(ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর পর্বঃ ১ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
(ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ১ : লোকপ্রশাসন
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- ০৪. সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, সাম্প্রতিককালে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানবসমাজের সাথে নিয়োজিত প্রশাসন ব্যবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। আর এ জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে জনগণের কাছে সহজতর করে তুলেছে লোকপ্রশাসন।
জনকল্যাণমুখী সরকার জনগণের স্বার্থে বহুবিধ কার্য সাধন করে থাকে। এ কার্য সাধন করতে লোকপ্রশাসন বড় ভূমিকা পালন করে। বস্তুত লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বা স্বরূপ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি : সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠিত একটি শাখা লোকপ্রশাসন তবে প্রাচীনকাল থেকেই প্রশাসনের প্রচলন বা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিককালে লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি অনেকাংশে বিস্তৃত হয়েছে। নিম্নে সাম্প্রতিক সময়ের লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হলো-
- আরো পড়ুন:- লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতি অধ্যায়:-১(সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
১. চিন্তন প্রক্রিয়া : লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এটি ধ্যান বা চিন্তার ফসল। লোকপ্রশাসনের ভেতরে গভীর চিন্তন বিষয় লুক্কায়িত আছে যা একটি রাষ্ট্রের সরকার বা জনগণের কল্যাণের জন্য প্রযোজ্য।
২. কাজের সমন্বয়সাধন : সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কারণে লোকপ্রশাসনের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে।
৩. রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ : লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বর্তমানে প্রশাসন রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ করে থাকে। বিভিন্ন রাজনীতিবিদ তাদের আদেশ বা এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।
৪. সরকারি নীতিপ্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সরকার কর্তৃক প্রেরিত ও আইনসভা কর্তৃক প্রণীত নীতির বাস্তবায়ন করা লোকপ্রশাসনের অন্যতম কাজ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
৫. পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা : বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। যার ফলে প্রতিটি দেশে দৈনিন্দিন জীবনে নানা অসংগতি দেখা দিচ্ছে। জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের কার্যকারিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
৬. আমলাতান্ত্রিক কাঠামো : সরকারের নীতির বাস্তবায়নে প্রশাসনের ভূমিকা অপরিসীম । প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আমলাতান্ত্রিক । প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো লোকপ্রশাসনের প্রকৃতির আওতাভুক্ত।
৭. নিষ্ঠাবান : লোকপ্রশাসনের স্বরূপ আলোচনার ক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মচারীদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে কারণ তাদের কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
৮. সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক : সামাজিক বিজ্ঞানের আওতায় যেসব শাখা আছে তাদের মধ্যে লোকপ্রশাসন অন্যতম। অন্যান্য শাখা যেমন— রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি প্রভৃতি সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে লোকপ্রশাসনের সম্পর্ক বেড়ে যাচ্ছে ।
৯. প্রশাসনিক আইন : সাম্প্রতিক সময়ে লোকপ্রশাসন ও প্রশাসনিক আইনকে পৃথকভাবে বিচার করা যায় না। মোটামুটিভাবে লোকপ্রশাসন সংক্রান্ত যাবতীয় আইনকে প্রশাসনিক আইন বলে অভিহিত করা যায় ।
১০. স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা : বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের চাপে সরকার প্রায়শ পরিবর্তিত হয়। কিন্তু প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন ঘটে কদাচিৎ। সরকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলেও প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় ।
১১. অর্থব্যবস্থা : লোকপ্রশাসনের সাথে অর্থের ব্যাপার ব্যাপকভাবে জড়িত আছে। অর্থ ছাড়া প্রশাসন অচল। তাই লোকপ্রশাসনের সাথে অর্থ প্রশাসনের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান ।
১২. সমস্যার সমাধান : লোকপ্রশাসন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে সব সমস্যার উদ্ভব হয় সেসবের সমাধান দিয়ে থাকে প্রশাসন ।
১৩. কর্মী ব্যবস্থাপনা : কোনো প্রশাসনকে সক্রিয় ও সচল করে তোলার জন্য দক্ষ কর্মী দরকার। লোকপ্রশাসনে কর্মী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করে ।
১৪. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : লোকপ্রশাসন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার পর থেকে প্রশাসন ব্যবস্থায় তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাচ্ছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন এখন বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদন করে। অর্থাৎ সাম্প্রতিককালে লোকপ্রশাসনের কার্যাবলি ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে।
অতীতের লোকপ্রশাসনের স্বরূপকে বাদ দিয়ে বর্তমানে লোকপ্রশাসনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়ে জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে এর স্বরূপও পরিবর্তিত হচ্ছে।
- ০৫. পসকনিসপ্রবা মতবাদের প্রকৃতি ও গুরুত্ব বর্ণনা কর ।
- অথবা, পসকনিসপ্রবা মতবাদের প্রকৃতি ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসন হলো সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার একটি সাধারণ বিজ্ঞান। লোকপ্রশাসন বিষয়বস্তু ব্যবস্থাপনার কলাকৌশলের মধ্যেই সীমিত। লোকপ্রশাসনের যথাযথ বিষয়বস্তু নির্ধারণে লুথার এইচ. গুলিক (Luther H. Gullick) অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটি পন্থা উল্লেখ করেন।
লুথার গুলিক সব প্রশাসনিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে তাদের ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করার জন্য এ সংক্ষিপ্ত শব্দসমূহের ব্যবহার করেছেন ।
পসকনিসপ্রবা : সমাজবিজ্ঞানী লুথার গুলিক এবং এল. আরউইক ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘Papers on the science of administration’ রচনা করেন যেখানে একজন প্রশাসনিক সংস্থার প্রধান নির্বাহীর সাতটি প্রধান কাজ ব্যাখ্যা করে। এ সাতটি কাজ পসকনিসপ্রবা (POSDCORB) এর মাধ্যমে তুলে ধরেন । যথা :
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি
- ১. পরিকল্পনা
- ২. সংগঠন
- ৩. কর্মীসংস্থান
- ৪. নির্দেশনা
- ৫. সমন্বয়
- ৬. প্রতিবেদন
- ৭. অর্থ বরাদ্দ
পসকনিসপ্রবা মতবাদের প্রকৃতি : লুথার গুলিকের আলোচ্য শব্দটির মধ্যেই এর প্রকৃতি বা স্বরূপ নিহিত আছে। এ সাতটি অক্ষরগুলোকে নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা যায় :
১. পরিকল্পনা : ভবিষ্যৎ কর্মসূচির নকশা প্রণয়নকে পরিকল্পনা বলে অর্থাৎ পরিকল্পনা হলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনের জন্য কী করতে হবে, কীভাবে, কখন করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে আগাম কর্মসূচি নির্ধারণ করা।
২. নির্দেশনা : একজন নির্বাহী কর্তৃক তার অধস্তন কর্মীদের নির্দেশ প্রদান, কাজ পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়ন করাই নির্দেশনা। একটি ভলো নির্দেশনার ওপরই কাজের সাফল্য আসে।
৩. প্রতিবেদন : প্রতিবেদন বলতে কী কাজ, কীভাবে চলছে সেই সম্পর্কে সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধস্তন কর্মচারী সবাইকে অভিহিত রাখা।
৪. সংগঠন : পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাবলি শ্রেণিবদ্ধকরণ, উপায় উপাদান সংহতকরণ এবং কর্মরত প্রতিটি বিভাগ উপবিভাগ ও ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলে ।
৫. কর্মীসংস্থান : সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী নির্বাচন, প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, পদোন্নতি ও অবসর গ্রহণ প্রভৃতি কাজের সমষ্টিকে কর্মীসংস্থান বলে।
৬. অর্থ বরাদ্দ বাজেট তৈরি বলতে আয়-ব্যয় নির্ধারণ, হিসাব সংরক্ষণ অর্থাৎ সমগ্র আর্থিক প্রশাসনকেই বুঝায়। লুথার গুলিকের এ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বর্ণনার মধ্যেই প্রশাসনিক প্রকৃতি ও পরিধি অনেকটা স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়ে ওঠে। তাই প্রশাসন সম্পর্কিত আলোচনাও সুসংহত ও বিজ্ঞানসম্মত
