(ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর: ৩য় অধ্যায় এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
(ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৩ : মৌলিক ধারণাসমূহ
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
৩.০১. সার্বভৌমত্ব কী? সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সার্বভৌমত্ব বলতে কী বুঝ? সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা সার্বভৌমিকতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের চারটি মৌলিক উপাদানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম একটি উপাদান। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রকে অন্যান্য সংগঠন থেকে ভিন্নতা প্রদান করে ।
সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলেই কোনো রাষ্ট্র তার জনগণ ও অন্যান্য সংগঠনের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে। এরিস্টটল সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে বুঝিয়েছিলেন।
সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। যে ক্ষমতা বলে কোনো রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরের অন্যান্য সংগঠন হতে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর বলে বিবেচিত হয় এবং সকল মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করে।
সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে এবং জনগণ সেই আইন মেনে চলে অর্থাৎ, রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ, আদেশ প্রদান, বিচার কার্য পরিচালনা করা, অন্যান্য সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে বলা হয় সার্বভৌমত্ব।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson ) বলেন, “সার্বভৌমত্ব আইন সৃষ্টি করার এবং আইনের ক্ষমতা বাস্তবায়নের একটি দৈনন্দিন কার্যকরী শক্তি।” গ্রোটিয়াস (Grotious) এর মতে, “সার্বভৌমত্ব হলো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যার হাতে এ ক্ষমতা ন্যস্ত, তার কার্যকলাপ অন্য কারও আজ্ঞাধীন নয় এবং তার ইচ্ছাই চূড়ান্ত।”
জেলেনিক (Jellinek) সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “সার্বভৌমিকতা রাষ্ট্রের সেই বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে রাষ্ট্র স্বীয় ইচ্ছা ব্যতীত আইনগতভাবে বাধা থাকতে পারে না বা নিজ ব্যতীত অপর শক্তি কর্তৃক সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।”
জন অস্টিন (John Austin) বলেন, “যদি কোনো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগোষ্ঠী অপর কোনো ঊর্ধ্বতনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করে এবং সমাজের বেশির ভাগ লোকের আনুগত্য লাভ করে, তা হলে এ সমাজে ঐ নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি সার্বভৌম এবং উক্ত সমাজ একটি রাজনৈতিক ও স্বাধীন সমাজ।”
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি,অধ্যায়৩:মৌলিক ধারণাসমূহ
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
গেটেল (Gettell) এর মতে, “সার্বভৌমিকতা সকল প্রকার আইনকে অনুমোদন দান ও সকল প্রকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।” সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ :
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. স্থায়িত্ব : সার্বভৌম ক্ষমতা চিরস্থায়ী। রাষ্ট্রের অন্যান্য উপাদান ধ্বংস বা পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা কোনো দিন ধ্বংস হয় না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্যান্য যেসব সংগঠন আছে তাদের ক্ষমতা ধ্বংস হয় বা কমে যায়। কিন্তু রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা চিরস্থায়ী। সার্বভৌম ক্ষমতা ধ্বংস হলে, সব রাষ্ট্রই বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২. নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা : রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতা বলে তার জনগণ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের অবাধ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনো বিষয় বা শক্তি যাতে অন্যায় বা নিরাপত্তা, শান্তিবিরোধী কাজ না করতে পারে, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতা বলে তা নিয়ন্ত্রণ করে ।
৩. সর্বজনীনভাবে প্রতিপালিত : রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনো মানুষ বা সংগঠন সার্বভৌম ক্ষমতাকে অস্বীকার করে না বা অমান্য করার সাহস পায় না । সবাই সার্বভৌম ক্ষমতাকে মেনে চলে। এজন্য বলা যায় যে, সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বজনীনভাবে প্রতিপালিত ।
৪. বিভাজনহীনতা সার্বভৌম ক্ষমতা অবিভাজ্য, এই ক্ষমতাকে বিভাজিত করে কয়েক জনের নিকট হস্তান্তর করা যায় না। সার্বভৌম ক্ষমতা বিভাজন করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিনষ্ট হয়ে পড়ে।
৫. মৌলিক ও অকৃত্রিম : সার্বভৌম ক্ষমতা হলো রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতা । এটা কোনো সৃষ্টি করা ক্ষমতা নয় । এ ক্ষমতা অন্য কোনো ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল নয়। এটিই আদি ও মৌলিক ক্ষমতা ।
৬. সর্বজনীন : সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বজনীন। রাষ্ট্রের কোনো বিষয় বা ব্যক্তি সার্বভৌমের আওতার বাইরে নয়। রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতা বলে সবার ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে। সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর সার্বভৌম ক্ষমতা সমানভাবে প্রযোজ্য।
সবাইকে রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হয়। আইন না মানলে রাষ্ট্র শাস্তির আওতায় আনার ক্ষমতা রাখে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বিদেশিদের ওপরও সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
৭. অহস্তান্তরযোগ্য : সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্র অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রয়োগ করতে পারে না। অর্থাৎ সার্বভৌম ক্ষমতাকে রাষ্ট্র হস্তান্তর করতে পারে না। এ ক্ষমতা অস্তান্তরযোগ্য।
সার্বভৌম ক্ষমতা, বিভাজিত হওয়া মানে রাষ্ট্রকে এর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিচে নামিয়ে আনা। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায় তাহলে কেউ তা মেনে নিবে না। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে । তাই সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরযোগ্য নয় ।
৮. অদ্বিতীয় : সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের একক ও অদ্বিতীয় ক্ষমতা। দেশের অন্য কোনো সংগঠন সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করতে পারে না। তাই বলা হয় যে, সার্বভৌম ক্ষমতা হলো রাষ্ট্রের একক ও অদ্বিতীয় ক্ষমতা ।
৯. রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ : সার্বভৌম ক্ষমতা কোনো রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য সার্বভৌম ক্ষমতা অপরিহার্য।
কোনো বাইরের দেশ যাতে রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে না পারে সে নিরাপত্তা সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করে। স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, বাহ্যিক সার্বভৌমত্বই হলো রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ।
১০. বৈধ ক্ষমতা : দেশের জনগণ প্রতিষ্ঠানের ওপর বৈধভাবে কর্তৃত্ব বজায় রাখাকেই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বলে। তার মানে এই নয় যে, রাষ্ট্র অত্যাচারীরূপ ধারণ করবে। নিজের খেয়ালখুশি মতো মানুষের ওপর অনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবে। সার্বভৌম, ক্ষমতা রাষ্ট্রকে স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষমতা দেয়নি, মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষমতা দিয়েছে।
১১. রাষ্ট্রের সর্বত্র প্রযোজ্য : সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির ওপর কার্যকর নয়। কোনো রাষ্ট্র এর পুরো এলাকাকেই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে । আবার, দেশের সব জনগণ এবং বিদেশে অবস্থানকারী দেশের নাগরিকদের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করার ক্ষমতা সার্বভৌম সংরক্ষণ করে ।
১২. স্বীকৃত ক্ষমতা : কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা হলো স্বীকৃত ক্ষমতা। দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীকৃতি দেয়। এতে বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নয় ।
১৩. রক্ষিত ক্ষমতা : সার্বভৌম ক্ষমতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকে থাকে না। তাকে দেশের আইনকানুন দ্বারা টিকিয়ে রাখতে হয়। সার্বভৌম ক্ষমতার অনেক রক্ষাকবচ রয়েছে।
১৪. রাষ্ট্রগঠনে অপরিহার্য : নির্দিষ্ট জনসংখ্যা যুক্ত কোনো নির্দিষ্ট এলাকার রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য প্রয়োজন সার্বভৌম ক্ষমতা। অর্থাৎ রাষ্ট্র গঠনে সার্বভৌম ক্ষমতা অপরিহার্য ।
১৫. সম্মানিত : দেশের প্রত্যেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সার্বভৌম শক্তির প্রতি আনুগত্য দেখায়। তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে সর্বদা সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকে ।
১৬. রাষ্ট্রের একতা আনয়ন: সার্বভৌম ক্ষমতা দেশের সব মানুষকে একতাবদ্ধ করে তোলে । দেশের মানুষের জাতীয়তাবাদ সার্বভৌম ক্ষমতা দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ জনগণের একতা আনয়নে সার্বভৌমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
১৭. জাতি গঠনে সহায়তা: কোনো ধরনের জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীকে সার্বভৌম ক্ষমতা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। কোনো জাতি তখনই সুপ্রতিষ্ঠিত হয় ও বিশ্ব দরবারের বিবেচিত হয় যখন সে সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের চরম ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতাই রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে ব্যতিক্রম ও শক্তিশালী করে তোলে। এ সর্বোচ্চ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় । সার্বভৌমত্ব ব্যতীত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না ।
৩.০২. সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ আলোচনা কর।
অথবা, সার্বভৌমত্বের প্রকারভেদ বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সার্বভৌমত্বের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্র গঠনে যে চারটি মৌলিক উপাদান রয়েছে সার্বভৌমত্ব তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রকে সব প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বে উত্তোলিত করার জন্য যে প্রত্যয় ভূমিকা পালন করে তাকেই বলা হয় সার্বভৌম ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতা হলো রাষ্ট্রের সর্বোত্তম বা সর্বোচ্চ ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তা প্রয়োগ করে বিভিন্নভাবে। এসব বিভিন্নতার ভিত্তিতেই সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ দেখা যায় । রাষ্ট্রভেদে সার্বভৌমত্ব বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে।
সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ : সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ পরিদৃষ্ট হয়। সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হলে এর বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন। নিম্নে সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন রূপ আলোচনা করা হলো-
ক. অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরে যেসব ক্ষমতা ভোগ করে বা কর্তৃত্ব বজায় রাখে তাকে অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব বলা হয় নিম্নে এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো—
১. নাগরিকদের ওপর কর্তৃত্ব : অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র দেশের জনগণের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখে। দেশের জনগণ রাষ্ট্রের আইনকানুন, নিয়মনীতি মেনে চলে ।
২. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ : সার্বভৌম ক্ষমতা দ্বারা রাষ্ট্র বা সরকার আইন প্রণয়ন করে। সে আইন হয় সর্বোচ্চ আইন । জনগণ রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ করলে দোষী সাব্যস্ত হয়।
৩. প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে : সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোত্তম প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত হয়। অন্য সব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের নিয়মাবলি মেনে চলে ।
খ. বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব : বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের ফলে রাষ্ট্র যে ধরনের ক্ষমতা পায় তা নিম্নরূপ :
১. চুক্তি সম্পাদনের অধিকার : বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করতে পারে।
২. স্বাধীন বৈদেশিক নীতি : সার্বভৌম ক্ষমতা বলে কোনো রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে তার বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করতে পারে। এতে অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠান হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
৩. আক্রমণ হতে রক্ষা : বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতা থাকলে কোনো দেশকে অন্য কোনো দেশ আক্রমণ করতে পারে না। এতে সে আক্রমণকারী দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের বাধার সম্মুখীন হয়।
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
গ. আইনগত সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সার্বভৌম আদেশ ও ক্ষমতাবলেই আইনের স্বীকৃত হয় এবং যা আদালত দ্বারা বিবেচিত হয় তাকে আইনগত সার্বভৌমত্ব বলে। নিম্নে এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
১. চরম ও শর্তহীন : আইনগত সার্বভৌম ক্ষমতা হলো রাষ্ট্রের চরম ও ২. নীতি নৈতিকতা জনমত দ্বারা প্রভাবিত নয় : রাষ্ট্র যে ক্ষমতা বলে আইন প্রণয়ন করে সে ক্ষমতা নীতি নৈতিকতা বা জনমত দ্বারা প্রভাবিত হয় না। বাস্তবতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনগত সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা হলেন জন অস্টিন।
ঘ. রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্রের যে ক্ষমতার প্রতি দেশের জনগণ আনুগত্য প্রদর্শন করে তাকে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব বলা হয়। অধ্যাপক ডাইসি বলেন, “রাজনৈতিক সার্বভৌম হলো সে সংস্থা যার ইচ্ছার প্রতি নাগরিকরা শেষ পর্যন্ত আনুগত্য প্রকাশ করে।” রাজনৈতিক সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকলে আইনগত সার্বভৌমত্ব অকার্যকর। নিম্নে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো—
১. ভোটদান : ভোটদানের মাধ্যমে কোনো দেশের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতি দেশের মানুষ আনুগত্য প্রকাশ করে। এটা নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার ও কর্তব্য।
২. মতপার্থক্য : দেশের কোন অংশটি রাজনৈতিক সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। কেউ বলেছেন নির্বাচকমণ্ডলীই হচ্ছে রাজনৈতিক সাবভৌম। আবার কেউ সমগ্র জনগণকেই রাজনৈতিক সার্বভৌম বলে মত প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে জনমতকেই রাজনৈতিক সার্বভৌমের সমার্থক বলে মনে করেন।
ঙ. প্রকৃত সার্বভৌম : যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে তাদের প্রকৃত সার্বভৌম বলে দুই প্রকার প্রকৃত সার্বভৌম নিম্নে দেওয়া হলো—
১. সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী : সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। তার ইচ্ছায় মন্ত্রিসভা, আইনসভা পরিচালিত হয়ে থাকে।
২. রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি : যেসব দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান, সেসব দেশের রাষ্ট্রপতি প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। যেমন- আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ।
চ. নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব : যে ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের হাতে নামমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে কিন্তু সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে অন্য কেউ তাকে নামসর্বস্ব সার্বভৌমত্ব বলা হয়।
১. সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি : সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নামেমাত্র রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। কিন্তু তিনি সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তাকে সহজেই অভিশংসিত হতে হয়। যেমন- বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
ছ. বাস্তব সার্বভৌমত্ব বাস্তব সার্বভৌমত্ব বলতে চরম ক্ষমতাকে বুঝানো হয় যা জনগণ মানতে বাধ্য। নিম্নে এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
১. কর্তৃত্ববাদী : এই ধরনের সার্বভৌম শক্তি গণতান্ত্রিক নয়। তারা জোর জবরদস্তি করে নিজেদের ক্ষমতা অর্জন করে। জনগণকে তাদেরকে মানতে বাধ্য করা হয়।
২. বলপ্রয়োগ : যে ব্যক্তি এ সার্বভৌম শক্তিকে অস্বীকার তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এ সার্বভৌমত্ব টিকে থাকে । করে,
জ. আইন অনুমোদিত সার্বভৌমত্ব : বৈধ, আইনসম্মতভাবে যে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়, তাকে আইন অনুমোদিত সার্বভৌম বলে । নিম্নে এর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ হলো—
১. গণতান্ত্রিক : এ সার্বভৌম ক্ষমতা গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা ভোগের অধিকার পায় । দেশের মানুষ তাদের নির্বাচিত করে।
২. ইচ্ছাকৃত : দেশের জনগণ নিজস্ব ইচ্ছায় আইনানুমোদিত সার্বভৌমত্বকে মেনে চলে । আইনসংগতভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারই আইনানুগ সার্বভৌম ।
ঝ. জনগণের সার্বভৌমত্ব : এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো জনগণই সার্বভৌম। জনগণের সার্বভৌমত্ব দ্বারা জনগণের ক্ষমতাকে বুঝায়, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সার্বভৌমত্বকে বুঝায় না। জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে, গণভোটের মাধ্যমে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সার্বভৌম ক্ষমতার অনেকগুলো রূপ রয়েছে। তবে তা রাষ্ট্রের ধরনভেদে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রে বিভিন্ন রূপের সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান। গণতান্ত্রিক দেশে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব, কর্তৃত্ববাদী দেশে চরম বা বাস্তব সার্বভৌমত্ব দেখা যায়।
৩.০৩. জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, সার্বভৌমত্ব বলতে কী বুঝ? জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সার্বভৌমত্বকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে জন অস্টিনের অবদান অপরিসীম। সার্বভৌমত্বের ব্যাখ্যাকর্তাদের মধ্যে জন অস্টিন অন্যতম। তিনি আইনের ওপর ভিত্তি করে সার্বভৌমত্বের রূপ ব্যাখ্যা করেছেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জন অস্টিন আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে চরম বা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করে। এ কারণে তার তত্ত্বকে সমালোচনা করা হয়। তবে কোনো দেশকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অস্টিনের তত্ত্ব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সার্বভৌমত্ব : সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা যে ক্ষমতা বলে কোনো রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে অন্যান্য সংগঠন হতে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর বলে বিবেচিত হয় এবং সকল মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করে।
সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে এবং জনগণ সেই আইন মেনে চলে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ, আদেশ প্রদান, বিচার কার্য পরিচালনা করা, অন্যান্য সংগঠন নিয়ন্ত্রণ কারার ক্ষমতাকে বলা হয় সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্বের দুটি দিক রয়েছে। যথা ১. অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ও ২. বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব।
১. অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব: এর ফলে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে জনগণের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
২. বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব: বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা, যার ফলে রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে এবং অন্যদেশের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে।
জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব : সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞায় জন অস্টিন বলেন, “যদি কোনো সুনির্দিষ্ট মানবীয় কর্তৃপক্ষ অপর কোনো কর্তৃপক্ষের বশ্যতা স্বীকারে অভ্যস্ত না হন অথচ সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তির আনুগত্য সাধারণত লাভ করেন তাহলে ঐ সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঐ সমাজের সার্বভৌম শক্তি হবেন এবং উক্ত কর্তৃপক্ষসহ ঐ সমাজকে রাজনৈতিকভাবে গঠিত ও স্বাধীন সমাজ বলা হবে।”
অস্টিন তার ধারণায় বলেন, দেশের যে ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে এবং মানুষকে সেই আইন মানতে বাধ্য করে, সেটিই সার্বভৌম ক্ষমতা। নিম্নে জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো—
১. ঊর্ধ্বতনের আদেশ : জন অস্টিন ঊর্ধ্বতনের আদেশ প্রদানের মধ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা দেখেছেন। তার মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা বলে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি অধস্তনকে আদেশ প্রদান করে ।
২. আইন প্রণয়নকারীই সার্বভৌম : জন অস্টিন কেবল মাত্র’ আইন প্রণয়নকারীকেই সার্বভৌম বলেছেন। যে আইন প্রণয়ন করে এবং প্রয়োগ করে সেই হলো সার্বভৌম শক্তি ।
৩.অবিভাজ্য ক্ষমতা : জন অস্টিন সার্বভৌমের হাতে ক্ষমতা অবিভাজ্যভাবেই অর্পণ করেছেন। তিনি তার তত্ত্বে আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ ও বিচার কার্যের ক্ষমতা সার্বভৌমত্বকে অর্পণ করেছেন ।
৪. গণতন্ত্র বিরোধী : অস্টিন বলেছেন, সার্বভৌমের আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। সার্বভৌম যে আইন প্রণয়ন করে, জনগণকে তাই মানতে বাধ্য থাকতে হবে। তাই জন অস্টিনের সার্বভৌমকে গণতন্ত্রের বিরোধী বলা হয়।
৫. আনুগত্য : জন অস্টিন বলেছেন, সার্বভৌম কারও প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে না। বরং সমাজের সকলেই তার নিকট আনুগত্য প্রদর্শন করে থাকে ।
৬. সংঘ ও প্রতিষ্ঠান : জন অস্টিনের মতে রাষ্ট্রই হলো একমাত্র সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান । রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে পারবে। কারণ ঐ প্রতিষ্ঠানের সার্বভৌম ক্ষমতা নাই ।
৭. স্বাধীন সমাজ : জন অস্টিন বলেছেন, যে সমাজে সার্বভৌম বিরাজমান, সেই সমাজ স্বাধীন ও রাজনৈতিক সমাজ। সমাজের স্বাধীনতাকে সার্বভৌমই টিকিয়ে রাখে।
৮. মানবীয় ক্ষমতা : জন অস্টিনের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত নয়। তা মানবীয় ক্ষমতা। তিনি মানুষকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে জায়গা দেন যা মধ্যযুগে চার্চদের সার্বভৌমত্বের বিরোধী। এগুলো হলো অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য।
জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের সীমাবদ্ধতাসমূহ/ত্রুটিসমূহ জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের বিভিন্ন সমালোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো—
১. জনগণের সার্বভৌমত্বের বিরোধী : কল্যাণমূলক বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। জনগণই সার্বভৌম এটাই হলো জনগণের সার্বভৌমত্বের মূল কথা। কিন্তু অস্টিন জনগণকে কোনো রকমের ক্ষমতা দেননি। জনগণ নিঃশর্তভাবে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষকে মেনে চলে তাদের কোনো স্বাধীনসত্তা নেই
২. অধস্তনের পরাধীনতা : জন অস্টিনের মতে, দেশের অধস্তন ব্যক্তিরা সবাই দাস বা প্রজার মতো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশকে আইন মনে করে মেনে চলবে। তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। তাই অস্টিন তার তত্ত্ব দ্বারা অধস্তনের পরাধীনতা ডেকে এনেছেন ।
৩. আইনবিদদের প্রাধান্য : সাধারণত দেশে আইনবিদরা আইন প্রণয়ন করে থাকেন। তাদের আইন সবার দ্বারা প্রতিপালিত হয় যাদের আইন মানা হয় তারা হলো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ। তাই আইনবিদরা চরম ক্ষমতার অধিকারী জন অস্টিন একজন আইনজ্ঞ ছিলেন বিধায় তার এই তত্ত্বে এমন পক্ষপাতিত্ব দেখা গেছে।
৪. সাধারণ ইচ্ছার অবজ্ঞা : জনগণের কল্যাণমূলক ইচ্ছাকে সাধারণ ইচ্ছা বলা হয়। অস্টিন জনগণের সব গণতান্ত্রিক, কল্যাণমূলক ইচ্ছাকে ভ্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আইন প্রণয়নে সাধারণ ইচ্ছার গুরুত্বের কথা বলেননি
৫. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : আস্তিকদের মতে বিধাতাই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যাকে সবাই মান্য করে। বিধাতার আদেশই হলো সর্বোচ্চ আইন। কিন্তু অস্টিন আইন প্রণয়নকারী মানবসত্তাকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছেন। তার আদেশকে সর্বোত্তম, চূড়ান্ত বলেছেন। অর্থাৎ তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন।
৬. স্বৈরাচারী অস্টিনের মতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ সবাইকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আইন সৃষ্টিকারী সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরনের আইন প্রণয়ন করে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন । তাই অস্টিনের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী।
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি পিডিএফ) অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ফ্রি পিডিএফ
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ৪টি ফ্রি পিডিএফ
৭. অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা : সার্বভৌম কর্তৃপক্ষকে অস্টিন চরম ও নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতার অধিকারী করেছেন। আইন প্রণয়নে ও প্রয়োগে তাকে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। জনগণ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। তাই সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন।
৮. একক কর্তৃপক্ষ ; অস্টিনের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা বিভাজন করা যায় না। তাই একটি কর্তৃপক্ষ সকল সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে যা অসুবিধার সৃষ্টি করে।
৯. নৈতিকতার অবহেলা : অস্টিনের সার্বভৌম শক্তি আইন প্রণয়নে নৈতিকতার ধার ধারে না। তাই খুব সহজেই নিজস্ব স্বার্থে সে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
১০. জবাবদিহিতার অভাব : অস্টিনের সার্বভৌম শক্তি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে অনুগত নয়। ফলে, তার জবাবদিহিতার কোনো ভয় থাকে না। এ নির্ভয় তাকে অত্যাচারী, স্বৈরাচারী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাষ্ট্র দর্শনের ইতিহাসে জন অস্টিনের সার্বভৌমত্ব আইনগত তত্ত্ব একটি মাইলফলক।
অস্টিনের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের বিরুদ্ধে এতসব সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বলা যায় যে, অস্টিনই সর্বপ্রথম সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। অধ্যাপক গার্নার যথার্থই বলেছেন, “As a conception of stoic legal nature of sovereignty, Austin’s theory is on the world, clear and logical” কিছু কিছু দেশে তাই এ তত্ত্ব আজও প্রাসঙ্গিক ও বিদ্যমান।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর