HSC | সাম্যবাদী | Sammobadi | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ১-৫ | PDF: বাংলা ১ম পত্রের সাম্যবাদী কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের সাম্যবাদী কবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শুধাও আমাকে “এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির বীজমন্ত্রটি শোন নাই
সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।”
এক সাথে আছি একসাথে বাঁচি আরও একসাথে থাকবই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবই।
ক. ‘যুগাবতার’ অর্থ কী?
খ. কবি কেন সাম্যের গান গেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটি তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দিষ্ট দিকটি হৃদয়ে লালন করার মাধ্যমে আমরা সুন্দর-সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারব।” বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যুগাবতার এর অর্থ হলো বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষ।
খ. মানবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে কবি সাম্যের গান গেয়েছেন।
কবি বৈষম্যহীন অসা¤প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে চান। কবির বিশ্বাস মানুষের হৃদয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই এবং প্রতিটি মানুষই সমান মর্যাদার অধিকারী। মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে একটি নতুন সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তিনি ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন।
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবতার স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সাম্যবাদী সমাজ প্রতীক্ষার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
পৃথিবীতে আজ মানুষে মানুষে বিভেদ চরমে পৌঁছে গিয়েছে। অর্থ, ক্ষমতা, সম্মান আর মর্যাদার লোভে মানুষ উন্মাদ হয়ে উঠেছে। মানুষের হৃদয়সত্যই সব থেকে বড় সত্য।
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি জোর দিয়েছেন মানুষের অন্তরধর্মের ওপর। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে মানুষ আজ মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কবি এ সমাজ চান না। তিনি চান এমন এক সমাজ যেখানে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দীপকে আমরা ‘সাম্যবাদী’ কবিতার হৃদয়সত্যের উদ্বোধনের বিষয়টি লক্ষ্য করি।
বাঙালি জাতির মানবতাবাদী চেতনা, তাদের হৃদয়সত্যের ওপর বিশ্বাসের কথাই আলোচ্য উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি এক অসা¤প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলেছে। সুতরাং, উদ্দীপকে মূলত ‘সাম্যবাদী’ হৃদয়সত্য বিষয়টিই মুখ্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে, যা হৃদয়ে লালন করার মাধ্যমে আমরা সুন্দর সুখী সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
সুখী সুন্দর সমাজ গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা। যে সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ বিদ্যমান যে সমাজে আছে কেবল অশান্তি, হানাহানি। তাই সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির বিশ্বাস মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার চেয়ে সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। প্রতিটি মানুষ যখন এ স্বীকৃতি লাভ করে তখন মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ থাকে না। তবে বিভেদহীন সমাজ তখনই গড়ে তোলা সম্ভব যখন প্রতিটি মানুষ অন্তর ধর্মকে স্বীকৃতি দেবে, যখন মানুষের মধ্যে মানবধর্মই প্রধান হয়ে উঠবে। উদ্দীপকে আমরা বাঙালি জাতির অসা¤প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনার পরিচয় পাই।
ধর্মকে নয়, জাতিকে নয়, মানুষকে, মানুষের হৃদয়ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছিল বলেই বাঙালির জীবনে এত বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে। আপামর বাঙালির প্রচেষ্টায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, সাম্য ও মানবতা এ দুটি সুখী সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। তাই প্রতিটি বাঙালি এ দিকটি হৃদয়ে লালন করলেই সুখী সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব। উদ্দীপকে এবং ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ সমাজ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে।
২. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনুপ একা বাড়িতে বৃদ্ধা মাকে রেখে তীর্থদর্শনে বের হলো। পথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে সে এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে আশ্রয় নিল। আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের সেবা শুশ্রষায় সুস্থ হলে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে অনুপ পুনরায় তীর্থভ্রমণে যাওয়ার উদ্যোগ নিল। ব্রাহ্মণ এবার অনুপকে বললেন, “এই দুর্বল শরীরে তীর্থে যেও না। কারণ তোমার হৃদয়ই তো প্রকৃত তীর্থস্থল।”
ক. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মগজে কী হানার কথা বলা হয়েছে?
খ. পুঁথিকে মৃত-কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকটির মূল বক্তব্য কোন দিক থেকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আশ্রয়দাতা’ ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানসিকতা যেন একসূত্রে গাঁথা”-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মগজে শূল হানার কথা বলা হয়েছে।
খ. পুঁথি নির্জীব ও জড় বলে একে মৃত কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মৃত ব্যক্তি ও কঙ্কাল চলাচল করতে পারে না। এরা অনড় ও অচলায়তনের প্রতীক। পুঁথি তথা শাস্ত্রগ্রন্থ বা কেতাব মৃতবৎ কঙ্কালস্বরূপ। জড়ত্ব ও নির্জীবতার জন্যই এসব পুঁথিকে মৃত-কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
গ. মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য প্রকাশের দিক দিয়ে উদ্দীপকের মূলবক্তব্য ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
মানব হৃদয় অনন্ত ঐশ্বর্যের আধার। নীতি, জ্ঞান, প্রজ্ঞাসহ সবকিছুই মানুষের অন্তর হতেই উৎসারিত, যা উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই আলোচিত হয়েছে।
উদ্দীপকে তীর্থভ্রমণে যাওয়ার জন্য অনুপের আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। জাগতিক তীর্থভূমির দিকে মানুষের আকর্ষণ বেশি। কারণ, মানবহৃদয়ই সকল ঐশ্বর্যের কেন্দ্রবিন্দু অনেকেই তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি মানুষের হৃদয়কে বিশ্বদেউল বা সকল তীর্থের পুঞ্জীভূত রূপ হিসেবে কল্পনা করেছেন।
মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা আছে বলে কবি বিশ্বাস করেন না। অন্যদিকে উদ্দীপকের মূলবক্তব্য হলো আপন অন্তরে প্রকৃত তীর্থস্থলের অবস্থান। অর্থাৎ, ‘সাম্যবাদী’ কবিতা এবং উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য ও পবিত্রতাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. উক্তিটি আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আলোকে সঠিক ও যথার্থ।
মানবহৃদয়েই সকল ঐশ্বর্যের অবস্থান। কিন্তু সংশয়গ্রস্ত মানুষ সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে তীর্থস্থান ভ্রমণে বের হয়। অথচ নিজের হৃদয়ই যে প্রকৃত তীর্থস্থল-তা তারা বুঝতে পারে না।
উদ্দীপকে আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণকে আপন অস্তিত্বে বিশ্বাসী একজন দৃঢ় মানসিকতার মানুষ হিসেবে দেখা যায়। প্রতিটি মানুষের মনের মণিকোঠায় প্রকৃত তীর্থস্থলের অবস্থান রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তাই তিনি অনুপকে তীর্থভ্রমণে যেতে নিষেধ করেন।
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির কণ্ঠে খুব দৃঢ়তার সাথে উচ্চারিত হয়েছে, ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।’ মানুষের অন্তরকে তাই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেবালয় বলে অভিমত পোষণ করেছেন কবি।
আলোচ্য উদ্দীপকে ব্রাহ্মণের মানসিকতা ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মনোভাব এক ও অভিন্ন। তাঁরা দুজনই হৃদয়ের পবিত্রতা ও ঐশ্বর্যে বিশ্বাসী। অতএব স্পষ্টতই ‘আশ্রয়দাতা’ ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানসিকতা যেন একসূত্রে গাঁথা উক্তিটি যথার্থ।
৩. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন মানুষ, মানুষের সৃষ্টি ধর্ম,
জাতি-বর্ণে হানাহানি ও কোন মানুষের কর্ম?
বৃথা ঘুরিনু তীর্থক্ষেত্রে খোদা-যিশু জিকির তুলি,
হৃদয়ে রয়েছে তোর স্রষ্টা কেন গেলে তা ভুলি?
ক. ইরানের নাগরিকদের কী বলে?
খ. ধর্মগ্রন্থ পাঠ পণ্ডশ্রম হয় কখন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার পূর্ণচিত্র নয়”:যুক্তিসহ উপস্থাপন কর।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ইরানের নাগরিকদের পার্সি বলে।
খ. ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র যে মানবতাবোধ তা আত্মস্থ না হলে সেই পাঠ পণ্ডশ্রম হয়।
প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্য পৃথক পৃথক ধর্মগ্রন্থ থাকলেও তার মূলমন্ত্র হলো নৈতিক শিক্ষা, মানবতাবোধ এবং সমতার দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মগ্রন্থের এ মূল সুর যদি মানুষের অন্তরে স্থায়ী আসন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয় তবে তা পাঠ করা বৃথা। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মগ্রন্থের অভিন্ন নীতিশিক্ষা তথা মানবতার বোধ মানবমনে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হলে ধর্মগ্রন্থ পাঠ পণ্ডশ্রম হয়।
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবহৃদয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন, সকল ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র মানুষের হৃদয়ে সংকলিত আছে-আর তা হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা ও সমদর্শন। ধর্মশাস্ত্রের সুবচন, নীতিজ্ঞান এবং ধর্মক্ষেত্র সবই মানুষের আত্মার গভীরে বিরাজমান।
উদ্দীপকেও জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতি বিভেদ সৃষ্টিকারী মানুষকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যে মানবতা, সাম্যবোধ, তীর্থভূমি ও পবিত্র উপাসনালয় রয়েছে তা স্মরণ রাখার কথা বলা হয়েছে।
উদ্দীপকে বিধাতার সৃষ্টি মানুষ আর মানুষের সৃষ্টি ধর্ম এ কথা বলার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত ঐশ্বর্যের দিকটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা ‘সাম্যবাদী’ কবিতারও মূলভাষ্য। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবহৃদয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার পূর্ণচিত্র নয়-মন্তব্যটি সঠিক ও যুক্তিযুক্ত।
‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত মানবজাতির একত্ব প্রকাশক একটি রচনা। কবি এখানে মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচয়ের মূল ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন অভিন্ন মানবতার বন্ধনে। তাই তিনি সাম্যবাদী। এক্ষেত্রে কবি মানুষকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। তাঁর মতে মানবহৃদয় সকল ঐশ্বর্যের মূল।
অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মানুষ সৃষ্টি এবং মানুষ কর্তৃক ধর্ম হওয়ার বিষয়টি আলোচ্য উদ্দীপকের মূল বিষয়বস্তু। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ দুটো দিক ছাড়াও বিশ্বের মানব স¤প্রদায়কে এক ও অভিন্ন জাতি হিসেবে কল্পনা করে মনুষ্যজাতির একত্বের জয়গান গাওয়া হয়েছে। যে প্রেক্ষাপটে ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি অভিন্ন জাতীয়তাবোধের পূর্ণচিত্র তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
‘সাম্যবাদী’ কবিতার বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গ উঠে এসেছে। মানবজাতির একত্ব, সাম্য এবং মানুষের শ্রেষ্ঠত্বসহ আরও নানা দিক আলোচিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু স্রষ্টা, মানুষ ও তার অন্তরের ঐশ্বর্যের দিকটিই উঠে এসেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপিত ও খণ্ডিত। কাজেই প্রশ্নেলিখিত মন্তব্যটি যৌক্তিক।
৪. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পথিক বলেন, আমার হাতে বেদ, আমি হিন্দু সহযাত্রী কন, আমার হাতে কোরআন, এ যে জ্ঞানসিন্ধু। সঙ্গীটি বলেন, আমি মনেপ্রাণে বাইবেলের রক্ষক, অপরজন কন, আমার হাতে মহাপবিত্র গ্রন্থ ত্রিপিটক। সকলের হাতে পৃথক পৃথক ধর্মগ্রন্থগুলো, কে উত্তম, কে মধ্যম, কে অধম বলো?
ক. জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতিকে কী বলে?
খ. যেখানে সব বাধা-ব্যবধান এক হয়ে গেছে, কবি সেখানে সাম্যের গান গাইতে চান কেন?
গ. ‘সাম্যবাদী’ কবিতা রচয়িতার প্রত্যাশার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য চিিহ্নত কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ’ -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতিকে জৈন বলে।
খ. বিশ্বব্যাপী এক মানবজাতির চেতনা মনেপ্রাণে পোষণ করেন সব বাধা-ব্যবধান এক হয়ে গেছে, কবি সেখানে সাম্যের গান গাইতে চান।
সাম্যবাদী কবি হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম, খ্রিস্টান প্রভৃতি জাতিকে আলাদা চোখে দেখতে চান না। বরং গোটা মানবজাতিকে একজাতি হিসেবে কল্পনা করেন। এক্ষেত্রে সব বাধা-ব্যবধানকে তুচ্ছ মনে করেন বলে কবি সাম্যের গান গাইতে চান।
গ. উদ্দীপকটিতে নানা ধর্মস¤প্রদায়গত ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে মানুষ জাতির ঐক্যের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা কবির প্রত্যাশার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এক মানবজাতির অভেদ ধর্মকে কল্পনা করেছেন। এ বিশ্বে বহু বর্ণ, ধর্ম গোত্র ও স¤প্রদায় আছে। নানা ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা ধর্মগ্রন্থও আছে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থের ভিন্নতা মানুষ জাতিকে ভিন্ন করতে পারে নি।
উদ্দীপকের মানুষ নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থগুলোকে পবিত্র মনে করে। এগুলোর প্রতি তাদের শ্রদ্ধার কমতি নেই। কুরআন, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থের মূলবাণীগুলো তারা হৃদয়ে ধারণ করেছে।
কিন্তু বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ দ্বারা মানুষকে উত্তম, মধ্যম ও অধম হিসেবে চিিহ্নত করা যায় না। এখানেই ‘সাম্যবাদী’ কবিতা রচয়িতার ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মানবতার মহামন্ত্র দ্বারা অভিন্ন মনুষ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যাশার সাথে উদ্দীপকের মূলকথার সাদৃশ্য চিিহ্নত করা যায়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ”-মন্তব্যটি যথার্থ।
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সকল মানুষের একত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন। আপন অস্তিত্বে বিশ্বাসী কবি মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে কবি তাই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো পুণ্যস্থান দেখেন না।
উদ্দীপকটিতে শুধু মানুষের ব্যবহৃত ধর্মগ্রন্থ এবং এগুলোকে নিয়ে সৃষ্ট ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে সকল মত ও ধর্মের মানুষের একত্বের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ বিষয় ছাড়াও মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় সকল মানুষের মধ্যে সাম্য তথা একত্বের দিকটি প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি উঠে এসেছে মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের পবিত্রতার দিকটি।
কিন্তু উদ্দীপকের বক্তব্যে মানুষের একত্বের চেতনা উপস্থিত থাকলেও কবিতায় আলোচিত অন্যান্য দিকগুলো উন্মোচিত হয় নি। তাই ‘উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ’মন্তব্যটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
৫. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ল²ীপুর জেলার টুমচর গ্রামে এক বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। বাড়ির ভেতর থেকে কিছু লোক বের হতে পারলেও অনেকেই আটকা পড়ে। মুজাহিদ নামের এক সাহসী যুবক আগুনের মধ্য দিয়ে অনেককে টেনে বের করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই ভেতরে আটকা পড়ে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও মুজাহিদের দেহ পুড়ে যায়। নিজের জীবন দিয়ে সে অনেকের প্রাণ রক্ষা করে।
ক. আরব দুলাল কে?
খ. “তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।”-এ কথা বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটিকে নির্দেশ করে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা।”-উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. আরব দুলাল হলেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স)।
খ. প্রত্যেক মানুষের হৃদয়েই আত্মারূপে পরমাত্মা বা ঈশ্বর বিরাজমান বলে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
কবি মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের প্রতি আস্থাশীল। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল গ্রন্থের পুঞ্জীভূত জ্ঞান মানবহৃদয় হতেই উৎসারিত। মানুষের হৃদয়ে পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ সবকিছুরই অবস্থান। তাই মানবহৃদয়কেই সকল ধর্মের সবচেয়ে বড় উপাসনালয় বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের অপরের কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করার মহৎ প্রচেষ্টা ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় উলিখিত শাক্যমুনির জনকল্যাণের জন্য রাজ্য ত্যাগের দিকটিকে নির্দেশ করে।
নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে অপরের প্রাণ রক্ষা করা মহত্তে¡র লক্ষণ। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে যে মানুষ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন তিনি মহামানব।
উদ্দীপকের মুজাহিদ এক পরোপকারী ও সাহসী যুবক। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সে অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা করার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় রাজকুমার বুদ্ধদেব মানুষের মঙ্গলের জন্য রাজসুখ ত্যাগ করে পরমেশ্বরের ধ্যান করেন।
আবার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যাধি ও জ্বালা-যন্ত্রণা দূর করার জন্য শাক্যমুনি রাজপাট পরিত্যাগপূর্বক স্রষ্টার সাধনায় নিজেকে সঁপে দেন। উদ্দীপকের মুজাহিদ মানুষের জীবন রক্ষার্থে নিজের প্রাণ ত্যাগের ঘটনাটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার শাক্যমুনির জনস্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দিকটিকে নির্দেশ করে।
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | আনিসুজ্জামান | বাংলা ১ম পত্র | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-৯ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | PDF
HSC | বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | PDF
ঘ. “মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা।”-উক্তিটি যথার্থ।
অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই মানবিকতার যথার্থ স্ফুরণ ঘটে। আলোচ্য উদ্দীপকে মুজাহিদের আত্মত্যাগ ও শাক্যমুনির রাজ্যত্যাগের মধ্যে এ পরামর্শই পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকটিতে মুজাহিদ নামে এক পরহিতকারী সাহসী যুবকের কাহিনি প্রকাশ পেয়েছে। নিজ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে সে আগুনের মাঝে আটকে পরা লোকজনকে উদ্ধার করেছে। আলোচ্য উদ্দীপকে পরহিতব্রতী সাহসী যুবক মুজাহিদের আত্মবিসর্জন তাই কবিতায় শাক্যমুনির রাজ্যত্যাগের কাহিনিকে নির্দেশ করে।
রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা বুদ্ধদেবকে ব্যথিত করে। যন্ত্রণাকাতর কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে স্রষ্টার কৃপাদৃষ্টি লাভের জন্য, বেদনাহত মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য শাক্যমুনির রাজ্য ছাড়ার কথা ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে উদ্দীপকেও স্বীয় জীবনের মায়া ভুলে অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার হতো আত্মত্যাগের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এক্ষেত্রে মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা। তাই উক্তিটি যথোপযুক্ত।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।