অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: পাকিস্তান : ভাষা আন্দোলন ও বাঙ্গালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
০১. মুসলিম লীগের বিভক্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম লীগের বিভক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়। ১৯১৩-১৯৩৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ অবিভক্ত ভারতে মধ্যবিত্ত মুসলমান শ্রেণিকে আকৃষ্ট করলেও নেতৃত্বের কোন্দল এ রাজনৈতিক দলে ভাঙনের সৃষ্টি করে।
মুসলিম লীগে বিভক্তি : ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পরই পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক ধারায় খাজা নাজিমুদ্দিন, মওলানা আকরম খাঁ আর অন্য ধারায় সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম নেতৃত্ব দেন। অন্য একটি ধারার নেতৃত্ব দেন শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক।
পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগ দেন। নিম্নে মুসলিম লীগের বিভক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
১. আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন : মুসলিম লীগে অন্তর্দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মুসলিম লীগ ভেঙে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
২. কনভেনশন মুসলিম লীগ গঠন : পাকিস্তানে ১৯৫৮-৬২ সাল পর্যন্ত প্রথম দফা সামরিক শাসনের পর ১৯৬২ সালে দলীয় রাজনীতি শুরু হয়। এসময় আইয়ুব খান একটি দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ।
এর অংশ হিসেবে মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী খালেকুজ্জামান ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সালে করাচিতে মুসলিম লীগের কনভেনশন আহ্বান করেন। এর মাধ্যমে গঠিত হয় কনভেনশন মুসলিম লীগ।
৩. কাউন্সিল মুসলিম লীগ গঠন : ১৯৬২ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় কাউন্সিল মুসলিম লীগ গঠিত হয়। খাজা নাজিমুদ্দিন এর সভাপতি নিযুক্ত হন। পূর্ব পাকিস্তানে এর নেতা ছিলেন খাজা খয়েরউদ্দিন । এ দলটি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানের অন্যতম রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ অবক্ষয়ের মুখে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয় এবং নেতা কর্মীরা দল ত্যাগ করতে থাকে।
এমনকি দলত্যাগীদের উদ্যোগে গঠিত সংগঠনগুলোর জনপ্রিয়তা মুসলিম লীগের পতন ত্বরান্বিত করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম লীগ বিরোধী বেশকিছু দল গড়ে ওঠে। এর মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ অন্যতম।
০২. গণআজাদী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
অথবা, গণআজাদী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পূর্বে এবং পরে পূর্ববাংলায় নতুন নতুন অনেক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয় উক্ত দলসমূহের মধ্যে গণআজাদী লীগ অন্যতম। তরুণ কর্মীদের নেতৃত্বে এ সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। তৎকালীন সময়ে অর্থাৎ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্বে উক্ত দলটি পূর্ববাংলায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।
গণআজাদী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : গণআজাদী লীগ যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গঠন করা হয়, সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো :
১. পাকিস্তানে নাগরিক অধিকার অব্যাহত রাখা।
২. জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি।
৩. পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা ।
৮. মানুষের মধ্যে বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি আনয়ন করা ।
৫. ‘লাঙল যার জমি তার’ এ তত্ত্বের ভিত্তিতে জমির বিলিবণ্টন।
৬. বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের কথা ইত্যাদি
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত যে উদ্দেশ্য নিয়ে পূর্ববাংলায় গণআজাদী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সফল হয়নি। অভ্যন্তরীণ নানা গোলযোগ, সঠিক নেতৃত্বের অভাব, রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ইত্যাদি বিভিন্ন মারাত্মক পরিস্থিতির মুখে পড়ে এ দল পূর্ববাংলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এসব কারণে আস্তে আস্তে দলটির বিলুপ্তি ঘটে।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
০৩. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আদর্শ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আদর্শ ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বে বাংলায় কমিউনিস্ট পন্থি, কংগ্রেস লীগ পন্থি এবং মুসলিম লীগ পন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো প্রচলিত ছিল। এছাড়াও অইগঝখ, ঊচগঝখ ইত্যাদি সংগঠনগুলোও তখনকার সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (পরবর্তীতে ছাত্রলীগ রূপে আত্মপ্রকাশ করে) ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাত্র সংগঠনটি কতকগুলো আদর্শ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আদর্শ ও উদ্দেশ্য : পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আদর্শ ও উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ক. পূর্ব পাকিস্তানে বিভিন্ন প্রতিভাবানদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তাদের প্রতিভা বিকশিত হয়।
খ. বিভিন্ন ধরনের কারিগরি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, ধাত্রীবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় শিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে উৎসাহিত করা ।
২. পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুদের কবল থেকে পাকিস্তানকে মুক্ত করে পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা ।
৩. ক. স্বার্থলোভী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলা এবং ছাত্রসমাজ যাতে তাদের স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়ার না হয় তার ব্যবস্থা করা।
খ. ছাত্রসমাজকে যেকোনো প্রকার দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
৪. ক. নিরক্ষরতা দূরীকরণ।
খ. ছাত্রসমাজকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুফল সম্পর্কে অবগত করে একত্র করা।
গ. ছাত্রসমাজের ন্যায্য দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা, ছাত্রসমাজকে আধুনিক রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া এবং চারিত্রিক বিপ্লব সৃষ্টি করা। দেশ ও জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে ছাত্রসমাজকে কর্মতৎপর হতে উদ্বুদ্ধ করা।
৫. ইসলামের নীতির ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে সংগ্রাম ঘোষণা করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
৬.. পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনা দূরীভূত করা।
৭. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের দাবিগুলো সমভাবে পূরণ করার মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা ।
৮. সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডসমূহের পক্ষপাতিত্ব করা এবং জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডসমূহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ।
৯. প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
১০. দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মুনাফালোভী ও চোরাকারবারিদেরকে উচ্ছেদ করা এবং একক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ পাকিস্তানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে সবসময় সমর্থন দিয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ সংগঠনের সদস্যবৃন্দ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তানে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্রলীগকে প্রভাব বিস্তার করতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি।
০৪. আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুসলিম লীগ নেতাদের বৈষম্যমূলক নীতি ও ত্যাগী নেতাদের অবহেলা প্রভৃতি নানাবিধ কারণে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়।
আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : নিম্নে আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হলো :
১. সংবিধানে গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি পাকিস্তানের সংবিধান এবং আইন যাতে সত্যিকার গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় তা নিশ্চিত করা ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ।
২. রাষ্ট্রের অখণ্ডতা সংরক্ষণ : আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং স্থায়িত্ব সংরক্ষণ করা ।
৩. মুসলমানদের স্বার্থ নিশ্চিত করা পাকিস্তানের মুসলমানদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামরিক, শিক্ষার স্বার্থ নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের একই অধিকার নিশ্চিত করা।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
৪. নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ : নাগরিকের মৌলিক অধিকার; যেমন- ব্যক্তিগত এবং বিশ্বাসের যৌথ স্বাধীনতা, ভাষণ, সংগঠন ইত্যাদি মৌল অধিকার নিশ্চিত করা ।
৫. নৈতিক ও পার্থিব অবস্থার উন্নতি সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, নির্যাতন বন্ধ, দুর্নীতি দূরীকরণ এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজসেবা করে জনগণের নৈতিক ও পার্থিব অবস্থার উন্নতি করা।
৬. শ্রমজীবীদের স্বার্থ সংরক্ষণ সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং শ্রমের পূর্ণ মজুরি নিশ্চিত করা।
৭. মানবাধিকারে নিশ্চয়তা : পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের প্রয়োজনীয়তা যথা খাদ্য, আশ্রয়, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সৎ ও সম্মানজনক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ।
৮. স্বৈরাচারের অবসান : সদ্য গঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা ২৪ জুন আরমানিটোলায় অনুষ্ঠিত হয়। মওলানা ভাসানী মুসলিম লীগের ২২ মাসের অপকীর্তির খতিয়ান তুলে ধরেন এবং স্বৈরাচারের অবসানকল্পে জনগণকে আওয়ামী মুসলিম লীগের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। জনগণও তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল ।
৯. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথককরণ, বিচার বিভাগ এবং গণকর্ম কমিশনের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং গ্রেপ্তারের পূর্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা।
১০. আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটি একটি গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালনা, মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা, সংবিধানের নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা সর্বোপরি স্বৈরাচারের অবসানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হয়। পরবর্তীতে এ দলের মাধ্যমেই নানা চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয় ।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
০৫. তমদ্দুন মজলিশ কী?
অথবা, তমদ্দুন মজলিশ সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর ভূমিকা : পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পক্ষপাতমূলক ভাষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বেশকিছু সংগঠনের জন্ম হয়। তন্মধ্যে তমদ্দুন মজলিশ অন্যতম। এ সাংস্কৃতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে ।
তমদ্দুন মজলিশ : পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ নিয়ে ভারত বিভাগের পূর্ব থেকে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। আস্তে আস্তে এটি মর্যাদা বা অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এ আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তমদ্দুন মজলিশ গঠন করা হয়।
দেশভাগের পূর্বেই মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পরিকল্পনা করে। বাংলার বুদ্ধিজীবী সমাজ এ মতের প্রতিবাদ জানায়। এরই প্রেক্ষাপটে ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের উদ্যোগে ঢাকায় তমদ্দুন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠিত হয়।
দেশভাগের পূর্বেই মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পরিকল্পনা করে। বাংলার বুদ্ধিজীবী সমাজ এ মতের প্রতিবাদ জানায়। এরই প্রেক্ষাপটে ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের উদ্যোগে ঢাকায় তমদ্দুন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিস্তারে তমদ্দুন মজলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনায় এ সংগঠনের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যবহ। তমদ্দুন মজলিশ বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও আইন আদালতে ব্যবহারের ভাষা হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানায় এবং এর পক্ষে প্রচারণা শুরু করে।
তমদ্দুন মজলিশের প্রচারণায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী মহলেও ব্যাপক সাড়া পড়ে। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে তমদ্দুন মজলিশ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করে।
তমদ্দুন মজলিশ সম্পর্কে মোহাম্মদ তোয়াহা বলেছিলেন, “বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা যায় কি না এ নিয়ে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে চিন্তার সূত্রপাত করে তমদ্দুন মজলিশ।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে তমদ্দুন মজলিশ একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংস্থা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবির সমর্থনে তমদ্দুন মজলিশ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। এ সংগঠনের মাধ্যমেই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।
০৬. ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কী?
উত্তরঃ ভূমিকা : বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়।
পূর্ববাংলার জনগণের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপই ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন । ভাষা আন্দোলন : নিম্নে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পরিচয় : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ফলে বাঙালি জনগণ বিশেষ করে ছাত্র ও যুবসম্প্রদায় বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটাই ‘ভাষা আন্দোলন’ নামে খ্যাত।
২. আন্দোলনের সূত্রপাত : ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মার্স থেকে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সংগ্রাম পরিষদের ঘোষিত প্রতিবাদ দিবসে এ আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং রক্তঝরার মাধ্যমে এ আন্দোলন বৈপ্লবিক আকার ধারণ করে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি।
সাবেক পাকিস্তান গণপরিষদের বাংলা ভাষা বিরোধী সিদ্ধান্ত ও সরকারি দলের বাংলা ভাষা বিরোধী কার্যকলাপের ফলে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
৩. আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ঘোষণা করেন, “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” তার এ ঘোষণাই ভাষা আন্দোলনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে এবং চারদিকে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
১৯৫০ সালের মূলনীতি কমিটির রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দাবি না থাকায় বাঙালি জনমত এর প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তা প্রত্যাখ্যান করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে আবারও ঘোষণা করেন যে, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।”
এর প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং ধর্মঘটের প্রতি বিপুল জনসমর্থন পাওয়া যায়। এ অবস্থায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করলে তখনকার সরকার ভাষা আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য এদেশের ছাত্রসমাজকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ভয় দেখায়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সমগ্র ঢাকা নগরীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু বাংলার নির্ভীক ও দামাল ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নামে। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি ৭ অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন থেকে মিছিল বের হয়। কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হতে না হতেই মিছিলের ওপর পাকিস্তানি পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ শুরু হয়।
ফলে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন বরকত, সালাম, জব্বার ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা বাংলায় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে এবং তারা এক প্রবল ও অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তোলে। এর ফলে শুরু হয় মাতৃভাষার অধিকার আদায় ও বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।
এ আন্দোলনের তীব্রতায় পাকিস্তান সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। এভাবে রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলন বিশ্বের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। বাঙালিদের মতো সারাবিশ্বে অন্য কোনো জাতিকে ভাষার জন্য এত রক্ত দিতে হয়নি।
এজন্যই বর্তমানে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেমন অগ্রগামী আন্দোলন তেমনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে এটি একটি মাইলফলক।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
০৭. ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব লেখ।
অথবা, আমাদের জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে যারা আত্মত্যাগ করেছিলেন বা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের স্মরণে ১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গসংস্থা বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারির শহিদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ বাংলার অগণিত দামাল ছেলে বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছিল।
তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার অধিকার পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এস. কে. সাদেক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন ।
এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব : নিম্নে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. বাঙালি জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি : ২১ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য আন্তর্জাতিক দিবসের মতো মহান শহিদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিশ্ববাসী জানতে পারে বাঙালির গৌরবগাথা, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং আমাদের ভাষা শহিদদের।
২. জাতিসত্তা ও ভাষাসত্তার চরম বিকাশ : পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র জাতি ও তাদের ভাষাগোষ্ঠীকে মাতৃভাষা দিবস আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ দিবসের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জাতিসত্তা বা ভাষাসত্তা এবং সার্বভৌমত্বের চরম বিকাশ স্বীকৃত হয়েছে।
৩. জাতীয় গৌরবময় দিন : পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা হলো বাংলা। বাঙালি জাতির অগ্রণী ভূমিকায় বিশ্বব্যাপী এ ভাষার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। এ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গৌরবময় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে ।
৪. ভাষার ঐতিহ্য রক্ষা প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। মাতৃভাষা প্রত্যেকের নিকট অত্যন্ত গৌরবের। মাতৃভাষার মাধ্যমে যত সহজে একজন অপরজনের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারে অন্য কোনো ভাষায় তা পারে না তাই মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে প্রত্যেক ভাষার ঐতিহ্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট ভাষার জন্য বাঙালির রক্তদান ও আত্মত্যাগের ইতিহাস উপস্থাপিত হওয়ার সুযোগ হয়।
০৮. বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।
তাই পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগণ পাকিস্তানের উক্ত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্দোলন শুরু করে।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তা : বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে যখন উর্দুকে ঘোষণা দেওয়া হয় তখন পূর্ব পাকিস্তানিরা এ সিদ্ধান্তের ঘোর প্রতিবাদ জানায় এবং বাংলা ভাষার পক্ষে গণআন্দোলন গড়ে তোলে । তাদের এ গণআন্দোলন করার যথেষ্ট কারণ ছিল।
তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের ৫৬% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা ছিল আর মাত্র ৩.২৭% মানুষের মাতৃভাষা উর্দু ছিল। তখন সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে নিজেদের মাতৃভাষাকে ত্যাগ করে অন্য নতুন ভাষা শিক্ষা করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না ।
২. বাঙালি জাতির পক্ষে উর্দু ভাষা শিক্ষা করে চাকরির প্রতিযোগিতায় উর্দু ভাষাভাষীদের সাথে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না ।
৩. বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানের সামরিকবাহিনী এবং প্রশাসনিক বিভাগে ততটা প্রাধান্য দেওয়া হতো না। এরপর উর্দুকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দান করলে এসব ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির অংশগ্রহণের হার আরও নগণ্য হতো ।
৪. তৎকালীন সময়ে উর্দু ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে বাঙালিরা সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ত। ফলে উর্দু ভাষাভাষী গোষ্ঠীরা একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হতো।
৫. উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হলে উর্দু ভাষাভাষীরা পাকিস্তানের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করতো, যদিও তখন পূর্ব পাকিস্তানিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে ছিল ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
৬. উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হলে বাঙালি সত্তার সমাধি রচিত হতো।
৭. উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা করার বিরুদ্ধে বাঙালি শিক্ষিত সমাজ তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিধায় বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দান করা সম্ভব হয়েছে । তা না হলে বাঙালি জাতি শোষণ এবং নিপীড়নের পদাঘাতে একেবারে মাটির সাথে মিশে যেত ।
৮. বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এদেশেরই কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোক বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলে পাকিস্তান থেকে বাংলা ভাষাকে বিতাড়িত করার অপচেষ্টা চালায়। যদিও তাদের এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা প্রদান করতে বাধ্য হয়।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
০৯. যুক্তফ্রন্ট কী?
অথবা, যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ৷
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন পূর্ববাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলার ৪টি রাজনৈতিক দল মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্টের ছায়াতলে পূর্ববাংলার মানুষ সমবেত হয়ে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে ।
যুক্তফ্রন্ট : ১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য চারটি বিরোধী দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জোটকে যুক্তফ্রন্ট বলা হয়। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে পূর্ববাংলার বিরোধী রাজনীতিবিদদের কয়েকজন মিলে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচনের পূর্বে একটি জোট গঠন করেন।
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা আতাহার আলী এবং হাজি মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বে এই জোট গঠিত হয়।
যুক্তফ্রন্ট গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি ইশতাহারে পূর্ববাংলার কৃষি, শিল্প ও শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার যেমন আশ্বাস ছিল তেমনিই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিও ছিল ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
যুক্তফ্রন্টভুক্ত দল : যুক্তফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দল ছিল ৪টি দলসমূহ নিম্নরূপ :
১. কৃষক-শ্রমিক পার্টি : কৃষক-শ্রমিক পার্টি গঠিত হয় (১৯৫৩, পূর্বের কৃষক-প্রজা পার্টি) শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে। এটি ছিল গণতান্ত্রিক একটি দল ।
২. আওয়ামী মুসলিম লীগ : আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে । এটি ছিল একটি মধ্যপন্থি দল ।
৩. নেজামে ইসলাম : নেজামে ইসলাম দলের নেতৃত্বে ছিলেন। মাওলানা আতাহার আলী। এটি গঠিত হয় ১৯৫৩ সালে । এটি একটি ইসলামি দল ।
৪. গণতন্ত্রী দল : ১৯৫৩ সালে হাজি মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বে বামপন্থি তরুণরা এটি গঠন করে। এটি বামপন্থি দল। তবে এর ফ্রন্টভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই ছিল যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল লক্ষ্য ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক, মধ্যপন্থি, ইসলামি ও বামপন্থি দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। ক্ষমতাসীন ও মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান ও আধিপত্যের বিরোধিতাই ছিল এর মূল ভিত্তি। এ. কে. ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী প্রমুখ ছিলেন এর মূল নেতৃত্বে।
১০. যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি আলোচনা কর।
অথবা, যুক্ত্য কেন গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দুই পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের চারটি রাজনৈতিক দল দিলে মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটানোর জন্য ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগন এ জোটের ছায়াতলে সমবেত হয়ে নির্বাচনে যুয়েন্টিকে বিজয়ী করে।
যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি/প্রেক্ষাপট/কারণ যুক্তডন্ট গঠনের পটভূমি/ প্রেক্ষাপট বা কারণ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণ: পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করেন।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানে তাদের শাসন ও শোষণ টিকিয়ে। রাখার নব-নব কৌশল উদ্ভাবন করেন। শাসকগোষ্ঠীর এ বিমাতাসুলভ আচরণ থেকে মুক্তি লাভের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন।
২. সরকার বিরোধী শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা : মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জনমত বিক্ষুব্ধ হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিলম্বিত সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে।
এই নির্বাচনে জয়লাভ কঠিন বিবেচনা করে সরকার বিরোধী শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (অধ্যায়-৪) সংক্ষিপ্ত *
৩. নির্বাচনে মুসলিম লীগকে চরম শিক্ষা প্রদান : ১৯৫৪ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নির্বাচন ঘোষণা করে। এই নির্বাচনে পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগকে চরম শিক্ষা দেয়ার জন্য এ অঞ্চলের চারটি সমমনা দল জোট গঠন করে।
৪. ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের পতন ঘটানো : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার শুরু থেকেই প্রশাসন বিভাগে অসমতা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখায়।
যা পূর্ববাংলার জনগণকে ক্রমশ বিক্ষুবদ্ধ করে তোলে এজন্য ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দলের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
৫. ছাত্র-তরুণ এবং প্রগতিবাদীদের দাবি বাঙালি জনমত মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তিক্ততার চরমে উঠলে পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ ছাত্র সমাজ এবং প্রগতিবাদীদের দাখিতে একটি সম্মিলিত ঐক্যজোট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবশেষে তাদের দাবির ফলেই ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্তফ্রন্ট গঠন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগকে উচিত শিক্ষা দেয়া এবং মুসলিম লীগ সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানে কয়েকটি বিরোধী দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।