(ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
(ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০৪. বিপ্লব কী? এরিস্টটলের বিপ্লবতত্ত্ব পর্যালোচনা কর ।
অথবা, এরিস্টটলের বিপ্লবতত্ত্ব আলোচনা কর। আধুনিককালে এ তত্ত্ব কতদূর কার্যকরী?
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও দর্শনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্লেটোর সুযোগ্য শিষ্য এরিস্টটল একজন বাস্তববাদী দার্শনিক হিসেবে পরিচিত। মধ্যযুগ পর্যন্ত তিনি শুধুই একজন দার্শনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
কিন্তু ১৩ শতকে তার লেখা পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে তিনি মহা পণ্ডিতরূপে পরিণত হন। রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তার সুচিন্তিত মতামত পেশ করেছেন। বিপ্লব তত্ত্ব তার খুব বিখ্যাত ধারণা যেখানে তিনি রাষ্ট্রের মধ্যে বিপ্লবের কারণ, উৎপত্তি, প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেছেন।
বিপ্লব : সাধারণ অর্থে বিপ্লব হলো সংঘবদ্ধভাবে কোনো কিছুর পরিবর্তন সাধন করা। হঠাৎ করে একটা স্থির পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলা। কিন্তু এরিস্টটল বিপ্লব শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন । এরিস্টটল বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থার সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তনই হলো বিপ্লব।
উদাহরণস্বরূপ যদি রাষ্ট্রের সংবিধান রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে পরিবর্তিত হয় তবে এটিও একটি বিপ্লব। এরিস্টটল আরও বলেন, যদি সংবিধান আগের মতোই থাকে কিন্তু শাসক পরিবর্তিত হলে এটাকেও বিপ্লব বলবে ।
এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্ব: এরিস্টটলের সময়ে এথেন্সের ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রগুলো দ্বন্দ্ব কলহে লিপ্ত দ্বন্দ্বকলহে থাকায় অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি ছিল বিরাজমান । এই অবস্থা তাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে আর সেজন্য তিনি একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য লেখনী ধারণ করেন ।
বাস্তবভিত্তিক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫৮টি দেশের শাসনতন্ত্র পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ”The Politics” গ্রন্থ রচনা করেন। যেখানে বিপ্লব তত্ত্ব অনেক বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারের যেকোনো ধরনের পরিবর্তনই হলো বিপ্লব । এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্বটি দুটি অংশে বিভক্ত ।
প্রথম অংশ, প্রথম অংশটি গণতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, রাজতন্ত্র এবং স্বৈরাচারতন্ত্রের শাসকদের ক্ষমতায় টিকে থাকার বাস্তব এবং ব্যবহারিক নির্দেশিকা। যার ফলে বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য বুঝা যায় এবং কোনো প্রকার বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকলে তা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় অংশ, দ্বিতীয় অংশটি ভালো ও স্থিতিশীল সরকারগুলোর দার্শনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি প্রবন্ধ। এখানে কোন সরকার ব্যবস্থায় বিপ্লবের সম্ভাবনা আছে এবং কোনগুলোতে নেই তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বিপ্লব সংঘটন : বিপ্লব তত্ত্ব পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিপ্লবকে প্রভাবিত করে থাকে। একটি রাষ্ট্রে বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে-
- ১. সংবিধানের আংশিক পরিবর্তন করে।
- ২. সংবিধানের কোনো অংশ পরিবর্তন না করে কেবল শাসন ক্ষমতা নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা।
- ৩. সংবিধানের আমূল পরিবর্তন সাধন করে বিপ্লবীরা বিপ্লব ঘটাতে পারে ।
- ৪. কোনো কোনো সময় বিপ্লবীরা ধনিকতন্ত্র বা গণতন্ত্রকে কঠোর বা শিথিল করার লক্ষ্যে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এরিস্টটল সর্বপ্রকার বিপ্লব সংঘটন সম্পর্কে বলেন, “সব ধরনের বিপ্লবের মূলেই রয়েছে ক্ষমতার মোহ।
