স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সা থেকে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
অধ্যায় : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ১৯৭২-১৯৭৫
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
১০.০৮ মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সংস্কার আলোচনা কর।
অথবা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তরকালে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এদেশটি দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান বাহিনীর জ্বালাও পোড়াও নীতির কারণে হয়ে পড়েছিল এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড। এর প্রশাসনিক, সামাজিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্যান্য সংস্কারের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংস্কারের নিমিত্তে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ফলে অর্থনীতি আবার গতি ফিরে পায়।
মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সংস্কার : নিম্নে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সংস্কারসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. শিল্পকারখানা জাতীয়করণ স্বাধীনতার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু সরকার পাট, বস্ত্র, চিনিকল, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণের আইন পাস করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের আওতায় সব শাখাসহ ১২টি ব্যাংকের দখলিস্বত্ব সরকার গ্রহণ করে এবং সেগুলোর সমন্বয় করে ৬টি নতুন ব্যাংকে রূপান্তর করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
পাকিস্তানি মালিকানার প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ শিল্প কলকারখানা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইনের মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত খাত’ হিসেবে অভিহিত হয়। জাতীয়করণ আইনের আওতায় ৬৭টি পাটকল, ৬৪টি বস্ত্রকল এবং ১৫টি চিনিকল জাতীয়করণ করা হয়।
২. পাঁচশালা পরিকল্পনা গ্রহণ : বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে। ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা কার্যকর হয়। প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা যদিও মাঝপথেই থমকে দাঁড়ায় তথাপি এ পরিকল্পনা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়, যা দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
৩. কৃষির উন্নয়ন : কৃষির উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় এদেশের অর্থনীতি ছিল অতিমাত্রায় কৃষিনির্ভর। তাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন।
কৃষির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সরকার বিনামূল্যে সার, কীটনাশক, বীজ, কৃষি উপকরণ প্রভৃতি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। ধান, পাট, তামাকসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসব পণ্যের ন্যূনতম ন্যায্য বিক্রয়মূল্য ধার্য করা হয়। এছাড়া জমির সমস্ত বকেয়া খাজনা মওকুফসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করে এ সরকার।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
পরিবার পিছু ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন।
৪. শিল্পকারখানা ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠা : বঙ্গবন্ধু সরকার ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন শিল্প স্থাপন, বন্ধ শিল্প কলকারখানা চালু করাসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জোর প্রয়াস গ্রহণ করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্প ঋণ সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০৫০টি নতুন শাখা স্থাপন করেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এর ৩৩৫টি শাখা স্থাপন করেন। এর ফলে পুনরায় দেশীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয় ।
৫. অন্যান্য পদক্ষেপ : বঙ্গবন্ধু গ্রাম বাংলার উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বগুড়ায় পল্লি উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। তার সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন ৪টি করপোরেশন গঠন করে।
এছাড়া কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে তিনি গ্রাম ও শহরের মধ্যকার অর্থনৈতিক ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালান ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি কৃষি সংস্কার, শিল্প কলকারখানা জাতীয়করণ, পাঁচশালা পরিকল্পনা, গ্রামীণ উন্নয়ন প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করে অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা করেন এবং অর্থনীতিকে বিদেশি সাহায্যনির্ভরশীলতার হার কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনরায় পুনর্গঠিত হয় ।
১০.০৯. বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার আলোচনা কর ।
অথবা, দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার নীতিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি যখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন সেসময় এ দেশটি দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে হয়ে পড়েছিল এক যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড।
এর প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কৃষি ব্যবস্থাও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্যান্য সংস্কারের সাথে সাথে কৃষি সংস্কারেও মনোনিবেশ করেন । ফলে দেশের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার : বঙ্গবন্ধু জানতেন কৃষিই দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কৃষির উন্নয়ন। এজন্য তিনি কৃষি সংস্কারে বেশকিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নিম্নে তার কৃষি সংস্কার আলোচনা করা হলো :
১. কৃষক পুনর্বাসন : বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কারের অন্যতম একটি দিক ছিল কৃষক পুনর্বাসন। বঙ্গবন্ধু কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষকদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করেন। এজন্য তিনি যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে যাওয়া কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ২২ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসন করার দায়িত্বভার তার সরকারের ওপর বর্তায়।
বঙ্গবন্ধু সরকার সে দায়িত্ব দক্ষতার সাথেই পালন করেন। এ পুনর্বাসনের আওতায় তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃষিভিষিক মৌলিক কাঠামো নির্মাণে সহায়তাদানের পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ, বীজ, সার কীটনাশক প্রভৃতি সরবরাহ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
২. কৃষি উপকরণ সরবরাহ : বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল কৃষি উপকরণ সরবরাহ। ১৯৭২ সালের শেষ নাগাদ সারা দেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ৪০ হাজার শক্তিচালিত পে লিফ্ট পাম্প, ২,৯০০ গভীর নলকূপ ও ৩,০০০ অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হয়।
এর ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের তুলনায় ১৯৭৪-‘৭৫ সালে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ লক্ষ একরে উন্নীত হয়। সেচ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি ১৯৭২ সালে কৃষকদের মধ্যে অধিক ফলনশীল ১৬,১২৫ টন ধানবীজ, ৪৫৪ টন পাটবীজ এবং ১,০৩৭ টন গম বীজ বিতরণ করা হয়।
৩. খাজনা মওকুফ ও ঋণ বিতরণ : বঙ্গবন্ধু কৃষি সংস্কারের অংশ হিসেবে জমির সমস্ত বকেয়া খাজনা মওকুফসহ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন এবং পরিবার পিছু সর্বাধিক ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন। এছাড়া দখলদার পাকিস্তানি শাসনামলে রুজু করা ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে ঋণী কৃষককে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মাফ করে দেওয়া হয়।
সরকার কৃষকদের মধ্যে ১ লক্ষ বলদ ও ৫০ হাজার গাভী এবং ৩০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করে। এভাবে খাজনা মওকুফ ও ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু কৃষি সংস্কারে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
৪. সবুজ বিপ্লবের ডাক তৎকালীন বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল কৃষিখাতনির্ভর। বঙ্গবন্ধু জানতেন যে, কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ –এ স্লোগানকে শুধু স্লোগান হিসেবেই ব্যবহার না করে তা কাজেও পরিণত করেন । এজন্য তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন ।
৫. অন্যান্য কৃষি সংস্কার : বঙ্গবন্ধু সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর উল্লিখিত কৃষি সংস্কার ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে সংস্কারের মাধ্যমে কৃষিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে প্রয়াসী হন। যেমন— ধান, পাট, আখসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসব পণ্যের ন্যূনতম ন্যায্য বিক্রয়মূল্য ধার্য করে দেওয়া হয়।
সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে খাল খনন ও সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের আট মাসের মধ্যে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পূর্ণোদ্যমে চালুর ব্যবস্থা করা হয় সরকারিভাবে খাদ্য মজুত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের মধ্যেই ১০০টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রণীত এসব সংস্কার কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে অত্যন্ত সহায়ক ছিল ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শাসনভার গ্রহণ করার পর দেশের ভঙ্গুর কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি কৃষির উন্নয়নে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন এবং কৃষক পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তিনি কৃষি ঋণ প্রদান, খাজনা মওকুফ, সার, বীজ, প্রদান সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে অতি অল্প সময়ে কৃষি তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায়। এভাবে কৃষক দরদি নীতি গ্রহণের ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়।
১০.১০. বঙ্গবন্ধু সরকারের সফলতাসমূহের বর্ণনা দাও।
অথবা, শেখ মুজিবের শাসনকালের সাফল্যের বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : স্বাধীনতাপরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের হাল ধরতে গিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের এবং তার দলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন।
এতসব বাধাবিপত্তির মধ্যেও মাত্র সাড়ে ৩ বছরের ব্যবধানে তিনি দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরের জন্য যুগান্তকারী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাথমিক সমস্যা কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয়।
বঙ্গবন্ধু সকারের সফলতা : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল । এ সময়ে সরকার যেসব সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে যুদ্ধ করে। কিন্তু স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে অবস্থান করতে থাকে।
একটি স্বাধীন দেশে বিদেশি সৈন্য থাকা অবৈধ। এজন্য বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ, অর্থাৎ স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয়- সৈন্যবাহিনীকে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হন। যা বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি অন্যতম সফলতা।
২. স্বল্প সময়ে সংবিধান প্রণয়ন : বঙ্গবন্ধু সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই সংবিধান প্রণয়নকে অগ্রাধিকার দেন। তাই ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বঙ্গবন্ধু সরকার দেশের জন্য সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে গণপরিষদ গঠন করে এবং মাত্র নয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
যেখানে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সংবিধান প্রণয়ন করতে ৯ বছর এবং ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করতে ৩ বছর সময় লেগেছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সংবিধান প্রণয়ন করে।
৩. সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন : দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার স্থলে সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা চালু করেন। তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে এ ব্যবস্থাকে কার্যকর করে তোলেন। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
এটি বঙ্গবন্ধু সরকারের সফলতার অন্যতম সোপান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৪. শরনার্থী পুনর্বাসন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটি লোক শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু সরকার এ শরণার্থীদের দক্ষতার সাথে পুনর্বাসন করে।
তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দান, নির্যাতিত মা বোনদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার্থে বিদেশে প্রেরণসহ যাবতীয় ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করে। সরকার ১ লাখ ২২ হাজার বাঙালি যারা পাকিস্তানে আটকা ছিল তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
বঙ্গবন্ধু সরকার প্রায় ২২ লক্ষ পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
৫. যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্গঠন বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম সফলতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্গঠন। ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। যার ফলে সরকার অতি অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক, নৌ, রেলপথ ও বিমানপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
সরকার হার্ডিঞ্জ ও ভৈরব ব্রিজসহ ৫৬৭টি সেতু নির্মাণ ও মেরামত, ৭টি নতুন ফেরি, ১৮৫১টি রেলওয়ে ওয়াগন ও যাত্রীবাহী বগি, ৪৬০টি বাস, ৬৫০টি নৌযান ক্রয় প্রভৃতির মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে সক্ষম হয়।
৬. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন : বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করে এবং এটি জুলাই থেকে কার্যকর করে। এ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, অধিক সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি।
এ পরিকল্পনা প্রণয়নের পর দেশের অর্থনীতি তার হারানো গতি ফিরে পায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ সদ্য স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জাতীয় মর্যাদায় পুনর্গঠিত করেন। পুলিশ, বিডিআর, আনসার ও বেসামরিক প্রশাসনের নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
স্বাধীনতার পর মুজিব বাহিনী, মুক্তিবাহিনীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অস্ত্রশস্ত্র রক্ষিত ছিল। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বঙ্গবন্ধু ১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সকল অস্ত্র জমাদানের আহ্বান জানান, ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে ।
৮. শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা : বঙ্গবন্ধু সরকার শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে। এ কমিশন শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞানভিত্তিক, গণমুখী ও যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মকানুন বাতিল করে “বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ‘৭৩ প্রণয়ন করে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক ৪০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ১১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা।
৯. কৃষি উন্নয়ন কৃষি উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সরকার অভাবনীয় সাফল্যের পরিচয় দেয়। সরকার ২২ লক্ষ কৃষি পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। তাদের সার, বীজ, কীটনাশক এবং গরু, লাঙলসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু সরকার কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা মেটানোর জন্য ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করে এবং জমির সিলিং নির্ধারণ করে।
সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি ঋণ প্রদান, সার কারখানা স্থাপন, খাল খনন প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জনে সক্ষম হন ।
১০. জাতীয়করণ : বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বিমা, প্রভৃতি জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণ আইনের আওতায় ৬৭টি পাটকল, ৬৪টি বস্ত্রকল এবং ১৫টি চিনিকল জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয় বিমান সংস্থা ও জাতীয় শিপিং সংস্থা, যা পূর্বেও সরকারি মালিকানায় ছিল তা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অধীনে আনা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ৩ *
এভাবে পাকিস্তান আমলের প্রায় ৮৫% শিল্প কলকারখানা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার মাধ্যমে এ সরকার সফলতার পরিচয় দেয়।
১১. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য : সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ ও ইসলামি সম্মেলন সংস্থাসহ প্রায় ১৪টি সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় পাকিস্তানসহ বিশ্বের ১৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে।
কূটনৈতিক তৎপরতায় যুদ্ধবন্দি সমস্যা ও ভারতীয় সৈন্য ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সরকার সাফল্যের পরিচয় দেয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু খুব বেশিদিন দেশ পরিচালনার সুযোগ পাননি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করেন।
তিনি অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দেন। তার অসাধারণ নেতৃত্বে দেশের কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি, শিক্ষা, জাতীয় সমস্যা, আন্তর্জাতিক সমস্যা, সংসদীয় ব্যবস্থা, শাসনতান্ত্রিক বিধান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।