স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সা থেকে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
অধ্যায় : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ১৯৭২-১৯৭৫
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
১০.০৫. ১৯৭২ সালের সংবিধানকে কেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : স্বাধীন বাংলাদেশে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধান ছিল সমগ্র জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পাকিস্তান যেখানে তার পৃথক সংবিধান রচনা করতে প্রায় নয় বছর এবং ভারত প্রায় তিন বছর সময় নেয় সেখানে বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসে জাতিকে একটি আদর্শ সংবিধান উপহার দিতে সক্ষম হয়।
এ সংবিধান ছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আমরা জানি পৃথিবীর প্রতিটি সংবিধান নির্দিষ্ট কতগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সংবিধানও এর ব্যতিক্রম ছিল না। আর এসব বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সংবিধানকে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠত্ব দান।
১৯৭২ সালের সংবিধানকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণসমূহ : নিম্নে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার কারণসমূহ আলোচনা করা হলো
১. লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় : ১৯৭২ সালের সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ হলো এটি একটি লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান ১৯৭২ এর সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত। তবে কোনো বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনগত দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়।
সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪টি আদর্শকে গ্রহণ করা হয়েছে, যা ‘৭২ এর সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন— জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ।
এছাড়া এর মূল লক্ষ্য ছিল এক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে, যা শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন বহন করে ।
৩. প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা : সংবিধান কর্তৃক প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা বাংলাদেশের সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত যা সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত।
প্রজাতন্ত্রে আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বে যেসব এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল, স্বাধীনতার পর সেসব এলাকা নিয়েই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠিত হবে।
৪. মৌলিক অধিকার : ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মৌলিক মানবাধিকার সংযোজন। সংবিধানের তৃতীয় ধারায় নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত করার তাগিদে কতকগুলো মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়।
যেমন- সাম্যের অধিকার, চলাফেরা, সভা-সমাবেশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক ও স্বাভাবিক মানবিক অধিকারগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। সংবিধান কর্তৃক মানবাধিকারের স্বীকৃতির জন্য একে পৃথিবীর অন্যান্য সংবিধান থেকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলা হয় ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৫. স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা : ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার আরেকটি কারণ হলো এ সংবিধানে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বলা হয়েছে, মুক্ত ও স্বাধীন একটি বিচার বিভাগ গঠনের লক্ষ্যে সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি স্বাধীন অবস্থায় থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন । বাংলাদেশ সংবিধানের বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট নামে অভিহিত হবে।
আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত এ সুপ্রিম কোর্ট শাসন বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হবে।
৬. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন : ১৯৭২ সালের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলার অন্যতম কারণ হলো এর সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন। এ সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই প্রকৃত শাসনক্ষমতা ন্যস্ত করে। উক্ত সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে নামসর্বস্ব করে।
সংবিধানে একটি এককক্ষবিশিষ্ট এবং ৩০০ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত ১৫ জন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে আইনসভা গঠনের বিধান করা হয় । আইনসভার নাম দেওয়া হয় জাতীয় সংসদ ।
৭. সংবিধানের সার্বভৌমত্ব : বাংলাদেশ সংবিধানে শাসনতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের বিধান থাকায় একে শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এখানে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রই হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের আইনই সর্বশেষ আইন বলে স্বীকৃত হবে। তাই সংবিধানের সাথে সংগতিহীন যেকোনো আইন বাতিল বলে গণ্য হবে।
এভাবে ‘৭২ এর সংবিধানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দলিল হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং যার স্থান দেওয়া হয় সকল আইনের ঊর্ধ্বে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৮. সর্বজনীন ভোটাধিকার : সর্বজনীন ভোটাধিকার ‘৭২ সালের সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মর্যাদা দিয়েছে। ভোটাধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে সংবিধান জনগণের সেই সর্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী ন্যূনতম আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার যোগ্য।
৯. নারী অধিকারের বিধান : ‘৭২ এর সংবিধানে জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলা নাগরিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা থাকায় একে শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে অভিহিত করা হয়। সংবিধানের ১৯ ধারা অনুযায়ী জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদান করবে না বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে ।
১০. প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল : সাধারণ বিচার বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের ব্যবস্থা থাকায় এ সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ সংবিধানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড ও কর্মের মেয়াদ, রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ ও সম্পত্তি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহের ওপর প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের এক্তিয়ার থাকবে। সাধারণ আদালতগুলোর এসব বিষয়ে কোনো এক্তিয়ার থাকবে না।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
