লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF) পর্বঃ ১ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের থেকে থাকুন।
লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ১ : লোকপ্রশাসন
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
০১. লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর । অথবা, লোকপ্রশাসনের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষ তার উর্বর মস্তিষ্কের উৎকর্ষসাধনের মাধ্যমেই নানাবিধ প্রতিকূল পরিবেশে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও মানবীয় চাহিদা পরিপূরণের প্রত্যাশায় গড়ে তুলেছিল দল, গোষ্ঠী ও সমাজব্যবস্থা।
মানুষের জীবন যত আধুনিক হচ্ছে ততই বেড়ে যাচ্ছে জীবনের ব্যস্ততা, কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব থেকে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। রাষ্ট্র ও সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্যই লোকপ্রশাসনের সূত্রপাত ঘটে।
লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা প্রাচীন ও সাম্প্রতিককালের প্রশাসন ব্যবস্থার সমন্বিত “রূপ। কালের বিবর্তনে ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেমন— ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে প্রশাসনের চর্চা শুরু হয়। লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও বিকাশের বিভিন্ন ধাপ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথের বক্তব্য : ষোল শতাব্দী হতে আঠার শতাব্দীতে ইউরোপে যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে সেখানে প্রশাসন কথাটি গুরুত্ব পায়। কী করে জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা যায় এবং কী উপায়ে মজবুত অর্থনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বাড়ানো যায় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
এডাম স্মিথ তার বিখ্যাত ‘Wealth of Nations’ (1776) এ বক্তবটি তুলে ধরেন। ব্যবসা বাণিজ্য জোরদার করে একটি শক্তিশালী সরকার সৃষ্টির পদ্ধতি হলো Laisess-faire বা বাণিজ্যের ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না করা।
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতি অধ্যায়:-১(সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
২. লোকপ্রশাসনের চর্চা ও পাঠ্যক্রম : লোকপ্রশাসনের চর্চা শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রুশিয়ায় রাজকীয় চাকুরিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই প্রথম লোকপ্রশাসনের চর্চা শুরু হয়।
ইউরোপীয় দেশ সুইডেনে প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক আইনের অধীনে বিশেষ পাঠ্যক্রম হিসেবে লোকপ্রশাসনের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে প্রশাসন একটি সুসংবদ্ধ বা বিজ্ঞানসম্মত বিদ্যা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
৩. লোকপ্রশাসনের ওপর প্রথম বই প্রকাশ : প্যারিসে সর্বপ্রথম ১৮০৮ সালে চার্লস বুনিন (Charles J. Bounin) নামক ব্যক্তি ‘Principles of Public Administration.’ নামে একটি বই লিখেন। এ বইটিতে লোকপ্রশাসনের নানা মৌলিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়।
৪. লোকপ্রশাসন বিকাশে ফ্রান্স ও স্পেন : ফ্রান্স কর্তৃক প্রভাবান্বিত হয়ে স্পেনে ১৮৩০ সালে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। ১৮৪২ সালে মাদ্রিদে একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ।
৫. প্রশাসনিক বিজ্ঞানের স্বীকৃতি : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোকপ্রশাসনকে বিভিন্ন নামে অধ্যয়ন করানো হতো। আঠারো শতাব্দীতে যুগোশ্লাভিয়ায় প্রশাসনিক বিজ্ঞান আইন অনুষদে পড়ানো হতো। ১৮৪৫ সালে সার্বিয়াতে ‘প্রশাসনিক বিজ্ঞান’ পাঠা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
১৮৫৬ সালে তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘Administration Science’ সম্পর্কে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে উরুগুয়েতে, ১৮৭৯ সালে ব্রাজিলে এবং চিলিতে ১৯০০ সালে ‘Administration Law’ বিষয়টি চালু হয় ।
৬. আমেরিকায় লোকপ্রশাসনের বিকাশ : সমগ্র ইউরোপে লোকপ্রশাসনের বিস্তারের পূর্বে আমেরিকাতে এর প্রচার ও প্রসার অনেক দ্রুতগতিতে হয়। ১৮৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ‘Political Science’ নামক ত্রৈমাসিক পত্রিকায় ‘The Study of Administration’ নামক যে প্রবন্ধ লিখেন তা পরবর্তীতে প্রশাসনকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পিছনে প্রেরণা যুগিয়েছিল।
১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসন সম্পর্কে ২৭টি প্রসিদ্ধ বই রচিত হয় এবং একই বছরেই L. D. White প্রথম আধুনিক বই ‘Introduction to the Study of Public Administration’ রচনা করেন।
৭. প্রশাসন ও রাজনীতির বিভক্তিকরণ : বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফ্রাঙ্ক জে. গুডনোও (Frank J. Goodnow) তার বিখ্যাত বই ‘Politics and Administration’ প্রকাশ করেন যেখানে তিনি রাজনীতি ও প্রশাসনকে ২টি ভাগে বিভক্ত করেন এবং যুক্তি দেখান যে, উভয়ই সরকারের ২টি স্বতন্ত্র কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
৮. উড্রো উইলসনের ভূমিকা উনিশ শতকের শুরু থেকেই লোকপ্রশাসনের ব্যাপক অগ্রগতি ও বিকাশ পরিলক্ষিত হয় যেখানে অনেক বড় অবদান রাখেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন। ১৮৮৭ সালে ‘Political Science Quarterly’ নামক পত্রিকায় তার রচিত ‘The Study of Political Science’ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় ।
সেই প্রবন্ধে লোকপ্রশাসনকে একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ বিষয় হিসেবে প্রথম উপস্থাপন করা হয়। তাই ডুয়াইট ওয়াল্ডো (Dwight Waldo) উড্রো উইলসনকে লোকপ্রশাসন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বা জনক বলে অভিহিত করেন।
৯. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা হিসেবে প্রশাসন : এফ. ডব্লিউ. টেইলর ‘Principles of Scientific Management’ 4 ‘Shop Management’ নামে ২টি বই লিখেন যেখানে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে একটি পেশায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
১০. হেনরি ফেয়ল ও তার অবদান : ফরাসি চিন্তাবিদ হেনরি ফেয়ল ১৯১৬ সালে ‘General & Industrial Management’ নামক পুস্তক রচনা করেন । এ গ্রন্থে ১৪টি যুক্তিসিদ্ধ ও শক্তিশালী নীতির কথা বর্ণনা করেন। তাই তাকে ‘আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।
১১. প্রশাসনকে বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি : ১৯৩৭ সালে লুথার গুলিক (Luther Gullick) এবং এল. আরউইক (L. Urwick) এর প্রশাসন বিজ্ঞানসংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তারা উভয়েই প্রশাসনকে বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করেন। লুথার গুলিক সংগঠনে ৪টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেন। যথা : ক. উদ্দেশ্য; খ. প্রক্রিয়া; গ. ব্যক্তি ও ঘ. স্থান ।
১২. চেস্টার আই. বার্নার্ড, পিটার ড্রাকার, মেরি পার্কারের ভূমিকা : চেস্টার বার্নার্ড প্রশাসনকে একটি যৌথ ও সামাজিক কাজ বলে অভিহিত করেন। মিস মেরি পার্কার রচিত ‘Dynamic Administration’ এ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং আইন সম্পর্কে বলেছেন। ১৯৫৪ সালে পিটার ড্রাকার ব্যবস্থাপনার ব্যবহার সম্পর্কে বই লিখেন ।
১৩. স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে লোকপ্রশাসন : একবিংশ শতাব্দীর ৫০ ও ৬০ এর দশকের তুলনায় ৭০ দশকে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু, কার্যক্রম ও পদ্ধতির গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পেশাগত ও একাডেমিক স্বীকৃতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রিটেন, আমেরিকা,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা পেয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিককালে লোকপ্রশাসন সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিক থেকেই লোকপ্রশাসন দ্রুত পরিবর্তিত ও সমৃদ্ধ হতে থাকে। আরও পরিবর্তন বৈশিষ্ট্যগতভাবে লোকপ্রশাসনকে একটি নতুন ও সুশৃঙ্খল বিজ্ঞানে পরিণত করার প্রয়াসে উদ্যোগী হয়।
লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের নতুন নতুন অবস্থা ও প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
০২. লোকপ্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু বর্ণনা কর । অথবা, লোকপ্রশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের প্রাক্কালে এবং জাতিরাষ্ট্র (Nation State) এর বিকাশের পথে লোকপ্রশাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ৬০ এর দশকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হতে পৃথক হয়ে ‘
লোকপ্রশাসন’ নামে নতুন পাঠ্যবিষয় রূপায়িত হয়। ব্যক্তিগত, সামাজিক অথবা জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লোকপ্রশাসনের প্রভাব অত্যন্ত সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের সমস্যাবলিই এর আলোচ্য বিষয় ।
লোকপ্রশাসনের পরিধি : লোকপ্রশাসনের পরিধি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. রাষ্ট্রীয় সংগঠনের আলোচনা : রাষ্ট্রের যাবতীয় সাংগঠনিক বিষয়াবলি লোকপ্রশাসনের অন্তর্গত। একটি রাষ্ট্রের ভিতরের যাবতীয় বিষয়াবলি যেমন— সরকার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো, শাসনসংক্রান্ত কার্যাবলি, সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়াবলি লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু।
২. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যালোচনা : রাজনীতি ও প্রশাসনের পর্যালোচনা লোকপ্রশাসনের আওতাভুক্ত। মার্শাল ডিমোক বলেন, “An understanding of Politics is the key to an understanding of Public administration.” অর্থাৎ, রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লোকপ্রশাসনকে বুঝার একমাত্র চাবি। ক্ষমতাই রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। একজন প্রশাসক তার কর্মী হতে শুরু করে সংগঠনের সব পর্যায়ে কর্মী হতে সমর্থন লাভ করেন।
৩. অর্থ প্রশাসন : সরকারি প্রশাসনের যেকোনো কাজ অর্থ ব্যতীত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই অধ্যাপক ডিমোক ও ডিমোক বলেছেন, “বায়ুর জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন ঠিক তেমনই প্রশাসনের জন্য প্রয়োজন অর্থ”। আত্মা ব্যতীত যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি অর্থ ব্যতীত প্রশাসনিক সংগঠন টিকে থাকতে পারে না।
৪. কর ধার্য ও বাজেট প্রণয়ন : কর প্রশাসন, বাজেট প্রশাসন এবং নিরীক্ষা ও হিসাব পদ্ধতি অর্থ প্রশাসনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট তৈরি করে আর মন্ত্রিপরিষদ সে বাজেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা, তদারক এবং তাতে অনুমোদন দান করে। তারপর আইনসভায় উপস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে এর ওপর বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
৫. সরকারি কর্মচারী প্রশাসন : লোকপ্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হলো এটি সরকারি কর্মচারী প্রশাসন। একটি সুষ্ঠু কর্মচারী প্রশাসনই পারে সমগ্র প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে। সরকারি কর্মচারী প্রশাসন নিয়োগ পদ্ধতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। নিয়োগকৃত কর্মচারীদের সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পদোন্নতি, বেতন কাঠামো ইত্যাদি নিশ্চিত করাও সরকারি কর্মচারী প্রশাসনের দায়িত্ব ।
৬. প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা : প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও লোকপ্রশাসন আলোচনা করে। পদ্ধতিগতভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করার অর্থই ব্যবস্থাপনা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করাই ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য।
৭. পরিকল্পনা : পরিকল্পনা ও প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসক ও কর্মকর্তাগণই পরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করে থাকেন। পরিকল্পনার মূল অর্থ হলো, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের বিকল্প চাহিদা এবং আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সীমিত সম্পদ নিয়োজিত করা।
৮. প্রশাসনিক আইন : এটিও লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত প্রশাসনিক সংস্থার কাজ পরিচালনা করার জন্য কোনো প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যেসব আইন ও নিয়মাবলি ঘোষণা ও কার্যকর করে থাকে তাকেই প্রশাসনিক আইন বলা হয়।
৯. উন্নয়ন প্রশাসন উন্নয়ন প্রশাসন লোকপ্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। কারণ গতানুগতিক প্রশাসন দেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। লোকপ্রশাসনকে দক্ষতার সাথে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে উন্নয়ন প্রশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে, লোকপ্রশাসন সরকারের সব ধরনের কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। লোকপ্রশাসনের পরিধি রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির পরিধি থেকে কোনো অংশে কম না। আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্রে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে লোকপ্রশাসন জনগণকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক সেবা প্রদান করছে। এছাড়াও এটি সরকারি শিল্পকারখানার ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি শিল্পের পরিচালনায় বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত তিনটি দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা যায়। যথা :
ক. সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : লুথার গুলিক লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু নির্ধারণে এ পন্থা উল্লেখ করেন। তার মতে, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু POSDCORB এ অক্ষরগুলোর মধ্যে নিহিত আছে। এ অক্ষরগুলোর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ : P – Planning (পরিকল্পনা) : কোন পদ্ধতিতে, কী কাজ এবং কী উদ্দেশ্যে কাজটি করা হবে তার একটি রূপরেখাই হচ্ছে পরিকল্পনা ।
O-Organization (সংগঠন) : প্রশাসনিক সংগঠনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, অধিদপ্তর প্রভৃতিতে বিভক্ত করা হয় এবং এগুলোর বৈধ রূপ দেওয়ার কাজই হলো সংগঠন ।
S – Staffing (কর্মীবর্গ) Staffing বলতে কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বেতন, পদোন্নতি, অবসর, পেনশন প্রভৃতি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
D – Directing (নির্দেশনা) : সংগঠনের কার্যক্রমকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সঠিক নির্দেশনা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। নির্দেশনা বলতে বুঝায়, “Making decisions and issuing order and divisions.”
C – Co-ordinating (সমন্বয়) সমন্বয় বলতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কাজের বিভিন্ন অংশের একত্রিকরণকে বুঝায় ।
R – Reporting (প্রতিবেদন) প্রতিবেদন বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সংগঠনের প্রশাসনিক কার্যকলাপ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করা।
B – Budgeting (অর্থবরাদ্দ) : প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন কোন খাতে অর্থ আসবে এবং কোন কোন খাতে তা ব্যয় হবে সেটির একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করা।
খ. বৃহত্তর অর্থে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : প্রফেসর উড্রো উইলসন ও এল. ডি. হোয়াইট এ তত্ত্বের প্রবক্তা। তাদের মতে,
১. লোকপ্রশাসন সরকারের তিনটি বিভাগ যথা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগকে সংযুক্ত করে এবং এ তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে।
২. লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু অনেকাংশে সহযোগী গ্রুপের মতো। এটি প্রথম শ্রেণি হতে প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়ে গঠিত।
গ. নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন Walker. তিনি লোকপ্রশাসনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন । যথা :
১. তত্ত্বগত প্রশাসন : তত্ত্বগত প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
- প্রশাসনিক সংগঠনের গঠন কাঠামো, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু সংক্রান্ত সমস্যাবলি ।
- প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাবিনেট ও সংসদীয় নিয়ন্ত্রণ।
iii. প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল ।
- বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ
- সরকারি নীতিমালা নির্ধারণ, কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয়াদি।
- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় ।
২. ব্যবহারিক প্রশাসন : ব্যবহারিক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
- রাজনৈতিক কার্যাবলি রাষ্ট্রের আইন, শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক, মন্ত্রিসভার প্রশাসনিক কার্যাবলি ইত্যাদি।
- আইনগত কার্যাবলি : আইনবিভাগ সংসদীয় পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন করবে যা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে।
iii. প্রতিরক্ষা : সামরিক প্রশাসন সম্পর্কিত কার্যাবলি।
- শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলি : শিক্ষার যাবতীয় উন্নয়ন ও বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিষয়াবলি ।
- সামাজিক কল্যাণসংক্রান্ত কার্যাবলি : সামাজিক বিষয়াবলি যেমন— খাদ্য, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি কার্যক্রম।
- অর্থনৈতিক প্রশাসন : উৎপাদন এবং কৃষি ও শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যাবলি ।
vii. বৈদেশিক প্রশাসন : বৈদেশিক নীতি, বাণিজ্য, কূটনীতি, আন্তর্জাতিক সহায়তা সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত।
viii. স্থানীয় প্রশাস্ন : স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাসংক্রান্ত কার্যাবলি লোকপ্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং বিস্তৃত । তবে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু নির্ধারণে তাত্ত্বিকদের বক্তব্যের পাশাপাশি স্বীয় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিবেচনায় আনতে হবে।
০৩. লোক প্রশাসনের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু আলোচনা কর। অথবা, লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের সব রাষ্ট্রই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আর এ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে সরকার। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে নাগরিক ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় সরকারকে। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় লোকপ্রশাসনের ওপর। সুতরাং লোকপ্রশাসনের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করেই লোকপ্রশাসন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি : লোকপ্রশাসনের উৎপত্তির ন্যায় এর প্রকৃতির বিষয়টিও সুস্পষ্টরূপে বলা কঠিন ব্যাপার। বস্তুত লোকপ্রশাসন মানবসমাজের মতোই প্রাচীন । মনীষীগণ লোকপ্রশাসনের প্রকৃতিকে দুটি মতবাদে বিভক্ত করেছেন। যথা : ১. অখণ্ডবাদী বা সুসংহত মতবাদ ও ২. ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদ। নিম্নে এ দুটি মতবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. অখণ্ডবাদী বা সুসংহত মতবাদ : অখণ্ডবাদী মতবাদের মতে, সব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কায়িক ব্যবস্থাপনাগত ও প্রযুক্তিগত সকল প্রকার কর্মের সমষ্টিই হচ্ছে প্রশাসন।
প্রতিষ্ঠানসমূহের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কার্যত সকল ব্যক্তির কার্যকলাপই এ মতবাদের আওতাভুক্ত। এ মতবাদের সমর্থক বা বিশ্বাসীদের মধ্যে L. D. White, উড্রো উইলসন ও মার্শাল ডিমোক এবং অধ্যাপক ফিফনার অন্যতম । তাদের মতে লোকপ্রশাসন রাষ্ট্রের জনগণের এবং নাগরিকের কল্যাণের জন্য কাজ করে ।
২. ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদ : ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদের অনুসারীদের মতে, এমন কিছু ব্যবস্থাপক মানুষকে বুঝায় যারা পরিকল্পনা, সাংগঠনিক, আদেশমূলক, নিয়ন্ত্রণমূলক প্রভৃতি কাজের সাথে জড়িত। ব্যবস্থাপনা, সংগতির রক্ষা, নিয়ন্ত্রণ ও সমুদয় কার্যক্রমের সমন্বয় বিধানের কাজেই প্রশাসন। ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদের সমর্থকদের মধ্যে হার্বার্ট সাইমন, স্মিথ বার্গ থমসন, লুথার গুলিক, মারসন অন্যতম।
জেমস ডব্লিউ. ফেসলার (James. W. Fesler) লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি নিয়ে যারা আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ফেসলার তার বক্তব্যের মাধ্যমেই দুটি দিক তুলে ধরেছেন । যথা : ১. নীতি বাস্তবায়ন ও ২. নীতি প্রণয়ন করা। এ দুটি বিষয়ের মাধ্যমেই লোকপ্রশাসন সঠিক পথে পরিচালিত হয়।
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : নিম্নে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলো—
ক. সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : লুথার গুলিক লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু নির্ধারণে এ পন্থা উল্লেখ করেন। তার মতে, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু POSDCORB এ অক্ষরগুলোর মধ্যে নিহিত আছে । এ অক্ষরগুলোর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
P – Planning (পরিকল্পনা) : কোন পদ্ধতিতে, কী কাজ এবং কী উদ্দেশ্যে কাজটি করা হবে তার একটি রূপরেখাই হচ্ছে পরিকল্পনা।
0 – Organization (সংগঠন) : প্রশাসনিক সংগঠনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, অধিদপ্তর প্রভৃতিতে বিভক্ত করা হয় এবং এগুলোর বৈধ রূপ দেওয়ার কাজই হলো সংগঠন।
S – Staffing (কর্মীবৰ্ণ) Staffing বলতে কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বেতন, পদোন্নতি, অবসর, পেনশন প্রভৃতি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ।
D – Directing (নির্দেশনা) : সংগঠনের কার্যক্রমকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সঠিক নির্দেশনা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। নির্দেশনা বলতে বুঝায়, “Making decisions and issuing order and divisions.”
C – Co-ordinating (সমন্বয়) : সমন্বয় বলতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কাজের বিভিন্ন অংশের একত্রিকরণকে বুঝায়।
R – Reporting (প্রতিবেদন) : প্রতিবেদন বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সংগঠনের প্রশাসনিক কার্যকলাপ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করা।
B – Budgeting (অর্থবরাদ্দ) প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন কোন খাতে অর্থ আসবে এবং কোন কোন খাতে তা ব্যয় হবে সেটির একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করা।
খ. বৃহত্তর অর্থে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : প্রফেসর উড্রো উইলসন ও এল. ডি. হোয়াইট এ তত্ত্বের প্রবক্তা। তাদের মতে,
১. লোকপ্রশাসন সরকারের তিনটি বিভাগ যথা : আইন, শাসন ও বিচার বিভাগকে সংযুক্ত করে এবং এ তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে।
২. লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু অনেকাংশে সহযোগী গ্রুপের মতো। এটি প্রথম শ্রেণি হতে প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়ে গঠিত।
গ. নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : নিয়ন্ত্রণের দিক হতে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন Walker. তিনি লোকপ্রশাসনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন । যথা ১. তত্ত্বগত প্রশাসন : তত্ত্বগত প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
- প্রশাসনিক সংগঠনের গঠন কাঠামো, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু।
- প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাবিনেট ও সংসদীয় নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমস্যাবলি ।
iii. প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল ।
- বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ।
- সরকারি নীতিমালা নির্ধারণ, কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয়াদি।
- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় ।
২. ব্যবহারিক প্রশাসন : ব্যবহারিক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
- রাজনৈতিক কার্যাবলি : রাষ্ট্রের আইন, শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক, মন্ত্রিসভার প্রশাসনিক কার্যাবলি ইত্যাদি।
- আইনগত কার্যাবলি : আইনবিভাগ সংসদীয় পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন করবে যা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে।
iii. প্রতিরক্ষা : সামরিক প্রশাসন সম্পর্কিত কার্যাবলি।
- শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলি : শিক্ষার যাবতীয় উন্নয়ন ও বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিষয়াবলি।
- সামাজিক কল্যাণসংক্রান্ত কার্যাবলি : সামাজিক বিষয়াবলি যেমন- খাদ্য, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি কার্যক্রম।
- অর্থনৈতিক প্রশাসন : উৎপাদন এবং কৃষি ও শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যাবলি ।
vii. বৈদেশিক প্রশাসন : বৈদেশিক নীতি, বাণিজ্য, কূটনীতি, আন্তর্জাতিক সহায়তা সবকিছু এর অন্তর্ভুক্ত।
viii. স্থানীয় প্রশাসন : স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাসংক্রান্ত কার্যাবলি লোকপ্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পূর্বে লোকপ্রশাসনের কর্মপরিধি তথা বিষয়বস্তু ছিল সংকীর্ণ। কিন্তু লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই সার্বিকভাবে বলা যায় বিষয়বস্তুর কোনো মাত্রা নেই, জনগণের বিভিন্ন চাহিদা বৃদ্ধির ফলে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুও পরিবর্তন হচ্ছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)