স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সা থেকে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
অধ্যায় : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ১৯৭২-১৯৭৫
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
১০.০১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রভাব আলোচনা কর ।
অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ফলাফল বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ও ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি।
দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
জীবনমৃত্যুর ভয়ংকর অধ্যায় পার হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রভাব : নিম্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শাসনভার গ্রহণের পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করেন তা হলো অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ।
অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারির পর ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধান বিচারপতির কাছে প্রথমে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
২. ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার : বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ভারতীয় সৈন্য ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, “আমি যখনই বলব, ভারতীয় সেনাবাহিনী তখনই দেশে ফেরত যাবে।” কিছুদিন পর সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২৫ দিনের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৩. দালাল অধ্যাদেশ জারি : শাসনভার গ্রহণের ২ সপ্তাহের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ২৪ জানুয়ারি জারি করেন ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭২’। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে দালালদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে দালালদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে বঙ্গবন্ধু অভ্যন্তরীণ চাপের সম্মুখীন হন।
তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ১১ হাজার দালালকে কারারুদ্ধ করে বিচারের সম্মুখীন করেন
৪. শাসনতন্ত্র প্রণয়ন : শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের একদিন পর ১১ জানুয়ারি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন।
অস্থায়ী সংবিধান আদেশবলে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ অধ্যাদেশ ও বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য আদেশ নামক ২টি অধ্যাদেশ জারি করে। এ অধ্যাদেশের ওপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়, যা ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য একটি চূড়ান্ত সংবিধান উপহার দেয় ।
৫. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব ছিল বর্ণনাতীত। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। কেননা দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধের কারণে এদেশের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ, আইনশৃঙ্খলা প্রভৃতি ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
এসব সমস্যার সমাধান তথ্য পুনর্গঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
৬. শরণার্থী পুনর্বাসন : বঙ্গবন্ধু শাসনকার্য শুরু করেছিলেন। পুনর্বাসনের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা, দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ লাখ বিধ্বস্ত বাসগৃহ পুনর্র্নিমাণ করা এবং এদেরকে খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা ছিল সরকারের বিরাট দায়িত্ব।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শরণার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য মাত্র ৩ মাসের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায় ৯ লাখ ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করেন ।
৭. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন : স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতি তুলে ধরে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। তিনি বলেন, অর্থনীতিকে পুনরায় সচল করে তুলতে হবে।
খাদ্য, আশ্রয়, পরিধানের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করা হবে এবং সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ গড়ে তোলা হবে, জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি অর্থ সংস্কারে মনোনিবেশ করেন।
৮. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধোত্তর সময়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু প্যারামিলিটারি বাহিনী হিসেবে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করেন। এছাড়া সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার প্রতিও তিনি দৃষ্টি দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
তার সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে মনোনিবেশ করেন। কেননা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, লুটপাট প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। তাই তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, দেশ পুনর্গঠনে সর্বাগ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।
৯. পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ : সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ১৪ জানুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী, আমাদের নীতি হচ্ছে সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বিদ্বেষপরায়ণ তা নয় আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হইবে জোট নিরপেক্ষ।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, ভারতীয় সৈন্য ফেরত পাঠানো, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি প্রদান, সংবিধান প্রণয়ন করা, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠন করা, অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ, শরণার্থী সমস্যার সমাধান এবং বৈদেশিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রভাব বা ফলাফল ছিল অপরিসীম তিনি স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পরিকল্পনা প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ।
১০.০২. বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিবৃত্ত আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ধারাবাহিকতা আলোকপাত কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সংবিধান একটি দেশের লিখিত দলিল, সকল হাতিয়ার হিসেবে সংবিধানকে ব্যবহার করা হয়। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশের জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধান লিপিবদ্ধ করার নিমিত্ত সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল তা একদিনে হঠাৎ করে হয়নি।
এর পিছনেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিহিত ছিল । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আদেশকে উপজীব্য করে ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ প্রণয়ন করা হয়েছিল ।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিবৃত্ত নিম্নে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিবৃত্ত আলোচনা করা হলো :
১. ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ ই মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারি করেন ।
অস্থায়ী সংবিধান আদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। অস্থায়ী সংবিধান আদেশবলে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘গণপরিষদ আদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য আদেশ’ নামে ২টি আদেশ জারি করেন।
গণপরিষদ আদেশের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণকে নিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয় গণপরিষদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
২. গণপরিষদ গঠন : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ‘গণপরিষদ আদেশ’ জারি করেন। এটিই ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির প্রথম পদক্ষেপ। এ আইনবলে ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে ‘গণপরিষদ’ গঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছিলেন ১২ জন, দালালি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ৫ জন, দুর্নীতি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। ৪৬ জন এবং পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন ২ জন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি নিয়েছিলেন ১ জন।
ফলে অবশিষ্ট ৪০৩ জন সদস্যের মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের, ১ জন ন্যাপের এবং অপর ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র ।
৩.গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন : ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন।
গণপরিষদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদের অধিবেশনে ঘোষণা দেন যে, “গণপরিষদ সর্বাধিক কম সময়ে একটি সংবিধান রচনা করবে, যার জন্য দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরগণ গৌরববোধ করবেন।”
অধিবেশনের প্রথম দিনেই গণপরিষদ সদস্যগণ কর্তৃক শাহ আব্দুল হামিদ স্পিকার এবং মোহাম্মদউল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
৪. খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন : ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল, অর্থাৎ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয় ।
এ কমিটির ৩৩ জন সদস্যই ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় গণপরিষদ সদস্য এবং ১ জন সদস্য ছিলেন ন্যাপ (মোজাফ্ফর) নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি ছিলেন একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য। এছাড়া একজন মহিলা গণপরিষদ সদস্য রাজিয়া বানুকেও এ ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
কমিটিকে পরবর্তী ১০ জুনের মধ্যে গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া উপস্থাপন করতে বলা হয় ।
৫. খসড়া সংবিধান কমিটির প্রথম বৈঠক : ১৭ এপ্রিল ১৯৭২ সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক বসে। কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত সদস্যদের নিকট খসড়া সংবিধান সংক্রান্ত নথি পেশ করে এর ওপর প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেন। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ মের মধ্যে খসড়া সংবিধান সম্বন্ধে জনমত আহ্বান করা হয়।
কমিটি বিভিন্ন স্তরের জনগণ ও সংগঠনের কাছ থেকে ৯৮টি প্রস্তাব ও সুপারিশ পান। ঐ বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সংবিধান বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সংবিধান বিষয়ে প্রস্তাব আহ্বান করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এভাবে কমিটি তাদের ৪৭টি বৈঠকে মোট ৩০০ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে গণপরিষদে উত্থাপনের উপযোগী একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
৬. কমিটির রিপোর্ট পেশ : গণপরিষদ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ১০ জনের কমিটি প্রাথমিক খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে এবং গণপরিষদে উত্থাপন করে । এরপর কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন ভারত ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করেন এবং সংবিধান প্রণেতাদের সাথে আলোচনা করেন।
তাছাড়া সংবিধানটিকে ত্রুটিমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ড. কামাল একজন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে। দেশে ফিরে অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করার পূর্বে ৯. অক্টোবর তা আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে উপস্থাপিত ও আলোচিত হয়েছিল।
১৯৭২ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মিলিত হয়ে খসড়া সংবিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
৭. চূড়ান্ত খসড়া গণপরিষদে উত্থাপন : ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধানটি কমিটির সভাপতি ও আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
১৩ অক্টোবর গণপরিষদ নিজস্ব কার্যপ্রণালির বিধিমালা গ্রহণ করে। ১৮ অক্টোবর থেকে গণপরিষদে সংবিধান বিল সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর তা সমাপ্ত হয়। ৩১ অক্টোবর থেকে গণপরিষদে খসড়া সংবিধানের ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলে।
আলোচনাকালে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যগণ কর্তৃক আনীত কতিপয় সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ৭৩ নং অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কর্তৃক আনীত একটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
৮. গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধান গৃহীত : ৩ সপ্তাহব্যাপী ১৫৩টি অনুচ্ছেদ সংবলিত খসড়া সংবিধান বিল নিয়ে আলাপ আলোচনা শেষে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বেলা ১টা ৩০ মিনিটে বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধান চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।
এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “একটি জাতি হিসেবে বাঙালিরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধান প্রণয়ন করলো।”
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
৯. সংবিধান কার্যকর : ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গৃহীত সংবিধানে চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করার জন্য গণপরিষদ সদস্যগণ পুনরায় মিলিত হন। দিন স্পিকার মোহাম্মদউল্লাহ সংবিধানের মূল বাংলা ও ইংরেজি লিপিতে স্বাক্ষর করেন।
অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, মন্ত্রিবর্গ ও অন্যান্য গণপরিষদ সদস্য সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবিধানে স্বাক্ষর দানে বিরত থাকেন। একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ ও ৪টি তফসিল এবং ১৫৩টি অনুচ্ছেদবিশিষ্ট বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দীর্ঘ নয় মাসের চেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৭২ সালের যে পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করা হয় তা ছিল নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সমষ্টি।
এ দীর্ঘ সময়ে সংবিধান প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণপরিষদের সদস্যবৃন্দ প্রমুখ ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মেধার ফলস্বরূপ যে সংবিধান প্রণীত হয় তা বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
১০.০৩. ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রের কাঠামো এবং ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে সংবিধান। রাজনীতির গন্তব্যস্থলে পৌঁছায় এবং চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিছু আইনকানুনের প্রয়োজন, যা সবার জ্ঞাত এবং সমর্থিত। মূলত সংবিধান হলো রাষ্ট্রের দর্পণস্বরূপ, সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের রূপ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
লিখিত বা অলিখিত যাই হোক সংবিধান একটি রাষ্ট্রের শাসননীতি ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার দিক নির্দেশ করে। এক কথায়, সংবিধান হলো বিশ্বের সব স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল বাংলাদেশের ‘৭২ এর সংবিধানের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে বাংলাদেশের ‘৭২ এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. লিখিত সংবিধান : ১৯৭২ সালের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ ও ৪টি তফসিল লিখিত রয়েছে। এছাড়া ১৫৩টি অনুচ্ছেদের সমন্বয়ে প্রণীত এ সংবিধান।
এ সংবিধানের প্রথম ভাগে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ, দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহ, তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার, চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ, পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ ভাগে বিচার বিভাগ, সপ্তম ভাগে নির্বাচন, অষ্টম ভাগে মহা হিসাব নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রক, নবম বিভাগে কর্মকমিশন, দশম ভাগে সংবিধান সংশোধন ও একাদশ ভাগে বিবিধ বিষয় লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
২. ভাষা ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত হয়েছে। তবে সংবিধানে বাংলা ভাষাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির প্রথম ১০ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ সংবিধানে দেশের নাগরিকদের বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
৩. দুষ্পরিবর্তনীয় : দুষ্পরিবর্তনীয়তা ’৭২ এর সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এ সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
৪. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি সংযোজন করা হয়েছে, যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাতিয়ার। ১৯৭২ এর সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪ আদর্শকে গ্রহণ করা হয়েছে।
যথা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। এর মূল লক্ষ্য ছিল এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা ।
৫. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন : ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সমস্ত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত করে। উক্ত সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
৬. মৌলিক অধিকার : ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধানের ২৭-৪৭ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত করা হয়। সংবিধানের ৪৪ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা সুপ্রিম কোর্টকে সকল ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার রক্ষাকবচ করা হয়েছে।
এ সংবিধানে মানুষের চলাফেরা, বাকস্বাধীনতা, সংগঠন, সমানাধিকার প্রভৃতি মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
৭. দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা : ‘৭২ এর সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সংসদ সদস্যদের শৃঙ্খলা বিধান রক্ষা। কোনো সংসদ সদস্য নিজ দল ত্যাগ করলে বা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তিনি তার সংসদ সদস্যপদ হারাবেন (বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০)। সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে এ বিধান করা হয়।
৮. ন্যায়পালের বিধান : ১৯৭২ সালের সংবিধানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি। সংসদ আইনের দ্বারা এ পদ সৃষ্টি করতে পারবে। ন্যায়পাল যেকোনো মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
৯. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বিচার বিভাগ সংবিধানের রক্ষাকর্তা। মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কোনো আইন কিংবা বিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষণা করার অধিকার রাখেন। সুতরাং ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ।
১০. প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল : ‘৭২ সালের সংবিধানে বিভিন্ন রকম প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের অস্তিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে সাধারণ বিচারব্যবস্থার অতিরিক্ত সংসদ কর্তৃক আইনের দ্বারা এক বা একাধিক প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার বিধান করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়াদি এর অন্তর্ভুক্ত।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
১১. সংবিধানের প্রাধান্য : সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনের মর্যাদা প্রদান করা হয়। প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সংবিধান জনগণের পক্ষে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে। তি সংবিধানের মর্যাদা ও প্রাধান্য রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর অর্পণ করা হয়। কোনো আইন সংবিধানের পরিপন্থি হলে সুপ্রিম কোর্ট তাকে বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে।
১২. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : ভৌগোলিক, ভাষাগত ধর্মী ও কৃষ্টিগত অখণ্ডতার কারণে বাংলাদেশে যেমন এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনসভার নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় সংসদ’। ৩০০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং তাদের দ্বারা মনোনীত ১৫ জন মহিলা সদস্য, অর্থাৎ মোট ৩১৫ জন সদস্য সমন্বয়ে তখনকার জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
১৩. জনগণের সার্বভৌমত্ব : এই সংবিধানে জনগণকে সকল রাষ্ট্রীয় ও সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণ প্রত্যক্ষভাবে অথবা প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা রাখে। সংবিধান জনগণকে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করেছে ।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৭২ এর সংবিধান ছিল একটি লিখিত, দুষ্পরিবর্তনীয় শাসনতান্ত্রিক দলিল। এটি ছিল একটি ব্যাপক সুলিখিত দলিল এবং এ উপমহাদেশের অন্যান্য সংবিধানের তুলনায় অনেক উন্নতমানের।
এ সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেমনি আইনের মূল উৎস হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল । তাই ‘৭২-এর সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য এটি সাংবিধানিক ভিত্তির ওপরই প্রতিষ্ঠিত ।
১০.০৪. ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানে প্রণীত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের বর্ণনা দাও।
অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কল্যাণসাধন করা। এ উদ্দেশ্যে ভারত, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য কতকগুলো মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের সংবিধানেও কতকগুলো মূলনীতি সংযোজন করা হয়েছে।
যেগুলো রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাজের ভিত্তিস্বরূপ হিসেবে কাজ করে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ৮ নং অনুচ্ছেদ থেকে ২৫ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানে প্রণীত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি : ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বেশ কতকগুলো মূলনীতি গ্রহণ করা হয়।
নিম্নে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের বিবরণ দেওয়া হলো :
১. গণতন্ত্র : ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো গণতন্ত্র । সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র’ যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে । অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। মানবিক মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনার মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
২. সমাজতন্ত্র : ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো সমাজতন্ত্র বাংলাদেশে একটি শোষণমুক্ত ও সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কায়েম করার কথা বলা হয়।
সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “মানুষের ওপর মানুষের শোষণ অবসান করে ন্যায়ানুগ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করা হবে।” সংবিধানে আরো উল্লেখ করা হয় যে, মেহনতি মানুষকে সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে । রাষ্ট্রের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার মালিক হবে জনগণ তথা রাষ্ট্র ।
৩. জাতীয়তাবাদ : ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি জাতীয়তাবাদ । অভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে একই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য লালিত বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে নিজেদের পৃথক মনে করতে শুরু করে।
১৯৭২ এর সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয় “ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছিল, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।”
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা : ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলুপ্ত করা হবে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্মপালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। বস্তুত রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হবে সমাজজীবন হতে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা কায়েম করা।
৫. মালিকানার নীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন প্রকার মালিকানা বিদ্যমান। যথা— রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায় মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা। সমাজের উৎপাদন যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থার মালিক বা নিয়ন্ত্রক হবে জনগণ এবং এর ফলে শোষণের যন্ত্রটি হবে বিকল ও অর্থহীন।
এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত খাত সৃষ্টি করে রাষ্ট্র জনগণের পক্ষে মালিকানা গ্রহণ করবে। নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সমবায় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সমবায় মালিকানা চালু হবে, একই সাথে ব্যক্তিগত মালিকানাও প্রচলিত থাকবে ।
৬. পররাষ্ট্রনীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি হবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের প্রতি শ্রদ্ধা।
এসব নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগনীতি পরিহার করবে এবং নিরস্ত্রীকরণের জন্য সচেষ্ট হবে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে সমর্থন করবে এবং যেকোনো জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পথ ও মত অনুযায়ী স্বতন্ত্র সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিকেও সমর্থন করবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
৭. শিক্ষানীতি ‘৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়, একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অর্থাৎ নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত দেশের সব বালক-বালিকার মধ্যে অবৈতনিক শিক্ষাদানের জন্য দেশে এক গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করে দেশে যোগ্য নাগরিক সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮. শ্রমের মর্যাদা ‘৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। রাষ্ট্র এ পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যেখানে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগে সমর্থ হবে না। এখানে কর্ম হবে প্রত্যেকের নিকট কর্তব্য ও সম্মানের ব্যাপার এবং সেখানে বুদ্ধিমূলক ও কায়িক সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসে রূপান্তরিত হবে।
৯. সমতার নীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানে সমতার নীতিকে রাষ্ট্রপরিচালনার অন্যতম নীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষে মানুষে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যতা দূর করার ও দেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র সুসম সুযোগ সুবিধার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হবে এবং সবার সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে।
দেশের সর্বাংশে প্রাণ সঞ্চালনের জন্য গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। উভয় অংশের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের ব্যবধান ক্রমাগতভাবে দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১০-রচনামূলক)পর্বঃ১ *
১০. মৌলিক প্রয়োজনের সুনির্দিষ্ট বিধান ‘৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে জনগণের জন্য মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ। সুপরিকল্পিত উপায়ে দেশের উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন করে জনগণের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করতে হবে যাতে জীবনধারণের মৌলিক উপকরণগুলো সকলে উপভোগ করতে পারে।
যেমন— অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এছাড়া কর্মের অধিকার, উপযুক্ততা অনুযায়ী যোগ্য মজুরির অধিকার, যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার উপভোগ করতে পারবে।
১১. জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার মান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেননা জনগণের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।
এছাড়া মাদকদ্রব্য, মাদক পানীয় ও অন্যান্য পদার্থের নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে এবং জুয়াখেলা ও পতিতাবৃত্তি অবসানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত। এগুলো রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানের ন্যায়সংগত দিককে নির্দেশ করে। তাছাড়া এ সংবিধান বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাকালে এ নীতিসমূহ নির্দেশক হবে।
সর্বোপরি এগুলো রাষ্ট্রপরিচালনা ও এর নাগরিকদের কাজের ভিত্তিরূপে ব্যবহৃত হবে। বাংলাদেশের জনগণ এগুলো বাস্তবায়িত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে এবং রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে তারা হবে দিশারিস্বরূপ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।