১১. জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব : ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব বিধান থাকায় একে শ্রেষ্ঠ সংবিধানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবেন এবং তাদের এ নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
সংবিধানে দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এভাবে ‘৭২ এর সংবিধানে জনগণের জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হয়, যা তাকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, শাসক-শাসিতের সম্পর্ক, অধিকারের প্রশ্নই মৌলিক অধিকার, নারীর অধিকার, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগের প্রাধান্য, সর্বজনীন ভোটাধিকার, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে।
তাই বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধানের একটি। এটি ছিল একটি ব্যাপক সুলিখিত দলিল । তাই ১৯৭২ এর বাংলাদেশের সংবিধান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধান একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
১০.০৬. ১৯৭৫ সালে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সংবিধানের ৪টি সংশোধনীর মধ্যে চতুর্থ সংশোধনী ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন করা হয়।
এভাবে মূল সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়কে পরিবর্তিত করে সংশোধনের মাধ্যমে নতুন রূপ প্রদান করা হয়। ফলে সংবিধান নতুন বৈশিষ্ট্য বা রূপ পরিগ্রহ করে এবং বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা আসে ।
১৯৭৫ সালে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বিষয়বস্তু : নিম্নে ১৯৭৫ সালে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন : বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
এ সংশোধনীতে বলা হয়, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন যিনি প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি হবেন সর্বেসর্বা অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির উর্ধ্বে স্থানলাভ করবেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. উপরাষ্ট্রপতি পদ সৃষ্টি : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে একজন উপরাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হবে না। তিনি রাষ্ট্রপতির অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন হবেন। তবে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির পদ কোনো কারণে শূন্য হলে স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে স্পিকার তার নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
৩. রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রাধান্য : বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি এ সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর মেয়াদে স্বপদে বহাল থাকবেন ।
তারা সকল কার্য থেকে দায়মুক্তি সুবিধা ভোগ করবেন। একই সাথে এটাও বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যাবে না। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে কোনো বিশেষ কারণে অভিশংসন করতে হলে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ।
৪. একদলীয় ব্যবস্থা : চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করে একদলীয় ব্যবস্থা বাকশাল প্রবর্তন করা হয় । এতে সকল সংসদ সদস্যকে বাকশালে যোগদানের কথা বলা হয়, নতুবা তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। এমনকি রাষ্ট্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাদেরকেও বাকশালে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
এভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
৫. আজ্ঞাবহ মন্ত্রিপরিষদ : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে মন্ত্রিসভাকেও রাষ্ট্রপতির অধীনে আনা হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করার জন্য তিনি একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তার ইচ্ছানুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য নিয়োগ ও অপসারণ করতে পারবেন। ফলে এ মন্ত্রিপরিষদ রাষ্ট্রপতির আজ্ঞাবহে পরিণত হয় ।
৬. দুর্বল জাতীয় সংসদ : চতুর্থ সংশোধনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে জাতীয় সংসদকে দুর্বল করা। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
এখানে মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীকে নামমাত্র রাখা হয়। এর মাধ্যমে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয় এবং আইনসভার সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নিকট অর্পণ করা হয়। ফলে সংসদ রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়।
৭. প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি তার অধীনস্থ মন্ত্রিসভার মাধ্যমে এ নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন । অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতার মালিক হবেন রাষ্ট্রপতি।
৮. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিচার বিভাগের ক্ষমতা হরণ। প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা অতীব জরুরি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা, মর্যাদা ও কার্যাবলি হ্রাস করা হয়। বিচারক নিয়োগ ও অপসারণ উভয় ক্ষমতাই রাষ্ট্রপতির ওপর অর্পণ করা হয়। এভাবে বিচার বিভাগকে নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়।
৯. সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ : চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের গণমাধ্যম, সংবাদপত্র ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশের সকল সংবাদপত্রকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং মাত্র ৪টি সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়। বাকি সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
১০. সীমিত নাগরিক অধিকার : সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিক অধিকার সীমিত করা হয় । জনগণের মৌলিক অধিকার স্থগিত করা হয় এবং আদালতে রিট দায়ের অধিকার খর্ব করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয় এবং নাগরিকদের স্বাধীন চলাফেরা ও বাকস্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৫ সালে সংবিধানের যে চতুর্থ সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছিল তা ছিল স্বতন্ত্র কিছু বিষয়বস্তু সংবলিত। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সংশোধনীর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম । এ সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্ববর্তী সংসদীয় ব্যবস্থা, পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
