প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF) অধ্যায়:২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. সংগঠনের সংজ্ঞা দাও। অথবা, সংগঠন কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : প্রশাসন পরিচালনায় সংগঠন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সুষ্ঠুভাবে সমাজের প্রতিটি কার্যসম্পাদন করতে সংগঠনের বিকল্প নেই। তেমনি লোকপ্রশাসনের আলোচনায়ও সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়।
সংগঠনের মাধ্যমেই যথার্থ মানব কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। মূলত একটি দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে গতিশীল ও কার্যকর রাখতে সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একমাত্র সংগঠনের মাধ্যমে মানবসমাজের সব উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হয়।
সংগঠন : সাধারণত কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য যখন অধিকাংশ জনগণ সমষ্টিগত ও সহযোগিতাপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে থাকে তখন ঐসব জনগণ কর্ম সম্পাদনের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাই সংগঠন।
Dimock এর মতে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখার হাতিয়ার হলো সংগঠন। অর্থাৎ সংগঠন হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে অধিকসংখ্যক জনগণ কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য কর্ম সম্পাদন করে থাকে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: লুথার গুলিক (Luther Gullick) এর মতে, “Organization is the formal structure of authority through which work sub-division are arranged, defined and co- ordinated for the defined objectives.” অর্থাৎ, সংগঠন হচ্ছে কর্তৃত্বের আইনগত কাঠামো যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কর্মের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপবিভক্তি,
বিন্যাসিতকরণ ও সমন্বিতকরণ করা হয় । এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) এর মতে, কোনো স্বীকৃত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুবিন্যস্ত বণ্টনকেই সংগঠন বলা হয়।
- আরো পড়ুন:-প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা,অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ই. এন. গ্লাডেন (E. N. Gladen) এর মতে, “কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কর্ম সম্পাদনের জন্য যে কার্যকরী সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তাই সংগঠন।”
জন ডি. মুনি (John D. Mooney) এর মতে, “Organization is the form of every human association for the attainment of common purpose.” অর্থাৎ, সংগঠন হচ্ছে মানবসমাজের এমন সংঘ যা অভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনে গড়ে ওঠে।
জে. এম. ফিফনার (J. M. Pfiffner) এর মতে, ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং গোষ্ঠীর সম্পর্কের ভিত্তিতেই সংগঠন সৃষ্টি যা শ্রমবিভাজনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংগঠন হলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্কযুক্ত সেই সংঘ যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের সাথে সম্পৃক্ত। সংগঠন ছাড়া মানবসমাজের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব নয়।
সংগঠনের মধ্য দিয়েই কেবলমাত্র মানব কল্যাণ নিশ্চিতকরণ সম্ভব হয়। আধুনিক জনকল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা একান্ত কাম্য।
০২. সংগঠনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর । অথবা, সংগঠনের প্রকৃতি সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : লোকপ্রশাসনের আলোচনায় সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। সংগঠন হচ্ছে এমন একটি কর্মপ্রচেষ্টা যার মাধ্যমে মানবসমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে থাকে।
মানবজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে এবং প্রশাসন ব্যবস্থার গতিশীলতা ধরে রাখতে সংগঠনের বিকল্প নেই।
সংগঠনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি সংগঠনের প্রক্রিয়ায় Chain of Command বিদ্যমান রয়েছে, যা সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে । নিম্নে সংগঠনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সংগঠন পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি সংগঠনের অন্যতম প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য হলো তা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি। সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে ওঠার কারণ হলো কতিপয় দল বা গোষ্ঠীর কতিপয় অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন। মানবসমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে।
২. সংগঠন আইনগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত : সংগঠন হলো মানবসমাজের সেই ব্যবস্থা যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে আইনগত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে সংগঠন পরিচালিত হয়। কেননা সংগঠনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৩. ব্যক্তি ও দলের সমন্বয় : সংগঠন হলো ব্যক্তি ও দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। কতিপয় ব্যক্তি এবং দল হচ্ছে সংগঠনের অন্যতম উপাদান । কেননা সংগঠন কেবল কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত হয়। তবে উদ্দেশ্য সাধনে উক্ত ব্যক্তি বা দলের মধ্যে অবশ্যই চেইন অব কমান্ড থাকে।
৪. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য : প্রতিটি মানব সংগঠনই সুনির্দিষ্ট কতিপয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে গড়ে ওঠে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন ছাড়া জনগণের সমষ্টিগত ও সহযোগিতামূলক কর্মপ্রচেষ্টা ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের উদ্দেশ্যেই সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে তোলা হয়।
৫. আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত : প্রতিটি মানব সংগঠনই আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা সমাজের মানুষের অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন কেবলমাত্র আদর্শ ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত। তাই আদর্শ ও মূল্যবোধ ছাড়া সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা এবং লক্ষ্যার্জন সম্ভব হবে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংগঠন হলো একাধারে একটি সামাজিক একক, যা সামজের কোনো আদর্শ বা মূল্যবোধ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহৃত সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা। মূলত সংগঠন ছাড়া মানবসমাজের বৃহত্তর কল্যাণসাধন এবং লক্ষ্য অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
০৩. সংগঠনের উপাদানসমূহ কী কী? অথবা, সংগঠনের উপাদানগুলো লেখ
উত্তর : ভূমিকা : বৃহত্তর মানবকল্যাণ সাধনে সংগঠনের ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সংগঠনের বিকল্প নেই সংগঠনের নীতিমালা দ্বারা খুব সহজেই মানবসমাজের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়।
প্রতিটি সংগঠনের জন্যই কতিপয় উপাদান গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য তাই সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে আমাদের অবশ্যই এর উপাদান সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হবে।
সংগঠনের উপাদানসমূহ : নিম্নে সংগঠনের উপাদানসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
১. মানুষ : সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষ। কেননা মানুষ ছাড়া কোনো সংগঠনই গড়ে ওঠে না। মানুষ তার প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী সংগঠন গড়ে তোলে।
মানবজীবনের সার্বিক প্রয়োজন মিটাতেই সংগঠনের উদ্ভব হয়। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতেই সময় ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠন গড়ে তোলা হয় অর্থাৎ মানুষ হলো সংগঠনের সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান ।
২. কাঠামো : কাঠামো সংগঠনের অন্যতম একটি উপাদান। কাঠামো ছাড়া কোনো সংগঠনই গড়ে উঠতে পারে না। কাঠামো দ্বারাই সংগঠনের আকার, সংগঠনের কর্মপরিধি এবং সংগঠনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয় ।
এজন্য সংগঠনকে কাঠামোগত আইনও বলা হয়ে থাকে। কাঠামো হলো সংগঠনের সেই উপাদান যা ব্যতীত সংগঠন অস্তিত্বহীন।
৩. পরিবেশ : সংগঠনের অন্যতম একটি উপাদান হলো পরিবেশ। কোনো সংগঠন গড়ে ওঠার পিছনে পরিবেশের অবদান রয়েছে। কোনো স্থানের পরিবেশই একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তাকে দেখিয়ে দেয়।
উপযুক্ত পরিবেশের সাথে সংগঠনের সফলতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশের ভিন্নতার কারণে সংগঠনের কাঠামোতেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
৪. প্রযুক্তি : প্রযুক্তির ওপর সংগঠন পরিচালনা বহুলাংশে নির্ভরশীল বিধায় প্রযুক্তি সংগঠনের একটি উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। কেননা সংগঠনে প্রযুক্তির ব্যবহার সংগঠনের কর্মকাণ্ডকে সহজসরল করে দেয়, কর্মের গতি বৃদ্ধি করে এবং সংগঠনের কর্মের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।
৫. রাজনৈতিক উপাদান : রাজনৈতিক কার্যকলাপের ভিত্তিতেই সংগঠনের সৃষ্টি বিধায় রাজনৈতিক উপাদান সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই প্রশাসন ব্যবস্থার সৃষ্টি এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সংগঠনের সৃষ্টি।
রাজনৈতিক উপকরণ ছাড়া প্রশাসন এবং সংগঠন কোনোটিই চিন্তা করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের কথা উল্লেখ করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সংগঠনের আবির্ভাবের পিছনে উপর্যুক্ত উপাদানসমূহের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে । উক্ত উপাদান ছাড়া প্রশাসন ব্যবস্থার যেমন অস্তিত্ব নেই তেমনি সংগঠনেরও অস্তিত্ব নেই। সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উক্ত উপাদানসমূহের কোনো বিকল্প নেই।
০৪. আনুষ্ঠানিক সংগঠনের সংজ্ঞা দাও । অথবা, সনাতন সংগঠন কাকে বলে?
উত্তর : ভূমিকা : সংগঠন হলো প্রশাসন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কেননা সংগঠন ছাড়া প্রশাসনিক কর্ম পরিচালনা অত্যন্ত কষ্টকর। আর আনুষ্ঠানিক সংগঠন যেকোনো দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু বলে পরিচিত।
আধুনিককালে পরিবর্তনশীল ব্যবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের কাঠামো একই সাথে সুনির্দিষ্ট এবং পরিবর্তনশীল ।
আনুষ্ঠানিক সংগঠন : আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে সাধারণত এমন একটি সংগঠনকে বুঝায় যার সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালা রয়েছে। আনুষ্ঠানিক সংগঠন সম্পদ ও ব্যক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে।
রাষ্ট্র অথবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সেবা সকলের জন্য নিশ্চিত করতে এ ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে। এ ধরনের সংগঠন সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালার ভিত্তিতে কর্ম সম্পাদন করে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : এডউইন ও স্টেন (Edwin and Stein) এর মতে, আনুষ্ঠানিক সংগঠন হলো এমন কতকগুলো ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যারা সুসংগঠিত এবং সচেতনভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত কর্ম প্রচেষ্টার সমন্বয়ে সাধারণ কর্ম সম্পাদন করে থাকে ।
চেস্টার আই. বার্নার্ড (Chester I. Bernard) এর মতে, “নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কার্যাবলির যথাযথভাবে সমন্বয়সাধন প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলে · ট্যালকট পারসন্স ( Talcott Persons) আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে কোনো লক্ষ্য অর্জনের পন্থা বলে অভিহিত করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আনুষ্ঠানিক সংগঠন হলো এমন একটি সংগঠন যার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালা রয়েছে এবং ঐ সংগঠনের সকল কার্যাবলি ঐ নীতিমালার মধ্যদিয়ে পরিচালিত হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে এবং তা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সক্ষম।
০৫. অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের সংজ্ঞা দাও । অথবা, নব্য সনাতন সংগঠন বলতে কী বুঝ?
উত্তর : ভূমিকা অনানুষ্ঠানিক সংগঠন একটি নতুন ধারণা যা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষ-ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক সংগঠন আচরণবাদী সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষ-ত্রুটি পরিহার করে প্রশাসন ব্যবস্থায় গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। এ সংগঠনকে প্রাথমিক সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
অনানুষ্ঠানিক সংগঠন : সাধারণভাবে অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন একটি সংগঠনকে বুঝানো হয়, যেখানে প্রশাসন ব্যবস্থায় গতিশীলতা নিশ্চিত করতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে মানবিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিচার করা হয়।
অনানুষ্ঠানিক সংগঠনকে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের ছায়া সংগঠন বলা হয়। সদস্যদের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক অভাবের সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের সৃষ্টি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : ফিফার ও শেরউডের (Pfiffner and Sharwood) মতে, “By informal organisation I mean the aggregate of the personal contracts interaction and the associated • groupings of people.” অর্থাৎ, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে ব্যক্তিগত চুক্তি মিথষ্ক্রিয়া ও যুক্তকরণের সমষ্টিকে বুঝানো হয়
চেন্ডলার ও প্লেনো (Chandler and Plano) এর মতে, “অনানুষ্ঠানিক সংগঠন হলো এমন একটি সংগঠন যেখানে প্রশাসন গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে মানবিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিচার করা হয়।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন হচ্ছে এমন এক সংগঠন যেখানে কোনো পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ও নিয়মকানুন থাকে না । তবে এখানকার স্বতঃস্ফূর্ত যৌথ প্রচেষ্টা একটি বিশেষ ফলাফলের দিকেই পরিচালিত হয়। তাছাড়া এখানে অংশগ্রহণকারী কর্মীদের কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা বা কর্তৃত্ব থাকে না বিধায় ঊর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্কও নেই।
০৬. অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর । অথবা, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর
উত্তর : ভূমিকা : সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষ একত্রে মিলেমিশে বাস করলেও সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়।
এরূপ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ সংগঠিত হয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলে। সময়ের প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কাঠামোতে অনানুষ্ঠানিক প্রশাসনের আবির্ভাব ঘটেছে ।
অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য : বর্তমান সময়ে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অনানুষ্ঠানিক সংগঠন কার্যকর রয়েছে। প্রায়শই আনুষ্ঠানিক সংগঠনের অকার্যকারিতার কারণে অনেক কাজ অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। নিম্নে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো—
১. সুনির্দিষ্ট কাঠামোর অভাব : সাধারণত অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর অভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলে এমন সংগঠনে নিয়মিত কর্মীবাহিনীর উপস্থিতিও লক্ষ করা যায় না। এসব সংগঠনের কর্মীরা স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ করে থাকেন।
২. সার্বক্ষণিক কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি অনানুষ্ঠানিক সাংগঠনিক কাঠামোর সার্বক্ষণিক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। এখানে সময় ও প্রয়োজন অনুসারে কর্তৃপক্ষের আবির্ভাব ঘটে। কাজ সম্পাদিত হওয়ার পর এসব কর্তৃপক্ষের বিলোপসাধন ঘটে।
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতি অধ্যায়:-১(সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- আরো পড়ুন:- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- আরো পড়ুন:-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
৩. দৈনন্দিন অফিসহীনতা : আনুষ্ঠানিক সংগঠনের মতো অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কোনো দৈনন্দিন অফিসের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। এসব সংগঠনে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের মতো দৈনন্দিন কার্যাবলি পরিচালিত হয় না। এখানে কল্যাণমুখী ও জনকল্যাণমূলক কাজ অধিক সম্পাদিত হয় ।
৪. বেতনভুক্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতি : যেসব সংগঠন অনানুষ্ঠানিক হিসেবে পরিচিত ঐসব সংগঠনে পরিচালনা কার্যক্রমের জন্য কোনো বেতনভুক্ত কর্মচারী কাঠামো নেই। সংগঠনের প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে থাকেন। তারা ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে সমাজ ও মানবকল্যাণের প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকেন ।
৫. জনকল্যাণমুখিতা : সাধারণত অনানুষ্ঠানিক সংগঠনসমূহ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয় না। প্রায় সব অনানুষ্ঠানিক সংগঠনই সমাজকল্যাণ ও জনসেবার মহান লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন প্রশাসনিক দিকের চেয়ে মানবিক দিকসমূহের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়। আনুষ্ঠানিক অফিসের অভাব, সার্বক্ষণিক কর্তৃপক্ষের অভাব প্রভৃতি সীমাবদ্ধতা থাকলেও অনানুষ্ঠানিক সংগঠন মানুষের সৃজনশীল গুণাবলির বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।
০৭. আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য নির্দেশ কর। অথবা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য দেখাও।
উত্তর : ভূমিকা : ঐক্যবদ্ধ মানুষ যখন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং সমধর্মী মনোভাব নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠিত হয়, তখন তাকে বলা হয় সংগঠন দুই ধরনের সংগঠনের মধ্যে একটি সনাতন বা আনুষ্ঠানিক সংগঠন আর অপরটি হলো নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক সংগঠন।
কাজের ধরন ও প্রকৃতির দিকে লক্ষ করলে উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের পার্থক্য আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যকার পার্থক্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. কাঠামোগত পার্থক্য : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি আইনের কাঠামোর বাইরে কোনো কাজ করে না। অপরদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের একটি অন্যতম দিক হলো এর কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই। এটি সংগঠনে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
২. উৎপত্তিগত পার্থক্য : আনুষ্ঠানিক সংগঠনের জন্ম হয় মূলত কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ও সুপ্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানের আলোকে অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের জন্ম হয়েছে হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির ও আকস্মিক আবেগবশত কার্যসম্পাদনের কারণে ।
৩. আনুগত্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পার্থক্য : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে প্রতিটি কর্মী তার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য থাকেন পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কঠোর আনুগত্য প্রদর্শনের চর্চা নেই ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না।
৪. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলে এবং এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্বনির্ধারিত। অপরদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেও হঠাৎ করে তা প্রকাশ পায় না এবং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে না ।
৫. আচরণগত পার্থক্য : আচরণগত দিক থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ প্রশংসিত। অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. কর্তৃত্বের বিচারে পার্থক্য আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সবসময় পদসোপান নীতির ভিত্তিতে উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সর্বদাই মাঠ পর্যায় থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয়।
৭. আইনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ আইনগত কাঠামোর ওপর গড়ে ওঠে এবং আইনের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। অপরদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে আইনের কোনো ভিত্তি নেই।
৮. ব্যবস্থাপনাগত পার্থক্য : আনুষ্ঠানিক সংগঠন যথাযথ ব্যবস্থা ও নিয়মনীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনেনব্যবস্থাপনা তেমন জোরালো ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। যদিও দুটি মতবাদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান তথাপি একটি আরেকটির পরিপূরক।
এ দুধরনের সংগঠনের মধ্যে সাংঘর্ষিক কোনো উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে এ দুধরনের সংগঠন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
০৮. সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর । অথবা, সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী।
উত্তর : ভূমিকা আনুষ্ঠানিক সংগঠন সকল দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্বীকৃত। আধুনিককালে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনের কার্যাবলি সহজেই অনুমান করা যায়। এ সংগঠনের কর্ম পরিধি সুনির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ। আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে নিয়মতান্ত্রিক সংগঠনও বলা হয় ।
সনাতন আনুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য নিম্নে আনুষ্ঠানিক কাঠামোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আনুষ্ঠানিক সংগঠনের কতিপয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. সুনির্দিষ্ট কাঠামো/নীতিমালা আনুষ্ঠানিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালা । এ সংগঠনে সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালা থাকায় বাইরে থেকে তা সুস্পষ্টরূপে দৃশ্যমান এবং সংগঠন পরিচালনায় অধিক সহায়ক। সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় না।
২. স্থায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি : আনুষ্ঠানিক সংগঠনের কর্মপদ্ধতি সুনির্দিষ্ট এবং এ কাঠামো সচরাচর পরিবর্তন করা হয় না বিধায় তা স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি। তবে আনুষ্ঠানিক সংগঠন জনগণের চাহিদা তথা যুগের চাহিদা অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে বিধায় এর দীর্ঘমেয়াদি গুণ সর্বদা পরিলক্ষিত হয় না।
৩. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা : আনুষ্ঠানিক সংগঠনের ভিত্তি হলো বৈজ্ঞানিক এবং এখানে কর্ম সম্পাদনে বৈজ্ঞানিক রীতিনীতি অনুসরণ করা হয় যা এ সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আনুষ্ঠানিক সংগঠন পরিচালনা করতে যেকোনো সমস্যকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই আনুষ্ঠানিক সংগঠনে অলীক বা কল্পনা যুক্তির স্থান নেই ।
৪. পরিবর্তনশীলতা পরিবর্তনশীলতা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। আনুষ্ঠানিক সংগঠন যুগের চাহিদা ও সমস্যার সাথে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় তা পরিবর্তনশীল। এ ধরনের সংগঠন পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয় বিধায় তা পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধনশীল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আনুষ্ঠানিক সংগঠন হলো সুনির্দিষ্ট, স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল গতিশীলতা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
যদিও বর্তমানে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনগুলোর প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তবুও যুগের চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ হওয়া এ ধরনের সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
০৯. নব্য সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর। অথবা, নব্য সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?
উত্তর : ভূমিকা : প্রশাসন ব্যবস্থায় সংগঠন একটি অপরিহার্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। সংগঠন ছাড়া প্রশাসন ব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব নয়।
সংগঠন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থার গতিশীলতা বজায় রাখতে সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হলে নব্য সনাতন সংগঠন সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা একান্ত অপরিহার্য। নব্য সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্য আলোচনার মাধ্যমে আমরা এই সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারি।
নব্য সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্য : নব্য সনাতন সংগঠনের কতিপয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে নব্য সনাতন সংগঠনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনে গঠিত জনসমষ্টি : নব্য সনাতন সংগঠন হচ্ছে অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনে গঠিত জনসমষ্টি বা দল । এই মতবাদ অনুসারে মানুষ অভিন্ন কতিপয় উদ্দেশ্য সাধনে সংগঠন গড়ে তোলে ।
২. বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ নব্য সনাতন সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ। এখানে মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং মানুষ সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের আশায় সংগঠন গড়ে তোলে।
৩. মানবিক উপাদানের সমন্বয় : নব্য সনাতন সংগঠনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো তা মানবিক উপাদানের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন। এখানে সামাজিক সম্পর্ক, দলীয় আদর্শ এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মানবিক উপাদানের সমন্বয়ে সংগঠন গড়ে তোলা হয়।
৪. সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করা : নব্য সনাতন সংগঠনে মানবিক ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করার ফলে মূল উদ্দ্যেশকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
৫. আইন নয়, প্রথা : নব্য সনাতন সংগঠনের ভিত্তি হিসেবে আইন নয়; বরং প্রথার ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ প্রথা থেকেই নব্য . সনাতন সংগঠনের উদ্ভব হয়।
৬. সমতার নীতিতে বিশ্বাসী : নব্য সনাতন সংগঠন সমতার নীতিতে বিশ্বাসী। এই সংগঠনে পদসোপান নয়; বরং সমতার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয় । এটি সংগঠনকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নব্য সনাতন সংগঠন প্রশাসনিক সংগঠনের একটি রূপ। সনাতন সংগঠনের বিপরীতে নব্য সনাতন সংগঠনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নব্য সনাতন সংগঠনে আইনের চেয়ে প্রথা এবং পদসোপানের চেয়ে সমতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১০ সনাতন সংগঠনের সীমাবদ্ধতাগুলো উল্লেখ কর ।অথবা, সংগঠনের সনাতন মতবাদের প্রতিবন্ধকতা লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : সংগঠন সম্পর্কে মতবাদগুলোর মধ্যে সনাতন মতবাদ হলো একটি গ্রহণযোগ্য মতবাদ। সনাতন মতবাদ বলতে সংগঠনের এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে ওঠে। সংগঠনের সনাতন বা ক্লাসিক্যাল মতবাদের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে ।
সনাতন সংগঠনের সীমাবদ্ধতা : সনাতন সংগঠনের অন্যতম ভিত্তি হলো কাঠামো। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে নিম্নে সীমাবদ্ধতাগুলো উল্লেখ করা হলো—
১. সংগঠনের কাঠামো স্থাপন একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে সনাতন মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কাজ সুষ্ঠুরূপে সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য এ কাঠামো গড়ে তোলা হয়। কাঠামো বর্ণিত ক্ষমতার ভিত্তিতে এ সংগঠন পরিচালিত হয়ে থাকে। আর এই কাঠামোর সীমাবদ্ধতা ছাড়া সংগঠন গড়ে ওঠে না।
২. সংগঠনের কাঠামোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন: সংগঠনে কর্মরত প্রতিটি কর্মচারীর মধ্যে যাতে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সেজন্য একজন প্রশাসক তার অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গের আস্থা অর্জন করে থাকে।
এর ফলে সংগঠনের কোনো কাজ সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গরূপে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা বজায় রাখা হয় ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্থ কর্মকর্তার মধ্যে।
৩. কার্যকরী নীতিসমূহ প্রণয়ন : এখানে প্রতিটি কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে অর্পিত দায়িত্বসমূহ যথাযথ সম্পাদন করার চেষ্টা চালায় । ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রেরণা সৃষ্টি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, সমন্বয়সাধন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
তাছাড়া এই সনাতন মতবাদকে অনেকে যান্ত্রিক বলে মনে করেছেন। মানুষ বা কর্মচারী সংগঠনকে যন্ত্রের সাথে তুলনা করা হয় সংগঠনে সনাতন মতবাদ যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার মধ্য দিয়ে।
প্রশাসন পরিচালনা করার চেষ্টা করা হয়। সনাতন মতবাদে শ্রমবিভাগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া সংগঠনগুলো | পদসোপান নীতি মেনে চলে। তাই সংগঠনে সনাতন বা ক্লাসিক্যাল মতবাদের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কালের বিবর্তনের সাথে সংগঠনের প্রয়োজনে এসব মতবাদ গড়ে উঠেছে। তাই এ মতবাদগুলোকে বিভিন্নভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে তিনটি মতবাদ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন।
এ তত্ত্বে মানবতার সম্পর্ককে তেমন গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি, বরং কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই সনাতন মতবাদ অনুযায়ী সংগঠন হচ্ছে আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা কাঠামো, নীতি ও সূত্রের সীমাবদ্ধতা মেনে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)