HSC | বায়ান্নর দিনগুলো | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-১০ | বাংলা ১ম | PDF : বাংলা ১ম পত্রের বায়ান্নর দিনগুলো গল্পটি হতে যেকোনো ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের বায়ান্নর দিনগুলো গল্পটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
বায়ান্নর দিনগুলো | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর সমুহ: ৬-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অং সাং সূচি অনেকদিন কারাভোগ ও অনশনের এক পর্যায়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সহবন্দি তাকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অন্যদিকে তাঁর দলের বেশক’জন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বন্দি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। নিরুপায় অং সাং সূচি জেলগেটের বাইরে বেরিয়ে দেখলেন তার বাবা তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি কী করল?
খ. “অনেক লোক আছে, কাজ পড়ে থাকবে না”। কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কোন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে? বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বন্দি ও নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রবন্ধেও ঘটেছেÑ বিশ্লেষণ কর।
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি তাকে সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন।
খ উত্তর: জেলে অনশনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে কর্তব্যরত ডাক্তারের এক প্রশ্নের উত্তরে মুজিব এ কথাটি বলেন।
জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের শারীরিক অবস্থা যখন নিস্তেজ প্রায় তখন ডাক্তার বললেন, ‘এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছে অনেক কিছু আশা করে।” ডাক্তারের এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।
গ উত্তর: উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র মহিউদ্দিনকে প্রতিফলিত করে।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে জেলবন্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সহবন্দি হিসেবে থাকেন। তাঁরা দুজনই অনশন করেন এবং মুক্তির শর্তেই কেবল অনশন ভাঙবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের মুক্তির আদেশ আসে। তখন মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান।
উদ্দীপকে অং সাং সূচি অনশন করে মুমূর্ষুপ্রায়। এমতাবস্থায় তাঁকে মুক্তির আদেশ এলে তিনি অনশন ভাঙতে রাজি হন এবং তাঁর সহবন্দি তাঁকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অং সাং সূচির সহবন্দির এ ঘটনাটি প্রবন্ধের মহিউদ্দিন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।
ঘ উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে মুক্তির প্রাক্কালে শেখ মুজিব জানতে পারেন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের আটক করে নির্যাতন করা হয়।
জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খবরের কাগজে দেখতে পান তর্কবাগীশ, খান সাহেব, আবুল হোসেনসহ বেশ ক’জন নেতা শাসকগোষ্ঠীর হাতে আটক হয়েছেন। মুক্তির প্রায় প্রাক্কালে এসে জানতে পারেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাÑ যেমন মওলানা ভাসানী, শামসুল হকসহ আরো অনেককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উদ্দীপকে অং সাং সূচির কারাবন্দির শেষ অবস্থায় তাঁকে যখন মুক্তি দেয়া হবে তখন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়। তাছাড়াও তাঁদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বৃদ্ধি করা হয়।
প্রবন্ধ ও উদ্দীপকে আমরা প্রায় অনুরূপ ঘটনা দেখতে পাই। অর্থাৎ, কনিষ্ঠ নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক ও নির্যাতন করার বিষয়টি লক্ষণীয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের বন্দি ও রাজবন্দিদের নির্যাতনের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধেও লক্ষ করা যায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বিনা বিচারে অনেকদিন জেলবন্দিত্বের পর মুক্তি পেলেন রাজনীতিবিদ সৈয়দ শামসুর রহমান। ফিরে এলেন বাড়িতে। অনেক দিন না দেখে নিজের ছেলেও ভুলে গেছে তাকে। সৈয়দ সাহেব মুক্তি পেলেও সারাদেশে আন্দোলন আরো চরমে ওঠে। গ্রামের হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়।
ক. জনমতের বিরুদ্ধে যেতে কারা ভয় পায়?
খ. “আব্বা রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”হাসু বাবার গলা জড়িয়ে কেন এ কথা বলেছিল?
গ. ‘অনেক দিন না দেখলে নিজের ছেলেও ভুলে যায়’উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছেÑ কথাটি দ্বারা আন্দোলনের তীব্রতা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৭নং প্রশ্নের উত্তর
উত্তর: জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শাসকেরা ভয় পায়।
উত্তর: একুশে ফেব্র“য়ারি হাসু ও শেখ পরিবার ঢাকায় ছিল বলে এই স্লোগান শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তাই বাবাকে পেয়েই হাসু স্লোগানটি শুনিয়েছিল।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাড়িতে এলে বড় সন্তান শেখ হাসিনা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। কেননা, একুশে ফেব্র“য়ারি এসব স্লোগান ঢাকার অলিতে-গলিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আর হাসুরা ঢাকায় থাকার ফলে এ স্লোগানের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। ফলে রাজবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে এলেই হাসু বাবাকে স্লোগানটি শুনিয়েছিল।
উত্তর: কথাটির দ্বারা একজন রাজনীতিবিদ পিতার করুণ আফসোসের কথা বর্ণিত হয়েছেÑ যার অনুরূপ কথা উদ্দীপকেও উদ্ধৃত হয়েছে।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে একজন রাজনীতিবিদ বাবার অসহায় নির্মম ও বাস্তব আফসোসের আর্তি ফুটে উঠেছে। মজলুম জনগণের অধিকার আদায়ে রাজবন্দি থাকতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। আর তাই সাতাশ-আটাশ মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন তিনি। ছেলে কামালের বয়স মাত্র কয়েক মাস। বাবাকে অনেকদিন না দেখে ছেলেও ভুলে গেছে উনি তার কী হন। ‘হাসু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি’কথাটি দ্বারা তা প্রমাাণিত।
উদ্দীপকে সৈয়দ শামসুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ। তিনি জেলবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে এসে বুঝতে পারলেন তার ছোট ছেলেটি তাকে চিনতে পারছে না। তাই প্রশ্নোক্ত সমান কথাটি উদ্দীপকেও এসেছে। সুতরাং বলা যায়, কথাটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উত্তর: বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, গ্রামগঞ্জের ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল পালিত হচ্ছিলÑ যার সমরূপ দৃশ্য আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই।
১৯৫২ সালে ঢাকায় মিছিলে গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যার পর ভাষা-আন্দোলন চরমে ওঠে। জনসাধারণ বুঝতে পারে যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষা বাংলাকে মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিতে চায়। খবর বাতাসের সাথে সাথে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল ধর্মঘট পালিত হতে থাকে।
উদ্দীপকের সৈয়দ সাহেব জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরেন। অথচ তখন আন্দোলন চরমে ওঠে। এমনকি গ্রামের হাটবাজার পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে শাসকচক্র তাদের মঙ্গল চায় না; বরং শোষণ করতে চায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপটভিত্তিক আত্মজীবনীতে দেখা যায়, ভাষা নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। শাসকগোষ্ঠী মিছিলে গুলি চালায় এবং এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মানুষ গ্রামেও হরতাল পালন করে। অনুরূপ ঘটনা আমরা উদ্দীপকেও লক্ষ করি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা বায়ান্নর ও উদ্দীপকের আন্দোলনের তীব্রতারই প্রমাণ হয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ভারতের দুর্নীতিবিরোধী মানবাধিকার কর্মী আন্না হাজারে। তিনি সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি ও তার দলের কর্মীরা দাবি আদায়ে একটু ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন করেন। তা হলো অনশন ধর্মঘট। তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন।
ক. বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কে অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন বিষয়টি দৃশ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।Ñ বক্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ কর।
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক উত্তর: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।
খ উত্তর: বঙ্গবন্ধু কারামুক্তির জন্যই অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রেখেছিল, যা বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধু আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাক-সরকার বাধ্য হয়েই তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল। মূলত অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।
গ উত্তর: উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি দৃশ্যমান।
সমাজে নানা প্রকার অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার বিদ্যমান থাকে। এর বিরুদ্ধে সচেতন মানুষরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানায়। সে প্রতিবাদ ব্যতিক্রমধর্মী হয়ে ওঠে, যখন কোনো ব্যক্তি তার স্বার্থকে বলি দিয়ে জনমানবের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে।
উদ্দীপকে দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। তিনি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন বঙ্গবন্ধু।
তাইতো তাঁকে বছরের পর বছর নির্বিচারে কারাবন্দি করে রেখেছিল কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা নীরবে মেনে নেননি। তিনি জেলে বসেই অনশন ধর্মঘট পালন করে এর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়ে দেন। তাই বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি উদ্দীপকেও দৃশ্যমান।
ঘ উত্তর: দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।Ñ বক্তব্যটি সত্য।
সচেতন মানুষরা শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো অনশন ধর্মঘট। এ ধরনের প্রতিবাদে ব্যক্তি তার নিজ স্বার্থকে বলি দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। তার এ প্রতিবাদে শাসন-শোষণের ভিত পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।
উদ্দীপকের আন্না হাজারে একজন মানবাধিকারকর্মী। তিনি সর্বদা অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অন্যায় শাসন প্রতিরোধে তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি নেতাকর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন।
এতে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকর্মীও দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাগারে আটক ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ অন্যায় শাসন মেনে নেননি। তাইতো তিনি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জেলের মধ্যেই প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের ভিত পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল।
শাসকদের শোষণের জাঁতাকল গুঁড়িয়ে দিতে যুগে যুগে জন্ম নেন বীরসন্তানেরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় স্বার্থ বলি দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে পরের জন্য আত্মনিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তেমনি একজন মানুষ। আর বঙ্গবন্ধুর দাবি আদায়ের আদর্শ উদ্দীপকের আন্না হাজারের মধ্যে বিদ্যমান। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চৌ-এন-লাই চীনের জননন্দিত বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও নব্য চীনের জন্মদাতা। সুদীর্ঘকাল তিনি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের গোড়ায় চীনের মঞ্চ সম্রাটদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছিল। সাম্যবাদ ও বিপ্লবে সুগভীর আস্থা, চীনের জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও রাজতন্ত্রের বিরোধিতার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় কীভাবে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের প্রতীক? নির্ণয় কর।
ঘ. “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”Ñ এ বিষয়ে তোমার মতামত উপস্থাপন কর।
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় ধর্মঘটের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।
খ উত্তর: অনশন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু জেলখানায় আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। এতে তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া সত্তে¡ও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে আসেননি। এভাবে তাঁর মুক্তির আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। তখন পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিল।
গ উত্তর: উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের প্রতীক।
অন্যায় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যুগে যুগে জন্ম নেন জাতির বীরসন্তানরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে দেখান মুক্তির পথ। অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকে তাদের প্রতিবাদের অস্ত্র। যার কবলে পড়ে শাসক-শোষকেরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। যিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিবেদন করেছেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা বর্ণিত হয়েছে।
১৯৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ফলে শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে বাঙালিরা। তখন দিশেহারা জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতা। সুতরাং বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রের প্রতীক হলো উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই।
ঘ উত্তর: “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”Ñ এ বিষয়ে আমি একমত।
শাসন-শোষণের জাঁতাকল থেকে মানুষকে বাঁচাতে যুগে যুগে জন্ম নেন বিপ্লবীরা। যাঁরা তাঁদের নিজ মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখান। আর সেসব বিপ্লবী যেহেতু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ তাই তাঁদেরও থাকে প্রিয়জনের প্রতি পিছুটান। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাঁরা স্বীয় মেধা বলে স্থান করে নেন ইতিহাসের পাতায়।
উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। তিনি সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে। কথা বলেছেন চীনের শোষিত মানুষের পক্ষে। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনী বর্ণিত হয়েছে, যিনি পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। এছাড়া এ রচনায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথাও বর্ণিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার পিতার ছিল গভীর স্নেহ-মমতা। তাইতো তিনি জেল গেটে মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে দেখে চোখের জল সামাল দিতে পারেননি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর সহধর্মিণীর অকৃত্রিম ভালোবাসার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর দুই আদরের সন্তান হাসু ও কামালের পিতৃভক্তির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এ রচনায়।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, পাকসরকারের অত্যাচার ও বাঙালির প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির সাথে আমি একমত পোষণ করি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন বর্ণবাদ-বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা, দেশটির কালো মানুষগুলোর অধিকার যখন ক্ষুণœ হতে থাকে তখন তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এতে শোষকদের দ্বারা তাঁকে নানারকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি পিছ-পা হননি; সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা করেছেন কালো মানুষদের অধিকার।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন কারাগারে বন্দি ছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনাবিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।”Ñ বিশ্লেষণ কর।
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন।
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | আনিসুজ্জামান | বাংলা ১ম পত্র | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-৯ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | বাংলা ১ম | PDF
খ উত্তর: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল প্রকার অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন, যা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখে তাকে বিষিয়ে তুলেছিল। তাই তো শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে বাঙালিকে এবং বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে কারাবন্দি থাকতে হয়েছিল।
গ উত্তর: উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সমাজজীবনে শাসন-শোষণ বিদ্যমান থাকে। আর এর বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেন তারাই প্রতিবাদী। জাতির এই বীর সন্তানেরা নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জাতির স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেন জনগণের কল্যাণে। শোষণ-নির্যাতনের জাঁতাকল থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন দৃঢ় মনোবল নিয়ে।
উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা। তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন, সহ্য করেছেন, অত্যাচার, নির্যাতন; কিন্তু তারপরও পিছু হটেননি। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা বর্ণিত হয়েছে।
তিনি সারাজীবন শোষিত মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে দিশাহারা বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উত্তর: “উদ্দীপকে শোষণশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে তা যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনারই মূল সুর।”
সমাজজীবনে অন্যায় শাসন-শোষণ ও বৈষম্য বিদ্যমান। যার জাঁতাকলে কেবল পিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু সবসময় সাধারণ মানুষ তা সহ্য করে না। তাই যুগে যুগে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগ্রামী মানুষ জন্ম নেয়।
উদ্দীপকে শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে নেলসন ম্যান্ডেলার কণ্ঠে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে তখন তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেননি। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন স্বাধিকার চেতনায়।
অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বাঙালির প্রতিবাদী মানসিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে বাঙালিরা গড়ে তুলেছে প্রতিরোধ, যুবকেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃভাষার মর্যাদা, শাসকগোষ্ঠীর হীন অহমিকা দৃঢ় প্রতিবাদের মাধ্যমে দমিয়ে দিয়েছে । এ সবকিছুর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ।
উদ্দীপকে মূলত অত্যাচার-নিপীড়ন বৈষম্যনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, যা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মধ্যেও বিদ্যমান। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।