মুহূর্তেই গলার কাঁটা দূর করার ঘরোয়া উপায় ।। মাছের কাঁটা গলায় ফোটেনি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। হুট করে গলায় কাঁটা ফুটলে করণীয় কী? কিছু তাৎক্ষণিক উপায় আছে, যা মানলে সহজেই গলার কাঁটা নামানো যায়। দেখে নিন উপায়গুলো..
বিড়ালের পাঁ ধরে লাভ নাই
গলায় কাঁটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরার কুসংস্কার অনেক পুরোনো। বিড়ালের পা ধরে গলার কাঁটা নামার গল্প শুধু কল্পকাহিনিতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। বরং উল্টো বিড়ালের খামচি খেয়ে অন্য কোনো রোগ বাধানোর আশঙ্কা কম নয়! তাই গলায় কাঁটা বিঁধলে বিড়াল খুঁজে সময় নষ্ট না করে সঠিক নিয়ম মেনে চলুন।
সাদা ভাত গিলুন
মাছের কাঁটা নামানোর সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো সাদা ভাত গেলা। যেহেতু খেতে বসলেই গলায় কাঁটা ফোটে, তাই হাতের কাছেই সাদা ভাত থাকে। সাদা ভাত দলা করে একবারে গিলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। শুধু খালি ভাতে কাজ না হলে পানি দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। দুই-তিন দলা খাওয়ার পর ভাতের সঙ্গে গলার কাঁটা নেমে যাবে।
জোরে কাশুন
বেশির ভাগ সময়ে গলায় কাঁটা আটকায় মুখগহ্বরের টনসিলের কাছাকাছি এলাকায়। জোরে জোরে কয়েকবার কাশি দিলে গলায় আটকে থাকা কাঁটা বেরিয়ে যেতে পারে।
কলা পিচ্ছিল, ফলে গলায় ফুটে থাকা কাঁটা গিলতে এটা বেশ উপকারী
কলা পিচ্ছিল, ফলে গলায় ফুটে থাকা কাঁটা গিলতে এটা বেশ উপকারীছবি: পেক্সেলস
কলা খান
কলা পিচ্ছিল, ফলে গলায় ফুটে থাকা কাঁটা গিলতে এটা বেশ উপকারী। বড় করে কলায় একটি কামড় দিয়ে তা মুখে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এরপর একেবারে গিলে ফেলার চেষ্টা করুন। এতে কলার সঙ্গে কাঁটা একসঙ্গে নেমে যাবে।
ভিনেগার গিলুন
ভিনেগার গলায় ফুটে থাকা কাঁটা নামাতে বেশ উপকারী। ভিনেগার অ্যাসিডজাতীয় বলে গলার কাঁটা নরম করে করে ফেলতে পারে। তবে সরাসরি ভিনেগার পান না করাই ভালো। তাই পানির সঙ্গে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে তা গিলে ফেললে সহজেই কাঁটা নেমে যেতে সহায়তা করে।
অলিভ অয়েল খান
গলার কাঁটা নেমে যেতে তেলও বেশ উপকারী। হাতের কাছে অলিভ অয়েল থাকলে তা খেয়ে নিতে পারেন।
যেভাবে আছেন, সেভাবেই থাকুন
অনেক সময় দেখা যায়, গলায় কাঁটা ফোটা নিয়ে যে অস্বস্তি, সেই কাঁটা হয়তো বাস্তবে ফোটেইনি; বরং গলার মাংস ছুঁয়ে কাঁটা নেমে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু অস্বস্তি ও মনের ভয় আছেই। তাই প্রাথমিকভাবে কাজ না হলে ঘন ঘন ঢোক গেলার চেষ্টা করুন এবং দেখুন, এক জায়গা থেকেই ব্যথার সৃষ্টি হচ্ছে কি না। যদি হয়, তবে গলায় এখনো কাঁটা আটকে আছে।
প্রাথমিক চিকিৎসায় কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
প্রাথমিক চিকিৎসায় কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবেছবি: প্রথম আলো
দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন
এতক্ষণ যে পদ্ধতির কথা বলা হলো, তার পুরোটাই প্রাথমিক চিকিৎসা। বাড়িতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়ে গলার কাঁটা দূর করার জন্য এসব পদ্ধতি মানতে পারেন। তবে এসবে কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নাক কান গলাবিশেষজ্ঞ অথবা কাছের যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যত দ্রুত সম্ভব ভর্তি হতে হবে। বেশিক্ষণ গলায় কাঁটা আটকে থাকলে তা থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়া আপনি নিচে দেওয়া পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন। তাতে ভালো কার্যকর ফলাফল পাবেন।
১. গলায় কাঁটা বিঁধলে শুকনো সাদা ভাত চটকে দলা পাকিয়ে গোল গোল ছোটো বলের মতো বানিয়ে তা গিলে খেয়ে ফেলুন। এরপর পানি পান করুন। একবারে না হলে কয়েকবার এ উপায় অবলম্বন করুন। এভাবে ভাত ও পানি খেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঁটা নেমে যায়। এ ছাড়াও শুকনো মুড়ি কিংবা গরম দুধে ভেজানো পাউরুটি খেলেও কিছুটা সমাধান পাওয়া যায়।
২. পাকা কলা এক কামড়ে একটু বেশি করে নিয়ে অল্প চিবিয়ে গিলে নিন। এতেও কাঁটা নেমে যায়। পাকা কলার মিউজিলেজের পিচ্ছিলভাব গলায় ফুটে থাকা কাঁটাকে সহজে বিতাড়িত করতে সাহায্য করে।
৩. মাছের কাঁটা গলিয়ে দেওয়ার জন্য লবণ ও লেবুর মিশ্রণও বেশ কার্যকর। এক টুকরো লেবুতে হালকা লবণ মিশিয়ে লেবুটি চুষে খেয়ে নিন। লেবুর অম্লতা ও লবণের লবণাক্ততা মিলিতভাবে কাঁটাটিকে পাতলা করে গলিয়ে দেবে। ফলে সহজে গলা থেকে কাঁটাটি নেমে যাবে।
৪. গলায় ফুটে থাকা মাছের কাঁটা নামাতে ভিনেগার দারুণ কাজ করে। জলের সঙ্গে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে খেলে আটকে থাকা কাঁটা খুব সহজেই গলা থেকে নেমে যায়। ভিনেগার অনেকটা পাতি লেবুর মতোই কাজ করে।
৫. গলায় কাঁটা বিঁধলে দেরি না করে এক চা চামচ এডিবল অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। অলিভ অয়েল অন্য তেলের তুলনায় বেশি পিচ্ছিল। তাই গলা থেকে পিছলে নেমে যাবে মাছের কাঁটা।
৬. কোনো ঠান্ডা কোমলপানীয়ের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে অল্প অল্প করে চুমুক দিন। কোমলপানীয়ের সোডা আর লেবুর অম্লত্ব একসঙ্গে মিলে মাছের কাঁটা গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। এটি কাঁটা নামানোর সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি।
৭. উপরের কোনো উপাদানই যদি হাতের কাছে না থাকে, তাহলে বেশ খানিকটা পানি খেয়েই গলা থেকে কাঁটা নামানোর চেষ্ট করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি হালকা গরম জলে সামান্য লবণ মিশিয়ে তা পান করেন। এতে কাঁটা নরম হয়ে তাড়াতাড়ি গলা থেকে নেমে যাবে।
৮. জোরে জোরে ক্রমাগত দু-চারটা কাশি দিলে কফ রিফ্লেক্সের মাধ্যমে অনেক সময় গলার পেছনের দেয়ালে আটকে থাকা মাছের কাঁটা কাশির দমকে ছুটে গিয়ে সামনে চলে আসে এবং বের হয়ে যায়।
৯. এরপরও গলায় ফুটে থাকা কাঁটা না নেমে গেলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিংবা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। স্পেশাল ফরেন বডি রিমুভারের সাহায্যে এরকম বিঁধে থাকা কাঁটা বের করে আনা সম্ভব।
মুহূর্তেই গলার কাঁটা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।