এ সংশোধনীর মূল বিষয় ছিল দেশের সামরিক, বেসামরিক, সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর ও মন্ত্রিপরিষদকে নামসর্বস্ব করে তোলা ।
১০.০৭. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর সরকারের চ্যালেঞ্জসমূহ তীয় আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের করা কারাগার থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে দেশের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি যখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্য ও সংসদ শিল্পকারখানা সবকিছুই বন্ধ ছিল ।
অসংখ্য কালভার্ট, ব্রিজ, সেতু ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বিধ্বস্ত। এরূপ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ : নিম্নে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. শরণার্থী পুনর্বাসন : বঙ্গবন্ধু শাসনকার্য শুরু করেছিলেন পুনর্বাসনের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা, দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ লাখ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাসগৃহ পুনর্র্নিমাণ করা এবং এদেরকে খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা ছিল সরকারের বিরাট দায়িত্ব।
আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, পতির শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে ৫ থেকে ১০ সদস্যের ‘ত্রাণ ও তিষ্ঠানে পুনর্বাসন’ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিগুলোর মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
২. জাতীয়করণ কর্মসূচি স্বাধীনতার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাট, বস্ত্র, চিনিকল, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণের আইন পাস করে বঙ্গবন্ধু সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয়করণ আদেশের আওতায় সমস্ত শাসনসহ ১২টি ব্যাংকের দখলিস্বত্ব সরকার গ্রহণ করে এবং সেগুলো সমন্বয় করে ৬টি নতুন ব্যাংকে রূপান্তর করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
১৯৭২ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো জাতীয়করণ, ৬৭টি পাটকল, ৬৪টি বস্ত্রকল এবং ১৫টি চিনিকল জাতীয়করণ করা হয় জাতীয় বিমান ও জাতীয় শিপিং সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অধীনে আনা হয় ।
৩. অর্থনৈতিক সংস্কার : বঙ্গবন্ধু কর্তৃক দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয় তিনি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত করেন ও কৃষির উন্নতি বিধান করেন। দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন।
১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা কার্যকর হয়। এর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা । তবে বঙ্গবন্ধু প্রথম পাঁচশালা বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন ।
৪. কৃষি সংস্কার : কৃষির উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন বঙ্গবন্ধু কর্তৃক শাসনভার গ্রহণের সময় শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল কৃষিখাতনির্ভর। বঙ্গবন্ধু জানতেন যে কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
এজন্য তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ –এ স্লোগানকে শুধু স্লোগান হিসেবেই ব্যবহার করেনি; বরং বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন সরকার। মুক্তিযুদ্ধের পর ২২ লক্ষের বেশি কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
৫. শিক্ষা সংস্কার : শাসনভার গ্রহণের মাত্র, ৬ মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কুদরত-ই-খুদা কমিশন দেড় বছর কঠোর পরিশ্রম করে ১৯৭৪ সালের ৩০ মে একটি রিপোর্ট সরকারের নিকট দাখিল করে।
৬. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল ব্রিজ- সেতু পুনর্র্নিমাণ করেন এবং অতিরিক্ত ৯৭টি নতুন সড়ক সেতু নির্মাণ করেন। কুর্মিটোলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন গঠিত হয়। তাছাড়া সরকার ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৫৫,০০০ টেলিফোন চালুর ব্যবস্থা করে। বহির্বিশ্বের সাথে টেলিযোগাযোগ স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধুর পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করেন ।
৭. অবকাঠামোগত উন্নয়ন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারি অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রায় সকল অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণ করেন । তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রভৃতির সংস্কার সাধন ও নতুন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সারাদেশে বিদ্যুৎ, বাস স্টেশনগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
তিনি ৫,০০০ বিদ্যুৎ পোল আমদানি করেন এবং ১৯৭২ সালের মধ্যে ১৫০০ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন।
৮. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়ীকরণ : সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন।
তিনি বিডিআর গঠনের আদেশ জারি করেন। ১৯৭২ সালে তিনি পদাতিক, নৌ ও বিমানবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন ।
৯. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন : বঙ্গবন্ধু সরকার গঠনের তিনদিনের মধ্যেই এক সরকারি আদেশের মাধ্যমে দেশে মদ, জুয়া, হাউজি ও ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
তিনি একই সাথে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ৯টি বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন করেন তিনি ঢাকায় শিশুকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্থায়ী নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এছাড়া এ সময়েই ক্রীড়াবিদদের কল্যাণার্থে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠিত হয় ।
১০. সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিক কল্যাণ ব্যবস্থা : বঙ্গবন্ধু শাসনভার গ্রহণের সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। কিন্তু তবুও সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কমিশন গঠন করে ১০ স্তর বিশিষ্ট নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করেন।
তিনি শ্রমিকদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছিলেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৩ বছর সময়কালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত পোড়ামাটির এক সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের শত সমস্যা জয় করে একে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন । তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করে দেশকে স্বাভাবিক করেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ শিক্ষা, নারী কল্যাণ, কৃষির উন্নতি, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রভৃতির মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠিত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।