সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি): অধ্যায় ৫ : রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫ : রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. রাষ্ট্রচিন্তা কী?
অথবা, রাষ্ট্রচিন্তা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা রাষ্ট্র হলো সমাজজীবনের সর্বাপেক্ষা সর্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষ যুগ যুগ ধরে চিন্তাভাবনা করে আসছে, তার মধ্যে রাষ্ট্র অন্যতম।
এর মাধ্যমেই মানুষের সামাজিক জীবনের সূচনা এবং এর মাধ্যমেই তার জীবনের গতি প্রবহমান। বিভিন্ন যুগের মনীষীগণ বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাবে রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা করে এসেছেন এবং এর ফলে উদ্ভূত হয়েছে রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ ও চিন্তাধারা ।
রাষ্ট্রচিন্তা : সাধারণত রাষ্ট্রচিন্তা বলতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষী বা দার্শনিকের মতবাদকে বুঝায় অর্থাৎ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দার্শনিকের যে চিন্তাধারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্থান পেয়েছে তাই রাষ্ট্রচিন্তা হিসেবে পরিচিত। অন্য কথায় সমাজবদ্ধ মানুষের প্রকৃতি, তার আচরণ ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যাবলি প্রভৃতি বিষয়াবলি নিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষীর চিন্তাই রাষ্ট্রচিন্তা নামে অভিহিত ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Prof. Ernest Barker) এর মতে, “Political theory is speculation of particular thinkers, which may be remote from actual fact of the time. Political thought is the immanent philosophy of the whole age.” অর্থাৎ, রাষ্ট্রচিন্তা বিভিন্ন চিন্তাবিদদের চিন্তাচেতনা ও গবেষণার ফসলস্বরূপ ঘটনাবলি থেকে দূরে থাকে, কিন্তু রাষ্ট্রদর্শন একটি যুগের বাস্তব ঘটনাবলির স্থায়ী দর্শন ।
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৪:রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা অতিসংক্ষিপ্তত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:(ফ্রি PDF) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেনরি বি. মেয়ো (Henry B. Mayo) এর মতে, “যে রাজনৈতিক চিন্তাধারা কোনো বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ জনসমাজের ভাবধারা ও বিশ্বাসসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে তাই রাষ্ট্রচিন্তা। অর্থাৎ রাষ্ট্রচিন্তা হলো কোনো কালের বা যুগের রাজনৈতিক ধারণার সমষ্টি।”
অধ্যাপক হেরম্যান হেলার (Prof. Herman হেল্লের মতে, “রাষ্ট্রচিন্তা হলো রাষ্ট্রের স্থিতিশীল পর্যায়গুলোর আলোচনা করে।”
অধ্যাপক ওয়েপার (Prof. Wayper) এর মতে, “রাষ্ট্রচিন্তা বলতে সেই মতবাদকে বুঝায় যা রাষ্ট্রের গঠন, প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফিলিপ ডোয়েল (Philip Doyle) এর মতে, “মানব প্রকৃতি ও তার কার্যকলাপ, জীবনের সমগ্র অনুভূতির জন্য পৃথিবীর অপরাপর বিষয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ক ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে যে দর্শন কাজ করে তাকে রাষ্ট্রচিন্তা বলে ।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন চিন্তাবিদদের মতামতই হলো রাষ্ট্রচিন্তা। রাষ্ট্রচিন্তা মূলত মানুষের বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কার্যাবলি আলোচনার মাধ্যমে মানুষ ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে । এককথায় মানুষ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যাবলি এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যাবলি যা মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, তা সবই রাষ্ট্রচিন্তার অন্তর্ভুক্ত।
০২. গ্রিক নগররাষ্ট্র কী?
অথবা, গ্রিক নগররাষ্ট্র বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিক ছিল সভ্যতার লীলাভূমি। রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে গ্রিক নগররাষ্ট্রের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাশ্চাত্য রাষ্ট্রদর্শনের পীঠস্থান গ্রিক নগররাষ্ট্রই ছিল গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের সূতিকাগার। বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে ক্রমবিকাশ ও ইতিহাস পাওয়া যায় তার উৎস হলো প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তা যা তৎকালীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
গ্রিক নগররাষ্ট্র : সাধারণত নগররাষ্ট্র (city state) বলতে নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্র বা ”City-based state’ কে বুঝায় । শুধুমাত্র নগরকে কেন্দ্র করে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাই নগর সভ্যতা বা নগররাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত।
যেমন—স্পার্টা, ডেনভার ও এথেন্স প্রভৃতি নগরকে কেন্দ্র করে প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠে। এসব নগররাষ্ট্রসমূহ ছিল রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তিস্বরূপ। বর্তমান বিশ্ব যে রাষ্ট্রচিন্তার উত্তরাধিকারী তা মূলত গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহের চিন্তাচেতনা ও সংস্কৃতিকে ভিত্তি করেই সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
প্রাচীন সভ্যতাসমূহের মতো গ্রিক সভ্যতাও ইজিয়ান সাগর বিধৌত ছোট ছোট সমুদ্র ও দ্বীপমালাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন গ্রিকরা নিজেদেরকে তাদের আদি মানব ডিওকালিয়েনের পুত্র হেলেনের বংশধর বলে পরিচয় দিতেন। তাই গ্রিক জাতিকে হেলেনিক জাতি এবং গ্রিক সভ্যতাকে হেলেনিক সভ্যতা বলে অভিহিত করা হয়।
এরা খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে হোমারিক যুগে গ্রিস অঞ্চলে বিভিন্ন গোত্রের লোক একত্রিত হয়ে গ্রামীণ জীবন শুরু করে। অনেকগুলো গ্রাম নিয়ে গঠিত, প্রাকৃতিকভাবে স্বতন্ত্র এক একটি এলাকা নিয়ে রাজ্য তথা রাজনৈতিক এককের উদ্ভব ঘটে। এ ভূখণ্ড রক্ষার্থে সেনাবাহিনী ও দুর্গের প্রয়োজন হয় ।
সুউচ্চ এবং সুরক্ষিত এসব অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে ব্যাপক জনবসতি। প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার ইতিহাসে এগুলোই নগররাষ্ট্র বা চড়ষরং নামে পরিচিত। গ্রিসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা এসব নগররাষ্ট্রের মধ্যে এথেন্স, স্পার্টা, কোরিন্থ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Ernest Barker) Zvi ‘Greek Political Theory’ M«‡š’ e‡jb, “Political thought begins with the Greeks, its origin connected with the calm and clear rationalism of the Greek wind..” অর্থাৎ “গ্রিসের যুক্তিবাদের শান্ত পরিবেশে রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম সূত্রপাত।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রিক নগররাষ্ট্র বলতে মানুষের সেই সামাজিক সংগঠনকে বুঝায় যা আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
প্রাচীন গ্রিসের এসব নগররাষ্ট্রের সমাজ জীবন, ধর্ম, রাজনীতি নিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা সমৃদ্ধি অর্জন করছে যদিও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ম্যাকিয়াভেলির দ্বারা তথাপি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গ্রিকদের অবদানই সবার ওপরে।
০৩. নগরসভা বা এক্লেসিয়া কী?
অথবা, নগরসভা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসে নগরকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক ঐতিহ্য যথাযথভাবে বুঝতে হলে সমকালীন সমাজব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিহিত হওয়া প্রয়োজন ।
প্রাচীনকালে সমগ্র গ্রিস কতকগুলো ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল নগররাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় নগরসভা বা এক্লেসিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এথেন্সের নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরসভা বা এক্লেসিয়া অন্যতম একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ।
নগরসভা বা এক্লেসিয়া : প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এথেন্স ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নগররাষ্ট্র আর এথেন্সের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নগরসভা এক্লেসিয়া (Assembly Ecclesia) ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
এথেন্সে বসবাসরত পুরুষ নাগরিকদের নিয়ে নগরসভা গঠিত হতো। এটি ছিল এক প্রকারের শহরসভা যেখানে বিশ বছর বয়সের সকল পুরুষ নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারত। কোনো নারী এ সভার সদস্য হতে পারত না। সচরাচর এ সভায় উপস্থিতির সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার এবং ছয় হাজার সদস্য নিয়ে কোরাম গঠিত হতো।
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নগরসভা বা এক্লেসিয়াই ছিল সর্বেসর্বা। এক্ষেত্রে আধুনিক আইনসভার কার্যকালের মেয়াদ ছিল কম এবং এতে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। মাঝে মধ্যে এ নগরসভা নীতিনির্ধারণ ও নীতি কার্যকর করতে পারত। এ নগররাষ্ট্র হচ্ছে গ্রিক নগররাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র চর্চার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর মাধ্যমে সবাই রাষ্ট্রীয় কার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, এথেন্সের গণতান্ত্রিক কাজকর্ম ও আলাপ-আলোচনার সুবিধার্থে সৃষ্টি হয়েছিল নগর সভা। এই সভা প্রাপ্তবয়স্ক সকল পুরুষ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হতো। যার মাধ্যমে নাগরিকরা যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারত। এটি ছিল এথেন্সের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা যা বর্তমান সময়ে পার্লামেন্টের সাথে তুলনা করা যায়।
০৪. এথেন্সের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অথবা, এথেন্সের সমাজব্যবস্থার পরিচয় দাও সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিস কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়েছিল। রাজনৈতিক দিক থেকেও সেগুলো ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন। এসব নগররাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এথেন্স ছিল অন্যতম তাই প্রাচীন গ্রিসের সমাজ সম্পর্কে জানতে হলে সবার আগে এথেন্সের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। মূলত এথেন্স ছিল প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত, সুন্দর ও প্রতিনিধিত্বমূলক।
এথেন্সের সমাজব্যবস্থা : এথেন্সের সমাজব্যবস্থাও ছিল প্রাচীন গ্রিসের অন্যান্য নগররাষ্ট্রের মতো শ্রেণিভিত্তিক। নিম্নে এর সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- ১. সামাজিক শ্রেণি : এথেন্সের সমাজ প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এ শ্রেণিবিভাগ শুধু যে সামাজিক জীবনে পরিলক্ষিত হতো তাই নয়, রাজনৈতিক ও আইনগত জীবনেও এর যথেষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-
ক. নাগরিক : এথেন্সে সমাজের সর্বোচ্চ শ্রেণির লোকদেরকে নাগরিক বলা হতো অর্থাৎ যারা নগরের সদস্য তারাই নাগরিক। নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করতো। জন্মসূত্রেই তারা নাগরিক হওয়ার সুযোগ লাভ করতো। জন্মগত সূত্রে তাদের পিতামাতা যে নগরের নাগরিক তাদের সন্তানরাও সেই নগরের নাগরিকত্ব লাভ করতো।
খ. মেটিকস বা বিদেশিগণ : এথেন্সীয় সমাজের দ্বিতীয় স্তরে ছিল মেটিকস বা বিদেশিরা। এথেন্সের মতো বাণিজ্যপ্রবণ শহরে বিদেশিদের সংখ্যা প্রচুর হলেও তারা এথেন্সের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারত না। দাসদের মতো মেটিসরাও ছিল রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তবে তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারত।
গ. দাস : এথেন্সীয় সমাজ কাঠামোর দাসরা সর্বনিম্ন স্তরে ছিল। তারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করতো। দাসগণ এথেন্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
২. সংস্কৃতি এথেন্স ছিল সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র। এথেন্সকে বলা হতো কাব্য ও শিল্পকলার নগর। এখানে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও সাহিত্যিকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হতো। শরীর চর্চা ও খেলাধুলার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। মুক্তবুদ্ধি, মুক্ত চিন্তা বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী প্রত্যেকেই তার ইচ্ছানুযায়ী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারত
৩. শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান সময়ের মতো তৎকালীন এথেন্সে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল না। সোফিস্ট পণ্ডিতরা অর্থের বিনিময়ে অভিজাত শ্রেণির যুবকদের শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানী করে তুলতেন। সোফিস্টরা ছিলেন দার্শনিক, ব্যাকরণবিদ, অলংকারশাস্ত্র, সংগীতবিদ্যা, শরীরতত্ত্ব এবং চারুকলার পণ্ডিত
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সের সমাজব্যবস্থা ছিল মূলত দাসনির্ভর। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব সমাজব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থা একই প্রকৃতির হলেও প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সের সমাজব্যবস্থার দুর্বল দিক হলো ক্রীতদাস প্রথাকে সমর্থন এবং নারীদের সমঅধিকার না দেওয়া। যার ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় পুরুষেরাই একচেটিয়া সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো।
০৫. রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
অথবা, রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রদর্শন প্রাচীন গ্রিক চিন্তাধারারই ক্রমবিবর্তনের ফল। বিশেষ করে পাশ্চাত্যের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের রাষ্ট্রচিন্তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার বলেছেন, “গ্রিসের যুক্তিবাদের শান্ত পরিবেশের মাধ্যমেই রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব হয়।” আর বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন লক্ষ করি তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনেরই উপহারস্বরূপ।
রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান : নিম্নে রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে যেসব মতবাদ বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে বিবর্তনবাদ অন্যতম । আর গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল রাষ্ট্রের বিবর্তনবাদী তত্ত্ব প্রদান করেন। তার মতে, “ঝঃধঃব রং ধ মৎড়ঃিয, হড়ঃ ধ পৎবধঃরড়হ.” অর্থাৎ রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়নি, এটি ক্রমবিবর্তনের ফল।
২. আইনের শাসন : বর্তমানকালে আইনের শাসন বলতে যে তত্ত্বটির ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে এবং যে তত্ত্বের ওপর নিয়মতন্ত্রবাদের মূল কাঠামো প্রতিষ্ঠিত, তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনেরই ফল। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তার ঞযব চড়ষরঃরপং’ গ্রন্থে আইনের শাসন সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “বিধিসম্মত উপায়ে গঠিত আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্যেই ব্যক্তির যথার্থ স্বাধীনতা ও মুক্তি নিহিত।”
৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : আধুনিক বিশ্বে বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে যে ন্যায়বিচার তথা রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন থেকেই উদ্ভূত। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো সর্বপ্রথম তার আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি,অধ্যায়৩:মৌলিক ধারণাসমূহ
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
৪. স্বাধীনতা রক্ষা : প্রাচীন গ্রিকদের স্বাধীনতার প্রতি মমত্ববোধ আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। গ্রিকরা তাদের নগররাষ্ট্রসমূহকে এক একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে অত্যন্ত তৎপর ছিল। গ্রিক অধিবাসীদের স্বাধীনতার প্রতি এরূপ অবস্থা তার পূর্ববর্তী প্রাচ্যের কিংবা পরবর্তী রোম সাম্রাজ্যে কোনোটিতেই দেখা যায়নি।
৫. গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশ : গ্রিক নাগরিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় জীবন ব্যবস্থাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এথেনীয়রা তাদের সংবিধানকে গণতান্ত্রিক সংবিধান বলে অভিহিত করতো। কারণ শাসনকার্যে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ ছিল অপরিহার্য। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানকালে যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে তা মূলত প্রাচীন গ্রিসের গণতান্ত্রিক চেতনারই ক্রমবিকাশের ফল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে ক্রমবিকাশ তার উৎস হলো প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তা। গ্রিক সমাজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীর আবির্ভাবের ফলে সেখানে যে নানাবিধ ভাবধারা ও চিন্তাচেতনা বিকশিত হয় তার মধ্যে দর্শন, রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও রাজনৈতিক আদর্শ উল্লেখযোগ্য। একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অবদান সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)