বিপ্লবের বর্ণনায় ‘স্টাটিস’ এরিস্টটল তার বিপ্লব তত্ত্বের বিপ্লবকে বর্ণনা করতে গিয়ে গ্রিক ‘স্টাটিস’ শব্দটির ব্যবহার করেছেন যদিও শব্দটির সঠিক ভাষান্তর বিপ্লব নয় তবে স্টাটিস বলতে এমন একটি অস্থির অবস্থাকে বুঝানো হয় যে অস্থির অবস্থা থেকে হিংসাত্মক বিস্ফোরণ অবশ্যম্ভাবি হয়ে ওঠে।
সুতরাং স্টাটিস শব্দটির অর্থ বিপ্লব না হয়ে অস্থিরতা বা পরিবর্তনশীলতা হতে পারে। বিপ্লবের উদ্ভব ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে এরিস্টটল কতকগুলো কারণও উল্লেখ করেছেন ।
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
আধুনিককালে এরিস্টটলের বিপ্লব তত্ত্বের কার্যকারিতা : এরিস্টটল তৎকালীন এথেন্সের সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বিপ্লব সংঘটনের যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন তা বিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও সমভাবে প্রযোজ্য। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
১. অত্যাচারের ধরন : এরিস্টটল ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব, স্বৈরাচারী মনোভাব ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছিলেন তা আজকের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ও সমানভাবে দেখা যায় ।
২. মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার প্রযোজ্যতা : আধুনিক কালে যেসব বৃহৎ আকারের বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর সবকটির পেছনেই এরিস্টটলের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রযোজ্য ।
৩. ভিন্ন চরিত্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র : রাষ্ট্রের কোনো অংশের অসমবৃদ্ধি বা ভিন্ন চরিত্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিপ্লব সৃষ্টিতে ইন্ধন সম্পর্কে যে ইঙ্গিত দান করেছিলেন তা বাংলাদেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য ।
৪. অর্থনৈতিক অসমতা : এরিস্টটল নির্দেশিত বিপ্লবের সাধারণ কারণ, বিশেষ কারণসমূহ প্রভৃতি আধুনিক কালেও সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রে যখন চরম সামরিক ও অর্থনৈতিক অসমতা দেখা দেয় তখনই বিপ্লব সংঘটিত হয় ।
৫. ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষা : শাসিতদের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে শাসকগণ যখন সরকারি কাজে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিজের পরিচিত লোকজনদের নিয়োগ দেয় তখন বিপ্লব হয় ।
৬. বিপ্লব নিবারণের উপায়ে প্রযোজ্যতা : এরিস্টটল বিপ্লব নিবারণের জন্য যেসব সুপারিশমালা প্রদান করেছেন তার অল্প কিছু বাদ দিলে তা আধুনিক কালে সমভাবে প্রযোজ্য। তাই অন্যান্য তত্ত্বের ন্যায় বিপ্লব তত্ত্বের ক্ষেত্রেও তার সার্বজনীন ও বাস্তবধর্মী মনোভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বিপ্লব তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা : বাস্তববাদী দার্শনিক এরিস্টটলের চিন্তাধারা তৎকালীন সমাজব্যবস্থার ওপর গড়ে উঠলেও ঐ চিন্তাধারা শুধু তার যুগেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা কালোত্তীর্ণ হয়ে আজকের সমাজেও সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধনিকতন্ত্রসহ সব প্রকার শাসনব্যবস্থায় যেসব বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে তা এরিস্টটল নির্দেশিত প্রেক্ষাপটেই হচ্ছে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় আজ হতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে এরিস্টটল বিপ্লবের যেসব কারণ বর্ণনা করে গেছেন তা আজও সত্য ও সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিপ্লব যেকোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ। কারণ বিপ্লব রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোতে আঘাত হানে। এরিস্টটল বিপ্লবের কারণ বর্ণনা করতে যে গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বাস্তববাদী
দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন, বিপ্লব প্রতিরোধের পন্থা নির্দেশ করতে গিয়েও ঠিক অনুরূপ ক্ষমতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। এরিস্টটল তার বিপ্লব তত্ত্বের মধ্যে বিপ্লবের কারণ, নিবারণের পদক্ষেপসহ সবকিছু তুলে ধরেছেন ।
০৫. এরিস্টটলের মতে বিপ্লবের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়সমূহ কী কী?
অথবা, এরিস্টটলের মতে বিপ্লবের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়সমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল সরকার ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন। এই পরিবর্তন তাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে চরম হতাশা ও দুর্দশা বয়ে আনত।
এই পরিস্থিতিতে আশার আলো হয়ে জাতিকে হতাশার অন্ধকার দূর করেন এরিস্টটল। রাষ্ট্রের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে তার বিপ্লব তত্ত্ব অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে। বিপ্লব সম্পর্কে তিনি তার মতামতের ব্যাখ্যা ও নিবারণের উপায়সমূহ সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করেছেন।
এরিস্টটলের মতে বিপ্লবের কারণসমূহ : এরিস্টটল তার ”The Politics’ এর প্রথম পুস্তকে বহু গবেষণালব্ধ বিপ্লবের কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তিনি বিপ্লবের কারণকে ২ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ক. বিপ্লবের সাধারণ কারণ ও খ বিপ্লবের বিশেষ কারণ। নিম্নে কারণগুলো বর্ণনা করা হলো-
ক. বিপ্লবের সাধারণ কারণ : এরিস্টটলের বিপ্লবের সাধারণ কারণ হিসেবে নিম্নের কারণগুলো আলোচনা করা হলো-
১. মনস্তাত্ত্বিক উদ্দেশ্য : যখন একদল লোক মনে করে যে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মতোই তারা যোগ্যতার দিক দিয়ে সমপর্যায়ে অথচ শাসন ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। এই অসাম্যই বিপ্লবের ইন্ধন যোগায়।
২. মুনাফা ও সম্মান লাভের প্রত্যাশা : অনেক সময় ন্যায়বিচারের আদর্শের সাথে সম্মান ও মুনাফা লাভের বাসনা জরিত থাকে। তবে মুনাফা ও সম্মান লাভের পিছনে যে ক্ষতি ও অসম্মান লুকিয়ে থাকে তা এড়ানোর জন্যও বিপ্লব ঘটতে পারে।
৩. ক্ষমতার অপব্যবহার : এরিস্টটল বলেন যে শাসক যখন জনকল্যাণ বাদ দিয়ে সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করে নিজেরা মুনাফা অর্জন করে তখন জনগণ বিপ্লবী হয়ে ওঠে।
৪. সম্পদের অসম বণ্টন : রাষ্ট্রের অল্প কিছু লোকের হাতে
বেশির ভাগ সম্পদ থাকলে অন্যরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় । যার ফলে তারা বিপ্লবে জড়িয়ে পড়ে। ৫. দুর্নীতি : রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি যখন দুর্নীতির মাধ্যমে
জনগণের সম্পত্তি বেদখল করে তখন যদি জনগণ বিরোধী হয় তবে বিপ্লব অনিবার্য ।
৬. শাসকদের চক্রান্ত : শাসকবর্গ যদি গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্র কায়েম করার চেষ্টায় লিপ্ত হয় তখন জনগণ বিদ্রোহে ফেটে পড়ে ফলে বিপ্লব দেখা দেয়
৭. নির্বাচন চক্রান্ত : রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তারা পুনঃনির্বাচনের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে বা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিলে অন্যান্যরা বিদ্রোহের মাধ্যমে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে
খ. বিপ্লবের বিশেষ কারণ : এরিস্টটলের বিপ্লবের বিশেষ কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিপ্লব : শাসক শ্রেণি ও গণবক্তারা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে ধনীদের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন তখন ধনীরা একত্রিত হয়ে বিপ্লব ঘটায় ।
২. ধনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিপ্লব : ধনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার যখন জনগণের প্রতি অন্যায়ভাবে জুলুম অত্যাচার নির্যাতন চালায় এবং অহেতুক মামলার মাধ্যমে হয়রানিমূলক কার্যে লিপ্ত হয় তখন বিপ্লব ঘটে।
৩. অভিজাততন্ত্রে বিপ্লব : অভিজাততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত শাসক শ্রেণির সংখ্যা কমে আসলে এবং পদ ও সম্মান একচেটিয়াভাবে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত হলে বিপ্লব ঘটে।
৪. পলিটির মধ্যে বিপ্লব : পলিটির মধ্যে ভারসাম্য ব্যবস্থার অভাব হলে বিপ্লব সংঘটিত হয়।
৫. স্বৈরতন্ত্রে বিপ্লব : ভিন্ন চারিত্রের প্রতিবেশী দেশের কারণে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে। এছাড়া স্বৈরশাসকদের দমনপীড়নের কারণে জনগণের মনে যে ঘৃণা ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয় তার ফলেও বিপ্লব ঘটতে পারে।
৬. রাজতন্ত্রে বিপ্লব : রাজা বা শাসক যখন মধ্যম পন্থা অবলম্বনে ব্যর্থ হয় তখন রাজতন্ত্রে বিপ্লব ঘটে ।
৭. অতি ধনী ও অতি দরিদ্র শ্রেণি : রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা না গেলে একটা অপূর্ণ ভারসাম্যের ফলে বিপ্লবের সূচনা হতে পারে।
৮. শাসকের অসতর্কতা : এরিস্টটল বলেন রাষ্ট্রের শাসককে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে তা না হলে বিপ্লব অনিবার্য।
এরিস্টটলের মতে বিপ্লব প্রতিরোধের উপায়সমূহ : এরিস্টটল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ”The Politics’ এ বিপ্লব সংঘটন ও তার প্রতিকার বিশ্লেষণে বেশকিছু সুসংবদ্ধ ও সাহসিক পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন।
নিম্নে বিপ্লব প্রতিকারের বিভিন্ন উপায়সমূহ আলোচনা করা হলো-
১. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : অত্যধিক রাজনৈতিক ক্ষমতা কেবল একজন ব্যক্তি বা কিছু সংখ্যক ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত না রেখে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বিপ্লব নিবারণ সম্ভব ।
২. সমতা আনয়ন : রাষ্ট্রে যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বজায় থাকে শাসককে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাজের সব মানুষকে সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে ।
৩. রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব : এরিস্টটল মনে করেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা জীবনযাত্রার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর সে জন্য এরিস্টটল পলিটি বা মধ্যতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মধ্যবিত্তের হাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভার অর্পণ করতে চেয়েছেন ।
৪. গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রদর্শন : শাসনব্যবস্থায় যারা অংশগ্রহণ করে তাদের এবং নিজেদের আচরণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
৫. আইনের প্রতি শ্রদ্ধা : আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিপ্লব প্রতিহত করা সম্ভব। জনগণ যখন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তখন বিপ্লবের সম্ভাবনা কমে যায়। তাই এরিস্টটল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কথা বলেছেন ।
৬. ধনীদের প্রতি সুবিবেচনা প্রদর্শন : রাষ্ট্রে ধনিকশ্রেণিদের প্রভাব লক্ষণীয় । তাদের অবজ্ঞা করলে তারা একত্রিত হয়ে বিপ্লব ঘটাবে তাই এরিস্টটল ধনীদের প্রতি সুবিবেচনা প্রদর্শন করতে বলেছেন।
৭. স্বার্থপরতা ত্যাগ : ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন শ্রেণিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ লাভের ব্যাপারে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
৮. সাংবিধানিক শিক্ষা : রাষ্ট্রের নাগরিকদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সংবিধান সম্পর্কে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করতে হবে যাতে করে তারা রাষ্ট্রের যাবতীয় মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এর ফলে বিপ্লব নিবারণ সহজ হবে।
৯. সরকারি সাংগঠনিক ব্যবস্থা : সরকারের সাংগঠনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা উচিত যাতে রাজনৈতিক বা সরকারি অফিসারগণ তাদের অফিস থেকে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ বা অবৈধ স্বীকৃতি গ্রহণ করতে না পারে ।
১০. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ : রাষ্ট্রের সব জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বিপ্লব প্রতিরোধ করা যায়। সেজন্য জনগণকে প্রয়োজনবোধে মিথ্যা বিবাদের ভয় প্রদর্শন এবং তাদেরকে দেশ রক্ষার কাজে প্রহরীর মতো মোতায়েন রাখতে হবে।
১১. যোগ্যতার স্বীকৃতি : রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের ওপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং গুণী ও যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে উপযুক্ত স্বীকৃতি লাভ করতে পারে শাসকদের সেদিকে নজর দিতে হবে।
১২. শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক : রাষ্ট্রের শাসিতরা যখন তাদের শোষণের অবস্থা বুঝতে পারে তখনই বিপ্লব ঘটায়। তাই শাসক ও শাসিতদের মধ্যে সুসম্পর্ক “None should be treated unjustly” তৈরি করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৩. সরকারি অফিসের ভাগাভাগি : বিভিন্ন যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে সরকারি অফিসগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত। তাহলে বিপ্লবের সম্ভাবনা কম হবে।
১৪. আগ্রাসন দূর করা : এরিস্টটল নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মাঝে মাঝে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন যা কখনও কখনও আগ্রাসনে রূপ নেয়। এজন্য তিনি ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা যেকোনো আগ্রাসন সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করে।
১৫. শাসকের কর্মের ওপর দৃষ্টি শাসক শ্রেণির ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত নয় কারণ তাতে জনগণের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শাসকের কর্মের প্রতি সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
১৬. সমন্বিত সরকার : ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সমন্বয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বিপ্লবের সম্ভাবনা কম থাকে। কারণ এতে সরকার ব্যবস্থায় ভারসাম্য বিরাজ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এরিস্টটল রাষ্ট্রে নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তাতেও হস্তক্ষেপ করার কথা বলেছেন।
এরিস্টটলই প্রথম ব্যক্তি যিনি বিপ্লবের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করেছেন এবং বিপ্লব প্রতিরোধের জন্য কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। বিপ্লব নিবারণের জন্য তিনি যেসব পন্থা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করেছেন তা আজও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
০৬. এরিস্টটলকে বাস্তববাদী দার্শনিক বলার কারণসমূহ বিশ্লেষণ কর ।
অথবা, বাস্তববাদী দার্শনিক হিসেবে এরিস্টটলের অবদান মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : মানবসভ্যতার বিকাশ সাধনে যেসব মনীষী তাদের অবদানের মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন গ্রিক সভ্যতা, সংস্কৃতি ও দর্শনের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র। রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রতত্ত্বের ক্ষেত্রে এরিস্টটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক ।
কেননা এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার ওপর লেখনী ছিল অত্যন্ত মজবুত ও যুক্তিনির্ভর। তিনি প্লেটোর কাল্পনিক পদ্ধতির অনুসরণ না করে বাস্তব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন বলে তাকে বাস্তববাদী দার্শনিক বলা চলে ।
এরিস্টটলকে বাস্তববাদী দার্শনিক বলার কারণ : এরিস্টটল তার বাস্তবসম্মত রাষ্ট্রের সমর্থনে যেসব যুক্তি ও কারণ উপস্থাপন করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে তাকে বাস্তববাদী দার্শনিক বলা যায় । তার যুক্তি ও কারণ নিম্নে আলোকপাত করা হলো—
১. রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের মর্যাদায় উন্নীতকরণ এরিস্টটলের অনেক মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্য আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রতত্ত্বের ভিত্তি রচনা করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
বিশেষ করে রাষ্ট্রতত্ত্বের গবেষণাকর্মে তিনি যে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তা নিঃসন্দেহে মৌলিকত্বের নিদর্শন। তিনি রাষ্ট্রদর্শনে সর্বপ্রথম আরোহ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। তার এ গবেষণা পদ্ধতির ফলে রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় আলোচনার একটা বিজ্ঞানের সমপর্যায়ভুক্ত হতে পেরেছে।
২. রাষ্ট্র মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান : রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে মানবজীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করে তিনি রাষ্ট্রকে এক মানবকল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন সাম্রাজ্য বিস্তার ও সম্পদ বৃদ্ধি এর একমাত্র কাজ না হয়ে রাষ্ট্রের আসল কাজ হবে জনগণ যাতে উন্নত ও মহৎ জীবনযাপন করতে পারে সে দিকে সুদৃষ্টি দেওয়া।
রাষ্ট্র এমন পরিবেশ সৃজন করবে যা জনগণের জ্ঞান রাজ্যের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলতে, সততা উদ্দীপিত করতে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। মানবকল্যাণমূলক কাজের প্রতি রাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্ধারণে এরিস্টটলের বাস্তবসম্মত ধারণা ছিল।
৩. শিক্ষার সম্প্রসারণ : এরিস্টটল বলেন, শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব। তার মতে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের মহত্তর জীবনের বিকাশ সাধন করা। তাছাড়া ধনী ও দরিদ্রের মাঝে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা বলা হয়েছে তা মূলত শিক্ষার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত তাই এরিস্টটলের এ ব্যবস্থা বাস্তব সম্মত হয়েছে।
৪. পলিটি বা মধ্যবিত্তের শাসনব্যবস্থা : এরিস্টটল তার সর্বোত্তম বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রের ধারণায় মধ্যবিত্তের শাসনের কথা বলেছেন । তিনি মনে করতেন যেকোনো ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম। ধনী ও দরিদ্রের সমন্বয় সাধনকারী শ্রেণিকে তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দান করে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা সম্প্রসারিত করেছেন ।
৫. আইনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা আইনের একটি নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদার সত্তা বিদ্যমান। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলমান। এরিস্টটল ব্যক্তিগত সার্বভৌমত্বের চেয়ে আইনের শাসন বা সার্বভৌমত্বের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
কোনো ব্যক্তি যতো শক্তিশালীই হোক না কেন তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রকাশ পায় না। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রকাশ পায় আইনের শাসনের মাধ্যমে । এটি একটি আধুনিক ও বাস্তবসম্মত ধারণা।
৬. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি: সরকারের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে এরিস্টটল সম্পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন। রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা একজনের হাতে ন্যস্ত থাকলে যে সমস্যা দেখা দেয় তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তার মতে, একজনের হাতে সরকারের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের সূচনা” অবসম্ভাবী হয়ে পড়ে। বর্তমানে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরাও এরিস্টটলের এ মতবাদের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেন। তাই তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রচলন করেন।
৭. শ্রেণিসংগ্রামের ধারণা : এরিস্টটলের চিন্তাধারায় হেগেলীয় মতাদর্শ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, মার্কসীয় অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদ ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বীজ নিহিত ছিল। তিনি শ্রেণিসংগ্রাম অর্থাৎ ধনী, দরিদ্রের মাঝে বিদ্যমান সংঘাতের কথা স্বীকার করেন। তার চিন্তাধারায় শ্রেণিসংগ্রামের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
৮. সরকারের প্রকারভেদ : এরিস্টটল রাষ্ট্রের মঙ্গলার্থে গুণগত বিচারে সরকারের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। তিনি মনে করতেন, সরকার উত্তম হলে তা রাষ্ট্রের জনগণের জন্য কল্যাণকর এবং সরকার অযোগ্য হলে তা জনগণের জন্য অহিতকর। সরকার শুদ্ধ ও স্বাভাবিকভাবে চললে মঙ্গলজনক আর বিকৃতভাবে চললে তা ভীতিকর ও অকল্যাণকর।
৯. বিপ্লব সম্পর্কিত মতবাদ : প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এরিস্টটল বিপ্লবের যে কারণ নির্দেশ করেছেন তা আজও বাস্তব বলে প্রমাণিত। রাষ্ট্রে যখন চরম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দৃশ্যমান হয় তখনই বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে।
এছাড়া বিপ্লব প্রতিরোধ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের স্থায়িত্বের জন্য যে উপায়ে কথা বলা হয়েছে তা আজও অনুসরণীয়। তার বিপ্লব সম্পর্কিত ধারণা তৎকালীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও বর্তমানে তা অম্লান হয়ে আছে।
১০. নিয়মতান্ত্রিকতাবাদের প্রবর্তন : এরিস্টটল নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি আইনের শাসনের মাধ্যমে যে নিয়মতান্ত্রিক সরকারের সূচনা করেন তা বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তাই এরিস্টটলকে নিয়মতান্ত্রিকতাবাদের জনক বলা হয় ৷
১১. অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক প্রভাব : এরিস্টটলের মতে, রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় অর্থনীতি ও ভৌগোলিক প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। সরকারের প্রকৃতি ও স্বরূপ নির্ধারণে অর্থনৈতিক অবস্থা, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থা নিয়ামত হিসেবে কাজ করে থাকে। একথা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ অকপটে স্বীকার করেন ।
১২. পরবর্তী প্রজন্মের ওপর প্রভাব এরিস্টটল তার রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা ও ভাবাদর্শের দ্বারা পরবর্তী প্রজন্মের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তিনি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রের কার্যাবলির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এর বাস্তবসম্মত একক নির্দেশনা প্রদান করেন । তাই তিনি পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম পুরোধা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামান্য কিছু মতবাদ ব্যতীত বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এরিস্টটলের সাথে অন্য সব ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটলের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে বাস্তববাদী দার্শনিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
তার বহু বছর আগের মতবাদ আজও অম্লান রয়েছে। তার অধিকাংশ যুক্তি ও মতবাদ বর্তমানেও সমাদৃত। দার্শনিকগণ যুগে যুগে তার চিন্তাধারা ও দর্শন থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছে। তিনি নিঃসন্দেহে বাস্তববাদী দার্শনিকের সফল দৃষ্টান্ত।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর