স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
০১. মুক্তিযুদ্ধ কী?
অথবা, মুক্তিযুদ্ধ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, শোষণ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানিদের সশস্ত্র সংগ্রাম বা লড়াই মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলেছিল।
এটি বাংলাদেশের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধ : খ্রিস্টীয় বিশ শতকের শেষার্ধে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি দখলদার বা হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, লুণ্ঠন, শাসন, শোষণ ও নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা যে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে তাই হলো মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে যখন পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে বাঙালিরা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে।
মূলত বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীর নেতৃত্বে নিয়মিত বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিনিয়ে নেওয়া হয় স্বাধীনতা।
বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা প্রতিষ্ঠা লাভ করে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতি কখনও অন্যের অধীনতা মেনে নেয়নি, তাই পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত তারা সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে বিজয় অর্জন করে।
০২. গণহত্যা কী?
অথবা, গণহত্যা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করেছে, যা সভ্য দুনিয়াতে অকল্পনীয়।
তারা বাঙালিদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে, পাকিস্তানিদের অপারেশন সার্চলাইট নামক কুখ্যাত অপারেশনে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি নিহত হয়। নিরীহ এবং ঘুমন্ত মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
গণহত্যা : গণহত্যা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘এবহড়পরফব’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মবহড়ং’ এবং ল্যাটিন শব্দ ‘পরফব’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ জাতি ও হত্যা।
১৯৪৪ সাল থেকে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে । গণহত্যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধরূপে গণ্য করা হয়, যার কোনো ক্ষমা নেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকবাহিনী এদেশের নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
গণহত্যার ব্যবহারিক সংজ্ঞা : সাধারণত কোনো জাতিগত ধর্মীয় বা গোত্রীয় জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করাকে আন্তর্জাতিক আইনে ‘জেনোসাইড’ বা গণহত্যা বলে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ হতে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গণহত্যা অব্যাহত থাকে। তাদের বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সারা দেশে প্রায় এক হাজারের অধিক গণকবর আছে। চুকনগরের গণহত্যা মাইলাই হত্যাকাণ্ডকেও ম্লান করে দিয়েছে। ঐ দিন পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ চুকনগরে এক দিনে নিহত হয় (চুকনগর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার অন্তর্গত)।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র নয় মাসে বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ লোক পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। এ অল্প সময়ে পৃথিবীর কোথাও এত অধিক লোক নিহত হয়নি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালিরা বাংলাদেশ স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণহত্যা বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। নিরীহ বাঙালিদের কপালে এ বিষয়টি ছিল। না হলে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের শিকার কে কেনই বা হতে। হয়েছিল বাঙালিদের। পাকবাহিনীর এসব গণহত্যার চিত্র সত্যিই। বেদনাদায়ক। এটি বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৩. ২৫ মার্চের গণহত্যা সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, ১৯৭১ সালের গণহত্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে এক নির্মমতার স্বাক্ষর বহন করে। এ গণহত্যায় শত শত নিরীহ বাঙালির প্রাণ ঝরে যায়।
বিশ্বের ইতিহাসে স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনতাকে এভাবে গণহত্যার নজির বিশ্বে খুব কমই দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু তারপরও অদম্য বাঙালিকে থামানো যায়নি, তারা এ গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করে দেয় ।
২৫ মার্চের গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চরম অবহেলা আর নির্যাতনের স্বাক্ষর বহন করছে, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। ২৫ মার্চ এ অপারেশন সংঘটিত হলেও মূলত মার্চের প্রথম থেকেই এ গণহত্যার প্রস্তুতি চলতে থাকে। তবে এ প্রস্তুতিকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে ।
প্রথম পর্যায় : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা বৈঠক শুরু করে। অন্যদিকে, ১৭ মার্চ জেনারেল টিক্কা খান, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন এবং রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইট করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ থেকে পূর্ববাংলায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ শুরু হয়ে যায়। একই দিন জয়দেবপুরে বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। ২০ মার্চ সরকার অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করে এবং জেনারেল হামিদ ক্যান্টনমেন্টগুলোতে খোঁজখবর রাখতে থাকেন।
ঐ দিনই জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর প্রমুখকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক প্রস্তুতিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
তৃতীয় পর্যায় : ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে এমভি সোয়াত থেকে অস্ত্র ও রসদ খালাস শুরু হয় এবং প্রস্তুতি শেষে ২৫ মার্চ গণহত্যার জন্য বেছে নেওয়া হয়। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ঢাকা শহরের মূল অপারেশনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
চতুর্থ পর্যায় : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট চালানোর না সিদ্ধান্ত হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় রাত ১টা থেকে অপারেশন চালানো হবে। কিন্তু পথে বিলম্ব হবে ভেবে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাত ১১.৩০ এর সময় রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।
এ সময় প্রথম আক্রমণের শিকার হয় ফার্মগেট এলাকার রাস্তায় মিছিলরত মুক্তিকামী বাঙালির ওপর। একই সাথে আক্রমণ চালানো হয় পিলখানাস্থ তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। রাত ১.৩০ মিনিটের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ শুরু হয় গভীর রাতে পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল (তৎকালীন ইকবাল হল), এত জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বই চালানো হয়। ২৫ মার্চ রাতে একইভাবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা চালানো হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয় ২৫ মার্চ থেকেই। ফলে পাকিস্তানিরা নির্মম হয়ে ওঠে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চরম নির্মমতা আর গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বীর বাঙালি ।
সবকিছুর স্বল্পতা সত্ত্বেও বাঙালি জাতি নিজেদের জাতীয়তাবোধ, সমস্ত ধরনের নির্যাতন আর শোষণ বঞ্ছনার জাল থেকে বেরিয়ে আসতে এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয় ।
০৪. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার ধরন বা স্বরূপ তুলে ধর।
অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য গণহত্যাসমূহের মধ্যে একটি। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরগণ ১৯৭১ এ এদেশের মাটিতে প্রায় ৫৩ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে। এদের মধ্যে ৩৪টি বড় মাপের অপরাধ। মোটাদাগে তারা ১৭ ধরনের যুদ্ধাপরাধ, ১৩ ধরনের মানবতাবিরোধী। অপরাধ করেছিল।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার ধরন বা স্বরূপ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা সুইডেনের (Uppasala University) মালি এথনিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা মতে, নাৎসি ও নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ সম্মুখ সমরে যত না বাঙালি জনসাধারণ আত্মাহুতি দিয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি মানুষ নির্বিচারে গণহত্যা, গুম, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পাকসেনারা যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাপূর্ব শারীরিক নির্যাতন চালায় তার ধরনগুলো নিম্নরূপ :
সন্দেহজনক ব্যক্তিকে দেখামাত্র গুলি করা এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, শক্তিসমর্থ, তরুণ ও যুবকদেরকে রাস্তা কিংবা বাড়িঘর থেকে বন্দি করে এনে চোখ বেঁধে সমষ্টিগতভাবে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর শারীরিক নির্যাতন করা।
এবং পরিশেষে পিছনে হাত বেঁধে কখনও এককভাবে কখনও কয়েকজনকে একসাথে বেঁধে গুলি করে নদী, জলাশয় বা গর্তে ফেলা দেওয়া, কখনও সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা, কখনও নিকটজনের সামনেই বন্দিদেরকে এক এক করে জবাই করা এবং দেহ টুকরো টুকরো করা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
গর্ভাবস্থায় ধর্ষণ করে উলঙ্গ অবস্থায় উল্টো করে ঝুঁলিয়ে রেখে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করা এবং মুখ থেতলে মেরে ফলা, বস্তায় ঢুকিয়ে বস্তার মুখ বেঁধে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা অথবা বস্তাবন্দি অবস্থায় নদীতে ফেলে দেওয়া, দড়ি দিয়ে বেঁধে লাথি, ঘুষি ও অন্যান্য আঘাতের দ্বারা থেঁতলে মেরে ফেলা।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ চিপে ধরে বাঁশ এবং রোলারের মাধ্যমে মেরে ফেলা, বেয়নেট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে, কখনও পেটের সমস্ত নাড়িভুঁড়ি বের করে কিংবা হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলা, বুক চিরে, অগ্নিকুণ্ড কিংবা বয়লারে নিক্ষেপ করে হত্যা করা ইত্যাদি।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, গণহত্যা সম্পর্কে লিঙ্গভিত্তিক অত্যাচারের প্রকৃতি ও ধরনের সাথে চীনের নানজিং- জাপানি ধর্ষণ, জার্মানি কর্তৃক রাশিয়ার মাটিতে বলাৎকার এবং আর্মেনিয়ায় সংঘটিত নারী নির্যাতনের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ৭১ এ সমগ্র দেশব্যাপী পাকিস্তানিরা এমনি অগণিত পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়।
এ অত্যাচারের ধরন পাকিস্তানি সৈন্যদের ভয়ংকর মনোবিকৃতি নামক মনোবিকারের প্রকাশ বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৫ শরণার্থী বলতে কী বুঝ?
অথবা, শরণার্থীর পরিচয় দাও?
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় অধ্যায় ছিল শরণার্থী ইস্যু। মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।
শরণার্থীরা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। ভারতসহ বিশ্বের ছোট-বড় বিভিন্ন রাষ্ট্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়ায় শরণার্থী ইস্যুটি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়।
শরণার্থী : সাধারণভাবে যুদ্ধ বা অন্য কোনো কারণে যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয় তাদের শরণার্থী বলা হয়। বিপজ্জনক রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামরিক সংঘাতজনিত পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে স্বীয় ভূমি বা দেশ ত্যাগ করে অন্য জায়গায় বা দেশে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়প্রার্থী জনগণই শরণার্থী হিসেবে পরিচিত।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (UNHCR) এর ১৯৫১ সালের সংবিধি অনুযায়ী, “জাতিগত, ধর্মীয় বা বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি কারণে যখন কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়, হত্যা করা হয়, তখন আক্রান্ত জনগোষ্ঠী নিজ জন্মভূমিতে নিরাপদ বোধ করে না।
তারা সীমান্ত অতিক্রম করে অন্যান্য রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে এবং বাস্তবে জীবন ঝুঁকির কারণে তারা নিজ দেশে ফিরে আসতেও কোনোভাবে সম্মত হয় না। তাই নির্যাতিত ও বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।” তাই ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১ কোটি লোক বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং এরাই শরণার্থী নামে পরিচিত। শরণার্থীদের প্রাথমিক চাপ পড়ে সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে। তবে সর্বাধিক শরণার্থী আশ্রয় নেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায়।
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র – ৮ম খণ্ড’-তে দেখা যায়, পশ্চিবঙ্গে ২৭,০৭,৯৪৭ জন, ত্রিপুরায় ৩,৮১,৩৭৩ জন, আসামে ৮১,৮০০ জন ও মেঘালয়ে ১৮,৬০৫ জন শরণার্থী আশ্রয় নেয়।
এছাড়া ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ৪০,৬২,৪৭৮ এবং এর মধ্যে ১৫,৫৯,১৪৪ জন গাছতলায় আশ্রয় নেয়। এসব শরণার্থীর অনেকেই খাদ্যাভাবে আবার অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
শরণার্থীরা ছিল পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের স্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ। মুক্তিযুদ্ধ প্রবাসী বাঙালি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে না আসত তবে ভারতের পক্ষে এককভাবে এ ভার বহন করা সম্ভব হতো না এবং মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
০৬. মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীসংক্রান্ত সমস্যা বর্ণনা কর।
অথবা, মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : যুদ্ধকালীন সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু হলো শরণার্থী। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে শরণার্থী আখ্যা লাভ করে থাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বহু মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীসংক্রান্ত সমস্যা : ১৯৭১ সালে বা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বাঙালি শরণার্থী সমস্যা চূড়ান্ত বিচারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সার্থক এবং সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে যেমন—
১. প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি শরণার্থী ভারতে অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি করে। এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ছিল পাকিস্তানকে পরাজিত করা এবং শরণার্থীদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার মধ্যে ৷
২. যুদ্ধ দীর্ঘ হলে বা দীর্ঘদিন শরণার্থী ভারতে থাকলে যে পরিমাণ অসুবিধা ও অমানবিকতা তৈরি হতো তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের ছিল না। যেমন ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার সমান ছিল শরণার্থী। ভারতের পক্ষে দীর্ঘদিন এ বোঝা বহন করা সম্ভব ছিল না।
৩. ১৯৭১ সালে শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকদের ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় ঘটে। ভারত সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন এবং এবং ভারতের * নাগরিকগণ শরণার্থীদের সাহায্য শুরু করেন। কিন্তু সে সাহায্যও প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল ছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
ফলে খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, চিকিৎসা ইত্যাদির অভাবে শরণার্থীগণ অকল্পনীয় অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে জীবন কাটানো শুরু করে ।
৪. শরণার্থীরা অনবরত মতে আশ্রয় নেওয়ার কারণে পাকিস্তান কোনোক্রমেই প্রমাণ করতে পারছিল না যে, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে; বরং শরণার্থীদের দেশত্যাগের কারণে বিশ্ববাসী বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারে যে, পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড চলছে। এর ফলে বিশ্ব জনমত পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করেনি।
৫. শরণার্থী সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় ভারত একে উপজীব্য করে বিশ্ব জনমত ভারত ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছিল, চূড়ান্ত বিচারে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে এক কোটির বেশি। শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের সংকট সন্ধিক্ষণে ভারত । সবসময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারত সরকার, ভারতীয় জনগণ, প্রবাসী বাঙালি, জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ শরণার্থীদের খাদ্য ও বস্ত্রের ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকলেও ক্যাম্পের শরণার্থীগণ খুব কমই মৃত্যুবরণ করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে প্রবেশের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করলেও ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার ফলে খুব সহজেই মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থী সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৭. মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেণে লেখ।
অথবা, মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে টীকা লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। বাঙালির মুক্তির বাসনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমর্থনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা ছিল মুজিবনগর সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্ব।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে।
মুজিবনগর সরকার : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের পর এক আদেশবলে বাংলাদেশের ওপর অস্থায়ী সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় এবং শেষ হয় মুজিনগর সরকার গঠনের প্রথম পর্যায় । নিম্নে মুজিবনগর সরকারের গঠন প্রণালী আলোচনা করা হলো :
রাষ্ট্রপতি – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । (পাকিস্তানের – কারাগারে বন্দি ) বন্দি)
উপরাষ্ট্রপতি – সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
প্রধানমন্ত্রী — অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। – এম. মনসুর আলী স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী – এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান।
আইন ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী- খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
প্রধান সেনাপতি কর্নেল (অব.) এম. এ. জি. ওসমানী।
বিমানবাহিনী প্রধান — গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার।
চিফ অভ স্টাফ কর্নেল (অব.) আব্দুর রব ।
সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করে যেভাবে রাষ্ট্রের শাসন কাজ পরিচালিত হয়ে থাকে তা থেকে যুদ্ধকালীন অস্বাভাবিক অবস্থায় মুজিবনগর সরকারের প্রকৃতি নিম্নরূপ :
১. অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রতিটি শন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থিত থেকে সভাপতিত্ব করতেন।
২. প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরেই সরকারের কাজকর্ম পরিচালিত হতো। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অপর তিন মন্ত্রী এবং প্রধান সেনাপতি সরকার পরিচালনায় ছিলেন। তাদের নীতিনির্ধারণের সর্বময় কর্তৃত্ব ছিল। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেন ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধান সেনাপতির মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সেক্টর কমান্ডারদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘটনা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আর এ প্রবাসী সরকারের অধীনেই ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। এটি বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
০৮. মহান মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর সম্পর্কে লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকেই ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে ই.পি.আর, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। কিন্তু সশস্ত্র পাকহানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য এটা যথেষ্ট ছিল না।
তাই মুজিবনগরে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠিত হওয়ার পর পেশাদার সৈন্যদের নিয়ে গঠিত হয় নিয়মিত বাহিনী স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী।
মহান মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১১টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে দুটি সেক্টরের আলোচনা করা হলো :
১ নম্বর সেক্টর : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী (ফেনী নদী) পর্যন্ত এ সেক্টরের কর্মসূচি বিস্তৃত ছিল। ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান । এরপর এ সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন মো. রফিক (পরে মেজর পদে উত্তীর্ণ হন)।
১ নম্বর সেক্টরে ২৪ মে মুক্তিবাহিনী চাঁদগাজিতে ক্যাপ্টেন অলি আহাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। ৬ জুন চাঁদগাজি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়।
তাদের ৭৫ জন সৈন্য নিহত হয়। ক্যাপ্টেন মাহফুজ, ক্যাপ্টেন শামসুল হুদার নেতৃত্বে যথাক্রমে হিয়াকু, রামগড় এবং দেবীপুর বিওপিতে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী বহু সাফল্য লাভ করে। অক্টোবরে মুক্তিবাহিনী ছাগলনাইয়া, বিলোনিয়া, বল্লমপুর আক্রমণ করে বহু পাকিস্তানি সৈন্যকে হতাহত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
২ নম্বর সেক্টর : এ সেক্টরটি নোয়াখালী জেলা এবং আখাউড়া হয়ে ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাছাড়া কুমিল্লা জেলা, ঢাকা জেলার ঢাকা এবং ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ এ সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ।
পরে এখানকার দায়িত্ব গ্রহণ করে মেজর এ. টি. এম. হায়দার।
এ সেক্টরের অধীনে ছিল ৩০ হাজার গেরিলা সৈনিক। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৪ হাজার। এ সেক্টরে ৬টি সাব সেক্টর ছিল।
এগুলো ছিল—
প্রথমত সাব সেক্টর ১. গঙ্গাসাগর, আখাউড়া এবং কসবা ।
এরপর সাব সেক্টর ২. মন্দভাগ। সাব সেক্টর ৩. শালদা নদী এবং আশপাশের এলাকা
এবং সাব সেক্টর ৪. মতিনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা । সাব সেক্টর ৫. গোমতীর দক্ষিণে নির্ভারপুর।
সাব সেক্টর ৬. রাজনগর ।
২ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে মুন্সিরহাট, ছাগলনাইয়া, বিলোনিয়া যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী সাফল্য লাভ করে। ৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী শালদা নদী যুদ্ধে জয়লাভ করে। এ মাসে কসবা যুদ্ধেও সাফল্য আসে। এ সেক্টরে আরও নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ক্যাপ্টেন আইন উদ্দিন, ক্যাপ্টেন দিদার, মেজর মতি, ক্যাপ্টেন মালেক প্রমুখ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে সহজে জয়লাভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সেক্টরে বিভক্তকরণ ছিল একটি অনন্য সামরিক কৌশল। এ কৌশলকে সফল করার ক্ষেত্রে ১ নং ও ২ নং সেক্টর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৯ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্য কী ছিল?
অথবা, মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল কথা বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে মেহেরপুর জেলার বৈধ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে পুঁজি করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধ একটি সাংগঠনিক রূপ পায়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণার কারণ এবং গণপরিষদ গঠনের কথা বিশদভাবে তুলে ধরা হয় ।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্য : অধ্যাপক ইউসুফ আলী কর্তৃক গঠিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যুদ্ধ ঘোষণার কারণ এবং যুদ্ধকালীন সরকারের গঠন সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরা হয় । নিম্নে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্য তুলে ধরা হলো :
১. স্বাধীনতা ঘোষণা : ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল বক্তব্যে বলা হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছিল দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য।
পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে।
তাই এরূপ বিশ্বাসঘাতকতার আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ আধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মানুষকে বাংলাদেশের সম্মান ও সংহতি রক্ষার আহ্বান জানান।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
এ প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
২. গণপরিষদ গঠন : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে গণপরিষদ গঠন সম্পর্কে বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখানে বাংলাদেশে বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে এবং পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ, গণহত্যা ও নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনা দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব করে তুলেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ বিপ্লবী চেতনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। তাই আমরা যারা বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ওপর যে গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনে আমরা একটি গণপরিষদ গঠন করলাম।
৩. গণপরিষদের কাঠামো : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে গণপরিষদ গঠনের কারণের পাশাপাশি গণপরিষদের গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, যে পর্যন্ত না একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয় সে পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি থাকবেন এবং রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক থাকবেন এবং তিনি রাষ্ট্রে সমুদয় নির্বাহী ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ক্ষমতাসহ ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
এ ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির সকল দায়িত্ব পালন করবেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ছিল মূলত মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দলিল ।
এ ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার যৌক্তিকতা ঘোষণা করে ও স্বীকৃতি দেয়। এর পাশাপাশি এ ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য একটি যুদ্ধকালীন সরকার গঠনের কারণ চিহ্নিত করা হয় এবং সেই সরকারের রূপরেখা কী হবে সে বিষয়েও অভিহিত করা হয় ।
১০. মুক্তিবাহিনী কী?
অথবা, মুক্তিফৌজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত বাহিনীকে মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ বলা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশে গেরিলা যুদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৫ মে থেকে। এসময় প্রবাসী সরকার ভারতীয় সামরিকবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ।
এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮,৬০০ জন। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
মুক্তিবাহিনী : মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের গর্ব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী যখন বাংলাদেশে নৃশংস গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসলীলা চালায় তখন সারা দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ শত্রুর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
কোনো প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই অদম্য সাহসে বাংলার নিরীহ মানুষ পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে। দেশ হতে আত্মগোপনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ, ছাত্র, জনতা, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। গঠিত হয় মুক্তিফৌজ। একে সম্প্রসারিত করে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-সংক্ষিপ্ত) *
ভারতীয় সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনীর সদস্য দর গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য বিশেষ সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । ফলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক পারদর্শিতা প্রদর্শন করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল। বাঙালি জাতির জীবনে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় ও গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, শোষণ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার আপামর জনসাধারণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে এক চূড়ান্ত ও দুর্বার সংগ্রামই ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
এ যুদ্ধে জয়লাভের ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।