ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা, পর্ব- ১ ( প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
- পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
- অধ্যায় ৩ – প্লেটো
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
গ – বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০৮. প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর ।
অথবা, সমালোচনাসহ প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা যার হাত ধরে সুসংবদ্ধ ও গতিশীলতা লাভ করে তিনি হলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ এ আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেন তার মধ্যে সাম্যবাদ’ অন্যতম।
‘সাম্যবাদ’ প্লেটোর রাজনৈতিক দর্শনের এক অনবদ্য সৃষ্টি তিনি মনে করেন সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত না হলে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কথা কল্পনাই করা যায় না।
প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্ব : প্লেটোর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের ধারক ও বাহক হলো দার্শনিক রাজা তথা অভিভাবক শ্রেণি। আর এই অভিভাবক শ্রেণির মধ্যে যারা অধিকতর জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান তারা দেশ শাসনের ভার গ্রহণ করবে এবং সাহসীরা দেশকে
বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। অভিভাবক শ্রেণির মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা সত্ত্বেও প্লেটো তাদের কলুষিত হওয়ার সামান্যতম সুযোগ দিতে আগ্রহী নন।
তাই শাসক শ্রেণিকে পারিবারিক মোহ, সম্পত্তির অধিকারসহ সকল প্রকার লোভ লালসা ও কামনাবাসনার ঊর্ধ্বে থেকে নিঃস্বার্থভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্লেটো তার সাম্যবাদের ধারণা উপস্থাপন করেন।
এককথায়, শাসক শ্রেণির যথাযথ দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে প্লেটো অভিভাবক ও সৈন্যবাহিনীর জন্য পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপের অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ধারণাটিই প্লেটোর সাম্যবাদ হিসেবে পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার বলেন, “প্লেটো এক অভিনব সমাজের আবিষ্কার করেছে যেখানে শাসক পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্যবাদের কাছে নতি স্বীকার করে।”
প্লেটোর সাম্যবাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : প্লেটোর সাম্যবাদের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যই ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল থাকা। তাই প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন ও ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য
অভিভাবক শ্রেণির পার্থিব প্রবণতা ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব পরিহার করে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন। তিনি মনে করেন, একমাত্র সাম্যবাদের মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিক চেতনা পরিবর্তিত হয়ে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক হতে পারে।
প্লেটোর সাম্যবাদের প্রকারভেদ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হিসেবে অভিভাবক শ্রেণির জন্য দুই ধরনের সাম্যবাদের কথা উল্লেখ করেন । যথা : ক. ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ এবং খ. পারিবারিক প্রথার বিলোপ নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ক. ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ : সম্পত্তি সম্পর্কে প্লেটো এক অভিনব মতবাদ তুলে ধরেন, যা পূর্বেকার কোনো দার্শনিকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। প্লেটো তার সাম্যবাদ তত্ত্বে শাসক ও যোদ্ধা শ্রেণির ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপসাধন করেছেন।
তার মতে, আদর্শ রাষ্ট্রে অভিভাবক শ্রেণির কোনো অর্থসম্পদ, ধনসম্পত্তি, আয়ব্যয়, আসবাবপত্র বলতে কিছুই থাকবে না। তারা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যারাকে থেকে সকল সুযোগ সুবিধা সমভাবে ভোগ করবে।
তিনি বলেন, “None should have any property of his own beyond what is absolutely necessary.” কারণ তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে স্বার্থান্বেষী এবং লোভী করে তোলে।
মানুষ ব্যক্তিগত লোভলালসার বশবর্তী হয়ে দায়িত্ব কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়। তিনি মনে করেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রতি আসক্তি অভিভাবক শ্রেণিকে স্বার্থপর ও দুর্নীতিপরায়ণ করে তোলে ।
তাছাড়া একই ব্যক্তির হাতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত থাকলে অভিভাবক শ্রেণি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে। এজন্য প্লেটো তার সাম্যবাদ তত্ত্বে সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদের কথা বলেন। তিনি ব্যক্তিকে তার প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেন।
খ. পারিবারিক প্রথার বিলোপ : প্লেটো তার সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় কেবল ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ করে ক্ষান্ত হননি। তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির পাশাপাশি পারিবারিক প্রথার বিলোপ সাধনের কথাও বলেন। তিনি মনে করেন, পরিবার তথা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি মায়ামমতা শাসক শ্রেণিকে স্বার্থপর করে তোলে।
এজন্য শাসক শ্রেণির কোনো পরিবার না থাকাই বাঞ্ছনীয়। প্লেটো অভিভাবক শ্রেণির শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য এক অভিনব পদ্ধতির কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে একটি উৎসবের আয়োজন করা হবে।
এ উৎসবে রাষ্ট্রের অভিভাবক শ্রেণির সবল ও সুস্থ নরনারীরা একত্র হবে এবং তারা পরস্পর যৌন ক্রিয়ায় মিলিত হবে এবং তাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তানসন্ততির জন্ম লাভ করবে তারা সকল অভিভাবক শ্রেণির সন্তান তথা রাষ্ট্রীয় সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবে।
সর্বোপরি এসব শিশুরা নারী-পুরুষ উভয়ই পারিবারিক সীমায় আবদ্ধ না থেকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা গ্রহণ করবে, যা অত্যন্ত ব্যাপক ও তথ্যবহুল। এজন্য প্লেটো পরিবার প্রথা বিলোপের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।
সমালোচনা : নিম্নে প্লেটোর সাম্যবাদের সমালোচনা উল্লেখ করা হলো,
১. অপূর্ণাঙ্গ মতবাদ : প্লেটোর সাম্যবাদ সমাজের সকল শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই প্লেটোর সাম্যবাদ একটি অসম্পূর্ণ মতবাদ হিসেবে বিবেচিত।
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
২. ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শুধুমাত্র অভিভাবক শ্রেণির সম্পত্তির উচ্ছেদের কথা বলেন। উৎপাদক শ্রেণি সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। তাই প্লেটোর এই সাম্যবাদ সমালোচকদের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি ।
৩. পারিবারিক প্রথার উচ্ছেদ : প্লেটোর মতে, আদর্শ রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণির কোনো পারিবারিক সম্পর্ক থাকবে না। মানুষের সহচর প্রবৃত্তিকে অস্বীকার করে। এজন্যই প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটল এর বিরোধিতায় বলেন, “প্লেটো তার সাম্যবাদ আলোচনায় চিরাচরিত পারিবারিক প্রথা বিলোপের কথা বলেন, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।”
৪. ব্যক্তিস্বাধীনতাকে অস্বীকার : প্লেটো তার সাম্যবাদ তত্ত্বে দার্শনিক রাজার ওপর রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করেছেন, যা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবিক অধিকারকে অস্বীকার করে।
৫. শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে সাম্যবাদের কথা উল্লেখ করেন তাতে সমাজের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর সাম্যবাদের আওতার বাইরে রেখে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো প্ৰদত্ত সাম্যবাদ তত্ত্ব এক সাধারণ ও সর্বাত্মকবাদী ধারণা । প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যে সাম্যবাদের কথা উল্লেখ করেন প্রায় আড়াই হাজার বছর পরও তার এই সাম্যবাদী
ধারণা আধুনিক সাম্যবাদী চিন্তাবিদদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। সুতরাং সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও প্লেটোর সাম্যবাদী ধারণা নাগরিকের জীবন ব্যবস্থা উন্নয়নে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়ক।
০৯. প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘The Republic’ গ্রন্থে যেসব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেন তাদের মধ্যে ‘সাম্যবাদ তত্ত্ব’ অন্যতম।
তিনি সমাজ তথা রাষ্ট্রের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে সমাজের মানুষকে এমন একটি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় আনতে চেয়েছেন যেখানে প্রতিটি মানুষ তার স্বাভাবিক যোগ্যতানুযায়ী কর্ম লাভের সুবিধা ভোগ করবে ।
আর এটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্লেটোর নির্দেশিত উৎপাদক শ্রেণিকে এর আওতাভুক্ত করা হয়নি। তবে আধুনিক সাম্যবাদ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে প্লেটোর সাম্যবাদের সঙ্গে বেশকিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের তুলনামূলক আলোচনা : নিম্নে প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে তুলনামূলক (সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ) আলোচনা করা হলো, সাদৃশ্যসমূহ : প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে সাদৃশ্য বা মিলসমূহ নিম্নরূপ :
১. ব্যক্তিগত সম্পত্তি : প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদ উভয় ব্যবস্থাতেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপসাধনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার তথা সাম্য প্রতিষ্ঠায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে ।
২. রাষ্ট্রীয় মালিকানা : প্লেটোর সাম্যবাদ ও আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানা। উভয় সাম্যবাদে উৎপাদন ব্যবস্থা ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় মালিকানার কথা বলা হয়েছে।
৩. শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখায় শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করেন। আধুনিক সাম্যবাদীরাও শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
৪. আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় : প্লেটোর সাম্যবাদের মূল লক্ষ্য ছিল তার কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আধুনিক সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য হলো আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর বিকাশ সাধন, যা উভয় রাষ্ট্রদর্শনের মূল লক্ষ্য।
৫. রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা : প্লেটোর সাম্যবাদ এবং আধুনিক সাম্যবাদ উভয় সাম্যবাদীরাই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন । আর এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় সার্বিক কল্যাণ নিহিত।
৬. স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার : প্লেটোর সাম্যবাদ এবং আধুনিক সাম্যবাদ উভয়েই স্বার্থরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এককথায় উভয় সাম্যবাদেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাকে হাতিয়ারস্বরূপ ব্যবহার করা হয়েছে।
৭. শ্রেণি সংগ্রাম : উভয় সাম্যবাদের মধ্যে পরোক্ষভাবে শ্রেণি সংগ্রামের ইঙ্গিত বিদ্যমান।
৮. ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে : প্লেটোর সাম্যবাদ এবং আধুনিক সাম্যবাদ উভয় সাম্যবাদের মধ্যেই ব্যক্তিস্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উভয় সাম্যবাদই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ঘোরবিরোধী এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একক শাসন ব্যবস্থার পক্ষপাতী।
৯. মানসিক বিকাশ : উভয় সাম্যবাদে মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতাকে দূরীভূতকরণের মাধ্যমে মানবিক বিকাশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
১০. অসম প্রতিযোগিতা রোধ : প্লেটোর সাম্যবাদ এবং আধুনিক সাম্যবাদ উভয়ই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা রোধ করার পক্ষপাতী।
বৈসাদৃশ্যসমূহ : প্লেটোর সাম্যবাদ এবং আধুনিক সাম্যবাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তথা পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অভিভাবক শ্রেণির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পারিবারিক সম্পর্ক বিলোপের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য যে প্রস্তাব পেশ করেন তাই হলো প্লেটোর সাম্যবাদ। পক্ষান্তরে, ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে উৎপাদন, ভোগ, বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করাই আধুনিক সাম্যবাদ ।
২. সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে : প্লেটোর সাম্যবাদ শাসক শ্রেণির ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানে উৎপাদক শ্রেণিকে সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আধুনিক সাম্যবাদে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সাধন করে সম্পত্তিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
৩. পারিবারিক প্রথার ক্ষেত্রে : প্লেটোর সাম্যবাদে অভিভাবক শ্রেণির জন্য পারিবারিক জীবন ও বিবাহ প্রথাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক সাম্যবাদে পরিবার প্রথাকে উচ্ছেদের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ পরিবার প্রথাকে স্বীকার করা হয়েছে ।
৪. রাষ্ট্রের উপাদান হিসেবে : প্লেটো মনে করতেন যে, সমাজবদ্ধ জীবনের জন্য রাষ্ট্র একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই তিনি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকল্পে সাম্যবাদের কথা উল্লেখ করেন।
কিন্তু আধুনিক সাম্যবাদী ধারণায় রাষ্ট্রকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই সমাজজীবনে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয়।
৫. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : প্লেটোর সাম্যবাদের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো শাসকের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আধুনিক সমাজের লক্ষ্য হলো শ্রেণি শোষণহীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বহারাদের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা প্রদান করা ।
৬. উৎপাদন ব্যবস্থা : প্লেটোর সাম্যবাদে উৎপাদক শ্রেণির ওপর উৎপাদনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এবং উৎপাদক শ্রেণির উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে যোদ্ধা ও অভিভাবক শ্রেণির মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উৎপাদনের পরিবর্তে সামগ্রিক তথা রাষ্ট্রীয় উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
৭. উৎপত্তিগত দিক থেকে : উৎপত্তিগত দিক থেকে প্লেটোর সাম্যবাদ তৎকালীন গ্রিক সমাজের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদ বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতার নিরিখে উপস্থাপিত হয়েছে।
৮. শাসন ক্ষমতা : প্লেটো তার সাম্যবাদে দার্শনিক রাজার হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পণের পক্ষে মত দেন। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদে উৎপাদক শ্রেণির হাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদানের পক্ষে মত দেওয়া হয়।
৯. সন্তানের মালিকানা : প্লেটো তার সাম্যবাদ তত্ত্বের অভিভাবক শ্রেণির জন্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশেষ দিনে যৌনমিলনের ব্যবস্থা করেন। এই মিলনের ফলে যে সন্তান গর্ভে আসবে তা রাষ্ট্রের সম্পদ বলে বিবেচিত হবে। এতে সন্তানের কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে না। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদী সমাজে স্ত্রী ও সন্তানের মালিকানা স্বীকৃত ।
১০. রাষ্ট্রীয় ঐক্য : প্লেটোর সাম্যবাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আধুনিক সাম্যবাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
১১. মর্যাদার ক্ষেত্রে : প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্ব অনুসারে রাষ্ট্রীয় চূড়ান্ত শক্তি হচ্ছে দার্শনিক রাজা এবং জ্ঞানই হচ্ছে মর্যাদার ভিত্তি। আর আধুনিক সাম্যবাদে শ্রমিকই হচ্ছে সবকিছুর মানদণ্ড এবং শ্রমিক শ্রেণিরাই হচ্ছে চরম শক্তির উৎস ।
১২. ভিত্তিগত দিক : প্লেটোর সাম্যবাদ হলো একটি কাল্পনিক মতবাদ। তাই এটি বাস্তবে রূপায়িত করা অসম্ভব। কিন্তু আধুনিক সাম্যবাদ ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত।
১৩. গুরুত্বারোপের ক্ষেত্রে : প্লেটো তার সাম্যবাদে অর্থনীতি অপেক্ষা রাজনীতির ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদে অর্থনৈতিক গুরুত্বই বেশি প্রাধান্য পায় ।
১৪. আন্তর্জাতিকতাবাদ : প্লেটোর সাম্যবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে, আধুনিক সাম্যবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটোর সাম্যবাদের মধ্যে মিল ও অমিল উভয়ই বিদ্যমান। তবে, প্লেটোর সাম্যবাদ আধুনিক সাম্যবাদ অপেক্ষায় ততটা পূর্ণাঙ্গ ও প্রায়োগিক নয়। প্লেটো যে সাম্যবাদের কথা বলেন তা আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরানো।
আর আধুনিক সাম্যবাদ বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বিকাশ লাভ করেছে। তাই উভয় দর্শনের মধ্যে মৌলিক ও গঠনগত দিক থেকে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উভয় সাম্যবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।
১০. প্লেটোর ন্যায়তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, প্লেটোর ন্যায়তত্ত্ব পর্যালোচনা কর।
অথবা, প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার তত্ত্বটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হলে আদর্শ রাষ্ট্রের অবশিষ্ট বলতে কিছুই থাকবে না। ন্যায়বিচার তত্ত্বটির গুরুত্ব সম্পর্কে প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে একাধিকবার অত্যন্ত জোরালোভাবে উল্লেখ করেছেন।
এজন্য অনেকেই প্লেটোর এই গ্রন্থটি ‘Concerning Justice’ বলেও অভিহিত করেন। কিন্তু এত গুরুত্ব সত্ত্বেও প্লেটোর ন্যায়তত্ত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় ।
প্লেটোর ন্যায়ধর্ম তত্ত্ব : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ন্যায়ধর্ম তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। তার মতে, প্রতিটি ব্যক্তির যা প্রাপ্য তাকে তাই দেওয়ার নামই হলো ন্যায়ধর্ম। অর্থাৎ সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তিই কিছু সহজাত গুণাবলির অধিকারী যার সাহায্যে ঐ ব্যক্তি কাজ করার সামর্থ্য অর্জন করে ।
আর এসব কাজ করার জন্য ব্যক্তির অবশ্যই কিছু পারিশ্রমিক প্রাপ্য। এই পারিশ্রমিক থেকে যদি ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
প্লেটো মনে করতেন, সমাজে প্রত্যেক শ্রেণি যদি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করে তাহলে ন্যায়বিচার বিকশিত হবে।
তিনি আরও বলেন প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করে এবং সে অনুযায়ী তার প্রাপ্য পায় তাহলে সমাজে শুধুমাত্র ন্যায়বিচারই প্রতিষ্ঠিত হয় না, সমাজ তথা রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলার হাত থেকেও মুক্তি পায়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় ও মজবুত হয়।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক স্যাবাইনের অভিমত হলো, “Justice is the bond which holds a society together, a harmonious union of individuals each of whom has found his life work in accordance with his natural fitness and training.” অর্থাৎ ন্যায়বিচার হলো সমন্বয়সাধনকারী ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি বন্ধন, যা সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিকে একসূত্রে আবদ্ধ করে।
প্লেটোর মতে, একজন মানুষকে আমরা তখনই ন্যায়পরায়ণ বলবো যখন তার জীবনে প্রজ্ঞা, বিক্রম ও প্রবৃত্তি এই তিনটি উপাদানের সুষ্ঠু সমন্বয় ঘটবে। রাষ্ট্রীয় জীবনেও অনুরূপ গুণাবলি বিদ্যমান থাকতে হবে। তাহলেই প্লেটোর বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্লেটো দুটি ন্যায়বিচার তত্ত্বের কথা বলেন। যথা : ক. সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার এবং খ. ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার।
ক. সামাজিক ন্যায়বিচার : মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে সমাজে বসবাস করে এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা হলো ন্যায়বিচারের ভিত্তি।
সমাজের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি তার যাবতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ, সামাজিক ন্যায়বিচার সমাজের নীতি ও সমাজ কর্তৃক সৃষ্টি।
খ. ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার : ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার ব্যক্তির আত্ম প্রবণতাগুলোর নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ ব্যক্তির নির্দিষ্ট অবস্থানভিত্তিক যে দায়িত্ব, সে দায়িত্ব পালনে আগ্রহ এবং অপরের ধর্মক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে অনাগ্রহ প্রকাশই ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার।
ন্যায়বিচারের আবাসস্থল হচ্ছে ব্যক্তির মানে। সুতরাং ব্যক্তি তার আত্মার প্রবণতাকে প্রশমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখার ফলে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে তা হলো ব্যক্তিগত ন্যায়বিচার।
প্লেটোর ন্যায়তত্ত্বের সমালোচনা : প্লেটোর ন্যায়ধর্ম তত্ত্ব বিভিন্নভাবে সমালোচনার স্বীকার হয়েছে। নিম্নে সমালোচকদের দৃষ্টিকোণ থেকে তা আলোচনা করা হলো-
১. সর্বাত্মকবাদী চেতনা : প্লেটো, হেগেল ও মার্কস এর রাষ্ট্রচিন্তার বিশিষ্ট ভাষ্যকার পপার (Popper) বলেন যে, প্লেটো তার ন্যায়বিচার তত্ত্বের সাহায্যে সর্বাত্মকবাদী চেতনার পরিচয় দিয়েছেন ।
তার মতে, “প্লেটো তার ন্যায়ধর্মে ব্যক্তি অপেক্ষা রাষ্ট্রীয় কল্যাণকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ব্যক্তিস্বার্থকে আদৌ মর্যাদা দেননি, যা সর্বাত্মকবাদের নামান্তর মাত্র।
২. ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী: প্লেটোর ন্যায়ধর্ম তত্ত্ব ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী। এখানে ব্যক্তি আত্মার ন্যায়ধর্মকে উপক্ষো করে রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা ভেবে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
৩. আইনের শাসন উপেক্ষা : আধুনিক বিশ্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছে কিন্তু প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজার শাসনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। তিনি দার্শনিক রাজার হাতে সর্বময় ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে আইনের শাসনকে উপেক্ষা করেছেন ।
৪. মানবতাবিরোধী : প্লেটোর সুযোগ্য ছাত্র এরিস্টটলই তার ন্যায়ধর্মতত্ত্বকে মানবতাবিরোধী বলে অভিহিত করেছেন । প্লেটো তার ন্যায়ধর্মে পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে অভিভাবক শ্রেণিকে বঞ্চিত করেন।
কিন্তু এরিস্টটল মনে করেন এতে মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। তার মতে, ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকা আবশ্যক ।
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
৫. শ্রেণিবৈষম্য : প্লেটোর ন্যায়ধর্ম তত্ত্ব মূলত সাম্যবাদকে নয়; বরং শ্রেণিবৈষম্যই সৃষ্টি করেছে। এখানে শ্রেণি বিভাজনের মাধ্যমে শাসক শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণি এবং উৎপাদক শ্রেণির ক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্য সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৬. অগণতান্ত্রিক : প্লেটো শাসন ক্ষমতা দার্শনিক রাজার হাতে অর্পণ করে অভিজাততান্ত্রিক সরকার গঠন করেছে, যা নিতান্তই গণতন্ত্র বিরোধী। এজন্যই ওয়েপার (Wayper) ও ক্রসম্যান (Crossman) প্লেটোর ন্যায়বিচার ধারণাকে গণতান্ত্রিক নীতিবর্জিত বর্বর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।
৭. স্থির ও অপূর্ণ ন্যায়ধর্ম : প্লেটোর ন্যায়ধর্ম স্থির ও অপূর্ণ। কারণ শ্রমবিভাজন ও কর্ম বিশেষীকরণের মধ্যে কোনো গতিশীলতা পরিলক্ষিত হয় না।
৮. আধুনিক ধারণার সাথে অসংগতিপূর্ণ : শ্রেণি শাসন ও শ্রেণি সুযোগকে প্লেটো ন্যায়বিচারের সমর্থক বলে মনে করতেন। কিন্তু আধুনিক ধারণায় তা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এখানে শ্রেণি সুযোগের অনুপস্থিতিকেই ন্যায়বিচার বলে গণ্য করা হয় ।
৯. উৎপাদক শ্রেণির রাজনৈতিক অধিকার অস্বীকৃত : প্লেটোর ন্যায়ধর্মে উৎপাদক শ্রেণিকে শুধুমাত্র সম্পত্তির অধিকার প্রদান করা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অধিকারের কোনো স্বীকৃতি নেই। উপরন্তু তাদের মানবিক সত্তাকেও সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে।
১০. আদর্শ রাষ্ট্রই প্রাধান্য : প্লেটোর ন্যায়ধর্মের সমালোচনায় বলেন, “প্লেটোর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা নয়।”
১১. অতিমাত্রায় তাত্ত্বিক : প্লেটো তার ন্যায়ধর্মে দার্শনিক রাজার রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতিকে আইনের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং মানবজীবনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহারিক আইনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করেছেন । তাই অনেকেই তার ন্যায়ধর্মকে অতিমাত্রায় তাত্ত্বিক নীতি বলে মনে করেন।
১২. একতরফা নীতি : প্লেটোর ন্যায়বিচারকে একতরফা নীতি বললে ভুল হবে না। কেননা এটা কেবল নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের নির্দেশ দেয়। নাগরিক অধিকার কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের যে চারটি গুণের কথা বলেন তার মধ্যে ন্যায়বিচার অন্যতম।
আধুনিককালে তার ন্যায়ধর্ম বিভিন্নভাবে সমালোচিত হলেও তৎকালীন গ্রিক নগরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষিতে তিনি যে ন্যায়ধর্মের কথা বলেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। যার কারণে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর