হাদীস শরীফ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান।। সুন্নি ইসলামের পণ্ডিতদের মধ্যে হাদিস শব্দটি শুধুমাত্র মুহাম্মদের কথা, উপদেশ, অনুশীলন ইত্যাদিই নয়; এটি তাঁর সাহাবীদের কথা, উপদেশ ও অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত করে। শিয়া ইসলামে হাদিস হলো, সুন্নাহের মূর্ত প্রতীক, যা মুহাম্মাদ সা. ও তার পরিবার আহল আল-বাইতের (বারো ইমাম ও মুহাম্মদের সা. কন্যা ফাতিমা) কথা, কাজ ও অনুশীলন।
ইসলাম কি! ইসলাম সম্পর্কে কেনো এতো পৃথিবীর মানুষের মাঝে জানার আগ্রহ। আবার কিছু ইহুদিবাদী আছে, যারা মুসলিমদের শেষ করে তাদের নিজেদের আধিপ্ত বিস্তার করতে কেনো চাচ্ছেন, এমন হাজারো প্রশ্ন সবার মাঝে। তবে শান্তির ধর্ম ইসলাম ।
কিন্তু পাশ্চাত্য মিডিয়ার নানা রকম অপপ্রচারের কারণে বিশ্বজুড়ে ইসলাম সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি তারা।
সেই কারণে ইসলামের নানা মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রশ্নোত্তর আকারে আমাদের এই নতুন বিভাগ। এবারের বিষয় মানবজাতির মুক্তির দিশারি বিশ্ব নবী “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
ইসলামিক সাধারণ জ্ঞান বিষয়: হাদীস শরীফ
২০১.প্রশ্নঃ হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীস বলে।
২০২. প্রশ্নঃ হাদীস কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ হাদীস দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীস ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীস।
২০৩. প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীস কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ মাকবূল হাদীস দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।
২০৪. প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীস কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।
২০৫. প্রশ্নঃ সহীহ হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীসটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২০৬. প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।
২০৭. প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ হাদীসের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীস বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বলা হয়)
২০৮ প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীতে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি।
২০৯. প্রশ্নঃ সহীহ মুসলিমে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৩০৩৩টি।
২১০. প্রশ্নঃ সুনানে তিরমিযীতে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৩৯৫৬টি।
২১১. প্রশ্নঃ সুনানে আবু দাউদে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৫২৭৪টি।
২১২. প্রশ্নঃ সুনানে নাসাঈতে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৫৭৫৮টি।
২১৩. প্রশ্নঃ সুনানে ইবনে মাজাহতে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ৪৩৪১টি।
২১৪. প্রশ্নঃ হাদীস গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীস সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে।
২১৫. প্রশ্নঃ মুসনাদে আহমাদে কতটি হাদীস রয়েছে?
উত্তরঃ ২৭৭৪৬টি।
২১৬. প্রশ্নঃ ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ছাড়া আরো ৫টি হাদীস গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্ত্বা মালেক, দারাকুত্বনী, সুনানে দারেমী, সুনানে বায়হাক্বী।
২১৭. প্রশ্নঃ রিয়াযুস্ সালেহীন কিতাবটির লিখক কে?
উত্তরঃ ইমাম নভবী।
২১৮. প্রশ্নঃ জাল হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ যে কথাটি মানুষে তৈরী করেছে, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাকে জাল হাদীস বলে।
২১৯. প্রশ্নঃ আল্লাহর কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধতম গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী।
২২০. প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীর একটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম কি?
উত্তরঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রণীত ফাতহুল বারী।
২২১. প্রশ্নঃ কোন দুটি হাদীস গ্রন্থকে সহীহায়ন বলা হয়?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
২২২. প্রশ্নঃ মুত্তাফাকুন আলাইহে বলতে কি বুঝানো হয়?
উত্তরঃ যে হাদীসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীস সম্পর্কে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহে।
হাদীস শরীফ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান
২২৩. প্রশ্নঃ সুনানে তিরমিযীর একটি প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ তুহফাতুল আহওয়াযী। লেখকঃ আবদুর্ রহমান মুবারকপুরী (রহঃ)।
২২৪. প্রশ্নঃ সুনানে আবু দাউদের একটি প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ আউনুল মাবূদ। লেখকঃ শামসূল হক আযীমাবাদী (রহঃ)।
২২৫. প্রশ্নঃ মারফূ হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কথা, কাজ বা সমর্থন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাকে মারফূ হাদীস বলে।
২২৬. প্রশ্নঃ মাওকূফ হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীসটি কোন সাহাবীর কথা, কাজ বা সমর্থন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে মাওকূফ হাদীস বলে।
২২৭. প্রশ্নঃ মাকতূ হাদীস কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীসটি কোন তাবেঈর কথা, কাজ বা সমর্থন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে মাক্বতূ হাদীস বলে।
২২৮. প্রশ্নঃ যঈফ হাদীসের কয়েকটি প্রকার উল্লেখ কর?
উত্তরঃ মুরসাল, মুনকাতে, মুযাল, মুনকার, মাক্বলূব, মুয্তারাব ইত্যাদি।
২২৯. প্রশ্নঃ যঈফ হাদীসের উপর আমল করার হুকুম কি?
উত্তরঃ যঈফ হাদীসের উপর আমল করা উচিত নয়।
২৩০. প্রশ্নঃ হাদীসের সনদ বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ হাদীস বর্ণনার সময় বর্ণনাকারীদের সিলসিলা বা ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম উল্লেখকে সনদ বলা হয়।
হাদীস শরীফ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান
- সাধারণ জ্ঞান আরো জানুন: সাধারণ জ্ঞান: ইসলামিক বিষয় প্রশ্ন ও উত্তর
- সাধারণ জ্ঞান আরো জানুন: আল কুরআন: ইসলামিক সাধারণ জ্ঞান
২৩১. প্রশ্নঃ হাদীসের মতন কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ হাদীসের মূল বক্তব্যটিকে মতন বলা হয়।
২৩২. প্রশ্নঃ কোন খলীফার যুগে সর্বপ্রথম হাদীস কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা শুরু হয়?
উত্তরঃ খলীফা ওমর বিন আবদুল আযীযের (রহঃ) যুগে।
২৩৩. প্রশ্নঃ হাদীসের গ্রন্থ জগতে সর্বপ্রথম কোন কিতাবটি লিপিবদ্ধ করা হয়?
উত্তরঃ মুআত্ত্বা ইমাম মালেক। এতে ১৭০০টি হাদীস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
২৩৪. প্রশ্নঃ ইমাম বুখারী কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ২৫৬ হিঃ
২৩৫. প্রশ্নঃ ইমাম মুসলিম কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ২৬১ হিঃ
২৩৬. প্রশ্নঃ ইমাম তিরমিযী কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ২৭৯ হিঃ
২৩৭. প্রশ্নঃ ইমাম নাসাঈ কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ৩০৩ হিঃ
২৩৮. প্রশ্নঃ ইমাম আবু দাউদ কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ২৭৫ হিঃ
২৩৯. প্রশ্নঃ ইমাম ইবনে মাজাহ কখন মৃত্যু বরণ করেন?
উত্তরঃ ২৭৩ হিঃ
২৪০. প্রশ্নঃ ইমাম বুখারীর প্রকৃত নাম কি?
উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী (রহঃ)।
২৪১. প্রশ্নঃ ইমাম মুসলিমের প্রকৃত নাম কি?
উত্তরঃ মুসিলম বিন হাজ্জাজ নিশাপুরী (রহঃ)।
২৪২. প্রশ্নঃ ইমাম তিরমিযীর আসল নাম কি?
উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা তিরমিযী (রহঃ)।
২৪৩. প্রশ্নঃ ইমাম নাসাঈর নাম কি?
উত্তরঃ আহমাদ বিন শুআইব নাসাঈ (রহঃ)।
২৪৪. প্রশ্নঃ ইমাম আবু দাউদের নাম কি?
উত্তরঃ আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আছআছ সিজিসতানী (রহঃ)।
২৪৫. প্রশ্নঃ ইমাম ইবনে মাজাহর নাম কি?
উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ কাযবীনী (রহঃ)।
২৪৬. প্রশ্নঃ বর্তমান যুগের সর্বশ্রে মুহাদ্দিসের নাম কি?
উত্তরঃ শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) মৃত্যু ১৪২০ হিঃ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।