SSC-সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নবম-দশম: PDF

SSC-সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নবম-দশম: PDF- সাধারণ বিজ্ঞান হতে যেকোনো ধরনেরসৃজনশীল  প্রশ্ন-উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয়া ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেন আপনার খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য সাধারণ বিজ্ঞান হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।

সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এসএসসি- SSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।

 

নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সমুহ:

প্রশ্ন -১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

মিসেস সান্তা সন্তানধারণে অক্ষম হওয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার এ সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তার ডিম্বাণুর পরিস্ফুটন ঘটান। অন্যদিকে মিসেস সান্তার চাচাতো বোন মিতা পুত্র সন্তানের আশায় এখন পাঁচ কন্যা সন্তানের জননী।

  ক. নিউক্লিওপ্রোটিন কাকে বলে?

খ. জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কী বুঝায়?

গ. মিসেস সান্তার ক্ষেত্রে ডাক্তার কোন বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করলেন? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. মিতার একই রকম সন্তান হওয়ার বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ কর।

 

  ১নং প্রশ্নের উত্তর 

ক. প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড সহযোগে যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি হয় তাকে নিউক্লিওপ্রোটিন বলে।

 

খ. কতগুলো জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে; অথচ তাদের সমগোত্রীয় এবং সমসাময়িক জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এসব জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। 

 

গ. মিসেস সান্তার ক্ষেত্রে ডাক্তার যে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন সেটি হলোÑ টেস্টউিউব বেবি জন্মানোর ব্যবস্থা। কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়।

ডাক্তার মিসেস সান্তার ডিম্বাণু ও তার স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে বিশেষ ধরনের পালন মাধ্যমে (ঈঁষঃঁৎব সবফরঁস) এদের মিলন ঘটান। এরপর পালন মাধ্যমে প্রাথমিক ভ্রূণ উৎপাদন করে, উৎপাদিত ভ্রƒণকে স্ত্রী লোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করেন। এরপর প্রসূতির পরিচর্যার দ্বারা মিসেস সান্তা সন্তান লাভ করবেন।

ঘ. আমরা জানি, মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। এই ২৩ জোড়ার মধ্যে ২২ জোড়াকে অটোসোম এবং বাকি এক জোড়াকে লিঙ্গ নির্ধারক বা সেক্স ক্রোমাসোম বলে।ডিপ্লয়েড অবস্থায় মহিলাদের দেহকোষে ঢঢ সেক্স ক্রোমাসোম থাকে এবং পুরুষের দেহকোষে ঢণ ক্রোমোসোম থাকে।

মহিলাদের মাতৃ জননকোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে যে চারটি ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়, তার প্রত্যেকটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম থাকে। ফলে সব ডিম্বাণু হয় ‘ঢ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট।

পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু গঠনের সময় চারটি শুক্রাণুর মধ্যে দুটি শুক্রাণুর প্রতিটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম এবং অপর দুটি প্রতিটি ১১ জোড়া অটোসোমসহ ণ ক্রোমোসোম ধারণ করে। ফলে পুরুষদের শুক্রাণু হয় দুই ধরনেরÑ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট।

গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ঢ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে কন্যাসন্তান হবে, কারণ এখন ‘ঢঢ’ একসাথে হবে। আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ণ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢণ’ একসাথে হবে।

মিতার প্রতিবার গর্ভধারণের সময় তার ডিম্বাণুর সাথে তার স্বামীর ঢ-ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর মিলনের ফলে কন্যা সন্তান হয়েছে। এক্ষেত্রে মিতার কোনো ভূমিকা নাই, কারণ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ হয় বাবার সেক্স ক্রোমোসোম দ্বারা।

 

প্রশ্ন -২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

জামান বিবর্তন অধ্যায়টি ভালো বুঝতে না পেরে তার বাবার কাছে যায়। বাবা সমসংস্থ বিবর্তন সম্পর্কিত প্রমাণটি বুঝিয়ে দিলেন। এরপর জামান তার বাবার কাছে বিবর্তনের মতবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ল্যামার্কের মতবাদ ও ডারউইনের মতবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।

  ক. সেক্স ক্রোমোসোম কাকে বলে?

খ. বিবর্তন বলতে কী বুঝায়?

গ. বাবা কীভাবে বিবর্তন সম্পর্কিত উল্লিখিত প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন।

ঘ. বাবার বুঝিয়ে দেয়া মতবাদ দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য? তুলনামূলক আলোচনা করে মতামত দাও।

 

  ২নং প্রশ্নের উত্তর 

ক. দেহকোষে লিঙ্গ নির্ধারণে যে একজোড়া ক্রোমোসোম বিশেষ ভূমিকা রাখে তাদের সেক্স ক্রোমোসোম বলে।

 

খ. বিবর্তন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো কোনো বস্তুর ধীর এবং ক্রমাগত পরিবর্তন। তাই বিবর্তন বলতে বুঝায় ধীর, অবিরাম ও গতিশীল পরিবর্তন দ্বারা কোনো সরলতর জীবের পরিবর্তন দ্বারা জটিল ও উন্নতর নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাকে।

 

গ. জামানকে তার বাবা বললেন সৃষ্টির পর থেকে কোটি কোটি বছর ধরে জীবজগতের পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটেছে তার স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণের মধ্যে সমসংস্থ অঙ্গ একটি প্রমাণ।

পাখির ডানা, বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, সিলের অগ্রপদ, ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত ইত্যাদি সমসংস্থ অঙ্গ। আপাতদৃষ্টিতে এদের আকৃতিগত পার্থক্য দেখা গেলেও অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে এদের অস্থিবিন্যাসের মৌলিক প্রকৃতি একই ধরনের।

বহিরাকৃতিতে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার জন্যই ঘটেছে। পাখি ও বাদুড়ের অগ্রপদ ওড়ার জন্য, তিমির অগ্রপদ ফ্লিপার সাঁতারের জন্য, ঘোড়ার অগ্রপদ দৌড়ানোর জন্য ও মানুষের অগ্রপদ হাত কোনো জিনিস ধরা ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের জন্য পরিবর্তিত হয়েছে।

সমসংস্থ অঙ্গগুলো থেকে বোঝা যায় যে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ তথা জীবগুলো উৎপত্তিগতভাবে এক, যদিও সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে বর্তমানে তাদের গঠন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

তাই বিবর্তনবিদগণ মনে করেন যে সমসংস্থ অঙ্গবিশিষ্ট জীবগুলোর উৎপত্তি, একই পূর্বপুরুষ হতে ঘটেছে। এই তথ্য জৈব বিবর্তনকে সমর্থন করে। এভাবে জামানের বাবা সমসংস্থ অঙ্গের উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশের দ্বারা বিবর্তনের প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন। 

ঘ. জামানের বাবার বুঝিয়ে দেওয়া বিবর্তনের মতবাদ দুটির মধ্যে ডারউইনবাদ বা ডারউইনের মতবাদ গ্রহণযোগ্য।

আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা জৈব বিবর্তনে ল্যামার্কের মতবাদ গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ বংশগতি বিদ্যার প্রসারের পর বংশগতিবিদগণ জীবের মধ্যে অনুসন্ধান করেছেন অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রম। কিন্তু বাস্তবে অর্জিত বৈশিষ্ট্য যে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এর সপক্ষে বংশগতিবিদগণ কোনো প্রমাণ পাননি। 

ডারউইনের দৃষ্টিতে প্রকৃতিতে সংঘটিত সাধারণ সত্যগুলো হলো

১. অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি।

২. সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান।

৩. অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। ডারউইন লক্ষ করেন যে জীবকে তিনটি পর্যায়ে এই সংগ্রাম করতে হয়। যথা : অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম, অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম এবং পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম। 

৪. প্রকরণ।

৫. যোগ্যতমের জয়।

৬. প্রাকৃতিক নির্বাচন : ডারউইনের তত্ত্বের এই প্রতিপাদ্যটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে সুবিধাজনক প্রকরণ দেখা যায়, প্রকৃতি তাদের নির্বাচন করে এবং তাদের লালন করে। সুবিধাজনক প্রকরণযুক্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং অযোগ্যদের তুলনায় বেশি হারে বংশবিস্তার করতে পারে।

এদের বংশধরদের মধ্যে প্রকরণগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। এই বংশধরদের মধ্যে যাদের সুবিধাজনক প্রকরণ বেশি থাকে, প্রকৃতি আবার তাদের নির্বাচন করে।

এভাবে যুগযুগান্তর ধরে নির্বাচিত করে প্রকৃতি প্রাণী ও উদ্ভিদের নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। বর্তমানে বংশগতিবিদ, কোষতত্ত্ববিদ ও শ্রেণিবিদগণ নতুন প্রজাতির উৎপত্তির বিষয়ে ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের ভিত্তিতে বলেন, ধীরগতিতে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের গ্রহণযোগ্যতাকে আমি সমর্থন করি।

 

প্রশ্ন -৩ নিচের চিত্রটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

 

  ক. হানটিংটন’স রোগের কারণ কী?

খ. মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেন?

গ. চিত্রের ‘চ’ অঙ্গাণুর রাসায়নিক গঠন ব্যাখ্যা কর।

ঘ. বংশগতিতে ‘চ’ অঙ্গাণুটির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর 

 

ক. হানটিংটন’স রোগের কারণ পয়েন্ট মিউটেশন।

খ. মানব ক্লোনিং এবং নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক উঠছে। তাই এ ধরনের ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে বেশি কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো : 

১. ক্লোন করা শিশুটি সুস্থ হবে না বরং উল্টো প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হওয়ারও আশঙ্কা বেশি। 

২. মানব ক্লোনিং হবে প্রকৃতির ওপর এক বড় ধরনের হস্তক্ষেপ। 

৩. ধর্ম আর বিজ্ঞান এক নয়। মানুষের ক্লোনিং হবে ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ।

এসব কারণেই মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

 

গ. উদ্দীপকের চিত্রের চ অঙ্গাণুটি নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোসোম। ক্রোমোসোমের রাসায়নিক গঠনে দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান। দু ধরনের নিউক্লিক এসিড ক্রোমোসোমে থাকে যথাÑ ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (উঘঅ)  এবং রাইবো নিউক্লিক এসিড (জঘঅ)

ডিএনএ অণু দ্বিসূত্রকবিশিষ্ট লম্বা শৃঙ্খলের নিউক্লিওটাইড দিয়ে গঠিত পলিনিউক্লিওটাইডের একটি নিউক্লিওটাইড, একটি ফসফেট, একটি নাইট্রোজেন ক্ষারক ও শর্করা নিয়ে গঠিত। ডিএনএ অণুর আকৃতি অনেকটা প্যাচানো সিড়ির মতো। দুপার্শ্বের শর্করার সাথে দুটি করে নাইট্রোজেন ক্ষারক জোড় বেঁধে তৈরি করে সিঁড়ির ধাপ। 

আরএনএ অণু এক সূত্রক এবং পলিনিউক্লিওটাইড। এর নাইট্রোজেন ক্ষারক হলো ডিএনএর মতো । শুধু পার্থক্য হচ্ছে ডিএনএতে পাইরিমিডিন ক্ষারক  থাইমিন আছে, কিন্তু আরএনএতে থাইমিন এর পরিবর্তে ইউরাসিল আছে। 

ক্রোমোজোমে দু ধরনের প্রোটিন থাকে। যথা : হিস্টোন ও নন হিস্টোন প্রোটিন।

উপরে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থগুলো ছাড়া ক্রোমোজোমে লিপিড ক্যালসিয়াম, লৌহ  ম্যাগনেসিয়াম আয়রন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ অল্প পরিমাণে আছে।  

 

ঘ. ‘চ’ অঙ্গাণুটি হলো ক্রোসোসোম যা বংশগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ক্রোমোসোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ। ডিএনএই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক, যাকে জিন বলা হয়। বংশপরম্পরায় কোনো বৈশিষ্ট্যের নির্ধারক একককে জিন বলে।

জীবজগতের বৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে জিন। ক্রোমোসোমের গায়ে সন্নিবেশিত থাকে অসংখ্য জিন বা বংশগতির একক। জিনের রাসায়নিক রূপ হচ্ছে ডিএনএ। ডিএনএ বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরবর্তী বংশে সঞ্চালিত করে।

ডিএনএ শেকল লম্বালম্বিভাবে স্ববিভাজনের (ঝবষভ ফঁঢ়ষরপধঃরড়হ) দ্বারা ভাগ হয়ে পরিপূরক দুটি পার্শ্ব কাঠামো গঠিত হয়। এভাবে একটা ডিএনএ অণু ভেঙে তৈরি হয় দুটি নতুন অণু। নতুনভাবে সৃষ্ট প্রতিটি অণুতে থাকে একটা পুরাতন ও একটা নতুন ডিএনএ পার্শ্ব কাঠামো, যার ফলে প্রতিটি নতুন ডিএনএ অণু হয় মূলটির হুবহু অণুলিপি।

এভাবে ডিএনএ অণুতে রক্ষিত জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের সাংকেতিক নীলনকশা পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তী প্রজšে§ সঞ্চারিত হয়। 

এ সবই সংঘটিত হয় ক্রোমোসোমে। ক্রোমোসোম ডিএনএ ও আরএনএ কে ধারণ করে বাহক হিসেবে। ক্রোমোসোম ডিএনএ ও আরএনএ কে সরাসরি বহন করে পিতা মাতা থেকে তাদের পরবর্তী বংশ ধরে নিয়ে যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এ অঙ্গাণুটিই মূলত বংশগতিতে মূল চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করে। 

 

প্রশ্ন -৪ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

মাতা পিতা

অটোসোম অঅ অটোসোম অঅ

+   +

ঢঢ ঢণ

মায়োসিস মায়োসিস

 ক. কোন সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে?

খ. টেস্টটিউব বেবি বলতে কী বুঝায়?

গ. উপরিউক্ত তথ্যের আলোকে কীভাবে জননকোষ তৈরি হয় তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের তথ্যানুযায়ী লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী দায়ী নয়Ñবিশ্লেষণ কর।

 

  ৪নং প্রশ্নের উত্তর 

 

ক. মেয়ে ও ছেলেদের দশ বছর থেকে ঊনিশ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। 

খ. কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রুণ সৃষ্টি করে তা স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশু জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়। দেহের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটানোকে বলে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। 

পর্যায়ক্রমে কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ঘটিয়ে টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেওয়া হয়। 

গ. উপরিউক্ত তথ্যের আলোকে কীভাবে জননকোষ তৈরি হয় তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো। আমরা জানি মানুষের ক্রোমসোম সংখ্যা ৪৬ অর্থা ২৩ জোড়া ক্রোমোসোমের মধ্যে মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ বিশেষ একজোড়া ক্রোমোসোম দ্বারা ঘটে।

এ ক্রোমোসোমগুলোকে লিঙ্গ নির্ধারক বা সেক্স ক্রোমোসোম বলে। লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমগুলোকে আখ্যায়িত করা হয় ঢ এবং ণ ক্রোমোসোম নামে।

এক জোড়া লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোম ছাড়া বাকি ক্রোমোসোমগুলোকে অটোসোম বলা হয়। অটোসোমগুলোকে ইংরেজি অ বর্ণের দ্বারা বুঝানো হয়।

মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢঢ সেক্স ক্রোমোসোম থাকে এবং পুরুষের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢণ ক্রোমোসোম থাকে। এ জন্য মানুষ এবং অন্যান্য জীবে সূচক বর্ণের দ্বারা ক্রোমোসোমকে দেখানো হয় যেমন ২অ + ঢণ পুরুষে এবং ২অ + ঢঢ নারীর ক্ষেত্রে। 

নারীদের ডিম্বাণুতে ২২টি (১১ জোড়া) অটোসোমের সাথে একটি করে ঢ ক্রোমোসোম থাকে এবং মাতৃ জননকোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে যে চারটি ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়, তার প্রত্যেকটিতে ঢ ক্রোমোসোম থাকে। ফলে সব ডিম্বাণু হয় ঢ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট।

পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু গঠনের সময় চারটি শুক্রাণুর মধ্যে দুটি শুক্রাণুর প্রতিটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ঢ ক্রোমোসোম এবং অপর দুটি প্রতিটি ১১ জোড়া অটোসোমসহ ণ ক্রোমোসোম ধারণ করে। ফলে পুরুষদের শুক্রাণু দুই ধরনের ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। নিচের চিত্রের সাহায্যে জননকোষ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়া দেখানো হলো :

 

চিত্র : মানুষের জননকোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া

 

ঘ. উদ্দীপকের তথ্য অনুযায়ী মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে নারী ও পুরুষের সেক্স ক্রোমোসোমের ভূমিকা বোঝা যায়। 

নারীদের ডিম্বাণুতে অঢ এবং পুরুষের শুক্রাণুতে অঢ ও অণ ক্রোমোসোম থাকে। নারীরা শুধু এ ধরনের ডিম্বাণু তৈরি করে। অর্থাৎ সব ভ্রƒণে ঢ ক্রোমোসোম বহন করে। কিন্তু পুরুষরা দু ধরনের শুক্রাণু তৈরি করে। গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ঢ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয় তাহলে কন্যাসন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢঢ’ একসাথে হবে।

আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ঢণ একসাথে হবে। এভাবে সন্তানের লিঙ্গ কী হবে তা নিচের ছকের সাহায্যে দেখানো যায়।

পুংজনন কোষ

অঢ অণ

 

স্ত্রীজনন কোষ অঢ অঅঢঢ

মেয়ে অঅঢণ

ছেলে

অঢ অঅঢঢ

মেয়ে অঅঢণ

ছেলে

ছকে দেখা যাচ্ছে যে, স্ত্রীর ডিম্বাণু এককভাবে কখনো কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে পারে না। কন্যা সন্তান তখনই হবে যখন পুরুষের ঢ ক্রোমোসোম ধারণকারী শুক্রাণুর স্ত্রীর ডিম্বাণুর সাথে মিলন ঘটবে। 

সুতরাং পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মায়ের কোনো ভূমিকাই নেই। অথচ আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কন্যা সন্তান হলে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে মাকে দোষারোপ করা হয়।

কিন্তু উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এতে নারীর কোনো ভূমিকা নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢ ও ণ বহনকারী পুরুষের শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলনের সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল। 

অতএব, উদ্দীপকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এটা নিশ্চিত যে, লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী দায়ী নয়।

 

প্রশ্ন -৫ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ফাঈমের বয়স ১৪ বছর। ইদানীং তার দেহে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন : দ্রুত লম্বা হওয়া, ওজন বৃদ্ধি হওয়া, শরীরে দৃঢ়তা আসা ও দাড়ি গোঁফ ওঠা ইত্যাদি।

  ক. টেস্টটিউব বেবি কাকে বলে?

খ. জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কী বোঝায়?

গ. ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।

ঘ. মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এসময় তার বাবা মার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ? যুক্তিসহ মতামত দাও।

 

 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 

ক. কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়। 

খ. যেসকল জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে, অথচ তাদের সমগোত্রীয় জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে, তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। 

যেমন লিমিউলাস বা রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদী প্রাণী। লিমিউলাসের জীবাশ্মের উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে। এর সাথের অন্যান্য আর্থ্রোপোডাগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এরা আজও বেঁচে আছে। তাই এদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। এরকম আরও জীবন্ত জীবাশ্ম পৃথিবীতে আজও বেঁচে আছে।

 

গ. ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ তার বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোন।

ছেলেমেয়েদের ১০Ñ১৯ বছরের সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এ সময়ে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। বয়ঃসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তন ঘটে তার জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলোকে বলা হয় ‘হরমোন’। হরমোন শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। 

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য যে হরমোন দায়ী তার নাম হলো টেস্টোস্টেরন। হরমোনের প্রভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। ছেলেদের গলার স্বর ভারী হয়। মুখে দাঁড়ি-গোঁফ গজায়, দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি হয়। 

উদ্দীপকের ১৪ বছর বয়সী ফাঈমের দেহেও ইদানীং উপরিউক্ত পরিবর্তনগুলোই লক্ষ করা যাচ্ছে। বোঝা যায় যে সে এখন বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। অর্থাৎ ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ হলো বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনের প্রভাব। 

 

ঘ. ফাঈমের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এসময় তার বাবা মার বেশ কিছু সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

আমরা জানি, ছেলে মেয়েদের ১০Ñ১৯ বছর বয়সের সময়কালকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সময়ে অনেকে একা থাকতে পছন্দ করে। অনেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে ছেলে-মেয়েদের আবেগিক পরিবর্তন ঘটে।

এ বয়সে তাদের যে মানসিক পরিবর্তন ঘটে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিশেষ করে বাবা ও মাকে সে পরিবর্তনের বিষয়গুলো মনে রেখে তাদের সাথে বন্ধুসুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। তাদেরকে মানসিক দিকসহ অন্যান্য সকল ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে এবং সাহস যোগাতে হবে। 

উদ্দীপকের ফাঈমও বর্তমানে বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। তাই তারও বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটছে। কাজেই এ সময় তার বাবা মাকেও তার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাই তার বাবা মায়ের উচিত খোলা মনে তার সাথে আলোচনা করা। ফাঈমকে বোঝাতে হবে যে, বয়ঃসন্ধিকালীন এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক।

এটা বুঝতে পারলে ফাঈমের অস্বস্তি বা ভয় কমে যাবে। ফলে একা থাকা বা লোকজন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে। এছাড়াও সংকোচ কেটে গেলে সাথীদের সাথে খেলাধুলা করলে মানসিক প্রফুল্লতা বজায় থাকবে।

এভাবে ফাঈমের বাবা-মায়ের উচিত তাকে মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা। তাদের উপযুক্ত সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই ফাঈমের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সম্ভব। এতে সে সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবে।

 

PDF Download

 

উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।

Check Also

SSC সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF ২৫ থেকে ৩০

SSC সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF : ২৫ থেকে ৩১

SSC সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF : ২৫ থেকে ৩১- সাধারণ বিজ্ঞান হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *