ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্বঃ ১ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ১ : লোকপ্রশাসন
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. লোকপ্রশাসনের সংজ্ঞা দাও । অথবা, লোকপ্রশাসন কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : অন্যের কল্যাণে আত্মত্যাগের মহান ব্রতের নামই জনসেবা। মহৎ হৃদয়ের মানুষই কেবল জনসেবা করতে পারে। কোনো প্রতিদানের আশায় নয়, অপরের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতাই জনসেবা।
আর জনসেবাই লোকপ্রশাসনের মূল কথা। এ প্রশাসন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারণ সরকারের পক্ষে সব জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। লোকপ্রশাসন হলো সেসব কাজের সমষ্টি, যাদের উদ্দেশ্য হলো সরকারি নীতিমালার বাস্তবায়ন করা।
লোকপ্রশাসন : লোকপ্রশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Public Administration. লোকপ্রশাসন বলতে রাষ্ট্রের কর্মতৎপরতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত কর্মকাণ্ডকে বুঝায়। অর্থাৎ জনগণের কল্যাণের জন্য সরকার যেসব নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করে তাকে লোকপ্রশাসন বলে । প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
সাইমন (Simon) বলেন, “সহযোগিতাপূর্ণ যৌথ উদ্দেশ্যে সরকারি নীতি বাস্তবায়নই হলো লোকপ্রশাসন।”
অধ্যাপক লুথার গুলিক (Prof. Luther Gullick) বলেন, “প্রশাসন বলতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যসম্পাদনকে বুঝায় লোকপ্রশাসন প্রধানত কার্যনির্বাহীর কাজ সম্পর্কে আলোকপাত করে।”
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson) বলেন, “লোকপ্রশাসন হলো একটি সুবিন্যস্ত ও বিশদ আইনের প্রয়োগ।” (Public administration is detailed systematic execution of public law.)
ফিফনার ও প্রেসথাস (Pfiffner and Presthus ) বলেন, “লোকপ্রশাসন হলো সরকারি নীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত প্রচেষ্টার সমন্বয়সাধন।” (Public Administration is the co-ordination of individual and group efforts to carry out public policy.)
এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) বলেন, “লোকপ্রশাসন সেসব কার্যাবলির সমষ্টি যাদের উদ্দেশ্য হলো সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন করা।” (Public Administration consists of all those operations having for their purpose. The fulfillment of public policy.)
ডিমোক ও ডিমোক (Dimock and Dimock) বলেন, “Public administration is the concern with what and how of the government.”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন হচ্ছে, কোনো সুচিন্তিত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গৃহীত সুনির্দিষ্ট কার্যব্যবস্থা। প্রশাসনিক ব্যবস্থা জনকল্যাণ সাধনের জন্য কর্মপ্রচেষ্টা চালায়, নীতি প্রণয়ন করে, নীতি বাস্তবায়ন করে তাকেই লোকপ্রশাসন বলে বর্তমান সভ্যতার এ চরম উৎকর্ষের যুগে লোকপ্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিশ্বায়ন হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ।
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতি অধ্যায়:-১(সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
০২. লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি লেখ। অথবা, লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের সব রাষ্ট্রই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আর এ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে সরকার। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে নাগরিক ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় সরকারকে। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় লোকপ্রশাসনের ওপর । সুতরাং লোকপ্রশাসনের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করেই লোকপ্রশাসন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি : লোকপ্রশাসনের উৎপত্তির ন্যায় এর প্রকৃতির বিষয়টিও সুস্পষ্টরূপে বলা কঠিন ব্যাপার। বস্তুত লোকপ্রশাসন মানবসমাজের মতোই প্রাচীন। বিভিন্ন মনীষী লোকপ্রশাসনের প্রকৃতিকে দুটি মতবাদে বিভক্ত করেছেন যথা : ১. অখণ্ডবাদী বা সুসংহত মতবাদ ও ২. ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদ নিম্নে এ দুটি মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. অখণ্ডবাদী বা সুসংহত মতবাদ : অখণ্ডবাদী মতবাদের মতে, সব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কার্য সম্পাদনের জন্য কায়িক ব্যবস্থাপনাগত ও প্রযুক্তিগত কর্মের সমষ্টিই হচ্ছে প্রশাসন। প্রতিষ্ঠানসমূহের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কার্যত সকল ব্যক্তির কার্যকলাপই এ মতবাদের আওতাভুক্ত।
এ মতবাদের সমর্থক বা বিশ্বাসীদের মধ্যে L. D. White, উড্রো উইলসন, মার্শাল ডিমক ও জন ফিফনার অন্যতম । তাদের মতে লোকপ্রশাসন রাষ্ট্রের জনগণের এবং নাগরিকের কল্যাণের জন্য কাজ করে ।
২. ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদ : ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদের অনুসারীদের মতে, এমন কিছু ব্যবস্থাপক মানুষকে বুঝায় যারা পরিকল্পনা, সাংগঠনিক, আদেশমূলক, নিয়ন্ত্রণমূলক প্রভৃতি কাজের সাথে জড়িত। ব্যবস্থাপনা, সংগতির রক্ষা, নিয়ন্ত্রণ ও সমুদয় কার্যক্রমের সমন্বয় বিধানের কাজই প্রশাসন। ব্যবস্থাপনাবাদী মতবাদের সমর্থকদের মধ্যে সাইমন (Simon), স্মিথবার্গ (Smithburg), থমসন (Thomson), লুথার গুলিক (Luther Gullick), মারসন (Merson) অন্যতম।
লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি নিয়ে যারা আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে জেমস ডব্লিউ, ফেসলার (James W. Fesler) অন্যতম ফেসলার তার বক্তব্যের মাধ্যমে দুটি দিক তুলে ধরছেন। যথা : ১. নীতি বাস্তবায়ন ও ২. নীতি প্রণয়ন করা । এ দুটি বিষয়ের মাধ্যমেই লোকপ্রশাসন সঠিক পথে পরিচালিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিনিয়ত লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি পরিবর্তন ও বিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক রাষ্ট্রগুলো যতই কল্যাণ লক কর্মসূচি গ্রহণ করছে, লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি ও কার্যক্রমও ততই পরিবর্তিত হচ্ছে।
লোকপ্রশাসনকে রাষ্ট্রের কার্যক্রমের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নিত্য নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হচ্ছে। তাই লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
০৩. লুথার গুলিকের মতে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ আলোচনা কর। অথবা, লুথার গুলিকের মতে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ কী?
উত্তর : ভূমিকা : সামাজিক বিজ্ঞান হতে উদ্ভূত নতুন অধ্যয়ন বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত লোকপ্রশাসন। লোকপ্রশাসনের যথাযথ প্রকৃতি বা স্বরূপ নির্ধারণে অনেক তাত্ত্বিকই তাদের ধারণা পেশ করেছেন। লুথার গুলিক অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটি পন্থা উল্লেখ করেন প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য, যেখানে তিনি একটি ইংরেজি শব্দ POSDCORB ব্যবহার করেছেন ।
- লুথার গুলিকের মতে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ : সমাজবিজ্ঞানী লুথার গুলিক, এল. আরউইক ও হেনরি ফেয়লের সমন্বয়ে ১৯৩৭ সালে ‘Papers on the Science of Administration’ গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে প্রশাসনিক সংস্থার একজন প্রধান নির্বাহীর সাতটি প্রধান কাজ ব্যাখ্যা করেন । এ সাতটি কাজের মধ্যেই লোকপ্রশাসনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যা ‘পসকনিসপ্রবা’ (POSDCORB) নামে পরিচিত।
নিম্নে অক্ষরগুলোর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলো—
১. পরিকল্পনা : লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিই পরিকল্পনা ।
২. সংগঠন : পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলির শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণই সংগঠন।
৩. কর্মীসংস্থান : সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা কর্মী নিয়োগ করা এবং সমগ্র কর্মচারী পরিচালনার ব্যবস্থাপনাই কর্মী সংস্থান।
৪. নির্দেশনা : একজন নির্বাহী কর্তৃক তার অধস্তন কর্মীদের নির্দেশ প্রদান, কাজ পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়ন করার নাম নির্দেশনা । একটি ভালো নির্দেশনার ওপরই কাজের সাফল্য নির্ভর করে।
৫. সমন্বয় : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের কার্যাবলিকে এক সূত্রে গ্রথিত, সংযুক্ত ও সুসংবদ্ধ করার প্রক্রিয়াই হলো সমন্বয় ।
৬. প্রতিবেদন লিখন : কোন কাজ কীভাবে চলছে বা তার ফলাফল কী আসছে সে সম্পর্কে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবহিত করার নামই প্রতিবেদন ।
৭. অর্থ বরাদ্দ : অর্থ বরাদ্দ তৈরি বলতে আয়ব্যয় নির্ধারণ, .হিসাব সংরক্ষণ অর্থাৎ সমগ্র আর্থিক প্রশাসনকেই বুঝায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লুথার গুলিক লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি নির্ধারণে যে বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা অনেকাংশেই সুসংহত এবং বিজ্ঞানসম্মত। কাজেই তার এ বর্ণনার মধ্যেই লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি ও স্বরূপ অনেকটা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
০৪ সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ সংক্ষেপে লেখ । অথবা, সাম্প্রতিককালে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা প্রশাসন যন্ত্রের উদ্ভাবন, প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্র ও কার্যবিস্তৃতির সাথে সাথে লোকপ্রশাসন একটি সুসংবদ্ধ শাস্ত্র হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে। তবে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থারও পরিবর্তন সাধিত হয়ে ক্রমান্বয়ে জটিল আকার ধারণ করছে।
আর জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে জনগণের কাছে সহজ করে তুলেছে লোকপ্রশাসন লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে সাম্প্রতিক সময়ে এর কার্যকারিতা ব্যাপক বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ : প্রশাসন একটি প্রাচীন ধারণা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর স্বরূপ অনেকাংশেই বেড়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো—
১. সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত ও আইনসভা কর্তৃক প্রণীত নীতির বাস্তবায়নে লোকপ্রশাসনের ভূমিকা বেড়েছে।
২. কাজের সমন্বয়সাধন : সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
৩. পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা : সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। এ ধরনের পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়মিত পরিবর্তিত হলেও প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন ঘটে কদাচিৎ। তাই সরকারি কাজের স্থিতিশীলতা ও প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়।
৫. কর্মী ব্যবস্থাপনা : কোনো প্রশাসনকে সক্রিয় ও দক্ষ করে তোলার জন্য দক্ষ কর্মী দরকার । লোকপ্রশাসন বর্তমানে ব্যাপকভাবে কর্মী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করে ।
৬. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : লোকপ্রশাসন ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক গতিশীল হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাচ্ছে।
৭. অর্থ বরাদ্দ : প্রশাসনের সাথে অর্থের ব্যাপক সম্পর্ক। প্রশাসন ব্যবস্থা চালনা করার জন্য বর্তমানে অনেক বড় অংকের বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
৮. তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার : লোকপ্রশাসন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার পর থেকে প্রশাসনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের মতো ফাইলে তথ্য না রেখে এখন কম্পিউটারে সব তথ্য জমা রাখে ।
৯. জনসংযোগ : বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থা জনকেন্দ্রিক । জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বেড়ে গেছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে লোকপ্রশাসনের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এসেছে। সেকেলে প্রশাসন ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে বর্তমানে প্রশাসনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে এর স্বরূপও পরিবর্তিত হয়েছে।
০৫. লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু আলোচনা কর। অথবা, লোকপ্রশাসনের পরিধি আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসনের ব্যবস্থাপনাগত দৃষ্টিভঙ্গির কার্যাবলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থাকে। পরিকল্পনা সংগঠন, আদেশ, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয় নিয়েই লোকপ্রশাসন ব্যাপৃত থাকে।
মূলত নাগরিক হিসেবে মানুষের জীবন যত দূর বিস্তৃত, লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু তত দূর প্রসারিত। যেহেতু প্রশাসন ব্যবস্থা শাসন বিভাগের একটি অংশ সেহেতু এর মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই এর মূল বিষয়বস্তু।
লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু : ব্যাপক অর্থে লোকপ্রশাসন সরকারের সব ধরনের কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে লোকপ্রশাসনের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।
লোকপ্রশাসনের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে জনগণ । এ প্রেক্ষিতে লোকপ্রশাসনকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় যথা : ক. গৌণ দৃষ্টিকোণ, খ. ব্যাপক দৃষ্টিকোণ ও গ. নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিকোণ।
ক. গৌণ দৃষ্টিকোণ লুথার গুলিকের মতে, “লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু POSDCORB এ অক্ষরগুলোর মধ্যে নিহিত রয়েছে। অক্ষরগুলোর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
- P = Planning, O = Organization, S = Staffing,
- D = Directing, C = Co-ordinating, R = Reporting,
- B = Budgeting.
এ শব্দগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপের মধ্যেই বিষয়বস্তু লুকায়িত রয়েছে।
খ. ব্যাপক দৃষ্টিকোণ ব্যাপক অর্থে লোকপ্রশাসনের প্রবক্তাগণের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ও এল. ডি. হোয়াইটের মতে, “লোকপ্রশাসন সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে।”
গ. নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিকোণ : নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিকোণ হতে বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করার জন্য ২টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ১. তত্ত্বগত প্রশাসন ও ২. ব্যবহারিক প্রশাসন। এছাড়া লোকপ্রশাসনের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। যেমন-
১. সমাজের কল্যাণ বা জনসেবা : লোকপ্রশাসনের মূল বিষয় হচ্ছে জনগণের সেবা করা। মূলত এর যে মূল দায়িত্ব তা হলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের সেবা করা।
২. রাষ্ট্রীয় সংগঠনের আলোচনা : রাষ্ট্রের যাবতীয় সাংগঠনিক বিষয়াবলি লোক প্রশাসনের অন্তর্গত। একটি রাষ্ট্রের ভিতরের যাবতীয় বিষয়াবলি যেমন- সরকার ব্যবস্থা, সাংগঠনিক কাঠামো, সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুর আওতাভুক্ত।
৩. প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা : প্রশাসন ব্যবস্থাপনা নিয়েও লোকপ্রশাসন আলোচনা করে। পদ্ধতিগতভাবে কোনো কাজ সম্পূর্ণ করার অর্থই ব্যবস্থাপনা।
৪. পরিকল্পনা : পরিকল্পনা ও প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসক ও কর্মকর্তাগণই পরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করে থাকে এটিও লোকপ্রশাসনের বিষয়ভুক্ত।
৫. প্রশাসনিক আইন : প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যেসব আইন ও নিয়মাবলি প্রণয়ন করে তা লোকপ্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পূর্বে লোকপ্রশাসনের কর্মপরিধি তথা বিষয়বস্তু ছিল সংকীর্ণ। কিন্তু বর্তমানে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই সার্বিকভাবে বলা যায় বিষয়বস্তুর কোনো মাত্রা নেই, জনগণের বিভিন্ন চাহিদা বৃদ্ধির ফলে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুও পরিবর্তন হচ্ছে।
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
০৬. লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
অথবা, লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রীয় কাজ প্রসারের সাথে সাথে লোকপ্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব আরও অধিক পরিমাণে অনুভূত হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পাদনে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণসাধন করা। রাষ্ট্রের কার্যাবলির পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের ভূমিকা ও গুরুত্ব বেড়ে গেছে।
লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো—
১. সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা : বর্তমান বিশ্বে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রশাসন ব্যবস্থার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আর এ সষ্ঠ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে হলে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
২. সরকারি নীতি ও বিধি প্রণয়ন লোকপ্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ শুধু আইন বিভাগের দ্বারা প্রণীত নীতির বাস্তবায়নই করে না বরং তাদের বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দ্বারা সেসব নীতি বাস্তবায়ন করে এ ক্ষেত্রেও লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব ব্যাপক ।
৩. স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা : গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হলেও সরকারি কার্যাবলির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে স্থিতিশীলতা দান করাই প্রশাসনের কাজ। আর এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে হলে অবশ্যই প্রশাসনিক জ্ঞানের প্রয়োজন ।
৪. দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির পূর্ণ ব্যবহার : দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তির পূর্ণ ব্যবহার ও বণ্টনের দ্বারা জনকল্যাণ সাধন করাই প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনের এ কাজ যথাযথভাবে করতে প্রয়োজন প্রশাসনিক জ্ঞান তাই লোকপ্রশাসন পাঠ জরুরি।
৫. অর্থ প্রশাসনের ধারণা : অর্থ প্রশাসনের চালিকাশক্তি। সরকারের কাজের জন্য অর্থ অপরিহার্য। আর এ অর্থ প্রশাসন সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ আমরা লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমেই পেয়ে থাকি।
৬. আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা : রাষ্ট্র চালিকার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো আমলাতন্ত্র । লোকপ্রশাসন আমলাতন্ত্রের কার্যাবলির ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা সরকারের ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত । লোকপ্রশাসন পাঠে অর্জিত জ্ঞান আমাদের কেবল জ্ঞানের পরিধিই প্রসারিত করে না, বাস্তব জীবনেও তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কাজেই বলা যায়, আধুনিক যুগে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
০৭. বাংলাদেশে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বর্ণনা কর। অথবা, বাংলাদেশে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। নবীন রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে প্রশাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।
উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতা হতে এটি স্পষ্ট যে প্রশাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় । তাই বাংলাদেশে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব : বাংলাদেশে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে বাংলাদেশে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১. কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জন : লোকপ্রশাসন বাংলাদেশের মানুষকে বাস্তব ও কর্মমুখী শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, কেননা লোকপ্রশাসন সরকারের নীতিসমূহকে বাস্তবে রূপ দেয় ।
২. প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : প্রশাসন সম্পর্কে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো অনেক ভালোভাবে জানে না । লোকপ্রশাসন এক্ষেত্রে প্রশাসন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে ।
৩. পরিকল্পনা প্রণয়নে লোকপ্রশাসন : লোকপ্রশাসনের তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে প্রশাসক যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়ন করে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
৪. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লোকপ্রশাসন : বাংলাদেশে সরকারি সব নীতির বাস্তবায়নের জন্য লোকপ্রশাসন কাজ করে থাকে । সুস্থ, স্বচ্ছ, গাতিশীল প্রশাসন ব্যবস্থাই পারে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন।
৫. প্রশাসনের সংস্কারকল্পে : সনাতন প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তে বাংলাদেশে নতুন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৬. প্রশাসনের গতিশীলতা : বর্তমানে স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে প্রশাসনিক কাজে লোকপ্রশাসনের জ্ঞান অপরিহার্য। কেননা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে লোকপ্রশাসনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে সম্পদের অপর্যাপ্ততার দরুণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটি জটিল ও দুরূহ কাজ। তাই এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে লোকপ্রশাসকদের প্রজ্ঞা, কর্মকুশলতা, দেশের বাস্তব অবস্থা ইত্যাদির এক সমন্বিত প্রচেষ্টা একান্তভাবে কাম্য ।
০৮. লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ কী? অথবা, লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধির ৪টি কারণ লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসন নতুন অধ্যয়ন বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হলেও এর কার্যক্রমের ব্যাপকতাই বলে দেয় এর গুরুত্বের কথা। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের জটিলতা যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনই লোকপ্রশাসনের কার্যাবলিও বেড়ে যাচ্ছে। সেদিক থেকে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কেননা বর্তমান বিশ্বে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ : নিম্নে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ আলোচনা করা হলো—
১. রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন : আধুনিক লোকপ্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধন করা। আর সেজন্য লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে।
২. প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ : সনাতন প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে যেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে। তাই এর গুরুত্ব বাড়ছে।
৩. প্রশাসনিক সেবা প্রদান : জনগণের কথা চিন্তা করে, জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রশাসন সরকারি সেবা প্রদান ও জনকল্যাণমুখী নীতির বাস্তবায়ন করছে।
৪. সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা : লোকপ্রশাসনের সফলতার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন যা নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে।
৫. গণতান্ত্রিক শিক্ষাদান : গণতন্ত্রের বিভিন্ন শর্তাবলি পূরণ করে জনগণকে গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা প্রদান করাই লোকপ্রশাসনের অন্যতম কাজ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
৬. প্রশাসকদের দক্ষতা বাড়ানো : দক্ষ প্রশাসক ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই প্রশাসকদের দক্ষ হতে হয়। লোকপ্রশাসন প্রশাসকদের দক্ষতা নির্মাণে ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে প্রশাসন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আর এর সবকিছুই মানুষের প্রয়োজনে । এমন এক সময় ছিলো যখন জনগণ সরকারি কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে নির্যাতন নিপীড়ন ছাড়া আর কিছুই আশা করতো না । কিন্তু বর্তমানে জনসাধারণ অধিকতর সেবা প্রত্যাশা করে ।
০৯. POSDCORB (পসকনিসপ্রবা) শব্দটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, POSDCORB ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : নতুন অধ্যয়ন বিষয় হিসেবে লোকপ্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক বিজ্ঞান হতে পৃথক হয়েছে। লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে লুথার গুলিক POSDCORB বা ‘পসকনিসপ্রবা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আলোকে যেসব কাজ আলোচনা করা যায় কেবল সেসব বিষয়ই এখানে তুলে ধরা হয়েছে ।
POSDCORB (পসকনিসপ্রবা) শব্দটির ব্যাখ্যা : সমাজবিজ্ঞানী লুথার গুলিক সর্বপ্রথম POSDCORB শব্দটির ধারণা দিয়েছেন ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। POSDCORB শব্দটি নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-
P – Planning (পরিকল্পনা) : লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিই পরিকল্পনা।
O – Organization (সংগঠন) : পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলির শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং প্রতিটি বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ।
S – Stuffing (কর্মী সংস্থান) : সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা কর্মচারী নিয়োগ করা এবং সমগ্র কর্মচারী পরিচালনার ব্যবস্থাপনা ও কর্মী সংস্থান ।
D – Directing (নির্দেশনা) : কর্মীদের নির্দেশ প্রদান, কাজ তদারকি ও তত্ত্বাবধায়ন করার নামই নির্দেশনা। ভালো নির্দেশনার ওপরই কাজের সাফল্য নির্ভর করে।
Co – Co-ordination (সমন্বয়) প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের কার্যাবলি এক সূত্রে গ্রথিত, সংযুক্ত ও সুসংবদ্ধ করার প্রক্রিয়াই হলো সমন্বয় ।
R – Reporting (প্রতিবেদন লিখন) : প্রতিবেদন বলতে কোন কাজ কীভাবে চলছে, তার ফলাফল কেমন আসছে এসব সম্পর্কে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবহিত করাকেই বুঝায় ।
B – Budgeting (অর্থ বরাদ্দ) : অর্থ বরাদ্দ বলতে আয়ব্যয় নির্ধারণ, হিসাব সংরক্ষণ অর্থাৎ সমগ্র আর্থিক প্রশাসনকেই বুঝায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় যেসব উপাদানের কথা লুথার গুলিক ব্যক্ত করেছেন সেগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত সব ব্যক্তির POSDCORB সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
১০ | POSDCORB এর পূর্ণরূপ ও গুরুত্ব লেখ।
অথবা, POSDCORB এর গুরুত্ব সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসন হলো সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার একটি সাধারণ বিজ্ঞান। লোকপ্রশাসনের যথাযথ বিষয়বস্তু নির্ধারণে লুথার গুলিক অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটি পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন ইংরেজি POSDCORB (পসকনিসপ্রবা) এ অক্ষরগুলোর মধ্যেই লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু এঁকেছেন এবং সেগুলোর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন।
POSDCORB এর পূর্ণরূপ : কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমন্বিত রূপ হলো POSDCORB | Planning, Organization, Stuffing, Directing, Coordination, Reporting and Budgeting এ শব্দগুলোর অদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত POSDCORB |
POSDCORB এর গুরুত্ব : প্রশাসনিক সংগঠন ও ব্যবস্থাপনায় লুথার গুলিকের POSDCORB এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো—
প্রথমত, POSDCORB হলো এমন একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যেখানে একটি কোম্পানির লাভের জন্য কর্মীদের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
দ্বিতীয়ত, POSDCORB এর প্রতিটি ধাপ কোম্পানির প্রয়োজনে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা করে থাকে।
তৃতীয়ত, ‘পসকনিসপ্রবা’ এর মূল উদ্দেশ্য হলো কীভাবে সংগঠনের কাঠামোকে আরও বেশি সুগঠিত করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়।
চতুর্থত, POSDCORB স্টাফ কর্মকাণ্ডকে লাইন কর্মকাণ্ড হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য ও সহযোগিতা করে।পঞ্চমত, এটি এমন একটি আলোচ্য বিষয় যা ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকারিতা কাঠামো তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করে ।
ষষ্ঠত, প্রশাসনিক তত্ত্বের নীতিমালাকে প্রশাসন ব্যবস্থায় বাস্তব রূপ দেওয়াই এর উদ্দেশ্য । সপ্তমত, প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুচারুরূপে পরিচালনা করতে এর গুরুত্ব রয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসনের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত লুথার গুলিকের ‘POSDCORB’ একটি অভিনব ধারণা। এটি সনাতন সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি নতুন মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে। তাই এটি বর্তমানে লোকপ্রশাসনে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর