রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিভাগঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ১ – রাষ্ট্রবিজ্ঞান(Political Science)
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন –
১) রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভুমিকাঃ রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যপ্রণালি পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।
একজন সুনাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে সচেতন থেকে রাষ্ট্রের কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্যও একজন মানুষকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Political Science । এর উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ PoliS থেকে। PoliS শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র অর্থাৎ তৎকালে নগররাষ্ট্র নিয়ে গবেষণা, আলোচনা করাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হতো।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র ও সরকারের উদ্ভব, বিকাশ, গঠন, কাঠামো, কার্যক্রম সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন মতবাদ, আদর্শ বা নীতির গ্রহণযোগ্যতা, সমালোচনাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান করে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল এর মতে, “রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন একটি বিষয়- একটি সুসংগঠিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ নগররাষ্ট্রের আদর্শ জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সব বিষয়ই যার অন্তর্ভুক্ত।“
অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “সংগঠিত রাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে মানবজীবনের আলোচনাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান।“
অধ্যাপক উইলোবি এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রকৃতি নির্ণয় করে এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে।“
রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ম্যাক্স ওয়েবার এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাধারে বাস্তববাদী ও আদর্শবাদী বিজ্ঞান, যা ন্যায়নীতি অনুসন্ধানের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচরণকে নিয়ে আলোচনা করে।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিকক বলেন, “Political Science deals with Government” অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারকে নিয়ে আলোচনা করে।
অধ্যাপক গার্নার বলেন, “Political Science begins and ends with the state.”
গেটেল বলেন, “এটা সত্য যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক সংগঠন ও তত্ত্বের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিঃ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়। এ কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি নির্ণয় করা সহজসাধ্য ব্যাপারে নয়। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ বর্ণনা করা হলো –
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাঃ সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, আমলাতন্ত্র প্রভৃতি হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব প্রতিষ্ঠানের গঠন ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
২. ক্ষমতাঃ ক্ষমতার সাথে যেমন রয়েছে রাজনীতির নিবিড় সম্পর্ক, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে। H.D. Lasswell এর মতে, “The study of politics is the study of influence and influential.” রবার্ট ডালও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
৩. সরকার বিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকার। সরকারের কার্যাবলি অনেক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের কার্যাবলি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। লিকক এর মতে, “Political science deals with government.”
৪. রাষ্ট্রঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শুরু এবং সমাপ্তি রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ও বিস্তৃতি যতই বৃদ্ধি হোক না কেন, রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব, গবেষণা এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
৫. আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানঃ জাতিসংঘ, UNESCO, UNICEF, OIC, IMF ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালি আলোচনা করে।
৭. শাসন বিভাগঃ একটি রাষ্ট্রের সুষ্ঠ পরিচালনায় শাসন বিভাগের ভূমিকা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শাসন বিভাগের গঠন, কার্যাবলি নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করে।
৮. আইন বিভাগঃ আইনের উৎস, প্রণয়ন প্রক্রিয়া, বাস্তবায়নের উপায়, প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই পর্যালোচনাই একজন সাধারণ নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
রাষ্ট্রের পরিধিঃ
রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিবর্তন, গঠন, কার্যপদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সব আলোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
১. রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের উদ্ভব, গঠন, কার্যপদ্ধতি, প্রকারভেদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদভাবে আলোচনা করে।
রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত নীতি বা তত্ত্বের ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। রাষ্ট্রের উপাদান, রাষ্ট্রে পরিণত করাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।
২. সরকার বিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদানসমূহের মধ্যে সরকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের গঠন, উপাদান, প্রকারভেদ, কার্যক্রম নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদ আলোচনা করে।
৩. জনগণঃ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হলো জনগণ। জনগণ ব্যতিরেকে কোনো রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। আর জনগনের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, রাষ্ট্রের জনগণের ভূমিকা কী হওয়া দরকার তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। জনগণকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আলোচনা সুনাগরিক হওয়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪. সার্বভৌমত্বঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক নীতি, কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব নীতি নির্ধারণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির আবশ্যকীয়তা প্রকাশ পায়।
৫. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ রাষ্ট্র স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সুশৃজ্ঞখল এবং সুগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আবশ্যক। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠি প্রভৃতি হচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এদের সকলের কার্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে থাকে।
৬. রাজনৈতিক দলঃ রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিক ও বৈধ উপায়ে ক্ষমতার দখল নিতে চায়। এদের ভূমিকার ওপর রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলব্যবস্থা, দলের নীতি, আদর্শ, গঠন কার্যপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।
বিরোধী দলের ভূমিকা একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে। বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৭. জনমত গঠনঃ জনমত রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিভিন্ন দাবিদাওয়া বা চাওয়াকে কেন্দ্র করে জনমত গঠিত হয় এবং সরকার বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। জনমত গঠনের কারণ, পদ্ধতি এবং প্রভাব নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যাপক আলোচনা করে।
৮. তুলনামূলক রাজনীতিঃ তুলনামূলক রাজনীতি বা Comparative Politics বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি বৈপ্লবিক সংযোজন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নির্ণয় করা হয় এবং তুলনামূলক গবেষণালব্ধ ফলাফল রাষ্ট্রে প্রয়োগ করা হয়।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক রাষ্ট্রের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে জনগণের কল্যাণসাধন করা। আর রাষ্ট্রের কল্যাণ্মুখী ভূমিকাকে ত্বরানিত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। সময়ের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানেরও পরিবর্তন সাধন হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কল্যাণমুখী কাজকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখছে।
২)রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যাবলিতে যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও বিস্তৃতি হচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনার সীমানা নির্ধারণ করা দুরূস্থ কাজ। রোডি ও অন্যান্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, “No precise and definite boundaries can be place around political science.”
অর্থাৎ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোনো সঠিক ও সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব না। তারপরেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কিছু পরিধি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা একান্তই জরুরী।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তুঃ রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিবর্তন, গঠন, কার্যপদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আলোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তুর্ভুক্ত। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো –
১. রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের উদ্ভব, গঠন, কার্যপদ্ধতি, প্রকারভেদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদভাবে আলোচনা করে। রাষ্ট্রের উপাদান, সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রত্যেক রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।
২. সরকার বিষয়ক আলোচনাঃ Leacock বলেন, “Political science deals with government.” অর্থাৎ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারের কার্যক্রম ও গঠনপ্রণালি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদানসমূহের মধ্যে সরকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের গঠন, উপাদান, প্রকারভেদ, কার্যক্রম নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদ আলোচনা করে।
সরকার পদ্ধতি নিয়ে এরিস্টটল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগন সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঐসব মতামতের সংরক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৩. জনগণঃ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হলো জনগণ। জনগণ ব্যতিরকে কোন রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। আর জনগণের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, রাষ্ট্রের জনগনের ভূমিকা কী হওয়া দরকার তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আলোচনা সুনাগরিক হওয়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪. সার্বভৌমত্বঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক নীতি, কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব নীতি নির্ধারণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির আবশ্যকীয়তা প্রকাশ পায়।
৫. আইন বিভাগঃ একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আইন বিভাগের গতিশীলতা অনেক বেশি কার্যকরী। আইনের উদ্ভব, বিবর্তন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কেন্দ্রিক যাবতীয় বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
৬. শাসন বিভাগঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ। শাসনকার্য পরিচালনার যাবতীয় উপাদান, পদ্ধতি অবলম্বন, প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে। শাসন বিভাগের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিষয়েও রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
৭. বিচার বিভাগঃ দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন আদালতের গঠন, কার্যপ্রণালি নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেকোনো কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। আর বিচার বিভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আবশ্যকীয় আলোচ্য বিষয়।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৮. নির্বাচন ও নির্বাচকমন্ডলীঃ প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থাকে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, গহণযোগ্যতা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে বিশদ বর্ণনা প্রদান করে।
৯. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ রাষ্ট্র স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সুশৃংখল এবং সুগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আবশ্যক। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রভৃতি হচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এদের সকলের কার্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে থাকে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১০. রাজনৈতিক দলঃ রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিক ও বৈধ উপায়ে ক্ষমতার দখল নিতে চায়। এদের ভূমিকার ওপর রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলব্যবস্থা, দলের নীতি, আদর্শ, গঠন, কার্যপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।
বিরোধী দলের ভূমিকা একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে। বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।
১১. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীঃ বিরোধী দল ব্যতীত আরও অনেক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে এসব গোষ্ঠী জনকল্যাণে সরকারের চাপসৃষ্টীকারী গ্রুপের কাজ কেমন হবে, গঠনের ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
১২. জনমত গঠনঃ জনমত রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিভিন্ন দাবিদাওয়া বা চাওয়াকে কেন্দ্র করে জনমত গঠিত হয় এবং সরকার বা নির্বাচককে প্রভাবিত করে। জনমত গঠনের কারণ, পদ্ধতি এবং প্রভাব নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যাপক আলোচনা করে।
১৩. রাজনৈতিক মতবাদঃ রাজনৈতিক মতবাদ বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। মতবাদসমূহ যেমন – বিবর্তনবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি রাষ্ট্রের কাঠামোর নির্ধারক। এসব মতবাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
১৪. আচরণবাদঃ রাজনৈতিক আচরণবাদের মাধ্যমে কোনো দেশের সামগ্রিক অবস্থা নির্ণয় করা যায়। রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক, সরকার ও বিরোধীদলের সম্পর্ক ইত্যাদি রাজনৈতিক ব্যবস্থার আচরণকে নির্দেশ করে। বর্তমানে আচরণবাদের মাধ্যমে নাগরিকের আচরণের মূল্যায়নেও করা হচ্ছে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১৫. তুলনামূলক রাজনীতিঃ তুলনামূলক রাজনীতি বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি বৈপ্লবিক সংযোজন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নির্ণয় করা হয়। এবং তুলনামূলক গবেষণালব্ধ ফলাফল রাষ্ট্রে প্রয়োগ করা হয়।
১৬. পররাষ্ট্রনীতিঃ পররাষ্ট্রনীতি একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমতবের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পররাষ্ট্রনীতি অনেক সময় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে।
১৭. শাসনতন্ত্র বা সংবিধানঃ রাষ্ট্রের পরিচয় নিহিত থাকে সংবিধানে। রাষ্ট্র কোন আদর্শ ধারণ করবে, কোন নীতি গ্রহণ করবে, এসব কিছু সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা থাকে। আর সংবিধান প্রণয়নের ওপর রাষ্ট্রবিজ্ঞান গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে থাকে।
১৮. নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ কল্যাণ রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুনাগরিকের সংখ্যা এবং ভূমিকা বৃদ্ধি পাওয়া। সেক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা তাদের সুনাগরিক হতে সহায়তা করে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে।
উপসংহারঃ উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক রাষ্ট্রের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে জনগণের কল্যাণসাধন করা। আর রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী ভূমিকাকে ত্বরানিত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। সময়ের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানেরও পরিবর্তন সাধন হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কল্যাণমুখী কাজকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখছে।
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
৩) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হওয়ার কারণসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সামগ্রিক আলোচনা মূলত রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। আধুনিক সময়ে কর্মপরিধি এত ব্যাপকতা লাভ করছে যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা সীমানা নির্ধারণা করা কঠিন হয়ে পরেছে।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালি, গঠন বা প্রকারভেদ পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের কর্মকান্ডকে ঘিরেই যেহেতু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিস্তৃতি, তাই সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও হচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বেড়ে যাওয়ার কারণসমূহঃ সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার কিছু কারন করেছে। কারণসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো –
১. নতুন ধারণার আবির্ভাবঃ একসময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইতিহাস ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা বা আলোচনা করতো। এখন অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. রাজনৈতিক অগ্রগতিঃ বর্তমানে প্রত্যেক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থার ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা হচ্ছে। একসময় বিশ্বব্যাপী রাজতন্ত্র আর একনায়কতন্ত্রের উপস্থিতি ছিল বেশি, সেখানে বর্তমানে গণতন্ত্রের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। এভাবে রাজনৈতিক অবস্থার অগ্রগতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করছে।
৩. আর্থসামাজিক উন্নতিঃ একসময় আর্থসামাজিক অবস্থা কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো। এখন বিশ্বায়নের যুগে আর্থসামাজিক অবস্থায় সমগ্র বিশ্বের স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হয়। যার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও প্রসারিত হচ্ছে।
৪. সামাজিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সামাজিক বিজ্ঞানের যোগসূত্র নিবিড়। সামাজিক বিজ্ঞানের বিশ্বব্যাপী অগ্রযাত্রার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও তার প্রভাব লক্ষনীয়। সামাজিক বিজ্ঞানের যেরূপ পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. নানাবিধ নতুন সমস্যা ও এর সমাধানঃ মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় তাদের আন্তঃক্রিয়া নানা নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। ঐসব নতুন সমস্যার সমাধান বের করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক ব্যপক থেকে ব্যাপকতার হচ্ছে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৬. তুলনামূলক রাজনীতি বিষয়ে আলোচনাঃ একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে তুলনামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নতুন মাত্রা সংযোজন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের ত্রুটিবিচ্যুতি নির্ণয়, ইতিবাচক দিকসমূহের উৎসাহ দেওয়া প্রভৃতি কঞ্চিত সাধন হচ্ছে তুলনামূলক রাজনীতিক আলোচনার প্রভাবে। আর এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭. বিশ্বায়নের প্রভাবঃ বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতির পরিধি যেভাবে বিস্তৃতি হচ্ছে সেই সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিও দিন দিন ব্যাপক হচ্ছে। উন্নত দেশ আরও উন্নত হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশ উন্নত দেশের রাষ্ট্রকাঠামো অনুসরণ করছে। আর এভাবে প্রত্যেক রাষ্ট্রভিত্তিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে।
৮. আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হওয়ার পিছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব বিদ্যমান। একদেশের অর্থনীতি অন্যদেশের ওপর প্রভাব ফেলে, এক দেশের যুদ্ধ অন্য দেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে উদ্ভূত সমস্যার বের করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৯. রাজনৈতিক আদর্শের প্রভাবঃ আদর্শ অনেকাংশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে প্রভাবিত করছে। যেমন – পুজিবাদ, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম, সেকুলায়িজম বা ধর্ম। আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন নতুন পথ উন্মোচন করে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান এভাবে তার পরিধিকেও প্রসারিত করছে।
১০. অর্থনীতিতে পরিবর্তনঃ অর্থনীতিতে পরিবর্তন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। একসময় ছিল সামন্তবাদী অর্থনীতির জয়জয়কার। বর্তমানে সে জায়গা পুঁজিবাদীদের দখলে। নতুন নীতির বাস্তবায়নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও নতুন পরিধি বিস্তৃত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১১. আচরণবাদের প্রভাবঃ আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীয় নতুন সংযোজন। আচরণবাদের প্রভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন জাতি রাষ্ট্রের মধ্য থেকে নতুন নতুন আলচ্য বিষয় বের করতে সক্ষম হয়। যার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১২. তুলনামূলক রাজনৈতিক প্রভাবঃ তুলনামূলক রাজনীতির ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্র শক্তিশালী হয়েছে। যার ফলে একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তুলনা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নতুন নতুন আলচ্য বিষয় নির্ধারণ করতে পারে।
১৩. যুদ্ধের প্রভাবঃ যুদ্ধপরবর্তী সময়ে প্রতিটি রাষ্ট্র নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়। এতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নতুন পদ্ধতি অবলম্বনে নিজের মধ্যে নতুনত্ব আনয়ন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে তাকালে তার নমুনা লক্ষ করা যায়।
১৪. বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংঘর্ষ বিরাজ করছে। সংঘর্ষের বিপরীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নতুন নতুন বিষয়কে সংযুক্ত করতে হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহারঃ উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ পরিবর্তনশীল সভ্যতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সচেষ্ট।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে রাষ্ট্রের কার্যাবলি তথা জনশৃজ্ঞখলা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষা, জননিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন, দেশকে বহিঃশক্তির হাত থেকে রক্ষা প্রভৃতি কার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ে প্রতিভাত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনকে যুগোপযোগী করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিবর্তন সাধন আবশ্যক। এর ফলশ্রুতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি।
৪) রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান কিনা আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ রাজনীতি হচ্ছে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার ফসল। মানব সভ্যতার বিকাশের পূর্বে তাদের মধ্যকার ক্ষমতার চর্চা করার প্রবণতা থেকে রাজনীতির উদ্ভব। আর রাজনীতির প্রভাব, ফলাফল, কাঠামো প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণা ও বস্তৃতি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়ন পদ্ধতি অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে কোথাও সামঞ্জস্য দেখা যায়, আবার কোথাও দুটি ভিন্ন ধারা প্রদর্শন করে। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞান হওয়া না হওয়া নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ লক্ষ করা যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য হতে পারে কিনা এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য বর্তমান। একদল বিজ্ঞানীর মতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত। অন্যদিকে বিরুদ্ধবাদীদের অভিমত অনুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান পদবাচ্য নয়। কেননা এর বিষয়বস্তু ব্যাপক, জটিল ও অনিশ্চিয়তাপূর্ণ। নিম্নে এ বিষয়টি পক্ষে বিপক্ষে যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হলো –
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কি আমরা গতানুগতিক ধারার বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্য থাকায় বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করব নাকি এটা আদৌ বিজ্ঞান না, এ নিয়ে গবেষক বা দার্শনিক মহলে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলো –
১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমতঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পিছনে কালজয়ী দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের অভিমত রয়েছে। এদের মধ্যে এরিস্টটল, হবস, মন্টেস্কু, জ্যা বোডিন, কর্নওয়েল লুইস, লর্ড ব্রাইস প্রমুখ বিজ্ঞানীদের নাম উল্লেখযোগ্য।
২. পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা যায়। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন করে থাকে।
৩. গবেষণাগার প্রয়োগঃ বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যেমন গবেষণাগারের প্রয়োজন তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণার জন্যও গবেষণাগার রয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায় ইতিহাস হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণাগার।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৪. সুসংবদ্ধ তথ্য উপস্থাপনঃ আধুনিক যুগের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক যেকোনো গবেষণায় পরিসংখ্যান, ক্যালকুলেশন প্রভৃতি পদ্ধতি অবলম্বন করে সুসংবদ্ধ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৫. যুক্তির উপস্থিতিঃ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যেমন যুক্তির ভিত্তিতে উপস্থাপিত হয়ে থাকে, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান যুক্তিভিত্তিক গবেষণা করে থাকে। এতে করে গবেষণায় গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সহায়ক হয়।
৬. সাংখ্যিক পর্যবেক্ষণঃ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণায় সংখ্যাভিত্তিক পর্যালোচনার অবতারণা করা সম্ভবপর হয়েছে। এখন বাস্তবভিত্তিক গবেষণার ফলাফল হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৭. তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাঃ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা ও তার প্রয়োগ বিজ্ঞানের একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণায় এরুপ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা ও তার প্রয়োগ লক্ষনীয়।
৮. ভবিষ্যৎ বিষয়ক পর্যালোচনাঃ আমরা যদি এডওয়ার্ড সাইদ, স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখা যাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা সম্ভব।
আর ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য যে তথ্য উপাত্ত ও সুসংবদ্ধ জ্ঞানের উপস্থাপনা প্রয়োজন তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে সম্ভব। আর তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান না বলার পক্ষে যুক্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার বিপক্ষেও অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের অভিমত এবং যুক্তি রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো –
১. সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের অভিমতঃ বাঁকল, আগস্ট কোঁত, এফ. ডব্লিউ মেইটল্যান্ড প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য মেনে নিতে নারাজ।
Maitland বলেন, “When I see a good set of examination questions headed by the words political science, I regret not the question but the title.” Buckle বলেন, “বর্তমান জ্ঞানের পরিধিতে রাজনীতি বিজ্ঞান থেকে বহুদূরে এবং পশ্চাৎমুখী কলা শিক্ষা।“
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
২. সংগতির অভাবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের বিভিন্ন শাখা – প্রশাখার মধ্যে সংগতির অভাব লক্ষনীয়। যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।
৩. পদ্ধতিগত জটিলতাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের সময় অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না; বরং সবাই নিজ নিজ চিন্তাধারার আলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে।
৪. গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অভাবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার পিছনে কোনো নির্দিষ্ট ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুসরণ করা হয় না। যার কারণে একই বিষয়ে অনেক অসংগতিপূর্ণ তত্ত্বের উদাহরণ লক্ষ করা যায়।
৫. তত্ত্বে পক্ষপাতদুষ্টতাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ নিজস্ব পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট মানদন্ড উপস্থিত থাকে না।
৬. যথার্থতা ও নিরঙ্কুশতার অভাবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণার ফলাফল বা বিভিন্ন পদ্ধতি ও তত্ত্বে যথার্থতা ও নিরঙ্কুশতার অভাব লক্ষ করা যায়। এ কারণে একে বিজ্ঞান বলা যায় না।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো সূক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান বলা না গেলেও একে পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা যায়। এ প্রসঙ্গে লর্ড ব্রাইস বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসম্পূর্ণ বিজ্ঞান হলেও এটি একটি গতিশীল বিজ্ঞান।“ বৃহত্তর সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যথেষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে।
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহের আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধুনিকীকরণ ও সাম্প্রতিক সমস্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতার কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামো বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা নিরসনকল্পে সনাতন ও আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ গবেষণা ও পরীক্ষার আশ্রয় লাভ করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে এ পদ্ধতিসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Political Science । এর উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ PoliS থেকে। PoliS শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র অর্থাৎ তৎকালে নগররাষ্ট্র নিয়ে গবেষণা, আলোচনা করাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হতো।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র ও সরকারের উদ্ভব, বিকাশ, গঠন, কাঠামো, কার্যক্রম সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন মতবাদ, আদর্শ বা নীতির গ্রহণযোগ্যতা, সমালোচনাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান করে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল এর মতে, “রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন একটি বিষয়- একটি সুসংগঠিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ নগররাষ্ট্রের আদর্শ জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সব বিষয়ই যার অন্তর্ভুক্ত।“
অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “সংগঠিত রাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে মানবজীবনের আলোচনাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান।“
অধ্যাপক উইলোবি এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রকৃতি নির্ণয় করে এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে।“
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ম্যাক্স ওয়েবার এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাধারে বাস্তববাদী ও আদর্শবাদী বিজ্ঞান, যা ন্যায়নীতি অনুসন্ধানের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচরণকে নিয়ে আলোচনা করে।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিকক বলেন, “Political Science deals with Government” অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারকে নিয়ে আলোচনা করে।
অধ্যাপক গার্নার বলেন, “Political Science begins and ends with the state.”
গেটেল বলেন, “এটা সত্য যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক সংগঠন ও তত্ত্বের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহঃ বিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ ক. সনাতন পদ্ধতি ও খ. আধুনিক পদ্ধতি।
ক. সনাতন পদ্ধতিসমূহঃ নিম্নে সনাতন পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো –
১. ঐতিহাসিক পদ্ধতিঃ অতীত জ্ঞান ও বর্তমানের পর্যালোচনা ভবিষ্যৎ নির্দেশক আলোচনার পথকে প্রসারিত করে রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানার আগে এর উদ্ভব ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা আবশ্যক। ঐতিহাসিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ধারণা লাভ করা সম্ভব।
২. পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে প্রথমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরিসংখ্যান ও গবেষণামূলক পদ্ধতির সাহায্যে সংগৃহীত তথ্য থেকে আহরিত হয় যথার্থ সত্য। এরিস্টটল ১৫৮ টি রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। দিক বলতে মূলত ভৌগলিক অবস্থান, সামগ্রিক পরিবেশ, নাগরিক আচরণ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়।
৩. পরীক্ষামূলক পদ্ধতিঃ অনেক সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলক পদ্ধতিও অবলম্বন করে থাকেন। সদ্য স্বাধীন দেশ রাষ্ট্রের সরকার গঠনের জন্য গবেষনা চালানো হয়। নতুন নতুন আইনকানুন, ন্যায়নীতির ধারণা ও তথ্য ও দর্শনের পরীক্ষামূলক আলোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পর্যালোচনা। পরীক্ষার মাধ্যমেই নতুন নতুন রীতিনীতি সিদ্ধিলাভ করে। মূলত রাজনৈতিক জীবনে পরীক্ষানিরীক্ষা অব্যাহত।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৪. দার্শনিক পদ্ধতিঃ দার্শনিক পদ্ধতি অনুসারে কিছু বিষয়কে অনুমানের ভিত্তিতে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয় এবং অবরোহণ পদ্ধতিতে কতকগুলো সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কার্যাবলি, ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি দার্শনিক উপায়ে সমাধান করা হয়।
৫. তুলনামূলক পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতি অনুসারে অতীত ও বর্তমানের রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে তুলনা করা হয়। তুলনামূলক বিচারবিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন ১৫৮ টি রাষ্ট্রের সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষণের পরিপূরক। সমকালীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৬. অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতিঃ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ব্যবহার প্রবণতা বেশি। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কলাকৌশল অবলম্বন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণায় এই পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে। তত্ত্ব ও গবেষণার মাঝে সামঞ্জস্য আনার জন্য সংখ্যায়ন ও পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতির সাহায্যে নিতে হয়। জনমন, জনসংখ্যা, ভোটদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে এ পদ্ধতি অত্যাবশ্যক।
খ. আধুনিক পদ্ধতিসমূহঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ যখন সনাতন ধারা থেকে বের হয়ে আসেন, তখন আধুনিক ধারার আচরণবাদ, ব্যবস্থাতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিসমূহ নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো –
১. আচরণবাদঃ পরীক্ষালব্ধ ও প্রায়োগিক তত্ত্ব উদ্ভাবন, সুশৃজ্ঞখল পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ ও তাদের সঠিকতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন নীতি বা রাজনৈতিক কাঠামোর প্রবর্তনই হলো আচরণবাদী প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য। ১৯০৮ সালের দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আচরণবাদী আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। আর্থার বেন্টলি ও গ্রাহাম ওয়ালাস প্রথম আচরণবাদী আলোচার সূত্রপাত ঘটান।
ডেভিড ইস্টন আচরণবাদকে এভাবে সংজ্ঞায়ন করেছিলেন, “An intellectual tendency and concrete academic movement.” আচরণবাদী আলোচনার মাধ্যমে আন্তঃসামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকালাপ, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা প্রভৃতি বিষয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হয়।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
২. গোষ্ঠীতত্ত্বঃ গোষ্ঠীতত্ত্ব উদ্ভাবন করেন আর্থার বেন্টলি। ১৯০৮ সালে আর্থার বেন্টলি তার প্রকাশিত “The Process of Government: A Study of Political Preasures’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম গোষ্ঠীতত্ত্বের বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেন।
পরবর্তীতে ডেভিড ট্রুম্যান, ভি. ও. কি বারট্রাম লাথাম প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ গোষ্ঠীতত্ত্বের প্রসার ঘটান। এই মতবাদ সমাজকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার সমষ্টি হিসেবে অভিহিত করে। আর ঐসব গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই সরকারের কার্যপ্রণালি নির্ধারণ করা হয়।
গোষ্ঠীতত্ত্বের আলোকে দেশের সকল স্তরেই বিদ্যমান জনসমষ্টিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অধীনে বিবেচনা করা হয়।
৩. সিস্টেম বা ব্যবস্থা তত্তবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোকে একটি ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে তার ওপর আলোচনা করে। ডেভিড ইস্টন এই পদ্ধতির অবতারণা করেন। ডেভিড ইস্টন “The Political System” গ্রন্থে এই তত্ত্বের একটি ধারণা প্রদান করেন। যেখানে রাজনৈতিক কতৃপক্ষ বা সরকার ইনপুট এবং আউটপুটের সমন্বয়সাধন করে থাকে।
৪. কাঠামো – কার্যগত পদ্ধতিঃ কাঠামো – কার্যগত পদ্ধতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতিসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতির অবতারণা করেন অধ্যাপক জি.এ. অ্যালমন্ড।
১৯৬০ সালে প্রকাশিত G. A. Almond এবং James Coleman তাদের ‘The Politics of the Developing Areas’ গ্রন্থে Structural Functional Analysis হিসেবে রাষ্ট্রের কার্যক্রম, কাঠামো, সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
পরবর্তীতে আরও অনেক আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এই পদ্ধতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে G.A Almond ও Binglam Powell তাদের রচিত ‘Comparative Politics : A Development Approach’ গ্রন্থে কাঠামো-কার্যগত পদ্ধতির সর্বাধিক বিকাশ সাধন করেন।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৫. যোগাযোগ তত্ত্বঃ জার্মান দার্শনিক কার্ল ডুয়েশ্চ তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ “The Nerves of Government’ নামক গ্রন্থে যোগাযোগ তত্ত্বের সূচনা করেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ, শাখা – প্রশাখার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, অস্তিত্ব সংরক্ষণ, রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ের বিশদ বিবরণ উল্লেখ করা হয়।
যোগাযোগ পদ্ধতির রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রম শাখা – প্রশাখার, বিভাগসমূহ যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বারা সীমাবদ্ধ।
৬. পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতিঃ আধুনিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে পরিসংখ্যানের ব্যবহার একটি নতুন সংযোজন। এর মাধ্যমে যেকোনো রাজনৈতিক তত্ত্বের যথার্থতা বা গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করার জন্য পরিসংখ্যানের ব্যবহার করা হয়।
রাষ্ট্রের উদ্ভূত কোনো সমস্যার নতুন সমাধান দিতেও জনগণের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করা যায়। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম মূল্যায়ন ও তার পরিবর্তন পরিমার্জন করা সম্ভব হচ্ছে।
উপসংহারঃ উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো এরিস্টটলের আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় বিভিন্ন অনুসন্ধান পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে।
তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহের মধ্যে এককাভাবে কোনোটিকে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা কঠিন। তবে সনাতন ও আধুনিক – এই দুটি ধারার একাধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি রয়েছে। যেমন – ঐতিহাসিক, সামাজিক, তুলনামূলক আচরণবাদী প্রভৃতি।
৬) রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকাঃ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সংঘবদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। রাষ্ট্র ব্যবস্থা হচ্ছে সেই সংঘবদ্ধ জীবন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন, রীতি-নীতি ইত্যাদি বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে থাকে।
মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে রাষ্ট্রে বসবাস করার যাবতীয় পদ্ধতি, রাষ্ট্রে সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করার নিয়ম কানুন ইত্যাদি রাষ্ট্রবিজ্ঞানই আলোচনা করে থাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এর গুরুত্ব মানুষের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কার্যাবলিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো –
১. আদর্শ নাগরিক হওয়ার জন্যঃ একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি কী কী দায়িত্ব রয়েছে, অথবা রাষ্ট্র থেকে কী কী অধিকার ভোগ করা যায় তা জানা থাকা প্রত্যেক নাগরিকের আবশ্যক। আর এসব দায়িত্ব, কর্তব্য বা অধিকার সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদভাবে আলোচনা করে থাকে। এভাবে আদর্শ নাগরিক হওয়ার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অত্যাধিক।
২. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিঃ একজন সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রিতিটি চলমান বিষয়ের খোঁজ- খবর রাখা, নির্বাচনে ভোট প্রদান করা, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব বিষয়ের সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে। এভাবে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. রাজনৈতিক তত্ত্বজ্ঞান লাভঃ গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অথবা পুঁজিবাদ, মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আর এসব বিষয়ের জ্ঞানলাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
৪. রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সম্বন্ধে জ্ঞানলাভঃ বর্তমানে বিশ্বের শাসনব্যবস্থা একসময়ের এ রকম ছিল না। কোথাও কোথাও মানবাধিকারের লেশমাত্র ছিল না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের তৎপরতায় প্রত্যেকটি রাষ্ট্রব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আর সেসব রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সম্পর্কে অবহিত হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৫. সমাজের উৎকর্ষ সাধনের জন্যঃ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। তখন থেকে ধীরে ধীরে সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষের জীবনযাপন শুরু হয়। সামাজিক এই ব্যবস্থার উৎকর্ষ সাধন করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
৬. গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাঃ সর্বকালে সকল দেশের সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে তার অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কোন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করবে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নির্ধারণ করে। রাষ্ট্রবজ্ঞান এভাবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনেও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭. অর্থনৈতিক উন্নয়নেঃ প্রত্যেক দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে তার অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কোন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করবে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নির্ধারণ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এভাবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিচনেও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. অর্থনৈতিক উন্নয়নেঃ প্রত্যেক দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে তার অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কোন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করবে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নির্ধারণ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এভাবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও পিছনেও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টিঃ যোগ্য নেতৃতবের বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা যোগ্য নেতার বৈশিষ্ট্যাবলি জানতে পারি। সেই আলোকেই নেতা নির্বাচন করার মাধ্যমে যোগ্যদের প্রাধান্য দেই।
৯. ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ সুনাগরিক হওয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ ব্যক্তির বিকাশ সাধন করতে পারে। আর সুনাগরিক হওয়ার যাবতীয় শর্ত, কার্যাবলি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে থাকে। এভাবে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভূমিকা রাখে।
১০. সুশৃজ্ঞখল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাঃ কোনো দেশে সুশাসন বা সুশৃজ্ঞখল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জন্য যেমন রয়ছে শাসকের ভূমিকা, তেমনি রয়ছে জনগণের ভূমিকা। সেই সাথে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগ – বিচার, শাসন ও আইন বিভাগের ভূমিকা সর্বাধিক। এসবের প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিহার্য।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১১. পৃথিবীতে শান্তিশৃংখলা প্রতিষ্ঠাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্বব্যাপী নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হচ্ছে। যেমন – জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রভৃতি। এদের ভূমিকা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে।
১২. সমাজ প্রতিষ্ঠাঃ সুন্দর সমাজব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত। আর সমাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজের বিকাশে মানুষের করনীয় ও বর্জনীয় বিশদভাবে আলোচনা করে থাকে।
১৩. জনগণের নিজ নিজ অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতনতা লাভঃ রাষ্ট্রের কার্যাবলির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু নাগরিক। নাগরিকদের রাষ্ট্র থেকে যেমন অধিকার ভোগ করার এখতিয়ার রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনের গুরুত্ব রয়েছে।
১৪. আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে শুধু দেশিয় নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। পুরো বিশ্বকে একটি পরিবার বিবেচনা করলে প্রত্যেকটি রাষ্ট্র একজন সদস্যের মতো। আর এই সদস্যদের ভূমিকায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা জানতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যপক।
১৫. নাগরিকদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণঃ প্রত্যেক নাগরিকের দেশপ্রেম থাকা অত্যাবশ্যক। দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হলে প্রত্যেক নাগরিকের সুনাগরিক গুণাবলি অর্জন করা বাধ্যতামূলক। আর এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৬. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞানলাভঃ দেশের বা রাষ্ট্রের কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন, কার্যপ্রনালি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন ব্যতিরকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা সম্ভবপর নয়।
১৭. রাষ্ট্র পরিচালনার বিভাগ সম্পর্কে ধারণাঃ প্রত্যেক রাষ্ট্রের তার কার্য পরিচালনার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রয়েছে যেমন, – আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ। রাষ্ট্রেবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
টপিকঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি (১ম অধ্যায় রচনামূলক) সাজেশন
১৮. আধুনিকীকরণ সম্পর্কে জ্ঞানলাভঃ সমাজ বা রাষ্ট্রের আধুনিকীকরণ সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের জ্ঞানলাভ অপরিহার্য। আধুনিককরণ সম্পর্কে জ্ঞানলাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম একটি অংশ হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রের কার্যাবলি নিয়ত পরিবর্তনশীলতার দরুণ রাষ্ট্রের প্রতি সরকার তথা জনগণের দায়দায়িতব ও নীতিগত অভিপ্রায়সমূহের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রের গঠন, কার্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হয়। সেই সাথে আরও জানতে হয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের প্রভাব। আর এই প্রত্যেকটি বিষয়ের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।