৭. সমন্বয় : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের কার্যাবলিকে এক সূত্রে গ্রথিত, সংযুক্ত ও সুসংবদ্ধ করার প্রক্রিয়া।
পসকনিসপ্রবা মতবাদের গুরুত্ব : প্রশাসনিক সংগঠন ও ব্যবস্থাপনায় লুথার গুলিকের পসকনিসপ্রবা (POSDCORB) মতবাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো—
প্রথমত, পসকনিসপ্রবা হলো এমন একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যেখানে একটি কোম্পানির লাভের জন্য কর্মীদের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
- দ্বিতীয়ত, ‘পসকনিসপ্রবা’ এর প্রতিটি ধাপ কোম্পানির প্রয়োজনে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা করে থাকে।
- তৃতীয়ত, ‘পসকনিসপ্রবা’ এর মূল উদ্দেশ্য হলো কীভাবে সংগঠনের কাঠামোকে আরও বেশি সুগঠিত করা যায় সেদিকে সচেষ্ট হওয়া।
- চতুর্থত, ‘পসকনিসপ্রবা’ স্টাফ কর্মকাণ্ডকে লাইন কর্মকাণ্ড হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য ও সহযোগিতা করে।
- পঞ্চমত, ‘পসকনিসপ্রবা’ এমন একটি বিষয় যা ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকারিতা কাঠামোতাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করে।
- ষষ্ঠত, এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রশাসনিক তত্ত্বের নীতিমালাকে প্রশাসন ব্যবস্থায় বাস্তব রূপ দেওয়া।
- সপ্তমত, প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুচারুরূপে পরিচালনা করতে এর গুরুত্ব রয়েছে।
সমালোচনা : লুথার গুলিকের পসকনিসপ্রবাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—
- ১. এখানে মানবীয় আচরণকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ২. তত্ত্ব অধিকতর পদ্ধতিগত, বিষয়ভিত্তিক নয় ।
- ৩. একজন ব্যবস্থাপকের অর্জন সম্পর্কে কোনো আলোকপাত করা হয়নি।
- ৪. উপাত্তসমূহের প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মূল্যায়ন এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ‘পসকনিসপ্রবা’ লুথার গুলিকের একটি অভিনব ধারণা। এর কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
কেননা এটি সনাতন সংগঠন ও বাস্তবতার মধ্যে একটি নতুন মানববন্ধনের সৃষ্টি করেছে। ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এর প্রভাব দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
০৬. নব্য লোকপ্রশাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর । অথবা, নতুন লোকপ্রশাসনের সমালোচনা উল্লেখপূর্বক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৮৭ সালের পর থেকে লোকপ্রশাসনের শৃঙ্খলা ও পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনে ‘নতুন লোকপ্রশাসন’ আন্দোলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে ।
এটি এমন একটি সন্ত্রাসবাদী, অ্যান্টি টেকনিক্যাল এবং বিরোধী শাসনতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া যা প্রথাগত জনসাধারণের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। নয়া লোকপ্রশাসন সরকারের ভূমিকা এবং কীভাবে বিভিন্ন সেবা নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিবে তা আলোচনা করে।
নব্য/নতুন লোকপ্রশাসন : নতুন লোকপ্রশাসন ধারণাটি ডুয়াইট ওয়াল্ডো কর্তৃক ১৯৬৮ সালের প্রথম মিনিনোরুক সম্মেলনে উত্থাপিত হয়। এ সম্মেলনটি জনপ্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার শীর্ষ পণ্ডিতদের একত্রিত করে এবং যারা এর পরিধি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে তারা এমন একটি উত্তম আমলাতান্ত্রিক সমাজের কথা বলেন যেখানে প্রশাসক হবেন উদ্যোগমুখী (Proactive) এবং এজন্য সংগঠনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
নব্য/নতুন লোকপ্রশাসনের বৈশিষ্ট্য : তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে লোকপ্রশাসন অভ্যাস নিয়ে এবং প্রেষণার দিক থেকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করে।
সামাজিক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা এবং পরিবর্তন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য লোকপ্রশাসনিক ব্যবস্থার ভূমিকা এবং দক্ষতার ওপর নব্য/নতুন লোকপ্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নতুন লোকপ্রশাসনের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে তাত্ত্বিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। নতুন লোকপ্রশাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
১. পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়াশীলতা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত পরিবেশের সব জায়গায় পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এ পরিবেশের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানায়। তাই প্রশাসনের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় নমনীয়তা এবং অভিযোজনও চালু করা প্রয়োজন।
২. যৌক্তিকতা : নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা শুধু সরকারের নীতির দিক হতে নয়; বরং নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশাসকদের কর্মকাণ্ডের কার্যকারিতা যাচাই করার আহ্বান জানায়।
৩. কাঠামোগত পরিবর্তন : নতুন লোকপ্রশাসন বিভিন্ন পরিবেশগত কাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির সাথে পরীক্ষানিরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। নাগরিক আন্তঃসম্পর্ককে সহজতর করার জন্য ছোট ছোট বিকেন্দ্রীকরণ এবং নমনীয় পদসোপান প্রয়োজন।
৪. বহুমুখী শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব : লোকপ্রশাসন কেবল একক চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না; বরং বহুমুখী জ্ঞানের চিন্তাধারার এক যোগসূত্র। কাজেই বিভিন্ন বিষয় যেমন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, মানব সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে যা কি না এর উন্নয়নে সহায়ক।
৫. প্রাসঙ্গিকতা : নব লোকপ্রশাসনের সমর্থকগণ লোকপ্রশাসনের বিষয়াবলি এবং বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা আবশ্যক মনে করেন । তাই নব লোকপ্রশাসনের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে ।
৬. মূল্যবোধ : অতীতে লোকপ্রশাসনে নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ জোরালোভাবে সমালোচিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। কিন্তু নতুন প্রশাসন ব্যবস্থায় চিন্তাবিদরা নীতিশাস্ত্রের প্রয়োগের পক্ষপাতী।
৭. সামাজিক সমতা : নতুন লোকপ্রশাসন সমর্থকরা মনে করেন লোকপ্রশাসনে সামাজিক সমতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যা নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যমূলক মনোভাব দূরীভূত করবে।
৮. যুক্তিবাদ নতুন লোকপ্রশাসন যুক্তিভিত্তিক । যেসব ব্যক্তিবর্গ সেবা গ্রহীতা বলে গণ্য তাদের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়াই এর কাজ ৯. পরিবর্তন : এখানে প্রশাসককে একটি পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সচেতনভাবে কাজ করাই এর লক্ষ্য ।
১০. অংশগ্রহণ নতুন লোক প্রশাসনে অংশগ্রহণের পরিধি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের বাইরের ব্যক্তি বা দলের প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থায়।
১১. ক্লায়েন্ট কেন্দ্রিকতা : প্রশাসনিক কার্যকারিতা শুধুমাত্র সরকারের দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা না করে নাগরিক দিক থেকেও বিবেচনা করতে হবে।
১২. সবকাজের কাজি : উত্তম প্রশাসকগণ এমন হবেন যাদের রাজনীতি ও আইনকানুন সম্পর্কে ধারণা থাকবে এবং সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কাজকর্মে সিদ্ধহস্ত হবেন।
সমালোচনা : নতুন লোকপ্রশাসন তত্ত্বটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
- ১. এটি একটি বিরোধী তত্ত্বগত ও বিরোধী ব্যবস্থাপনা হিসেবে খ্যাত ।
- ২. কর্মক্ষমতা পরিমাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সমর্থনকারীদের প্রত্যাখ্যান করে ।
- ৩. অনেক সময় নীতি প্রণয়ন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি হয়ে যায় এবং
- ৪. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কী কী পন্থা অবলম্বন করতে হবে তা উল্লেখ করেনি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নতুন লোকপ্রশাসনের নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যুগের চাহিদা মিটাতে লোকপ্রশাসনে এক নতুন আন্দোলন নব লোকপ্রশাসনের আবির্ভাব হয়েছে যা প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করবে।
বস্তুত, নতুন লোকপ্রশাসনে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সেবা গ্রহীতা কেন্দ্রিক প্রশাসনের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে লোক প্রশাসনের তত্ত্ব ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।
০৭. লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর । অথবা, লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রীয় কার্যের প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রশাসনিক কার্যকলাপ। আধুনিক রাষ্ট্র আর পুলিশি রাষ্ট্রের গণ্ডিতে না থেকে কল্যাণকামী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
জনগণের কল্যাণসাধন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান কাজের দায়িত্ব এসে পড়ছে লোকপ্রশাসনের ওপর। কাজেই লোকপ্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারের কার্যাবলি এবং সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে লোকপ্রশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।” নিম্নে লোকপ্রশাসন পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো—
১. জনগণের স্বার্থরক্ষা : লোকপ্রশাসনের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের স্বার্থরক্ষা করা এবং জনগণের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. সমাজ স্থিতিশীলতার প্রতীক : লোকপ্রশাসন হলো সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রতীক। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু প্রশাসনের পরিবর্তন খুব কমই ঘটে । প্রশাসনের সাংবিধানিক ভিত্তি রয়েছে যার ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষিত হয়।
৩. জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জন্ম : জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৃদ্ধির ফলে লোকপ্রশাসনের কার্যাবলির পরিধি বেড়েই যাচ্ছে। রাষ্ট্রের এখন দায়িত্ব সব শ্রেণির মানুষকেই সেবাদান করা। বর্তমানে লোকপ্রশাসন বেসরকারি অর্থনৈতিক শিল্পকেও পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে ।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : লোকপ্রশাসনের অন্যতম কাজ হলো দেশের প্রাকৃতিক ও জনশক্তির পূর্ণ এবং সুদক্ষ ব্যবহার বণ্টনের দ্বারা জন্যকল্যাণসাধন করা। এদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অনেক জটিল হলেও লোকপ্রশাসন মানবতার কল্যাণে তা অনবরত কাজ করে চলেছে।
৫. সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশ : সমাজের কৃষ্টি সংরক্ষণ ও বিকাশের মাধ্যম হিসেবেও লোকপ্রশাসন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। লোকপ্রশাসন শুধুমাত্র সামাজিক কৃস্টিই সংরক্ষণ করে না; বরং এটি সামাজিক পরিবর্তন ও প্রগতির পথ প্রশস্ত করে।
৬. নাগরিক চেতনার বিকাশ : লোকপ্রশাসন শাস্ত্র পাঠের ফলে একদিকে যুবসমাজের মধ্যে নাগরিক চেতনার বিকাশ ঘটবে, ঠিক তেমনই অন্যদিকে এর ফলে দেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করা প্রশাসকের পক্ষে সহজতর ও সুবিধাজনক হবে।
৭. ভবিষ্যৎ প্রশাসক তৈরি : লোকপ্রশাসন বিষয়ে অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীগণকে ভবিষ্যতে সরকারি প্রশাসনের জন্য তৈরি করে তুলবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে লোকপ্রশাসনের অধ্যয়ন রাষ্ট্র-যন্ত্রের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও ধারণা প্রদান করে।
৮. আধুনিক প্রশাসনিক সমস্যার গবেষণা : লোকপ্রশাসন অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আধুনিক সরকারের অনেক প্রশাসনিক সমস্যা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করা যায়। এর ফলে বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি নিরসনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল উদঘাটন করা যায়।
৯. প্রশাসকের কার্যাবলির ধারণা : লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে বুঝা যায়, একজন প্রশাসক কোন কোন কার্য সম্পাদন করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় সংগঠনের কাঠামো, কার্যাবলি, প্রকৃতি, নিয়োগ, জনগণের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় লোকপ্রশাসন পাঠের মাধ্যমে।
১০. জাতীয় চরিত্র সম্পর্কে ধারণা : একটি জাতির চরিত্র জানতে হলে আমাদের প্রথমেই সে জাতির প্রশাসনিক কাঠামোতে নজর দিতে হবে। কেননা প্রশাসন একটি জাতির চরিত্র ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র এ ধারণা আমরা পাই উক্ত দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর কার্যাবলি বিবেচনা করেই ।
১১. আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা : যেকোনো দেশেই আমলাতন্ত্র প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে লোকপ্রশাসন পাঠ করা জরুরি।
১২. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সেই দেশের প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত। কেবলমাত্র দক্ষ প্রশাসনই পারে জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে। তাই প্রশাসককে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে।
১৩. প্রশাসনিক ধারণা প্রদান প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত হতে হলে সেসব কর্মচারীদের প্রথমে প্রশাসনিক ধারণা লাভ করতে হবে এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৪. নাগরিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ আধুনিক বিশ্ব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণ প্রক্রিয়া দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নাগরিক জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে।
১৫. বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন : বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টাইপরাইটার, ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, ফ্যাক্স, ই- মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির উদ্ভব অফিস ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে। তাই এক্ষেত্রে লোকপ্রশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লোকপ্রশাসন কেবল পরিচালকই নয়; বরং সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সফলতা মানেই রাষ্ট্রের সফলতা। বস্তুত মানবিক জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
০৮. সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর। অথবা, লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের তুলনামূলক আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালনার জন্য একটি রাষ্ট্রের সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তবে এদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমাদেরকে সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে । সরকারি প্রশাসন : সরকারি প্রশাসন বা লোকপ্রশাসন সরকারি নীতি, আদর্শ, কার্যাবলি প্রভৃতি বাস্তবায়ন করে থাকে
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
এ সম্পর্কে মাসী ম্যাককুইন (Machi Macquine) বলেন, “লোকপ্রশাসন বলতে কেন্দ্রীয়ই হোক আর স্থানীয়ই হোক, সরকারের কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেই বুঝায়।” সি. পি. ভাম্রী (C. P. Bhambhri) বলেন, “রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে বলিয়ান রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপই হলো লোকপ্রশাসন” ।
সুতরাং বলা যায়, জনগণের মঙ্গলসাধন ও সরকারি কার্যাবলির বাস্তবায়ন করার নামই লোকপ্রশাসন ।
বেসরকারি প্রশাসন : বেসরকারি প্রশাসন বলতে ব্যক্তিগত প্রশাসনকে বুঝায় । এ ধরনের প্রশাসন ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে।
- প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
- ফিফনার (Pfiffner) এর ভাষায়, “বেসরকারি প্রশাসন
- ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি, ক্লাব, কোম্পানি অথবা সমবায় কর্তৃক পরিচালিত কার্যাবলিকে বুঝায়।”
বিদ্যাভূষণ (Vidaya Bhushan ) বলেন, “বেসরকারি প্রশাসন হলো একটি গ্রুপ প্রচেষ্টা যারা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে, যেখানে প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে লভ্যাংশ অর্জন করা।” মোটকথা, বেসরকারি প্রশাসন হলো বেসরকারি নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত প্রয়াস যার উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন ।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য : সনাতন প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতায় সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কাঠামোতে অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তবে রাষ্ট্রের প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনাগত প্রভৃতি দিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্য : হেনরি ফেয়ল, মেরি পার্কার ফলেট, এল. আরউইক প্রভৃতি তাত্ত্বিকগণ সাদৃশ্যের পক্ষে মত দেন। অপরপক্ষে, পল অ্যাপলেবি, হার্বার্ট এ. সাইমন প্রমুখ তাত্ত্বিকগণ সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের পক্ষে মত পোষণ করেন। নিম্নে উভয়ের মধ্যকার সাদৃশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. সমাজবিজ্ঞানের শাখা : সমাজবিজ্ঞান এমন একটি আলোচ্য বিষয় যেখানে মানুষের সার্বিক বিষয়সমূহ নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় যেহেতু লোকপ্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসন সমাজবিজ্ঞান হতেই আবির্ভূত হয়েছে সেহেতু এদের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
২. কাজের ধরন ও প্রকৃতির সাদৃশ্য : সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কার্যক্রম ও প্রকৃতিগত দিকটা প্রায় কাছাকাছি। কেননা উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো প্রশাসন ব্যবস্থা সচল রাখা ।
৩. নীতিমালার সাদৃশ্য : প্রত্যেক সংগঠন পরিচালনার জন্য কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কমবেশি অনুসরণ করা হয়।
৪. পরিকল্পনাগত অভিন্নতা : সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রশাসনই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, সংগঠন ও উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পরিকল্পনা প্রণয়নের পদ্ধতিগত অনেক মিল আছে।
৫. পরিধির অভিন্নতা : সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধির মধ্যে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান। কিছু কিছু কৌশল, পরিসংখ্যান, হিসাবনিকাশ, অফিস ব্যবস্থাপনা ও কার্যবিধি উভয় প্রশাসনে প্রায় একইভাবে বিদ্যমান।
৬. প্রশিক্ষণ : প্রশাসনের কর্মচারীদের দক্ষতা, যোগ্যতার মেধা বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতি বৃদ্ধি করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাওয়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ।
৭. নিয়ন্ত্রণের সাদৃশ্য গণতান্ত্রিক ক্ষমতার ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ আরোপের নীতি লোকপ্রশাসনের ন্যায় বেসরকারি প্রশাসনেও একইভাবে বিদ্যমান।
সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য : সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে কতিপয় সাদৃশ্য লক্ষ করা গেলেও উভয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। এ পার্থক্য সম্পর্কে Mustafa Chowdhury বলেন, “Most often these are differences in degree rather then in kind.” নিম্নে পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসেবা নিশ্চিত করে জনকল্যাণসাধন করা। অপরপক্ষে, বেসরকারি প্রশাসনের উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা ।
২. কর্ম পরিধি : লোকপ্রশাসনের কর্ম পরিধি বেসরকারি প্রশাসনের চেয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত। পক্ষান্তরে, বেসরকারি প্রশাসনের কর্ম পরিধি খুবই সীমিত।
৩. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : লোকপ্রশাসন আমলানির্ভর। দুর্নীতি, উদাসীনতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও আনুষ্ঠানিকতার প্রভাব অনেক বেশি। অপরপক্ষে, বেসরকারি প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা প্রভাব কম তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হয় ।
৪. আর্থিক লাভ-ক্ষতির হিসাব : সরকারি প্রশাসনে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও উক্ত প্রকল্প স্থগিত রাখা যায় না। অন্যদিকে, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে বেসরকারি প্রশাসন কোনো প্রকল্প স্থগিত করে দিতে পারে।
৫. কর্মীদের দক্ষতা : সরকারি প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতা কম। সনাতন পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের ফলে দক্ষতা নিরূপণ করা হয় না। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রশাসনে যোগ্যতা নিরূপণ করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় ।
৬. সামাজিক মর্যাদা : একজন সরকারি প্রশাসক নিঃসন্দেহে একজন বেসরকারি প্রশাসকের চেয়ে অধিকতর সামাজিক মর্যাদা ভোগ করে থাকেন । কারণ সরকারি চাকুরির মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি প্রশাসনের মাধ্যমে মূলত দুটি আলাদা পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এদের মধ্যে খুব কমই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় মূল কথা হলো সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। (ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর