সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF : বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশ্ন\ ৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালিরÑ আমাদের
দিয়া প্রহারেণ ধনঞ্জয়
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পরদেশি দস্যু ডাকাত
রামাদের গামাদের।
বাংলা বাঙালির হোক! বাংলার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কতটি অধ্যায় রয়েছে?
খ. সিরাজউদ্দৌলা কেন ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করলেন?
গ. উদ্দীপকের ‘পরদেশি দস্যু ডাকাত’ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কাদের নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নাট্যকারের একটি খণ্ডিত চেতনাকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোট চারটি অধ্যায় রয়েছে।
খ. নবাবকে না জানিয়ে ইংরেজরা কাশিমবাজার দুর্গে অস্ত্র আমদানি, নানা ধরনের নিষিদ্ধ কাজ এবং নবাবের শত্র“ কৃষ্ণবলভকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে নবাব ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করলেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের আচরণের প্রতি রুষ্ট হয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন এবং ইংরেজদের পরাজিত করেন। ইংরেজদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমনÑ কাশিমবাজার দুর্গে অস্ত্র আমদানি, এদেশের মানুষের প্রতি জুলুম, কৃষ্ণবলভকে আশ্রয় দান প্রভৃতি কারণে তাদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করেন।
গ. উদ্দীপকের ‘পরদেশি দস্যু ডাকাত’ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের ধারণ করে।
যুগে যুগে এদেশের সম্পদের মোহে আবিষ্ট হয়ে নানা ভিনদেশি এসেছে এদেশের সম্পদ হস্তগত করার জন্যে। তাদের মধ্যে অনেকে এদেশে এসে শাসন শোষণ করেছে। লুট করেছে এদেশের সম্পদ। অবশেষে এদেশের মানুষের প্রতিরোধে তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে উঠে এসেছে এমনই চিত্র। আমাদের এই পবিত্র বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এখানে অনেক পরদেশি দস্যু ডাকাত হামলা করেছে। কিন্তু বাঙালি তাদের ভয় পায়নি। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে বিতাড়িত করেছে।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে দেখা যায় ভিনদেশি ইংরেজরা এদেশে এসেছে সম্পদের লোভে। তারা নানা রকম অত্যাচার করেছে এদেশের মানুষের উপর। নাটকের এই ভাবটি উঠে এসেছে উদ্দীপকের দস্যু ডাকাতদের বর্ণনার মাঝে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি খণ্ডিত চেতনাকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।
বাঙালিরা প্রকৃতিগতভাবে কোমল ও নিরীহ স্বভাবের। এরা পারতপক্ষে কারও সাথে বিবাদে জড়াতে চায় না। তবে কেউ যদি তাদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করে তখন তারা রুখে দাঁড়ায়। বিতাড়িত করে তাদের শক্তি ও সাহস দিয়ে সে সব দুশমনদের।
উদ্দীপকে ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির চিরন্তন চেতনাকে। আমাদের এই পবিত্র বাংলাদেশে আমরা শান্তিপ্রিয় বাঙালি। কিন্তু পরদেশি দস্যু ডাকাতদের বাঙালি ভয় পায় না। প্রহারেণ ধনঞ্জয় বাঙালিরা তাদেরকে বিতাড়িত করে। উদ্দীপকের এই দস্যু ডাকাতদের খুঁজে পাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। নাটকে অন্যান্য কৈফিয়তও উঠে এসেছে।
নাটকে পরদেশি ইংরেজদের এদেশে আগমন ছলে বলে কৌশলে এদেশের শাসনভার হস্তগত করার বিষয়টি ছাড়াও নাটকে বহুমুখী বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে। এদেশে ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তারের কলাকৌশল, এখানকার কিছু বিপথগামী লোভী মানুষের সহায়তা নিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয় এবং মৃত্যু, বাংলার মসনদে বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের অবস্থান ইত্যাদি বিষয় অঙ্কিত হয়েছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ইংরেজ জাতি প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও তারা তাদের শোষণ নীতি অপরিবর্তিত রেখেছে। তাদের অতীত ইতিহাসও বলে দেয় তাদের এই হীন স্বার্থসিদ্ধির মনোভাবের কথা। পৃথিবীময় তাদের উপনিবেশ স্থাপন করার বাসনা নিয়ে তারা নানা দুঃসাহসিক অভিযানে নেমে পড়ে এবং স্বার্থসিদ্ধি করে।
ক. কিলপ্যাট্রিক কতজন সৈন্য নিয়ে হাজির হলেন?
খ. “লোকবল বাড়–ক আর না বাড়–ক আমাদের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্য ঠিক।” ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটির সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব উঠে আসেনি।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কিলপ্যাট্রিক মাত্র আড়াইশ সৈন্য নিয়ে হাজির হলেন।
খ. প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে হ্যারি এবং এই কথাটির মাধ্যমে ইংরেজদের শোচনীয় অবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পতনের পর বিতাড়িত হয়ে ইংরেজরা ভাগীরথী নদীর উপর ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা চরম খাদ্য ও পানীয় সংকটে পড়ে। নবাব সেনাদের ভয়ে তারা কোনো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। সেই মুহূর্তে কিলপ্যাট্রিক মাদ্রাজ থেকে আড়াইশ সৈন্য নিয়ে হাজির হয়। বিষয়টি সেখানে অবস্থানরত সৈনিকদের মনে হতাশার সৃষ্টি করে। হ্যারির প্রশ্নোক্ত উক্তিতে সেটা প্রমাণিত।
গ. উদ্দীপকটির সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
ইংরেজ জাতি সারা বিশ্বে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেছে। যেখানে তারা শক্তিতে পারেনি সেখানে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে। এমনিভাবে সারা পৃথিবীতে দুর্বল জাতির উপর তাদের শোষণের স্টীম রোলার চালিয়েছে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে।
উদ্দীপকে ইংরেজ জাতির প্রগতিশীল মানসিকতার কথা উলেখ করার পাশাপাশি তাদের শোষণ নীতির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তাদের অতীত ইতিহাস সে কথাই বলে দেয়। প্রথমে তারা ভালো মানুষ সেজে প্রবেশ করলেও ক্রমে তাদের আসল রূপ গোচরে আসে। ইংরেজদের এই চিত্র দেখা যায় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে।
বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে এদেশে এসে ক্রমে তারা শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং এদেশ শাসন করার স্বপ্ন দেখে। এবং ছলে বলে কৌশলে তারা এদেশে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করে তারা এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় নবাবকে পরাজিত করে শাসনভার হস্তগত করে।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব উঠে আসেনি” মন্তব্যটি যথার্থ।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ইংরেজ জাতির মধ্যে মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় দূর করার আগ্রহ দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে তারা মানুষকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা চালায়। সুচতুর ইংরেজরা শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য যে কোনো ভাবে সফল করে যা উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে ইংরেজ জাতির ঘৃণ্য মানসিকতার কথা। তারা প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও সারা বিশ্বে তাদের শোষণ নীতি অপরিবর্তিত রেখেছে এবং দুর্বল জাতির উপর তাদের আধিপত্য খাটিয়ে শাসন শোষণ করে আসছে। উদ্দীপকের এই ভাবটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত হলেও এটি নাটকের অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে মাত্র একটি বিষয়।
উদ্দীপকের বিষয়টি ছাড়া নাটকে আরও বর্ণিত হয়েছে এদেশের সাধারণ জনগণের উপর ইংরেজদের অত্যাচার, এদেশে ক্রমে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, নবাবের শত্র“দের সাথে হাত মেলানো, নবাবের পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা যার ফলে নবাবের পতন এবং স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ উদ্ধার, সিরাজের করুণ মৃত্যু, ইংরেজদের পুতুল সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১১\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
খান সেনাদের সাথে দু-তিন জন রাজাকার। তাদের একজন বলল, “অত কথায় কাজ কী? তালতলীতে বাঙ্কার তৈয়ার হইতাছে। সগগলরে ব্যাগার দিতে হইব।” ……… রহুল রেগে উঠে বলল, “এসব কী অন্যায্য কথা। তুমি পুবপাড়ার কলিমুদ্দি না? তুমি এই আকাম ধরছ?” কলিমুদ্দি গর্জে উঠল, মুখ সামলাইয়া কথা কইবেন। যাওন আপনাদের লাগবোই।
ক. ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ কোন নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল?
খ. ‘আমি চিরকাল ইংরেজদের বন্ধু’ Ñ উমিচাঁদ এ কথাটি চিঠিতে কেন লিখেছেন?
