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন ক্ষমা ও কল্যাণ লাভের জন্য মহান আল্লাহর কাছে নবি-রাসুলগণ, ফেরেশতাগণ ও পুণ্যবান বান্দাগণ কর্তৃক সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে ।
শাফাআতে তাৎপর্য হলো- কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা) মানুষের সব কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন।
এ সম পুণ্যবানগণ জান্নাত লাভ ও পাপীরা জাহান্নাম ভোগ করবে নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এসময় আল্লাহর দরবা শাফাআত করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হে এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনু দেওয়া হবে। আর পুণ্যবানদের জন্য শাফাআত করার ক – জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ।
প্রশ্ন ১৫। কুরআন ও হাদিসের আলোকে শাফাআত সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর : পবিত্র কুরআনে শাফাআত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, “যে পরম দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত অন্য কারও সুপারিশ করবার ক্ষমতা থাকবে না।” (সূরা মারইয়াম, আয়াত : ৮৭)
মহানবির হাদিসেও শাফাআতের কথা এসেছে। তিনি বলেছেন, “পৃথিবীতে যত ইট-পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি মানুষের জন্য কিয়ামতের দিন শাফাআত করবো।”
(মুসনাদে আহমদ) পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণীর আলোকে বলা যায়, কিয়ামতের দিন চরম ভয়াবহ মুহূর্তে নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফিযে কুরআন ও পুণ্যবান বান্দাগণ মহান আল্লাহর দরবারে শাফাআত করার অনুমতি লাভ করবেন । মহান আল্লাহ এসব শাফাআত কবুল করবেন এবং অসংখ্য মানুষকে জান্নাত দান করবেন।
প্রশ্ন ১৬। শাফাআত-এর কয়েকটি পর্যায় বর্ণনা কর।
উত্তর : শাফাআত সম্পর্কিত হাদিসসমূহে শাফাআত-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পর্যায় নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে মানুষ অসহনীয় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। এ সময় তারা আল্লাহর নিকট শাফাআত করার জন্য পর্যায়ক্রমে হযরত আদম (আ.), হযরত নুহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর কাছে অনুরোধ করবে।
কিন্তু তারা রাজি না হওয়ায় সবশেষে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে আসবে। মহানবি (সা.) তখন সৃষ্টিজগতের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শাফাআত করবেন। তাঁর এ শাফাআত কবুল করা হবে। একে বলা হয় শাফাআতে কুবরা ।
হিসাব-নিকাশের পর যেসব মুমিন জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হবে, রাসুল (সা.) তাদের জন্য শাফাআত করবেন। তার জন্যই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে ।
৩. যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তিদানের জন্য মহানবি (সা.) শাফাআত করবেন ।
৪. কিয়ামতের দিন আল কুরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য
এবং সিয়াম সাওম পালনকারীদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শাফাআত করবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে ।
আরো দেখুন
বরিশাল ইতিহাস ঐতিহ্য
বরিশাল ইতিহাস ঐতিহ্য ।। বরিশাল বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। এর ইতিহাস ও সংস্কৃতি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ। বরিশালকে বলা...
ফ্রী শিক্ষামূলক ভিডিও মেকার,শিক্ষামূলক ভিডিও কিভাবে করা যায়
ফ্রী শিক্ষামূলক ভিডিও মেকার,শিক্ষামূলক ভিডিও কিভাবে করা যায়।। শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করতে কিছু ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন। এখানে কিছু ধাপ...
দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে চাইলে যেসব কাজ গুলো করা জরুরী
প্রতিটি মানুষের সকল মন্ত্রের মূল চাবিকাঠী স্বাস্থ্য! স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মন ভালো থাকে, কাজের অগ্রগতিও ভাড়ে, স্বাস্থ্য ভালো আপনার সব...
শান্তিগঞ্জের বগুলারকাড়া গ্রামের স্কুল মাঠে কাবাডি খেলা
শান্তিগঞ্জের বগুলারকাড়া গ্রামের স্কুল মাঠে কাবাডি খেলা।। সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। গ্রামবাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্য বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি(হা ডু ডু) খেলার ঐতিহ্য...
প্রশ্ন ১৭। শিরক বলতে কী বোঝায়? এর প্রকারভেদ লেখ।
উত্তর : শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা, সমকক্ষ মনে করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তা’আলার সাথে অন্য কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করাকে শিরক বলে। অপর কোনো কিছুকে আল্লাহ তা’আলার সমতুল্য বা সমকক্ষ মনে করাও শিরক । যে ব্যক্তি শিরক করে, তাকে বলা হয় মুশরিক ।
শিরক প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-
- ক. আল্লাহ তা’আলার সত্তার সাথে শিরক করা। যেমন— আল্লাহ তা’আলার পিতা, পুত্র কিংবা স্ত্রী আছে, এরূপ বিশ্বাস করা ।
- খ. আল্লাহ তা’আলার গুণাবলিতে অংশীদার সাব্যস্ত করা। যেমন— সৃষ্টিকর্তা একজন না মেনে একাধিক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা ।
- গ. আল্লাহ তা’আলার ইবাদতে শিরক করা। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদাত না করে অন্য কারো ইবাদাত করা। যেমন. অগ্নি ও মূর্তিপূজা করা ।
প্রশ্ন ১৮। শিরকের পরিণাম ও প্রতিকার ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ শিরক। এর পরিণাম ভয়াবহ । পৃথিবীতে যত প্রকার যুলুম আছে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো পাপ বা যুলুম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই শিরক করা যুলুম।” (সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩) সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত।
আল্লাহ তা’আলা সবকিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই মুশরিকরা শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তা’আলা খুবই অসন্তুষ্টি হন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হওয়া সত্ত্বেও শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
এজন্য কুরআন ও হাদিসে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সকলের উচিত শিরক থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক থাকা। আর কোনোভাবে শিরক হয়ে গেলে পুনরায় বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করে ইমানের দিকে ফিরে আসতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পাপ না করার অঙ্গীকার করতে হবে।
৮ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের উত্তর ২০২৪ | Class 8 Islam Shikkha
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।