গ. উদ্দীপকের কলিমুদ্দি চরিত্র এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উমিচাঁদের চরিত্রের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো ভাবের মাঝে একটি ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” -মন্তব্যটি বিচার কর।
১১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ ভাগীরথী নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল।
খ. উমিচাঁদ চিঠির মাধ্যমে লেখা উক্ত কথাটি দ্বারা ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য ও তাদের সহযোগিতা করার ভাবটি ব্যক্ত করেছেন।
কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পতনের পর ইংরেজরা এদেশের দালালদের নিয়ে পুনরায় নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে যোগদান করে উমিচাঁদ, মিরজাফর, রাজবলভ, জগৎশেঠ প্রমুখ বিশ্বাসঘাতক।
উমিচাঁদ ইংরেজদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে উলেখ করে যে সে চিরকাল ইংরেজদের বন্ধু এবং বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকবে। ইংরেজদের বাণিজ্য করার জন্য মানিকচাঁদকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে অনুমতি আদায় করেছে। মূলত উমিচাঁদ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে ইংরেজদের সাহায্য করেছেন।
গ. উদ্দীপকের কলিমুদ্দি চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উমিচাঁদের বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারী বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি কখনোই মানুষের বন্ধু হতে পারে না। হিংস্র জানোয়ারকে বিশ্বাস করা গেলেও এদের বিশ্বাস করা বা এদের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। তারা নিজের জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে ছাড়ে না। এরা দেশের শত্র“, জাতির শত্র“। উদ্দীপকের কলিমুদ্দি একজন বিশ্বাসঘাতক।
সে দেশের সাথে, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদার পাকিস্তানি জানোয়ারদের সাথে হাত মিলিয়েছে। বাঙালি হয়েও বাঙালির বিরুদ্ধে সে অস্ত্র ধারণ করে বাঙালিদের হত্যা করেছে। কলিমুদ্দির মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে নাটকের উমিচাঁদের ভিতর।
সে পরদেশি ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে এই দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যে ইংরেজরা এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, নবাবের সাথে ষড়যন্ত্র করেছে তাদেরই সাথে হাত মিলিয়েছে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো ভাবের মাঝে একটি ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।
স্বার্থচিন্তা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। যে ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে তার মাঝে মানবিক মূল্যবোধ থাকতে পারে না। নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে সে যে কোনো ঘৃণ্য কাজ করতে পারে। দেশের সাথে, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতাও করতে পারে। উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণা করার ঘৃণ্য চিত্র। কলিমুদ্দি এদেশের নাগরিক হয়েও ভিনদেশি দখলদারদের সাথে হাত মিলিয়ে এদেশেরই মানুষের উপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যার মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। উদ্দীপকের এই ভাবটি নাটকের বহুমুখী ভাবের মাঝে একটি মাত্র দিক।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উদ্দীপকের বিষয়টির বর্ণনার পাশাপাশি আরও বর্ণিত হয়েছে ইংরেজদের এদেশে আগমন, এদেশের সাধারণ জনগণের উপর জুলুম, নির্যাতন, এদেশের শাসকের সাথে বিরোধ এবং শক্তি প্রয়োগ, নবাবের শত্র“দের সাথে সখ্যতা স্থাপন, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয় এবং নির্মমভাবে মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ভীত-সন্ত্রস্ত সোলেমান ‘জয় বাংলা’ শব্দ শুনে খাট থেকে গড়িয়ে নামে। আরো তিন পাক গড়িয়ে সে খাটের তলায় চলে যায়। সটান শুয়ে সে মিশে যেতে চায় মেঝের সাথে। মুক্তিবাহিনী নিশ্চয়ই ঘেরাও করেছে বাড়িটা।
সাতজন সশস্ত্র পাক সেনা ও দশ-বার জন অবাঙালির সাথে মিলিটারি ট্রাকে চড়ে গত রাতে যে ‘অপারেশন’-এ গিয়েছিল পথ দেখিয়ে সে-ই নিয়ে গিয়েছিল গোপীবাগ।
ক. ইংরেজরা পরাজিত হয়ে কোন জাহাজে আশ্রয় নেয়?
খ. ‘ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন’Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সোলায়মান চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কাদের প্রতিনিধিত্ব করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “বিশ্বাসঘাতকদের কথা উলেখ থাকলেও উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করেনি।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ইংরেজরা পরাজিত হয়ে ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নেয়।
খ. নবাবের সৈন্যের কাছে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ইংরেজদের পরাজয়ের পর পলায়ন করতে দেখে উমিচাঁদ উক্তিটি করেছেন।
নবাবের সৈন্যের কাছে পরাজিত হয়ে ইংরেজরা দুর্গ থেকে পলায়ন করে। সার্জন হলওয়েলের কাছে বন্দি উমিচাঁদ যখন এ খবরটি শোনেন তখন ইংরেজদের প্রতি কটাক্ষ করে উক্তিটি করেন। ইংরেজদের কাপুরুষোচিত আচরণের প্রতি বিদ্রূপ করে উক্তিটি করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সোলায়মান চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্র“। এরা দুমুখো সাপের মতো। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এরা যে কারো সাথে সখ্যতা স্থাপন করতে পারে আবার যে কোনো সময়ে বন্ধুর গলায় ছুরি ধরতে দ্বিধাবোধ করে না।
উদ্দীপকে দেখা মেলে এমনই একজন বিশ্বাসঘাতকের সাথে। সে ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাঙালি নিধন যজ্ঞে মেতে ওঠে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকেও এমন অনেক বিশ্বাসঘাতক রয়েছে।
উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, রাজবলভ, মানিকচাঁদ, মিরজাফর প্রমুখ ব্যক্তি এদেশের নাগরিক হয়ে, নবাবের নিকটতম ব্যক্তি হয়ে নবাবের সাথে তথা দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এদের জন্যেই নবাব ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। হারিয়ে যায় বাংলার স্বাধীনতা দুশ বছরের জন্যে।
ঘ. “বিশ্বাসঘাতকদের কথা উলেখ থাকলেও উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।” মন্তব্যটি যথার্থ।
নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যে ব্যক্তি দেশকে ভালোবাসে না সে মানুষরূপী জানোয়ার। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এমন মানুষও আছে যারা দেশকে ভালোবাসে না। নিজের স্বার্থের জন্যে দেশের সম্মান বিকিয়ে দেয় ভিনদেশিদের কাছে।
উদ্দীপকে উলেখ আছে এমনই একজন দেশদ্রোহীর কথা। যে দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদারদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশ ও জাতির সর্বনাশ করেছে। উদ্দীপকের সোলায়মান সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেশ ও জাতির যতবড় ক্ষতি করেছে এ অপরাধ ক্ষমারও অযোগ্য। উদ্দীপকের এই বিশ্বাসঘাতকের কথা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উলেখ থাকলেও এটি নাটকের একটি মাত্র দিক।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এই বিশ্বাসঘাতকদের কথা বর্ণনার পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। বাণিজ্যের নাম করে ইংরেজদের এদেশে আগমন, সাধারণ মানুষের উপর তাদের জুলুম, নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ, নবাবের শত্র“দের সাথে তাদের বন্ধুত্ব ও নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নবাবের সেনাপতিসহ আত্মীয় পরিজনদের বিশ্বাসঘাতকতা, অবশেষে যুদ্ধ এবং নবাবের পরাজয়, তাঁর নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ, স্বার্থান্বেষীদের ক্ষমতা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এইখানে প্রায় এক সপ্তাহকাল উভয় পক্ষ পরস্পরের আক্রমণের প্রতীক্ষায় বসিয়া আছে। ………. সমস্ত রাত্রি আক্রমণের আয়োজন চলিতে লাগিল। রাজধর প্রস্তাব করিলেন, “দাদা, তোমরা দুইজনে তোমাদের দশ হাজার সৈন্য লইয়া আক্রমণ করো। আমার পাঁচ হাজার হাতে থাক। আবশ্যকের সময় কাজে লাগিবে।”
ইন্দ্রকুমার হাসিয়া বললেন, “রাজধর তফাতে থাকিতে চান।”
ক. নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?
খ. ফরাসি সেনাপতি সাঁফ্রে কেন নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।
১৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজার।
খ. ইংরেজদের সাথে ফরাসিদের দ্ব›দ্ব চিরকালের। এজন্যেই ফরাসি সেনাপতি সাঁফ্রে নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেন।
ফরাসি আর ইংরেজরা যেখানেই গেছে সেখানেই তাদের মাঝে দ্ব›দ্ব শুরু হয়েছে। ভারতবর্ষে ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়। একে অন্যকে সবসময় দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করে।
যার ফলশ্র“তিতে যে কোনো জায়গায় যে কোনো মুহূর্তে একে অন্যের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ফরাসিরা যখন দেখলো ইংরেজরা নবাবের সাথে যুদ্ধ করেছে তখন নীতিগতভাবে ফরাসি সেনারা নবাবকে সমর্থন দেয়।
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত পলাশী যুদ্ধের চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে ইংরেজদের সাথে নবাবের বিভিন্ন যুদ্ধের চিত্র। এর মাঝে পলাশী যুদ্ধের চিত্রই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। উদ্দীপকেও অঙ্কিত হয়েছে এমনই একটা যুদ্ধের চিত্র।
উদ্দীপকে দেখা যায় যুবরাজ ইন্দ্রকুমার প্রায় এক সপ্তাহকাল অপেক্ষা করে পরস্পর আক্রমণের প্রতীক্ষায়। সমস্ত রাত ধরে আক্রমণের আয়োজন চলে। উদ্দীপকের সৈন্যদের আনাগোনা, যুদ্ধের আয়োজন ইত্যাদি বিষয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের যুদ্ধের চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
নাটকেও দেখা যায় নবাব সৈন্য ও ইংরেজ সৈন্য জড়ো হয় পলাশীর প্রান্তরে। উভয়পক্ষের সৈন্যরা পরস্পরকে আক্রমণের প্রতীক্ষা করে। একদিকে সেনাপতি মোহনলাল, মিরমর্দান, সাঁফ্রে, অন্যদিকে ক্লাইভ, ক্লেটন প্রমুখ যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়। উদ্দীপকের সাথে নাটকের এই বিষয়ের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্য আমার মতে যুক্তিযুক্ত নয়।
পলাশী যুদ্ধ বাংলার তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রায় দুশ বছরের জন্যে হারিয়ে যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে নবাবের যে যুদ্ধ সেটা তাই স্মরণীয় একটা মুহূর্ত।
উদ্দীপকে অঙ্কিত হয়েছে একটি খণ্ডযুদ্ধের চিত্র। যেখানে যুবরাজ ইন্দ্রকুমার ও তার সৈন্যরা অপেক্ষা করে আছে পরের দিন প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্যে। উদ্দীপকের এ চিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের শুধু পলাশী যুদ্ধের বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে। নাটকের অন্যান্য বিষয়গুলো এখানে একেবারেই অনুপস্থিত।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে একে একে বর্ণিত হয়েছে উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমনের চিত্র, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে যুদ্ধের চিত্র, সেখানে ইংরেজদের পরাজয় ও পলায়ন, নবাবের বিরুদ্ধে পুনরায় দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়া, এদেশের স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, তাদের সাথে ইংরেজদের সখ্যতা স্থাপন, নবাব সিরাজের আত্মীয় পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা, পলাশীর যুদ্ধ এবং সেখানে নবাবের পরাজয়, ইংরেজদের সমর্থন নিয়ে কাপুরুষ মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ, নবাবের করুণ পরিণতি প্রভৃতি চিত্র যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই আমার মতে প্রশ্নের মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রশ্ন\ ১৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
অতি প্রত্যুষেই অন্ধকার দূর হইতে না হইতেই যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার দুই ভাগে পশ্চিম ও পূর্বে মগদিগকে আক্রমণ করিতে চলিয়াছেন। সৈন্যের স্বল্পতা লইয়া রূপনারায়ণ হাজারি দুঃখ করিতেছিলেন। তিনি বলিতেছিলেন, আর পাঁচ হাজার সৈন্য থাকলে ভাবনা ছিল না। ইন্দ্রকুমার বলিলেন, ত্রিপুরারির অনুগ্রহ যদি হয় তবে এই কয় জন সৈন্য লইয়াই জিতিব।
ক. ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের কে হন?
খ. সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে ঘসেটি বেগম কেন খুশি হবেন?
গ. উদ্দীপকের যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রদ্বয়ের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি বিষয়কে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
১৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের খালা হন।
খ. সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে ঘসেটি বেগমের স্বার্থ উদ্ধার এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে তাই তিনি খুশি হবেন।
নবাব সিরাজের খালা ঘসেটি বেগম কখনোই সিরাজের সিংহাসনারোহণ মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলার মসনদে বসবে তার পোষ্যপুত্র এবং তিনি দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্ন মাটি হয়ে যায় যখন দেখেন সিরাজকেই বাংলার মসনদের জন্যে মনোনীত করা হয়েছে।
এর পর থেকেই তিনি মনে প্রাণে চাইতেন সিরাজের পতন। সিরাজের পতন হলেই তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন সার্থক হবে। এজন্যে তিনি সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে খুশি হবেন।
গ. উদ্দীপকের যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার চরিত্রদ্বয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহনলাল এবং মিরমর্দান চরিত্রদ্বয়ের প্রতিনিধি।
মোহনলাল এবং মিরমর্দান নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বস্ত দুজন সেনাপতি। মোহনলালের বাড়ি কাশ্মিরে এবং জাতিতে হিন্দু হলেও তিনি সিরাজের অতি বিশ্বস্ত ও প্রিয় ছিলেন। মিরমর্দানও সিরাজের অন্যতম সেনাপতি। তিনি সাহসের সাথে যুদ্ধ করে শহিদ হন।
উদ্দীপকেও দেখি দুজন নির্ভীক যোদ্ধাকে। তাঁদের একজন যুবরাজ অন্যজন ইন্দ্রকুমার। তাঁরা তাঁদের বীরত্বেই যুদ্ধে জয়লাভ করতে চান। রূপনারায়ণ হাজারি সৈন্যের স্বল্পতা নিয়ে আক্ষেপ করলেও তার যে সেনা রয়েছে তাদের নিয়েই যুদ্ধে জয়লাভ করতে চায়।
এই চিত্র দেখি নাটকের পলাশী প্রান্তরে। নবাবের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর যুদ্ধে অংশ না নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মোহনলাল এবং মিরমর্দান তাদের যে সেনা রয়েছে তাদের নিয়ে যুদ্ধ করেই জয়ী হতে চান এবং বিপুল বিক্রমে অগ্রসর হন। উদ্দীপকের ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে নবাবের সেনাপতিদ্বয়ের মিল এখানেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি বিষয়কে আমাদের স্মরণ করিয়া দেয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।
সাহস ও বীরত্ব একজন মানুষকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে। ভীত মানুষ কখনোই কাজের শেষ পর্যন্ত যেতে পারে না। উদ্দীপকের যুদ্ধরত ভ্রাতৃদ্বয় এবং নাটকের সেনাপতিদ্বয় তাদের সাহস ও বীরত্ব নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। এজন্যে তাদের প্রতি আমাদের সমীহ জাগে।
উদ্দীপকটিতে দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানরত দুজন সাহসী সেনাপতির শৌর্ষ বীর্যের চিত্র। যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার তাদের বীরত্ব ও দুঃসাহসের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে। এ চিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের পলাশী প্রান্তরের যুদ্ধের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেও নাটকের অন্যান্য দিকগুলো উপস্থাপন করে না।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটিতে বহুমুখী বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
উদ্দীপকের বিষয় ছাড়াও এখানে রয়েছে নবাব সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তার চিত্র, বেনিয়া ইংরেজদের নির্লজ্জ ও কপটাচারিতা, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, স্বার্থান্বেষীদের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার লোভে অন্ধ বিপথগামী সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা, নবাবের পতন ও নির্মম মৃত্যু, মিরজাফরের কাপুরুষোচিত ক্ষমতা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে, যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থই হয়েছে।
প্রশ্ন\ ১৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে দখলদারদের বিতাড়িত করে বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে।
ক. কার হুকুমে নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়?
খ. পলাশী যুদ্ধে নবাব কেন পরাজিত হলেন?
গ. উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য কোথায়? নির্ণয় কর।
ঘ. “বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দিলে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
১৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মিরজাফরের পুত্র মিরনের হুকুমে নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়।
খ. সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা এবং আত্মীয় পরিজনদের ষড়ষন্ত্রের ফলে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজ পারাজিত হলেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সিরাজের আত্মীয়-স্বজন, অমাত্যবর্গের এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় সুযোগ সন্ধানী ইংরেজরা। সিরাজের চারপাশের এই ষড়যন্ত্রের জাল থেকে তিনি কিছুতেই বের হতে পারেন না।
পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে তার যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি মিরজাফর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে। ফলে নবাবের অবশিষ্ট সৈন্যরা ইংরেজদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ফলে বাংলা হারায় তার স্বাধীনতা।
গ. উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
একজন দেশনায়কের মাঝে থাকতে হয় চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা, দেশপ্রেম, দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জনের ক্ষমতা, সর্বোপরি নেতৃত্বের গভীরতা তবেই তিনি সত্যিকারের দেশনায়ক হতে পারেন। উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর মাঝে এসব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকারের দেশনেতা। দেশের প্রতিটি মানুষ তাঁকে ভালোবাসতো। তিনি দেশের জন্যে নিজের জীবনের ন্যূনতম সুখটুকুও ত্যাগ করতে কুন্ঠাবোধ করতেন না। তিনি বাংলা ও বাঙালির মুক্তি চেয়েছেন। তাইতো তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
কিন্তু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ এই কাজটি পারেননি। তিনি জনগণের অন্তরের মাঝে মিশতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর মতো। তাইতো পলাশী যুদ্ধে এদেশেরই লোকজন নিজেদের স্বার্থের জন্যে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর এখানেই রয়েছে বৈসাদৃশ্য।
ঘ. “বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দিলে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।” মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার বিপদের সময় দেশের জনগণ, এমনকি নিজের আত্মীয় পরিজনদেরও পাশে পাননি। ফলে নিতান্ত অসহায়ভাবে তাকে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। যার ফলে কোনো কাজের ফল তার পক্ষে যায় নি।
উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশের আপামর জনগণ সাড়া দিয়েছে। দেশনেতার অমোঘ ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে হানাদার সৈন্যের বিরুদ্ধে। অসম সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে সংগ্রাম করে দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাক এদেশের জনগণের মাঝে সাড়া জাগাতে পারেনি। কারণ নবাব ও জনগণের মাঝে ছিল বিস্তর দূরত্ব।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ চেয়েছিলেন দেশের জনগণ তার পাশে থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখুক। কিন্তু দেশের জনগণতো দূরের কথা নিজের সেনাপতিই তার পক্ষে নেই। তিনি চেয়েছিলেন দেশের জনগণ তার পাশে এসে দাঁড়াক। লড়াই করুক বিদেশি দখলদারদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু সেই মুহূর্তে কেউই তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো দেশের জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। ফলে কাউকেই তিনি বিপদের সময় পাশে পাননি। তাই বলা যায় বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো তার ডাকে যদি দেশের জনগণ সাড়া দিত তবে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।
প্রশ্ন\ ১৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সখীপুর গ্রামে আজ চরম সংকট উপস্থিত। সবাই চিন্তিত, ভীত সন্ত্রস্ত। আগামীকাল শক্তিশালী পরানপুর গ্রামের সাথে পূর্বঘোষিত ‘কাইজা’ হবে। এটা নিজ গ্রামের অস্তিত্ব রক্ষার সম্মান রক্ষার বিষয়। গ্রামপ্রধান আপামর জনসাধারণকে ডেকে আগামীকালের ‘কাইজা’ হবে।
বিশ্বস্ততার সাথে, সাহসের সাথে পরানপুর গ্রামের মোকাবেলা করার অনুরোধ করেন। প্রায় সকলেই যার যার ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করে গ্রামের সম্মান রক্ষার্থে যদি জীবনও যায় তবু তারা পিছু হটবে না। কিন্তু পরদিন গ্রামপ্রধানসহ অনেকেই লক্ষ করে নকীব এবং গোলাম আলীসহ যারা কিনা ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে প্রতীজ্ঞা করেছিল তাদের অনেকেই অনুপস্থিত। কেউবা শত্র“পক্ষকে মদদ দিচ্ছে। ফলে সখীপুর গ্রামের চরম পরাজয় ঘটে।
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে কোন স্থানের কথা উলেখ আছে?
খ. ‘আজীবন নবাবের আজ্ঞাবহ হয়েই থাকব’ কথাটি কে, কেন বলেছে?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি নাটকের কোন ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলীরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর ও রায়দুর্লভ চরিত্রের প্রতীক” মন্তব্যটি যাচাই কর।
১৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাবের দরবারের কথা উলেখ আছে।
খ. কথাটি বলেছে নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে নবাবের বিশ্বাস অর্জন করার জন্যে।
ইংরেজদের ধৃষ্টতায় ক্ষিপ্ত হয়ে এবং অমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে নবাব সিরাজ দরবারে জরুরি সভা ডাকেন। সেখানে তিনি দেশের এই দুর্যোগের মুহূর্তে সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে তার পাশে দাঁড়াতে বলেন। তখন সেনাপতি মিরজাফর পবিত্র কোরান শরিফ স্পর্শ করে উক্ত ওয়াদা করেন। যার গভীরে ছিল শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতা।
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের পলাশী যুদ্ধের ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়।
পলাশী যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। বাংলার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বার্থোদ্ধারের মানসিকতার জন্যে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে এবং ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে তাদের শক্তির ভিত রচনা করার সুযোগ পায়। এদেশের জনগণ স্বাধীনতা হারায় দুশ বছরের জন্যে।
উদ্দীপকে দেখা যায় দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে অস্তিত্ব ও সম্মান রক্ষার লড়াই বাঁধে। সখীপুর গ্রামের মানুষ গ্রামের সম্মান রক্ষা করার জন্যে ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে পরস্পরের ওয়াদাবদ্ধ হয়। কিন্তু লড়াইয়ের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার কথা ভুলে তারা দখলদারদের মদদ দেয়। যা নাটকের পলাশী যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সেখানেও দেখা যায় যুদ্ধের ময়দানে নবাবের সেনাপতিরা যুদ্ধ না করে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে শত্র“ পক্ষকে সমর্থন জানানোর জন্য। তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য নবাবের পরাজয় ঘটে। পরাজয় ঘটে এই বাংলার মানুষের।
ঘ. “উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলীরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর ও রায়দুর্লভ চরিত্রের প্রতীক।” মন্তব্যটি যথার্থ।
ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা একজন মানুষ বা একটি জাতিকে কতখানি ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাস সে সাক্ষী প্রদান করে। শুধু বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এমনই বিশ্বাসঘাতক উদ্দীপকের নকীব ও নাটকের মিরজাফররা।
উদ্দীপকে দেখা যায় নকীব এবং গোলাম আলীদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে সখীপুর গ্রামের চরম পরাজয় ঘটে। তাদের অস্তিত্ব এবং সম্মান ধ্বংস হয়ে যায়। যারা গ্রামের সম্মান রক্ষা করবে তারা যদি বিশ্বাসঘাতক, ভীরু হয় তবে সেখানে জয়ী হবার কোনো পথ খোলা থাকে না। এমনই বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে পাওয়া যায় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। সেখানে মিরজাফর, রায়দুর্লভদের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে।
মিরজাফর এবং রায়দুর্লভ নবাবের অন্যতম দুজন সেনা। একজন সেনাপতি অন্যজন সাধারণ সৈনিক। এদের দুজনের বিশ্বাসঘাতকতা ও কুপরামর্শে নবাব সিরাজ মুর্শিদাবাদ যাওয়ার সময় যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে যান। সে সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজ সেনারা। এক প্রকার বিনা যুদ্ধে জয়লাভ করে তারা। এই দুই বিশ্বাসঘাতক চরিত্রের প্রতীক উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলী চরিত্রদ্বয়।
প্রশ্ন\ ১৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আতা খাঁ : গুপ্তচর তার সবকিছু দেখাতে বাধ্য নয়। তোমাদের যাতে প্রয়োজন শুধু তাই দেখতে পাবে। নাও, এই দেখো, ভালো করে দেখো। সেনাপতির নিজ হাতের স্বাক্ষরযুক্ত ছাড়পত্র।
রহিম : (মশালের আলোতে উল্টে পাল্টে পাঞ্জাখানা দেখে) ঠিক আছে আপনাকে খামাখা তক্লিফ দিলাম। আপনি যেদিকে খুশি যেতে পারেন।
আতা খাঁ : যেদিকে খুশি। কিন্তু খুশিমতো চলে কি শেষে আরো কঠিন মুসিবতের মধ্যে পড়বো? দরকার নেই বাবা। তার চেয়ে যে পথে অন্যেরা চলে সে পথ দিয়ে এগুনোই ভালো। তা, সেপাই বাবাজীরা, একটু রাস্তা বাতলে দাও না। মানে মানে সরে পড়ি?
ক. সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের কত তারিখে শহিদ হন?
খ. মোহাম্মদি বেগ মিরনের কাছে কেন দশ হাজার টাকা চাইল?
গ. উদ্দীপকের আতা খাঁ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি দিককে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, সম্পূর্ণ দিককে নয়।”- ব্যাখ্যা কর।
১৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের ২রা জুলাই তারিখে শহিদ হন।
খ. নবাব সিরাজকে হত্যা করার পারিশ্রমিক হিসেবে মোহাম্মদি বেগ মিরনের কাছে দশ হাজার টাকা চাইল।
পলাশী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজ মিরজাফরের অনুসারী সৈন্যের হাতে ভগবানগোলার নিকট বন্দি হন এবং জাফরাগঞ্জ কয়েদখানায় নিক্ষিপ্ত হন। ক্লাইভের প্ররোচনায় মিরজাফরের পুত্র মিরন নবাবকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
সে এক সময় সিরাজের পরিবারে আশ্রয় গ্রহণকারী মোহাম্মদি বেগকে নির্বাচন করে সিরাজকে হত্যা করার জন্যে। তখন মোহাম্মদি বেগ দশ হাজার টাকা চায় সিরাজকে হত্যার পারিশ্রমিক হিসেবে।
গ. উদ্দীপকের আতা খাঁ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের গুপ্তচর জুহালা চরিত্রের প্রতিনিধি।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতকদের ভিড়ে রাইসুল জুহালা চরিত্র আমাদের মনে একটু হলেও ভালো লাগার সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এটি একটি কৌতুক চরিত্র কিন্তু তার দেশপ্রেম এবং নবাবের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা আমাদের চমৎকৃত করে।
উদ্দীপকে আতা খাঁকে গুপ্তচর বৃত্তি করতে দেখা যায়। সে সেনাপতির ছাড়পত্র নিয়ে মুসলিম শিবির থেকে মারাঠা শিবিরে যায় গুপ্তচর বৃত্তি করার জন্যে। পথিমধ্যে রহিম নামে জনৈক সৈন্য তার পথ আগলালে সেনাপতির ছাড়পত্র দেখিয়ে আপন কাজে চলে যায়।
এর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে নাটকের রাইসুল জুহালা চরিত্রটির সাথে। নারান সিং তার আসল নাম। তিনি নবাবের বিশ্বস্ত ও প্রিয়ভাজন। রাইসুল জুহালা নাম ধারণ করে নর্তকীর বেশে যে ঘসেটি বেগমদের মন্ত্রণা সভায় প্রবেশ করে এবং সে তথ্য নবাবকে পাঠায়। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি দিককে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, সম্পূর্ণ দিককে নয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।
দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ, স্বদেশকে ভালোবাসে না এমন ব্যক্তি পশুর সমান। যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে জাতি কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারে না। উদ্দীপকের আতা খাঁ এবং নাটকের রাইসুল জুহালার মাঝে দেখা যায় এমনই দেশপ্রেম বা স্বাজাত্য প্রেমের চিত্র।
উদ্দীপকের আতা খাঁ পানিপথের যুদ্ধের সময় মুসলিম শিবিরের গুপ্তচর। সে যায় রাতের অন্ধকারে মারাঠা শিবিরে তথ্য সংগ্রহ করতে। উদ্দীপকের এই গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে বর্ণিত একটি মাত্র দিক। এছাড়াও নাটকে বহু বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে নানাবিধ ভাবের সমাবেশ যা উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে উপস্থাপিত হয়নি।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উদ্দীপকের বিষয়টি ছাড়াও বর্ণিত হয়েছে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন, এদেশে এসে কুঠি স্থাপন, ব্যবসার অজুহাতে নানারকম নিষিদ্ধ কার্যকলাপ, অবশেষে নবাবের রোষানলে পড়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং পরাজয়, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব স্থাপন, সবাই মিলে নবাবের সাথে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করা, নবাব সিরাজের চারিত্রিক দৃঢ়তা, ইংরেজ বেনিয়াদের শিক্ষা দেয়ার জন্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজয় ও মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।